আহাম্মকের আমলনামা ২

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৫/২০০৮ - ৪:৩৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক. এদেশে সব্বাই মন্দ, তেনারা কেবল ভালো, শতাব্দীর আন্ধার জ্বালিয়ে বলেন, দেখ কেমন আলো!
এই হইল ঘটনা এবং এই ঘটনার কোনো মা-বাপ নাই। এনারা আরশ থেকে পড়েছেন বলে সিবিল, বাকি সব হাবিল-কাবিল। আদমের এই দুই পুত্র দুনিয়ায় প্রথম রক্তপাত ঘটিয়েছিল, হালে তাদের পুত্র-তস্যপুত্ররা দুই দলে আছেন। আর সিবিলরা আছেন নির্দলে। তাঁরা নির্দল-নিরপেক্ষ। তাই নির্দলীয় সেনাবাহিনীর সমর্থক। তাঁরা মন্দ কী জানেন না, কিন্তু টাকায় আধ টাকার সুদি কারবার করেন। তাঁদের কায়েন্ট কোম্পানি শিশুশ্রমে মুনাফা করে সেই মুনাফার ভাগ দিলেও তাঁদের নোবেলের মহিমা কিছু মাত্র কমে না। তাঁরাই ফেউ হয়ে বাঘ আসার রাস্তা খোলাসা করেন কিন্তু এখন আবার তারাই গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চোঙ্গা ফোঁকান। ফৌজিদের আর কী অপরাধ! নোবেল বিজয়ী বীর সওদাগর পুত্র যখন ভিটে-মাটি-বন্দর সব বিক্রি করার ওকালতি করেন, খায়েশ দেখেন ফৌজি কুলাঙ্গারদের কাঁধে চড়ে সত মানুষের রাজনীতির শিখণ্ডী হতে! ক্লিন্টন-সারকোজি-ব্লেয়ার-জর্জ সরোস তার বন্ধু। দুনিয়ার তাবদ মাল্টি ন্যাশনালকে বাংলাদেশে ব্যবসা করার মুতসুদ্দিগিরিই যার বড় সাফল্য, এই আমলে তেনারাই নাকি গণবন্ধু। এইসব ব্র্যাক-সিপিডি-গ্রামীণরাই কি দেশকে এক গহ্বর থেকে আরেক পগারে ফেলার দুতিয়ালি করেন নাই? রাজনীতিবিদরা খারাপ, তা ভাই তোমরা কারা? কার টাকায় তোমার বাণিজ্য? কাকে তোমরা এক ঘাটে কিনে আরেক ঘাটে বেচে আসছ? তোমরা কি আফগানিস্তান দখল হবার পর সেখানে ব্যবসা খোলো নাই। তোমাদের একজন, যিনি নাকি আইনের জাহাজ সংবিধানের ওঝা, তিনিই কি দখলদারদের হয়ে সংবিধান রচনার ঠিকাদারি পান নাই সেখানে? তিনিই কি বাংলাদেশে এশিয়া এনার্জি, নাইকো প্রভৃতিদের আইন উপদেষ্টার চাকরি করেন না? টিআবির পীর যিনি তিনিও কি এই সরকারের মদদদাতা সাজেন নাই?বহুজাতিক লুটেরা কোম্পানির কর্মচারি ও স্থানীয় এজেন্টরাই যদি বাংলাদেশের বিবেক হবে তবে আর কারজাইকে গালি দেয় কোন বেকুবে।
দুই. বিউটেনিস গেছে এখন এসেছে মরিয়ার্টি। ইনি নতুন বড় লাট, এসেই চট্টগ্রাম বন্দরের তদারকি করে গেলেন। বন্দর ইজারা হয়ে গেছে তলে তলে, ট্রেন চলাচলের ছলে ভারতের সঙ্গে ক'দিন আগে ট্রানজিটও হয়ে গেল। আমেরিকার সন্ত্রাস দমনের পররাজ্যগ্রাসী যুদ্ধে বাংলাদেশ হাবিলদারিতে যোগ দিল। আর থাকেটা কী? এসবই দুর্নীতি দমনের বাড়তি ফজিলত। ফৌজি কাছা খুলতে আর কিছু বাকি নাই। তেনাদের ক্ষমতার বাসনা আর পরাশক্তির হাবিলদারির নাম বিদেশে শান্তির মিশন আর দেশে দুর্নীতি দমন। চোর-বাটপার বেলেঙ্গা রাজনীতির ব্যাপারিদের অপকর্মের নাম দুর্নীতি আর তেনাদের অজাচারকে বলে দেশোদ্ধার। ইদানিং তাদের সত্যপ্রীতি জন্মেছে। দোষ স্বীকার করলেই মাফ। খোদ খোদারও এত দয়াবান হওয়ার ক্ষমতা নাই। ট্রুথ কমিশনের নামে ফৌজি লিঙ্গ সমাজের আরো ভেতরে ঢূকবে; এতে আর বিষ্ময় কী?
