বন্ধুবর সুবিনয় মুস্তফীর জবাবে নতুন পাতা খুলতে হলো। প্রথমত এটাকে মন্তব্যের খোটে পোরা যাচ্ছে না বলে, দ্বিতীয়ত এ নিয়ে স্বতন্ত্র আলোচনা দরকার মনে হওয়ায়। গোস্তাখি মাফ করবেন।
কমিউনিজম নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে বিতর্কটাকে বোকার মতো করা বা চালাকির ভেলকি দিয়ে করা তা যার যার ব্যাপার। তবে একে আত্মপক্ষ সাফাই-য়ের বাইরে নিয়ে যাওয়া দরকার। আর সাধক শঙ্কু এবং অন্যান্যদের পরে আর পুনরুক্তির দরকার কি? আর বিশ্লেষণের চুল চেরার কসরত সবার পোষায় না। চুলটা তাতে ছিঁড়ে যেতে পারে কিন্তু!
চটজলদি এটুকু বলা যায় যে,আমাদের প্রশ্ন তিনটি। এক . পরিবর্তন ও মুক্তির দর্শন, দুই. তার এজেন্সি তথা প্রতিনিধিত্ব এবং তিন.মুক্তিকামী সিস্টেম হিসাবে কমিউনিজম। এ তিন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করা গেলে আর মাও-স্ট্যালিন নিয়ে বিবাদের প্রয়োজন পড়ে না। ওদের ছাড়াও মানুষ লড়তে পারে, যদি সে বাধ্য হয়, যদি জুলুম চলে। বাকিটা ইতিহাসের কাজ। এবং ইতিহাস পুঁজিবাদের খয়ের খাঁগিরি যেমন করে তেমনি 'ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্যভাষণ'ও করে। যে যেটা দেখে। মুচি দেখে পা, নাপিত দেখে মাথা।
প্রথম প্রসঙ্গ : পরিবর্তন ও মুক্তির দর্শন হিসাবে মার্ক্সবাদী ঘরানায় অদ্যাবধি অনেক কাজ হয়েছে। আবার সর্বদাই দরবারি মার্ক্সবাদের বিরুদ্ধে মার্কসবাদী সমালোচনাও জারি ছিল। দুটোকে এক করা ঠিক না। যাহোক, মুক্তির দর্শন হিসাবে আজো বিশ্বের বেশিরভাগ প্রতিরোধী আন্দোলন মার্ক্সবাদের শরণ নিচ্ছে। আবার কালে কালে দেশে দেশে শ্রেণীতে শ্রেণীতে এর যে সৃষ্টিশীল অভিযোজন ও সংযোজন ক্ষমতা; তা-ই প্রমাণ করে এটি অ্যাবসলিউটিস্ট মতাদর্শ নয়। দ্বান্দ্বিকতা এবং শ্রেণী সংগ্রামের বীক্ষা ছাড়া এর আর কিছুই ধ্রুব নয়। সুবিনয় মুস্তফি আদর্শ বা দর্শন হিসাবে এটা কেন 'মৌলবাদী' তার কোনো বুদ্ধিগ্রাহ্য যুক্তি দেননি। অতএব আমিও হাওয়ার ওপর তাওয়া গরমের পথে যাব না। উল্টো বলবো, এর দার্র্শনিক পদ্ধতি এমনই দ্বান্দ্বিক যে,তা শ্রেণী সংগ্রামের কথা বললেও শেষবিচারে শ্রেণীরই বিলোপ দেখতে পায় ইতিহাসে ও পুঁজির সঙ্কটে। তা সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বের কথা বললেও শ্রেণী হিসাবে সর্বহারাদেরও বিলোপ ঘটায় সাম্যবাদে। তা মানব সমাজে যাবতীয় দ্বন্দ্বের মধ্যেই প্রগতির সূচক দেখে। ফলে ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা, পরিবেশ ও নারী প্রশ্নকেও ধারণ করার মতাদর্শিক তাকদ রাখে। সর্বোপরি তা ইতিহাসে মানুষকে পুঁজি ও ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বাইরে এনে মানবীয়তাকেই লক্ষ্য এবং পরিবর্তনের চালক বলে গণ্য করে। এই বিস্তৃতির কারণে তত্বগতভাবে মার্কসবাদের এককেন্দ্রিক হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে?
দ্বিতীয় প্রসঙ্গ> পরিবর্তনের এজেন্সি হিসাবে শ্রমিক শ্রেণীর কথা এলেও তা মোটা কথা। সঠিক অর্থে শ্রেণীসংগ্রামের ফলেই সমাজ বদলায়। অতএব নিপীড়িত শ্রেণীর পার্টির একটা আলাদা ভূমিকা সেখানে প্রত্যাশিত। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, এক দলীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি। শ্রেণীর বিপরীতে শ্রেণীর আধিপত্যের জবাবে পার্টির আধিপত্য কেবল ভুলই নয়,তার প্রতিপক্ষতা দূর্বল। কোনো কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতায়ন নয়,মেহনতির ক্ষমতায়নই লক্ষ্য। কিন্তু সংঘবদ্ধ শক্তি ছাড়া প্রেমভাবে গদগদ হয়ে তা হয় না যে ভাই। নিপীড়িত শ্রেণীর একাধিক পার্টি বিপ্লবী রূপান্তরে হাত লাগাতে পারে। কিন্তু শ্রেণীর থেকে আলাদা হয়ে কিছু করার সুযোগ সেখানে বেশি থাকে না। থাকলেই বিপদ। রাশিয়াতেও প্রথম দিকে একাধিক পার্টির জোট ছিল। পরে মতাদর্শিক বিতর্ক ও গৃহযুদ্ধের চাপে তা বিলীন হয়।
তৃতীয় প্রসঙ্গ> সিস্টেম হিসাবে রুশ বা চীনা কমিউনিজমের বাইরেও মডেল ছিল। যেমন কিউবায়, আলবেনিয়ায়। রুশ বা চীন দেশে যে বিপ্লবী রূপান্তর ও গঠনমূলক বিনির্মাণ হয়েছে মানবজাতি তার দ্বারা অশেষ উপকার পেয়েছে। কিন্তু তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যারপরনাই ব্যর্থ হয়েছে। বাকি সব ব্যর্থতা এখান থেকেই আসে। জনগণের রাষ্ট্রে জনগণের হাতে ক্ষমতা থাকলে তা কখনোই জনগণের বিপুল অংশের বিরুদ্ধে যায় না। রাশিয়ায় কীভাবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা সেভিয়েতকে খেয়ে ফেলল, সেটা দেখলেই এর প্রমাণ মিলবে। এর বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের অনেকেই ষাট দশক থেকে সোচ্চার ছিলেন। বিরোধীদের মধ্যে ট্রটস্কি, রোজা লুক্সেমবার্গ ও আন্তোনিও গ্রামসি নমস্য। তবে রাশিয়ায় আপনি যে সিস্টেমের পতন দেখেছেন তা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের পতন। আর এখন সেখানকার চল্লিশ ভাগ মানুষ আগের অবস্থায় ফেরত যেতে চায়। তাদের আপনি কী বলবেন? মৌলবাদী? তবে আমরা মৌল-বিবাদী তাতে সন্দেহ নাই। বাম তিন প্রকার। বাজারে দুই প্রকার মাথা ব্যথার বাম পাওয়া যায়। একটা হলো ইনু-মেনন মার্কা মিল্লাত বাম। আরেকটা আন্ডারগ্রাউন্ডের টাইগার বাম। আরেকটা হলো বিধি বাম। দুঃখিত আমি এদের মধ্যে পড়তে রাজি নই। আবার আজ মুক্তির মতাদর্শ নাই বলে বলে পুতুপুতু মানবতাবাদের এনজিও অবস্থানেও আশ্রয় নিতে নারাজ। পুঁজির মূত্রস্রোতের গাদ থেকে জন্মানো ঐ মানবতাবাদ এক অলীক পুষ্প বৈ কিছু নয়। কিন্তু মুশকিল হলো সেটা কাগজের, তার সপ্রাণতার বালাই নাই।
আদর্শের নামে মুক্তিকে নয়, জনগণকে নয় মুক্তির নামেই আদর্শকে বৈধতা পেতে হবে। অর্থাত আদর্শের কথা কে কোথায় দাঁড়িয়ে বলছে, ড্রইংরুমে, প্রবাসে, ব্লগে বসে লিখছে না বাস্তব সংগ্রামের জমিনে দাঁড়িয়ে বলছে সেটাও দেখতে হবে। সেকারণে মার্কস নিজেকে মার্ক্সবাদী বলতে রাজি হননি আর মাও তরুণদের নিয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। বিপ্লবীরা সবসময়ই রাজনীতিতে শ্রেণী তথা জনগণের স্বার্থ এবং পরিবর্তনের দ্বান্দিকতার দিকে খেয়াল রেখেছিলেন। পূর্বনির্ধারিত প্রকল্প ধরে অগ্রসর হননি বা কেবল পার্টি সুপ্রিম্যাসি বা আপ্তবাক্য প্রতিষ্ঠার দিকে যাননি। আজকের যুগে পুঁজির সাম্রাজ্যকে শ্রেণীর রংয়ে দেখার পাশাপাশি বর্ণবাদ, জাতবিদ্বেষি, প্রগতিবাদী সেক্যুলার আধিপত্য, প্রাচ্যবাদ ইত্যাদি রংয়েও রঞ্জিত দেখতে পাওয়া যায়। এসবের ইতিবাচক বিরোধিতা ও এর অবসানের পরের সমাজের প্রকল্প আমাদের নিশ্চয়ই লাগবে। কিন্তু প্রকল্প সবসময়ই ত্রুটিপূর্ণ ও আপেক্ষিক এই হুশিয়ারিটুকুও জরুরি। বারোটা ব্যর্থতা সাইত্রিশটা সাফল্য গড় করে রায় দেয়ার দরকার নাই। আবার সাদা কালোর মাঝখানে একটা ধুসর এলাকা আছে সেটাও দেখা দরকার। আপনি আমি চাই বা না চাই, বাঁচবার জন্যই মানুষ আদর্শের খোঁজ করবে, না পেলে গড়ে নেবে। সেটা ঠেকাবেন কীভাবে? সেটাকে কী কারো ব্যক্তিগত যৌন অবদমন দিয়ে ব্যাখ্যা করবেন? ইতিহাসের থেকে একজন ব্যক্তির যৌন অবদমনের এমন ক্ষমতা যে, তা আরবে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরাট আন্দোলনের জন্ম দিল? তাহলে তো সাইয়দি কুতুবকে সত্যিই মহাপুরুষ বলতে হয়। (সাইয়দি কুতুবের যৌন অবদমন দ্রস্টব্য)।
সুবিনয় আরো যা বলেছেন,যেমন : মৌলবাদী ব্যবস্থা, কমিউনিস্ট আইকনোগ্রাফি, প্রমিস ও ডেলিভারি, কমিউনিজম খেদানো, লাথি মেরে...ঝেড়ে ফেলা'ইত্যাকার বুলিবাগীশতায় প্রমাণ হয় তিনি নীতিগতভাবে কমিউনিস্টবিরোধী। তাতে দোষ নাই। তবে এসব বিশেষণে সাম্রাজ্যেরই একচেটিয়া ব্যাবসা যথা প্রমিস ও ডেলিভারি, আইকনোগ্রাফি ইত্যাদি। কিন্তু আমরা যারা দাগের এপারে থেকে আত্মসমালোচনা ও মতাদর্শিক পুনর্গঠনের পথে হাঁটতে চাই ওতে আমাদের কাজ হবে না। জ্ঞানের অভাব থাকলে শুধরে নেব, আপনার কাছ থেকেও নেব কিন্তু আমি পরিস্কার জানি, জ্ঞান সহায়ক কিন্তু জ্ঞান থেকে মানুষ মানুষের পক্ষে দাঁড়ায় না, জীবন দেয় না, আরামকে ঘৃণা করতে শেখে না। সেটা জগতের প্রতি কৌমভাবে তাকানো এবং ব্যক্তিগত মুক্তিরও ব্যাপার। নিজেকে দীন ভাবার ব্যাপার। দেখুন, অনেক দেখেছি। আমার হাতের ওপর ফুলবাড়ীর এক কিশোরকে মরতে দেখেছি। তার হতদরিদ্র মা'র চোখের চাহনির ব্যাখ্যা আমি কোথাও পাই না, আরো মানুষের চোখে চোখে তাকানো ছাড়া। ঐ চোখের চাহনির ব্যাখ্যার জন্য আমার মার্কসবাদের দরকার পড়ে না। হাজার বছর যাবত মানুষ মানুষের চোখের ভাষা ও মর্মের যাতনা টের পেয়েছে। সেটা যাকে তাড়িত করে তার অন্য উপায় নাই। সে রুগ্ন, মুর্খ, অভব্য ও একলষেঁড়ে যা-ই হোক, আমার মধ্যবিত্ত সত্তা তার প্রতি প্রণত_ উদ্ভিদ যেভাবে আলোর প্রতি প্রণত। এ ভিন্ন আর কথা কি?
