নিরুদ্দেশ, তোমার যাত্রায়

ফকির লালন এর ছবি
লিখেছেন ফকির লালন (তারিখ: শনি, ১৭/১০/২০০৯ - ৪:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বহু চৌকাঠ পেরিয়ে তবে তোমাতে ফেরা হয়,
মহাসড়ক থেকে গলি, তস্য গলি পেরিয়ে
তবে খুঁজে পাই সঠিক ডোর বেল।

যে রাতে জ্যোস্নার মার কাটারি
চাঁদের উঠানে তারাদের তুমুল আড্ডা বিলাস,
সে রাতে সাহস করেছিলাম তোমার যাত্রায় -
ছুঁতে চেয়েছিলাম কৃষ্ণচূড়ার চেয়েও আঁচল লাল,
মেঘের কান্নার মতো চুলের বিনুনী বাহার,
কাক-কালো চোখ, আর নরম ঠোঁটের গালিচা।

তবু বহু দূরে রয়ে যায় ঠিকানা তোমার,
চৌ্রাস্তার কোনো ট্রাফিক জানেনা কতগুলো
লালবাতি পেরোলে তবে তোমাদের গলি,
জানেনা পাড়ার লন্ড্রি, কোন বাসা থেকে আসে
লাল পাড় তাঁতের জ়োয়ার,
শুধু বাতিহীন খোঁড়া লাইটপোস্টে ঋতুহারা কোকিল
ভুল সুরে অবেলায় গেয়ে যায় বসন্তের যতো গান।

নাগরিক কোরাস-কোলাহলে সে গানও বুঝি -
খুঁজে পায়না জানালা তোমার। আমারই
মত নিরুদ্দেশ-তারো বুঝি জানা নেই
বহু বসন্ত হারালে তবে তোমাতে ফেরা হয়।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমারই
মত নিরুদ্দেশ-তারো বুঝি জানা নেই
বহু বসন্ত হারালে তবে তোমাতে ফেরা হয়।

সুন্দর কবিতা!

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ভালো লাগলো, লালন ভাই!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কী আশ্চর্য, আমিও তো একই লাইনগুলো কোট করলাম:

আমারই
মত নিরুদ্দেশ-তারো বুঝি জানা নেই
বহু বসন্ত হারালে তবে তোমাতে ফেরা হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বস, প্রথম তিনটা লাইন আমার কাছে একটু খটকা লাগছে। এই তিন লাইনের সাথে শেষের চারলাইনকে মেলাতে পারছিনা। আমার কাছে একটু কন্ট্রাডিকটরি লাগছে। মনে হয় ভুল বুঝছি। তবে কবিতার মূল ভাব বুঝতে অসুবিধা হয়নি। সাবলীল, ছুঁয়ে যাওয়া।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মূলত পাঠক এর ছবি

খুব ভালো লাগলো। কেন, বলি।

কবিতা জিনিসটা আসলে পাঠকের মুডের উপর খুব নির্ভরশীল। আমি খুব রোমান্টিক মুডে মাঝরাতে পড়তে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম প্রথমাংশ পড়ে। তারপরের ঐ বিরহধর্মী বাকিটুকু পড়ে ভালো লাগছিলো না প্রথমটায়, তখন মনে পড়লো পদাবলীর 'লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখলু তব হিয়া জুড়ন ন গেল'। ঘোর মিলনের মাঝেও বিরহের অনুভূতি মিশে থাকে, পরমাকাঙ্ক্ষিতকে পেলেই তো হারানোর ভয় হয়। সত্যি, মিলন আর বিরহের কবিতা কি আলাদা কিছু?

ফকির লালন এর ছবি

পান্ডব,

হতে পারে কিছুটা স্ববিরোধী। এটা অনেকটা মু/পাঠক যেমন বলেছেন - পাওয়া - না পাওয়ার মধ্যে দোদুল্যমানতার মতো। কারো কাছে পৌঁছালেই কি তাকে পাওয়া যায়, বা পেলেই কি পৌঁছানো হয় ? না পেলেই কি তাকে না পাওয়া হয়? অনুভূতিটাই আমার মতে অনেক অবয়বহীন, কবিতাও তার বাইরে যেতে পারেনি হয়তো।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লাগলো কবি!!!!!!!১
এস হোসাইন

---------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"

সবজান্তা এর ছবি

চমৎকার কবিতা। আমার ব্যক্তিগত পাঠরুচিটা এমন যে, কোন কবিতায় দৃশ্যকল্পের বর্ণনা থাকলে, তাতেই চোখ আটকে যায়। আপনার কবিতাতেও তেমন কিছু সাবলীল বর্ণনা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করি,

চাঁদের কাঁচারীতে তারাদের তুমুল আড্ডা বিলাস,

এই লাইনে "কাঁচারী" শব্দটা কি আগেকার দিনের বাড়ির বাইরের অংশে যে ঘরে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হতো, সে ঘরের কথাই বলছেন ?

সেক্ষেত্রে, আমার জানা মতে, শব্দটা সম্ভবত কাছারি। অবশ্য এটা নেহায়েতই বানানের একটা খটকা থেকে বলা- যদি আপনি কবিতার জন্যই ইচ্ছাকৃতভাবেই শব্দটিকে পালটে থাকেন, তবে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য দুঃখিত।


অলমিতি বিস্তারেণ

ফকির লালন এর ছবি

হ্যা, বাড়ীর বাইরের অংশই। কাঁচারী কি কাছারি হবে? হলে দুঃখিত। বানানে প্রায়ই ভুল থেকে যাচ্ছে।

মণিকা রশিদ এর ছবি

খুব ভালো লাগলো!
_______________________________
আর সব যুদ্ধের মৃত্যুর মুখে হঠাৎ হাসির মতো ফুটে ওঠা পদ্মহাঁস
সে আমার গোপন আরাধ্য অভিলাষ!
--আবুল হাসান

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

ভাস্বতী ঘোষ এর ছবি

অপূর্ব শব্দের গাঁঁথুনি! ধন্যবাদ, লালন ভাই|

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।