ছয়খানা ঘোড়া, দশজনা জেনারেল_‍লাগ ভেলকি লাগ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: শনি, ২৯/০৩/২০০৮ - ৬:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ট্রয়ের ঘোড়া একটাই যথেষ্ঠ, কিন্তু আসিয়াছে ছয়খানা। ঘোড়ার পেটে কথা থাকে না, থাকে সৈন্যসামন্ত। ছয় ঘোড়ার পরে আসিল ১০ জেনারেল। কিন্তু সীমান্তের রোদে পানি বিনা আগুন বিনা চাউল সেদ্ধ হইতেছে। এপারে তাহার ভাপ আসে, ফ্যানটাও আসে না। তেনারা দেশটাকে আস্তাবল মনে না করিয়া যদি চাউলের আড়ত ভাবিতেন, তাহলে ঘোড়ার আগে চাউলই আসিত। নীরব দুর্ভিÞ মানুষ তাহলে নীরবেই হজম করিত।
ছয়খানা ঘোড়া সীমান্তে দাঁড়াইয়াছিল ট্রয়ের ঘোড়ার মতোই, সওয়ারহীন। আমরাই তাহাদের আনিলাম, রাখিলাম এবং দেখিলাম ঘোড়ার পেট হইতে কথা নয়. জেনারেল বাইরায়। এঁনারা একেকজনই একেকটা দেশ জয় করিতে সেয়ানা, তায় আবার দশজনা। তাঁহারা সিংহদেশের নায়ক। তাঁহাদের দেশে অতীতে আর্যরাজাগণ অশ্বমেধযজ্ঞ করিতেন। রাজটীকা কপালে নিয়া যজ্ঞের ঘোড়া দেশ-দেশান্তরে ঘুরিত। যতদূর যাইত ততদূরই রাজার রাজত্ব। এণে রাজটীকা কপালে লইয়া ঘোড়া আসিয়াছে, সম্রাটের পয়গাম আসিতে আর দেরি কি? মা ভৈ!
জেনারেলদের একজনা অতি সেয়ানা। ইনি জাতে ইহুদী, রাজনীতিতে বিজেপি, বন্ধুতায় ইসরায়েলি। একাত্তরে এনার কৌশলেই ১৬ তারিখের বিজয় বাংলার না হইয়া ভারতের হইল। অথচ বাঙালিদের ভয় দেখাইয়াই তিনি খানসেনারে তৎণাৎ আÍসমর্পণ করাইলেন। বাঙালিদের সেনাপতি আসিয়া দেখিল, হাততালি দেয়া ছাড়া তাঁহার জন্য আর কোনো কাজ কেহ অবশিষ্ঠ রাখে নাই। ধর্মে মিলিলে ঐ জেনারেল মহাশয়কে বখতিয়ার খলজির বংশ বলিতাম। ইনি মাত্র তিন হাজার ছত্রীসেনা লইয়া হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার ভয় দেখাইয়া কেল্লাফতে করিলেন।
গঙ্গার এপারে যুদ্ধের ঘোড়া খুব কমই আসিত। আর্যরা ফিরিয়া গিয়াছিল, কিন্ত আর্যরাজের নবীন বংশ ফিরিল না। তাহারা আসিলই। বাংলার সুলতানেরা পশ্চিম হইতে ঘোড়া আনিলেও হুমকি এবং খাজনার নোটিশ ফিরাইয়া দিতে পারিতেন। সেই যুগও নাই, সেই সুলতানেরাও নাই। এখন যাহারা আছেন, তাঁহারা নবীন যদুর বংশ। বন্দরে বিদেশী রণতরী আসে। দেশ চলে কাশিমবাজার কুঠির কথায়। দেশের মন্ত্রী বলে, বিদেশীদের দেশের বিষয়ে কথা না বলাই ভাল। বিদেশী দূতও বলে, তাইতো, বিদেশীরা কেন কথা বলিবে? ইহাই সহজ করিয়া বুঝাইতে তিনি আবার সাংবাদিক ডাকেন, রাজনীতিবিদ ডাকেন। হাবিলদার দফাদারদেরও ডাকেন। তাঁহারাও যান আর গিয়া একমত হইয়া আসেন। ইঁহারা না করিতে শিখেন নাই, তাই বগলে বিছানা লইয়া ঘোরেন। ডাকিলেই বিছানা পাতিয়া শুইয়া পড়েন।
কেবলই মনে পড়ে, বখতিয়ার খলজীও আসিয়াছিলেন ঘোড়াযোগেই। প্রথমে সতেরখানা পরে, শত শত। এখন দেখা যাক, ছয় ঘোড়ার পিছে আর কী কী আসে আর কে কে যায়।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