ছোটো লাট আনোয়ার চৌধুরী যাবার আগে কেঁদে-কেটে বাঙালির লুঙ্গি ভিজিয়ে ফেললেন। এক ব্লগে দেখলাম এই দেশি ভ্রাতার বিদায়ে ডিজিটাল কান্নার বান বইছে। জিগাইলাম, মহাত্মন, কীসের তরে তব শোক? কয়, উনি বাংলাদেশের বন্ধু। তাঁর আমলে কত দেশি ভাই বিলাত গেছে জানেন? কারে কি কব? ইংরেজ আমলে এর থেকে বেশি বাঙাল বিলাত গেছে। তাই বলে কি ইংরেজ শাসন জায়েজ? দাস্য মনোবৃত্তি কয় প্রজন্ম গেলে পরে সারে?
বিউটেনিস যাবার পর দুইবার এসেছেন। কেন? না ওনার কুকুর রেখে গেছেন, ঐবার তারে দেখতে আইছেন আর এইবার আইছেন নিতে। মানুষ থুইয়া কুকুর প্রীতি মার্কিন জালিয়াতদেরই সাজে। অধমের মনে তখন একখানা জিজ্ঞাসা বেজেছিল। কোন কুকুর নিতে আসছেন উনি, বাবর না তারেক? কারে তার বেশি দরকার?
তিন. কেউ গোস্তাখি নিয়েন না। মেজাজটা এরকমই। যদি বলেন কাঁদেন ক্যান? বলব, কাঁদি না, মুখটাই এরকম। দুঃখে বারায় হোল, লোকে কয় পাগল। আমাদের অবস্থা সেইরকমই। সেনাশাসনে তো কারো কোনো অসুবিধা হচ্ছে বলে মনে হয় না। এই আমলে ব্যবসায়িরা শ্রেফ দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিল। বাইরের কোম্পানিগুলো নির্বিবাদে মুনাফা লুটে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে কি নতুন গাড়ি নামা বন্ধ হয়েছে? মধ্যবিত্তের একটা অংশের উচ্চবিত্তে প্রমোশন কি ঠেকে আছে? ঠেকে আছে ধনীর দুলাল-দুলীলীদের ফুর্তিফাতা? সব চলছে? বাকি সব মফিজদের বদনা হাতে দৌড়াদৌড়িই সার। এসবের মধ্যে সুখে আছে সিবিলরা। এনাদের কল্যাণেই নব্য মহাজনরা ভিভিআইপি হয় আর ভূমি সংস্কার দাবি করা বিপ্লবীরা মাথার পেছনে গুলি খেয়ে মরে থাকে বাঁধের ওপর। এরা সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক দল। রাষ্ট্রের ভেতর তারা আরেক রাষ্ট্র বানিয়ে এখন ফৌজি সংস্কারের পার্টনার হয়ে টেলিভিশন আলো করে পত্রিকার পাতা ভরে বকে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, তোরে জিগায় ক্যাডা?
তারা যা করার না তা করছেন, যা ভোগ করার না তা ভোগ করছেন। ইডিপাস মাতৃ জননাঙ্গ দর্শন করেছিল বলে প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে নিজের চোখ অন্ধ করে ফেলেছিল। এনারা যে দানব জন্ম দিয়ে সেই দানবকে দিয়ে দেশকে ধর্ষণ করাচ্ছেন, সেই পাপজন্মের প্রায়শ্চিত্ত কী দিয়ে করবেন?
পাঁচ. আমাদের মধ্যেও যে সিভিল সোসাইটির মহিমাপ্রীতি নাই, তা নয়। সবাই খারাপ খালি এনারা ভাল, এই ধারণা বেশ চাল্লু। আমাদের জন্য এই গল্পটি বলেছিলেন রাজনারায়ণ বসু।
একবার ঠনঠনের মাহারাজাকে এক জোড়া জরির নাগড়াই উপহার দিলেন উলুখাগড়ার নবাব। বংশে তিনিই প্রথম মাহরাজা। ফলে এসব সামগ্রীর কী ব্যবহার তা মহারাজের জানা ছিল না। বন্ধুমহলে পরামর্শ করেও লাভ হলো না। তো একদিন সেই জরির নাগড়াইয়ের এক পাটি মাথায় পাগড়ির ডগায় বেঁধে আয়নায় দেখলেন, বেশ দেখাচ্ছে। তো হৃষ্টচিত্তে তিনি সেই নাগড়া জুতো বাঁধা পাগড়ি মাথায় করে দরবারে দেখা দিলেন। সকলে ধন্য ধন্য করলো।
অতএব এ বিষয়ে আমাদের নির্বিরোধ মধ্যবিত্তরা নতুন নন। কোথাকার জিনিষ কোথায় রাখতে হয় তার বুঝ আসতে আমাদের আরো বাকি। আমাদের মতি হোক।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক! "আমাদের মতি হোক।"
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

