ঝড়ের পরের খবর
এ লেখা লিখছি অফিসে বসে, টিভি খোলা রেখে। গতকাল সংখ্যা বেড়েছে শয়ে শয়ে, আজ বাড়ছে হাজারে হাজারে। লিখছি আর ক্ষণে ক্ষণে মৃতের সংখ্যা পাল্টে ফেলতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৯১৫। বেসরকারি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, হতভাগাদের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আরো যাবে। প্রকৃত সংখ্যা কততে গিয়ে ঠেকবে? ১৯৭০-এর জলোচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড়ের ১০/১২ দিন পরেও হাজার হাজার লাশ ভেসে আসছিল সমুদ্র থেকে। স্রোতের টানে এবারও যারা ভেসে গেছে তাদের সংখ্যা কত হবে?
ঝড়ের ঠিক পরের খবর কেউ জানাতে পারে নাই। আগের রাত পর্যন্ত শুনেছি ঝড় আসছে, ঝড় আসছে। দেখেছি মানুষ পালাচ্ছে। ঝড়ের ধাক্কায় পাশের বাড়ীর জানালার কাঁচ চুরমার হলো। পাড়ার বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার বিকট শব্দে বিষ্ফোরিত হলো। বুঝলাম ঝড় এই ঢাকাতেও এসে পড়েছে। এখানেই যদি এই; তাহলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে কী অবস্থা? কী হাল হয়েছে দ্বীপ ও চরাঞ্চলের মানুষের? এইমাত্র খবরে বললো বাগেরহাটে একসঙ্গে ৪৭ টি লাশ পাওয়া গেছে। কেবল শুরু। আরো খবর আসতে থাকবে। দুবলার চরে কয়েক হাজার মানুষ থাকে। তাদের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম আরো অনেক চর ও দ্বীপ আছে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলে ও বঙ্গোপসাগরে। তারা কি বাঁচতে পেরেছে? কেউ কি তাদের খোঁজে সেখানে গেছে? আজ বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস এরকম অনেক প্রশু ও মৃত্যুর ভারে বিপন্ন।
যুদ্ধ হয় নাই, তবু যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো গত দুই রাত ঢাকা ছিল সম্পূর্ণ ব্লাকআউট। বিদ্যুত নাই, মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই, টেলিভিশন নিশ্চুপ। আকাশের মতোই থমথমে ছিল বাংলাদেশ। তখনই মনে হলো, সরকার কী জানে কী ঘটেছে দেশের বিরাট অঞ্চল জুড়ে? সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, সাইকোন সিডর মোকাবেলায় ‘যুদ্ধ প্রস্তুতি’ নেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেস্টা স্বয়ং দুর্যোগ মোকাবেলার দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়েছেন। তারপরও হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। আজকের প্রথম আলো লিখেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ১৭ লাখ মানুষ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নাই সরকারের কাছে। উপকূলীয় এলাকা এবং সাইকোনের গতিপথের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রায় পঞ্চাশভাগ গাছপালা এবং প্রায় শতভাগ কাঁচা বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। বেশিরভাগ মানুষ মারা গেছে এসবের নীচে চাপা পড়ে। সেই মৃত্যু বীভতস, অসহনীয়। ওইসব অঞ্চলের ফসলাদি পাওয়ার আশা করা বাতুলতা। যুদ্ধ নাই কিন্ত ক্ষতি হয়েছে যুদ্ধের মতোই। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো এক ঝড়েই যদি দেশ এ পরিমাণ বিপর্যস্ত ও অচল হয়ে পড়ে, তাহলে আরো বড় ঝড় বা বিপর্যয়ে আমরা কী করবো? এ কী উন্নয়ন, কার উন্নয়ন? এত নাজুক অবকাঠামোর দেশে মানুষের জীবনের গ্যারান্টি কি?