রেসিপিটা বড় চমৎকার হচ্ছে ।
ধর্ম ও আছে,জিরাফ ও আছে । বাচ্চা কার্টুনিষ্টকে জেলে পুরে দেয়া ও আছে,যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার আশ্বাস ও আছে, সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার দেয়ার প্রস্তাবনা ও আছে, ৩৭ বছর পর কৃতজ্ঞতার পুজো ও আছে ।

খালি ভাতটুকুই নেই ।

আর এ জাত ভাষার প্রশ্নে আন্দোলন করে, আত্নপরিচয়ের জন্য যুদ্ধ কর-ে কেবল ভাতের বেলায় নিয়তিবাদী । ভাতের প্রশ্নে গনেশ উল্টায়না-এমনই দয়ার শরীর ।
----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

atithi arup এর ছবি

ভারত ভীতির নয়া রূপ? বক্তিয়ারকে বকে প্রমান করলেন আপনি মোল্লা নন। কিন্তু সব কথাই তাদের কাছে ধার করা।

ভাই, ১৯৪৭এর ভুল শোধন করতে হলে উপমহাদেশকে একদেশ হতেই হবে। ভবিষ্যতের পৃথিবীর দিকে তাকান ভাই।

হিমু এর ছবি

ভবিষ্যতের পৃথিবী সম্পর্কে একটু আলোকপাত করতে পারেন, অতিথি অরূপ ভাই?

১৯৪৭ এর "ভুল শোধন" করার জন্যে উপমহাদেশকে আবার "একদেশ" করার ব্যাপারটাকেও ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের মতো মনে হলো আমার কাছে। বরং পাঞ্জাবী ও মাড়োয়ারি মনোভাব পরিত্যাগ করে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

atithi arup এর ছবি

ভাই, ভয় পাবেন না। হিসাব করলে এই 'একদেশে' আমরাই সবচেয়ে বড় ভোটের বাক্স হতে পারি। মারোয়ারি আর পাঞ্জাবিরা আমাদের কথাই শুনবে। ঢাকা হতে পারে এই নতুন দেশের ভরকেন্দ্র।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

"হতে হবে", "হতে পারে" ... ভাই একটু খোলাসা করেন। খালি অভয় দিলে হইবো না। খুইল্লা কন।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

otithiarup এর ছবি

ভোটের হিসাব করেন রে ভাই। এই 'একদেশে' বাঙ্গালির ভোটব্যাঙ্ক ই সবথেকে বড় রে ভাই। তাই একশো বছর পরে ঢাকা ই হোতে পারে বাঙ্গালির ভরকেন্দ্র। তাথেকে সার্কের ভরকেন্দ্র।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এটা কি খেয়াল করেছেন, ভারতীয় জেনারেলদের কীসের বিনিময়ে ডাকা হলো। তাঁরা কারো ক্ষমতাসীন হতে লবি করে দেবেন? মুক্তিযুদ্ধে ভারতরাষ্ট্রের সহযোগিতা একান্তই স্বার্থগত ব্যাপার। ভারতীয় জনগণের বন্ধুত্ব অকৃত্রিম। জেনারেলদের সম্বর্ধনা দিয়ে কীভাবে ভারতীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয়! দ্বিতীয়ত, তাদের অবদান ষোলই ডিসেম্বরে, স্বাধীনতা দিবসে নয়, জাতীয় দিবসে নয়। স্বাধীনতা একান্তই বাঙালিদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা কি ভারতীয়েদের উৎসাহে স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? এবং দিলাম তারই স্বীকৃতি?
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইখানে তিনটা বিষয় খিয়াল কৈরা :

১. ভারতীয় জনগণ আর ভারতীয় জেনারেল। রাজনীতিতে তাঁদের বাস্তব অবস্থান বিপরীতমুখী।

২. দেশবিভাগের ফাইনাল সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের। এই ইতিহাসটা আওয়ামী ঘরানার, বিশেষত সিপিবি ঘরানার যেসব বখে যাওয়া বাম আওয়ামী লীগকে পাম দেয় তাঁরা কায়দা করে চেপে যায়।