তীরন্দাজ এর ছবি

গোলামীর অভ্যাস একবার হলে আর যায়না। বৃটিশরা শিখিয়ে গেছে, শিকল একবার পড়িয়ে গেছে, সে শিকল তো স্বজাতির রাজারা আরো বেশী শক্ত করে বেঁধেই যাচ্ছে দিনকে দিন! রাজা যেই হোক না কেন!

আমাদের মতি হবে না সহজে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

স্যালুট বন্ধু স্যালুট

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এনজিও ওয়ালাদের মশকরাটা দেখেন, তারা এতদিন বলতো তারা রাজনীতি করে না এবং বোঝেও না। তাহলে এখন কেন ভাই আপনারা রাজনীতির দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। রাজনৈতিক মতামত দিচ্ছেন। এটাও কি রাজনীতি নয়?
জাতীয় উন্নতি, দারিদ্র্যমোচন, নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক শাসন (তারা বলে সুশাসন) ইত্যাদি কেন্দ্রিয় রাজনৈতিক প্রসঙ্গকে রাজনীতি বহির্ভূত কর্তৃপক্ষ ও বিষয়ের অধীনস্ত করেছে তারা। এগুলো এখন বিদেশিরা দেখবে, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও মার্কিন-ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত দেখবে। আমাদের পাতে পড়বে ভেরেন্ডা ভাজা। আর আমরা মধ্যবিত্তরা ভাবছি, এনজিওরা তো দরিদ্রকে উদ্ধার করছে, সিভিল সোসাইটি তো রাজনীতির বিকল্প দিচ্ছে অতএব আমাদের বিকল্প হলো যে কোনো ভাবে এদের সঙ্গে থেকে একটু সুখের মুখ দেখা। সেই সুখের মুখ এখন দেখা দেবে ধীরে ধীরে!!!


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দুর্দান্ত এর ছবি

ফারুক ভাই, অনেক অনুপ্ররনা পেলাম এই লেখায়। সুখের কথা যে আপনি ভাল খারাপের ভারসাম্য দেখতে চাইছেন, তবে অনুযোগের সাথে সাথে দুই একটা সুরাহার উপায়ও সামনে আনুন।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফ - লেখাটা সত্যিই চমৎকার ! কথাগুলো ঠিক, সেটা অবশ্যই মানি। কিন্তু দূর্দান্তের সাথে একমত - অতঃ কিম ?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কথা কী, আমাদের দেশে এক হাজি সাহেবের গল্প প্রচলিত। ব্যাপার হচ্ছে হাজি সাহেব খুব একটা মুখ খোলেন না, কারণ কথা বললেই বলবে যে, হাজি সাহেবের মুখ খারাপ।
সেইমত, আমি যা বলতে চাই তা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ অবলম্বনে রচিত এবং জীবিত ও মৃতদের সঙ্গে তার বিবাদ অনিবার্য। সমাধান পুরো জানা আছে বললে বেশি বলা হবে, তবে রবীন্দ্রনাথের মতো করে বলতে পারি, 'পথ পাই নাই কিন্তু আর পথ হারানোর ভয় আর নাই।' কথা দিচ্ছি, পরের লেখাগুলোয় সেদিকটা ছুঁয়ে যাব।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

শাহীন হাসান এর ছবি

দাস্য মনোবৃত্তি কয় প্রজন্ম গেলে পরে সারবে?
.......
আমাদের মতি হোক।
খুব ভালো-লাগলো আপনার লেখাটি ...।
ধন্যবাদ!

