আমাদের নগরের তিন খলনাগর

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৭/২০০৮ - ৬:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গল্পটি ইংরেজ আমলের। এক সম্ভ্রান্ত বাবু কী এক দরকারে চাকরকে ডাকলে জবাব আসে, 'হুজুর, আমি আহার করছি'। বাবুর মেজাজ চড়াং করে চড়ে, 'আহার করছিস! তুই কি লাটসাহেব নাকি! মহারাণী ভিক্টোরিয়া করেন ভোজন; আহার করেন লাটসাহেব, আর আমি খাই তুই গিলিস।' কর্ম একই কিন্তু কর্তা ভেদে তার ইজ্জত আলাদা। তার প্রমাণ ভাষায়-বিভূতিতে। উপনিষদে আছে শব্দই ব্রহ্ম, শব্দই ঈশ্বর। ঈশ্বরের আরেক অর্থ কিন্তু সত্য। সমাজের গভীর ভেদ-বিভাজনের সত্য সংবাদটি শব্দই ফাঁস করে। ভোজন-আহার-খাওয়া আর গেলা শব্দ চিরলে তাই সামাজিক সত্যেরই শাঁস মেলে। বলাবাহুল্য এই সত্য উচ্চবর্গের। সত্যের শাঁসও তাই তার ভোগেই লাগে।
বাংলাভাষায় এরকম কিছু শব্দের চল আছে। যেমন চাষাড়ে, চোয়াড়ে, গাঁইয়া, বেজাত এবং হালে এসেছে 'মফিজ'। আমাদের ভদ্রলোকি বাবু কালচার নিজেকে সনাক্ত করতে শিখেছে চাষার বিপরীতে। ফুট-গজ মেপে মেপে চাষার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে সে তার বাবুয়ানি ফুটানি ফোটায়। চাষির বিরুদ্ধেই তো আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র। উপনিবেশের জোয়াল কাঁধে পড়েছে এমন সব সমাজের দেশি সায়েবরা এ ধারাতেই চলে আসছেন। চোয়াড়ে এসেছে 'চুয়াড়' থেকে। চুয়াড় এক অরণ্যচারী স্বাধীনচেতা জনজাতি। এদের বশে আনতে ইংরেজ শাসকদের অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু কলকাতার ভদ্রসমাজ 'চোয়াড়ে' শব্দটাকে বেয়াড়াপনা ও অসভ্যতার সমার্থক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। গ্রামবাসীরা নিজেদের যতই গাঁয়ের লোক বলে আনন্দ পাক, শহুরেদের কাছে 'গাঁইয়া' মানে বোকার হদ্দ, অভদ্র, আদবলেহাজ বা এটিকেট না জানা মন্দ চরিত্র। জগতে সবারই জাত আছে, নিজ জাতির মধ্যে অপর জাতির দাসেরাই তাদের দাসতরদের বেজাত বলে মেকি প্রভুত্বের মজা পায়। আবার বড় ও ক্ষমতাবান জাতিও ছোট ও দূর্বল জাতিকে বেজাত ডেকে হেয় করে। ইংরেজরাও স্বাধীনচেতা সাঁওতাল, মুন্ডা প্রভৃত জনজাতিকে 'ক্রিমিনাল ট্রাইব' বলে আইনের নথিভুক্ত করেছিল। সে আইন আজ নাই, কিন্তু আজো অধিকার দাবি করা চাকমা-মার্মাদের সেই চোখেই দেখা হয়, যে চোখ প্রভুর মসনদ থেকে তাকাতে অভ্যস্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার ও বাবুসায়েবদের আচরণই আমার সাক্ষ্য।
ছোটো দেশের বড় শহর ঢাকায়ও প্রশাসনে, মিডিয়ায় ও সুশীল সমাজে নিম্নবর্গের লোকদের এরকম অপরাধী স্বভাবের বলে ভাবার রেওয়াজ দাঁড়িয়েছে। এরা হচ্ছে নাগরিক শান্তির মধ্যে মশা-মাছি। শ্রমিক, বস্তিবাসী এবং রিকশাওয়ালা হলো নগরের সেই মন্দচরিত্র_ নাগরিক জীবনে কালো দাগ। সেই দাগে কী আঁকা আছে তা একটু দেখা যাক।

