আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে কোনো বিশুদ্ধ গোলাপ নেই। নেই অবিমিশ্র লাল। আছে নানান জাতের নানান শেডের লাল গোলাপ। তেমনি ভাষা-জাতি-শ্রেণী-বর্ণ-লিঙ্গ-ধর্ম অতিক্রান্ত মানুষ নাই। ব্যক্তি মানুষ যদি কিছুটা এগোয়ও, সমষ্ঠি মানুষের বিচারে তা ধর্তব্য হয় না। তবে ব্যক্তিরা সমষ্ঠির সঙ্গে ক্রিয়া করে এগিয়ে যেতে পারেন, নিতেও পারেন।
বিশ্ব ইতিহাস খুঁড়ে আজ দেখা যাচ্ছে, ওপরে যে বিভাজনের চিহ্ন গুলো বলা হলো, মানুষ তা অতিক্রম করেনি। ধর্ম ফিরে এসেছে জাতীয়তাবাদে এবং মেশামেশি হয়ে যাচ্ছে, লিঙ্গ-প্রাধান্য নিরন্তর অনুবাদ হচ্ছে মানবতাবাদী ধ্বনিতে, শ্রেণী নিচ্ছে নতুন নতুন আদল। তাহলে কি সভ্যতা এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। নাকি আমরা যেমন ভেবেছিলাম, তেমন করে এগয়নি সভ্যতা? পরেরটাই আমার কাছে ঠিক লাগে। আমরা ভেবেছি যেসব বিভাজনের বীজ আমরা উপড়ে ফেলেছি, সেগুলো আসলে রয়েই ছিল। কোনো সমস্যাকেই অর্ধসমাধিত রেখে বুঝি প্রগতি হয় না। তা ভুতের মতো প্রেতের মতো ফিরে ফিরে আসে বারবার এবং তার উপযুক্ত সতকার দাবি করে। যতক্ষণ তা না হচ্ছে, ততক্ষণ তা অনিষ্ট ঘটাবেই।
আমি নিজেকে আর প্রগতিশীল বলতে তৃপ্তি পাই না। যা প্রগতি ভাবতাম তার লাল-সাদা সব রংই দেখি এক হয়ে নব নব মিথ্যা বিভেদ-হানাহানির মাতম তুলেছে। যে প্রগতির যুক্তিতে ভাবা হয়েছিল, ইংরেজ এসে আমাদের সভ্যই করল। আজ দেখি, তা-ই আমাদের নিজস্ব প্রগতির ধারাকে তছনছ করে দিয়ে আমাদের দিশাহারা করে রেখেছে। যে নারীমুক্তি অনিবার্য জানতাম, আজ তা ইরান-আফগানিস্তানে আক্রমণের উসিলা যোগাচ্ছে।
তাই বিভাজনের চিহ্নগুলো নতুন করে পাঠ করতে চাই, এগুলোকে রক্ষার জন্য নয়। এগুলোকে ইতিহাসের মাড়াইকলে পেষণ করে নির্যাসকে মুক্তির লড়াইয়ের রসদ হিসেবে কাজে লাগাবার জন্য। তার মাধ্যমে প্রগতির নতুন সংজ্ঞা, আলোকিত মানুষের নতুন আদল ছাড়া এগনে যাবে না। মিথ্যা বিভেদের জায়গায় বিরাজমান আসল বিভেদের দিকে নজর ফেরাতে হবে। নইলে প্রেমের বাণী বৃথাই মাথা খুটে মরবে। আজকের দুনিয়া তার প্রমাণ থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে।
পাশাপাশি এও বিশ্বাস করি, মানুষ বিমূর্ত ধারণা নয়। মানুষ যে জৈবদেহ, যে ভূগোলে তার বাস, যে ভাষায় তার ভুবন ধরা দেয়, যে জাতির ধারণার মধ্যে সে সংহতির বীজ পায়, যে ধর্মের মধ্যে সে নিজেকে নিছক পশু থেকে আলাদা করতে শেখে, যে শ্রেণীর ঘেরাটোপে তার জীবনযাপন; তার কিছু থেকেই তাকে নিরঙ্কুশ ভাবে বের করে আনা যাবে না। তা করতে গেলে মানুষ পাব না, পাব একটা নিরাকার সুন্দর ধারণা। সেই বিশুদ্ধ লালের মতোই, চরম শুভ্রতার মতোই তা অসম্ভব। তা বিরাজ করে প্লেটোর আইডিয়ার জগতে, মানুষের সঙ্গে তার হয়নাকো দেখা। কিন্তু ওই আইডিয়াগুলো সামনে নিশানার মতো না থাকলে কোন অভিমুখে ছুটবো, তা বুঝি কী করে? তাই আইডিয়া আর বাস্তব মানুষের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের সুষ্ঠু পরিচর্যাই আজকের কাজ_সকল যুগেরই কাজ। সুতরাং একদিকে বিভাজনের চিহ্নে ভারি মানুষকে যদি ধরি অন্ধকার, আর বিভাজনহীন-চিহ্নহীন মানুষকে যদি ধরি আলো: তবে দেখুন, দুইয়ের চরমই কিন্তু দৃষ্টিহীনতা। প্রচণ্ড আলো এবং প্রচণ্ড অন্ধকার দুই-ই আমাদের অন্ধ করে দেয় না কি?