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনার 'মুখ খোলা' কিন্তু justly appreciated হাসি কিন্তু আমি নিজেই বুঝি না এগুলো থেকে বেরুবার 'পথ' কি হতে পারে - সেজন্যই জিজ্ঞেস করা।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমি মোটামুটি বিরাট এক মন্তব্য লিখে একটু উঠেছিলাম। এসে দেখি পিসি অফ এবং কিছুই সেভ করা নাই। যাই হোক, আজ থাক। আমার একটা লম্বা-চওড়া বক্তব্য আছে। পরের বার দেখা যাক।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হা হা হা হা...
RAB এর হাতে লাল ঝাণ্ডা ধরায়া দিলেন শেষতক?
আমি এই সিবিলদের নাজেলকৃত ওহি পাঠ করি পত্রিকার পাতায় আর ভাবি আমাদের রাজনীতিকরা সেই তুল্যে কি নিষ্পাপ...
আর আমরা? জরিমানা দেওয়া মাইনের মতো আর কি...

ভালো লাগলো... গরমও লাগলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আজতাল তারা ঐ ঝাণ্ডা দেখালে থেমে যেতে হয়। বাংলাদেশও ঐ হল্ট শুনে থেমে আছে। এমনিতেই গতি নাই, তার ওপর এহেন দুর্গতি! ধন্যবাদ।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার বক্তব্য।
ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। আমাদের দেশে কীভাবে সামন্তবাদের জন্ম হয় প্রথমে? ঠিক সেই কারণেই আজ কর্পোরেটতন্ত্রের উদ্ভব। যে যাবে লঙ্কায় সেই হবে রাবন। এ আর নতুন কী। কাড়ি কাড়ি টাকার যুগ এখন। আগে কখনও এত টাকা দেখা যায়নি। এনজিওরা রাজনীতি বোঝেনা কি না তা জানিনা তবে তারা জানে কীভাবে রাজনীতিকে ব্যবহার করে নিজের ফায়দা হাসিল করা যায়। আর এখন যখন ময়দান খালি তখন নিজেরাই নানারূপে এসে নিজেদের রাস্তার বাধা দূর করতে তৎপর। এনজিওদের ছিটেফোটা কর্মকাণ্ডে আমরা সবাই উৎফুল্ল। কিন্তু তুলনা করলে দেখা যাবে তারা পরের উপকার যেটুকু করেছে সেটুকু করেছে নিজের জন্য। গরীব মানুষের হাড্ডিসার ছবি দেখিয়ে তারা নিজের পকেট ভরেছে। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যুবকদের ছবি তুলে, ভিডিও করে নিয়ে গিয়ে দাতাদের দেখিয়ে বলেছে এইসব এতিমদের আমরা বড় করেছি, কাজ দিয়েছি!! সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে তারা নিজের ঝোলা ভরেছে। বিনিময়ে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে মাইক্রোক্রেডিটের বোঝা। কাবুলিওয়ালা ব্যবসায় মানুষের উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন করে সুদাসল আদায় করে নাম কামিয়েছে দেশে বিদেশে। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা তো তার কোন প্রতিবাদ কখনো করেনি। তারা হয় নাদান না হয় তাদের ভাগিদার। যুগে যুগে মানুষের রক্তে, ঘামে তৈরি যে সভ্যতা তার সুবিধাভোগী আমরা। আজকে সুন্দর সুন্দর বাণী দেয়া ড. আকবর আলী খানকে যদি বলি স্যার আপনার আলিশান বাড়ি ছেড়ে সাধারণ মানুষের ঝুপড়ি ঘরে থাকতে পারবেন? তিনি পারবেন না। এতবড় মানুষ তাকে এই কথা বলাও ঠিক হবে না। কী বলেন? বড় বড় চেয়ারে বসে বড় বড় মানুষকে ধমকানো আর সাধারণ মানুষের বেদনা বোঝা এক কথা না ভাই। আকবর আলী খান আর গোর্কি এক জিনিস না। টেকনোক্র্যাট, সেনাবাহিনী, রাজনীতিবিদ, এনজিও-ওয়ালা সবার স্বার্থ এক। কৃষকের, মজুরের স্বার্থ শুধু বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ভাতের সংগ্রাম।

জিজ্ঞাসু

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ধন্যবাদ জিজ্ঞাসু।
এনজিও প্রতিষ্ঠান কিংবা সিভিল সোসাইটি নামক বিকল্প এলিট গোষ্ঠীরা কেবল চুরি আর শোষণের নিয়ত নিয়ে নেমেছে তা নয়। সকল কাজের মতোই এদের কাজেরও ভাল মন্দ আছে। কিন্তু কেন এদের পত্তন সেটার দিকে মন দিতে চাই।
এক. গোড়ায় তৃতীয় বিশ্বে বিপ্লব ঠেকানো ও দারিদ্র্য যাতে বিষ্ফোরিত না হয়ে ধুকে ধুকে চলে, সেরকম বন্দোবস্তই এদের উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু নব্বই দশকের শেষে এ ওয়াশিংটন কনসেনসাস নামক বৈঠকের পর এরা এখন আগের কাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিকল্প রাষ্ট্র হয়ে ওঠা এবং যে বিকল্প রাষ্ট্র হবে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের অরগানিক পার্ট, তারই বাহন। বড় পঁজি একত্রে সরকারকে ধার দিলে যত না মুনাফা ও নিশ্চয়তা তার থেকে সেটাকে কণা কণা করে গরিবদের দিলে বেশি লাভ ও বেশি নিশ্চয়তা, ইউনুস তা প্রমাণ করেছে। কৃষি ও গ্রামকে পুঁজিবাদের ও বাজারের মধ্যে আনার ক্ষেত্রে এদের পদ্ধতি সরকারি পদ্ধতির তুলনায় মোক্ষম। পাশাপাশি পণ্যের বাজার বিস্তৃত হতে হলে মানুষের হাতে কিছু কাঁচা টাকা থাকা চাই। এরা সেটা যোগান দিয়ে একদিকে ঋণের সুদ অন্যেদেকে পণ্যের মুনাফা দুটিই নিশ্চিত করে। সুতরাং এরা বিশ্ব পুঁজিবাদের কার্যকর অঙ্গ।
দুই. এনজিও কার্যক্রমের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত শিক্ষিত তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিলাষী শিক্ষক, সুবিদাবাদী গবেষক ইত্যাদি প্রকৃতির ইন্টেলেজেনশিয়াকে খাইয়ে-পরিয়ে বিদেশ পাঠেয়ে বশে রাখা গেলে এদের পক্ষে সামাজিক অসন্তোষ কিংবা বিপ্লবী কার্যক্রমে যোগ দেয়া কঠিন করে তোলা।
তিন. রাষ্ট্র,রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্তা ও সেবাকে ধীরে ধীরে অরাজনৈতিক করে তোলা এবং এসবে কর্পোরেট ও আন্তর্জাতিক অর্থকরি সংস্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসা।
চার. শাসক শ্রেণীর অযোগ্যতা কিংবা বেয়াড়াপনার ব্যালান্স হিসাবে রাজনৈতিক এলিটের জায়গায় সিভিল সোসাইটিকে বসানো। যারা সমাজকে রিপ্লেস করবে এবং দমিয়ে রাখবে মতাদর্শিক আধিপত্যের জালে।
চার. রাষ্ট্রীয় সংগঠন দিয়ে অনেক কাজ করানো সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর হওয়ায় বিকল্প সাংগাঠনিক কাঠামো তৈরি করা, যা গতিশীল, জবাবদিহিমুক্ত, এবং আন্তর্জাতিক।
পাঁচ. এনজিও হচ্ছে মাঠপর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক দল ও নেটওয়ার্ক। যেখানেই সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয় সেখানেই তারা গিয়ে হাজির হয়; তা সে ইরাক আ আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ হোক।
আরো কথা বলা যায়। তার আগে এটা বলা দরকার যে, এর বাইরেও কিছু নিরীহ গোছের এনজিও আছে, যারা গণবিরোধী নয়। আবার ভারত বা ল্যাটিন আমেরিকায় স্থানীয় অর্থায়নে যারা কাজ করে তারা অনেক ক্ষেত্রে ওপরের বৈশিষ্ঠ্যের বাইরে অবস্তান করেই কাজ করে। এনজিও নিয়ে আনু মুহাম্মদের 'বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভবনা ও এনজিও মডেল নামক গবেষণা পুস্তকটিকে আমার নির্মোহ মনে হয়। এছাড়া গ্রামীণ নিয়ে আমিনুর রহমানের বই কিংবা সারাহ জার্দিংয়ের মাইক্রোক্রেডিট গবেষণাটি দেখতে পারেন।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- চরম আলাপন, গরম তো বটেই।
সামনে মূলাটা দেখাইয়া পিছনে হোগা মেরে যাচ্ছে অনবরত। এই হোগামারা খাওয়া আসলে অভ্যাস। যুগ যুগান্তরের অভ্যাস এতো সহজে বদলানোর না।

আপনার মতো এরকম যতোই চরম আর গরম ভাবনা সামনে আসুক না ক্যান, আ চৌধূরী কিংবা বিউটেনিস আর হালের নুবেল বগলদাবা করা প্রফেসর সাহেবদের মুখের কথায় বাঙালরা পশ্চাৎদেশ উদোম করে দিবেই। এটা খাইছলত, অতো সহজে মতি হবে না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

wasif এর ছবি

তা ঠিক। তবে গরম গরম লেখাটাই পেশা কি-না। তয় একখান কথা বলা দরকার। যাবতীয় অপকর্মকে বৈধ করি কিন্তু আমরাই। জনগণ যায় ঠেকায় পড়ে অথবা যায় কিন্তু মনে মনে মানে না। কিন্তু আমরা তাদের হয় সওয়াল করি। মধ্যবিত্তের সমর্থন ছাড়া কোনো অনাচারই এদেশে ঘটতে পারতো না। এ দুইকে তাই পৃথক রাখতে চাই।

কনফুসিয়াস এর ছবি

চলুক
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

... ‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍শতাব্দীর আন্ধার জ্বালিয়ে বলেন...

দুর্দান্ত এই বাক্যাংশটির জন্য জাঝা

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফ তুমি আমায় দাড় করিয়েছে বিপ্লবের পথে

আমি দাড়িয়ে গেছি এবার বিপ্লবের সামনে আমার ফেরার আর পথ নেই আমিই ছিলাম মির কাশীম -তিতুমির
হাজি শরিয়তুল্লাহ ফকির মজনুর সাথে মমতাজ মহল ঝাসীর রানী আর সিপাহির ১৮৫৭ বিপ্লবে নাম লেখায়নি আমি ফোর্ট উইলিয়াম এশিয়াটিক সোসাইটি তে লিখেছি আমি কারাগারে বসে আমি ছিলাম সকল কৃষক বিদ্রোহে আমিই ইলা মিত্র নাচোলের রানী কমান্ডার মোয়াজ্জেম তোহা সিরাজ তাহের
আমি লোরকা আর্নেস্তা কার্দেনাল পাবলো নেরুদা
আমি চে কাস্ট্র মাও চৌ এন লাই
আমি বিপ্লবি রক্ত দিয়ে লিখি কবিতা আমার ভয় নাই
আমি অচ্ছুত যবন চাড়াল চান্ডাল
আরবে আমায় বলে মিসকিন রাশিয়ায় আমিই ছিলাম লেনিন
পুজির নস্ট সংগমের বেশ্যা আমি নই
পড়াজিত হতে হতে আমি উঠে দাড়িয়েছি
এবার ফিরে যাবো না খালি হাতে
স্তব্ধতা আর সৌন্দর্যের পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই যে কবি
সে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে পারে না ।
আমি কবি আমি মুক্তিযোদ্ধা
কবিতা মানে মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধ মানেই কবিতা ।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার সঙ্কল্প ও আবেগ আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে সঞ্চারিত হোক।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।