৩. ভারত কখনোই একজাতি ছিল না। ব্রিটিশ ভারত, আজকের ভারত সবই বহুজাতিক রাষ্ট্র



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

otithiarup এর ছবি

'একজাতি' তো বলি নাই। বলেছি 'একদেশ'। অবশ্য ই বহুজাতিক রাষ্ট্র।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সবই ঠিক আছে, কিন্তু বারবার আমাদেরই কেন ভারতের সাপেক্ষে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব সাজাতে হবে। তারা ক্রিয়া আমরা প্রতিক্রিয়া। ১৯৭১ আমাদের ক্রিয়া, আজ ভারত-পাকিস্তান যা করছে তা ১৯৭১-এর প্রতিক্রিয়া।
ভবিষ্যতে কোনো সঙ্গত রাজনৈতিক কারণ সৃষ্টি হলে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ এক ইউনিয়নভুক্ত হতে চাইলে হবে? কুছ পরোয়া নেহি। কেউই কারো ন্যাচারাল শত্রু না।
আর বহুজাতিক রাষ্ট্র যে আদতে হিন্দিভাষী, উচ্চবর্ণের আর্যশ্রেষ্ঠত্বের দুর্গ তা কেন খেয়াল করছেন না?

::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আর বহুজাতিক রাষ্ট্র যে আদতে হিন্দিভাষী, উচ্চবর্ণের আর্যশ্রেষ্ঠত্বের দুর্গ তা কেন খেয়াল করছেন না?

আরো খুইলা কইলে উত্তর ভারতের ঠাকুর-যাদবদের দূর্গ....



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দেখুন, ১৯৪৭ এর ভুল একাত্তরে সংশোধন, তত্ত্বটাই তো এই। কিন্তু একাত্তর বাস্তবে যদি দ্বিজাতি তত্ত্ব ভুল প্রমাণ (?) করে থাকে তাহলে তো এটাও প্রমাণ হলো ভারতবর্ষীয়রা একজাতি নয়_তারা বহুজাতি। আপনার যুক্তিতে ৪৭ ভুল হলে একাত্তরও কিন্তু ভুল হয়। ভেবে দেখবেন।
বাংলাদেশ এটা বুঝতে পেরেছে সবার আগে। ভারতীয় অসমিয়া, কেরালা, পাঞ্জবি ও ও নিম্নবর্গের দলিতরা বুঝছে ভারতীয় বলে কোনো জাতি নেই। আর পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা
তো মুসলিম সরকারের অধীনে থাকতে চাই নাই বলেই তো, দেশভাগ অনিবার্য করে তুলল।
বাংলাদেশে পাকিস্তানের ভুতটি যত সামনে দেখা যায় ভারতীয় ভুত তত দেখা যায় না, সেটি নিয়েছে প্রগতিশীল ও সেকুলার ছল।
উপমহাদেশকে একদেশ করার আয়োজনের দায়িত্ব ভারতকে দিয়ে রেখেছে আমেরিকা। ইতিমধ্যে কয়েকটি অর্থনৈতিক জোনে ভাগও হয়ে আছে। সীমান্ত সেখানে কোনো বিষয় নয়।

::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

otithiarup এর ছবি

ভাই হিন্দু বা মুসলিম যার ই দোষ হোক, দেশভাগ তো ভুল সিদ্ধান্ত ই ছিল। তাই না?

না, ৪৭ এর ভুল ৭১এ শোধন হই নাই। সেই মরিচীকা আমি দেখি না।

আপনি বললেন ভারতিয় বলে কোন জাতি নেই। ঠিক কথা। কিন্ত পাকিস্তানি বা বাংলাদেশি বলে কোন জাতি কি আছে? আমি একদেশ এর কথা বলছি , এটা একজাতির প্রস্তাব নয়।

ধরে নিলাম জমিদার / প্রজা ব্যবস্থার কারনে দেশভাগ যৌক্তিক ছিল। ধরেন এখন বা কোন এক দিন জমিদার / প্রজা ব্যবস্থা আর নেই, তখন কি সেই যুক্তি আর চলবে?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মাঠে মুক্তিযোদ্ধারা আছে আবার হুজুররাও আছে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার খেলা। সবাই বান্দর নাচ দেখতে ব্যস্ত। ওদিকে বাঙালিদের পকেট মার হচ্ছে না তো ভাই।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