[b]শ্রমিক: গত কয়েক বছরে আলোচিত ঘটনাগুলির মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ-আন্দোলনের ঠাঁই হয়েছে। অধিপতি মিডিয়ার বড় অংশের জবানে তা 'নৈরাজ্য, ভাংচুর ও লুট' বলে ধরা পড়ে। এটা পুলিশের ভাষা, সরকারি প্রেসনোটের বিবরণ এবং তাদের শ্রমিকবিদ্বেষের সাক্ষাত প্রমাণ। কিন্তু ভদ্রসমাজেরও যখন একই রায় তখন বলতে হয়, তাদের দৃষ্টি ও বুদ্ধি দারোগার দৃষ্টি ও বুদ্ধির অতিরিক্ত নয়। একেই বলা যায় নিম্নবর্গকে দেখার উচ্চবর্গীয় দৃষ্টি। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালক হয়েও শ্রমিক হয়ে ওঠে এক নেতিবাচক চরিত্র। দেশগঠন ও রাষ্ট্রনির্মাণে তাদের আত্মদান কারো থেকে কম না। তবু তাদের ঠাঁই মন্দের কোটায়। তাদের জন্যই নাকি 'কারখানা বন্ধ হয়', 'নৈরাজ্য হয়', তারা 'কাজে ফাঁকি দেয়', 'মালিকের কষ্ট' তারা মোটেই বুঝতে চায় না ইত্যাদি। আমাদের বিত্তবান ও এলিট নাগরিকরা ঘোঁট পাকিয়ে যা-ই ঘটান না কেন, সমাজশুদ্ধ তাঁরা সুশীল আর শ্রমিকরা চির-দুঃশীল। অধিপতিদের ভাষায় 'শ্রমিকের বিক্ষোভে কারখানা উঠে যাবে' এমত ভাবের প্রচার মধ্যবিত্ত সমাজেও রমরমা বাজার পায়।
ক্ষমতাবান শ্রেণী সর্বদা প্রতিপক্ষ বিষয়ে হুঁশিয়ার। 'শ্রমিক' বাংলাদেশের উঠতি বড়লোকের এরকমই এক প্রতিপক্ষ। শ্রমিক না হলে তাদের চলে না কিন্তু শ্রমিকতা যেন অভিশাপ। যে সংস্কৃতিতে গায়ে খাটা অপমানকর আর গায়ে আরাম লাগানো রীতিমতো গৌরবের, সেই সমাজে শ্রমিক মেন্দাগোছের হলেও কোনো সুবচন পাবে না।