ময়লা সরাতে গেলে তো ময়লায় হাত দিতে হয়, বিভেদ-হিংসার পটকে চিরে চিরে দেখতে হয়, বিষয়টার কার্যকারণগুলি কেমন। তা করতে গেলে সাম্প্রদায়িক না হয়েও নিপীড়িত সম্প্রদায়ের পক্ষ নেয়া যায়। এবং বোঝা যায় যে, মুসলমান হয়ে জন্মানোয় কোনো দোষ নাই, কোনো পাপ নাই হিন্দু হয়ে বা খ্রিস্টান হয়ে জন্মানোয়। কেউ কারো থেকে শ্রেষ্ঠ এমন আলোচনা কাউকেই সুখী করে না। আবার যদি কেউ শ্রেষ্ঠ হয়ও, তার খাতিরে বিশেষ অধিকার কারো দাবি হতে পারে না। তা করা জঙ্গলের ন্যায়, মানবিক ন্যায় তা নয়। মানুষ একটা সমগ্র, তার ভেতরে অজস্র বৈচিত্র্য থাকবে, কিন্তু যতক্ষণ ঐ বিভাজন কাজ করবে, ততক্ষণ প্রতিটি মানুষই খণ্ডিত মানুষ। কারণ সে সমগ্র মানুষকে ধারণ করতে শেখেনি। সেই সমগ্র মানুষের দেহ-মনে জাতি-ভাষা-অঞ্চল-ধর্ম-শ্রেণী পরিচয় একেবারে মুছে না গেলেও সেই সমগ্র নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাবে না।
ইতিহাসের এই পর্বে ধার্মিক মাত্রই শত্রু নয়, ধার্মিকতাকে হিংসার অস্ত্র করায় সমস্যা। পাশাপাশি এও বলতে হয় যে, নাস্তিকতা মানেই মুক্তি নাও হতে পারে, হিন্দু বা মুসলিম বা খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ মানুষ যেমন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারে, তেমনি নাস্তিক-প্রগতিবাদীর পক্ষেও তা সম্ভব।
তাই আমি সীমা অতিক্রম সম্ভব না মনে করে, সীমাকে এমন ভাবে বাড়াতে চাই যাতে তাতে সব মানুষ এঁটে যায়। কোনো মানুষকেই যেখানে আর 'পর' ভাববার প্রয়োজন না থাকে।
কিন্তু মুশকিল হলো 'পরের' ধারণা ছাড়া 'আপনের' ধারণা দাঁড়ায় না। বারবার পাকিস্তানীদের বিপরীতেই তো আমরা আমাদের জাতীয়তাবাদকে সনাক্ত করি। তাই পর থাকবেই। কিন্তু যে মুহুর্ত থেকে সঠিক আপন চিনব, সেই মুহূর্ত থেকে মিথ্যা 'পর'-পরিচয় লোপ পেতে থাকবে। তা করতে করতে যেদিন, নিজের ভেতরেই পরের বাস টের পাব, সেদিন শুরু হবে নিজের সঙ্গে সত্যিকার প্রেম নিজের সঙ্গে সত্যিকার যুদ্ধ। নিজের চেতনার রাজ্যে আর মানুষের সংসারে সংঘাত তাই অনিবার্যই_মিলনের দরকারে।
মন্তব্য
ইন্টারেস্টিং কথা বলেছেন, বাস্তবে তা কতটা সম্ভব হয়ে ওঠে জানি না, সেই চিরন্তন সীমাবদ্ধতার কারনেই। আমি তবুও আশাবাদী, এই অবস্থাতেই। ওই যে আপনিই বললেন, মানুষকে নিরঙ্কুশ বের করে আনলে তো আর মানুষ থাকবে না, হয়ে যাবে একটা নিরাকার ধারণা। তারচেয়ে বরং এইসব সীমাবদ্ধতা নিয়েই আপনার এই সীমাই বাড়িয়ে নেবার চিন্তাটা আমার ভীষন ভালো লাগলো।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