বাতাসে কবর খোঁড়ার গন্ধ
ঝড়ের দিন রাত ন’টার দিকের খবর। ঢাকার বারগুলোতে সব মদ বিক্রি হয়ে গেছে। হিমশীতল ঝড়ের দিনে পান জমে তাই। ঝড়ের পরের দিন শুত্রক্রবারের সল্পব্দ্যার খবর, হারিকেন পাওয়া যাচ্ছে না। ৫ টাকার মোমবাতির দাম দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকায়। তাও যদি বা মেলে। জেনারেটর চালানো টিভিতে দেখলাম জেনারেটর চালানো টিমটিমে বাতিতে সভা করছেন উপদেষ্টা পরিষদ। ওদিকে গ্রামের পর গ্রাম বিরান। হেলিকপ্টার থেকে দেখা চোখে জীবিত মানুষের দেখা নাই। শক্ত সবল পরিশ্রমী ও সাহসী নারীপুরুষদের হাহাকার ও কান্নার মাতম সমগ্র দণক্ষণাঞ্চলে। এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি অনেক জায়গায়। অনেক জায়গায় মানুষ দাঁতে দাঁত চেপে কবর খুঁড়ছে। আপনজনদের শুইয়ে দেবে চিরতরের শয়ানে। এ অঞ্চলেই তো ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে মারা গিয়েছিল ৫ লাখ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া গত শতাব্দীতে একসঙ্গে এরকম ভয়াবহ মৃত্যু আর ঘটেনি এদেশে এবং পৃথিবীর ইতিহাসেও। এবারেও তেমন ক্ষতি হতে পারতো, যদি প্রকৃতির দান সুন্দরবন ঝড়ের গতি অনেকটা ঠেকিয়ে না দিত।
মৃত্যুই আসে আর কেউ আসে না
গতকাল বাংলাদেশে খুব অল্প লোকই খবর দেখতে পেরেছে। সব কিছু অচল হওয়ায় য়তির ভয়াবহতাও মানুষ জানতে পারে নাই। এর সুবিধা সরকার পেয়েছে। সমালোচনা শুনতে হয় নাই তাদের। এর মধ্যে অনেক সত্য ঝড়ের সঙ্গে উড়ে গেছে, পানির সঙ্গে ভেসে গেছে। দেশে এমননিতেই জরুরি অবস্থা চলছে, দুর্যোগের জন্য নতুন করে জরুরি অবস্থা জারি করার কিছু নাই। জরুরি অবস্থাতেও যদি এই হয় তাহলে আর কীভাবে হবে? এ এমন এক পোড়ার দেশ যেখানে কেবল মৃত্যুই আগাম আসে, সাহায্য আসে না।
এটা ঠিক যে, লাখ লাখ লোককে আগাম সরিয়ে নেয়া কঠিন। কিন্তু উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এবং দ্বীপ ও চরাঞ্চলে সাইকোন সেন্টার এত কম কেন? ঝড়ের আগেই সেসব এলাকায় জরুরি ত্রাণ নিরাপদে মজুদ করা যেত না? ঐসব এলাকায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও পাকা পায়খানার জন্য শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়, কিন্ত কাঁচা ঘর ও টিনের চালের নাজুক ঘর-বাড়ি যে ঝড় বা জলোচ্ছাসে মৃত্যুফাঁদ সেই হুঁশ কারোরই আসলো না। পাকা পায়খানার থেকে তাদের দরকার ছিল পাকা ঘর পাকা ছাদ। অথচ সম্ভব ছিল সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া। দুৎবছর আগে এরকমই শক্তিশালী এক ঘুর্ণিঝড় কিউবার ওপর আছড়ে পড়েছিল। সরকার তখন প্রায় ১৩ লাখ লোককে (জনসংখ্যার ১০ ভাগ) দ্রুততার সঙ্গে সরিয়ে নেয়। একটি জীবনও তারা নস্ট হতে দেয়নি। এখানে অতটা আশা না করলেও মানুষের জীবনের প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতা আশা করতে পারবো না?
