গত দুই দিনে দেশের হরতাল ও হরতাল পরবর্তী সংবাদে আমি কিছুটা হতাশ। নারীনীতি ও শিক্ষানীতির বিরোধীতা করে আমিনীর ডাকা এই হরতালে বেশ কিছু মানুষের সরব ও নীরব সমর্থন আশংকাজনক। পত্রিকায় ছবিগুলো দেখে আমি খুব অস্থিরতায় ভুগছি। কোরান শরীফ হাতে হরতালে অংশগ্রহণকারী এক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর ছবি দেখলাম। কষ্ট পেলাম। পত্রিকা খুললেই হরতালের মুহূর্তকালীন ছবি। এই আলোকচিত্রগুলো রূঢ় বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। ছবিগুলো এতই বাঙ্ময়, যে খবর পড়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি না।
এ ধরনের ফটোজার্নালিজমের উদ্দেশ্য কেবল শৈল্পিক সত্ত্বার বিকাশ নয়, উপরন্তু সত্যের খন্ডকালীন ধারক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করা। আলোকচিত্রের ইতিহাস পাঠে জানা যায়- সাধারণ মানুষের মনে কোন খবর/ঘটনার চাক্ষুষ প্রতিবেদন (visual representation) এমন স্পষ্ট ও তাৎক্ষণিক ছাপ ফেলে, যা অনেক সময় কেবল মনস্তাত্ত্বিক অনুধাবনেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তাকে, ছবির দর্শককে, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় করে। কাজেই এ ঘরানার ছবির গুরুত্ব অপরিসীম।
মুশকিল হল এ ধরনের বেশিরভাগ ছবি নৈর্ব্যক্তিক নয়। ছবিগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানের, নির্দিষ্ট একটি সময়ের, নির্দিষ্ট একটি ঘটনাকে তুলে ধরে। (তাই বলে ছবিটার আবেদন বা গুরুত্ব কমে যায় না কিন্তু!)। আমার একটা পরীক্ষা করার ঝোঁক ছিল কিভাবে একটা ছবিকে একই সাথে নৈর্ব্যক্তিক এবং ভৌগোলিক ও কালীক সংশ্লিষ্ট করা যায়। আর এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা হল প্রযুক্তি নির্ভরতা হতে হবে নিম্ন পর্যায়ের অর্থাৎ ছবিটাকে খুব টেকনিক্যাল হলে চলবে না। এস.এল.আর ক্যামেরায় এক হাত লম্বা লেন্স লাগিয়ে আলো-আঁধারীর খেলা একেবারে নিষিদ্ধ। নীচের ছবিটা আমার এমন একটা পরীক্ষার ফসল। ছবিটা একটা বিয়ে বাড়ির (আদতে রেঁস্তোরা) অনুষ্ঠানে তোলা। একটা ছোট পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা, Sony DSC T 900, ব্যবহার করেছি। ছবির পাত্র-পাত্রীদের মৌখিক অনুমতি নেওয়া হয়েছে। স্বাক্ষর বসানো ছাড়া কোন সম্পাদনা করা হয়নি।
এ ছবির কোন ক্যাপশান নেই। আমার অনুভূতিটা ছবিতে অনুবাদের চেষ্টা করলাম মাত্র।
----------------------------------------------------------------------------------------
আপডেট:
(ক) পোস্টের শিরোনাম আগে ছিল "বাজে ছবির গপ্পো"। কিন্তু শিরোনামটা মিস লিডিং। তাই বদলে দিলাম: "শুধুই ছবির গপ্পো।"
(খ) পোস্টের মন্তব্যগুলো ভিন্ন আলোচনার দিকে মোড় নিয়েছে। বিভিন্নকোণ থেকে আকর্ষণীয় মতামত উঠে আসছে। চলুক। যদিও আমার উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল। সেটা শুরুতে ব্যাখ্যা করতে চাই নি। কিন্তু বক্তব্য পরিষ্কার না হওয়ায় নিচে ছোট্ট করে কিছু কথা যোগ করলাম।
(গ) ছবির গঠনমূলক ব্যাখ্যা: (ভাবগত ব্যাখ্যা দর্শকের উপরে)
আমার পোস্টটা আসলে একটা বিশেষ ধরনের ছবি নিয়ে। আমি মূলত নিসর্গের ছবি তুলতে পছন্দ করি। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি অনেকাংশে প্রযুক্তি নির্ভর। ছবির গুণ কখনো নির্ভর করে তার কারিগরী দিকের (শার্পনেস, ফোকাস, পজিশনাল কম্পোজিশান) উপর, কখনো নির্ভর করে সাব্জেক্টের উপর (দুর্লভ প্রজাতি, পশু-পাখির বিচিত্র ব্যবহার ইত্যাদি)। একই ঘরানার/টাইপের ছবি তুলতে গেলে অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে যাই। দেখার চোখ একমুখী হয়ে যায়। তাই সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে এক ছবিতে একটা গল্প বলতে চাওয়ার ঝোঁক মাঝেমাঝে চেপে বসে।
এই ছবিটা আন্ডার-এক্সপোজড, শার্প না, ক্রিটিকাল ফোকাস এর বালাই নাই। ছবিটা শুধুই একটা গল্প বলছে। চরিত্র তিনজন - হিজাব পরা নারী, মাথায় টুপি পুরুষ ও একটি সাইনবোর্ড। কম্পোজিশানটা ত্রিভুজাকার।
একক ভাবে এই তিন চরিত্রকে দেখলে তারা কোন আলাদা গুরুত্ব বহন করে না।
কিন্তু এরা তিনজন যখন একটা চারকোণা ফ্রেমে একই স্পেসে থাকে তখন অর্থ বদলে যায়। কীভাবে বদলায় এইটা দেখাই ছবির উদ্দেশ্য ছিল। সিনেমায় মন্তাজ অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় অল্প শটে অনেক কিছু তুলে ধরতে গেলে। কিন্তু সেখানে ফ্রেম থাকে একাধিক। আমার ছবিতে ফ্রেম একটাই। এক ফ্রেমে অল্প কিছু উপাদান/চরিত্র নিয়ে কিভবে গল্প বলা যায় সেই পরীক্ষার ফসল হল এই ছবিটা। আমার ক্রেডিট নগণ্য কারণ এ ধরনের ছবি অনেকেই তুলেছেন এবং তুলছেন। এটা স্রেফ পর্যবেক্ষণ শক্তি বাড়ানোর একটা অনুশীলন।
মন্তব্য
আপনার ছবির মানে কী, নারী স্বাধীনতাকে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে?
সবক্ষেত্রে একথাটা সত্যি না (যদি না আপনি হিজাব পরাটাকে শিকল মনে করেন)। আমি এমন অনেককেই চিনি যারা স্বেচ্ছায় হিজাব পরছেন।
আর আপনি যদি নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার না দিয়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে বোঝাতে চান তাহলে আমি আপনার সাথে প্রচন্ডভাবে একমত।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। পরের ইচ্ছা যখন নিজের ইচ্ছা হয় যায় তখন সেটাকে আর "স্বেচ্ছায়" করা হয়েছে বলা যায় না।
মুর্শেদ ভাই, আপনি পরের ইচ্ছা বলতে কার ইচ্ছার কথা বোঝাচ্ছেন, ধর্মের?
মানুষ সামাজিক জীব, সমাজে চলতে গেলে সামাজিক কিছু নিয়মকানুনতো মানতেই হয়। আমরা এই যে আইন মেনে চলি কানাডা আমেরিকার মত উন্নত দেশে, তাহলে তো সেটাও অন্যের ইচ্ছাতেই হচ্ছে তাই না? তার মানে আমরা মুক্ত দুনিয়ায় বাস করেও আসলে অন্যের ইচ্ছাতে চলি, স্বাধীন না?
আমি যদিও এভাবে চোখমুখ ঢেকে হিজাব পরাকে সাপোর্ট করি না কিন্তু কেউ যদি তার নিজ ধর্ম (আদৌ এটা বাধ্যতামূলক কিনা আমার সেব্যাপারে সন্দেহ আছে) মেনে চলতে চায় সেটার সমালোচনা করার অধিকার আমাদের আছে বলে আমার মনে হয় না।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
সামাজিক আইনের অত্যন্ত ভুল একটি ইন্টারপ্রিটেশন এটি। সমাজের আইন করা হয়েছে প্রমানিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে, ড়্যাশনাল যাচাইয়ের মাধ্যমে। সে কারনে বৃহত্তরভাবে সমাজের আইন কিছু লোকের জন্য পীড়াদায়ক মনে হলেও সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে এটা প্রজোয্য করতে হয়। এই আইনের কারনে আপনি পরাধীন নন। বরং এই আইনই আপনার স্বাধীনতা রক্ষা করছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই আইন ভুল। যেমন গে বিবাহ। সেসব ক্ষেত্রে এই আইনের সমালোচনা পর্যালোচনা এবং শোধন প্রযোজ্য। সুতরাং আইনও মোরাল পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তনশীল।
কোনো ব্যক্তি বা ধর্ম বা ব্যক্তি পছন্দ সমালোচনার উর্ধ্বে হবে কেনো? কারো যেমন হিজাব পরার অধীকার আছে। তেমন অন্যের সেটা সমালোচনা করার অধীকার আছে। আমি যদি হিজাব পরিধানকারী বাড়িতে গিয়ে হৈ চৈ করতাম, কিংবা রাস্তা ঘাটে টিটকারী মেরে হ্যানস্তা করতাম তাহলে সেটা হোতো ব্যক্তি স্বাধীনতার খর্ব করা। কিন্তু যুক্তির মাধ্যমে এটার আলোচনা/সমালোচনা হলে সেটা কেনো তার ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করবে। বরঞ্চ এই ইনডেমনিটি চাওয়াটাইতো আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করার সমান হবে। হবেনা?