বাস্তবে আমার মনে হয়, ওই সীমা বাড়াবার পদ্ধতিতেই কাজ হয়। যেমন ৪৭ পূর্ব সাম্প্রদায়িকতা ছিল আসলে ওল্টানো জাতি-চেতনা। ৫২-এর পর তা সোজা হলো কিছুটা; মিলল জাতীয়তাবাদ। এখন কেউ একে আবার ঘুরিয়ে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদে নিতে চায়, কেউ চায় মুষ্ঠিমেয়র এলিট জাতীয়তাবাদে আবার কারো প্রকল্প জাতিকে মুষ্ঠিমেয়র হাত থেকে বের করে বৃহত্তর শ্রেণী চেতনায় উত্তোরিত করতে। আবার কেউ এসব দাগ মুছে নিরাকার মানবতাবাদে। সবই কিন্তু সীমাটাকে কোনো কোনো ভাবে বড় করারই আয়োজন।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
পুরো লেখাটা ভালো। তবে এই বাক্যটা একটু সুড়সুড়ি দিতেছে। সীমা অতিক্রমের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগে সীমা নির্ধারণ করলে ভালো হইতো না? তারপর ভালো আর খারাপের ইমপারসোনাল মূল্যায়নের ব্যাপারটাও বোঝার প্রয়োজন থাইকা যায়।
আপন ঘরকে তো চিনতেই হবে। কিন্তু সেই চেনা শুধু মাত্র আজকের দৌড়ের উপর থাকা তড়িকায় সম্ভব। তার মানে হইল চিনতে হবে না, চিনতে থাকতে হবে।
বস্তুবাদের যান্ত্রিক ইন্টারপ্রিটেশন তো এক ধরনের ভাববাদই। যান্ত্রিক কখন হয়? যখন কোন মেথড একটা সুনির্দিষ্ট খাঁচাকে আঁকড়ে ধরে তাকে পরমার্থ মানতে চায় তখন। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় একটা সুনির্দিষ্ট পর্যায়ের ব্যাখ্যাকে পরমার্থ ধরে নিয়ে তারপর প্রয়োগের দিকে যাওয়ার প্রশ্ন আসে। যে কোন প্রয়োগই হয়তো তাই। কিন্তু এ পর্যন্ত যে সঙ্কট দেখা যাচ্ছে সেটা বহুলাংশেই পরবর্তী ব্যাখ্যা নিরুৎসাহিত করার কারণে। যে কোন প্রয়োগই ক্রিটিক্যাল। কিন্তু সেই ক্রিটিকের কলকব্জা দৌড়ের উপর না থাকলে পরবর্তী বা পরিবর্তিত বাস্তবতায় তা অসার হবেই। সুতরাং বারে বারে পরবর্তী কর্ম ছাড়া আর কিছুই আসলে সম্ভব না। এই দিক থেকে আপনার লেখার সাথে একমত।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
বড় অর্থে বিষয়টা আমার কাছে কেবল আইডেন্টিটির সমস্যা না। এর উতপত্তি পুঁজির হাতে সমাজে বিচ্ছিন্নতা ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায়। এর ধাক্কা সামলাতে কেউ গিভেন পরিচয় যেমন ধর্ম বা জাতিকে অবলম্বন করছে, আবার কেউ পুঁজি প্রচারিত নিও-লিবারেল নিরাকার মানবতাবাদ চেখে দেখছে।
এখন যদি আমাদের সীমা খুঁজতে হয়, তাহলে প্রথমত তা রাজনৈতিকভাবেই দেখতে হবে। তা দেখতে গেলে নয়া সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে বের হওয়াকেই লক্ষ্য ঠিক করতে হয়। প্রমাণ করা সম্ভব যে, আজকের জাতি-শ্রেণী-সম্প্রদায় বিভাজন যে নতুন আদলে দাঁড়াচ্ছে, এগুলো ঐ শক্তিরই প্রতিক্রিয়া। ফলে মূলটাকেই নিশানায় আনা চাই। এখন মানুষ তো এভাবে উল্লম্ফন দেবে না। কাজে কাজেই
সম্প্রদায়কে জাতীয় চেতনায় আর জাতিকে নিপীড়িতের শ্রেণীগত ঐক্যের ভিত্তির দিকে নেয়ার কর্মসূচি থাকতে হয়। এছাড়া আলাদা করে সাম্প্রদায়িকতা বা মৌলবাদ ইত্যাদি থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নাই।