১০০% একমত।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তারেক এর ছবি

আপনার পোস্ট, মোরশেদ ভাইয়ের কমেন্ট দুইটাতেই বিপ্লব। হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

বিপ্লব রহমান এর ছবি

.
কতোই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সুমন চৌধুরী এর ছবি

জার্মান ভাষায় এই প্রকার খাদ্যকে বলে আলেস ইন আইনেম টপফ্ । অর্থাৎ এক ডেগচিতে সবসালুন.....



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

একমত।
এই চেপে যাওয়ার ইতিহাসও কিন্তু সাম্প্রদায়িক ইতিহাস।
পূর্ব বাংলার কৃষকরা ভোট দিয়ে পাকিস্তান এনেছিল আবার ৭০ সালে ভোট দিয়ে পাকিস্তানের কবর রচনা করে। ১৯৪৭ কিংবা ১৯৭০ এ ভোট দিয়ে পাকিস্তান শেষ করে। কিন্তু তারা অদেখা ও শোষক-জমিদারদের কলকাতার জন্য কোনো টান অনুভব করেনি। ৭১-এও কেউ পশ্চিম বাংলার সঙ্গে এক হওয়ার তাগিদ বোধ করেনি। এর বিপদ সম্পর্কে শেখ মুজিবও সচেতন ছিলেন। তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যায় ওপারের বাঙালিদের আলাদা রাখেন। প্রশ্নটা বরং উল্টো হওয়া উচিত কেন ওপারের বাঙালিরা বাংলাদেশের সঙ্গে এক হবে না? কারণটা যদি রাজনৈতিক হয়, তাহলে আমাদেরও রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। সেজন্য সাংস্কৃতিক বাঙালিত্বের থেকে রাজনীতি বড় হয়ে ওঠে। আজকে ভারত রাষ্ট্র আমাদের জন্য রাজনৈতিক কারণেই ভীতিকর। মার্কিনের সঙ্গে জোটবদ্ধতায় সেই ভীতি আরও বেড়েছে। ওদিকে চীন আর এদিকে ভারত নিয়ে তাই আমাদের মাথা ব্যথা না করে উপায় নাই।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ঠিক।
তবে আপনি যেই বাক্যগুলি ব্যবহার করলেন তাঁর সচেতন সাম্প্রদায়িক ব্যবহার সম্ভব। সেটা কারা করেন কেন করেন আপনি জানেন। একটা ইতিহাস মাথায় রাখা দরকার, ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন হবার পরে মুসলীম লীগ কিন্তু প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ১৯৪৬ সালে । আর সেটার পেছনে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রভাবকে পুরোপুরি অস্বীকার করা শক্ত। নির্বাচন অবশ্যই রাজনৈতিক ইতিহাস বিচারের একটি সূচক তবে একমাত্র সূচক নয়। নির্বাচনের সাথে অনেকগুলি বিষয় একসাথে কাজ করে। হিন্দু জমিদার এবং তথাকথিত হিন্দু মধ্যবিত্তের সাথে মুসলমান কৃষকদের দন্দ্বের প্রতিফলন যে জিন্নাহ সাহেবের দ্বিজাতিতত্ত্ব নয় সেটা আড়ালে গেলেই বরং লালাজীটাটাজীদের পোয়াবারো। শেঠজীরা এতকাল রিসিপ্রোকাল অ্যাকশানে সওদা করে এসেছেন। বাংলাদেশে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য মার্শাল ল থেকেছে তাঁরা জয় রামজীকি বলে রাম টেনেছেন। এবারের কেস যেটা তাতে মনে হয় ইতিহাস নিজের উপর বিরক্ত। ভানুমতি শেষ সুতোটাও গা থেকে খুলে ভাঁজ করে তাকে উঠিয়ে রাখলেন। এবার রহিমকরিমসেলিমরামশ্যামযদুটমস্যামডিক সবাই মাঠে। আজকের খেলা কেউ মিস করতে রাজী নয়। সবাই একটা নতুন টোস্ট খেতে চায়। এই সমবেত তেষ্টা তো এতোকালও ছিল। শুধু শুধু তাকে আর জাতিধর্ম দিয়ে চেপে রাখা কেন?