ভাইয়া, আমি মোটের উপর আপনার সাথে একমত।
কিন্তু পাগল মনের
এই কথার প্রেক্ষিতে একটা প্রশ্ন আসলো - যদি কেউ হিজাব পরে তার মা-চাচি-খালাকে দেখে সেক্ষেত্রে তার এই সিদ্ধান্ত কি র্যাশনাল না? ধরেন লিবারেল একটি দেশের মুসলিম পরিবারের মেয়ে, মায়ের কথা শুনে হিজব পরা শুরু করে - এটা তো র্যাশনাল। কারণ-
যুক্তি ১: মায়ের কথা শোনা উচিত
যুক্তি ২: হিজাব তখন তার একটি আইডেনটিটি
----------
তবে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় মুখ ঢাকা হিজাব পরা নারী আমি খুব কম দেখেছি। পর্যবেক্ষণ সীমিত হতে পারে, তবে ধারণা করছি এটাই স্বাভাবিক।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
মায়ের কথা শোনা উচিত কি কোনো যুক্তি? একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক বাবা-মায়ের অযৌক্তিক দাবী মেনে নিচ্ছে - এটা কিভাবে যুক্তি হয়? যদি এমন হোতো যে, প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর নিজের বুদ্ধিতে হিজাব মেনে নিচ্ছে তাহলেও স্বাধীনতার কথাটা কিছুটা মানতাম।
ভাইয়া, আপনি ঐ মেয়ের কোণ থেকে দেখেন। বাবা-মায়ের দাবীটা যে অযৌক্তিক সেটা তো তাকে আগে উপলব্ধি করতে হবে। সবার ক্ষেত্রে এই উপলব্ধির লেভেলটা তো এক নয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনের কাছে তো অনেক মায়ের অনেক কথাই অযৌক্তিক মনে হতে পারে - কোনটার ক্ষেত্রে দাবীটা আসলেই অযৌক্তিক, কোনটার ক্ষেত্রে নয়। সে হয়ত ভাবছে, মা যা বলছে ভালোর জন্যই বলছে - এইটুকুই যদি তার উপলব্ধি হয়?
মায়ের কথা শুনে এবং/অথবা মাকে দেখে হিজাব পরতে শেখা - এই সিদ্ধান্তটা আমার কাছে র্যাশনাল মনে হয়েছে। এখন তার এই সিদ্ধান্ত অন্যদের উপরে কী প্রভাব ফেলছে তা আমার মনে কৌতূহল জাগায়।
তাই নীচে আপনার কমেন্টের এই অংশটুকু আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন মনে হয়েছে -
একই অনুভূতি আমারো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার সহপাঠীদের অনেকেই সম্পূর্ণ হিজাব পরতো। তাদের সাথে তাই আগেই একটা দেওয়াল উঠে গিয়েছিল। তারা সাধারণত পিকনিক বা শিক্ষাসফর জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে কম অংশগ্রহণ করতো। তাদের মুখোমুখি হলে আমার খুব বিচিত্র একটা অনুভূতি হত। এই মেয়েরা আমার সাথে প্রায় ৫ বছর একসাথে পড়াশোনা করলো - কিন্তু রাস্তায় দেখা হলে তাদেরকে আমি চিনবো না (তারা হয়ত আমাকে চিনবে, কিন্তু এক তরফা), কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হলে কী খবর বলা সম্ভব না, পাসিং আউটের গ্রুপ ছবিতে তারা নাই, পুরো সময়টাতেই তারা anonymous - এই যে সামাজিকভাবে স্বেচ্ছা নির্বাসন, অন্য পুরুষদের (সহপাঠী, সহকর্মী যাদের সাথে মিথস্ক্রিয়া সত্যি জরুরী) ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার প্রাণান্তকর চেষ্টা - কতটুকু র্যাশনাল?
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ পাগল মন। আমি আসলে শুরুতে ছবির মানে ব্যাখ্যা করতে চাইনি। চাচ্ছিলাম যে পাঠক, দর্শক ছবিটাকে নিজেদের মত করে সংজ্ঞায়িত করুক। কিন্তু বক্তব্য পরিষ্কার না হওয়ায় আমি পোস্টে বাড়তি কিছু সংযোজন করতে ইচ্ছুক। আশা করি তা আপনাকে আমার অনুভূতিটা বুঝতে সাহায্য করবে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
লেখা পড়ে বক্তব্য বুঝতে পারলাম না। সেজন্য মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। তবে জেনারেল একটা মন্তব্য করি।
স্বেচ্ছায় অনেকেই হিজাব পড়ে, তাই বলে সবাইকে শিকল পড়িয়ে রাখা হয়েছে বলা যায় না। তেমনি বলা যায় না পরের ইচ্ছে আসলেই নিজের ইচ্ছেতে পরিণত হয়েছে। তবে গতানুগতির ভাবধারা এমনই যে হিজাব পড়লেই ধরে নেয়া হয় সেটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে পিএইডডি করা একজনকে আমি চিনি যিনি চোখ বাদে সবকিছু ঢেকে রাখেন। আমেরিকায় হিজাব নিয়ে পিএইচডি করেছে। এখন থাকেন কানাডায়। এই দেশগুলো তাকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছে। সো কলড প্রগতিবাদীরা শুধু বোঝে হিজাব মানেই ভিন্নগ্রহের প্রাণী। তারা বোঝেনা যে শুধু তাদের মতই মত নয়, অন্যেরও নিজের মতে চলার অধিকার আছে।
অবশ্যই নিজের মতো চলার অধীকার আছে। কিন্তু সেকারনে হিজাব পরা জাস্টিফায়েড হয় না।
আমি প্যান্টের উপর দিয়ে যদি আন্ডারগার্মন্টস পরি সেটা পরার অধীকার আমার আছে। আর আমি সেটা করলে অন্যরা কি ভাববে সেটার অধীকারও অন্যদের আছে। প্রশ্ন হচ্ছে প্যান্টের উপর আন্ডারগার্মন্টস পরাটা পিছনে কোনো ড়্যাশনাল কারন আছে কিনা।
'আমার ভালো লাগে', 'রোদ থেকে রক্ষা' এগুলো কোনো ড়্যাশনাল কারন নয়। ভালো করে অ্যানালাইজ করলে দেখা যাবে অর্ন্তনিহীত ধর্মের বেড়াজালটাই আঁকড়ে রেখেছে এই মানুষ গুলোকে। আর ঠিক এই জায়গাতেই আমার আপত্তি।
ব্যক্তিস্বাধীনতা ঠিক কোন অর্থে র্যাশনালিটির আওতায় থেকে মাপকাঠি ঠিক করে জানতে চাচ্ছি। ইউরোপ-আম্রিকায় সীবীচে হাফ নেংটু হয়ে ঘুরাফেরার জন্য অনেকেই ত্বকে ক্যান্সারের শিকার হন। র্যাশনাল এপ্রোচ হলে আগে ত্বক পরীক্ষা করে তারপরে বীচে নেংটুপুটু হয়ে যেতে অনুমতি দিতে হতো। তা কি করা হয়? কে কি ভাবলো সেটা ইগনোর করাই মনে হয় ব্যক্তিস্বাধীনতার চূড়ান্ত রূপ। যতক্ষণ না কারো কোনো কিছু কারো কোনো ক্ষতি করছেনা ততক্ষণ তাকে সেটা করতে দেওয়াই তো ব্যক্তিস্বাধীনতা, নাকি?
নারীরা কে কি পড়বে তা নিয়ে তাদের কথাবার্তার তোয়াক্কা না করে আমরা পুরুষেরা যখন মাতব্বরী ফলাতে যাই তখন তা প্রকারান্তরে ওই একই বস্তুতে দাঁড়ায়। সব কিছুতে প্রগতির জুজু আর সবকিছুতে ধর্মের জুজু আসলে একই মুদ্রারই এপিঠ-ওপিঠ।
প্রগতির বাইরে গেলেই যেমন সবকিছু ধর্ম হয়না তেমন ধর্মের হলেই তা প্রগতির বাইরে হয়না- সম্ভবত এটাই সবচেয়ে র্যাশনাল এপ্রোচ।
একজাক্টলী আমার পয়েন্ট। এই ইড়্যাশনাল নেংটুপুট হয়ে ঘোরা যেমন আমার আপনার মর্মপীড়ার কারন, ঠিক তেমনি হিজাব পরার ব্যাপারটা কারো কারো মর্ম পীড়ার কারন।
ঠিকাছে মাতব্বরী ফলিয়েন না। বরং আপনি হিজাব পরে ঘুরুন। কেননা এটা আপনাকে রোদ থেকে বাঁচাবে এবং শরীরকে সুস্থ রাখবে। উপরন্তু আপনার ব্যক্তি স্বাধীনতা এটি। যদি কোনো পুরুষ হিজাব পরে ঘুরে বেড়াতো তাহলে আমি মেনে নিতাম যে ধর্মের জুজু আসলেই নেই।
এই জটিল কথাটা আমার মাথায় ঢুকল না। ধর্মের বাইরে যাবার প্রসঙ্গ কোথায় আসলো?
আমি/আপনি যদি তুয়ারেগ হতাম তাহলে ঠিক এই কাজটিই করতাম রে ভাই। র্যাশনাল এপ্রোচ তাই বলে। তাই আবারো জিজ্ঞেস করি, ব্যক্তিস্বাধীনতা ঠিক কোন অর্থে র্যাশনালিটির আওতায় থেকে মাপকাঠি ঠিক করে জানতে চাচ্ছি। মানুষ র্যাশনাল তাই সে স্বাতন্ত্রকামী? নাকি মানুষ নিজেকে আলাদা করে দেখতে চায় বলে বা নিজের আলাদা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় বলে? আমারতো মনে হয় এই একজিস্টেনশিয়ালিজমই এর পেছনের কারণ। সেক্ষেত্রে র্যাশনাল এপ্রোচ খুব একটা ধোপে টেকেনা। সহজ কথায় আমি চাই তাই করুম, আমার/তোমার কুনো ক্ষতি হইলে কও, নাইলে অফ যাও! এইই হলো ব্যক্তিস্বাধীনতা।
আরে ভাই আমিই বা কোথায় ধর্মের বাইরে যাওয়ার কথা বললাম? যা ধারণ করে তাই ধর্ম(একেশ্বরবাদি, প্যাগান, কমিউনিজম, পুজিবাদ, ফ্যাসিবাদ, জাতীয়তাবাদ, আঞ্চলিক হেজেমনি হে হে সবকিছুই); এর বাইরে যাওয়া পুরোপুরি অসম্ভব। আমি স্রেফ বলেছি র্যাশনাল এপ্রোচ হলো মিউচুয়ালি ইনক্লুসিভ, এক্সক্লুসিভ না। আরো সহজে বললে,
ক কে জোর করে হিজাব পড়ানো হয়েছে।
খ কে জোর করে হিজাব পড়ানো হয়েছে।
সুতরাং গ কেও জোর করে হিজাব পড়ানো হয়েছে, তা সে যে কারণই দেখাক না কেন, হা হা।
আপনার এপ্রোচ এটাই।
কিন্তু নারীকে হিজাব পরার জন্য তুয়ারেগ হতে হচ্ছে না কেনো?