কেউই খেয়াল করে না যে, ১৯৪৬-৪৭ এর দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও দেশভাগ আসলে জাতীয় বিপ্লব সম্পন্ন না করার ব্যর্থতা। ক্লাস স্ট্রাগল তাই বিকৃত হয়ে রূপ পেয়েছে সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগ্রামে। বিপ্লব জরুরি হয়ে উঠলে এবং তা সম্পন্ন না হলে, তার তাগিদ উল্টোপথে প্রতিবিপ্লব নিয়ে আসে। আসবেই। ১৯৭১ ও তাই। অসম্পূর্ণ যুদ্ধ শেখ মুজিব-তাহের-সিরাজ শিকদার থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মানুষের রক্ত নিয়ে যাচ্ছে। জনগণের ব্যর্থ বলপ্রয়োগ দেখা দিয়েছে রাষ্ট্রের অব্যর্থ বলপ্রয়োগ হিসেবে।
২০০৬ এর ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী বলপ্রয়োগ যদি সত্যিকার ভাবে বিএনপি জোটের দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে জনগণের বলপ্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হতো, তাহলে ১/১১ এর বলপ্রয়োগ হতে পারতো না। প্রথমটা হতে পারতো বিপ্লব, তার ব্যর্থতায় হয়েছে প্রতিবিপ্লব। এরকম উদাহারণ অজস্র দেয়া যায়।
যাহোক এক কথা থেকে আরেক কথায় চলে এসেছি। সীমা চেনার সঙ্গে একমত। কোথায় আছি না জানলে কোথায় যাওয়া সম্ভব তা জানা হয় না।
জাতি-সম্প্রদায় ইত্যাদি প্রাগাধুনিক ও আধুনিক নির্মাণ ডিঙিয়ে রাজনৈতিক মুক্তির দিকে যেতে হয়। অর্থাত রাষ্ট্রটাকে কেবলই রাষ্ট্র হিসেবে নির্মাণ করা, হিন্দু-মুসলিম বা বাঙালি-পাঞ্জাবি অর্থে নয়। কিন্তু তা যেহেতু সাম্রাজ্যবাদের কল্যাণে স্বাধীন ভাবে করবার উপায় নাই, সেহেতু অভিজাত-রক্ষণশীল ইসলামী+বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে নিম্নবর্গের ধর্ম-বর্ণ-জাত-শ্রেণী চেতনার উপাদান গুলিকে সংগ্রামী করে তুলে নতুন ধরনের প্রতিরোধী জাতীয়তাবাদ আজকের কর্মসূচি। আবশ্যিকভাবেই তা পুঁজি বিরোধী হতে হবে, হতে হবে ডিকলোনাইজড।
এসবের স্বার্থে সমস্ত সংজ্ঞাকে নতুন ভাবে নির্ধারণ না করে, না চিনে আলোচনা বা কাজ সম্ভব নয়। যেমন আমরা এখন যেভাবে জাতি-ধর্ম-শ্রেণী-সম্প্রদায়কে দেখি তা কলোনিয়াল চোখে দেখা। কেবল মার্কসবাদী বললেই তাই হচ্ছে না, অবিকশিত উতপাদন কাঠামো ও ইতিহাস চেতনার সাপেক্ষে তাকে ইওরোপের বাইরে এনে পরীক্ষায় নামতে হবে। তা করার পর তাকে যদি আর মার্কসবাদ নামে নাও চেনা যায়, তার সারবস্তু শ্রেণীতেই থাকবে এবং তার প্রকাশ বিপ্লবী রূপান্তরকামীই হবে। তবে হয়তো একনায়কত্বের ধারণাকে তার পাল্টে নিতেই হবে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
একদিকে বিভাজনের চিহ্নে ভারি মানুষকে যদি ধরি অন্ধকার, আর বিভাজনহীন-চিহ্নহীন মানুষকে যদি ধরি আলো: তবে দেখুন, দুইয়ের চরমই কিন্তু দৃষ্টিহীনতা। প্রচণ্ড আলো এবং প্রচণ্ড অন্ধকার দুই-ই আমাদের অন্ধ করে দেয় না কি?