নীরোর বাঁশি আজো বাজে
আমাদের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কি জানতো না যে, এমন হবে? জানতো। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন যে, চলমান জলবায়ু বিপর্যয়ে সব থেকে তীব্র ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। ঘন ঘন বন্যা হবে, দেখা দেবে নতুন নতুন ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও সাইক্লোন। সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়বে। ইতিমধ্যে তার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছে। যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জলাবব্দতায় শিকার হয়ে আছেন গত কয়েক বছর। প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসত-ভিটা এবং জমি-জমা বছরের বেশীর ভাগ সময় পানির তলায় থাকে। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি বাড়লে বাংলাদেশ সংলগ্ন সমদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। এতে দেশের উপকূলের ১৫ ভাগ ভূমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে এবং ২ কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিনত হবে। অনেকের আশংকা প্লাবিত এলাকার পরিমান আরো বেশী হতে পারে। এমনিতেই দেশের দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলের এগারটি জেলার দেড় কোটি মানুষ লবনাক্ত পানির সঙ্গে বসবাস করছেন। ভুগছেন সুপেয় পানির সংকটে। আরো এলাকায় লবনাক্ত পানি প্রবেশ করলে সংকটের ভয়াবহতা সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বাড়লে আমাদের গর্ব সুন্দরবন চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরি, কেওড়াসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ ও প্রাণীকুলও বিলুপ্ত হচ্ছে। সামনের দিনে ঘন ঘন বন্যা হবে এবং এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও বাড়বে। ২০০৭ সালের বন্যাটি ছিলো ভয়াবহ। এই বন্যার কারনে প্রায় ৫ লাখ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়। এধরনের বন্যার পরিমান ভবিষ্যতে আরো বাড়ে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে কুতুবিদয়ার ২৫০ ও সন্দীপের ১৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভোলা, সন্দীপ, নোয়াখালী ও বরিশালও একইরকম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গত চারদশকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ভোলার প্রায় ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। এ ধারায় ৪০ বছরের মধ্যে ভোলা নামে বাংলাদেশে কোনো ভূখণ্ড থাকবে না বলে ওয়াকিবহাল বিশেষজ্ঞদের ধারনা। সমূদ্র এখন যেখানে, তার চেয়ে ৪০/৫০ মাইল ভেতরে চলে আসবে।
অন্যদিকে যে এলাকা ডুবে যাবে সেখানকার মানুষের বসবাস অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। গাছপালা থাকবে না। লবনাক্ত পানিতে ধানের উতপাদন কমবে। শস্যভাণ্ডার বরিশাল আর শস্যভান্ডার থাকবে না। এখন যে সাইক্লোন ১৫০ মাইল বেগে আসে, সেটা তখন ১৭০ মাইল কিংবা ২০০ মাইল বেগে আসবে। জলবায়ূ পরিবর্তনের একটা প্রবণতা হচ্ছে যেখানে পানি বেশি সেখানে তা আরও বাড়বে। যেখানে খরা আছে সেখানে তা আরও বাড়বে। যেখানে বন্যা বেশি সেখানে আরো ভয়াবহ বন্যা হবে।
পূর্বঘোষিত মৃত্যুর দিনপঞ্জিকা।
বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক ঝড় ও উষ্ণতাবৃদ্ধিরর জন্য দায়ি পরিবেশবৈরী মার্কিন ইন্ডাস্ট্রি ও পরিবহন খাত। এ কাজে তারা একাই একশ। 'উন্নত দুনিয়ার উন্নত নাগরিকদের’ একেকজনের ৩/৪ টা করে গাড়ি, ফ্রিজসমৃদ্ধ বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য যে উত্তাপ সৃষ্টি হচ্ছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে দুনিয়ার গরিবতম দেশগুলোর ততোধিক গরিব মানুষদের। তাদের পরিবেশ বিধ্বংসী কারখানাগুলো যে পরিমাণ বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড ও সিএফসি গ্যাস বাতাসে ছাড়ে, তার সঙ্গে পাল্লা দেয়ার সাধ্য আমাদের নাই। কিন্তু এর জন্য তারা মোটেই অনুতপ্ত নয়। বিশ্বের উষ্ণতা হ্রাসে কিয়োটো চুক্তিতে স্বাক্ষর না করার সদম্ভ ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বুশ। ‘সভ্যতার সংঘর্ষ’ তত্ত্বের প্রচারক সাবেক মার্কিন আমলা হান্টিংটন সাহেব এর আগে বলেছিলেন, পরিবেশ বিধ্বংসী কারখানাগুলো তৃতীয় বিশ্বে পাঠিয়ে দেয়া হোক। তার যুক্তিটি অতি সরল। উল্পুত দুনিয়ায় নাগরিকদের পেছনে রাষ্ট্র যে অর্থ খরচ করে, তার তুলনায় তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোয় নাগরিক-পিছু ব্যয় অনেক কম। সুতরাং গরিব কালো মানুষের মৃত্যু শাদা চামড়ার মানুষদের থেকে অর্থনৈতিকভাবে কম ক্ষতিকারক! যতই নৃশংস শোনাক এ যুক্তিই তিনি দিয়েছিলেন। এবং আরো লোমহর্ষক যে, তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিকভাবে চুক্তি হয়েছে যে, পরিবেশ ধ্বংসকারী গ্রীণ হাউস গ্যাস উতপাদনকারী ধনী দেশগুলো তাদের কৃতকর্মের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বদলে, তা নিয়ে গরিব দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করবে। যেমন বিশ্বের সার্বিক পরিবেশ ধ্বংস ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের দায় অতি সামান্য। সুতরাং এ বিষয়ে বাংলাদেশের মত দেশগুলো প্লাসে আছে আর ধনী দেশগুলো আছে মাইনাসে। তারা বাংলাদেশের এই প্লাস সূচক অবস্থানটি কিনে নেবে। অর্থাত বাংলাদেশ তাদের সমান সমান ক্ষতি করলে যা হতো সেই পরিমাণ ক্ষতি বাংলাদেশের বদলে তারা নিজেরাই করে দেবে। এই কোটার বিনিময়ে তারা বাংলাদেশকে টাকা দেবে। কিন্তু তারপরও তারা তাদের পরিবেশ বিধ্বংসী প্রযুক্তি ও জীবন ধারা পাল্টাবে না। কিন্তু তাদের অপরাধের দায় কেন আমাদের গরিব-দুঃখী মানুষরা জীবন বিসর্জন ও অমানবিক দুর্দশা দিয়ে শোধ করবে? কেন? এ ঘূর্ণিঝড়ে যে মারা পড়েনি, সে পরেরটায় সাবাড় হবে। যে ঘূর্ণিঝড়ে বা পানিতে ডুবে মরবে না, সে মরবে রোগে ও ক্ষুধায় কিংবা স্বল্প সম্পদের কামড়াকামড়িতে। মহাভারতের যুদ্ধে মানুষ হত্যায় কাতর হয়ে অর্জুন যু্দ্ধে অস্বীকৃতি জানালে ভগবান শ্রীকৃষষ্ণ বলেছিলেন, তুমি ওদের কী মারবে। আমি নিয়তি আমি তো ওদের আগেই মেরে রেখেছি। উল্পুত বিশ্বের আগ্রাসী পুঁজিবাদ ও ভোগী জীবন আমাদের এভাবেই মেরে রেখেছে। আমাদের বেশিরভাগ মানুষ তাই জ্যান্ত মরা। আর আমরা লিখে যাচ্ছি সেসব অজস্র মৃত্যুর আগাম দিনপঞ্জি।
না, এতে বঙ্গমাতার শোক হবে না। মাছের দেশে বঙ্গমাতা মাছের মায়ের মতোই। তার পুত্রশোক নাই। মাছ একবারে বিয়ায় হাজারে হাজার ডিম। তার কোনটা মরল কোনটা বাঁচল, তাতে মাছের মায়ের কিছু যায়-আসে না। কোটি কোটি গরিবের মধ্যে কয়টা বাঁচল আর কয়টা মরল তাতে কার কী! এরা সভ্যতার তলানিতে জমা গাদ, অনেক জমলে মাঝে মধ্যে পরিষ্কার করতে হয়। আবার এরাই সভ্যতা নামক পিরামিড বানাতে বিশাল পাথর টেনে তোলে। দেশের হয়ে এরাই সম্পদের জন্ম দেয়, কিন্তু নিজেরা পায় না তার আস্বাদ। এরাই সেই পিপীলিকা বাহিনী, বিপ্লব-বিদ্রোহ-মুক্তিযুদ্ধ আর মারী-দুর্ভিক্ষ-জলোচ্ছ্বাস ছাড়া যাদের অস্তিত্ব খেয়াল করা হয় না। কেবল তখনই যোদ্ধা হিসাবে, শরণার্থীদের মিছিল হিসাবে অথবা নদী-ঘাট-প্রান্তরে, জলে