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সুমনের কথার শেষটা বুঝতে পারিনি।
বাংলাদেশ আলাদা তার রাজনৈতিক পরিচয়ে। সেটা ইসলাম নয়, পূর্ব বাংলার নিম্নবর্গীয় সাংস্কৃতিক গঠন অর্থাৎ কৃষক প্রাধান্যে এবং রাজনৈতিক গঠন ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র-প্রকল্পে। পাকিস্তান আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। ভারত বর্ণবাদিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র এবং অবশ্যই তাদের শাসকশ্রেণীর মনোজগতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ক্রমশ উদগ্র হচ্ছে। (এ অঞ্চলে ইসরায়েল-ভারত-মার্কিন অক্ষ তার একটা নজির। জ্যাকব বিজেপি নেতা ছিলেন এবং ইসরাইল-ভারত মিতালীর অন্যতম দূত।)
খেয়াল করা দরকার যে, মুসলিম লীগ ভোটে জিতেছিল কিন্তু দাঙ্গার আগে। আর জয়া চ্যাটার্জির বেঙ্গল ডিভাইডেডসহ অন্যান্য হাল আমলের গবেষণা দেখাচ্ছে যে, দাঙ্গার পরিকল্পনা হিন্দু মহাসভা প্রভৃতি দল দীর্ঘসময় আগে থেকে নিয়ে রেখেছিল।
নিম্নবর্গ কখনো ইসলামের নামে কখনো সমাজতন্ত্রের নামে কখনো জাতীয়তাবাদ আবার কখনো উন্নয়নের নামে উচ্চবর্গের প্রকল্পে ঢোকে বটে আবার সময় মতো বেরিয়ে আসে। তা দিয়ে তাদের রাজনৈতিক চৈতন্য বোঝা যায় না। সেকারণে তাদের মুসলিম লীগার বা আওয়ামী লীগার বলা যায় না।
সচেতন সাম্প্রদায়িক ব্যবহার তো উল্টোদিক থেকেও হয়ে তাকে তাই না? বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক আর ভারত প্রগতিশীল। মুসলমানরা সন্ত্রাসী আর দুনিয়ার সবাই ভাল। যে কোনো অ্যাবসলিউট ধারণা সমস্যাজনক।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রায়হান আবীর এর ছবি

(বিপ্লব)

---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আর ক'টা দিন সবুর করো বোরো বুনেছি ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

শনির হাওরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে ভাঙা স্লুইস গেটের ফোকড় দিয়ে।

এই হাওরের ধানে নাকি বাংলাদেশের সাত দিনের খাবার হতো।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ফারুক ভাই, আপনার লেখাটি আমার প্রিয় পোস্ট যোগ করলাম।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ধন্যবাদ।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

শেখ জলিল এর ছবি

দারুণ স্যাটায়ার।
,,কবে যে জাতিসত্ত্বার সত্যিকারের উপলব্ধিটা বাঙালির আসবে!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

atithi arupলিখেছেন

"ভারত ভীতির নয়া রূপ?"

ভাগ্যিস রাজাকার বলেন নি , এদেশে ভারত এর সংগত বিরোধিতাকেও রাজাকারি কর্ম হিসেবে দেখার রেওয়াজ আছে ।

ফারুক ভাই এই ব্লগটি লিখেছেন শনিবারে । ঐ একি দিনে একি বিষয়ে কবি -চিন্তক ফরহাদ মজহার লিখেছেন নয়া দিগন্তে । ফরহাদ কে জামাতি হিসেবে চিহ্নিত করে এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে কিন্তু আবদুল গাফফার চৌধুরী কে কি বলে এড়ানো যাবে ।

দেখুন , শনিবারে সমকালে প্রকাশিত তার উপসম্পাদকীয় "সিন্দবাদের রঙ্গদেশ সফরনামা "

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

উত্তীও এর ছবি

সম্প্রতি ফারুক ওয়াসিফের লিখা " ছয়খানা ঘোড়া, দশজনা জেনারেল লাগ ভেলকি লাগ " শিরোনামের লিখা নজরে এল, সে লিখার সূত্র ধরেই আমার বর্তমান লিখার অবতারনা। ভারতের বড়ভাই সুলভ আচরনের মর্মযাতনা এবং এর রূপক প্রতিবাদই তাঁর লিখার মূখ্য বিষয়।