তাইই
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
জ্বি...।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
শব্দটাতে আমার রীতিমতো ঘেন্না লাগে কারণ কে কতটা পোশাকে প্রগতিশীল আর কতটা ভেতরে তা বুঝে উঠা সত্যি সত্যি মুশকিল কারণ ভেতরে প্রগতিশীল থেকে পোশাকি প্রগতিশীলরাই বেশি সরব
অথচ এদের ভেতরে সর্বক্ষণ কাজ করে নোংরা রক্ষণশীলতা
০২
পৃথিবীতে দাস রাজা হওয়ার ঘটনা আছে কিন্তু কোনো দাস রাজা হয়ে দাসদের মঙ্গল করার কোনো ইতিহাস নেই বরং আরো বেশি দাস নির্যাতনের ঘটনাই বেশি
অথচ এইসব দাসদের রাজা হওয়ার মূল হাতিয়ার নিজেকে দাসপ্রেমি হিসেবে জাহির করা
পোশাকি প্রগতিশীলরাও তাই। ভেতরে ভেতরে যারা বেশি রক্ষণশীল টেকনিক্যাল কারণে তারাই প্রগতিশীলতা কপচায় বেশি
০৩
পরিচয় হিসেবে প্রগতিশীলতা মানুষকে এপ্রিসিয়েশন দেয় তাই প্রতিটা রক্ষণশীলই নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে প্রমাণ করতে চায় আর রক্ষণশীলতা তার নিজের ক্ষমতাকে অক্ষুণ্ন রাখতে সাহায্য করে তাই পোশাকি প্রগতিশীলরা ভেতরে ভেতরে হয় রক্ষণশীল থেকেও রক্ষণশীল
০৪
নিজেকে আমি চেনার পক্ষপাতি চেনানোর চেষ্টা বাদ দিয়েছি বহুকাল আর অন্যদেরকে চিনতে চেষ্টা করি মিনিট বেসিসে
প্রতি মিনিটে সে যে আচরণ করে সেটা দিয়েই তখন তাকে চিনি কিন্তু উপসংহার টানি না কারো সম্পর্কে
এতে কোনো মানুষ সম্পর্কেই হয়তো আমার কোনো ধারণা জন্মায় না কিন্তু এই পদ্ধতি আমাকে প্রতিদিন আহত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেয় অনেক বেশি
পোষাকি বা আসল যা-ই হোক, এই কনসেপ্টটাই গড়ে উঠেছে ইতিহাস ও সমাজ নিয়ে একটা এলিটিস্ট দৃষ্টিকোণের অংশ হিসেবে। ধরা হয় এনলাইটেনমেন্ট-এর চেতনা, রেঁনেসার যুক্তি ও সেক্যুলারিটি এবং কলোনিয়াল একরৈখিক ইতিহাস এর অঙ্গ।
সময় পিছু ফেরে না, আবার সবসময়ই তা যে ত্রিমাত্রিক সড়কে সমুখে ছোটে তাও না। টাইম এবং মানবীয় চেতনাকে হিসেবে ধরলে পঞ্চম মাত্রা বা ষষ্ঠ মাত্রাজুড়ে আমাদের থাকা। এখানে এনলাইটেনমেন্ট-এর মানুষকেন্দ্রিকতা দরকার, কিন্তু তা যে কেবলই শাদা মানুষের জাতবিদ্বেষী মানবিকতা। তার যুক্তি যে নিছক যান্ত্রিক কার্যকারণের গণ্ডীর মধ্যে আটকে থাকে, সেখানে মানুষও নাই, তার সম্ভাবনার উল্লম্ফনের সুযোগও নাই। তার সেক্যুলাটি সভ্যতার একটা উত্তরণ, কিন্তু অন্য অন্য সভ্যতার ইহজাগতিকতাকে স্বীকার করে না। সেক্যুলারিজমের যে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা, তা কখনোই কোথায়ও সকলের জন্য সমান ভিত্তি যুগিয়ে দিতে পারেনি। তাই তাকে এড়িয়েই ধর্ম আবার ফেরত আসছে। ফলে কেবল সেক্যুলার বললেই হচ্ছে না, তাকে গণতান্ত্রিকতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হচ্ছে। তা করতে এর রাজনৈতিক পুনর্গঠন দরকার।