বস্তিবাসী: গুলশান-বনানী যদি শাদ্দাদের বেহেশত হয় তবে বস্তি হলো ফেরাউনের বন্দিশালা। বস্তি ইহকালের দোজখ। অভিধানে, বস্তির অর্থ হতদরিদ্রদের নোংরা আবাসস্থল। আর আমাদের ভাষায়: যার আহার নিদ্রা মৈথুন ও মলমুত্রত্যাগ একই স্থানে সে-ই বস্তিবাসী। যে কর্মস্থলে দাস, বাজারে ভিখিরি আর ঘরের মানুষের কাছে হিটলার, সেই বস্তিবাসী। যে গ্রামে পলাতক, শহরে তাড়া খাওয়া এবং রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় অদৃশ্য, সেই বস্তিবাসী। সুশীল নাগরিক জীবনে বস্তি বেমানান। বস্তি সভ্যতার কলঙ্ক। গডফাদারদের অস্ত্র-মাদক, আর অপরাধের বোঝা যারা বয় তারাই বস্তিবাসী। বস্তি যেন পিঁপড়ার বাসা। যেখানে গিজগিজ করে মানুষ, নেংটা-শীর্ণ বাচ্চার দল সেখানে জন্মেই শুয়োরের পালের মতো ময়লা-কাদায় গড়াগড়ি খেতে খেতে শৈশব টপকে বড় হয়ে যায়। যেখানে ঘর-দুয়ার-অন্দর বলে কিছু নাই। মুফতে সন্ত্রাস চালানো কিংবা জনসভা ভরানোর ব্যবসায় বালবাচ্চাসহ বস্তিবাসী ভাড়া করা যায়। মতাবানদের আন্দোলন-সংগ্রামে এরাই রাজপথ গরম রাখে।
ঢাকার জনসংখ্যার ৪০ ভাগই বস্তিবাসী। এরাই নগরকর্তাদের শখের শিকারাভিযানে বারবার উচ্ছেদ হয়। তারা পুড়ে মরে, উচ্ছেদে মরে, মরে পাহাড় ধসে। তারাই এ শহরকে দিনরাত সচল রাখে, তাদের লুণ্ঠিত ধনেই ঢাকার তিলোত্তমা ইমেজ শানদার হয়। তাদের ছাড়া বাবুদের সংসার, চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য অচল। এরা না থাকলে কাজের বুয়া নামের গৃহদাসত্ব চলবে কীভাবে? অল্প বেতনের শ্রমিক হবে কে, কে করবে দিনমজুরি, ক্ষুদ্রঋণের সুদ গুনবে কে? নানান বিদেশি প্রকল্পের তহবিল কোন পথে খরচ হবে? কে চালাবে রিকশা, পরিষ্কার করবে সোয়া এক কোটি লোকের প্রতিদিনের আবর্জনা? অপরের মল-মুত্র তারা পরিষ্কার করলেও তাদের বাসস্থান ভাগাড়ের সমান। উচ্ছেদ হলে মাথা-গোঁজার ঠাঁই দূরস্থান তাদের হাগা-মোতার বন্দোবস্তও এ শহরে নাই। কিছুই নাই, তারপরও বস্তির ৮-১০ ফুটের বেড়ার ঘরে একটা পরিবার একটা সংসার গড়ে তোলে, বস্তির জীবন সমাজের চেহারা পায়। আর সমাজ হলেই সেখানে সম্পর্ক হয়, মানুষে মানুষে ভাব-ভালোবাসা হয়, বিবাদ-যন্ত্রণার পর উতসবও হয়। এর সবই তো মানুষেরই মতো, না-কি? এই বস্তিবাসীদের ৯৪ ভাগই ছিল গ্রামের বাসিন্দা। মতাবানদের নানান কর্মকাণ্ডে আশ্রয়, জমি ও সমাজ-সংস্কৃতি হারিয়ে তবে তারা বস্তিবাসী হয়েছে। জমি-পেশা, ঐতিহ্য, রুচি, সম্পর্ক সব হারালে মানুষ আর মানুষ থাকে নাকি? বোধহীন প্রাণী হয়ে যায়। বন্য প্রাণী তাড়ানোর মতো করে এইসব প্রাণীকে তেমনি তাড়িয়ে শহরে আনা হয়। এখানে এসে আবার তারা প্রাণী থেকে মানুষ হওয়ার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। সবাই বলে, তার থেকে তুমি অ-মানুষই থাক। অল্প খাও বেশি কাজ করো। তোমার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা ও নিরাপত্তার দরকার নাই, ওসব সুশীল ভদ্রলোকের ব্যাপার। পশুদের দেখে শেখ। পশুর কী এতসব লাগে?
তারা পারে না শিখতে। বরং মানুষের উপযুক্ত বাসস্থান, কাজ ও সংসার খোঁজে এবং রাজধানীর কোনাকাঞ্চিতে অতি সামান্য সাশ্রয় দিয়ে আরেকটি সমাজ গড়ে তেলে। আগে নদী ভাঙা, জমিহারা মানুষ নতুন সমাজ গড়ে তুলত চরের বালিতে, এখন তোলে ঢাকার পাষাণ পরিবেশে। এই উদ্যম, এই জীবনবাদিতার কিছুই উচ্ছেদকারী বুলডোজারের মনে চিড় ধরায় না। বুলডোজারের তো মন নাই, তার লক্ষ্য একটাই 'মিশন মাস্ট বি সাকসেসফুল'। কথায় আছে, মরারে মারো ক্যা?'উত্তর আসে, 'লড়ে-চড়ে ক্যা'। এরা নড়ে-চড়েও মরতে পারবে না। এদের জন্য একটাই সুযোগ, ক্ষুধা ভুলে মুখের হাঁ একদম সেঁটে চোখ-কান-নাক বন্ধ করে মনকে ঠেসে মল-মূত্র ত্যাগের রাস্তায় ছিপি এঁটে শ্রেফ গায়েব হয়ে যাওয়া, নাই হয়ে যাওয়া। তাতেও রক্ষা নাই, টেলিভিশনের নাটকে, ভদ্রলোকদের পারিবারিক ঝগড়ায় নায়িকা এক পর্যায়ে বলে উঠবে, 'আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছো কেন, আমি কি বস্তির মেয়ে'? যেন বস্তির মেয়েদের সঙ্গে সব করা যায় বলে এসব নাটকের প্রযোজক-পরিচালকদের ধারণা!

রিকশাওয়ালা : আচার-আচরণে রিকশাওয়ালা এক সার্বণিক হতাশ, অবসন্ন ও মারখাওয়া চরিত্র। আরোহীর মার, ট্র্যাফিকের মার, পুলিশের মার, বাড়িওয়ালা ও মহাজনের মার, গাড়ি-ট্রাকের মার, ছিনতাইকারীর মার, উন্নয়নের বাহারের চাহিদা মাফিক রিকশাউচ্ছেদের মার, মুক্তবাজারি দ্রব্যমূল্যের মারসহ দুনিয়ার যাবতীয় মার যাকে প্রতিনিয়ত সইতে হয়, সেই-ই রিকশাওয়ালা। তারা পতিতদের মধ্যে পতিত, দূর্বলদের মধ্যে দূর্বল। বস্তিউচ্ছেদের বিরুদ্ধেও কথা বলার লোক থাকে, আন্দোলন হয়। কিন্তু রিকশাউচ্ছেদ আর পথে-ঘাটে রিকশাচালকদের পীড়ন করায় কোনো দোষ নাই। বড় লোকেরা রিকশা চড়েন না। চড়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। এ দুয়ের খিটমিট ও বিবাদ পথচলতি দৃশ্য। রিকশাওয়ালা আর তার আরোহীরা যেন পরস্পরের শ্রেণীশত্রু। রিকশাচালক মনে করে আরোহী তাকে ঠকায় আর আরোহী মনে করে রিকশাওয়ালা প্রতারক। কিন্তু সরল প্রশ্ন; দূর্বলের দিক থেকে সবলকে ঠকানোর সুযোগ আসলে কতটা?
নীচে পিচের ভাপ আর ওপরের খরতাপের মাঝখানে যে লোকটি পাছা নাচিয়ে নাচিয়ে গরুর ভঙ্গিমায় মানুষ টানে, সে কি আর মানুষ? যে মানুষ অপর মানুষকে বহন করে সে আসলে মানুষ নয়_ পশু। এই কাজ আগে গাধায় করতো এখন সে করে। হয়তো সে উত্তরবঙ্গের মঙ্গার শিকার, নতুবা নদীভাঙনে উচ্ছেদ হওয়া কৃষক, নতুবা বন্ধ কারখানার বেকার শ্রমিক। আমরা তার নাম দিয়েছি 'মফিজ'। এই নাম আমরাই দিই আবার নাটক-বিজ্ঞাপনে আমরাই সেই নামের টিটকারি বেচে নির্মল আনন্দ পাই।

