লিসনিং টু দা গ্রাসহুপারস টা না খুঁজে পেয়ে বিকল্প হিসাবে এটা দিলাম।
অরূন্ধতি রায়ের ধার ও গভীরতা এই লেখায় পুরোটা নাই, তবে ঝাঁঝটা পাওয়া যায়। তাঁকে চমস্কির সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু চমস্কি সরাসরি-মুখোমুখি কিংবা ব্যক্তি মানুষটাসহ দাঁড়ান না_অরুন্ধতি দাঁড়ান। সে কারণে এই তিনি নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে মেধা পাটকারের সঙ্গে ছুটছেন-ঘুরছেন আবার জেল খাটছেন আবার এই আফজাল গুরুর অন্যায় ফাঁসি ঠেকাতে জনমত গড়ে তুলছেন আবার ভারতের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার 'সাহিত্য একাদেমি' পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে বিশ্বের এখানে ওখানে বক্তৃতা করছেন। গুজরাতর গণহত্যা ও কাশ্মীরের দখলদারিত্ব কি ইরাক বা আর্মেনিয়ার গণহত্যা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন এই নারী। অরূন্ধতির নতুন বইয়ের আনন্দে এই পুরনো লেখা ঝুলি থেকে বার করা।
ভারতের উপনিবেশ
অরূন্ধতি রায়
ভারতজুড়ে সহিংসতার পরিবেশ বাড়ছে। এর চিহক্র পড়ার জন্য প্রতিভাবান হতে হবে না। বর্ধিষষ্ণু মধ্যশ্রেণী ভয়গ্ধকর ভোগবাদে আসক্ত, আগ্রাসী তাদের লোভ। শিল্পায়িত পশ্চিমা দেশগুলো উপনিবেশের সম্পদ লুঠ করে, দাস ব্যবসা চালিয়ে ভোগের চাহিদা মিটিয়েছে। আমাদের তা নেই বলে আমরা আমাদের তলার অংশের ওপর উপনিবেশ কায়েম করছি। আমরা এখন আমাদের নিজের মাংস খাওয়া শুরু করেছি। এই লোভের পরিতৃপ্তির একমাত্র পথ দুর্বল জনগোষ্ঠীর জমি, পানি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আত্মসাত করা। আমরা এখন সবথেকে সফল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রাম চাক্ষুষ করছি। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণী জনগণ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করছে। বিশ্বের এলিট মহলে ঠাঁই পাওয়ার জন্য তারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কয়লা, তেল-গ্যাস, বক্সাইট, পানি ও বিদ্যুত সহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। এখন আরো গাড়ি, আরো বোমা, আরো মাইন _নব্য সুপার পাওয়ারের নব্য সুপার নাগরিকদের জন্য সুপার খেলনা_ বানাবার জন্য জমি দরকার। সরকার ও কর্পোরেশনগুলো মিলে চালাচ্ছে কাঠামোগত সংস্কার। মাঠে নেমেছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এফডিআই। আদালত তাদের প্রতি সুপ্রসন্ন, সুপ্রসন্ন নীতিনির্ধারকগণ। তাদের মদদে দিতে কর্পোরেট মিডিয়া ও পুলিশ বাহিনী জনগণেল জিহ্বা সেলাই করে দিচ্ছে। প্রতিবাদীরা এতদিন ধরনা, অনশন, সত্যাগ্রহ ও আদালতের আশ্রয় নিয়ে ভেবেছেন এসবই মিডিয়ার পছন্দ। কিন্তু এখন তারা বন্দুক তুলে নিচ্ছেন। যদি সরকার কেবল প্রবৃদ্ধি আর সেনসেক্সকেই প্রগতি আর সমৃদ্ধির একমাত্র মাপকাঠি মনে করে, তবে সহিংসতা নির্ঘাত বাড়বে। আকাশের লিখন কে না পড়তে পারে?