বাড়ি আসার সময় বিপ্লব ভাইয়ের জন্য আপনার লিস্টি করা ঐসব বইপত্রের সঙ্গে পুঁজির মুত্রস্রোতে ভাসা মহান পশ্চিম আপনার মধ্যে যে অ-লৌকিক আসমানী কুসুম ফুটিয়েছে আমার মতো অন্ধ পাতকের জন্য তার একটা আনবেন? হায় ! আমার চোখ যে আজো ফোটে নাই!!!
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
মন্তব্য
বাহ। অবশেষে মুত্রস্রোতে গিয়া ঠেকলেন? আপনের বিপ্লবের জয় হোক। বেস্ট অফ লাক।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ঠেকলাম, আপনি তো আরশেই আছেন। কিন্তু আপনার মানবতাবাদকে বিছরাতে বিছরাতে ঐ মূত্রস্রোতেই পাইলাম যে! ভাই আমরা পরাজিত পক্ষ। ক্যান খোঁচা দেন।
রামের সুমতি হোউক।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
মুত্রস্রোত, আসমানী কুসুম, আরশে বসা - তথ্যভিত্তিক বিতর্ক থেকা ভালোই ব্যক্তিগত আক্রমণে যখন গেছেন, তাইলে বলি। জয় পরাজয়ের ব্যাপার না এইটা। আপনের সাম্যের গান আর মার্ক্সের তত্ব-কপচানি দিয়া গরীবের পেট আগেও ভরতে পারেন নাই, ভবিষ্যতেও পারবেন না। আপনের মন হয়তো ভরতে পারে। গদিতে বইলে আর সবাইর মতন নিজের আখেরই গুছাইবেন। একদিকে মুত্রস্রোত আরেকদিকে কমিউনিজমের রক্তস্রোত, কে কয় গ্যালন ঢালছে, নিজেই হিসাব কইরেন। আর ঐ তাত্বিক বুলি আউড়াইতে আউড়াইতে মার্ক্সবাদীরা আগেও বাস্তবরে আউলায় ফালাইছে, সামনেও আউলাইবো। সেইটাও নতুন কিছু না। ভাল থাকবেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
বাস্তবটা কি সেইটা বলেন। ভূত না থাকলে বিশ্লেষন, সিদ্ধান্ত আর প্রয়োগ তিনটা ক্রিয়ারই অস্তিত্ব আছে। বাস্তব কি বলে? ভূতাছে?
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ব্যক্তিগত আক্রমণ আমি করি নাই। আপনি বিপ্লব রহমানকে বইয়ের ছবক দিতে চেয়েছেন। আপনি কমিউনিস্টদের মৌলবাদী, হিপোক্রেট, ইত্যাদি অনেক কিছু আপনার মন্তব্যের ছত্রে ছত্রে বলেছেন। তবে কথা কী ব্যক্তিগত আক্রমণ তাকে বলা হয় যখন কারো নিতান্তই ব্যক্তিগত জীবন ও বৈশিষ্ঠ্য নিয়ে আক্রমণ করা হয়। যাকে বলে বিলো দ্য বেল্ট মারা। আমি কেবল কমিউনিস্টদের সমালোচনার বড় অংশ স্বীকার করে নিয়ে মুক্তির মতাদর্শ হিসাবে এর এখনও প্রাসঙ্গিকতার পক্ষে সওয়াল জবাবে নেমে আপনার মতাদর্শিক অবস্থানকে আক্রমণ করেছি। এটা যদি ব্যক্তিগত ব্যাপার হয় তাহলে কমিউনিস্ট মতাদর্শকেও কি ব্যাক্তিগত ব্যাপার বলতে হয় না? আমি অবশ্য তা বলি না। আর আপনাকে বলবো কীভাবে, আপনার নামটি টেক নেম। আমারটা আসল। নকলকে ধরলে তো আর ব্যক্তিকে ধরা বলা যায় না।
আর ভাই, কমিউনিস্টরা মারলে রক্ত বেরয় আর বুর্জোয়া মারলে শরবত পড়ে নাকি? আর কর্পোরেট কিন্তু আজ সামাজিক দায়িত্বের কথা বলে। যেমন ড. ইউনূস। আগে তারা কল্যাণমুলক রাষ্ট্রের ধারণা এনেছিল এখন আনছে সোস্যালি কমিটেড কর্পোরেটের কথা। ফলে কারা হিপোক্রেট?
আমি আর ময়লা ঘেঁটে ফেনা-ফ্যাকসা বাড়াতে চাই না। যদি তথ্যের মামলা হয় তথ্য আসবে যদি চিন্তার বিবাদ হয় চিন্তা আসবে। চয়েস ইজ ইয়রস। চিয়ার্স কোকাকোলা।
::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
রাশানদের ক্ষেত্রে তথ্যটি হয়তো সত্যি। পনেরোটি প্রজাতন্ত্রের বিশাল সাম্রাজ্য দাপটে শাসন করার সুখস্মৃতি নস্টালজিক করে তোলে তাদের অনেককে। কিন্তু এই প্রসঙ্গে রাশিয়া ছাড়া বাকি চোদ্দটি প্রাক্তন প্রজাতন্ত্রের পরিসংখ্যানটা কী?
আরেকটা ব্যাপারে মন্তব্য না করেই পারছি না। সমাজতন্ত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়া বা সমালোচনা করার অর্থই কিন্তু পুঁজিবাদের তোয়াজ করা নয়। সুবিনয় মুস্তফি তাঁর লেখার বা মন্তব্যের কোথাও পুঁজিবাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন বলে মনে তো হয় না।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম: অনেকেরই ধারণা, ক্রিকেটে পাকিস্তান দলের বিরোধী মানেই ভারতের সমর্থক।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
'সমাজতন্ত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়া বা সমালোচনা করার অর্থই কিন্তু পুঁজিবাদের তোয়াজ করা নয়'
ঠিক, তা নয়। কিন্তু ওনার শুরুটাই হয়েছে এ কথা দিয়ে যে, কমিউনিস্টরা (স্ট্যালিন ও মাও) যত মানুষ মেরেছে তত এমনকি হিটলারও মারে নাই। এরকম মন্তব্য আরো আছে তার লেখায়। তিনি যে পদ্ধতিতে এগিয়েছেন, তাতে তাকে দেখাতে হয় যে, কমিউনিস্টরা যে সব হিতকরী বা মুক্তিবাদী কাজ করেছে সেটা ব্যতিক্রম। অথবা বলতে হয় যে, তারা যেসব মন্দ করেছে সেটা ব্যতিক্রম। নতুবা দেখতে হয় যে, ওই মতাদর্শের কোন কোন ভিত্তি থেকে ঐসব অন্যায়গুলো রস পেয়েছিল।
ইতিহাসে বিশুদ্ধ ভাল বলে কিছু নাই যেমন বিশুদ্ধ খারাপ বলেও কিছূ নাই। বেহেশতের ফল ছাড়া আর সব ফলেই পোকা ধরে। সমাজতান্ত্রিক অভিজ্ঞতার সমালোচনা ও পর্যালোচনা অতি জরুরি বিষয়। যেমন লেনিন ও ট্রটস্কির জোর বিরোধিতা সত্ত্বেও স্ট্যালিন জর্জিয়াকে একরকম জোর করেই সেভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত করলেন। জর্জিয় কমিউনিস্টদের আপত্তি ছিল এ কারণে যে, জর্জিয়ায় রুশবিরোধিতা প্রবল এবং সেভিয়েতগুলোর ইউনিয়নে যাতে সকলের সমানাধিকার থাকে। সেটা মানা হয়নি।
আর বাদবাকি প্রজাতন্ত্রগুলো যদি চায়ও তাতেই সমাজতন্ত্র আসবে না। কিছূ যদি আসে সেটা নতুন একগুচ্ছ সংগ্রাম ও দ্বন্দ্বের ফলাফল হিসাবেই আসবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আগের কিছূই আর ফিরে আসবে না। পুঁজির দ্বন্দ্ব এবং মানবিক চাহিদার উত্তরণের মধ্যে দিয়ে নতুন একধরনের সমাজ হয়তো আমরা দেখতে পাব। সেটা সমাজতন্ত্র কী অন্য কিছু হলো সেটা সমস্যা নয়, তবে কমিউনিস্টরা যার বিরুদ্ধে লড়ছে তার অবসান ঘটতেই হবে। আর সেই সমাজে কমিউনিস্টদের বুনিয়াদি কিছু ব্যাপারের উপস্তিতি থাকতে পারে। সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
আমি যদি অতিরেক ঘটিয়ে তাকি তার জন্য দু:খিত। আলোচনা চলুক।
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
রুশবিরোধিতার প্রাবল্য শুধু জর্জিয়াতেই নয়, ছিলো ইউক্রেন আর বাল্টিক প্রজাতন্ত্রগুলোতেও। এবং তা ব্যাপক হারে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হ্যাঁ যত প্রবল বলছেন, তত প্রবল বললে একসঙ্গে থাকা যেত না। 'বড় রুশি'দের জাতগর্বকে কটাক্ষ করে লেনিন অনেক লিখেছেন এবং কাজ করেছেন। তারা কমিউনিজম চেয়েছে কিন্তু রুশ আধিপত্য চায়নি। সেভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিটি প্রজাতন্ত্রেরই স্বেচ্ছায় ইউনিয়নে যোগদান এবং বেরিয়ে আসার সাংবিধানিক অধিকার ছিল। আমেরিকাও কিন্তু একটা ইউনিয়নই ছিল। কিন্তু কী দেখি, সেখানে কি কোনো যুক্তরাষ্ট্র নেই, আছে অঙ্গরাজ্য। আয়ারল্যান্ডকে ব্রিটেন আজো জোর করে দখল করে রেখেছে। স্কটল্যান্ড ব্রিটনদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে আজো প্রতিবাদী। আর বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত তো জাতিসমূহের কারাগার।
আমার নিজের একটা কৈফিয়ত দেবার আছে। আমি অতীতের প্রত্যাবর্তনে বিশ্বাস করি না। কাজে কাজেই সাবেকি বামপন্থার সঙ্কট ও অপরাধ নিয়েও সতর্ক থাকতে চাই।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই অঞ্চলগুলোয় রুশ-বিদ্বেষ ছিলো (এখনও আছে) অত্যন্ত প্রবল। আমি নিজে ভ্রমণ করেছি বাল্টিক প্রজাতন্ত্রগুলোয়, পশ্চিম ইউক্রেনে। ওখানকার লোকজন রুশ ভাষায় কথা বলতে পছন্দ তো করেই না, বরং রুশভাষী যে কোনও ব্যক্তিকে সুযোগ পেলে অপমান করতে ছাড়ে না। আপনি যে-কোনও রুশ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে আমার এই তথ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন। এ-ছাড়া বাল্টিক প্রজাতন্ত্রগুলোর সাম্প্রতিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করলেও তাদের রুশ-বিদ্বেষের প্রমাণ পাবেন।
প্রচলিত একটি কৌতুক বলি।
এস্তোনিয়ার কোনও এক শহরের রাস্তায় এক রুশ স্থানীয় এক ব্যক্তিকে রুশ ভাষায় প্রশ্ন করলো, "অমুক থিয়েটারে যাবার পথটা আমাকে বাতলে দেবেন কি?"