সে যখন গ্রামের পরিবার-পরিজনের মায়া ছেড়ে ঘর থেকে বেরোয় তখনও সে কিন্তু মানুষ। তখনও সে নাম হারায় না। কিন্তু এ মহানগরে তার কমন নাম ‘মফিজ’Ñযেমন চাকরের নাম ‘আব্দুল’ আর চাকরানীর নাম ‘রহিমার মা’। তাকে নিয়ে বিজ্ঞাপনও হয় যে, তার মুখে দুর্গন্ধ। তার প্রতি ভদ্রলোকের আচরণের সহিংসতা জায়েজ, কিন্তু সে প্রতিবাদ করলেই সেটা হয়ে যায় বেয়াদবি, ঔদ্ধত্য। তার পিছনে যারা সওয়ার হয়ে ১০/২০ টাকার বিনিময়ে কিছুক্ষণের জন্য দাসমালিক হওয়া যায়। ঢাকা শহরে পার্টটাইম দাসত্ব খরিদ করার এই এক দারুণ মওকা। দাসের যেমন পরিবার থাকে না, তেমনি বেশিরভাগ রিকশাচালকেরই বউ রাখার উপায় নাই। হয় তাকে গ্রামে রেখে এসেছে অথবা সে-ই তাকে তাড়িয়েছে অথবা বউ-ই গেছে পালিয়ে, অথবা তাকে ভোগ করে অন্য কেউ। রিকশাওয়ালা আমাদের সমাজের সর্বহারা, যে হারিয়েছে ঘর, সংসার, পরিবার, আহার ও যৌনতা। এই সর্বহারা তাই সার্বক্ষণিক শ্রেণীসংগ্রামীর চাহনি নিয়ে সওয়ারিদের দেখে আর কদাচিত ফোঁসও করে ওঠে। কিন্তু আমরা চাই সেই সাপ, যে ফোঁসফাস করে না, যে সাপের দাঁত নাই নখ নাই, রাগ নাই।

এরই মধ্যে এদের এড়িয়েই দেশ অনেক এগিয়েছে। নগরের সড়ক-দেয়াল আর আকাশের দৃশ্যপটে উতসব আর কামের উস্কানি। পোশাকে-চলায়-বলায়-চেতনায় আর বিলবোর্ডে বিলবোর্ডে চকচকে যৌনতার ইশারা। আর তার তলায় ফুটপাতে নিজের মলের পাশে মূত্রের সুবাসে বিরাজ করে ঐ তিন খলনায়ক: শ্রমিক-বস্তিবাসী-রিক্সাওয়ালা। জাতি-ধর্ম-সংস্কৃতি তাদের নেয় না। তারা সভ্যতার উল্টাপিঠ। আমরা শিখেছি, সম্পদ না থাকলে সংস্কৃতিও থাকে না। যেহেতু তারা সম্পদহারা সেহেতু তারা সংষ্কৃতিশূণ্য; অতএব নেতিবাচক গুণাবলীর গুদাম। অনেকটা ফটোর নেগেটিভের মতো: আলোর জায়গায় অন্ধকার আর অন্ধকারের জায়গায় আলো। এই নেগেটিভ আমরাই বানিয়েছি আর আমাদের মর্জিমাফিক তাকে চালাচ্ছি 'ছবি' বলে। যার ছবি সে যদি কখনো তাকে পজেটিভ করে প্রকাশ করে, তখন কি আমাদের ছবিও নেগেটিভ হয়ে আমাদেরই দাঁতকেলিয়ে ভয় দেখাবে না? সেই ভয় কি আমরা পাই? পাওয়া উচিত, কারণ আমরা সম্ভ্রান্ত। অভিধানে এর অর্থ, যার ভয় আছে এবং যে দ্রুত লঘু পায়ে ভয় থেকে পালায়।
এরকমই এক মল-মূত্র-পকেটমার-আর সময়ের তাড়ায় পালাতে পালাতে থমকে দাঁড়াই কাওরান বাজারের ফুটপাথে। ঐ মল-মূত্র-ভীড়তাড়িত ফুটপাথে রচিত হতে দেখি আরেক 'প্রাগৈতিহাসিক' কাহিনী: শুয়ে থাকা পাগলটার জটাধারী মাথা কোলে নিয়ে মিটিমিটি হাসছে পাগলিটা। পাগলটা পাগলির চুল মুখে মেখে আঙ্গুলে আঙ্গুল সেলাই করছে; যেন প্রেম যেন হঠাত রোমান্স। অবাকই লাগে, সামাজিক অঞ্চলগুলোকে রতিচিহ্নময় (পর্নোফিকেশন অব সোশ্যাল স্পেস) করে তোলার এ যুগে ওরা দেখি প্রেমের কুসুম ফোটায়!!!