ও মাটিতে পড়ে থাকা সহস্র সহস্র বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে এদের আমরা আবিষ্কার করি। তার আগে আমরা, সভ্যতার পিরামিডের একটু ওপরের যারা, যেন জানতামই না এরাও মানুষ এবং এরাও আছে নিযুত নিযুত সংখ্যায়। কোনোভাবেই এরা শেষ হয় না। দেশ বদলায়, রাষ্ট্র বদলায়, সরকার বদলায়, যুগ বদলায়, রাজা যায় রাজা আসে, নায়ক ওঠে আর পড়ে; তবু এরা থেকে যায়। এরা ঘাতসহ, প্রায় অমর। তারপরও রাষ্ট্রের পাষাণ মনে এসব মৃত্যু কোনো অমোচনীয় দাগ রেখে যায় না।
(এ লেখাটি রবিবারের সমকালের সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হবে,ক্ষোভের অংশীদার হওয়ার জন্য ধন্যবাদ)
মন্তব্য
কেউ কি জানাবেন, ছবিটি অপসারণ করি কীভাবে? সম্ভবত আকারে বড় হওয়ায় নিচ্ছে না।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
মেইলে পাঠিয়ে দিন ছবিটা, এডিট করে জুড়ে দিচ্ছি।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
অনেক ধন্যবাদ। অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। তবে 'সিডর'এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে বর্ষার আগে ও পরে 'ঘূর্ণিঝড় মৌসুম'- প্রকৃতির একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া; যুক্তরাষ্ট্রে যেমন 'জুন-নভেম্বর'। এ সময় এ রকম ঝড় হতেই পারে। তবে সাম্প্রতিককালে ঘূর্নিঝড়ের সংখ্যা ও শক্তিবৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কি না এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেই বিতর্ক রয়েছে। জলবায়ু একটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এর পরিবর্তন সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসাও তাই সময়সাপেক্ষ। তবে উন্নত বিশ্ব যে তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বিপুল পরিমাণ শক্তি অপচয় ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত করে, প্রকৃতিকে বিপন্ন করছে আর তার ঝড়-ঝাপটা যে বাংলাদেশের মত দেশগুলোকে পোহাতে হচ্ছে বা হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হল, বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"
হ্যাঁ এটা ঠিক যে,'সিডর'এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। এরকম ঝড় আগেও হতো। কিন্তু আমাদের স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসব ঝড়ের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত আমাদের এ বছরেরই দুটো বন্যার সঙ্গে একদিকে ফারাক্কা, অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ভুল প্রকল্পে নদীভরাট ও ভুল স্থানে বাঁধ দেয়ার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে। বৃষ্টি এবার বেশি হয়েছে। দুটো বন্যায় এমনেতেই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ ও অর্থনীতির ওপর সিডর এনেছে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
তবে ভবিষ্যতে এধরনের হারিকেন ও সাইক্লোন আরো হবে জলবায়ু পরিবর্তনেরই কারণে।
ধন্যবাদ,এ দিকটি তুলে ধরার জন্য।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
উন্নত বিশ্বের আগ্রাসী পুঁজিবাদ ও ভোগী জীবন আমাদের এভাবেই মেরে রেখেছে। আমাদের বেশিরভাগ মানুষ তাই জ্যান্ত মরা। আর আমরা লিখে যাচ্ছি সেসব অজস্র মৃত্যুর আগাম দিনপঞ্জি।
..হক কথা।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
ঢাকায় দরজা-জানালা বন্ধ করা ঘরে থেকেও ঝড়ের তীব্রতাটা আন্দাজ করতে পারছিলাম। উদ্বিগ্ন হয়ে কথা বলছিলাম, ঢাকাতেই এই অবস্থা আর উপকূলে কী না জানি হচ্ছে!
