সচেতন শিল্পী সমাজের ব্যানারে গত দুই মাস যাবত আন্দোলন চলছে। ঢাকা চারুকলায় টানা ২৫ দিন মিছিল, প্রতিবাদ, প্রদর্শনী ভিত্তিক প্রতিবাদ কর্মসূচির পর প্রতি সপ্তাহের সমাবেশ, এখন আবার লাগাতার আন্দোলন চলছে। গতকাল থেকে ছাত্রদের বিক্ষুব্ধ মিছিল ও ঘেরাও তাতে নতুন বেগও যোগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে টানাপড়েন, জটিলতা তার থেকেও রয়েছে বেশি সম্ভাবনা। প্রতিরোধের একটা নতুন সংষ্কৃতি ও ভাষা এখানে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে এ আন্দোলনের ভেতর থেকে আসা একটি প্রতিবাদপত্র (সমকালে আংশিক প্রকাশিত) এবং অন্য একটি আহ্বানের খসড়া পেশ করা হলো। দুটিই আজ থেকে ৭/৮ দিন আগের যৌথ লেখা
১. প্রতিক্রিয়া
ভাস্কর্য ধ্বংস, নাটক নিষিদ্ধ, হত্যার হুমকি: কোন খুঁটির জোরে চলছে এসব?
ভাস্কর্য ধ্বংসের পর ধর্মীয় মাফিয়াগোষ্ঠীর আগ্রাসী থাবা এবার পড়েছে নাটকের ওপর। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মান্দার’ নাটকটির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঐ নাটক প্রদর্শনের জন্য রাবির ধূমকেতু নাট্য সংসদকেও নিষিদ্ধ করেছে সেখানকার প্রশাসন। ইসলামের প্রিয় নবীকে ‘অবমাননার’ মিথ্যা অভিযোগকে পুঁজি করে ছাত্র শিবির ধর্মঘট ডেকে পরিস্থিতি তাতিয়ে তুলে নাটকটি এবং ধুমকেতু নাট্য সংসদকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তোলে। অন্যদিকে আল ইহসান পত্রিকায় নাট্যকারকে ‘খতম’ করার ডাক দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তাদের আগ্রাসী দাবি মেনে রাবি প্রশাসন গত ১৯ নভেম্বর একতরফাভাবে ধুমকেতু নাট্য সংসদকে নিষিদ্ধ এবং মান্দার নাটকটির পরিবেশনা নিষিদ্ধ করে। এসবই হয়েছে মুক্ত সংষ্কৃতির প্রতিপ ইসলামী ছাত্র শিবির এবং উগ্র সংগঠন আল বাইয়্যিনাতের মুখপত্র দৈনিক আল ইহসান (রেজিস্টার্ড নং: ডিএ ৩০২৮) এর চাহিদামাফিক। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উগ্র ধর্মীয় মাফিয়াগোষ্ঠীর দোসরগিরি, অন্যদিকে প্রকাশ্যে একজন নাট্যকারকে হত্যার হুমকিদাতাদের আইনের আওতার বাইরে থেকে যাওয়ায় নাগরিক হিসেবে, শিল্পী হিসেবে আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন।
‘মান্দার’ একটি নিরীহ পরিবেশবাদী নাটক। নাটকের একটি চরিত্রের নাম রসুল মিয়া হওয়ায় এবং ঐ নাটকের খলচরিত্রের তাকে গালি দেওয়া নিয়েই যাবতীয় আপত্তি। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বেশিরভাগ নাগরিকের নামই আরবি শব্দ ধরে হয়ে থাকে। নামের সঙ্গে ‘মোহাম্মদ’ বা ‘আহমেদ’ থাকাও চালু রীতি। এবং আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের কোনো না কোনোটি, যেমন: রহিম, করিম, গফুর, আজিজ ইত্যাদি ধরেও আমাদের অনেকেরই নামকরণ করাও সামাজিক প্রথা। বাস্তবে এসব নামধারীদের কেউবা ভাল কেউবা মন্দ। চোর, ডাকাত, খুনি, দুর্নীতিবাজ, ধর্ষক, ঘুষখোর প্রভৃতি অপরাধীরও সুন্দর সুন্দর আরবী নাম থাকে। সুতরাং যে নাটকে বাস্তব জীবনের ছাপ থাকবে সে নাটকে বাস্তবতার প্রতিফলন থাকা দোষের কিছু নয়। স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম দেশে নাটক ও সাহিত্যের চরিত্রদের নামও হবে অধিকাংশ মানুষের নামের সঙ্গে মেলানো। তাছাড়াও মুসলমান নামধারী সকল মানুষও তো ‘সাধু’ নয়। তাই মুসলিম নামধারী কারো সমালোচনা করলেই তা ইসলামের অবমাননা হবে, এমন দাবি শুধু হাস্যকরই নয় চক্রান্তমূলক। এমন অভিযোগের কোনো যুক্তি বা ভিত্তি যে নেই তা তারাও ভাল করেই জানে। কিন্তু রাজনীতির মাঠ গরম করে হাওয়ার ওপর তাওয়া ভাজায় যারা পারদর্শী, তারা মিথ্যা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবেই। এটাই তাদের রাজনীতি, এটাই তাদের আগ্রাসী সংস্কৃতি।