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

লেখা বরাবরের মতোই ধারালো আর লক্ষ্যভেদী। যদিও সত্যি, যদিও জানাই সব, তবুও পড়ে হতাশ লাগে। পর্নোফিকেশন অফ সোশ্যাল স্পেস বলবো কিনা জানি না, তবে কমপ্লিট কমার্শিয়ালাইযেশন অফ সোশ্যাল অরগ্যানাইযেশন দেখতে দেখতে চোখ, মন, মগজ সবই ক্লান্ত এখন!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ফারুক ভাই, বিজ্ঞাপনের মফিজ চরিত্রটি আমাদের এজেন্সি থেকে বানানো। আমরা বিশ্বাস করি, মফিজ বলে আসলে কেউ নেই। মফিজরা সমাজের সেই শ্রেণীর প্রতিনিধি, যারা অধিপতিদের হাতে প্রতিদিনই বঞ্চিত হয়, বঞ্চনার শিকার হয়। এতো বঞ্চনা-লাঞ্চনার শিকার হয়েও তারা কিছু বলতে পারে না। তাদের মুখে ভাষা ফুটে না। ‌জোরসে বলো'র মাধ্যমে আমরা এই মফিজদের বলার আত্নবিশ্বাস দিতে চেয়েছি। আর এই আত্নবিশ্বাসের অনুষঙ্গ হিসেবেই আমাদের প্রোডাক্ট এসেছে। আসলে বিজ্ঞাপনের কাজটাই মনে হয় এমন। ভোক্তার জীবনধারার সাথে মিলিয়ে দিয়ে পণ্য বেচার সুবিধাটুকু নেয়া। মফিজের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা এটাই চেয়েছি।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আইডিয়াটা দারুণ। কিন্তু দেখলেন তো, আপনার কথাতেই আছে ম্যাজিক টুথ পাউডার ব্যবহারের আগে ওদের মুখ গহবর থাকে দুর্গন্ধময়। তার আগে তারা ভাষাহীন, আত্মবিশ্বাসহীন। এরকম অনেক হীনাবস্থা থাকে ওদের নিত্যসঙ্গী। এই চিত্রটাকেই তো আমি বলতে চাইছি অধিপতি শ্রেণীর বানানো রূপকথা। ওরা সরব হয়ে স্থিতাবস্থা ভাঙ্গে বলেই তো মিডিয়ায় এবং স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা মানুষের চোখে ওরা হয়ে ওঠে খলনায়ক, নগরে অচল খলনাগর।
ম্যাজিক টুথ পাউডারই হোক আর ফেয়ার অ্যান্ড লাভলিই হোক, এগুলো দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যমান মনস্তত্ত্বের অসুন্দর ও নোংরা নামক কুকথার ওপর ভর করে। কালো মানে অসুন্দর আর গরিব হলেই নোংরা। এটা কি মানা সম্ভব? শাদাদের দেশে কি ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি আর শ্রেণীহীন সমাজে কি ম্যাজিক ট্রুথ পাউডার চলবে?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ফারুক ভাই, মুখের দুর্গন্ধ এসব ফাংশনাল কথাবার্তা। তবে ইমোশনাল বেনিফিট হলো এদের আত্নবিশ্বাসটা দেয়া। এটাই আসল।
শাদাদের দেশে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী আর শ্রেণীহীন সমাজে ম্যাজিক টুথ পাউডার চলবে কী'না, এই বিষয়টা মহাকালের হাতেই ছেড়ে দিন। আমার ধারণা, এ রকম সমাজ কাঠামোর দিশা আমরা কোনোকালেই পাবো না।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমার মন্তব্যের প্রধান কথাটা কিন্তু ওইটাই, যে কে কাকে আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে? পুঁজি দিচ্ছে শ্রমিককে আত্মবিশ্বাস, বড়লোক দিচ্ছে গরিবকে, পুরুষ দিচ্ছে নারীকে। এর মধ্যেও যে একধরনের অধিপতিসুলভ ভাব আছে সেদিকে নজর ফেরাতে চাইছিলাম মাত্র।
আমার তো ধারণা ওরা ওদের আত্মবিশ্বাস নিজেদের জীবন ও সেই জীবনের চাওয়া থেকেই পায়। সে যখন আরোহীকে ঠকায় বা প্রতিবাদই করে সেটাও কিন্তু আত্মবিশ্বাসী কাজ।
ওরকম সমাজকাঠামোর দিশা ছাড়াই বর্তমানে আমরা কেন কি করি, তাতে কী ফল হয়, তা বোঝা সম্ভব। তা নইলে তো চিন্তাই বন্ধ করে দিতে হয়। তাই না?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

