পিকনিক ব্যাপারটা বেশ ঝক্কির,
বাস ঠিক করো, জায়গা ঠিক করো, মেন্যু, বাবুর্চি, রাফেল ড্র –
তারপরো আছে নানান হ্যাপা, এই ধরো ক্যামেরা, চাঁদা, মেয়েদের বাথ্রুম ইত্যাদি।
ড্রাইভার যদি রাতে খ্যাপ দ্যায় তো পাশে জেগে থাকো,
ডিমটা ঠান্ডা ক্যানো চেঁচিয়ে বলে কেউ একজন,
একটা হাসি দিয়ে তাকে ঠান্ডা করো, সে যখন বউয়ের আঁচল ধরে
ফেরার বাসে উঠে যাবে তুমি জানো তখন তুমি ডেক তুলবে বাসের ছাদে।
কেউ জানেনা আমি খুঁজে পেয়ে গেছি
চকচকে সোনালী ঈভের আপেল,
নীল ধুঁপের গন্ধ হৃদয়ে ভরে
আরো চকচকে কোন রূপালী ছুরির অপেক্ষায়,
আজীবন কাটিয়ে বনেদী সিন্দুকে
অতীতের গহন থেকে বর্তমানে
বোরাকের মতো লাফিয়ে উঠেছে -
সোনালী চকচকে আপেল সে এক।
আমার সোনালী আপেল
আমারো চেয়ে বেশী ভালোবাসে বুঝি
ঘাতক ছুরির সহিংস চুম্বন,
রক্তপাত নিশ্চিত জেনেও কেন তার কোন ভয় নেই
জিঘাংসায়? আহ, জানে সে
বিষণ্ণতার শহরে এসে
হ্যামিলনের মনে হলো একবার বাজালেই বাঁশি
বিষণ্নতা সব ঝাঁপ দেবে নদীতে,
মনে হলো নতুন এক সুর তুললেই
এক লহমায় শহরে চমকাবে আনন্দের কিংখাব।
হ্যামিলন, বিষণ্নতা কোন শৌখিন আলোয়ান নয়,
যে ছুড়ে ফেলে দেয়া যায়,
বিষণ্নতা আমাদের শখ বা রোগ নয়,
বিষণ্নতা আমাদের সহচর, নিত্য প্রেম,
বিষণ্নতা আমরা আমাদের বুকে পুষি,
চোখে পুষি, পুষি আমাদের স্বপ্নে।
আমাদের মানিব্যাগ খুলে দ্যাখো,
সইকত থেকে বহুপথ হেটে
আমাদের বিষন্নতার শহরে আজ সমুদ্র এসেছিলো -
এসেছিলো লবনাক্ত বাতাস,
ঝিনুকের গায়ে মুক্ত-বালির স্বাদ,
আর ঝাউপাতার র্দীঘশ্বাস,
আমাদের বিষন্নতার শহরে আজ সমুদ্র এসেছিলো।
হে আমার বিষন্ন শহর,
তুমি কি জানো
প্রতিটি ঢেউই তটরেখায় রেখে যায় নিজস্ব চিহ্ন সব,
প্রতিটি তরংগ চুমু খায় হৃদয় মৃত্তিকার,
আনে যতো জলজ যাপনের স্মৃতি,
প্রতিশ্রুতি দেয় সায়ন্তনি সূর্যস্পর্শের,
ভালো থাকা কোন অলৌকিক আশ্চর্য বিষয় নয়,
বড় হতে হতে আদিগন্ত সকলেই জেনে যায় কিভাবে ভালো থাকতে হয়,
আমিও এখন ভালো থাকি।
এই যে দেখছো ফিনফিনে ফতুয়া,
এক কিশোরী দিয়ে বলেছিলো, ভালো থেকো;
অথবা এই যে চোখে রোদচশমা- কালো,
এক তরুণী দিয়ে বলেছিলো, কষ্ট পেওনা, ভালো থেকো;
আর এই যে দেখছো ক্যামন উদ্ধত মোরগের মতো হেঁটে চলেছি,