খুব বেশী দ্বিমত নেই। কিন্তু হিজাব কিভাবে একটা নারীর এবং সমাজের ক্ষতি করে আলটিমেটলি সেটাই ভাববার বিষয়।
আমি পুরোপুরিভাবে আপনার সাথে একমত।
কেউ সত্যিকার অর্থেই স্বেচ্ছায় "র্যাশনাল" কোনকিছু করলে সেখানে আমার আপত্তির কিছু নেই, কিন্তু এ পর্যন্ত 'স্বেচ্ছায়' হিজাব পরা যে কয়জনকে দেখেছি তাদের ক্ষেত্রে তাদের 'স্ব-ইচ্ছা'র গোড়া খুঁজতে গেলে শেষ পর্যন্ত সেই ধর্মের দোহাই-ই খুঁজে পাওয়া যায়। ব্যতিক্রম একটাও পাইনি এ পর্যন্ত।
'আমার ভালো লাগে'টা আমি সমর্থন করবো যদি সত্যিই সেটা শুধু ভালো লাগা থেকে হয়। এই ক্ষেত্রেও 'ভালো লাগা'টা সব সময়েই সেই ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুশাসন থেকেই আসতে দেখেছি, একটাও ব্যতিক্রম পাইনি। তবে কিনা, কোন ব্যাপার যদি অন্যের প্রতি অন্যায়ের ধারক হয়ে থাকে, যেমন হিজাব, সেক্ষেত্রে ভালো লাগলেও সেটা করাটা কতখানি গ্রহণযোগ্য সেই প্রশ্ন থেকে যায়। এই কারণেই কেউ 'নিজের পছন্দে' বা নিজের 'করতে ভালো লাগলে' যদি স্বস্তিকা চিহ্ন বা চাঁদ তারা গলায় ঝুলায় সেটা সমর্থনযোগ্য নয়।
ইন্টারেস্টিং আলোচনা, (যদিও অফটপিক মনে হয়) "ভালো লাগা" জিনিসটাই বা কতটুকু বিশুদ্ধ? কোনো ভাল লাগা-কেই কি "শুধুই ভাল লাগা" বলা যাবে? তার মধ্যে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, পরিবার সবকিছুর প্রভাব থাকবেই। হিজাবের কথা বলছেন, তার বিপরীতে,আমেরিকায় গরমকালে ক্লাসে শর্ট প্যান্ট পরে আসা তরুণী কতটা "বিশুদ্ধ ভাল লাগা" থেকে এটা করেন? নাকি এটার পেছনে কারণ হল অভ্যস্ততা?
আর হিজাবের সাথে স্বস্তিকা চিহ্ন মেলানোটা বুঝলামনা একেবারেই। প্রথমত, হিজাবটা একটা বিশাল অংশের জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন পোশাক, এটার সাথে ইউরোপের এককালের একটা খুনে রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক চিহ্নের তুলনা হয় কিভাবে? ২য়ত, স্বস্তিকা চিন্হ "সমর্থনযোগ্য নয়" এটা কি সবক্ষেত্রে ঠিক? অনেক হিন্দু বাড়িতেই তো এই চিহ্ন দেখেছি।
এক্ষেত্রে কারন যেটাই হোক ধর্ম নয়। এটাই পয়েন্ট।
এই দৈনন্দিন পোশাকটা চালু হয়েছে কিভাবে? ইসলাম ধর্মের ইন্ট্রোডাকশনের পর থেকেই তো, তাই না? পেগান ধর্মের মক্কাবাসীরা কি আগে থেকেই হিজাব পরতো? কিংবা আফ্রিকা, এশিয়ায় ইসলাম প্রচলনের আগেও কি হিজাব চালু ছিলো?
হ্যাঁ, আগে থেকেও চালু ছিল। নিকাব বা হিজাব বিষয়ক যেকোন বড় আলোচনাতেই পাবেন, যে ইসলামই যে ইউনিকলি এটা চালু করেছে, তা কিন্তু নয়, বরং ঐ অঞ্চলের একটা ট্রাডিশন আগে থেকেও ছিল। উইকি ঘাঁটলেই পাবেন, তাই সোর্স দিচ্ছিনা।
আর বড় করে বললে, ধর্ম কিন্তু "হঠাৎ করে একেবারেই আকাশ থেকে পড়া" কোন জিনিস নয়, তৎকালীন পরিবেশের সাথে এটার অনেক মিল থাকবে, খুব স্বাভাবিক কারণেই। তাই ধর্ম জিনিসটাকে ট্রাডিশন থেকে সবসময় আলাদা করাও মুশকিল, তাই কোন কোন কাপড় বা আচার আচরণ যে ১০০% "ধর্ম" থেকেই উদ্ভুত, সেরকমটাও বলা যায় না।
তবে হিজাব কিভাবে "অগ্রহণযোগ্য স্বস্তিকা"র সাথে তুলনীয় হয়, এটা এখনো বুঝিনি।
মেয়েদের হিজাব/বোরকা প্রথম চালু হয় আসিরীয়দের আমলে। এইটা সকল আব্রাহামিক রিলিজিয়নের বৈশিষ্ট্য। এখনো খ্রিস্টান নানরা সেটা ধারণ করে।
আর ধর্ম বলতে স্রেফ আব্রাহামিক রিলিজিয়ন বোঝাচ্ছেন কেন? ঐ আম্রিকান মেয়ের এই শর্ট প্যান্ট পড়ার কারণ কি র্যাশনাল না নির্দিষ্ট কিছু ধারা/ঐতিহ্য/নর্মস ফলো করা? অন্ধের মতো সেই ধারা অনুসরণ করা ধর্ম নয় কেন? পুঁজিবাদও ধর্ম। শর্টপ্যান্ট পড়লে তাকে ভালো দেখাবে==> শর্ট প্যান্ট ইন্ডাস্ট্রি==> ফিগার সচেতনতা==> ব্যায়াম ইন্ডাস্ট্রি আর ধর্মীয় বাণী হিসাবে নানাবিধ বিজ্ঞাপন যা পৃথিবীর অন্যতম মূর্খ আম্রিকানরা মন্ত্রমুগ্ধের মতোই গিলে; তো সাধারণ ধর্মের প্যাটার্নের সাথে এর পার্থক্য কোথায়?
সত্যিকার অর্থে নিজে থেকে হিজাব পরেছেন এই ধরণের কাউকে আমি দেখিনি কোনদিন। অনেকে দাবী করেছেন তাঁরা স্বেচ্ছায় করেন, কিন্তু একটুসময় তাঁদের সাথে কথা বললেই (যদি আবার পরপুরুষের সাথে কথা বললে তাঁর ধর্ম ছুটে না যায়) দেখা যায় ইচ্ছার গোড়া সেই ধর্মেই বসে আছে।
প্রথমতঃ স্বস্তিকা চিহ্ন মেলানোঃ আমার নিজের লেখা থেকেই কোট করিঃ
ধর্মীয় ব্যবহার বাদ দিয়ে যদি স্বস্তিকাকে "খুনে রাজনৈতিক দলের প্রতীক" ধরে নেই, তাহলে ওই রাজনৈতিক দলের সমর্থক না হয়েও কেউ ওই চিহ্ন গলায় ঝোলালে সেটা ওই রাজনৈতিক দলের আদর্শের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে। চাঁদতারা গলায় ঝোলানোও একই ব্যাপার নির্দেশ করে।
যদি তর্কের খাতিরে আমি ধরেও নেই যে কেউ পূর্ণ স্বেচ্ছায় হিজাব পরে তারপরেও ইসলাম যে হিজাব একতরফাভাবে মেয়েদের ঘাড়ে চাপিয়েছে এবং এই হিজাব দিয়ে অনেকের অধিকারকেই স্রেফ পায়ে মাড়িয়ে গিয়েছে সেটা মিথ্যে হয়ে যায় না। এবং যায় না বলেই 'স্বেচ্ছায়' হিজাব পরাটা অন্য অনেকের অধিকারকে পায়ে মাড়ানোর প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন। একই ভাবে চাঁদতারা বা স্বস্তিকা "গলায় ঝুলানো" দুইটা বিশেষ ব্যাপারের প্রতি সমর্থন।
দ্বিতীয়তঃ 'স্বস্তিকা চিহ্ন' সমর্থনযোগ্য নয় আমি বলিনি, আমি বলেছি ওটা গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো সমর্থনযোগ্য নয়, এবং একইভাবে চাঁদ তারাও গলায় ঝোলানো সমর্থনযোগ্য নয়। স্বস্তিকা শুধুমাত্র নাৎসিজমের প্রতীক নয়, এটা নাৎসিজমের জন্মের অনেক আগে থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের অনেকগুলো ধর্মে ব্যবহৃত প্রতীক। আপনি যেসব বাড়িতে দেখেছেন সেখানে এটাকে ধর্মীয় প্রতীক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু তাই বলে তারাও ওটাকে গলায় ঝোলায় বলে দেখিনি।
লক্ষ্য করুন, এটার প্রচলন নাৎসীজমের জন্মেরও কয়েক হাজার বছর আগে থেকে। সেই কারণেই ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার পুরোপুরি নাৎসীজমের কনটেক্সটের বাইরে, যে সব জায়গায় এই ধর্মগুলো প্রচলিত নয় সেখানে কোথাও স্বস্তিকা এঁকে দেখুন কেমন ঘটে - একইভাবে ইউরোপীয় কান্ট্রিসাইডের মেয়েরা যদি ট্র্যাডিশনাল লম্বা গাউন আর মাথায় রুমাল ব্যবহার করে, সেটা এই 'ইসলামিক' আলোচনার কনটেক্সটের বাইরে পড়ে।
স্বস্তিকার উৎস যদি নাৎসীজম হতো, সেক্ষেত্রে ধর্মীয় হোক আর যা-ই হোক, ওটার যে কোন ব্যবহারই আপত্তিকর হতো।
হিজাবের উৎস কিন্তু ইসলাম, হিজাবের নামে পরম শক্তিশালী সোর্সের দোহাই দিয়ে মেয়েদের ঘাড়ে পুরুষতান্ত্রিক নোংরামির দায় চাপানো ইসলামের সময় থেকেই শুরু, সেই কারণেই আজকে হিজাবের ব্যবহার, এমনকি যদি পুরোপুরি "স্বেচ্ছায়"ও করা হয়, সমর্থন করতে পারছি না। স্বস্তিকা "স্বেচ্ছায়" গলায় ঝুলানো এবং "স্বেচ্ছায় হিজাব পরা"র মধ্যে সম্পর্কটা এখানেই যে দুই ক্ষেত্রেই "স্বেচ্ছায়" অন্যের প্রতি অবিচারের একটা চিহ্নকে ধারণ করা হচ্ছে এবং ধারণের মাধ্যমে সেই অবিচারকে সমর্থন করা হচ্ছে।কেউ নিজে থেকে কিছুতে অভ্যস্ত হলে আমার কিছুই বলার নেই। কিন্তু ধর্মের নামে কারো ঘাড়ে কিছু চাপিয়ে তারপর অভ্যস্ততার দোহাই দেয়ার ক্ষেত্রেই আমার আপত্তি। গরমকালে ক্লাসে যে শর্ট প্যান্ট পরে আসে, সে কি কখনো ফুল প্যান্ট পরে না? তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কি কালেক্টিভলি ধর্ম বা সমাজের নামে শর্ট প্যান্ট পরতে বাধ্য করা হয়েছে, এবং সেটা জেনেশুনে সে ওই শর্ট প্যান্টই পরে আসে? উত্তরগুলো খুঁজে দেখুন, হিজাবের সাথে পার্থক্যটা দেখতে পাবেন।
আপনার আপত্তিকে আমি সম্মান করি। রোদ থেকে রক্ষা নয়, ধর্মীয় কারণেই যদি কেউ পড়ে তাহলে সমস্যা কোথায়?
ধর্ম মানে বৈশিষ্ট্য। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ি কিছু জিনিস করা যাবে, কিছু করা যাবে না (যদিও আপাদমস্তক ঢেকে রাখা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে)। যিনি ধর্মকে গ্রহণ করেছেন তিনি তো ধর্মের বিধিনিষেধ মানবেনই। তবে সেটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া যেমন উচিত হবে না, তেমনি কেউ যদি সেইসব রীতিনীতি মেনে চলে সে স্বাধীনতা রোধ করতে যাওয়া কোন যৌক্তিক কাজ মনে হয় না।
প্যান্টের উপর আন্ডারওয়্যার পড়া আর হিজাব করার তুলনা কি ঠিক হলো, মুর্শেদ ভাই?
কোরানের কোথাও কিন্তু হিজাব পরা নিয়ে সরাসরি কিছু বলা নেই। হাদীসে আছে।
এই জায়গাটাতেই তো আমার আপত্তি। যুক্তির বাইরে এসে ধর্মে বলা আছে বলে স্ত্রীকে মারধর করা, নারীদের নেতৃস্থানীয় অবস্থানে আসতে না দেয়া, তাদের প্রগতিতে বাধা দেয়া এগুলো কি গ্রহণযোগ্য?
খাঁটি কথা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
পিপিদা, আমার ছবিতে হিজাবের আলাদা করে গুরুত্ব খুব কম। এটা স্রেফ এই ছবিতে একটা প্রভাবক (ক্যাটালিস্ট) হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমার পোস্টের প্রাথমিক বক্তব্যটা ধোঁয়াশাপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আসলে আমি হিজাব নিয়ে ব্যক্তিগত কোন মত প্রকাশ করতে গিয়ে ছবিটাকে ব্যবহার করছি না। স্রেফ একটা ফটোগ্রাফিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই ছবিটা তোলা।
তবে হিজাবের সামাজিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক ছাড়াও মনস্তাত্ত্বিক কিছু দিক আছে। আমি একজন ফটোগ্রাফার। আমি যখন পোর্ট্রেইট করি তখন বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্ন ভাবে ক্যামেরার সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে দেখি। একজন হিজাব পরা নারীর রিঅ্যাকশান বা প্রতিক্রিয়া বেশ ভিন্ন। সে কিভাবে ছবিতে আসে, ছবির অন্যান্য মানুষগুলোর সাথে কিভাবে মিথস্ক্রিয়া করে - আমার আগ্রহ ওখানেই।
আরো পরিষ্কার করে -
কয়েকটা ভিন্ন ছবি দেখি - সবগুলোতেই একটা বিষয় সাধারণ। তা হল হিজাব পরিহিত নারীর উপস্থিতি।
ছবি ১: গ্রুপ ছবি - সবাই হিজাব পরা নারী
ছবি ২: গ্রুপ ছবি - একজন হিজাব পরা নারী, একজন হিজাব ছাড়া ও আরেকজন পুরুষ
এই ছবিতে যে তিনজন মানুষকে দেখছেন তারা একটা ছবির ফ্রেমে ভিন্নভাবে ইন্টার-অ্যাক্ট করছে। দুই নারীর সামাজিক সম্পর্কের মাঝে হিজাব কতটা গুরুত্বপূর্ণ? ছবিতে পুরুষের সাথে দুইজন মহিলা কি একই ভাবে ইন্টার্যাক্ট করছে? উপরের ছবিতে যে হোমোজেনিটি আছে তা এই ছবিতে না থাকায় এর গুণগত কি কোন পার্থক্য হয়েছে?
আবার দেখেন -
এখানেও তিনজন নারী। বয়সে তফাৎ। ছবি কিন্তু এই ফাঁকে বদলে গেল। আগের ছবিগুলোতে বয়স কোন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর না। এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রের একটা হল বয়স।
* ছবিগুলো উইকি বা কমন্স স্টক এজেন্সি থেকে সংগ্রহ করা। মডেল রিলিজের ব্যপারে তাই সমস্যা নাই। শেষ ছবিটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফির কাভার পেইজ হয়েছিল। আলোকচিত্রী jodi cobb
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ। পোস্ট পড়ে তোমার কৌতূহল সম্পর্কে কমই বোঝা যাচ্ছিল
চমৎকার অবজার্ভেশন!
ছবিটা একটা বিয়ে বাড়ির( দেখিয়া মনে হইতেছে, স্হানীয় কোন মসজিদে বিবাহ সুসম্পন্ন হইয়াছে- ঠিক নহে ভ্রাতোঃ?)বিয়ে বাড়ির কোন জাঁকজমক নেই, কন্যার নেই কোন সাজসজ্জার বালাই। হেজাবধারীর পাশে দেড়েল টুপি পরা লোকটি যদি তার বর হন, তার সাংসারিক গল্পের কিছুটা এখনই আভাস মেলে যেন। তরকারিতে লবন না হলে, ইনি কিতাব খুলে বউ মারবার কায়দা হাতে কলমে দেবেন, বোঝাই যাচ্ছে। আর এই বিয়েতে ফজুল খরচা করা মোমেন মুসলমানের কাজ না' ফতোয়ায় কোন রকমের খাওয়া দাওয়াই হয়নি। যেকারণে পাত্র-পাত্রীর মুখ কেমন শুকনো দেখাচ্ছে। এসবই বলছে আপনার বাজে ছবির গল্পে? আমার কিন্তু কোনই দোষ নেই, গল্পটা আমি কিন্তু বানাইনি, আমার চোখ ছবিটা দেখে এমনই পড়ে নিলো যে! ভুল হলে ক্ষম ক্ষম অপরাধ
- আয়নামতি
আপনার গল্পের সাথে আমার গল্পের অনেক মিল। পার্থক্য হল যে আমার গল্পটা কথায় ধরতে চাওয়াটা একটু কষ্টসাধ্য, ছবিতে সহজ। অনুরোধ করবো পোস্টের আপডেটে চোখ রাখতে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
হিজাব পড়াটাকে নিজের ইচ্ছায় পড়া বলতে পারছিনা ... কারও মানসিকতাকে পারিবারিক বা সামাজিক ভাবে পরিবর্তিত করা বা হওয়া নিজের ইচ্ছা বলা যায়না ...আমাদের সমাজে ইচ্ছাটা চাপিয়ে দাওয়া হয়, নিজের মধ্যে সেটা তৈরী হয়না ...
- অর্ফিয়াস
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। কথার সাথে আংশিক সহমত পোষণ করছি এই জায়গায় - আমাদের সমাজে ইচ্ছাটা চাপিয়ে দাওয়া হয়, নিজের মধ্যে সেটা তৈরী হয়না ...
একমত নই এই জায়গায় - কারও মানসিকতাকে পারিবারিক বা সামাজিক ভাবে পরিবর্তিত করা বা হওয়া নিজের ইচ্ছা বলা যায়না
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ডুপ্লি ঘ্যাচাং
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
পিপিদার সাথে সহমত। বক্তব্য স্পষ্ট নয়।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ধন্যবাদ সচল জাহিদ ভাইয়া। দোষটা আমার লেখার।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
একটা বিয়ে বাড়ি। কমিউনিটি সেন্টার। যেটা খোলা দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে যেকোনো ধর্মের, মতের, যেকোনো বর্ণের, যেকোনো বয়সের, যেকোনো সময়ের (ভদ্রমহিলার হাতের মোবাইল দ্রষ্টব্য), যেকোনো লিঙ্গের মানুষের সেখানে প্রবেশাধিকার আছে। উৎসব করারও অধিকার আছে।
স্বল্প পরিসরে ধরা এই ছবিতে আমার কাছে এটাই মনে হলো।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দারুণ চোখ, ধু-গো দা। মোবাইলের ব্যাপারটা (যোগাযোগ করার মাধ্যম, সময়) ঠিক ধরেছেন। বাকি ব্যাখ্যা আপনার নিজের - সেজন্য
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
জটিল ভিডিও।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
হাহা, এটা কি শ্যাম্পুর অ্যাড নাকি হিজাবের অ্যাড বুঝলুম না
ধৈবত
আমি শিরোনাম, গল্প, আর মন্তব্য কোনোটার সাথেই কোনোটার সম্পর্ক পাইলামনা
আপনার আগের অসাধারণ সব ফটোব্লগ দেখেছি। পোস্ট এ ঢোকার সময় ভাবলাম চমৎকার ওয়াইল্ড কিছু হবে । কিন্তু একি? সিরিয়াস বিষয়ের আনাগোনা
অতীত
অতীত ভাই, দুঃখ করেন না। সামনের পোস্টে ওয়াইল্ড ছবি আসবে। আর
শিরোনাম - এই পোস্ট আসলে ছবির গল্পটাকে ঘিরে
গল্প - যে যার ইচ্ছেমত বানিয়ে নেন। আমি শুধু তিনটা চরিত্র দিলাম।
মন্তব্য - দুই ধরনের আলোচনা পেয়েছি।
পাগল মন, মুর্শেদ, অপছন্দনীয়, অনাহুত বা রবাহুত, প্রকৃতিপ্রেমিক, অর্ফিয়াস, দিফিও-1 এক ধরনের আলোচনা করেছেন। বিতর্ক মূলত ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বরূপ ও র্যাশনালিটি প্রসঙ্গে।
ধুসর গোধূলি, শুভাশীষ দাশ আমার ছবি কেন্দ্রিক ওনাদের নিজস্ব চিন্তা যোগ করেছেন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ছবি বাদ দিয়ে অফটপিক আলোচনাই বেশী হয়ে যাচ্ছে...
"অ্যাক্সেসিবল কম্পিউটিং" এর একটা রিসার্চ ডিরেকশন হচ্ছে কিভাবে একটা ছবির কম্পোজিশনকে পুরোপুরি কথায় প্রকাশ করা যায়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বোঝার স্বার্থে। আপনার ছবিটাই একটু চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?
উঁহু, অফটপিক নয়, একটু ভিন্ন খাতে আলোচনা চলছে।
চেষ্টা করে দেখতে পারি, কিন্তু ভাষার উপর দখল তো কম।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
চমৎকার ছবি। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, ছবিগ্রাহক ওপেন সাইনের সঙ্গে হিজাব পরা মহিলা ও টুপি পরা পুরুষের অমিল দেখাতে চেয়েছেন। কারণ, অনেকেই মনে করেন- হিজাব ও টুপি একধরণের 'অযৌক্তিক' বাইন্ডিংস। আবার এই দু'জনের মধ্যে একধরণের নৈকট্য আছে - যা তাদের পাশে রাখা সাইনটাকে একধরণের অগ্রাহ্য করছে। একদম সিম্পল ভাবনা।
মুর্শেদ ভাই যদি 'ধর্ম সংক্রান্ত একমুখী' মনোভাব পোষণ না করতেন, তাহলে হিজাব 'নিজের স্বেচ্ছা অধিকার' হিসাবে দেখতেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে 'পুরো মুড়িয়ে' পছন্দ করিনা। কিন্তু, যেটুকু করলে কাজে সমস্যা হয়না, সেটি পছন্দ করি। একটি উদাহরণ দেই, আমার এক বান্ধবী যার বয়স ৩০। তার মা এবং বড়বোন ছোটবেলা থেকেই হিজাব করে অভ্যস্ত। কিন্তু, তাকে কখনই জোর করা হয়নি। আর এই বয়সে এসে তার মনে হচ্ছে তার নীতিবোধের সাথে মিল রাখতে হিজাবের প্রয়োজন। সে করছে, তার পারিবারিক কোনই চাপ নেই। এতদিন করেনি বলেও চাপ ছিলোনা, এখন করছে বলেও নেই। তারপরও করছে। এটিকে তার অধিকার বলেই আমি মনে করি। এতে আমার অধিকার খর্ব হচ্ছেনা তো!
এই কথাটার চেয়ে একমুখী কথা হওয়া শক্ত!
একমুখীতা মানে কি? আমি যদি বলি আমি ইসলামের অনেক কিছুর পক্ষে কথা বললেও হিজাবকে কোন স্বেচ্ছা অধিকার হিসেবে দেখি না, বরং পুরুষতান্ত্রিকতার চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবে দেখি, আপনার স্টেটমেন্ট অনুসারে আমিও তো একমুখী তাই না? যতক্ষণ কেউ ইসলামের "প্রতিটি ব্যাপার" পুরোপুরি সমর্থন না করবে ততক্ষণ কি সে একমুখীভাবে ধর্মবিরোধী?
আপনার বান্ধবীর হিজাব পরিধান আপনার অধিকারকে সরাসরি খর্ব করে না। কিন্তু হিজাবের মাধ্যমে অনেকের অধিকারকে খর্ব করে তাদের উপর পুরুষতান্ত্রিকতা চাপিয়ে দেয়াটা সমর্থন করে। আমার যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার আছে বলেই কি আমি অন্যের প্রতি অন্যায়ের চিহ্নকে "স্বেচ্ছায়" ধারণ করার অধিকার রাখি?
হিজাব পরা মানুষ আমাকে মেসেজ দেন, "আমার চেহারা দেখার, আইডেন্টিটি জানার অধিকার তোমার নেই। এর কারন এই না যে, তুমি খারাপ কিছু করেছো। এর কারন হোলো তুমি পুরুষ। পুরুষ মাত্রই দুশ্চরিত্র এবং পরিত্যাজ্য।"
হিজাব পরা মানুষ স্বেচ্ছা অধিকারের কারনেই হিজাব পরেছেন। তার এই অধিকারকে সম্মান করে আমি তার হিজাব টেনে খুলে ফেলবো না। কিংবা তাকে রাস্তা ঘাটে গালি দিয়ে বিব্রত করবো না। কিন্তু হিজাবীর অনুচ্চারিত যে নিশব্দ গালি আমি অনুভব করছি তার প্রতিবাদ করে যাবো। পুরুষ হবার কারনে চোখে আঙ্গুল দিয়ে হিজাবী যে ডিস্ক্রিমিনেশন করে গেলেন তার বিরুদ্ধে আমি সরব হবো।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
হিজাব পরা মানেই যে "তুমি পুরুষ। পুরুষ মাত্রই দুশ্চরিত্র এবং পরিত্যাজ্য" এরকম মনে করানো আমার সেটা মনে হয় না।
যারা হিজাব পরেন তারতো তাদের ভাই, বাবার সামনে পরেন না, তাই না? তারা এটা পরেন নিজ ধর্মে পরতে বলা আছে তাই পরেন। আর ধর্মানুযায়ী সেটা বাইরের লোকদের সামনেই সেটা পরতে বলা আছে। এর মানে এই না যে বাইরের পুরুষরা খারাপ এজন্য হিজাব পরতে বলা হয়েছে। কেউ যদি হিজাব পরে তারমানে এই যে তিনি তার ধর্ম পালন করছেন, তিনি তার চেহারা বাইরের কারো কাছে প্রকাশ করতে চাননা। এটাকে ডিস্ক্রিমিনেশন মনে করার কোনই কারণ নেই। আপনি যদি এটাকে ডিস্ক্রিমিনেশন মনে করেন তাহলে এটা আপনার সমস্যা, মোটেই হিজাবধারীর নয়।
মেয়েরা পুরুষদের থেকে প্রাকৃতিকভাবেই আলাদা, সেটাতো সব কিছুতেই প্রমাণিত, তাই না? তাহলে বেশিরভাগ সময়ই মেয়েরা পুরুষদের থেকে আলাদা পোষাক পরবেন সেটাইতো স্বাভাবিক, সেটা যদি আপনাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া না হয় যে আপনি পুরুষ আর আমি মহিলা তাহলে শুধুমাত্র হিজাব পরার কারণে কিভাবে সেটা দেখানো হয়ে যায়?
আজ হিজাব পরছেন দেখে আপনি বলছেন যে আপনাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে আপনি পুরুষ আর উনি মহিলা। কাল আপনি বলবেন যিনি নামাজ পরছেন তিনিও একধরনের ডিস্ক্রিমিনেট করছেন। কেউ যদি তার ধর্ম পালন করতে চায়, সেটা নিয়ে সমালোচনা করা কোন মুক্ত (!) বুদ্ধির মানুষের উচিত না, যেমন উচিত না কেউ যদি ধর্ম মানতে না চায় তাকে জোর করা।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
কেন বলা হয়েছে একটু দয়া করে বলবেন?