"এই পথ ধরে সরাসরি হাঁটতে থাকুন। দুই ব্লক পরে মোড় নিন ডানদিকে, এক ব্লক পরে বামদিকে, তারপর কিছুটা এগোলেই সামনে দেখবেন রেলওয়ে স্টেশন। ওখান থেকে ট্রেনের টিকেট কিনে বিদায় হোন মস্কোয়!"
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সুবিনয় মৌলবাদ পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেল কেন বুঝলাম না। ফ্যাসিস্ম্, অ্যানার্কিস্ম্ ইত্যাদির প্রবক্তারাওযে মার্ক্সিস্ম্ এর দ্বারা উদ্বুদ্ধ - তা বাদ গেল কেন? সেই সিন্দাবাদ এর জিন থেকে শুরু করে মুসোলিনি, চওসেস্কু আর আজকের আহমেদিনেযাদ, সবাই কমবেশি সাম্যবাদ কপচেই তো পাব্ লিকের কাধঁ এ চাপলো, নাকি? পলিটিক্যাল সাফল্যের জন্য এইটা সবাই করে, করতে হয় - তাই নিয়ম। নেহাত কর্নেল তাহের আজকে বেঁচে নাই - নাইলে মৌ ল বাদ, মার্ক্সিস্ম্, মাওইস্ম্ , আর অ্যানার্কিস্ম্ এর সিম্বায়োসিস্ এর সংজ্ঞা সহ পাকাপোক্ত এবং কারোকারো জন্য পুচ্ছপ্রদাহউদ্রেক্ কর উদাহরব বাংলাদেশ এই দেখা যেত। বিবেচ্য যে, এইখানে উদ্দেশ্য কিন্তু সহাবস্থান এর সম্ভাবনার কথা বলা, সুনির্দিষ্ট ভাল খারাপ এর বিচার অন্যত্র করবো।
সুমন ভাই এর সাথে একন্তই একমত। মাঝে মাঝে ত আমার মনে হয় আমারাই আসলে ভুত। ("spirited away" ... এখনও না দেখলে হইলে তারাতারি দেখে ফেলুন)
সাম্যবাদ বিরোধী প্রচারনার অংশ হিসেবে সমাজতন্ত্রকে ধর্ম আর মার্ক্স লেনিনকে নবী বানিয়ে দেওয়া হয় । অথচ মানবসভ্যতার শুরু থেকেই পুঁজির আগ্রাসন,আগ্রাসনের বিরোধীতায় মানুষের সংগঠিত হবার ঘটনা ঘটছে । মার্ক্স লেনিনের জন্ম না হলে হয়তো সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম হতোনা,জন্ম হতোনা সমাজতান্ত্রিক ব্লকের কিন্তু সাম্যবাদ আর শ্রেনীসংগ্রাম বন্ধ থাকতো?
সেমিটিক ধর্মগুলোর আদিগল্পে হাবিল কাবিলের দ্বন্ধ ও কি শ্রেনী দ্বন্ধ নয়? যার শক্তি বেশী সে অধিকার করে নেবে । স্পার্টাকাসের দাসবিদ্রোহ শ্রেনী সংগ্রাম নয়?
গত শতাব্দীতে সমাজতান্ত্রিক বহু রাষ্ট্রে মানবাধিকারের চরম লংঘন হয়েছে,সমাজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোও আগ্রাসন চালিয়েছে-এ সত্য অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই ।
তাই বলে মানুষের ইতিহাসের সমান বয়সী যে দর্শন তাকে ধর্মীয় মৌলবাদী সাথে তুলনাটা অযৌক্তিক । অযৌক্তিক এ কারনে যে,ধর্ম প্রশ্নহীন আনুগত্য শিখায়-সমাজতন্ত্র প্রশ্ন করতে শেখায় । দ্বান্দিক বস্তুবাদের কোর ধারনাইতো হলে ক্রমাগত বদল । ধর্মতাত্বিক ব্যাবস্থা একটা পর্যায়ে এসে থেমে যায়-সমাজতন্ত্র যে সমাজের স্বপন দেখায় সেটা বিপ্লবের পর পর থেমে যায়না । ক্রমাগত উৎকর্ষতার ভেতর দিয়ে তাকে যেতে হয় । যে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিপ্লব পরবর্তী উত্তরনকে অস্বীকার করে তার পরিনতি কি গত শতাব্দীর সোভিয়েত ইউনিয়ন সে প্রমান রেখেছে ।
পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক বাম্ফ্রন্ট সরকারও অদূরে একই প্রমান রাখবেন। ঘন্টা বাজছে ।
ফারুক ওয়াসিফকে ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য ।
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আদি বিতর্কটা পড়তে মজাই লাগছিল ... কিন্তু খটকা লাগলো...
আমি মূল বিষয়ের বিতর্কে আপাতত যাচ্ছি না -- কিন্তু একটা ব্যাপারে একটু খারাপ লাগলো, সেটাই বলি -- শুদ্ধ ভাষায় জবাব দিলেই যে সেটা শালীন জবাব হয় এ কথাটা কিন্তু সবসময় ঠিক নয়।
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
মুত্রস্রোত থেকা গাত্রোত্থান করার সময় হঠাৎএকটা প্রশ্ন মনে পড়লো। দেখি কোন মার্ক্সবাদী আমার প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন কিনা? কমিউনিস্ট শাসনের চাইরটা বাস্তব মডেল লইলাম - তার তিনটা এখনো চলতাছে। জনগণের ইচ্ছার কিরূপ প্রতিফলন ঘটে এই রকম শাসন ব্যবস্থায়, সেইটা বুঝাই আমার লক্ষ্য। দেশ চাইরখানা হইলো রাশিয়া, চীন, কিউবা আর উত্তর কোরিয়া।
এই চাইরটা দেশ বাইছা লইলাম কারণ এই দেশগুলাতে অনেক বছর ধইরা বাস্তব কমিউনিস্ট শাসন চলছে - মার্ক্সের পুঁথির তত্ব থেকা বাইর হইয়া আইসা তারা কমিউনিজমের বাস্তব প্রয়োগ করার প্রয়াস পাইছে।
রাশিয়া - ১৯১৭ - ১৯৯১ - শাসনকাল ৭৪ বছর
চীন - ১৯৪৯ থেকা বর্তমান - শাসনকাল ৫৮ বছর
কিউবা - ১৯৫৯ থেকা বর্তমান - শাসনকাল ৪৮ বছর
উত্তর কোরিয়া - ১৯৪৮ থেকা বর্তমান - শাসনকাল ৫৯ বছর
টোটাল আসে ২৩৯ বছর - গড়ে প্রায় ৬০ বছরের কমিউনিস্ট শাসন প্রতিটা দেশে। বহুত লম্বা সময়। আমার প্রশ্নটা খুবই সোজা। প্রশ্নটা হইলো বাস্তবে প্রচলিত এই কমিউনিস্ট দেশগুলাতে এই ২৩৯ বছরে কয়টা সাধারণ নির্বাচন হইছে? উদাহরণ (এবং উইকি লিংকসহ) জানাইলে বাধিত হমু। উত্তরদাতার সুবিধার লেইগা উপরের প্রতিটা দেশের উইকিপিডিয়া লিংকও লাগায় দিলাম। তিনি যদি এই নাদানরে কিছুটা বুঝতে সাহায্য করতে পারেন।
আবারো কই, বাস্তবের কমিউনিস্ট শাসনে কিভাবে পাবলিকের ইচ্ছা প্রতিফলিত হইতাছে, সেইটা জানবার চাই। গ্রামসি কি থিওরি ফেনাইসে বা রোজা লুক্সেমবুর্গ মরার আগে কি বইকা গেছে, সেই মধু-সংলাপ অন্য সময় হইবো। আর সাধারণ নির্বাচন বাদেও যদি গণ-ইচ্ছা প্রকাশের অন্য কোন রূপ থাইকা থাকে এই সব দেশে, তাইলে সেইটাও দয়া কইরা জানাইবেন।
আপনেরা সাহায্য করতে না পারলে এই প্রশ্নের উত্তর - হায়! - আমারই বাইর করন লাগবো!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
মুস্তফি সাব, যে প্রশ্নের জবাব চাইছেন, সেইডা কনে খোজন লাগবো লিংকও দিয়া দিছেন। মানে কী দাড়াইলো? আপনি ব্যাবাকজান্তা, সেইডা বুঝাইবার চাইতাছেন? নাকি কষ্ট কইরা খুজবেন না? নিজে খুইজাই জানান না রে ভাই। ভালো লাগবো।
আরিফ সাব,
অসুবিধা নাই। উইকি লাগবো না, উইকি তো সব নাও জানতে পারে। অন্য যে কোন সোর্স পাইলে হেই লিঙ্কই দিয়েন না হয়। উত্তরটাই আসল - আর প্রশ্নের উত্তর নিজেই খুঁজুম, যদি আর কেউ হেল্প না করবার পারে। কমিউনিজম বিষয়ে আরো জানেওয়ালা লোক আছে নিশ্চয়ই।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আপনার অধ্যাবসায় থেকে উদ্দীপনা পাচ্ছি। বিতর্কের প্রাণ সঞ্জিবনীও আপনার মারফতই আসছে। আবারো কৃতজ্ঞতা। ঐ দেশ ক'টি আপনার কাছে সমস্যা হিসাবে হাজির হয়েছে। আপনি কেন কীভাবে সমস্যার সুলুক জানলেন তাও জানাইছেন। ভাগ্যিস উকিপিডিয়া ছিল। কিন্তু ভাই এটা কবিয়ালি লড়াই নয় এবং বিশ্ব ডায়েরি বা বিসিএস গাইড জাতীয় নোটবইও কাজে লাগবে না। এই ওউষুধ আপনি কীভাবে পাইলেন এবং কমিউনিজমের কী নিদান সেইটা সমতে বিস্তারিত লেখেন। তারপর দেখি, আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ পাই কিনা। কিন্তু আপনার হুঙ্কারে এই অভাজন যারপরনাই ভীত হচ্ছেন। বিষয়টা খেয়াল রাখবেন।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হায় হায়। প্রশ্নরে আপনের কাছে হুংকার মনে হইলো? আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আপনেরে ডর দেখানো আমার উদ্দেশ্য আছিলো না। দেশ চাইরটারে সমস্যা হিসাবেও আমার কাছে প্রতীয়মান হয় নাই। আমি নেহায়েত জানতে চাইসি ঐখানে গণ-মানুষ কিভাবে তাগো ইচ্ছা তাগো শাসকগো কাছে জানায়, আর ইলেকশন যদি না থাকে, তাইলে শাসক বদল বা পলিসি বদলের জন্যে ইলেকশনের থেকা আরো কোন উৎকৃষ্ট রাস্তা তাগো কাছে খোলা আছে কিনা। এই ব্যাপারে আমার থেকা আপনে ভালো জানবেন। কয়েক দশকের কমিউনিস্ট শাসনের বাস্তব উদাহরণ হিসাবে ঐ চাইরটা দেশই প্রথম মাথায় আইছিলো। নির্বাচনের আরো উদাহরণ আছে নিশ্চয়ই। থাকলে প্লীজ জানাইয়েন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
কমিনিষ্ট রাষ্ট্রের সফলতা আর ব্যর্থতা জেনে কি হবে আর, হেগোরে কিছু জিগাইলে বা সমালোচনা করলে কয় পুজিঁবাদের এমন কি গুন যে এর সাফাই গাওয়া হচ্ছে। আশ্চর্য ব্যাপার হলো এদের প্রশ্ন করা মানেই আপনি সাম্রাজ্যবাদীদের দলে......হা হা.. এখন পর্যন্ত আমার কাছে কমিউনিষ্ট দেশের গনতন্ত্র মানে হইলো এক নেতার শাসন ( যতদিন তিনি বাচঁবেন ততদিনই ক্ষমতাই থাকবেন তিনি, গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পলিট ব্যুরোর সদস্যরাই নাকি তিনাদের নির্বাচিত করেন!)! আসলেই সমাজতন্ত্রিদের গালভরা গনতন্ত্রের বাস্তব উদাহরণ কি ? আনুমানিক ১০০ বছরের কমিউনিষ্ট শাসন থেকে আমরা কি পেয়েছি ? আমার কাছেও এসব প্রশ্নের কোন উত্তর জানা নেই, আমিও সুবিনয় আপনার মতো জানতে চাই এর উত্তর মাননীয় কমিউনিষ্টদের কাছ, যদিও দয়া করে এর উপর বিস্তারিত আলাপ করেন (বীনিত অনুরোদ কোন অনুমান নির্ভর উদাহরণ নয়, বাস্তব উদাহরণ নিয়ে আশা করবো তিনারা আলাপ করবেন।)!
আদিত্য
এসব বলেও দেখা যাচ্ছে আলোচনাটাকে মাথার দিকে অর্থাত বিশ্লেষণের দিকে নিয়ে যেত পারিনি। তা চলে গেছে পায়ের দিকে, অর্থাত পরস্পরকে আঘাত করার দিকে। এ ব্যাপারে আমার যদি উস্কানি থাকে তার দায় আমি নিচ্ছি।
আমার নিজের অবস্থানে আমি বলেছি যে, আমি কমিউনিজমের অ্যাপলজিস্ট নই। বিশ্বের কয়েকশ' কোটি মানুষ দীর্ঘ ও রক্তাক্ত সংগ্রামে কী অর্জন করলো,কোথায় ব্যর্থ হলো; সংগ্রামের এ বাস্তব দিকটার থেকে চোখ সরিয়ে কোথায় কতবার ভোট হলো এমন বিচ্ছিন্ন আলোচনায় কাজ নাই। ব্যাপারটা কমিউনিজম বা পুঁজিবাদের ১০টা ভাল গুণ আর দশটা মন্দ গুণ হাজির করার নয়। আমি সামগ্রিকভাবে দেখতে চেয়েছিলাম, শিখতে বসেছিলাম। কিন্তু সুবিনয় মহাশয় ঐ তিনটি বিষয়ের একটি প্রশ্নেই আটকে থাকতে পছন্দ করেছেন। গ্যালিলিও যখন বারবার বলছেন, ভাইসব বাইবেলে যা আছে থাক, একবার মাত্র আমার এ টেলিস্কোপে চোখ লাগান_দেখবেন কে ঘোরে সূর্য না পৃথিবী। মোল্লারা দেখে নাই। সুবিনয় সাহেবের চোখকেও আমি ফেরাতে পারি নাই। যতই বলি,রুশ বা চীন দেশে যে বিপ্লবী রূপান্তর ও গঠনমূলক বিনির্মাণ হয়েছে মানবজাতি তার দ্বারা অশেষ উপকার পেয়েছে। কিন্তু তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যারপরনাই ব্যর্থ হয়েছে। বাকি সব ব্যর্থতা এখান থেকেই আসে। ততই তিনি উইকিপিডিয়া দেখান। এখন আমি কোথায় যাই ভাই!
স্ট্যালিন-মাও ভুল করেছে, মানুষ মেরেছে সব ঠিক। তবে রাশিয়া-চীন প্রভৃতির অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, পার্টি ভেতরের বুর্জোয়া আক্রমণ ও জনগণের অপ্রস্তুতি এবই বাইরের সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের মুখে রাষ্ট্রকে যত শক্তিশালী করতে গিয়েছে, ততই তারা একসময় সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। অথচ সমাজের জোরেই তারা বিপ্লব করেছিল। এই রাষ্ট্রবাদ একটা ভুল। দ্বিতীয়ত সব দেশের সমাজতান্ত্রিক যাত্রা এক হয় নাই। ফলে ঐতিহাসিক নির্ধারণবাদ, বিপ্লব এইভাবে এভাবে অনিবার্য এসব জোরের সঙ্গে আর বলা যাবে না। জানি, এই আলোচনা অনেকের প্রয়োজন নাই। কারণ, কমিউনিজম তো খারাপই, এ নিয়ে আর কথা কি? কিন্তু তর্কটা যদি সুকুমার রায়ের ছড়ার সেই চরিত্রের মতো হয় যে, 'হ্যাঁরে তোর দাদার দাড়িগুলো নাকি সব সাদা, আর তোদের বেড়ালটা গায় নাকি খেনো সুরে?' তবে মুশকিল।
সুবিনয় যে ধরনের নির্বাচন চান সেধরনের নির্বাচন যদি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে থাকে তাহলে আর বিপ্লবের দরকার কী ছিল? এই ভাওতায় তারা যায় নাই। এবং ঐসব দেশে বিপ্লবের আগে কোনো ভোটাধিকার তো তো দূরের কথা মানুষকে মানুষই মনে করা হতো না। কিন্তু ব্রিটেনের আগেই সেখানকার রাশিয়ার নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছিল। পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের কেন্দ্রে মানুষের মৌলিক অধিকার থাকে না, থাকে ভোটের স্বাধীনতা। এমন স্বাধীনতা যে, তাতে কারচুপি করে বুশকে জিতিয়ে দেয়া যায় এবং বারো চোরের মধ্যে ভাল খুঁজতে বাধ্য থাকতে হয়। পরিবারতন্ত্র? বুশ ও ক্লিন্টন পরিবার গত বিশ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। জর্জ বুশ সিনিয়রের আট বছরের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা যোগ করলে এটা দাঁড়ায় গিয়ে আটাশ বছরে। আর আগামি নির্বাচনে যদি হিলারি বিজয় পান তাহলে আরো এক দফা ক্লিন্টন পরিবারই ক্ষমতায় থাকবে। ভারতে নেহেরু পরিবার ছাড়া গণতন্ত্র মাজা সোজা করতে পারে না। পূর্ব ভারতে উপনিবেশ, কাষ্মীরে দখলদারিত্ব, গুজরাটের মত উন্মত্ত গণহত্যা এ ধরনের গণতন্ত্রেরই উপজাত। গণহত্যার সুবাদেই মোদী ভোটে আরো জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যেমন বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা ক্ষমতায় এনছিল বিজেপি-কে। ভারতের মুসলিম-দলিত ও নিম্নবর্গের কৃষক-শ্রমিকের অকথ্য শোষণের সঙ্গে কি তাদের গণতন্ত্রের সম্পর্ক নাই? আমেরিকায় দুই দলের বাইরে কেউ দাঁড়াতেই পারবে না। নির্বাচন তাদের কাছে মিডিয়া ম্যানিপুলেশন, আইপ্যাকের প্রভাব, কর্পোরেটের বিপুল চাঁদার দোয়া ছাড়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয় কিছু করা। আমেরিকান গণতন্ত্রে এখন অঘোষিত মার্শাল ল চলছে। প্রতিটা নাগরিকের পেছনে গোয়েন্দা লেলানো আছে। টুইন টাওয়ারের মিথ্যার ওপর দুই দুটো দেশের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়েছে মাত্র ছয় বছরে। গুয়ানতানামো কারাগার, দুনিয়া জোড়া ৭৩০টি সামরিক ঘাঁটি, গোটা বিশ্বের সম্পদ ও জনগণের ওপর সাম্রাজ্যবাদের যে করাল নিয়ন্ত্রণ; তা হিটলারের পক্ষেও সম্ভব হয় নাই। ইসরাইলের গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা হলো ইহুদিবাদ। ইসরাইল ইহুদিদের ধর্মতাত্ত্বিক রাষ্ট্র। দুনিয়ার মধ্যে বিশুদ্ধ মৌলবাদী (ইহুদি শ্রেষ্ঠত্ব,জায়োনিজম) রাষ্ট্র হওয়া সত্তেও দোষ কেবল ইরানের। এসবের মধ্যে ভোটের বাইস্কোপ বেশ রঙিনই লাগে, তাই না?
আহমেদিনিজাদকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন একজন, তিনি তো ভোটেই নির্বাচিত। ঐ নির্বাচন নিয়ে এমনকি আমেরিকাও আপত্তি করেনি। হামাসও তো ভোটেই ক্ষমতায় এসেছিল। চিলির সালভাদর আলেন্দে জনপ্রিয় ভোটেই তো এসেছিলেন। গণতন্ত্র কী কেবলই পুঁজিবাদের একচেটিয়া? আপনারা কথা বলছেন নিও লিবারেল ব্যক্তি-অধিকার, মতপ্রকাশ, ভোগের স্বাধীনতা ইত্যাদির মানদণ্ডে পাশ করা নির্বাচনের পাটাতন থেকে। আমি কথা বলছি মানুষ হিসাবে উন্নত জীবন পাওয়ার জায়গা থেকে. মানুষের দ্বারা মানুষের বঞ্চনা বিরোধিকার মঞ্চ থেকে। ঐসব অধিকারের ধারণা শেষপর্যন্ত ফ্যাসিজমের জন্ম দিয়েছে। বিপরীতে কমিউনিজম নিজের দূর্বলতায় নিজেই সরে গিয়েছে।
সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, বারো চোরের একজনকে নির্বাচিত করার গণতন্ত্র সত্যিই ছিল না। তারা জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কাঠামো তৃণমূল থেকেই গড়ে তুলেছিল। সোভিয়েতে কমিউনিস্ট হোন বা না হোন সবরকম মানুষই নির্বাচিত হতে পারতেন। অনেকটা পঞ্চায়েতের মতো। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার শাসনের ম্যানেজারি করে না, ফলে রাষ্ট্র অক্ষত থাকবে কিন্তু ম্যানেজার বদল হবে এমন রঙ্গে আমাদের কাজ নাই। সেকারণে পুরাতন রাষ্ট্রের বিপরীতে পার্টিই হয়ে উঠেছিল বিকল্প রাষ্ট্র। তারপরেও বিরোধীদের সুযোগ ছিল। কিন্তু যখন দেখা গেল সব গুলো পার্টিই বাইরের এজেন্ট হয়ে কাজ করছে তখন কী করা। পাঁচ বছরে একবার ভোট দেয়ার বদলে তারা মানুষকে রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ডে শরিক করেছিল। কারখানা সম্পর্কে শ্রমিকরাই সিদ্ধান্ত নিত। নাগরিক কমিটিগুলো পার্টিকে প্রভাবিত করতো। কিন্তু এমন প্রচেষ্টা ধরে রাখা যায় নাই। আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা বিপ্লবকে চুরি করে। ঠিক বাহাত্তরেই যেমন চুরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, তেমনি। প্রতিবিপ্লব গোড়া থেকেই কাজ শুরু করেছিল এবং তারা বিজয়ী হয়েছে। অতি ব্যবহৃত উদাহরণটা আবারো দিই: ফরাসি বিপ্লবের কাঁধে চড়ে নেপোলিয়ন এসেছিলেন। কিন্তু ইতিহাস আর সামন্তবাদে ফেরত যায় নাই। নতুন ব্যবস্থা স্থায়ি হবার আগে ট্রায়াল এন্ড এররের মধ্যে দিয়ে যায়। সেকারণে ল্যাটিন আমেরিকায় আজ যে সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণ হচ্ছে তা আর আগের পথে চলছে না। সাবেকি সংষ্করণ থুয়ে এখানে তাকান, দেখতে পাবেন নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে। নেপালে তাকান, পাবেন। তারপরও বলবো, আরো দূর যেতে হবে। গোটা দুনিয়ায় বিদ্যমান ধরনের গণতন্ত্র ব্যর্থ হচ্ছে। কমিউনিস্টরা সেটা ফলো করতে গিয়েও সুবিধা করতে পারে নাই। তারপর জন্মের শুরু থেকেই অনুতপাদনশীল সাবেকি সমাজ নিয়ে যাত্রা করে গৃহযুদ্ধ,ন্যাটোর সামরিক চাপ,অবরোধ, আগ্রাসন একদিনের জন্যও তাদের পিছু ছাড়ে নাই। তার ভেতরে তারা ইতিহাসের সব থেকে বড় সংগ্রামে সামিল হয়েছে। আমি একে মর্যাদা দিই। যেমন আতঙ্কে থাকি তাদের অপরাধে।
প্রতিনিধিত্ব ও রাষ্ট্রীয় কাজে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের নতুন রূপরেখা দরকার। আমাদের এখন সেটা খুঁজতে হবে সামনের দিকে। আপনি পেছনে তাকিয়ে সমাজতন্ত্রের ভুত খুঁজতে থাকেন। এই নতুন গণতন্ত্র পশ্চিমা থিংক ট্যাংকের মাথা থেকে বেরোবে না। মানুষের সংগ্রামের মাধ্যমেই তার নতুন রূপ দাঁড়াবে_ দাঁড়াচ্ছে। ইতিহাস মৃত নয়। ৯/১১ এর পরের পৃথিবী তার প্রমাণ। চোখের আড়ে পাহাড় লুকানো যায় না।
আপনার উকিপিডিয়া উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, তার সবই কি আমেরিকার জন্যও প্রযোজ্য নয়? কিউবার নির্বাচনী ব্যবস্থা তাদের স্বাস্থ্য-শিক্ষা-আবাসন-কর্মসংষ্থান ও জীবনমানের মতোই যে কোনো পুঁজিবাদী দেশের থেকে ভাল। একই কথা ভিয়েতনামের বেলাতেও প্রযোজ্য। কিন্তু এগুলো থাকবে না। চীন দারিদ্র্য দূরীকরণে যে উল্লম্ফন দিয়েছে তার কোনো নজির ইতিহাসে নাই। নতুন ধরনের মানবসমাজের পথে এদের অভিজ্ঞতার মূল্য অমূল্য। কিন্তু যেহেতু কমিউনিজম বেহেশতি মেওয়া ছিল না, সেহেতু তাদের আমরা বিশুদ্ধভাবে নিতে পারবো না। আগুন চাইব ধোঁয়া সইবো না, তা কেমনে হয়। বিদ্যমান ধরনের গণতন্ত্র চাইলে আপনাকে পুঁজিবাদও মানতে হবে। আপনি কি তাতে রাজি?
কথা হচ্ছিল নন্দীগ্রাম নিয়ে। সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে যা করছে, একই জিনিষ বিএনপি করেছে ফুলবাড়ীতে। আসলে এরা হাতিয়ার মাত্র, করে এবং করায় পুঁজির নানান কেন্দ্র, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এডিবি ত্রয়ী। আমরা সেটা দেখতে চাইলাম না। গুজরাতে, ইরাকে রাষ্ট্রীয় মদদে যে গণহত্যা হলো, তা নিয়েও আমরা কথা বললাম না। যাহোক আমরা কী দেখি এবং কী দেখি না, তারও নিশ্চয়ই রাজনীতি আছে। আমি সেটার দিকেও নজর আকর্ষণ করতে চেয়েছিলাম্ এখন যদি বলেন, দেখি আমার এই ধাঁধা-টার উত্তর দেন দেখি? এটা টেলিভিশনের কুইজ প্রতিযোগিতা নয়,এবং আমি সেকাজে নাচার।
বোঝা যাচ্ছে, কমিউনিজম বা কোনো আর্থ-সামাজিক সিস্টেম আপনার কাছে কেবল নির্বাচন হওয়া না হওয়ার ব্যাপার। তাদের আর কিছু নাই বয়োবৃদ্ধ স্থায়ি নেতা ছাড়া! ক্যাস্ত্রোকে যদি জনগণ রাখতে চায়, তাতে কার কী? ভোটের গরু দুইয়ে কোন অমৃত সুধা পান করছে বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ? আদিত্য বলেছেন,'গত ১শ বছরের কমিউনিস্ট শাসন থেকে আমরা কী পেয়েছি!' আপনি পাবেন কোথ্থেকে, আপনার দেশে তো ওই বস্তুকে মেরে কেটে শেষ করে দেয়া হয়েছে। আর যেটুকু ছিল সেটুকু বাঘের ছাল পড়া ভেড়া। তাদের অনেকে এখন আপনাদের সঙ্গে একমত হবেন। তবে পেয়েছেন। এই যে কথা বলছেন এটা পেয়েছেন। কমিউস্টদের চাপেই আমেরিকায়ন ঠেকে ছিল, পুঁজির ফ্যাসিস্ট উত্থান সংযত ছিল। ১৯৯০ এর পর ১৭ বছর যায়নি, দুনিয়া ওউপনিবেশিক যুগের ভয়াবহ দখল-লুন্ঠন-সন্ত্রাসে ফিরে যাচ্ছে। তারপরে ধরেন, আপনার দেশের স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছে। সোভিয়েত না থাকলে ভারত এতদুর এগাতো না। অনেক পস্তাতে হতো। নিজ দেশ ছাড়াও বিশ্বের নিপীড়িত জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনে,বিশ্বের গরিব-মেহনতির অধিকারের পক্ষে কমিউনিস্টদের অবদান অস্বীকার করা হবে নেমকহারামি। ফ্যাসিজমকে সোভিয়েত ইউনিয়নই দুই কোটি প্রাণের বিনিময়ে ঠেকিয়েছিল। (এসব নিহতকেই স্ট্যালিনের গণকবরে আরেকবার শোয়ানো কোন ধরনের সততা?)ব্রিটেন আমেরিকা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলায় হিটলারকে মদদ দিয়েছিল, বাড়তে দিয়েছিল এবং রাশিয়ার ধ্বংস চেয়ে চেয়ে দেখছিল।
যেসব দেশে কমিউনিস্টরা জিতেছে সেসব দেশ মধ্যযুগীয় অবস্থা থেকে মাত্র ১/২ যুগের মধ্যে আধুনিক ও সমৃদ্ধ অবস্থায় আসতে পেরেছে। পুঁজিবাদী পথে আজকের আজারবাইজান, ইউক্রেন আফগানিস্তানের অবস্থার বেশি যেতে পারতো না। ইসলামকে দিয়ে আফগানিস্তানে কমিউনিষ্ট উচ্ছেদের পরিণতি কি আমরা দেখছি না? কমিউনিস্টরা দেশটির আধুনিকায়ন শুরু করেছিল। অনেক অগ্রগতিও হচ্ছিল। কমিউনিজমে কোনো দেশ পিছিয়ে গেছে একটাও দেখাতে পারবেন না। ঐসব দেশে বিপ্লব হয়েছিল জনগণের বিপুল অংশগ্রহণে, ক্যু করে নয়, আমরিকা স্পন্সরড ভেলভেট বা ইয়োলো রেভু্লেশন করে নয়। আবার যখন জনগণ মনে করেছে আর হচ্ছে না,তখন কিন্তু সোভিয়েতর ক্ষমতা ধরে রাখায় গণহত্যা চলেনি।
স্ট্যালিনের বাড়াবাড়িকে অতিরঞ্জিত করলে প্রচারে সুবিধা হয় বটে, কিন্তু সত্য তাতে পাল্টায় না। কেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার বীরত্ব স্বীকার করা হয় না? আমাদের ইত্তেফাক আশির দশকে আফগানিস্তানে প্রতিদিন যেসব সোভিয়েত সৈন্যের মৃত্যু প্রচার করেছে, শফিক রেহমান হিসাব কষে দেখিয়েছিলেন যে, আফগানিস্তানে তত সৈন্য তাদের ছিল না। হিটলারের গণকবরগুলো স্ট্যালিনের নামে কত চালাবেন? স্ট্যালিনের অপরাধ অবশ্যই ছিল। কিন্তু কমিউনিজম কি কেবল স্ট্যালিন নাকি?