দশকের পর দশক অহিংস আন্দোলনগুলো সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। কিন্তু ফিরেছে খালি হাতে লাঞ্ছিত হয়ে। ভোপালের তেজষ্ক্রি য়ায় ক্ষতিগ্রস্থদের অথবা নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের (এনবিএ) দিকে দেখুন। এনবিএ'র তো উঁচু মাপের নের্তৃত্ব, মিডিয়ার নজর, সহায়-সম্পদ সবই ছিল। কিন্তু কেন তারা ব্যর্থ হলো? দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনিমক ফোরামের সম্মেলনে সোনিয়া গান্ধিও যখন সত্যাগ্রহকে উতসাহিত করেন, তখন আমাদের নতুন করে ভাবতে হয়। গণতান্ত্রিক জাতিরাষ্ট্রের কাঠামোয় তথ্যকারচুপি আর কর্পোরেট মিডিয়ার যুগে কি তা সম্ভব? নাংলা মাচ্ছি বা ভাট্টি খনির মানুষেরা অনশন করলেও কেউ তাদের পাত্তা দেয় না। শর্মিলা ইরম ছয় বছর ধরে অনশন করে যাচ্ছেন, তাতে কী হয়েছে? যে দেশের লোকে এমনিতেই খেতে পায় না সেদেশে অনশনকে রাজনৈতিক অস্ত্র করা পরিহাস। আমরা এখন প্রবেশ করেছি এনজিও যুগে। আমরা এখন বহুজাতিকের অর্থপুষ্ট বিক্ষোভ দেখছি, দেখছি 'স্পন্সরড ধরনা এবং নানা সোশাল ফোরাম। এরা প্রায়শই প্রতিবাদী কথাবার্তা বলে নিজেরাই পরে তা ভুলে যায়। আমরা পরিচিত হচ্ছি ভার্চুয়াল প্রতিরোধের সঙ্গে। যেসব কর্পোরেট সংস্থা প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে তছনছ করছে তারাই আবার পরিবেশ ও জনআন্দোলনের পুরস্কার ও তহবিল দিচ্ছে। উড়িষ্যায় বন ধ্বংস করে বক্সাইটের খনি করা কোম্পানি বিশ্ববিদ্যালয় করতে চায়। সরাসরি ও পরোক্ষভাবে দুটি হিতৈষী ট্রাস্ট চালায় টাটা। দেশব্যাপী নানান আন্দোলনের তহবিলের যোগান দিচ্ছে তারা। এজন্যই কি নন্দিগ্রামের থেকে সিঙ্গুরে প্রতিরোধ কম? টাটা-বিড়লাই তো গান্ধিকে তহবিল যুগিয়েছিল। সম্ভবত তিনিই আমাদের প্রথম এনজিও। এনজিওরা অনেক শোরগোল তোলে, অনেক প্রতিবেদন তৈরি করে। কিন্তু তাদের থেকে সরকারকে আর কে বেশি শাস্তি দিতে পারে? সত্যিকার রাজনৈতিক কর্মকা-কে খারিজ করতে পেশাদার লোকে দেশ ছেয়ে গেছে। আসল প্রতিরোধের জায়গা দখল করেছে ‘ভার্চুয়াল প্রতিরোধ’।
একটা সময় ছিল, যখন গণআন্দোলন আদালতের রায়ের মুখাপেক্ষি ছিল। কিন্তু হালে আদালত বৃষ্টির মতো এমন রায় বর্ষণ করেছে, যা অবিচার এবং গরিব মানুষদের জন্য অপমানকার। তাদের ভাষায় 'ওরা আমাদের দম বন্ধ করে দিচ্ছে'। কর্পোরেট সংস্থাগুলোর দুর্নীতির কথা কেউ বলে না। কর্পোরেট বিশ্বায়ন ও কর্পোরেট জমিগ্রাসের যুগে এনরন, মনসান্টো, হ্যালিবার্টন ও বেকটেলের জমানায় সেসব বলা কঠিন। বিচার ব্যবস্থা ও কর্পোরেট মিডিয়াই এখন নিওলিবারেল প্রকল্কেপ্পর চাবিকাঠি।
যখন মানুষ দেখে যে তাকে ছিঁড়ে-খূঁড়ে ফেলা হচ্ছে, গণতন্ত্রিক প্রতিক্রিয়া তাদের নিঃশেষ করছে নিপীড়ন করছে, তখন তারা কী করতে পারে? এমন নয় যে, বিকল্প পথগুলো পরস্পরের বিপরীত: হয় সহিংস নয়তো অহিংস। যেসব রাজনৈতিক দল সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাস করে, তারাও একে মহৃল সংগ্রামের অংশমাত্র মনে করে। এসব সংগ্রামে নিয়োজিত রাজনৈতিক কর্মীদের নৃশংসভাবে পেটানো, হত্যা করা এবং মিথ্যা অজুহাতে বন্দি করা হয়। যারা অস্টú হাতে তুলে নেয়, তারা ভাল করেই জানে প্রতিত্রিক্রয়ায় তাদের ওপর ভারতীয় রা®েদ্ব্রর যাবতীয় সহিংস ক্ষমতা লেলিয়ে দেয়া হবে। যে মুহহৃর্তেই কেউ সশস্ত্র সংগ্রামের কৌশল বেছে নেবে, সে মহৃহহৃর্তেই তার দুনিয়া সগ্ধকুচিত হয়ে আসবে। সব দিক থেকে হতাশ হয়ে কেউ যদি সেরকম পথ বেছে নিলে