আপনার অবস্থান বুঝেছি। আপনাকে আমার আর কিছু বলার নেই।
আপনাকে একটা অ্যানালজি দিচ্ছি। গত দেড় সপ্তাহ ধরে শিখদের নিয়ে ডকু দেখা আর নেট ঘাঁটার ফল বলতে পারেন।
শিখদের দুটো ধারা আছে। অমৃৎধারী আর সহজধারী। অমৃৎধারী তারা, যারা পাঁচটি শিখ প্রতীককে আত্মস্থ করতে সম্মত। সহজধারীরা প্রতীক আত্মস্থ করেন না। এই পাঁচ প্রতীক হচ্ছে কেশ-কাঙ্গা-কাচেরা-কারা-কিরপান অর্থাৎ চুল-চিরুনি-শর্টস-বালা-কৃপাণ। এর মধ্যে প্রথম চারটাতে কোনো সমস্যা নেই। কৃপাণে আছে। পেনাল কোডের সংজ্ঞায় এটা একটা শার্প ইনস্ট্রুমেন্ট। পৃথিবীর বহু দেশে পাবলিক প্লেসে সাথে শার্প ইন্সট্রুমেন্ট রাখা আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু এটি শিখদের ধর্মাচারের অঙ্গ। এটি তাদের কাছে এতই গুরুত্বপূর্ণ যে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্মেলনে বিমানযাত্রার কারণে শিখ গুরুরা একাধিকবার অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছেন, কারণ বিমানে সঙ্গে করে কৃপাণ নেয়া নিষিদ্ধ। কানাডা আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী যে কেউ সঙ্গে অস্ত্র রাখতে পারে, তাই শিখদের সমস্যা হয় না, কিন্তু ডেনমার্কে শিখদের জন্যেও আইনে কোনো ছাড় নেই। ভারতে আপনি সঙ্গে কৃপাণ রাখলে সমস্যায় পড়বেন, কোনো শিখ রাখলে সমস্যা নেই।
কৃপাণ কিন্তু কেবল আলঙ্কারিক নয়, শিখ ধর্মে পীড়িতকে উদ্ধার করার জন্য নিজের প্রাণ বিপন্ন করে হলেও কৃপাণ হাতে এগিয়ে যাওয়ার আদেশ আছে, আত্মরক্ষার জন্যে তো বটেই। কৃপাণ ধারণ তার ধর্ম পালনের অঙ্গ।
আপনি কৃপাণ ধারণকে কীভাবে দেখেন?
একজন শিখ কোমরে কৃপাণ নিয়ে আমার আশেপাশে ঘুরছে, এটা আমার জন্য খুব বেশি হয়ে যায়। আমি তার ধর্ম পালনের অধিকারে হাত দিতে চাই না, কিন্তু সে আশেপাশে থাকলে আমি নভজ্যোত সিং সিধু প্রসঙ্গে কথা বলতে পারবো না। সিধুর ইজ্জত রক্ষার জন্য আমার পেটে সে কৃপাণ ঢুকিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ, এই যে একটা ধর্মীয় চিহ্ন ধারণ, এবং প্রয়োজনবোধে সেটা ব্যবহারের ধর্মীয় লাইসেন্স, এটা কিন্তু আমার ব্যক্তি স্বাধীনতাকে পরোক্ষভাবেই কমিয়ে দিচ্ছে।
আমি যদি কালকে এক নতুন ধর্ম প্রচারে নামি, যেখানে আমার অনুসারীদের সবসময় হাতে একটা ছয় ফুট লম্বা লাঠি রাখা বাধ্যতামূলক, তারাও কি তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে ঠিকমতো? আপনি কি তাদের সাথে স্বাভাবিক সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারবেন?
নাউযুবিল্লাহ্। তুমি পরনারীর চেহারা দেখতে, আইডেন্টিটি জানতে এতো উদগ্রীব কেনো? [পোনার মা'য় কই? পোনার বাপে এগুলা কী কয়!]
চেহারা'টা অই মহিলার। সে দেখাবে নাকি ঢেকে রাখবে এটা তারেই ঠিক করতে দিলে অসুবিধা কী? বরং সে যদি তোমার চোখের উপর এসে ঠুলি পরায়ে দিতে চায়, সেক্ষেত্রে তুমি সরব হতে পারো। তার নিজের চেহারাতে সে ব্যাটম্যানের মাস্ক পরলো নাকি হিজাব পরলো, এটা সম্পূর্ণই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে ধর্ম, কর্ম আর মর্ম আলোচিত হবার কথা না।
কারো হিজাব করায় তুমি গালি অনুভব করবা কেনো? তুমি তো আর যে হিজাব করলো তার চেহারা নিয়ে ফ্যান্টাসি কল্পনা করছো না। কিংবা কেউ হিজাব করছেই কাউকে গালি দেয়ার উদ্দেশে, এমনটাই বা ভাবতে হবে কেনো? এটাকে 'শুধুই আরেকটা পোশাক' ভাবলে ক্ষতি কী? আফ্রিকার কিছু দেশের মানুষ যেমন জোব্বা পরে, সাউথ ইন্ডিয়ান'রা যেমন ফাড়া লুঙ্গি পরে [বড় সাইজের কদম ফেললে তো টল্টুবল্টু সব বেরিয়ে পরে সেই ফাড়া দিয়ে], তেমনি কি হিজাবও স্রেফ আরেকটা পোশাক হতে পারে না?
আমার ব্যক্তিগত মত দেই এই সুযোগে। কাউকে বিকিনি পরিহিতাবস্থায় সামনে ঘোরাফেরা করতে দেখলেও যেমন আমার মনে হয় না যে সে আমার ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছে কিংবা আমাকে কামাতুর হয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রচ্ছন্ন আহ্বান জানাচ্ছে। তেমনি কেউ হিজাব করলেও আমার মনে হয় না সে আমাকে কামাতুর ভেবে বা গালি দিয়ে আমার আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য এটা করছে।
কেউ যদি বিকিনি পরতে চায় পরুক। কেউ যদি হিজাব পরতে চায়, তাও পরুক। এটা ততোক্ষণ আমার মাথাব্যথার যুক্তিসঙ্গত কারণ হবে না যতোক্ষণ না আমি সরাসরি তাতে সাফারার হচ্ছি। অর্থাৎ কেউ যদি বিকিনি পরার পাশাপাশি আমাকেও শুধু আন্ডি পরে ঘুরতে বাধ্য না করে অথবা হিজাব করার পাশাপাশি আমার চোখের মধ্যে ঠুলি লাগাতে বাধ্য না করে, ততোক্ষণ মনেহয় এটা যারযার ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবেই দেখা উচিৎ।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মনমাঝি
ধৈবত
১. আমার মনে হলো নিকাব পরিহিতা মহিলাটা একটু কর্তৃত্বময়, এক হাত বাড়িয়ে কাউকে কিছু করতে বলছেন। পাশের পুরুষটা মহিলার সাথে সম্পৃক্ত না, সে জন্য তিনি দেয়ালের সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, যেহেতু তিনি মহিলাটার পিছনে দাঁড়িয়ে, মহিলাটার দেখতে পাওয়ার কথা না। পুরুষটা কিছু একটা ভাবছেন কিন্তু সেটা মহিলাটার সাথে সম্পৃক্ত না। এটা ২০ নম্বর মন্তব্যকারীর চেয়ে পুরাপুরি বিপরীত পর্যবেক্ষন।
২. ধূসর গোধুলীর পর্যবেক্ষনের ধারা ভালো লেগেছে।
৩. আমি হিজাব পরি, নিজের ইচ্ছাতেই পরি। এবং এটাও সত্যি যে আমার ইচ্ছাটা এসেছে ইসলাম ধর্মের বুঝার পর থেকে, ঠিক যেমন আমার অনেক বান্ধবীরাই হিজাব পরে না কারণ হিজাব পরলে ২০ নম্বর মন্তব্যের মত অনেক গতানুতিক ধারণার স্বীকার হতে হবে (উহা তাহারা নিজেরাই স্বীকার করিয়াছেন!)
উল্লেখ্য, মানুষ নিজের ইচ্ছাগুলোর জন্য কেন জানি অন্যদেরকে ক্রেডিট দিতে চায় না!
হিজাব পরা ব্যাপারটা প্যান্টুর উপর জাঙ্গুর সাথে তুলনা হবে না, প্যান্টুর উপর জাঙ্গুর তুলনা হবে জিহ্বায় ফুটা করে দুল পরার। হিজাব পরার সাথে তুলনা হবে শিখ পুরুষদের মাথার পাগড়ি আর মুখে লম্বা দাড়ির। ব্যাপারটা দেখতে শোভন না, কিন্তু ওরা নিশ্চয়ই কারণ দেখায় প্রতিদিন শেভ না করতে হওয়াটা কত বড় সাশ্রয়ের ব্যাপার! মাথায় ময়লা যায় না তাই মাথাও ঘন ঘন ধুতে হয় না, চুল পাকে না, চুল পরে না, শ্যাম্পু আফটার শেভ এসব থেকে শুধু টাকা সাশ্রয় হয় না, পৃথিবীও অনেক ক্ষতিকর কেমিকেল থেকে বেঁচে যায়! আমি এতটা দাম্ভিক না যে দাবী করব শিখ পুরুষগুলো নিজের ইচ্ছায় এমনটা করছে না, "ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে" এমনটা করছে! আমার কি অধিকার আছে ওর বিশ্বাস এবং ভালোবাসার আচারের উপর এমন সিল ছাপ্পড় মারার? শিখ পুরুষরা দাড়ি আর পাগড়ি রক্ষার স্বার্থে চাকরি ছাড়তে রাজি থাকেন, অন্যরা মুসলিম বলে ভুল করে শুধু শুধুই নির্যাতিত হন। তবু তো কেউ ছাড়ছেন না। এটা কি ভালোবাসা না, নিজের ইচ্ছা না? তাহলে ভালোবাসা কি? নিজের ইচ্ছা কি? কারো কথা না ভেবে স্বার্থপর সুখ থেকে কিছু করা???
সমাজে যে কোন মানুষের যে কোন ইচ্ছার সূত্রপাত অন্য কোথাও থেকে। যারা বলে আমি যা ইচ্ছা তা পরছি, তাদের খুব কমই নিজের সাথে সৎ, হয় সেটা সমাজের চাপে পরে, না হয় সমাজের চাপের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে... সরাসরি উল্টা রিয়েকশনও এক ধরণের দাসত্ব। এটা রেকগনাইজ করে সেটার সাথে রিকনসাইল করতে পারা, ভুল কারণে অন্যের ইচ্ছা নিজের ইচ্ছা করে না নেয়াটা হচ্ছে মুক্ত মানুষের পরিচয়!