আলমগীর এর ছবি

পরিস্থিতির পরির্তন হলে আমারাই আগে ঠেকব। লেখা বরাবর।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সে জন্যই তো বলি, যার ঝুঁকি নাই তার গতিও নাই, সে কায়েম হয়ে গেছে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

জানাই তো সব, লেখা তো একধরনের সেল্ফ ডিক্লারেশন_সেভাবে দেখতে পারেন। কমার্শিয়ালাইজেশনের পাশাপাশি এই পর্নোফিকেশন নিয়ে কথা হচ্ছে কোথাও কোথাও। যাহোক, সেটা পাসিং কমেন্ট।

এই কমার্শিয়ালাইজেশন তো আছেই, কিন্তু কেবলমাত্র একরকমের জীবন-যাপনে বাধ্য করা, একটু ভাল থাকার জন্যই আমৃত্যু দৌড়াতে থাকা...এটাই কী জীবন নাকি? পরিচয় হারিয়ে স্মৃতি হারিয়ে স্বপ্ন হারিয়ে কোথায় যাচ্ছি? এইসব ভয় ভাবনা আসে।
যাহোক কেমন আছেন?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

কমার্শিয়ালাইজেশনের পাশাপাশি এই পর্নোফিকেশন নিয়ে কথা হচ্ছে কোথাও কোথাও।

এ ব্যাপারে আরেকটু জানতে আগ্রহী। কোন লিঙ্ক বা রেফারেন্স দিতে পারেন?

ভালোই, তবে ব্যস্ত, অতএব ভালো না ..... হাসি

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

গত সপ্তাহেই পড়েছি, কিন্তু কোথায় যে পড়লাম_ওয়েবে না বইয়ে_তা মনে করতে পারছি না। আমার স্মৃতিশক্তি ভয়ানক খারাপ। ভাব মনে থাকে নাম-ধাম মনে থাকে না।
খুঁজে পেয়ে লিংক পাঠাচ্ছি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনের লেখায় মন্তব্য করতে গিয়া বেহুদা টাইম খরচা হয়... অনেক ভাইব্বাও কিছু পাইলাম না... অপারগতা স্বীকার করিয়া নিলাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আকতার আহমেদ এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে অনেক্ষন তব্দা খায়া বসে থাকি .. কমেন্ট করার ভাষা খুঁইজা পাইনা.. আপনি লেখেন..আমরা পড়ি.. কমেন্ট করতেই হইবো এমনতো না ! লেখায় আপনারে বিপ্লব

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

নজরুল/আখতার আমার মধ্যেও তো এইসব ঘটনা তব্ধায় পড়া অবস্থা তৈরি করে। তারই অংশি খুঁজতে এই লেখা। আপনাদের মনোযোগ পেয়ে তা সার্থক হলো।
...........................................................................................
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নিঝুম এর ছবি

মহারাণী ভিক্টোরিয়া করেন ভোজন; আহার করেন লাটসাহেব, আর আমি খাই তুই গিলিস।'
এইসব শ্রেণী বৈষম্য চলতেই থাকবে । শক্তি স্থান করে নিবে দূর্বলের পেশী জুড়ে ... তা-ই মেনে নিয়েছি ।
---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

নিঝুম কেমন আছেন এখন। অসুখের কী অবস্থা! জানাবেন দয়া করে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নিঝুম এর ছবি

শারীরিক ব্যামো তো রয়েই গেছে , কিন্তু মানসিক শক্তির কাছে কেউ-ই পাত্তা পাচ্ছে না , পাবেও না । চিন্তা করছি অসুখের কথা একদম ভাববো না ।
অফ টপিক...
সেদিন তানিমের সাথে কথা হচ্ছিল , আপনার অনেক গল্প করল । আমি জানতাম না তানিমের সাথে আপনার পরিচয়ের কথা । আমার একমাত্র বন্ধু সে । সবচাইতে কাছের ।
---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