কিন্তু আমরা বিষ্ময়ের সঙ্গে খেয়াল করলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এসব বিবেচনা মাথায় না নিয়েই নাটকের প্রদর্শন বন্ধ এবং নাট্যদলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো! অথচ প্রশাসন নিযুক্ত লিয়াজোঁ কমিটির অধিকাংশ সদস্যই বলেছেন, তাঁরা নাটকটিতে আপত্তির তেমন কিছু দেখেননি। তাহলে মাথার পাশে কান আছে কি নেই, তার খোঁজ না নিয়েই ‘চিলে কান নিয়েছে শুনে চিলের পেছনে ধাওয়া করার’ এত ব্যাকুলতা কেন প্রশাসনের? তাঁরা কি খেয়াল করেননি, নাটকের রাসুল মিয়া একজন প্রতিবাদী বিবেকবান সাধারণ মানুষ, যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় নির্যাতিত হয়? নাটকটি দেখে দর্শকের মনেও তাকে গালিগালাজকারী খলচরিত্রের প্রতি ঘৃণা জšে§। তাঁরা কি জানেন না যে, নাটকটির শেষে নীতিবান হিসেবে রসুল মিয়ারই বিজয় হয়। তারপরও, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিবিরের অন্যায় দাবির কাছে নতিস্বীকার কেন করল?
বিমানবন্দরে ভাস্কর্য অপসারণের বেলাতেও প্রশাসনের এরকম অতি আগ্রহ ল্য করা গিয়েছিল। আমাদের জিজ্ঞাসা, জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কি তাহলে সভ্য দুনিয়ার রীতিনীতি ফেলে ধর্মীয় মাফিয়াগোষ্ঠীর আনুগত্য করবে? বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাহিদার তোয়াক্কা না করে ুদ্র স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে আঘাত করতে থাকবে? এভাবে পুরস্কার ঘোষণা করে হত্যায় প্ররোচিত করার ক্রিমিনাল আচরণও কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অবাধ ছাড় পেতে পেতে সত্যিসত্যি একদিন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে? এই বাংলাদেশই কি আমরা চেয়েছিলাম?
২.
আল ইহসান পত্রিকায় ঘোষণা করা হয়েছে: “কাজেই দেরি নয়, এই নর পশু ইহুদী-নাছারাদের নর পিচাশ ধুমকেতু নাট্য পশু উদীচীর কুকুর ছানাদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই কতল, হত্যা, মস্তক ছিন্ন-ভিন্ন করার জন্য সকল মুসলমানকে একযোগে যার যেটা আছে তা হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।”(আল ইহসান, ১৯ নভেম্বর)”। পত্রিকাটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমানের (যার আরেক নাম মুর্দ্দা জিল্লুহুল আলী) উদ্ধৃতি দিয়ে চার রঙে যে ভাষ্য ছাপা হয়েছে সেটাও শিউরে ওঠার মতো। ধুমকেতু নাট্য সংসদ এবং ‘মান্দার’ নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ‘মুরতাদ’ ঘোষণা দিয়ে বলা হয়: “যে ব্যক্তি এই সকল মুরতাদদেরকে কতল বা হত্যা করতে পারবে তাকে আঞ্জুমানে আল বাইয়িন্যাতের প থেকে উপযুক্ত পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে।”
এই আষ্ফালনদাতারা আদৌ নাটকটি দেখেছে বলে মনে হয় না। কেননা নাটকটির মূল উপজীব্য বিষয়: নগরায়ন ও উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস। আলোচ্য চরিত্র রসুল মিয়াকে দেখা যায় এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে। ফন্দিবাজ ছাড়া এটা নিয়ে কেউ আপত্তি তুলতে পারে না। আমাদের দুঃখ, এই ধ্বংসাÍক তথা ফ্যাসিবাদী হুঙ্কার আসছে ধর্মের নামে! কী ভয়ঙ্কর, খুনের বৈধতা দেয়া হচ্ছে শান্তির ধর্ম ‘ইসলাম রার’ ছদ্মবেশে! এর সঙ্গে ছাত্র শিবিরের কর্মীদের বর্তমান ও অতীত ভূমিকা স্মরণ করলে স্পষ্ট হয়, এসব আসলে ধর্মীয় মাফিয়াগোষ্ঠীর রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের খেলারই অংশ। তাদের সেই ল্য হাসিলে বাংলাদেশের জনগণের মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেই তারা বলি করতে মরিয়া। কেননা এই সংষ্কৃতি মানুষকে চিন্তা করতে শেখায়, প্রতিবাদে প্রেরণা দেয় এবং সবরকম আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাঁধ তৈরি করে। সরকার এখানে প্রতিক্রিয়াশীলদেরই প,ে এটাই এই মুহূর্তের সবচেয়ে হতাশাজনক বার্তা।
৩.