এক নারী বলেছিলো, কখনো মাথা নত করোনা, ভালো থাকবে।
তুমি ভুলে যাবে - জানি,
গেলেই বা,
আমি যেন না ভুলি,
এই একটুকরো সন্ধ্যা,
এই অচেনা গোধুলি;
এই অপ্রশস্ত ফুটপাত,
এই হিরন্ময় নীরবতা,
এই চলাচল,
আমাদের এই শেষ হাঁটা -
এ-ক-সা-থে,
আমাদের সিক্ত মন,
তার দোলাচল,
তুমি ভুলে যাবে জানি,
গেলেই বা,
আমি যেন না ভুলি,
এই এক একটুকরো সন্ধ্যা,
ভালোলাগার শেষ মুহুর্তগুলি।
আঁধার ছুয়েছে কার্ণিশ -
কার্জনের;
পাখিরা ফিরছে ঘরে,
আমাদের জোস্ন্যালোকিত মফস্বলে এখন জোনাকিদের ভিড়, কুপির আলোয় দূর থেকে ভেসে আসে শিউলীর ঘ্রাণ, তার দমে বুক ভরে অচেনা আভায় আমি দেয়ালের সাথে তোমার অবয়বহীন ছায়ার রহস্য খুঁজে ফিরি।
আমাকে তাড়া করে আমাদের রৌদ্র-দিন, আমাদের জোস্ন্যা-দিন, বর্ষা-দিন, আমাদের সব-দিন-হারানো-দিন।
১।
কার জন্যে খুঁড়ে আনো জল
আনো তৃষ্ণা সব?
স্মৃতিদাহ'র পর কি আর
থাকে বাকী, শুধু ভস্মের
অপেক্ষা - ঊড়বার।
২।
সকলেই ব্যাগ্র ফিরতি যাত্রায়,
শুধু আমারই নেই কোন তাড়া, বহুজনেই
আছে জলদি পৌঁছে যেতে চায়,
কেবল আমিই বুঝি
তাড়া করে ফিরে যাবার কোন উপকার দেখিনা।
৩।
একটা গভীর কবিতা যদি
তোমার মনে থাকে, তবে তাই
লিখবো আমি, একটা কোমল
নরম গান যদি গুনগুন করো,
তবে তাই গাইবো আমি।
৪।
ছাপা হলে, ফিসফাস -
এ কবিতার মেয়েটি কে জানো তো?
তুমিও জানতে সে কে,
বোধকরি বেশ খানিকটা গর্বও হয়েছিলো, বেশ
আধফোঁটা একখানা কবি পাওয়া গ্যাছে
আপত্তি নেই যার অনন্ত অপেক্ষায়
আমাদের দেখাও বড়ো অদ্ভুত
চৈত্র দুপুরে রক্তবর্ণ ওড়না উড়িয়ে তুমি এলে,
বললাম, তুমিতো বসন্ত নিয়ে এলে হে,
বলতে, আমি না এলে কোন বসন্তই আসবেনা।
ক্যামন চুয়ে পড়তো অহংকার সব
শিমুল ফুলের মতো রাঙা ঠোঁট বেয়ে ।
তুমি আমি, কাজলরেখা, জ্যোৎস্না চাখতে
যখন যেতাম উত্তরের গাঙে,
সেখানে বিশাল সব হাঁ-করা ঢেউ,
যেন বোয়ালের মতো গিলে খাবে চাঁদ সদাগরের নাও
জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যায় মন,
জ্যোৎস্নায় ভিজে যায় শরীর,
জ্যোৎস্না না কাজলরেখা - তুমি,
কার নেশা বড়, ভাবতে ভাবতে আমার কিস্তিই
বুঝি গিলে খায় তোমার উথালপাথাল হাওড়।
তারার শামিয়ানা, ছলাৎ-ছলাৎ, তুমি আমি
পাশাপাশি, বলো, মরণেই বা আর কিবা আসে যায় -