জীবনের আস্বাদন থামাবেন না, তাইলেই আর থেমে থাকবেন না। আমি সব থেমে গেলেও যদি আঙ্গুল নড়ানোর ক্ষমতা থাকে তাহলে সেটা নাড়িয়েই জীবনকে যাপন করতে চাই।
এটা চাওয়া, পারা নয় কিন্তু। তবে পারতে চাই।
তানিমকে আমরা খুবই পছন্দ করি। আমাদের কি দেখা হয়েছিল?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রাফি এর ছবি

সচলের পাঠক প্রায় দুইমাস ধরে।সুতরাং অনেক সচলের ই আগের লেখা পড়া নাই। তবে যে কয়েকজনের পুরনো লেখা বসে বসে পড়ি আপনি তাদের মধ্যে একজন। যে কথাগুলো এলোমেলো ভাবি কিন্তু শব্দে গাথঁতে পারি না সেগুলো যেন আপনার লেখাইয় প্রাণ পায়।
লেখা সম্পর্কে বলার কিছু নেই; বরাবরের মতই চমতকার।
ভালো থাকুন।

--------------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

শুভেচ্ছা নিন রাফি।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আচ্ছা লেখার মাঝে পিসি থেকে ছবি দেয়ার নিয়মটা কেউ বলবেন কী?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ছবি ইনসার্ট করার পরে ছবির লিঙ্কটা জাগামতো কাটপেস্ট করলেই হইবো.....



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

তানবীরা এর ছবি

সত্য ভীষন উলংগ হয়, নিজেকেও আয়নায় দাড় করিয়ে দেয়। পরের দোষ আর কেনই বা দিব? সিষ্টেম এ্যাবিউজ আমরা সচেতনরাই বা কিসে কম করি?

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

মনজুরাউল এর ছবি

মনজুরাউল
দ‌ুর্দান্ত এই লেখাটা 'সমকালে' ছাপা হয়েছিল ।তখন আপনি সমকালে।বাংলাদেশে এখন ভিষণরকম ক্লাসওরিয়েন্টেশন হচ্ছে।এ ধরণের নতুন লেখার অপেক্ষায় রইলাম ।
মনজুরুল হক

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সমকালে লিখতেন যে মঞ্জু ভাই, নাকি জাপানি মঞ্জু ভাই। কেমন আছেন?
ক্লাস জিনিষটা আগে রাখঢাক করে থাকতো, এখন সেটা জাহির করার ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আরো হবে। এ চক্র শেষ না হলে নতুন পর্ব আর শুরু হচ্ছে না।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দুর্দান্ত এর ছবি

শুয়ে থাকা পাগলটার জটাধারী মাথা কোলে নিয়ে মিটিমিটি হাসছে পাগলিটা। পাগলটা পাগলির চুল মুখে মেখে আঙ্গুলে আঙ্গুল সেলাই করছে; যেন প্রেম যেন হঠাত রোমান্স।

অন্তত প্রেম এখনো স্বাধীন, তথাকথিত শ্রেনীশত্রুর কব্জায় চলে যায়নি এখনো।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

হ্যাঁ, স্বাধীন কিন্তু অপরাগ।

তথাকথিত শ্রেণীশত্রু আবার স্বকথিত শ্রেণীবন্ধুও বটে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আপনি অনেক ভাল লিখেন, অনেক কিছু জানতে পারলাম, কিছু কিছু শব্দ বেশ শক্ত হওয়ার জন্য আমার বেশ সময় লাগে পড়তে, খুব ভাল লিখেছেন। বেশ মন খারাপ হয়ে গেল পড়ে মন খারাপ আসলেই আমরা নিজের অজান্তেই কত কিছু নিয়ে টিটকারি দেই কিন্তু বুঝিনা যারা আসলেই এমন তাদের কেমন লাগে মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কোন শব্দগুলো মুমু?
দেখিয়ে দিলে পরে সতর্ক থাকব।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

ভাইয়া কি যে বলেন, আপনি অসাধারণ লিখেছেন, আমি পড়তে পড়তে শিখে যাব কোনও বেপার না, আমার ব্যর্থতা এটা, আপনি অনেক ভাল লিখেছেন চলুক
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

খেকশিয়াল এর ছবি

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন
আপনাকে লাল সালাম

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

..........................................................................................A life unexamined is not worthliving.-Socrates

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

আমার প্রিয় কয়েকটি গানের কথা মনে পড়ছে -

১। তোমরা যাদের মানুষ বল না
বিধিও যাদের কান্না শুনেনা
তারাও মানুষ আছে তাদের প্রান
আমি চোখের জ্বলে শুনাই তাদের গান (শিল্পী আবদুল জব্বার )

২। রিক্সাওয়ালা বলে কারে তুমি আজ ঘৃনা কর
কৃষক শ্রমিকদের হেলা কর
গরীব দুঃখীদের এড়িয়ে চল ।। (শিল্পী ঐ )

