তিনি দলছুটই ছিলেন_ হয়ে পড়েছিলেন। ক'দিন আগে আজিজ মার্কেটে তাকে দেখা গিয়েছিল। কীভাবে, সেটা শুনি বন্ধু ফিরোজ আহমেদের কাছ থেকে।
আজিজের সামনের চত্বরের অন্য পার থেকে তিনি আসছিলেন। একা, নিমগ্ন এবং স্বগত কথা বলতে বলতে। ফিরোজ টের পায়নি যে, ওর গায়ে ধাক্কা লেগেছিল। ও কথা বলছিল আরেকজনের সঙ্গে। কিন্তু সঞ্জীবদা কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এলেন। ফিরোজকে ধরে বার বার সরি বলছিলেন। কুণ্ঠাহীনভাবে দুৎখপ্রকাশ করছিলেন, যেন এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ফিরোজ বুঝতে পেরে লজ্জা পেল। ওর আন্তরিকতায় উনি আবার তেমনি আনমনে চলে গেলেন। এরপরও দু-একবার দেখেছি_ একা এবং নিমগ্ন।
তার ওই করজোড় দুৎখপ্রকাশের কথা শুনে আমি আঁতকে উঠেছিলাম। আমি জানি আঘাতে আঘাতে, অভিমানে, আত্মপীড়নের কোন জায়গায় গেলে মানুষের মন এমন শিশুর মতো কোমল হয়ে যায়। যার হয় সে তখন জগতের প্রতি বুদ্ধের মতো দীন ও নিরহংকারভাবে তাকায়। সকলকে ক্ষমা করে নিজের মনের ভেতর বুদ্ধের মতো করজোড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। আমি জানি।
এ কবিতাটি সম্ভবত ১৯৯৭ সালে লেখা। কবি ও বন্ধু শামীম কবীর সম্ভবত সে বছরেরই এক সন্ধ্যায় গলায় ফাঁস নেয়। আমার দেখা অসম্ভব এক তরুণ ছিল সে। ইওরোপে ওরাই কীটস, কাফকা কী জয়েস হয়। এখানে মারা যায় অবহলোয় কিংবা আত্মঘাতে। সঞ্জীবদা এই তালিকায় ওঠা নতুন নাম। শামীমের মৃত্যুর কিছু পরে ওর স্মৃতির প্রতি প্রণত ভাব থেকে এটি লেখা হয়। আজ আমার এ তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র অর্ঘ্যটি আবার এক কবি ও অগ্রজের প্রতি নিবেদন করছি। এ ছাড়া আমরা আর কীই বা করতে পারি!
ছায়া নেই,
শুধু কিছু ছাই পড়ে আছে।
সাঁকোর ওপারে পূরবী পথেও কোনো পদচিহ্ন জমে নেই।
আজ নয় গান, গান গেয়ে চলে গেছে বাউল চাতক;
কণ্ঠি ছিঁড়ে ফিরে গেছে সে বৈষ্ণব পাখি।
তবু সুরস্মৃতি ভাসে কুয়াশার নদীর ভেতর_
কুয়াশা তো আবেগেরই অন্তরিত রসায়ন। তবু দেখো,
লখিন্দরসম চিহ্ন ভাসে অবশেষে_
অবশেষে তারাদের চোখের কুশ বিঁধে মনে
কুহু রাতে চিনে আসি গৃহস্থলী মানুষের।
পুরনো বন্ধুর প্রেত যেমন মাঝে মাঝে বাঁকা হাতে_
মেপে নিতে আসে,
সখ্যতার ঈপ্সিত পারদ।
১৯৯৭
মন্তব্য
ফিরোজ ভাইরে আমার সালাম জানায়েন ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
শামীম কবীরের প্রয়াণ বোধ হয় ১৯৯৫ এ। নাকি?
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
অফিসে বসে স্মৃতি থেকে লিখছি। আর ওই বস্তটি আমার খুবই খারাপ। আচ্ছা, সুজন চৌধুরীর আঁকা সঞ্জীব দা'র স্কেচটি সমকালে ওনার নাম সমেত ব্যবহার করলে আপত্তি করবেন না তো? মেইল করে উত্তর পেতে পেতে পত্রিকা ছাপা হয়ে যাবে।
হাসিব, ফিরোজের সঙ্গে দুদিন আগেই কথা হলো তোমার বিষয়ে। ও তোমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
স্কেচের বিষয়ে শিল্পীর সাথে কথা বললে ভালো হয়। কানাডায় এখন শেষ রাত। পরে অনলাইনে এলে দৃষ্টি আকর্ষন করা যেতে পারে।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
@ ফারুক ওয়াসিফ
দেন কোন সমস্যা নাই,দাদা।
আমি একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছি।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
জ্বি, ধন্যবাদ, আজকের সমকালে ছাপা হয়েছে আপনার নাম সহ। নেটে ছবি মনে হয় দেখা যাবে না।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ছায়া নেই,
শুধু কিছু ছাই পড়ে আছে।
সাঁকোর ওপারে পূরবী পথেও কোনো পদচিহ্ন জমে নেই।
আজ নয় গান, গান গেয়ে চলে গেছে বাউল চাতক;
শামীম কবীর আত্মাহুতি দেন ২ অক্টোবর, ১৯৯৫ এ।
....................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
জীবনের কি মারাত্নক অপচয়!
সঞ্জিব দা, ও বন্ধু আমার...
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
খাঁচা ছেড়ে উড়ে যায় সব্বাই।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এভাবে কি চলে যাওয়া যায়...
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
শকটা সামলাতে সময় লাগছে ...
সঞ্জীব চৌধুরী সম্পর্কে জানলামই সেদিন, বছরও হয়নি , বায়োস্কোপ গানটা থেকে (বলাবাহুল্য ৯৫/৯৬ এর পর অনেকদিন সেভাবে ব্যান্ড সঙ্গীত শুনিনি) ,,,তারপর দেখি অসাধারণ এক লোক ,,,যাকে কিনা সবাই পছন্দ করে ,,,সেই লোক কেন চলে যাবেন এত তাড়াতাড়ি!!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আগের বছরের লেখায় , পরের বছর এসে মন্তব্য ! একটু বেশী দেরী-ই হলো মনে হয় । কিন্তু যাকে নিয়ে লেখা , আর যিনি লিখলেন ; দু'জন-ই খুব প্রিয় যে ! একজন কে জানবার সুযোগ হয়েছিলো কাছ থেকে , আরেকজনের লেখা পড়ে ।
বিষাদজাগানিয়া লেখার জন্য ধন্যবাদ ফারুখ ভাই । বাইরে এসে আপনার গদ্য পড়ার সুযোগ কমে গেছে । না-কি সাংবাদিকতার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেলো সব ! রাজনৈতিক ভাষ্য নয় , 'আপনার গদ্য'ই চাই আপনার কাছ থেকে । ভালো থাকুন ।
---------------------------------------------------------
নীল সার্ট নেই বলে কেউ আমাকে নাবিক বলেনি !
অথচ সমুদ্রে-ই ছিলাম আমি
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
'শব্দের ঘরে নিঃশব্দ করে, সদাই তারা আছে জুইড়ে'
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নতুন মন্তব্য করুন