আর ঐ ইতিহাসে আমাদের চিরকালের জন্য পশ্চাদপদ করে রাখা হয়েছে। যেহেতু আমাদের এখানে শিল্পবিপ্লব ঘটেনি তাই আমাদের ওদের অনুকরণ করে যেতে হবে। যেহেতু এখানে রিফর্মেশন হয়নি, তাই...যেহেতু এখানে বুর্জোয়া বিপ্লব ঘটেনি...। আর অনূ্করণ করে কেউ সমান হতে পারে না। ফলে আমাদের নিয়তি চির-দাসত্ব। যে ইতিহাস জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে আমাদের জন্য এই ভাগ্য বরাদ্দ করেছে, সেই ইতিহাস বোধ পরিষ্কার ভাবে উপনিবেশিক প্রভুর স্বার্থেই গড়া। এর ফাঁদ থেকে বেরুনো চাই।
এখন এটা করতে গেলে পুরনো কায়দার প্রগতিশীলতার খোপে আর তা আটবে না। নতুন দর্শন ও রাজনীতি তাই লাগবে। সেটাও একসময় পুরনো হবে। কিন্তু এখনকার জন্য, গোটা বিশ্বের জন্যই এই রদবদল বিনা কোনা শান্তি বা কোনো সুস্থিতি দুনিয়ায় আসবে না। তাই পুরাতন প্রগতিশীলতার উত্তরাধিকারকে আমি পরিত্যাগ করার কথা বলছি।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
পরিচয় হিসেবে প্রগতিশীলতা মানুষকে এপ্রিসিয়েশন দেয় তাই প্রতিটা রক্ষণশীলই নিজেকে প্রগতিশীল হিসেবে প্রমাণ করতে চায় আর রক্ষণশীলতা তার নিজের ক্ষমতাকে অক্ষুণ্ন রাখতে সাহায্য করে তাই পোশাকি প্রগতিশীলরা ভেতরে ভেতরে হয় রক্ষণশীল থেকেও রক্ষণশীল
একমত, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ধর্মযাজকের উদ্দেশ্যে শয়তান বলল_মহোদয়,আপনি কি আমাকে আপনার ঘরে নিয়ে সেবাযত্ন দিয়ে সারিয়ে তুলবেন ?ধ.যা._ধিক!এ তুই ভাবিস কি করে ? শ._দেখুন তাতে আপনারই মঙ্গল.....ধ.যা._ধিক,শত ধিক! পরদিন যাজক প্রত:ভ্রমণ করছেন, হঠাত্ দেখলেন পথের ধারে নোংরা কাদাময়লায় শুয়ে কে যেন
বাঁচাও বাঁচাও বলছে। তিনি ছুটে গেলেন।দেখলেন শয়তান!এক লাফে সরে এলেন..দূর হ'শয়তান! এবার শয়তান উঠে এসে যাজককে বলল_ধরুন আমি এখানে এই অবস্থায় মরে গেলাম।কাল যখন মানুষ জানবে-শয়তান আর নেই,মরে গেছে।আপনি কি মনে করেন কেউ আর আপনার নীতিকথা শুনতে আসবে ?আপনার অবস্থান কোথায় হবে?যাজক ক্ষানিকক্ষণ নিরব থেকে নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত শযতানকে ঘাড়ে তুলে বাড়ি আনলেন এবং সেবাযত্ন করে ভাল করে তুললেন !