৩। এই শহরে তোমরা থাক দালান কোঠার উপরে
আমরা না হয় কষ্ট করি রোদ বৃষ্টি ঝড়ে
(তোমাদের) বাড়ী গাড়ী টাকাকরি আছে বাসনা
আমাদের আছে শুধু বাঁচার যন্ত্রনা (শিল্পী খুরশিদ আলম )

৪। ও সখিনা গেছোস কিনা ভুইলা আমারে
আমি অহন রিক্সা চালাই ঢাহা শহরে ।।
মরি বাচি কি এসে যাই
মহাজনের পাওনা মেটাই
.........................আমরা ছোটলোকে ( শিল্পী ফকির আলমগীর)

৫। ছোট ছোট মানুষের অন্ন কেড়ে
বড় বড় দালান কোঠা উঠছে বেড়ে (শিল্পী আবদুল জব্বার )

********************************************
A life unexamined is not worthliving.-Socrates

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তীরন্দাজ এর ছবি

লেখাটির জনক হিসেবে আপনাকে অভিবাদন জানানো ছাড়া আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমিও তাব্দা খাইয়া পইড়া থাকলাম।
----------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এইসব দেখে দেখে তব্দা খেয়েই না কথার কাঁটা বানাই। এর থেকে আর বেশি পারি না যে আজকাল!

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

খেকশিয়াল এর ছবি

ওয়াসিফ ভাই কি ভাগ্যে বিশ্বাসী ? আপনার avatar দেইখা জিগাইলাম

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

অবতার মানে ইহাহু অবতরা?
জানি না তো, কেমনে হলো?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

খেকশিয়াল এর ছবি

আরে না, এই সচলায়তনে যে ছবিটা দিসেন, হাতের মুঠে fate লেখা অইটা দেইখা জিগাইলাম

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আরে নাহ, ওইটা ফেট না ওইটা হেট। কাল নুপুরকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে ওই হাত নিয়ে হাজির হতে সমস্যা হচ্ছিল। তখনই মনে হলো কোনো অবতারই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই টাও পাল্টাবো তাই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মনজুরাউল এর ছবি

মনজুরাউল
প্রায় ধরে ফেলেছিলেন,না জাপানি-টাপানি না,আদি এবং অকৃত্তিম বঙ্গদেশের মনজু ভাই। হ্যাঁ সমকালে লিখিটিখি,সঠিক অর্থে বললে ভোরের কাগজের 'অপগন্ড' মনজু ভাই বটে । ভাল আছি, আপনি ভাল ?
আপনাদে এই মেহফিলে নতুন, খালি হয়ে যাওয়া পান পাত্র হাতে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচিছ..........

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

মনজুরাউল এর ছবি

মনজুরাউল
প্রায় ধরে ফেলেছিলেন,না জাপানি-টাপানি না,আদি এবং অকৃত্তিম বঙ্গদেশের মনজু ভাই। হ্যাঁ সমকালে লিখিটিখি,সঠিক অর্থে বললে ভোরের কাগজের 'অপগন্ড' মনজু ভাই বটে । ভাল আছি, আপনি ভাল ?
আপনাদের এই মেহফিলে নতুন, খালি হয়ে যাওয়া পান পাত্র হাতে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচিছ..........

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

খোশ আমদেদ মঞ্জু ভাই। একেবারে হাতে নাতে ধরা খেলাম। আরেকটু ঘুরতে থাকেন, দেখবেন এসে ভরে দিয়ে গেছে তা। এখানে আপনার লেখা পাব তো? আবারো শুভেচ্ছা।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মনজুরাউল এর ছবি

মনজুরাউল
ধন্যবাদ ফারুক ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

অমিত আহমেদ এর ছবি

স্বগতচিন্তার চমৎকার প্রকাশ।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

শেখ দীন মোহাম্মদ এর ছবি

সাসকিয়া সাসেন বলেন গ্লোবাল সিটিতে নাকি গ্লোবাল স্লাম অনিবার্য্য। আমরা রিক্সাটিকে কিভাবে দেখি। এটিত সমাজবিরোধীদের গরীব পেষার হায়তিয়ার। ঢাকা শহরে ১১ হাজার কোটি ব্যয়ে ‘হাল্কা রেল’ বসিয়ে, ফেরিওয়ালালিকদের জন্য পৌরসভার দালান বানিগ য়ে আমরা আমাদের শহরের দখল নিতে পারি। সেখানে সবা্র জন্য হাটা বা রেল চলার ব্যবস্থা থাকবে। রিক্সা উঠে যাবে। বড় বড় পাব্লিক ওয়াক্র্স করে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি ও কলোনী থাকবে। সর্বোপরি শহর পরিকল্পনায় উপনগর থাকবেনা, সব হবে শহর। দেখা শোনা করবে নগর পিতা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।