কাল প্রায় কিছুই জানা যায় নি, আজ যা জানা গেল তাতেও মনে হচ্ছে এই-ই শেষ নয়। কাল-পরশু এই জানাটাও আপডেটেড হবে, মৃতের মোট সংখ্যা বেড়ে যাবে। যদিও প্রকৃতটা আমরা জানবই না।
কয়েকদিন আগে থেকেই স্পষ্ট আভাস ছিল, কিন্তু প্রস্তুতি আমরা খুব বেশি নিতে পেরেছিলাম বলে তো মনে হচ্ছে না। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের সরকারগুলো করার চেয়ে বলে বেশি। এ সরকারও তার অন্যথা করে নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিন্তু তাই বলছে।
....................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
হ্যাঁ মুজিব ভাই। ঝড় ও তার কার্যকারণ তো বিশেষজ্ঞদের ব্যাপার। কিন্তু একটা জনগোষ্ঠীর অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও সুবিধাভোগী অংশ বিপদগ্রস্থদের বিষয়টা কীভাবে ফিল করছে, কীভাবে সামাজিক চৈতন্যে তা রেখাপাত করছে কিংবা ব্যক্তির একান্ত প্রদেশে তার কি বুঝ এটাও তো ভাববার বিষয়। ঐ রাতে আমরা নিশ্চিত জানতাম আজ রাতে কোথাও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এরকম অনুভূতি যুদ্ধের সময় হয়। এ বিষয়টা অনেকটা আনএক্সপ্লোরড। এর ভেতরে কেউ ঢুকলে অন্যরকম জিনিষ বেরিয়ে আসতে পারে।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
বিডিনিউজ-এ পড়লাম "সিডর" নাকি বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে বড় ছিল! কী ভয়ংকর!!
ধন্যবাদ ফারুক ওয়াসিফ। আপনার লেখায় উষ্ণতা আছে, ভাল লাগে সেটা।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
ধন্যবাদ ফারুক ওয়াসিফ। লেখাটায় প্রাণ আছে। প্রাণ নেই ওই লাশ গুলোয়।
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
মৃত্যুই আসে, আর কেউ আসে না...
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
সহস্র বছরের কাহিনী এই-ই। বঙ্গদেশ এক দারুণ ব্যাপার, দারণ ও নিদারুণ অভিজ্ঞতা।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
- বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সামুদ্রিক স্রোতের যে পরিবর্তন হচ্ছে, সাইক্লোনের উদ্ভব এবং তীব্রতা বৃদ্ধিতে তা বেশ ভালোভাবেই দায়ী।
আশংকার কথা হলো, এই স্রোতের পরিবর্তনের যে প্রেডিকশন ছিলো বাস্তবে সেটা হচ্ছে আরও দ্রুত এবং আনপ্রেডিক্টেবলী।
আপনার লেখাটা পড়ার সময় মনে নিদারুণ একটা আশংকা ডংকা বাজিয়ে যাচ্ছিলো, কোথায় যাচ্ছি আমরা!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন