অবিনাশী যে আগুনে পুড়েছে সভ্যতা
আমিতো চেয়েছি তাতে পুড়ে খাঁক হতে প্রথম,
চেয়েছি অনাবাদী সব বুকে
বুনে দিতে শেষ ফাগুনের ভালোবাসা সব
চেয়েছি নদী হয়ে বয়ে যেতে
যতসব ঊষর খরচোখে
চেয়েছি পূনর্বার ফিরে আসার আগে
চিনে যেতে কোন সে গন্তব্য আমাদের।
আমিতো ভেবেছি সূর্যমুখী সব বুকে গেঁথে নিলে
তোমার ফেরার পথে ভেসে ওঠে শিউলীর কার্পেট
ভেবেছি শেষ বিকেলের রেনুয় স্নান হলে
ধুঁয়ে যায় হৃদয়ে পালিত সহস্র বাসী পাপ,
আজ নিজের সাথে দেখা হয়ে গ্যালো বহুদিন পর।
মাঝখানের দিনগুলো কাজ, বিপি, টেনশন, ঘোড়দৌড় - এইসব।
জানিনা কেনো আজগুবি ইচ্ছে হলো পার্কে গিয়ে বসি, স্বাস্থ্যচিন্তা হবে হয়তোবা, অথবা বৃষ্টি আসবে তা টের পেয়ে মনে হলো দেখি কালো হয়ে গ্যালে ক্যামন লাগে বাড়িঘর ছাড়া গাছেদের আকাশ। বেঞ্চে বসতেই আমিও এসে বসলো পাশে।
বেশ উন্মুল হয়ে আছি
সিক্ত পলিমাটি কখন যে ধুলোকণা হয়ে গ্যাছে, কে জানে।
এইরূপ একটা বিবর্তন বুঝি সংগত ছিলো,
উনিশশো উননব্বই কুড়ে খায় গোড়া থেকে
ভবিষ্যতও নির্বাক, স্বপ্ন-হীন-ঠিকানা-বিহীন – ভবঘুরে,
সময় ভারী সর্বনাশী, তান্ডব ঝড়ে আলুথালু,
শুধু এক অজানা বিবমিষা বেড়ে ওঠে -
আর আমাদের বাগান, শেকড় থেকে কেবলই দূরে সরে যায়।
সম্ভাব্য চরিত্র -১।
কী দারুণ বাজিকর এক। চারদিকে ঘন হয়ে আসা ভীড়ে অপুষ্ট দর্শকের চোখ, কান, চুল এমনকি গলগন্ড ছুঁয়ে বের করে আনে চকচকে একশো টাকার নোট সব। অথচ নিজের জড়ানো শাল ধুসুর মলিন, সাদা রং ছিলো তার বোধ হয় কোন একদিন।
সম্ভাব্য চরিত্র -২।
আমারই পাশে শুয়ে থাকে সে
আমারই সাথে হাসে, কাঁদে, গায়
ভরদুপুরে ভাতঘুমে শারদ সংখ্যায়
আমারই সাথে তারও ভারী হয়ে আসে চোখ।
সকালে হেডলাইনে অহেতুক উত্তেজনায়
সেও খুঁজে কবিতা আমার, সাহিত্যপাতায়।
কড়কড়ে মুড়ি আর গরম চায়ের পেয়ালায়
তারো মনে হয় আহা, শুধু তুইই নাই।
টক শোতে দেরী হলে - আঙুল ছুঁয়ে হাতে
সেই বলে এই যে ঘুমুচ্ছো বেশী রাতে,
ভোরে স্বপ্নের দলে সে কি আর ধরা দেবে?
আমিও ভাবি, তারই মতো,
১।
পাহাড়ী পাথর ধরে প্রস্রবণ,
অথচ প্রস্রবণেও থাকে পাথর শীতল সব।
ব্যাপারটা বেশ কঠিন ও কোমল,
নাকি এতোটা পথ একা যাওয়া ঠিক নয়,
গন্তব্যে পৌঁছালে যখন সকলেই আবার একাকী একলা।
২।
একবার কোন নদীকে ভালোবাসো
দেখবে আর কাউকে ভালোবাসা সহজ নয়।
একটা নদীকে ভালোবেসেছিলাম,
তাই তোমাকে আর ভালোবাসা হয়ে ওঠেনি,
তুমি কাছে এলেই মনে হতো কতো জনপদ
ঘুরে তবে জলেশ্বরী এসেছিলো কাছে -
কমলাক্ষ মারা গ্যাছে, আমাদের বন্ধু কমলাক্ষ মারা গ্যাছে।
কমলাক্ষ খুব বেশী সিগ্রেট খেতো, সেই আমাদের সিগ্রেট খাওয়া শিখিয়েছিলো। দশমীর দিনে কমলাক্ষ মাকে নিয়ে নেমে যেতো নদীর গভীরে। ফিরে এসে বলতো, শাড়ীটা দামী ছিলোরে।
কমলাক্ষ হাতে লাটিম ঘুরাতো, চেচিয়ে বলতো, গাধা পারিসনা ক্যান, এই দ্যাখ, এমনে…। আমি তবু হাতে লাটিম ঘুরাতে পারিনা এখনো।
কমলাক্ষ জীবনকে বড় ভালোবাসতো।
ঘুম পাড়ানিয়া গান আমাদের জন্য নয়,
বর্গী এলো দেশে বললেই আমরা ভয়ে
লুকোতাম গভীর ঘুমের আঁচলে। কেউ
গান বা গল্পে পাড়াবে ঘুম, অমন স্বপ্নের
প্রতিশ্রুতি ছিলোনা কখনো। শুধু প্রতি
ভোরে জেগে উঠে মনে হতো কি যেন
নেই… কি যেন নেই …কি যেন নেই…
তোমার নকশীকাঁথা করতল দেখে তাই
সাধ হলো কবে ফুরাবে সেই ভীত-নিদ্রার
দিন? কবে কপাল ছুঁয়ে যাবে আল্পনা
আঙুল, একটা পুরো সমুদ্র তার সবগুলো
ভালো যদি বাসবেই কাউকে
তবে বাসতে কবিতাকে,
জানি, কবিকে জেনেছো অদ্ভুত জীব এক,
জেনেছো মোদোমাতাল, জেনেছো ভাবের হাটের ফকির,
জেনেছো কাছে গ্যালেই ক্যাপ্সটানের গন্ধ,
হয়তো গোসল খাওয়া কোনটাই হয়নি,
অথবা ঘুমিয়েছে আর্ট কলেজের বারান্দায় – এমন,
কিন্তু কবিতা তেমন নয়, কবিতা যেমন জানো
তারো চেয়ে গোছানো অনেক,
তোমার ড্রইংরুমে দামি কথা বলতে পারে
এমন সুশীল, নিমিষেই বলে দিতে পারে তোমার