এই ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে একাধিক লেখক-সাংবাদিক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী ও শিককে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করা হয়েছে। শারীরিক হামলার শিকার হয়েছেন কবি শামসুর রাহমান ও হুমায়ুন আজাদের মতো ব্যাক্তিত্ব। হুমায়ুন আজাদের ‘রহস্যময়’ মৃত্যুও আমাদের দেখতে হয়েছে। বগুড়ার লোককবি মোসলেম উদ্দীনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশে এরকম অজস্র ঘটনা সরবে-নীরবে ঘটে চলেছে। কিন্তু এসবের কোনো সুষ্ঠু সুরাহা সরকার মহাশয়েরা কখনোই করেননি। বরং অনেক সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল মানুষকে দেশ ছাড়তে অথবা চুপ হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। শাসক গোষ্ঠী এবং তাদের সকল সরকারই ধর্মীয় লেবাসধারী বিত্তশালী মাফিয়াদের হাতে জনগণের জীবন ও সংষ্কৃতিকে জিম্মি করে সোপর্দ করেছে। ফলে, আজ তারাই ঠিক করছে, দেশে কী হবে আর কী হবে না। তারাই হুকুমদাতা আর সরকার তার বাস্তবায়নকারী। তাদের সামান্য অঙ্গুলিহেলনেই ভাস্কর্য ধ্বংস হয়, নাটক ও গানের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু একমাস ধরে সারা দেশের সংষ্কৃতিকর্মীদের আন্দোলন চললেও সরকার ভাস্কর্য বিষয়ের কোনো সুষ্ঠু মীমাংসা দূরে থাক একটা ব্যাখ্যা দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করে না। যাদের আইন প্রয়োগ করার কথা, যাদের দায়িত্ব জনগণের আকাক্সার সঙ্গে তাল রেখে সংষ্কৃতি চর্চাকে বাধাহীন করা, সেই সরকারের উদ্দেশ্যমূলক নীরবতাই জনগণকে খোঁয়ারের জীব বানাবার স্পর্ধা দিয়েছে উগ্রবাদীদের। নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার থেকে তাদের তোষামুদি করাই কি সরকারের প্রধান দায়িত্ব? তারা কি জনগণের ইচ্ছা ও আইনের থেকেও মতাবান?
ফলত পুরো বিষয়টাকে ‘সাজানো নাটক’ বা ‘তামাশা’ মনে হলেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারি। ভাস্কর্য কিংবা নাটক তাদের উপল্য মাত্র। ল্য হলো মানুষের মতপ্রকাশ ও অধিকারের ওপর উগ্র ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চাপিয়ে দেওয়া। দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করা তারই প্রস্তুতিপর্র্ব। আজ তারা শিল্প ও শিল্পীকে আঘাত করছে, কাল তারা জনজীবন ও রাষ্ট্রের ভিতকেই কামড়ে ধরবে। এসব কার্যকলাপ বিষয়ে এখনই হুঁশিয়ারি প্রয়োজন। তবে আমরা মনে করি না যে, একদিকে ‘তারা’ আরেকদিকে ‘আমরা’ এমন বিভাজন ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তা প্রকারান্তরে কারো না কারো মতা দখলের সিঁড়ি সাজানোরই প্রকল্প। জনগণের শান্তি ও গণতন্ত্র বেহাত করার নতুন চাল মাত্র। আমরা আমাদের আন্দোলন ও প্রতিবাদকে এসব চাল ও প্রকল্পের অংশ হতে দিতে রাজি নই। আমরা ধর্মকে জনগণের পবিত্র বিশ্বাসের মর্যাদা দিই। সুতরাং সেই বিশ্বাসকে বিপথগামী করার হোতা ধর্মীয় মাফিয়াতন্ত্র সম্পর্কে সবাইকে সজাগ হবার আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান তথা সরকারকেও সংবিধান নির্দেশিত উদার ও মানবতাবাদী দায়িত্বের কথা স্মরণ করাতে চাই। আধিপত্যবাদীদের খয়ের খাঁ-দের বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মা করে না।
‘সচেতন শিল্পী সমাজ’ এর পক্ষে
বিপুল শাহ, নাসিমুল খবির ডিউক, আজাদ আবুল কালাম, মোল্লা সাগর, সাইফুল হক অমি, শাওন আকন্দ, কফিল আহমেদ, মুয়ীয মাহফুজ, আবুল হাসান রুবেল, জাঈদ আজিজ, সব্যসাচী হাজরা, হারুন-অর-রশীদ টুটুল, আমীরুল রাজীব, রবি খান, সাইফুল জার্নাল, শাহানা মজুমদার, সুলেখা চৌধুরী, সামিউর রহমান নয়ন, আহমেদ মুনীরুদ্দিন ও ফারুক ওয়াসিফ
লেখকরা বাংলাদেশের তরুণ কবি, লেখক, চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, আলোকচিত্রী, চলচ্চিত্রকার, নাট্যকর্মী, সঙ্গীতশিল্পী ও সংস্কৃতি-কর্মী।
২, আহ্বান (প্রস্তাবিত)
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক দিগন্তে কালো মেঘ দিনে দিনে ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে। ঢাকায় ভাস্কর্য আদলের বাউল স্থাপনা ধ্বংস, রাজশাহীতে একটি পরিবেশবাদী নাটককে ধর্ম অবমাননার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং উগ্র ধর্মীয় মাফিয়া গোষ্ঠীর তরফে নাট্যকারকে পুরস্কারের বিনিময়ে হত্যার আহ্বান যে কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষকে বিচলিত করার জন্য যথেষ্ট। আমরাও বিচলিত হয়ে দেখছি, এগুলো মোটেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সময়ে অজস্র লেখক-সাংবাদিক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী ও শিককে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করার কথা। প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান ও লেখক-পণ্ডিত হুমায়ুন আজাদকে হত্যার চেষ্টার কথা (তাঁর ‘রহস্যময়’ মৃত্যু এখনো আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে)। পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বগুড়ার লোককবি মোসলেম উদ্দীনকে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশে এরকম অজস্র ঘটনা সরবে-নীরবে ঘটে চলেছে। কিন্তু এসবের কোনো সুষ্ঠু সুরাহা সরকার মহাশয়েরা কখনোই করেননি। বরং অনেক সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল মানুষ প্রতিবাদ করায় নির্বাসিত বা নিস্তব্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
শাসক গোষ্ঠীদের সকল সরকারই ধর্মীয় লেবাসধারী ও বিত্তশালী মাফিয়াদের হাতে জীবন ও সংষ্কৃতিকে সোপর্দ করেছে। সংষ্কৃতি চর্চা হয়ে পড়েছে তাদের হাতে জিম্মি। তারাই ঠিক করছে, দেশে কী হবে আর কী হবে না। তাদের সামান্য অঙ্গুলিহেলনেই ভাস্কর্য ধ্বংস হয়, নিষিদ্ধ হয় নাটক ও গানের অনুষ্ঠান। অথচ মাসযাবত দেশের সংষ্কৃতিকর্মীদের আন্দোলন চললেও সরকার ভাস্কর্য বিষয়ের কোনো সুষ্ঠু মীমাংসা দূরে থাক একটা ব্যাখ্যা দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি। যাদের আইন প্রয়োগ করার কথা, যাদের দায়িত্ব জনগণের আকাক্সার সঙ্গে তাল রেখে সংষ্কৃতি চর্চাকে বাধাহীন করা, তাদের এই ষড়যন্ত্রমূলক নীরবতাই জনগণকে উগ্রবাদীদের খোঁয়ারের জীব বানাবার স্পর্ধা দিয়েছে। তারা কি জনগণের ইচ্ছা ও রাষ্ট্রের আইনের থেকেও মতাবান? ফলত ‘সাজানো নাটক’ বা ‘তামাশা’ মনে হলেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারি, এর শেকড় অনেক গভীরে। ধর্ম রা তাদের উসিলা মাত্র। মতপ্রকাশ ও অধিকারের ওপর দমবন্ধ করা দুঃশাসন চাপিয়ে দেওয়াই তাদের আসল ল্য। আজ তারা শিল্প ও শিল্পীকে আঘাত করছে, কাল জনজীবনকেই কামড়ে ধরবে। সুতরাং হুঁশিয়ার!!!