ধর্মযাজক-শয়তান একে অপরের পরিপুরক/
প্রগতিশীল-প্রতিক্রিয়াশীল একে অপরের পরিপুরক/
প্রগতিশীলতা প্রতিমুহূর্ত নবায়নকামী/অথবা প্রতিক্রিয়াশীলতা প্রতিমুহূর্তে খন্ডনকামী/তা না হলে দু' পক্ষই সম্পূরক।
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
কাহলিল জিবরানের 'শয়তান' লেখায় এমন গল্প পড়েছিলাম সে দেড় যুগ আগে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
মূল গল্পটা ঈশপের। এখানে সামান্য পরিবর্তিত ও সংক্ষিপ্ত।
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
মানুষের অন্যতম সেরা উক্তি !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কিন্তু সীমারেখা মেনে যদি সীমাটাকেই বাড়াই তাহলে কি দেখবো? দেখবো এতদিন যারা সীমানার বাইরে থেকে কাঁটাতারের কিংবা টেংড়া বেড়ায় দু'হাত রেখে সীমার ভেতর তাকিয়েছিলো, তারা হুড়মুড় করে সীমায় ঢুকে পড়বে। তখন কাউকে আলাদা করা সম্ভব হবে না। সু-কু'র প্রভেদ থাকবে না। ওই যে রক্ষণশীল আর প্রগতিশীল বিভাজন বললেন, তেমনি সীমা বাড়িয়ে খুব একটা সুবিধা হবে বলে মনে হয় না। আসল কথা হচ্ছে- আপন ঘরের খবর নেওয়া। আমার ভেতরকার শুদ্ধতাকে আরো উজ্জ্বলতা দিতে পারলেই বোধকরি আপাত: সমস্যাটা মিটে যায়।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
আপন ঘরে বইসে যে জন
চিনতে পারে আপনারে
ধন্য বলি তারে আমি
মানুষ বলি তারে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
প্রগতিশীল শব্দটাকে আমার বায়বীয় বলে মনে হয়; প্রগতির আসল মাপকাঠি কী হবে তা সঙ্গায়িত না করে প্রগতিশীলতার ভং ধরে চলাকে আমারো ঘৃণা হয়।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
জ্ঞান গর্ভ আলোচনা চলছে
মুর্খ হিসেবে চুপ থাকায় শ্রেয় ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
বৈচিত্র্যকে কেন যে আমরা বিভাজন বানিয়ে দেই, কেন যে এত 'আক্রান্ত' বোধ করি - সত্যিই জানি না!
ওপরের উদ্ধৃত অংশের শেষ বাক্যটার অর্থ ঠিক কি, বুঝি নি।
সেই সমগ্র মানুষের দেহ-মনে জাতি-ভাষা-অঞ্চল-ধর্ম-শ্রেণী পরিচয় একেবারে মুছে না গেলেও সেই সমগ্র নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাবে না।
এই বাক্যটা? আচ্ছা, এক কথায় এভাবে বলা যায়, মুক্তিপ্রাপ্ত মানুষের গায়েও তার বিবিধ উতস্য তথা দেশ-ভাষা-জাতি-ধর্ম ইত্যাদির ঘ্রাণ থেকে যাবে, হয়তো হাজার বছর পর যখন এখনকার অর্থে আর দেশ-জাতি ইত্যাদি থাকবে না, তখন হয়তো মানুষ বিভাজনের চিহ্ন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তার আগে দেহ-মনে জাতি-ভাষা-অঞ্চল-ধর্ম-শ্রেণী পরিচয়ের দাগে দাগি মানুষ যদি এর কোনোটিকেই অপরের বিপরীতে না দাঁড় করায়, যদি কারো থেকে শ্রেষ্ঠ বোধ না করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। সেটাই হবে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। এ নিয়ে যাত্রা করার প্রবণতা থাকলেই আপাতত চলবে।
তা না হলে বিভাজনকে বিভেদে লাগানোর কারগরেরা তো মওকা নেবেই।
আর 'আক্রান্ত' ব্যাপারটা বুঝিনি। একটা খুলে বলবেন?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
বৈচিত্র্যকে আমরা অনেকসময়ই ভয় পাই, তার উপস্থিতি বা আধিক্যে আমরা আক্রান্ত বা threatened/insecure বোধ করি। আপনি যা বলেছেন আসলে সেটাই অন্যভাবে প্রকাশ করেছিলাম।
যে মুহুর্ত থেকে সঠিক আপন চিনব, সেই মুহূর্ত থেকে মিথ্যা 'পর'-পরিচয় লোপ পেতে থাকবে। তা করতে করতে যেদিন, নিজের ভেতরেই পরের বাস টের পাব, সেদিন শুরু হবে নিজের সঙ্গে সত্যিকার প্রেম নিজের সঙ্গে সত্যিকার যুদ্ধ। নিজের চেতনার রাজ্যে আর মানুষের সংসারে সংঘাত তাই অনিবার্যই_মিলনের দরকারে।
What a philosophy, I like it very much as I like Lalon Gity.
Thank you once again, brother Faruk.
নতুন মন্তব্য করুন