বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
গচ্ছিত হয়েছি এখানে মেঘের শরীরে এসে।
এখানে তো দেশ নাই, ঘ্রাণময় স্মৃতি নাই কোনো
শুধু,
ভাষায় আন্ধার টান আর চোখে উল্লসিত সঙ্গীতের ধুলি
ভেসে ভেসে কেবলই সন্নিহিতে আসে। ওরা
বংশনাম বিশ্রুত; লানতের মুখে টিকে থাকা
নাবিকের অন্তিম সারাতসার।
ওদিকে শায়িত শব ঘুরে আসে লীলাবতী গ্রাম,
বেহুলা রঙ্গে নাচো অঙ্গ মুখে ইন্দ্র ইন্দ্র নাম।
২.
তীর্থে তীর্থে কারা যেন পাপ রেখে আসে
আমিই সে পাপার্ত ময়ুর বুকে নিয়ে
আপন শিখার দিকে চা-ই _সংকেত
বুঝে নিয়ে, ঝুলি ও ঝুপড়ি স্থাপনায়
প্রাণে ও প্রান্তরে তীর্থালোক রাখি জ্বেলে।
আমার আপন তীর্থে তবু হায় কার ছায়া ভাসে!
ও বজ্রপ্রত্যাশী বৃক্ষ, ও মরণগন্ধি নিশিডাক
ও গহন মূর্চ্ছা আমার; কার চোরা গীতে
বীজবন্ধন হারানো মেঘের মতো
চেতন আমার: ফেটে ফেটে যায়।
৩.
নদীর বন্ধন আজ খুলে গেছে হে-ই অবতার।
উছলায় জলতল তবু নিরূদ্ধ সব দ্বার।
আগম ও নিগমের সাঁকো তবু ভাঙ্গা!
স্রোতোমুখে যত নৌযান এবং ফেরি
জলেশ্বরী ঘাটে যত মানুষ ও ভার
অতল উথলায়ে জাগা যত জীব;
সবেকার প্রশ্বাসের চাপে বায়ু বিষ্মিত বিকল
মন্ত্রে মন্ত্রে ভরে রোমকূপ, কাঁপে জীবেরো আদল।
৪.
আঁকড়ে নিরূদ্ধ তরী, যে পাতক ডুবেছিল কত
শত শত বছরের আগ
জেগেছে তারও রূপ দেখো অন্ধকারে
নিয়ে শ্যাওলা পুরট হাড়।
ওদিকে
অঝোর বৃষ্টির পরতে পরতে দিগন্তকে চিরে,
রূপকাঠের তরণী কার একেলা গিয়েছে ভেসে।
পীতাভ কর্কটসম পিছু পিছু তার ভাসন্ত শবের সারি
অশরীরী আবেগের কুলে, কাল রাতে একেলা শরীরী।
৫.
সমস্ত নীল ফলক আজিকা জলেশ্বরীর দিকে নির্দেশিত
ভগ্নি শীতলা, পত্নী শীতলা, ও মন্বন্তরের পোকা
তোমার জরাগুণ্ঠন
প্রান্তর পারা তোমার ঐ লণ্ঠন _
অভিসম্পাতের লগ্নে হায় তুমিও দিয়েছ দেখা!
মড়কে মড়কে উজাড় তো হলো দেশ
জীবাষ্মে শোভিত যদি মহাপ্রাণ ভিটা
স্মৃতির খাঁজে খাঁজে রয়েছে ভরাট
কয়েক জন্মের বিষ,
স্নায়ুরা অশান্ত আজ, মুখাগ্নি হবেই
বোন, তুই দেখে নিস!
৬.
নদীর শিয়রে আছি দাঁড়িয়ে আবছা মেঘলীন
ওপারে আমার দেশ আমি শুধু পারাপারহীন।
ছালে ও বাকলে সতের যন্ত্রণা জ্বলে।
সূচীমুখের মুহূর্ত জাগে;
আলোয় আলোয় সব নিভে যাবার আগে।
৭.