আমরা কি তাদের নিন্দা করবো? যদি নন্দিগ্রামের মানুষেরা ধরনা কর্মসহৃচি ও গান গেয়ে পশ্চিমবাংলা সরকারের কাছে আবেদন করতেন তবে কি সরকার জমি গ্রাস থেকে পিছু হটতো? আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যখন অকার্যকর পন্থা গ্রহণ করা মানেই প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে সমর্থন করা। কার্যকর প্রভাব ফেলতে হলে ভয়ঙ্কর মূল্য দিতে হবে। যারা সেই মূল্য দিতে প্রস্তুত তাদের নিন্দা করা আমার পক্ষে কঠিন।
ভারত জুড়ে এখন অসন্তোষ ও উত্তাপ। কাশ্মীরে সামরিক দখলদারিত্ব, গুজরাটে নব্য-ফ্যাসিবাদ, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো উড়িষ্যা ধর্ষণ করছে, নর্মদা উপত্যকায় শত শত পরিবার উচ্ছেদ হচ্ছে; মানুষ চূড়ান্ত না-খাওয়া অবস্থায় আছে, বন ধ্বংস হচ্ছে, ভোপালের জনগণ বেঁচে ছিল এটা দেখার জন্য যে, তাদের সর্বনাশ করা ইউনিয়ন কার্বাইড কোম্পানিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন নামে (ডৌ কেমিক্যাল) নন্দিগ্রামে প্রতিষ্ঠিত করছে। মহারাস্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটকে হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করছে। অল্পব্দ্রপ্রদেশে ভুয়া এনকাউন্টার ও ভয়গ্ধকর নির্যাতনের কথা জানি। নানান আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক চাপ এসব অঞ্চলের জীবন পেরেশান করে দিচ্ছে। পাশাপাশি বিজেপির হিন্দুত্ব প্রকল্পের কথাও বলা উচিত। তলে তলে বিষ ছড়াচ্ছে তারা। অপেক্ষা করছে আবারও বিষ্ফোরণ ঘটানোর জন্য। সব থেকে বড় যে বিষ হলো: আমরা এখনও এমন এক দেশে এমন এক সংস্কৃতিতে, এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে আস্পৃশ্যতার চর্চা ও প্রসার বাড়ানোর প্রচেস্টা চালু আছে।
আমাদেও সমাজে এখন সকল যোগাযোগের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তেহেলকা ডট কম থেকে
মন্তব্য
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নতুন বইটার অনুবাদ চাই। শুদ্ধস্বর ছাপতে আগ্রহী।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
মনে হয় পারবো না, অন্য কাজ হাতে নিয়েছি। তবে যৌথভাবে করা যায়। কিংবা অরূন্ধতির বিভিন্ন সময়ের গোটা পনের নিবন্ধ অনুবাদ করা আছে, তার সঙ্গে নতুন বইটা থেকে কয়েকটা বাছাই করে একটা সংকলন করা যায়।
আরেকটা কথা, দয়া করে কেউ এই লেখাকে কিংবা তার অনুবাদকে ভারত-বিদ্বেষী বলে অভিযোগ করবেন না। একই কথা বাংলাদেশ-পাকিস্তান বা নিওলিবারেলিজমের খপ্পরে পড়া যে কোনো দেশ নিয়ে বলতে পারেন। ভারতে যা হচ্ছে কর্পোরেট গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশে তা-ই এখন ঘটছে সেনাগণতন্ত্রের মাধ্যমে। এঁরা বাহক মাত্র। এসেন্স সবখানেই এক।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
মুল লেখাটা পড়েছিলাম তেহেলকায় । পরে বাংলাটা ও পড়া হয়েছিল । কোথায় মনে করতে পারছিনা ।
আপনার এই অনুবাদ কি সমকালে প্রকাশিত হয়েছিল? তাহলে বোধহয় ওখানেই ।
আমি খোঁজ লাগিয়েছি নতুন বইয়ের জন্য । পাওয়া গেলে আওয়াজ দেয়া হবে
----x----
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
জানায়েন পাওয়া গেলে। কিংবা আমরা সমবায়ের মাধ্যমে অনুবাদ করে ছেড়ে দিতে পারি।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
পড়লাম।
গুড়াগাড়ার ঈশ্বর ভাল্লাগছিল। নতুন টাও পড়ুম পাইলে।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন