ওদিকে বৃষ্টি অঝোর হইতেছে আর কত কী মনে পড়িতেছে রে! না জানি কত-কত শত-শত অন্ধকার শতাব্দী আগে বগুড়াবর্ষে বৃষ্টি ঝরিত। বৃষ্টি ঝরিত দূর দেশে। অকাতরে। আর আমরা কাতর দুই বালক-বালিকা শহর ছাড়িয়া, পুল পারাইয়া করতোয়ার তীরে এক কলাগাছের কাঁপুনীর নীচে নিজেদের ব্রীড়া ভাঙিতাম! নদীর জলে রাঙা ছায়া পড়িত তাহার। হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ ফুটিত রোদেলা গমের মতো। আর সে বলিয়াছিল, 'স্বপ্ন তোমার সত্যি হোক'! হইয়াছিল।
সেই বৃষ্টিসিক্ত কলাপাতার ছাউনিতে সেদিন জাগরণ নিদ্রা হইয়াছিল আর নিদ্রা হইয়াছিল জাগরণ। শ্বাসাঘাতে সেদিন বুঝি বা ঝড় উঠিয়াছিল!
আজো বৃষ্টি হইতেছে সন্ধ্যাদেশে, অন্ধকারে ঐ দূরের বগুড়াবর্ষে। আর তাহার কক্ষপথে আমি নাই, আমার সীমান্ত জুড়িয়া সে নাই। 'হায়! হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ ঝরিত না যদি আমাদের!' ঝরিত না যদি তাহার প্রথম কুসুম....তাহা হইলে পৃথিবীর পথে আমি কীসের লাগিয়া মাথা ঢুঁড়িয়া মরিতাম?
আজ বৃষ্টি আমার পক্ষিণী, বৃষ্টি আমার আদরিনী। ব্যথার রাতে সে আমার শুশ্রুষা করে। হৃদয় খুঁড়িয়া কিছুতেই সে আর বেদনা জাগাইতে দেয় না। আজ বৃষ্টি আমাকে ছলনা শেখায়। আর আমি শিখি আমাকে, আমি ভুলি আমাকে, আমি কাঁদি আমাকে, আমি জাগি আমাতে। আমি ছেড়ে যাই আমাকে...আর চলে যেতে যেতে হঠাত যেমন ভেসে আসে এক আঁজলা গান, তেমনি কোথাও সুর বাজে, বুঝি বা অন্তঃপূরে-রঙ্গপুরে, দূরে দূরে মায়াপৃষ্ঠে,
আজকে রাতে বৃষ্টি হবে
বলে গেছে কান্না বুড়ো
ঘাসের বন ভিজিয়ে দেবে
মরে যাবে পাহাড় চূড়ো।
তবু বৃষ্টি নামে
তবু বৃষ্টি নামে চোখের পাতায়
ভাঙ্গা পাঁচিলে শ্যাওলা জমায়
তবু তুষার ঝরে,
তবু তুষার ঝরে মরুর দেশে
চিঠির পাতায় লেখা মোছে।
মুছুক। মুছে যাক কররেখা, বৃষ্টিচিহ্নিত দ্রাঘিমা- কৈশোরিক আয়তন।
বন্ধুরা সব দূরের দেশে
বনের ভেতর আগুন জ্বালে,
অন্ধরা সব তাঁবুর ভেতর
হাতের পাতায় দুঃখ গোনে।
তবু বৃষ্টি নামে, তবু বৃষ্টি নামে।
আজ বৃষ্টির বদলে ঝরে স্মৃতিকণিকা। করুণার নুড়িপাথর গড়ায় অচিন দেশে। যেখানে আর আমি নাই। যেখানে আর সে নাই। আর সে কোথাও নাই।
দিনমান জলের শরীরে যত জল গড়ায়
আর তাতে যত কথা হয়
আমি জানি তারও থেকে বেশি।
তার ইশারায় অকষ্মাত খুলে গেছে সুরের সিন্দুক
স্বর্গীয় প্রেতের মতো তার মহিম নিঃশ্বাসে
গান ওঠে ঝর্ ঝর্ উপর্ঝরণে।
আজিকা অন্তিম বেলায় জলের উল্লাসে যত জল ঝরে,
তৃণদল জানে সেই আর্দ্র-কম্পনের মানে।
তার আঁচে আমারও শিরা উথলায় সুরবশে
বলো, কেন ঝরি তার নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে।। ১১.৭.১৯৯৯
মন্তব্য
আহা !
যে বৃষ্টি মনের কোন হইতে ভাবের স্রোত এমন করিয়া বাহির করিয়া আনে, এমন বৃষ্টি যেন অযুত বৎসর যাবত ঝরিতে থাকে।
কবিতার ভেতরে কবিতা মনে হইলো।
চমৎকার লাগলো !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অযুত বতসর ঝরুক, আর আমি বেচারা মরুক আরকি! আপনার দিলে আল্লা রহম দেয় নাই?
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আহা ক্ষ্যাপেন ক্যান
বৃষ্টিতে ভাইসা যাওয়ার সুযোগ আল্লা কয়জনরে দেয়, কন?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আচ্ছা শিমুল. সচলায়তনের বরাতে আপনি যে পুরুষ বেশ লইলেন তাহা কি ঠিক হইল? হয় নিজ বদনখানি ভাসান নাহয়, একখানা নারী বেশ ধরেন। আমি সচল মডুদের কাছে আবেদন করিতেছি, তাহারা যাতে অদৃশ্যমান নারীদিগের জন্য বিকল্প বেশ সাব্যস্ত করিয়া দেয়!