এ পর্যন্ত যে সমাজতন্ত্র দেখা গেছে সেটা শেষ জাতিরাষ্ট্রের কাঠামো ছাড়িয়ে যায় নাই। চীন-কিউবা-উত্তর কোরিয়া-রাশিয়াসহ প্রায় সবার বেলাতেই তা সত্য। এবং জাতিরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত আইকন তৈরি করে। তবে এসব দেশ মানবিক ও সামাজিব ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি দেখিয়েছে পুঁজিবাদী বিশ্বে তার তুলনা কই?
তুলনাটা দরকার। আমরা এই বিশ্বের বাস্তবতার বাইরে গিয়ে কথা বলছি না। আপনারাও তুলনা করেই কমিউনিজম যে বেশি খারাপ সেটা বলেছেন। আমরা বলছি, কমিউনিজম আরো একশ বছর থাকলেও পুঁজিবাদের গত তিনশ বছরে করা অপরাধের ভগ্নাংশও জন্ম দিতে পারতো না। শোষণ দেখবেন না, খালি গণতন্ত্রের সুরভিত বটিকা খেতে চাইবেন, তা কীভাবে হয়! সুমন যে বাস্তব দেখতে বলেছিল, সেটাও সম্ভবত এই কারণে। পোষ্টমর্ডানিস্ট বহুত্ব ভালো, কিন্তু নিরন্তর পিছলামি ভাল না। আমরা যার যার অবস্থান থেকে কথা বলি। আমি যদি কমিউনিস্ট না হই, তাহলে সাম্রাজ্যবাদী বা ইসলামী এমন কেউ বলছে না। কিন্তু আপনি যখন কাউকে খারাপ বলেন, তখন তা কারো না কারো নিরিখেই করেন। সেই নিরিখটা যদি পুঁজিবাদ না হয় তো কী? আমরা সব কিছুরই সমালোচক হতে পারি, মার্কসের ভাষায় 'ক্রিটিক অব এভরিথিং, হুইচ এক্সিস্টস' হলে আমাকেও দলে রাইখেন। এখন পথ হাতড়ানোর কাল। পথ পেলে জানাবেন, চোখে ধুলো ছোটানো ঠিক নয়।
যাহোক, আমি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলেছি। কিন্তু এখনও আমার করা একটি প্রশ্নেরও জবাব পাইনি। আশা করছি, এসব প্রশ্নও এড়িয়ে গিয়ে আরো কিছু কমিউনিস্ট অপরাধের ফিরিস্তি দেবেন, আধিপত্যেল খাঁড়ার নীচে নির্বাচন করতেই চাইবেন এবং বলবেন মানবাধিকারের কথা। আমি আপনার সঙ্গে আগাম ঐকমত্য জানিয়ে রাখছি। আপনার মন পেলাম না, বাকিটা যদি পাই এই ভরসায়!!!
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ব্রাভো! তুমুল লেখা দিলেন। অবশ্য অশ্লীল শিরোনামে নতুন পোস্ট তৈরী না করার জন্যে ধন্যবাদ। আপনে যা যা বলছেন, তার অনেক কিছুর সাথেই এগ্রি করি, আবার অনেক কিছুর সাথেই করি না। থিসিস, এন্টিথিসিস। সিন্থেসিস-এ যাওয়া সম্ভব কিনা কে জানে। আপাতত আর বেশী বাক্যব্যয় করবো না এই বিষয়ে। মার্কিন মডেল-এর কোনপ্রকার ফ্যান না আমি। প্রচলিত গণতন্ত্র-ও এক প্রকার বুজরুকি। আর সেইটাই least badসিস্টেম কি না, তার সওয়াল জবাবও আসবে ভবিষ্যতে। বিশেষ করে রিসোর্স সংকট যত ঘণীভূত হবে। কমিউনিজম ভালো কথা বলে অনেক, কিন্তু প্রায়োগিক সমস্যা অতিক্রম করতে ব্যর্থ। মানুষ মাত্রেই চরিত্রগতভাবে স্বার্থান্বেষী। নিজের হোক বা গোত্রের। সেইটা কেবল আদর্শিক বুলি দিয়া সরানো কখনোই সম্ভব হবে না, কমিউনিস্টরা যতই বলুক। সমস্যার মূল সেটাই। তার নেতারাই স্বার্থান্বেষীর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। বেপরোয়া পুঁজিবাদের অনেক অনেক গলদ। পুঁজি আগ্রাসী। কিন্তু এইটাও ঠিক যে সম্পদ তৈরী না করতে পারলে অগ্রসর হওয়া সম্ভব না। সামষ্টিক ownership সম্পদ তৈরীতে লং-টার্মে অসফল। প্রাথমিক ধাক্কায় পারলেও ধারাবাহিকভাবে সম্পদ তৈরীতে ব্যর্থ। আর শেষ দুইটা কথা - কমিউনিজম-এর অধীনে শ্রমিকদের নিয়ে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত জোকটা হচ্ছে - We pretend to work and they pretend to pay us. এর মধ্যে সত্য লুক্কায়িত। আর রাশিয়া অনেক জান কোরবান করছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সবাই জানি, কিন্তু হিটলারের সাথে তার ঠিক আগে গোপনে আঁতাত কে করছিলো? স্টালিন। মলোটভ রিবেনট্রপ চুক্তি। হিটলার গাদ্দারিটা না করলে লাউ আর কদু কিন্তু একই থাকতো।
যাক, ডিবেট করে অনেক মজা পাইলাম। যদিও অন্যদের কষ্ট দিসি! নো হার্ড ফিলিংস : -) অশেষ ধন্যবাদ।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
১৯৩৮ সালের চুক্তি না করলে সামরিক প্রস্তুতি কে নিতো? চেম্বারলেনরা যখন স্ট্যালিন ঠেকাইতে একের পর এক দেশ হিটলুর হাতে তুলে দিচ্ছিলেন, তখন পশ্চিমের চোখে ধুলো দিতে মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তি। কারণ বলশেভিকরা ফ্যাসিস্টদের থট মেকানিজম জানতেন। সৃষ্টির কারণও জানতেন। হিটলারের নিটশে প্রীতি আর তার আগের শ চারেক বছরের প্রুশিয়া-রাশিয়া দ্বন্দ্ব হিটলারকে ভাবতে শিখিয়েছে রাশিয়া পৃথিবীর কেন্দ্র। রাশিয়া একবার দখলে এলে বাকি পৃথিবীর দখল ওয়ান-টুর খেলা। বলশেভিকদের দর্শন জ্ঞান অন্তত ১৯৩০-৪০ এর দশকে শক্তিশালী ছিল বৈকি! তাই হিটলারের খতমেও ১৫ আনা কৃতিত্ব লাল বাহিনির হাতে। ১৯৩৮ এর চুক্তির কারণে নাৎসীরা স্ট্যালিনগ্রাড পর্যন্ত এগিয়ে শীতের ফাঁদ পড়ে। এই ফাঁদ না পাতলে হয়তো আজকের ইতিহাস অন্যরকম হতো।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ক্রিটিকের আগে একটা রুথলেস যোগ হবে। এই নির্মমতা থেকে কিছুই মুক্তি পায় না। বিভিন্ন সময়ের ভগবানদের লাশের উপর পাড়া দিয়েই ইতিহাস এগোয়। ভগবান নেই। সুতরাং নরকের বিপরীতে স্বর্গও নেই। যা আছে তা নেহাতই বস্তুজগত। এখানে চুষে খাওয়া রক্ত-সঞ্চয়ন ছাড়া হালখাতা খোলে না। তাই শ্রেণী সংগ্রাম চলবে কি না চলবে সেটা মহাজন আর তার ভেড়ুয়াদের আওতা বর্হিভুত। শোষন সহজাত প্রবৃত্তি কিনা সে প্রশ্নের জবাব দিবো না। কারণ উৎপাদিত সম্পত্তির মালিক শুধু হোমোসেপিয়ানরাই।
পুঁজি কেন্দ্রীভুত হয়। বাজার সম্প্রসারিত হয়। সম্পদ যার ঘাড় ভেঙে গড়ে ওঠে, পুঁজি মালিকের প্রতি তার অপ্রেম অনিবার্য। সুতরাং ক্ষতিগ্রস্থ সে বা তাহারা পুঁজির সাথে লড়বেই। ১৯১৭-৯০ এর সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণচীন, কিউবা, ভিয়েতনাম এইসব লড়াইয়ের ফলাফল। মানুষের ইতিহাসে শোষকের বিরুদ্ধে বস্তুগত অবস্থান গ্রহণের এখন পর্যন্ত তীব্রতম উদাহরণ সমাজতন্ত্র। সেখানে গ্লোবাল মনোপলির বিপরীতে রাষ্ট্রীয় মনোপলি তৈরী হয়েছে। রাষ্ট্র একচেটিয়া শোষকে পরিনত হয়ে গণরোষের মুখে পড়েছে। কিন্তু সেই রাষ্ট্রীয় মনোপলি, বৈশ্বিক মনোপলির কলিজায় হাত দিয়েছে। বৈশ্বিক মনোপলিকে ১৯১৭র বিপ্লবের ধারাবাহিকতা যতটা বিচলিত করেছে মানব সভ্যতার ইতিহাসে তার সমকক্ষ উদাহরন নেই। শুধুমাত্র সমাজতন্ত্রের জুজুই এযাবৎকাল তার প্রকৃত প্রাণসঙ্কট সৃষ্ট করেছে। বহু ব্যর্থতার পাশে ইতিহাসে সমাজতন্ত্রের গুরুত্ব সেখানেই। আজকে ফুলবাড়ি-নন্দীগ্রামের কৃষক বা নারায়নগঞ্জের শ্রমিক নৌকা-ধানের শীষের লড়াই করে না। তারা শোষকের বিরুদ্ধেই লড়াই করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণচীন, কিউবা,ভিয়েতনামের ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষন সেখানে সংগ্রামের উপাত্ত হিসেবে খুব জরুরি। ৭৫ বছর খুব না হলেও মোটামুটি দীর্ঘ সময়। সুতরাং কি উপায়ে সেই কাঠামো তৈরী হলো আর কেনইবা ভেঙে পড়লো সেই ইতিহাসের বীক্ষণ, ব্রিটনি স্পিয়ার্সের জাঙ্গিয়া ছাড়া বাজারে যাবার সংবাদ প্রতিবেদন ভক্ষনের চাইতে জরুরি বৈকি !
