যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবীতে দেশজুড়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল শাহবাগে, তা এখন ভৌগোলিক সীমানা পার হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশী ও ভিনদেশী বন্ধুরা দাবীর সাথে সংহতি জানিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। কেউ ফেইসবুক-টুইটারে আন্দোলন সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করছেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখছেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে স্মারকলিপি পাঠাচ্ছেন, কেউ কেউ সংঘবদ্ধভাবে প্ল্যাকার্ড হাতে র্যা লি করছেন। এডমন্টনে বসবাসরত বাংলাদেশীরা গত ফেব্রুয়ারি শহরের কেন্দ্রে একটি সমাবেশের আয়োজন করেন। শাহবাগ আন্দোলনে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি এই সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শাহবাগের আন্দোলনকে তুলে ধরা ও ক্যানাডায় বসবাসরত মানুষদেরকে এই সম্পর্কে সচেতন করা।
ব্যক্তিগতভাবে আমার মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছিল। শাহবাগ যখন রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে উত্তাল তখন দেশের বাইরে থেকে আমি আসলে কী ভূমিকা রাখতে পারি? ইশতিয়াক রউফের লেখাটা প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। গ্রুপ ইমেইল, ফেইসবুকের মাধ্যমে বেশ দ্রুত সমমনস্ক একটি গ্রুপ গড়ে উঠে। মূলত অ্যালবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এর উদ্যোক্তা হলেও অ্যালামনাই ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিনিয়ার ভাইয়া-আপুরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ শুরু করেন। জাগরণের জোয়ারে ভেসে যায় লাল-সবুজ ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। সেই প্রতিবাদী অক্ষর হাতে নিয়ে, প্রচন্ড শীত ও প্রাত্যহিক প্রয়োজন উপেক্ষা করে প্রায় একশ’র মত মানুষ এই জমায়েতে যোগ দেয়।
ঠিক কী অর্থে এই ধরনের একটি সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ? এটা কী স্রেফ প্ল্যাকার্ড হাতে ফটোসেশান? এধরনের সমাবেশ করে লাভ কী? এই প্রশ্নগুলো আমাদের মনেও জাগে। উত্তরগুলো বব ডিলানের হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় না, বরং সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে ধরা দেয়।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের সক্রিয় ভূমিকা এই আন্দোলনকে শুধু সাইবার-সাপোর্টই দেয় নাই, মূলধারার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই আন্দোলনকে তুলে ধরেছে। শাহবাগের আন্দোলন কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ বা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক নয়, বরং সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস – এই কথাটাই সাহসী অক্ষরে-গানে-শ্লোগানে পৌঁছে দেওয়া দরকার ছিল। অতীতের বিভিন্ন ঘটনা ও সাম্প্রতিক ইস্যুতে দেখেছি – বিবিসি, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট ইত্যাদি সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর ছাপা হয়েছে। এই খবরগুলো মূলত ডকুমেন্টেশান হিসেবে ইন্টারনেটে ঠাঁই নিয়ে নেয়। অথচ, তথ্যপ্রবাহ কিন্তু আর টপ-ডাউন প্রক্রিয়ায় নেই, অসংখ্য আমি-আপনি মিলেই কিন্তু হয়ে উঠতে পারি নির্ভুল খবরের উৎস। এডমন্টনের এই সমাবেশে তাই আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি টিভি চ্যানেলগুলোতে মূল বক্তব্যটুকু সরাসরি পৌঁছে দিতে। প্রায় বারো দিনের মাথায় শাহবাগ আন্দোলন কিন্তু শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবীতে সীমাবদ্ধ নেই, আন্দোলনের চিত্র পাল্টাচ্ছে, জনতার দাবী এখন বহুমাত্রিক। আন্দোলনের এই পরিবর্তনটুকু নথিবদ্ধ হওয়াটা খুব জরুরি ছিল।
এই যে তথ্যের ছাপচিত্র, এগুলো কিন্তু শুধু গবেষকদের জন্য নয়। ব্যক্তিপর্যায়ে উত্তরাধিকারসূত্রে আমরা রেখে যাই বাড়ি-গাড়ি-সম্পদ ইত্যাদি, কিন্তু সম্মিলিত প্রয়াসের ফসলগুলো পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিবে, তাদেরকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দীক্ষিত করবে, ভাবনাগুলোকে ঋদ্ধ করবে।
আমাদের সবার মাঝে দেশ নিয়ে নানারকম ছেলেমানুষী আবেগ কাজ করে। আমরা সবাই মিলে যখন সমাবেশের জন্য কাজ করছিলাম তখন অসংখ্য শুভাকাংক্ষী সাহায্য করেছেন। কতশত মাইল দূরে খুব আলো রোদ্দুরে একটা দিনে আমরা দেশের গান শুনছিলাম, রংতুলিতে লিখছিলাম প্রাণের শ্লোগান। ছবি-ভিডিওতে মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখার চেষ্টা ছিল, কিন্তু তার চেয়ে বেশি ছিল দেশের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ। এই তাগিদটুকু আমাদেরকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বড়-ছোট-মাঝারী ভাইবোনেরা মিলে এই যে এক সাথে কাজ করছি – আশা করছি এই বোধটুকু আমাদের মধ্যে সবসময় থাকবে। দেশের বাইরের স্মৃতিগুলো আসলে অগুণতি আক্ষেপের তালিকা, কিন্তু এই স্মৃতিগুলো সবসময় একইভাবে দেশের জন্য কাজ করার প্রেরণা দিবে আর আমরা সাধ্যমত তা ছড়িয়ে দিব আগামী প্রজন্মের কাছে।
পাঠকের সাথে ছবির মাধ্যমে আমাদের স্মৃতিগুলো ভাগ করে নিলাম।
সমাবেশের টুকরো ছবি (কৃতজ্ঞতা: গৃহবাসী বাউল)
গণমাধ্যমে সমাবেশের খবর
CTV News
OMNI TV
মন্তব্য
অতদূর থেকে এগুলো অসাধারণ কাজ ফাহিম!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক ধন্যবাদ নীড়ভাই
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
জাহিদ ভাই, এই কয়দিনে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখলাম।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
বাংলাদেশ সচল থাকুক সারা বিশ্বে। ধন্যবাদ ফাহিম
ধন্যবাদ ইয়াসির ভাই
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
জয় বাংলা
সারা বিশ্ব জানুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
জয় বাংলা
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সংহতি সংহতি সংহতি ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
সংহতি
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
গ্রেট জব ফাহিম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
সম্পূর্ণ টিম-ওয়ার্ক। আমার ভূমিকা একেবারেই নগণ্য।
ভ্যাংকুভারের সমাবেশটা দুর্দান্ত হয়েছে - বিশেষ করে এত মানুষের উপস্থিতি দেখেখুব খুশি হলাম
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
অসাধারণ! ভালো লাগলো।
ফাহিম, শাহবাগ চত্বরের সাথে আমাদের তোলা ছবি কিভাবে শেয়ার করা যাবে জানা আছে কি?
---- নীরা
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
নতুন মন্তব্য করুন