বিভিন্ন বিষয়কে এক সূত্রে গাঁথা একটু কষ্টকর বৈকি। এক সূত্রে গাঁথতে গিয়েই ফারুক ওয়াসিফ টেনে এনেছেন দশ জন জেনারেলের কথা এবং কার্যত অক্ষম আক্রোশে সম্মান প্রদর্শন দূরে থাক অসম্মানিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধের দশ জন সহযোদ্ধাকে।

ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ঠ্রগুলোর সাথে বিমাতাসুলভ আচরন সর্বজনবিদিত। এই আচরনের দুই ভয়ঙ্কর শিকার বাংলাদেশ এবং নেপাল। আমি মনে করতে পারিনা স্বাধীনতার পর ঠিক কোন ইস্যুতে ভারতের আচরন স্বাভাবিক ছিল! তিন বিঘা করিডোর, গঙ্গার পানি চুক্তি, সীমান্তে বেড়া, পুশইনের মত ন্যাক্কার জনক ঘটনা সবই বিমাতাসুলভ আচরনের বহিঃপ্রকাশ। এ সব কিছুই ছাড়িয়ে যায় চাল ইস্যু। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হবার পরও অভিনব পন্হায় চুক্তি ঠেকিয়ে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

এ বিষয়ে একাত্মকতা প্রকাশ করি ফারুক ওয়াসিফের সাথে। আমার বর্তমান লিখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ভারতের দশ জন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল , যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্বপক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন।

দেখা যাক ফারুক কিভাবে সহযোদ্ধা দশ জেনারেলকে নিয়ে আসলেন। তিনি লিখেছেন
" ছয়খানা ঘোড়া সীমান্তে দাঁড়াইয়াছিল ট্রয়ের ঘোড়ার মতোই, সওয়ারহীন। আমরাই তাহাদের আনিলাম, রাখিলাম এবং দেখিলাম ঘোড়ার পেট হইতে কথা নয়. জেনারেল বাইরায়। এঁনারা একেকজনই একেকটা দেশ জয় করিতে সেয়ানা, তায় আবার দশজনা।"

কাউকে সম্মান জানানো বা না জানানো একান্তই লেখকের ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু কাউকে অসম্মানিত করার অধিকারটুকু বোধ হয় লেখকের নেই। আমার লেখনীর এতটুকু ক্ষমতা নেই যে , আমার মুক্তিযুদ্ধের আবেগ প্রকাশ করতে পারব। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যিনিই মুক্তিযুদ্ধের সাথে একাত্মকতা ঘোষনা করেছেন , তিনি যে কোন জাতীয়তাবাদের ধারকই হউন না কেন, তিনি আমার কাছে পরম সম্মানীয়।

একজন গিন্সবারগ লিখেছিলেন " সেপ্টেম্বর ইন যশোর রোড "। একজন সমর সেন, যিনি জাতিসংঘে ভারতের মুখপাত্র ছিলেন, একাত্তরে চিৎকার করেছেন বাংলাদেশের জন্য। একজন ভিনদেশী সাংবাদিক হয়ত শুধুমাত্র সংবাদ সংগ্রহের জন্যই একাত্তরে ঢাকায় অবস্হান করেছিলেন। তাঁদের সবাই ভিন্ন ভিন্ন জাতীয়তাবাদের ধারক এবং বাহক।
যখুনি সেই সাংবাদিকের লেখনী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীর পক্ষে কথা বলে, যখুনি ভারতের রাষ্ঠ্রদূত বা রাশিয়ার রাষ্ঠ্রদূত জাতিসংঘে একাত্তরের বাংলাদেশকে তুলে ধরেন তখুনি জাতি, ধর্ম , জাতীয়তাবাদ তাঁরা হয়ে উঠেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা।

ফিরে যাই ফারুক ওয়াসিফের লিখায় , ঘোড়ার পেট থেকে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় টেনে বের করেন দশ জন জেনারেলকে , যাঁরা কিনা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। ট্রয়ের ঘোড়া থেকে সৈন্যরা বেড়িয়েছিল আরেকটি দেশ ধ্বংশের জন্য ,সহযোদ্ধা জেনারেলরা কি এতটাই অসম্মানের যোগ্য ?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।