পুনশ্চ:
শেষ লেখা ছাড়িয়াছি একদিবস গত হইয়া সারে নাই। আবার শরমিন্দা হইয়া নামিলাম। কী করিব! বাহিরে বৃষ্টি, যাইবার জায়গা বিশেষ নাই। কাজে কাজেই রাস্তায় নামিয়া খামাখা বে-রোমান্টিকমত ভিজিয়া বেড়ালের একশেষ হইয়া তবে আবার ঝাপ খুলিলাম। আগেকার যুগে বৃষ্টিবন্দি হইলে মানুষ চাঙে চড়িয়া মঙ্গলকাব্য করিত। এইকালে মঙ্গল-বিশেষ নাই, আবার কাব্য করিতেও ভয়। তাই চাবিকাষ্ঠ টিপিয়া টিপিয়া নিরানন্দকে খুশি করিতে চাহিতেছি।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
দারুণ লাগলো ফারুক ওয়াসিফ। ভীষণ ভালো লাগলো। পুরোটাই কবিতা মনেহলো।
সুন্দর! সুন্দরম!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
@সৈয়দ সাহেব ও তীরন্দাজ: অপরাধ যা বৃষ্টির আর এক ফোনবাহিত প্ররোচনার, আমি উত্তরবঙ্গ হইতে আগত এক বেচারাম মাত্র!
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
এইতো দেশের অবস্থা!
ঈশ্বরাসিদ্ধে:
অজ্ঞাতবাস
জ্বি, হাতটা আমি গোলাপজলেই ধুয়ে থাকি, আঙ্গুরি...
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নাহ্... হয় আপনের লেখা পড়া বন্ধ কইরা দিতে হইবো... আর নয়তো আপনের কাছে লেখার পাঠশীক্ষা নিতে আসতে হবে...
বৃষ্টিতে যা মনে কারায়াছিলো... আপনি তাহাতে আগুন ধরায়া দিলেন... আহা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ওরে বন্ধে, 'এখনই অন্ধ, বন্ধ করো না পাখা!'
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আপনার বিগত লেখাখানায় মন্তব্য করিয়াছি এক প্রহরও হয় পার হয় নাই, আবার এই লেখায় মন্তব্য করতে উদ্যত হইয়াছি। কী করিব গত চারি দিবস ধরিয়া একখানা পেপার পাঠ করিব এই ভাবিয়া অস্থির হইতেছি, আর সেই অস্থিরতা কাটাইবার নিমিত্তে ঘুরিয়া ফিরিয়া সচলয়াতনে আগমন করিতেছি আর লেখা পড়িতেছি।
তবুও পড়ুন, আরো আরো পড়ুন; যতক্ষণ না সব ভুলিয়া যান। তবে যে শুদ্ধচিত্তে মঞ্চে দাঁড়াইয়া মাসখানেক আগের কোনো দেশি সান্ধ্য পেপার পড়িবার যোগ্য হইবেন।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
দারুণ লেখা
ধন্যবাদ শিমুল ও কনফুসিয়াস
।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
পুরোটাই কবিতা , এ ব্যাপারে কাব্যবোদ্ধা বা পন্ডিতদের সাথে তর্কে প্রস্তত ।
আচ্ছা , বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আপনি যে কি সব কান্ড করতেন তার হদিস কই ?
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
'আর যাহা তাহা বলিবার নয়,
সকলই জানেন বিধি...'
কিংবা এরকমই কিছু একটা ছিল রবি ঠাকুরের বিদায় অভিশাপে। আপাতত বাঁচিতে ঠাকুরের শরণ লইলাম। আপনার জিজ্ঞাসা তিনি মারফত আসিলে উত্তর দিবার কোশেশ করিব জনাব!
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
"মনে পরে রুবি রায়
কবিতায় তোমাকে"
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
তাই নাকি?
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
দেরিতে হলেও পরলাম। খুব ভালো লাগলো। চমতকার আপনার লেখার হাত। নেক্সট বৃষ্টি কবে হবে? একটু ভিজতে হবে।
কীর্তিনাশা
ধন্যবাদ ভাই। ভিজলাম তো ভিজলাম, লিখলামও হাবিজাবি কিন্তু এখন জ্বর আসা থামাই ক্যামনে! সে আসে নাই ভাই, জ্বর আর মাথা-ব্যথা আসিয়াছে। তারপরও ভিজবেন?
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ভালো লাগল এই নব্য বর্ষামঙ্গল। ভিন্ন শৈলীতে লেখা।
ধন্যবাদ কবি।
মাসুদ খান
মাসুদ ভাই আমার বিচারে আপনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কাব্যচৈতন্যের প্রতিনিধি, ফলত আপনাকে আমি ভালবাসি এবং স্বতত: চাহি; কিন্তু আপনি আপুনি থাকিবেন কিনা তাহা লইয়া ইদানিং সন্দেহ তৈয়ার হইয়াছে।
সুখের বিষয় যে বৃষ্টি আসিয়াছিল, তাহা না হইলে এইমতো অলংকৃত রচনা কোথায় পাইতাম!
আবারও বৃষ্টি আসুক, আবারো রচিত হউক।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
নতুন মন্তব্য করুন