এবিউসিভ স্বামীর ইচ্ছা মেনে নিয়ে স্ত্রী স্বামীর জন্য খাবার রান্না করলে ব্যাপারটা এক রকম আর স্বামীকে ভালোবেসে রান্না করলে ব্যাপারটা পুরাপুরি আলাদা। প্রথমটা গ্রহনযোগ্য না, দ্বিতীয়টা শুধু গ্রহনযোগ্যই না, বরং কাম্য! বাইরে থেকে ব্যাপারটা দেখে কে কিভাবে ইন্টারপ্রিট করছে সেটা নির্ভর করবে যে দেখছে তার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর।
জ্বী না। এটা যতটা না "ভালোবাসা" থেকে এসেছে তার চেয়ে বেশী এসেছে স্বর্গের লোভ আর নরকের ভয় থেকে।
মাঝে মাঝে অবাক লাগে কোন ধর্ম এদিকে লোভের বিরুদ্ধে দুনিয়া উদ্ধার করে ফেলবে, ওদিকে আবার সেই স্বর্গের লোভ দেখিয়েই নিজের স্বার্থ উদ্ধার করবে।
উঁহুঁ, নিজের ইচ্ছা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবেই নিজে থেকে কিছু করা। হিজাব নিজের না হলেও অন্য অনেকের অধিকারকে খর্ব করে এটা জেনেও যারা (সচেতনভাবে চন্দ্রবিন্দু বাদ দেয়া হয়েছে) "নিজের ইচ্ছায়" বেহেস্তের লোভে হিজাব পরেন তাদেরকে আপনার কি স্বার্থপর সুখী মনে হয় না?
আমাকে কেউ আমার ধর্ম মানতে বাধ্য করে নি, আমি ইচ্ছা করেই স্বর্গ আর নরকে বিশ্বাস করেছি। এই ইচ্ছাটা পুরাপুরিই স্বাধীন। আমার জন্য কোনটা সুস্থ ইচ্ছা আর কোনটা অসুস্থ ইচ্ছা, সেটা আপনি বলে দিবেন কেন!
আমি হিজাব পরি কারণ আল্লাহর নির্দেশ। যতটুকু নির্দেশ তার থেকে একটু বেশিই করার চেষ্টা করি, ইচ্ছাটা থাকে তাকে খুশি করার। আর খুশি করার ইচ্ছাটা হয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা থেকে, কৃতজ্ঞতা থেকে। এবার বলবেন, দেখা যায় না শোনা যায় না এমন এক স্বত্ত্বার ভালোবাসায় পোশাক আশাক বদলানো, সিলি হ্যাট পরে ঘুরে বেড়ানো "স্বাভাবিক" না, অর্থ্যাৎ আপনার সংজ্ঞার স্বাভাবিকতা অস্বাভাবিকতা মেনে নিয়ে সবাইকে চলতে হবে। এবং অবশ্যই, ধর্ম একটা বেড়াজাল।
এই ব্যাপারগুলো কোথায় কোথায় বলেছি দয়া করে পয়েন্ট আউট করে দেখান।
হিজাবের ক্ষেত্রে আমার আপত্তিটা কোথায় (যেটা সিলি হ্যাটের ক্ষেত্রে নেই) সেটা উপরের কয়েকটা কমেন্টে লেখা আছে, দেখতে চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
"একজন পাঠক" সম্ভবতঃ অতিথদের ডিফল্ট নাম - উপরের দুইটা কমেন্টই যদি আপনার করা হয়ে থাকে, তাহলে আপনার কমেন্ট থেকেই উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ
কমেন্ট করার আগে কি বলতে চাচ্ছেন সেটা দয়া করে নিজে নিশ্চিত হয়ে নিলে মনে হয় সবারই সুবিধা হতো।
আরেকটা কথা, একটু ইসলামিক অনুশাসন দেখে এসে জানাবেন কি ওখানে কতবার আল্লাহকে ভালোবাসতে বলা হয়েছে আর কতবার ভয় করতে বলা হয়েছে?
নিশ্চয়ই, শব্দ তো স্রেফ একটা ডিকশনারী কনটেন্ট, যে কোন জায়গায় বসিয়ে দিলেই হলো।
উত্তরায় একবার এক ছিনতাইকারী আমার দিকে পিস্তল তাক করায় আমি "সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়" তাকে পকেট খালি করে সবকিছু দিয়ে দিয়েছিলাম। সে মুখে একটা কথাও বলেনি, কাজেই জোর করেছে বলতে পারছি না, তার হাতের পিস্তলটা খেলনা ছিলো কিনা কিংবা সেটাতে গুলি ছিলো কিনা আমি জানি না, তবে চাইলে বিশ্বাস করতে পারতাম যে ওটা খেলনা বা গুলিবিহীন বা গুলি থাকলেও সে ব্যবহার করবে না। "সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়ই" আমি বিশ্বাস করেছি যে ওটা গুলিভর্তি আসল পিস্তল এবং সে ওটা ব্যবহার করবে - এই ইচ্ছাটাও পুরোপুরি স্বাধীন, এবং "সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়ই" পকেট খালি করে দিয়েছি।
ভাগ্য ভালো ওই সময়ে আমি প্রায় পাটকাঠির মত শুকনা ছিলাম এবং ছিনতাইকারী ছিলো বেশ মোটাসোটা - আমার জামাকাপড় ওই ব্যাটার গায়ে হতো না, নাহলে হয়তো "সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়" ... কে বলতে পারে?
এই বিশেষ ক্ষেত্রে আমি আপনারই দলে, কাজেই আপনার সাথে বিতর্ক আমার সাজে না বোধহয়।
এই ভিডিওটা দেখতে পারেন -
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
খারাপ না
তবে যাঁরা "সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়" স্বর্গ নরকে বিশ্বাস করেন, "সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়" সর্বক্ষেত্রে অন্যের ইচ্ছাকে গ্রহণ করেন এবং "সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়" ডিকশনারি থেকে "স্বাধীন" "স্বেচ্ছা" ইত্যাদি শব্দ নিয়ে এগুলোর পুরো বিপরীত কনটেক্সটে ব্যবহার করেন তাঁদের জন্য মনে হয় অন্য কিছু দরকার।
সৌজন্যে: ধর্মকারী
কথা অপেক্ষা ছবি উত্তম।
আপনার কৌতুকের ভান্ডার অফুরান। দারুণ জিনিস যোগ করলেন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
একটা কথা আমি যোগ করতে চাই এ বিষয়ে। আমাদের দেশে খুব দু:খজনক হলেও সত্য যে এখনও আমাদের মত পুর’ষদেরই বড় একটি অংশ মনে করে যে, নারীদের পোষাকই ইভ টিজিং এর অন্যতম মূল কারণ। এখনকার মেয়েদের অনেকেরই একটা অবজার্ভেশন আছে যে, যে মেয়েরা বোরকা পড়ে রাস্তায় বের হয়, তাদের দিকে সাধারণতই ছেলেদের দৃষ্টি (অথবা কুদৃষ্টি ) পড়ে না। যে পুর’ষশাষিত দেশে পুর’ষদের এবং সেই সূত্রে মেয়েদেরও চিন্তার ধরণটা এমন, সেখানে কেউ স্বেচ্ছায় বোরখা-হিজাব পরিধান করতে চাইলে কেবল ধর্মের দোহাই দেয়াটা কি সমীচিন? আসলে বিষয়টির মূল অনেক গভীরে। এখনও রাস্তায় কোনো বিদেশী নারীকে টি-শার্ট পরিধান করে বের হতে দেখলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও হা করে তাকিয়ে থাকে। আমাদের মেয়েদের অবস্থা আসলে অত্যন্ত নাজুক। যারা প্রচলিত সংস্কার ভেঙ্গে আধুনিক মনস্কতায় পোষাক নিয়ে পরোয়া না করে রাস্তায় বের হয়, তাদের অনেকেও শেষ পর্যন্ত এটা মেনে নিতে বাধ্য হয়- বোরখা-হিজাব একদিক থেকে (ছেলেদের কুদৃষ্টি) অন্তত তাদের রক্ষা করতে সক্ষম।
গত কয়েকবছরে বাংলাদেশের মেয়েদের পোশাকে এমন কোন লক্ষ্যণীয় আধুনিক পরিবর্তন আসতে দেখিনি আমি, বরং অনেক সময় মনে হয়েছে রাস্তায় বোরখার সংখ্যাই বেড়ে গেছে। যাঁরা মনে করেন ঈভ টিজিং এর অন্যতম মূল কারণ মেয়েদের পোশাক, তাঁরা কি দয়া করে ব্যাখ্যা করতে পারবেন ঈভ টিজিং গত কয়েকবছরে "হঠাৎ করে" বেড়েছে কেন, পোশাকের প্যাটার্নে "হঠাৎ" কোন পরিবর্তন না আসা সত্ত্বেও?
আমার পর্যবেক্ষণ অবশ্য একটু অন্যরকম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল - দুই এক্সট্রিম প্রান্তের সংখ্যাই বেড়েছে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সমস্যাটা তো ভ্রাতা এখানেই। আমরা পুর’ষেরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করিতে চাই এবং তাহা করিয়াও থাকি। আমরা একদল পুর’ষ বলিবো, নারী, তোমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হও, তোমরা হিজাব পরিধান করিও না। এতে আমাদের পুর’ষদের তোমরা প্রচ্ছন্নভাবে গালি দিতাছো বলিয়া আমরা মনে করিতেছি। ইহা আমাদের জন্য ভীষণ অপমানকর। ঠিক একইরূপে ভিন্ন দল পুর’ষেরা বলিয়া থাকে, নারী, তোমরা বোরকা-হিজাব ব্যতীত রাস্তায় বাহির হইওনা। ইহাতে আমাদিগের অন্তরে (বলা ভালো, শরীরে) কামোত্তজনা সঞ্চারিত হয়। বলা বাহুল্য, উভয় পক্ষ আবার এক অন্যের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করিয়া থকে। এবং শেষ পর্যন্ত কেউই নারীকে সত্যিকারের স্বাধীনতা দিতে রাজি নয়।
তরিকুর সজীব
আমি সম্ভবতঃ আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। উত্তর পাইনি।
কমেন্টের অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে আপনার কিছু সমস্যা হচ্ছে মনে হয়।
উপরে এবং নিচে একটু ভালো করে পড়ে দেখুন। প্রথমতঃ সর্বক্ষেত্রেই বোধ হয় "স্বাধীন" ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তবে একটা "স্বাধীন" অ্যাডজেকটিভ যুক্ত দাসত্বকে নয়। "ধর্ম বা ঈশ্বর বলেছেন বলে করবো" এটাই আমার "স্বাধীন ইচ্ছা" কথাটা পুরোপুরি স্ববিরোধী।
দ্বিতীয়তঃ স্বাধীন ইচ্ছার ক্ষেত্রে র্যাশনালিটি বলে একটা বস্তু নিয়ে কথা বলা হয়েছে মনে হয়। এবং এই প্রসঙ্গে উপরে কোথাও হিমু ভাইয়ের দেয়া একটা উদাহরণও পাবেন।
এবং তৃতীয়তঃ আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার এবং ফাহিম হাসানের কাছ থেকে কয়েকটা প্রশ্ন ছিলো, উত্তর দিতে পারবেন কি?