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বস্তুতই এই ডিবেটে আর কথা বাড়ানোর প্ল্যান ছিল না। সকাল বেলায় কাজে বসে ফারুকের নতুন মন্তব্য পুরাটা পড়ে শেষ করতে পারি নাই, অর্ধেক পড়েই জবাব দিয়ে দিছিলাম। কিন্তু বাকিটা এখন পড়ে বুঝলাম, যেই ধরনের ঢালাও ইতিহাস বিকৃতি তিনি করতেছেন, তার জবাব কিছুটা হইলেও দেওয়া দরকার। দশটা ছোট বিকৃতি মিলায় একটা বড় বিকৃতি তিনি বানাইছেন। ফারুক নিশ্চয়ই বলবেন, আমি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে খুঁত ধরতেছি, বড় জিনিস মানে শ্রেণীর ফাইট ইত্যাদি দেখতেছি না। সেইটাতে পরে আসতেছি। তার আগে ছোট জিনিসগুলাই এড্রেস করতে চাই। ছোট ছোট মিথ্যা থেকে বড় মিথ্যাগুলা জন্মায়।
১) আমি কমিউনিজমের অ্যাপলজিস্ট নই। - এই মন্তব্যের পরে যা কিছু লেখছেন, সেইটা পইড়া পাঠক নিজেই বিচার করতে পারবে অ্যাপলজিস্ট কি অ্যাপলজিস্ট না সেই প্রশ্নের। পাঠকের বুদ্ধিমত্তার উপর অতখানি বিশ্বাস আছে।
২) ভোটের জিনিসটা আপনে যত ভাবেই উড়ায় দেন না কেন, গণ-ইচ্ছা প্রকাশের জন্যে গণতন্ত্রের থেকে ভালো সিস্টেম কি, সেইটা জানান। সেইটা বাস্তবে কিভাবে কাজ করবে, সেইটাও জানান। আবারও বলি - এখন পযন্ত এইটাই least bad সিস্টেম। এর থেকে ভালো পন্থা দরকার, কিন্তু কমিউনিজমের নামে একনায়কের বা এক দলের শাসন তার থেকে কোন দিক দিয়েই ভালো না। চেক এন্ড ব্যালেন্সের ন্যুনতম বালাইও সেখানে নাই।
আপনের কথা শুনে মনে হবে যে কমিউনিস্ট নেতা-কর্মীরা অতিমানব, তাই power corrupts - এই কথাটা তাদের বেলায় প্রযোজ্য না। ক্ষমতায় গেলেও তারা নিশ্চয়ই সততা আর নিষ্ঠার পরাকাষ্ঠা থাকেন। তাই জবাবদিহিতার কি দরকার? Nothing to answer!
তাই আবারও বলি - কমিউনিস্টরাও মানুষ। তাদেরও ভুল-ত্রুটি হয়। তারাও করাপ্ট হয়। তারাও নীতিহীন হয়। ক্ষমতার লোভ তাদেরও পাইয়া বসে। ক্ষমতার অপব্যবহার তারাও করে। নিপীড়ন তারাও করতে জানে। এবং অতীতে করছে। এবং ভবিষ্যতেও করবে।
৩) পার্টি ভেতরের বুর্জোয়া আক্রমণ, বাইরের সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের মুখে...তারা একসময় সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে
এই রকম যুক্তির সাথে তর্ক করা বৃথা। খারাপ কাজ মানেই সেইটা বুর্জোয়ারা আক্রমণ করছে। কিম্বা বুর্জোয়া আক্রমণের পালটা জবাব দিতে গিয়া হইছে। আর যদি বুর্জোয়া আক্রমণ না হয়, তাইলে সেইটা সাম্রাজ্যবাদের হারামীপনার দোষ। তাই তো আপনের যুক্তি?
সরি এই যুক্তিটা খাইতে পারলাম না। আপনের অলিখিত এসাম্প্শান হইলো এই যে কমিউনিস্টরা আসলেই মহামানব। ইন্করাপ্টিব্ল। ষড় রিপু বা মানবিক দুর্বলতার উর্ধ্বে। যা ভুলচুক হইছে, সেইটার বিসমিল্লায় গলদ খুঁজতে গেলে বুর্জোয়া বা সাম্রাজ্যবাদ দেখতে হবে। কারন কমিউনিস্টরা নিজে থেকে স্বেচ্ছায় স্বতস্ফূর্ত ভাবে কোন নিরীহ মানুষের অত্যাচার করে নাই, বা করতে পারে না। প্রকৃত কমিউনিস্টের ডেফিনিশান অনুযায়ী সেইটা সম্ভব না।
রাইখা দেন সেই ফর্মুলা নিজের কাছে। খাইলাম না। আর কেউও খাইবো না।
৪) ভোটের স্বাধীনতা নিয়া তার পরে অনেক কিছু বলছেন। যেইটা বললাম, ভোটের স্বাধীনতা একটা ইলিউশান হইতে পারে, কিন্তু কমিউনিস্টরা সেই ইলিউশানেও যায় নাই। কারন পুরাপুরি একনায়কত্ব - এক কথায় স্বৈরাচার - ছাড়া আর কিছু তারা মানতে রাজী না। মৌলবাদ এই জন্যেই বলছিলাম। যেই সিস্টেম বিশ্বাস করে সে নিজেই ফাইনাল সলিউশান, তার থেকে স্বৈরাচার ছাড়া আর কিছুই পাবেন না, কারন অন্য কোন ব্যবস্থার ন্যুনতম মূল্য তার কাছে নাই।
৫) সোভিয়েতে কমিউনিস্ট হোন বা না হোন সবরকম মানুষই নির্বাচিত হতে পারতেন। অনেকটা পঞ্চায়েতের মতো।
গত তিন চারদিনের বিতর্কে এর থেকে হাস্যকর যুক্তি আর পাই নাই। আর কেউ পাইছে কি না তাতেও সন্দেহ আছে। তবে আপনে যেই ভাবে আগাইছেন, এই সব ইতিহাসের বিকৃতি না কইরা আপনের আর কোথাও যাওয়ার পথ ছিল না। এরপর দেখি কি বলছেন। It gets better.
৬) সবগুলো পার্টিই বাইরের এজেন্ট হয়ে কাজ করছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা বিপ্লবকে চুরি করে। প্রতিবিপ্লব গোড়া থেকেই কাজ শুরু করেছিল এবং তারা বিজয়ী হয়েছে।
যত দোষ নন্দ ঘোষ, ভলিউম ৬৫ থেকে উদ্ধৃত। পিটা ঐ হারামজাদা মধ্যবিত্তরে। কারন প্রকৃত প্রলেতারিয়েত তো খারাপের উর্ধ্বে, না কি? কোন খুঁত বা দোষ বা পাপ তাকে ইনফেক্ট করতে পারে না, সেইটা যদি বাইরের লোক না আইনা থাকে। সত্যি কইরা বলেন তো, স্বতস্ফূর্ত ভাবে কোন অপরাধ বা পাপ কাজ কি কোন দিনই করে নাই আপনের টীম? এইটা কি আদৌ সম্ভব? বিপ্লবীদের নিজেদের ভিতরেই কি নিজেদের ধ্বংসের বীজ ছিল?
এইখানেই আপনাদের সাথে ফিলসফিক্যাল পার্থক্য। আপনেরা বিপ্লবী নাম দিয়া কিছু ফিকশনাল অতিমানব তৈরী করছেন। তারা যা যা ভূল করছে, সেইটা হয় প্রতিবিপ্লবী নাইলে বুর্জোয়া নাইলে মধ্যবিত্ত খানকির পোলাদের দোষ। না হইলে সত্যিকারের বিপ্লবীর পদস্খলন হওয়ার কক্ষনো কথা না।
এইটা অতিশয় ফালতু এবং দুর্বল পজিশান। নিজের কোন রকম দোষ স্বীকারে কমিউনিস্টদের অপারগতা, তাদের এই ইচ্ছাকৃত অন্ধত্ব এখনো বিস্মিত করে। তাদের পতনের কারনসমূহের এইটাও একটা। নিজের ভুল না স্বীকার করলে আত্মশুদ্ধি হবে কেমনে? নন্দ ঘোষরে ধর!
৭) গৃহযুদ্ধ, ন্যাটোর সামরিক চাপ, অবরোধ, আগ্রাসন
নিজের পাপ কাজের হিসাব দিতে গিয়া আরো নিত্য নতুন অজুহাত।
৮) উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, তার সবই কি আমেরিকার জন্যও প্রযোজ্য নয়?
এ রকম বিস্ময়কর মন্তব্যে আমি লাজওয়াব। আপনের আগের কমেন্টরে ওভার-ট্রাম্প করছেন। উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে ন্যুনতম ধারনা থাকলে এইটা বলতে পারতেন না।
৯) চীন দারিদ্র্য দূরীকরণে যে উল্লম্ফন দিয়েছে তার কোনো নজির ইতিহাসে নাই।
আগের পোস্টেও বলছিলাম এই বিষয়ে, হয়তো দেখেন নাই। কিন্তু চীনের দারিদ্র্য দূরীকরনে কমিউনিস্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কোন লেশমাত্র নাই। উইকিপিডিয়ায় কিছু লেখা থাকলেই সেইটা মিথ্যা হয় না, এইটা হয়তো বিশ্বাস করবেন। এই জন্যেই দেং চীনে বাজার ব্যবস্থার কি কি সম্প্রসারণ করছে, সেইটা দেখতে বলছিলাম। আপনে এখনো ঐ ইলিউশান নিয়া বইসা আছেন যে এইটা আসলে কমিউনিস্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
চীনে কমিউনিস্ট শাসনের যে সত্যিকারের নিদর্শন সেইটা হইলো একদলীয় শাসন। মাও চীনে দুর্ভিক্ষ দিছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেয় নাই। সেই কৃতিত্ব দেং-এর।
১০) ক্যাস্ত্রোকে যদি জনগণ রাখতে চায়, তাতে কার কী?
খুব সহজ প্রশ্ন করি। ৫৯-এর পরে কিউবার মানুষরে কি কেউ জিগাইছে, তারা কি চায়? কোন সার্ভে, নির্বাচন, জরিপ, কিছু আছে কোথাও? নাকি কেউ সুযোগ দিছে তাদের বক্তব্য জানার? কিউবার জনগণের হইয়া কথা না বলার রিকোয়েস্ট করলাম।
১১) যেসব দেশে কমিউনিস্টরা জিতেছে সেসব দেশ মধ্যযুগীয় অবস্থা থেকে মাত্র ১/২ যুগের মধ্যে আধুনিক ও সমৃদ্ধ অবস্থায় আসতে পেরেছে। পুঁজিবাদী পথে আজকের আজারবাইজান, ইউক্রেন আফগানিস্তানের অবস্থার বেশি যেতে পারতো না।
এইটা সন্ন্যাসীও বলছে, আবারও বলার অপেক্ষা রাখে। এই যে 'আধুনিক' বানাইছে, সেইটা বানানো হইছে লক্ষ লক্ষ মরা মানুষের হাড় গোড়ের উপর দিয়া। রক্তের নদী বানাইয়া। কমিউনিস্ট জল্লাদরা আইসা এই সব দেশের কুলাক বলেন আর নিরীহ কৃষক বলেন, অকথ্য অত্যাচার করছে। মরা মানুষের পাহাড় তৈরী করছে। দুর্ভিক্ষে জেলার পর জেলা সাফ হইয়া গেছে এই আধুনিকতা আনতে গিয়া।
কিন্তু মানুষের জীবনের মূল্য প্রকৃত কমিউনিস্টদের কাছে বরাবরি কম ছিল। তাদের ডেফিনিশান অনুযায়ী যে 'প্রগতি'র পথে বাধা, সে মানুষ থাকবে না, সে হবে শ্রেণী শত্রু। সিস্টেমের বলি। বর্বরতার ইতিহাস কিন্তু লেখা হয়ে গেছে, পড়তে জানেন বা না জানেন। যতই আপনে আধুনিকতার ফিরিস্তি দেন না কেন, সেই লেখা মোছা সম্ভব না।
আমার স্থির বিশ্বাস আপনে পূর্ব ইউরোপ বা এক্স-কমিউনিস্ট দেশে কখনো যান নাই। আমার পার্সোনাল রিকোয়েস্ট থাকবে আপনে কষ্ট করে একবার হলেও ইউক্রেন যাবেন, কিম্বা বাল্টিকে, কিম্বা পোল্যান্ড বা এরকম অন্য কোন দেশে। নিজে কোন দিন যেহেতু কমিউনিস্ট সিস্টেমে থাকেন নাই, তাই নিজের কোন অভিজ্ঞতা নাই। যা বলেন, তা প্রপাগান্ডা বই পড়ে পড়ে জানছেন। সাধারণ মানুষের সাথে কথা বইলেন। তারা কি দেখছে, তারা কিসের ভেতর দিয়া গেছে।
আমার সহকর্মী টমাস ওয়ারস'র পোলা। বৃটেনে ৬ লক্ষ পোলীয় অভিবাসীর সেও একজন। VBA প্রোগ্রামিং-এ দুর্দান্ত। বাচ্চা পোলা - বয়স ২৫ হয় নাই এখনো। কিন্তু তারও মনে আছে, ছোটকালে রুটির দোকানের সামনে লম্বা লাইন। সন্ন্যাসী ভাই অনেক দিন যাবত ইউক্রেনে। ওনার মত লোকের বক্তব্যের অনেক বেশী গুরুত্ব আপনার প্রপাগান্ডা-প্রসূত মতামতের থেকে।
১২) কমিউনিজমে কোনো দেশ পিছিয়ে গেছে একটাও দেখাতে পারবেন না।
এতটুকু পড়ার পরে থামছি। আর সম্ভব ছিল না। বুঝা যায় যে আপনের প্রথম মন্তব্য আমি কমিউনিজমের অ্যাপলজিস্ট নই - সেটা সম্পূর্ণই মিথ্যা ছিল। তবে ১২ নাম্বার মিথ্যাটা ১ নাম্বার মিথ্যার থেকে অনেক বেশী বিপজ্জনক। বস্তুতপক্ষেই এরকম একটা বিতর্ক সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু না। কারন যা বলছেন এই বেলায়, সেইটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা বাদে অন্য কিছু না। মনে কিছু নিয়েন না। 'এগিয়ে যাওয়ার' কি সংজ্ঞা আপনের, তা আমার জানা নাই। আপনে নিজেই ভাল জানবেন। তবে শেষ কথাটা কমিউনিস্ট শাসনাধীন মানুষের হাতেই ছেড়ে দিব। ১৭ বছর আগে তারা নিজেদের মুক্তি দিছে কমিউনিস্টদের দুঃশাসন আর অত্যাচারের দুঃস্বপ্ন থেকে।
আপনেরে ১১-তে যে অনুরোধটা করছি, খালি সেইটাই আরেকবার পুনরাবৃত্তি করবো। একটা এক্স-কমিউনিস্ট দেশে যাইয়েন। রাশিয়া বাদে যে কোন। সেখানের কোন বুড়া মানুষ, সাধারণ মানুষের সাথে একটু আলাপ কইরেন। অনেক কিছু জানবেন, বুঝবেন, শিখবেন। প্রপাগান্ডার প্রশমন সেইটা ছাড়া আর কোন ভাবে সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
আপনের এই ছোট ছোট ভ্রান্তি আর মিথ্যা থেকেই big lie গুলার জন্ম হয়। কমিউনিজম মানবের কল্যান করছে - সেই big lie। তাই ১১-১২-র পয়েন্ট না বুঝলে, ভবিষ্যতের বিতর্ক বাস্তবিকই অর্থহীন।
শুভ রাত্রি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আপনাকে এক জেন সন্ন্যাসীর গল্প শোনাই। ভদ্রলোক আর তার শিষ্য একসঙ্গে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন আর আলোচনা করিছিলেন। পথের মাঝখানে একটা জলা পড়লে দুজনেই একটু থামলেন। সেখানে একটি মেয়েও এসে ইতস্তত করছিল। ওটা পার হতে হলে জামা অনেক তুলতে হবে যে! সন্ন্যাসী দ্বিধা না করে মেয়েটিকে কোলে করে জলাটা পার করে দিলেন। তারপর আবার দুজনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন। কিন্তু শিষ্যের মাথায় তখন ঘুরছে, গুরু নারীস্পর্শ করলেন! শেষে মুখ ফুটে বলেই ফেললো, 'গুরু এ কী করলেন! আমাদের তো নারীস্পর্শ নিষেধ।'
গুরু মুচকি হেসে বললেন, আমি তো মেয়েটাকে সেই সেখানেই নামিয়ে দিয়ে এসেছি, তুমি কি এখনও তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছ?
কমিউনিস্টদের অপরাধ বা ত্রুটি নিয়ে আপনি নতুন কোনো গুমর ফাঁস করেন নাই। যেগুলো স্বীকার্য তা স্বীকারও করেছি। সেগুলোর কার্যকারণ এবং ব্যক্তিবর্গের দায়ও খুঁজেছি। কিন্তু আপনি তালগাছটা কেবল চানই না, সেখানে উঠে বসে আছেন। ফলে ওসব নিয়ে কথা বাড়াবো না। সংক্ষেপে দুটো একটা মন্তব্য করে আখেরি বিদায় নেব।
চীন-রাশিয়া-কিউবা-ভিয়েতনাম ও ইন্দোচীন-পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো ইত্যাদি আলোচিত দেশগুলো বিপ্লবের আগে কোথায় ছিল আর পরে কোথায় গেছে সেটা আপনি পুঁজিবাদের কৃতিত্বই মনে করেন। তো ভাল পুঁজিবাদ ভাল। তাহলে তাদের আর কমিউনিস্ট বলে দোষ দেন কেন? দ্বিতীয়ত চীন বা রাশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ৩০ থেকে ৬০ দশকের মধ্যেই ঘটেছে। সেগুলো ছাড়া আজকের বিনির্মাণ তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। এবং আপনার কথাতেই প্রমাণ কমিউনিজম উচ্ছেদ তাদের উদ্বাস্তু করেছে, তাদের লাখ লাখ মেয়েদের পতিতা বানাচ্ছে। আপনি নিজেকে এর আগে পুঁজিবাদের সমর্থক বলাতে হা রে হা রে করে উঠেছিলেন। আর এখন দেং জিয়াও পিং এর বাজার ব্যবস্থা সম্প্রসারণের দোহাই টানছেন। তা ভাই, বাজার চীনে ভাল করে আমাদের দেশে ভাল করে না কেন? শিল্পভিত্তহীন, দূর্বল শ্রমশক্তির দেশ কি বাজারের গুণেই সমৃদ্ধ হয়? এইসব জ্ঞান আপনার নাই। আপনি কেবল তথ্য নিয়েই আছেন। সেজন্যেই বলেছিলাম, আপনার তর্কের ভিত বিশ্বডায়েরি মার্কা পাঠ। আত্মসমালোচনা যা করেছি, আরো করলেও লাভ নাই। ওসব আপনি বুঝবেন না কারণ বুঝতে চাইবেন না। আমরা প্রপাগান্ডিস্ট যে। মানুষের প্রতি এত দরদ, একটু এসে দেখে যান না, আপনার বাংলাদেশে পুঁজিবাদ কী করছে, আর সম্পদ ও জীবন রক্ষায় লেংড়া-খোড়া আধা ভেজাল বাপপন্থিরা কেমন লড়ছে।
আর সাবেক কমিউনিস্ট দেশে যাব কীভাবে, আমরা তো এখনও পাড়া গাঁয়ে থাকি। এখানে থেকেও জানি চাঁদে না গেলেও চাঁদ আছে এবং সেখানে সুবিনয় মুস্তফী নাই।
আপনি যেমন আরবের ইসলামপন্থার পেছনে ব্যক্তিবর্গের যৌন অবদমনকে দেখছেন, তেমনি কমিউনিস্ট শাসনের মন্দের পেছনে নেতাদের রিপু আর মানুষের স্বার্থপরতা। আপনি বলেছেন, 'মানুষ মাত্রেই চরিত্রগতভাবে স্বার্থান্বেষী। নিজের হোক বা গোত্রের। সেইটা কেবল আদর্শিক বুলি দিয়া সরানো কখনোই সম্ভব হবে না'। এটাকেই বলে মৌলবাদ। কমিউনিজমের কোনো দোষ নাই সেটা বলার মতোই। এরকম আরো অনেক বদ্ধ ও অন্ধ বিশ্বাস আছে আপনার বেশিরভাগ চিন্তার গোড়ায়। একই কথা দেলোয়ার হোসেন সাইদীও বলে যে, হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান না ইত্যাদি। ধর্ম বলে মানুষ জন্মগতভাবেই পাপী, অতএব তার পরিত্রাণ ও ত্রাতা দরকাল। মানুষ অবস্থার শিকার আবার মানুষই অবস্থা পাল্টায়। মানবীয় স্বভাব এবং ইতিহাসের কোনো কিছুই অপরিবর্তনীয় নয়।
অস্লীলতার কথা ঠিকই বলেছেন। রক্ত বললে স্লীল হতো কিন্তু মূত্র বললে অস্লীল? আপনার এই পিউরিটান ও সনাতনী মূল্যবোধ নিয়ে আমার কিছু করার নাই। আমি কেবল দুৎখিত হতে পারি। আর ঠিকই বলেছেন, আপনি যেরকম তুখোড় তাতে এ তর্কে আমি জিতব না। আমার কিছূ প্রশ্ন ছিল সেগুলোকে আপনি ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন নাই। বলেন আপনার জন্য আর কী করতে পারি। পাশে পেলে আপনার ডান হাত তুলে ধরতাম আর তর্কালঙ্কার উপাধি দিতাম। পেলাম না, এই আক্ষেপ নিয়ে শেষ করছি। এই পুঁজিবাদ না, ভাল পুঁজিবাদ আপনার ভাল করুক।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নতুন মন্তব্য করুন