তবুও শকুন, তবুও শকুন চিক্কুরে বহর পাঠায় ডাক
ফিরে ফিরে যায় আলোকরেখায়; অলৌকিক সে তরণী।
লুপ্ত স্মৃতির ভারে সঘন হয় ঘাটের তিমির
অতলের শিস শুনে ভুলে যাই জল বিনাশিনী।
আজ রাতে, জলেশ্বরী ঘাটে খুইয়েছে যে পারাপারের দাঁড়
শূণ্যসরণীর দিকে স্ফূটমান তার শীর্ষ _ অদৃষ্ট অপার।
'''''''''''''''''''''''''''''''
১.
শিশি ভেঙ্গে গেলে পরে কোথায় বা মিলায় আতর
চিতাকাঠের সিথানে হায় কে বা করে রোপন আয়ুপ্রস্তর!
২.
ছিলা ছিঁড়ে একাকি নেমেছি আলপথে
এ মাঠে পুতেছি শোক ও পাথর একসাথে
পাথর চিনেছে প্রভু, শোক সব পাখি হয়ে উড়ে গেছে
ছেঁড়া-খোঁড়া গানের আকাশে।।
***এটার মূল অংশ লেখা হয়েছিল জাবির কোনো এক আন্দোলনের রাতে-রাতে। পরে কিছুটা মার্জনা করা হয়েছে সময়ের ছাই ঘষে।
মন্তব্য
এই ভাষা!! আমি এমনতরো ভাষা বহুদিন পড়ি না...
মুখাগ্নি হয়েছে কী?
নাহ, এই প্রথম পুরোটা কোথাও দেয়া গেল।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
এইটাই সেই কবিতা। যেইটা আপনার কোন খাতায় যেন খসড়া অবস্থায় ছিল.....
কিন্তু আমার তো মনে পড়ে এইটা অন্য স্বরেও ছিল..
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
দেখছ অবস্থা? হ্যাঁ, ছিল। এখন মনে পড়লো। নিজেরে কবিতা লেখক মনে হয় না তো, সেইজন্য এমত বিস্মৃতি। তবে অন্যস্বরের ভার্সন থেকে এটায় কিছুটা ঘসামাজা আছে, আর শেষ অনুচ্ছেদটা একেবারেই নতুন।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
শিরোনামটা বুঝতে/অনুভব করতে সমস্যা হচ্ছে।।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
কবিতারও বুঝি ইতিহাস থাকে, থাকে বিমূর্ত কিছু ঘটনারাশি, যা থেকে কিছু কথা তৈরি হয়। আর হয় কবিতা।
ওই সালে, মনে হয় ১৯৯৯-এ অনেক রাতে যমুনার ঘাটে বাস এসে দাঁড়ায়। তখন স্মৃতি-জীবন-অনুভূতি নিয়ে অনেক লোডেড থাকতাম। ওখানে নদীর পাড়ে অন্ধকার, কুয়াশা আর দূরের আলোক আর রশ্মিমালা আমাকে নিয়ে নেয় এবং আমার সত্যিই মনে হয়, আমার স্মৃতিগুলো, স্মৃতির বিভিন্ন অবস্থা ও চরিত্রগুলো, আমাকে ফেলে আমার বাইরে গিয়ে অস্তিত্বমান হচ্ছে, তারা নিজেরা নিজেদের সম্পর্কিত করছে। আমি কেবল দর্শক।
আরো অনেক কিছু হয়, যা হয় অনেক রাতে নদীর ঘাটে একা দাঁড়ালে, সেসব থেকে এটা তৈরি হয়েছিল। জলেশ্বরীতলা বগুড়ার একটা এলাকার নাম। এর নাম সেখান থেকেই আসে যে, জলেশ্বরী ঘাটে রাত। অন্য কিছুও হয়তো বলা যেত, কিন্তু এটাই বলতে ইচ্ছা করলো। এই আর কি!
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
প্রথম বার শেষ দুই পংক্তি এরকম না হয়ে
এরকম ছিল
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
দারুন লাগল, নমস্কার ওয়াসিফ ভাই
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
উদ্ধৃতি
ছিলা ছিঁড়ে একাকি নেমেছি আলপথে
এ মাঠে পুতেছি শোক ও পাথর একসাথে
পাথর চিনেছে প্রভু, শোক সব পাখি হয়ে উড়ে গেছে
ছেঁড়া-খোঁড়া গানের আকাশে।।
-এই হচ্ছে ফারুক ওয়াসিফ।
অনবদ্য। তেমন গানটিও।
দুটোর জন্যই ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
শুরুর অংশটা আগেও কোথাও পড়েছি। হয়তো আপনারই কোনো লেখায়... হয়তো না। তবু ধন্যবাদ সুন্দর কবিতাটির জন্য।
যদিও আমি কবিতা বুঝি না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ্যাঁ, ওটাকে কী বলে যেন, ঐ কমেন্টের ঘরের নীচে যে বাণীটানী থাকে, সেখানে রেখেছিলাম কিছুদিন।
ঠিক ধরেছেন, কবিতা আমিও বুঝি না, তাই সাহস করে লিখে ফালাইছিলাম ছোটোকালে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
প্রিয় ফারুক ওয়াসিফ,
কপিরাইট ইস্যুর কারনে গান বা এই ধরনের কপিরাইটেড ম্যাটেরিয়াল সচলায়তনে আপলোড করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। মৌলিক কিছু বা কপিরাইট বিহীন কিছু প্রকাশ করার ব্যাপারে আপনাকে সবসময়ই স্বাগতম। এব্যাপারে এই জিজ্ঞাস্যটি দেখুন।
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
বুঝিলাম।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
কবিতা পড়ি কম, বুঝি আরো কম, তাও ভালো লাগলে সেটুকু অন্তত বুঝি - এটা ভালো লাগলো খুব।
বোঝাতে চেয়েছি, বুঝবেন না মানে? তবে কবিতাটা খটমট লাগলো আমার নিজের কাছেই।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
লাইনগুলি মাথায় গেঁথে গেল
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ওমা! আপনি কবিতাও লিখেন বুঝি? সেটা তো জানতাম না!
যাইহোক, কবিতাটি মনে হয় ভালো হয়েছে। আমারতো ভালোই লাগলো (আমি যদিও কবিতা খুব একটা বুঝি না, অবশ্য কবিতাতো পুরোটা বোঝার জন্যও নয় - তাই না?)।
জ্বি বাবা, আমি কবিতাও লিখে থাকি। এবং ঠিক ধরেছেন, কবিতা বোঝাবার জন্য লেখা হয় না, বুঝিবার নিমিত্তে লেখা হয়।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
সমস্ত নীল ফলক আজিকা জলেশ্বরীর দিকে নির্দেশিত
ভগ্নি শীতলা, পত্নী শীতলা, ও মন্বন্তরের পোকা
তোমার জরাগুণ্ঠন
প্রান্তর পারা তোমার ঐ লণ্ঠন _
অভিসম্পাতের লগ্নে হায় তুমিও দিয়েছ দেখা!
এই জন্য-ই ব্যক্তিগত এক মেসেজে একদিন লিখেছিলাম ফারুক ওয়াসিফ সব কিছুর আগে কবি
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
সেজন্যই তো যত মুশকিল। অন্য কিছু আর ভাল করে করা হয় না, এটাও হয় না।
যাক ভাই, আপনি জানেন ভাল, আর কাউরে বইলেন না।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
২.
তীর্থে তীর্থে কারা যেন পাপ রেখে আসে
আমিই সে পাপার্ত ময়ুর বুকে নিয়ে
আপন শিখার দিকে চা-ই _সংকেত
বুঝে নিয়ে, ঝুলি ও ঝুপড়ি স্থাপনায়
প্রাণে ও প্রান্তরে তীর্থালোক রাখি জ্বেলে।
আমার আপন তীর্থে তবু হায় কার ছায়া ভাসে!
ও বজ্রপ্রত্যাশী বৃক্ষ, ও মরণগন্ধি নিশিডাক
ও গহন মূর্চ্ছা আমার; কার চোরা গীতে
বীজবন্ধন হারানো মেঘের মতো
চেতন আমার: ফেটে ফেটে যায়।
আমার হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিলেন আপনি। এই ভয়াবহ সত্যগুলো আমরা তুলে আনতে পারি না, আপনি পারেন। পারি না বলেই আমরা শুধু ভেতরে পুষে রেখে নিজের ভেতরে মরে যেতে থাকি প্রতিদিন।
নতুন মন্তব্য করুন