যদি আরো খোলাসা করে বলতে হয়, তাহলে আবারও বলি, কেউ যদি "সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়" হিজাব পরে সেক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নেই, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি এমন একজনকেও দেখিনি যে "নিজের ইচ্ছায়" হিজাব পরে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই হিজাবের ব্যবহার ধর্ম এবং সমাজের "একতরফা", "ডিসক্রিমিনেটিং" অনুশাসন থেকে উদ্ভূত, এবং আমার আপত্তিটা সেখানেই। কেউ কি আগে পিছের কমেন্ট পড়ে না নাকি? এই পোস্টে নিজের মন্তব্য থেকে উদ্ধৃতি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি, তারপরও আপনার জন্য আবার একটা উদ্ধৃতিঃ
এইবার দয়া করে ব্যাখ্যা করুন,
লাইনটা আমার প্রতি কোন জায়গায় প্রযোজ্য।
@ guest_writer (মন্তব্য নং ৪৭)
অতি সরলীকরণ হয়ে গেল।
ভুল ভুল ভুল ভুল ভুল
কুদৃষ্টি বাদ দেন। তিন বছরের বাচ্চা ধর্ষিত হয়, ক্যাম্নে কী? সে কি যৌন আবেদনপূর্ণ পোষাক পরে? এক্ষত্রে বোরখা কোন সমাধান?
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আরো একটু যোগ করি, আধুনিক পোশাক ব্যাপারটা তো মোটামুটিভাবে শহুরে, আপনি নিশ্চয়ই বলবেন না গত এক দশকে গ্রামের মেয়েরাও স্লীভলেস পোশাক পরা শুরু করেছে বা এ ধরণের কিছু? তাহলে ঈভ টিজিং এর অনেকগুলো ঘটনা কেন গ্রামে ঘটে? গ্রামের পোশাকের কি কি পরিবর্তন হয়েছে গত কয়েক বছরে যে সেখানে ঈভ টিজিং বেড়েছে?
আপনার পোস্টের ধারণাটা অসাধারণ লাগল। আসলেই, ফটোগ্রাফি/সিনেমা কত যে শক্তিশালী মাধ্যম, কতকিছু বলা যায়, কতভাবে বলা যায়।
ওপেন সাইনটার নিচের উল্লেখ করে দেয়া "নির্দিষ্ট সময়" থেকে এটা কি বলা যায়, প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু ব্যাপারে রিজার্ভেশন আছে? মহিলা চরিত্রটি হিজাব পরে একটি পুরুষতান্ত্রিক বদ্ধ ধারণা কে গ্রহণ করেছেন, প্রতিকীভাবে দিন/রাতের কিছু সময় তিনি "ক্লোজড", কমিউনিটি সেন্টারটির মত। আবার অনেক বিষয়ে তিনি হয়ত খোলা মনের, মানুষের ভাল করার চিন্তা করেন, "ওপেন"।
হিজাব কে আমি পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনার একটা প্রকাশ হিসেবেই দেখি। প্রতিটি ধর্মের প্রণেতারাই পুরুষ। মেয়েদের ঢেকেঢুকে রাখতে হবে, এই ধারণাটা পুরুষের। আবার মেয়েরা শর্ট প্যান্ট পরলে বা কিছু না পরলে দেখতে লোভনীয় লাগে, এই ধারণাটাও পুরুষের। কোন মেয়ে স্বেচ্ছায় হিজাব পরলেও, তিনি অনেককাল ধরে চলে আসা একটা পুরুষতান্ত্রিক ধারণাকেই গ্রহণ করেন মাত্র, এটাকে "নিজের ইচ্ছা" বলতে পারছি না। তবে প্রতিটি মানুষেরই "অপরের ক্ষতি না করে" কোন মত/ধর্ম গ্রহণের স্বাধীনতা আছে, তাদের সেই চয়েস কে সম্মান করি।
আপনার মন্তব্যের "অপরের ক্ষতি না করে" এর সাথে "এবং অপরের ক্ষতি সমর্থন না করে" যোগ করে পুরো মন্তব্যে সহমত জানাচ্ছি।
হিজাব পরলে অপরের কী কী ক্ষতি হয় অপছন্দনীয় ভাই বলবেন একটু?
আমিতো হিজাবধারী অনেককেই সবাই যা করে সেটাই করতে দেখছি/দেখেছি (উচ্চতর শিক্ষা, ঘোরাঘুরি, চাকুরী ইত্যাদি)।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
আমার নিজের আগের মন্তব্য থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ
বুঝলাম না। একজনের হিজাব পরার সাথে আরো অনেকের অধিকার কীভাবে সম্পর্কিত? হিজাব পরলে কী কোন অধিকার খর্ব হয়, যদিনা তাকে সেটা করতে বাধ্য করা হয়?
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
১-১। হিজাব একতরফা ভাবে মেয়েদের উপরে চাপানো। এবং ইসলাম বাধ্যতামূলকভাবেই সেটা করতে বলে। পুরুষদের হিজাব পরতে হবে এই ধরণের কোনকিছু কোথাও আছে বলে শুনিনি কখনো।
১-২। হিজাবের উদ্দেশ্য তথাকথিত "শালীনতা" রক্ষা। "পুরুষের চোখ থেকে" "নিরাপদ থাকা" ইত্যাদি। হিজাবের পক্ষে যারা কথা বলেন তারা দেখবেন ইদানিং ঈভ টিজিংকেও হিজাবের অভাব হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যস্ত।
১-৩। আমার যদি কোন মেয়েকে দেখলেই চোখ বড় হয়ে জিভ এক হাত বেরিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে সমস্যাটা আমার, মেয়েটার নয়। এবং এই সমস্যার চিকিৎসা আমার জিভ কেটে ফেলে চোখগুলো উপড়ে ফেলা, মেয়েটাকে "এই করতে হবে, ওই করতে হবে" বলা নয়।
১-০। এবং পুরোপুরিভাবে আমার সমস্যার কারণে যখন অন্যের উপরে, এই ক্ষেত্রে সব মেয়েদের উপরে, কোনকিছু চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন সেটা তার অধিকারকে পায়ের নিচে ফেলা শুধু নয়, সেই সঙ্গে অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর অবিচারও বটে।
২-১। এবার ধরা যাক অন্য কারো উপরে কোন অবিচার করা হয়েছে, কোন বিশেষ উপায়ের সাহায্যে।
২-২। নিজে কাকে বা কি-কে সমর্থন করবো না করবো, কোন চিহ্ন গলায় ঝোলাবো বা মাথায় পরবো সেটা ঠিক করার অধিকার আমার আছে।
২-৩। আমি যদি জেনেশুনে "স্বেচ্ছায়" সেই অবিচারের চিহ্ন ধারণ করি - সেটা নাৎসীজমের চিহ্ন হতে পারে, পাকিস্তানীদের চিহ্ন হতে পারে, হলোকাস্টের সময়ে ইহুদিদের হাতে পরতে বাধ্য হওয়া আর্মব্যান্ডও হতে পারে - তার মানে "স্বেচ্ছায়" আমি সেই অবিচারকে সমর্থন দিচ্ছি।
২-০। নিজের যা ইচ্ছা করার ক্ষমতা আছে বলেই অন্যের প্রতি ধর্মীয় অবিচারকে সমর্থন দেয়া শুধুমাত্র স্বার্থপরতার চূড়ান্তই নয়, সেই সাথে ধর্মীয় অন্ধত্বও বোঝায়।
আশা করি এইবার বুঝেছেন, আরো ভেঙে ভেঙে বোঝাতে হবে না।
আরেকটা কিঞ্চিৎ অফ টপিক কথা, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি মুখ ঢেকে বোরখা পরা (সাধারণ অর্থে হিজাব নয়) যারা সমর্থন করে বিয়ের আগে পাত্রীর চেহারা দেখার কোন অধিকার তাদের নেই। এবং এই ধরণের অতি ধার্মিক খুঁজে পেলে তাদের বিয়ের গপ্প খুঁজে বের করি আমি। কয়েকটার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা পরীক্ষা করে দেখেছি, একটাও নেই যে চেহারা না দেখে বিয়ে করেছে।
ছবির ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ আপা।
আর -
১০০ ভাগ সহমত।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
যেহেতু হিজাব অনেক সময়ের অনেকের অধিকার হরণের চিহ্ন বহন করে, তাই এটা পরা ঠিক না। যেমন ওসামা বিন লাদেন দাড়ি রাখে, তালেবানরা দাড়ি রাখে। তাই দাড়িও একটা অধিকার হরণের চিহ্ন। কাজেই দাড়ি রাখাও অনেকটা নাতসী চিহ্ন বহন করার মতই আনেথিকাল। এখন এই দাড়ি আপনি ই রাখেন আর ট্রিপল এইচ ই রাখেন, কথা একই। আচ্ছা ক্লীন শেভ বহু মানুষ তো অনেক সময় অনেক অধিকার হরণের সাক্ষী। তাইলে উপায় কি??????
ইসলাম হিজাব ব্যবহার করে অধিকার হরণ করে, কিন্তু লাদেন আর তালেবানরা দাড়ি ব্যবহার করে অধিকার হরণ করে না - পার্থক্যটা এখানে।
নতুন মন্তব্য করুন