তবে আমরা মনে করি না, ‘তারা’ বনাম ‘আমরা’ কিংবা ‘ইসলামপন্থি’ বনাম ‘ইসলামবিরোধী’ জাতীয় খামাখা শত্র“তা দেশের জন্য কল্যাণকর। তা আসলে কারো না কারো অশুভ খেলার প্রকল্প, জনগণের শান্তি ও গণতন্ত্র বেহাত করার ফন্দি। আমরা আমাদের আন্দোলনকে সকল ফন্দিবাজি প্রকল্পের বাইরে রাখতে চাই। অবশ্যই ধর্ম জনগণের পবিত্র বিশ্বাস। কিন্তু ধর্মীয় স্লোগান দেয়া রাজনীতি বা ব্যবসাকে ধর্মের দাবিদার ভাবতে রাজি নই আমরা। ধর্মকে অসাধু কর্মকাণ্ডের বর্ম বানিয়ে মতপ্রকাশ ও মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া কোনো প্রকৃত ধার্মিকের কাজ নয়। ‘ধর্ম গেল গেল’ বলে রব তুলে ধর্মপ্রাণ জনসাধারণ ও দরিদ্র মাদ্রাসা ছাত্রদের খেপিয়ে তোলা এইসব ফন্দিবাজদের পরিচিত চাতুরি। সুতরাং মানুষ ও ধর্মকে বিপথগামী করার হোতা ধর্মীয় মাফিয়াতন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকা চাই। একইসঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান তথা সরকারকে সংবিধান নির্দেশিত উদার ও মানবতাবাদী দায়িত্বের কথাও স্মরণ করাতে চাই। আধিপত্যবাদীদের খয়ের খাঁ-দের বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মা করে না।
পাশপাশি ঢাকা শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে, শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার দোহাই দিয়ে যেভাবে টেন্ডার দিয়ে প্রকাশ্য স্থানে যেনতেন স্থাপনা বসানো হচ্ছে, তাও আপত্তিকর। শিল্প সৃষ্টি ও উপভোগে শিল্পী সমাজ এবং জনগণেরই এখতিয়ার। সবকিছুর ধর্মীয়করণের মত বাণিজ্যিকীকরণও এক বিষাক্ত প্রবণতা। তাই বিজ্ঞাপন বাণিজ্যে, স্পন্সরসীপের নামে মুনাফার খোরাক হিসেবে শিল্প ও জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সীমাছাড়া অপব্যবহারও আমাদের চিন্তিত করে তুলছে। আমাদের জাতীয় আশা-আকাক্সা, কৌম আবেগ চলে যাচ্ছে বাংলালিংক কিংবা গ্রামীন ফোনের মত বিদেশি কর্পোরেটের দখলে। আমাদের দেশপ্রেম, সংগ্রামী চেতনা, পরস্পরের প্রতি ভালবাসাকে তাদের পণ্য বিক্রির ক্যনভাসারগিরিতে লাগানোর এখতিয়ার তাদের কে দিয়েছে? একদিকে মেকি শিল্প ও ভুঁইফোঁড় সংস্কৃতির চাষবাসের মাধ্যমে শহুরে তরুণদের ঠেলে দিচ্ছে চিন্তাহীন ভোগসর্বস্ব জীবনের দিকে, অন্যদিকে মাদ্রাসা ছাত্রদের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার কায়দায় সম্মোহিত করে তাদের প্রশ্নহীন আনুগত্য নিশ্চিত করা হচ্ছে। এইসব কর্পোরেট মহল ও ধর্মীয় মাফিয়াগোষ্ঠী আমাদের সহনশীল, উদার ও সপ্রাণ সংস্কৃতিকে নির্জীব করে তার জায়গায় কট্টর, আক্রমণাত্মক ও ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠায় তৎপর। এই দুই শক্তির আগ্রাসী থাবার তলে সংস্কৃতি চর্চা এখন এক কষ্টকর সংগ্রাম।
কতিপয় মাদ্রাসার ছাত্রের আপত্তির মুখে ঢাকা বিমানবন্দরের সামনে বাউল ভাস্কর্যের নামে নির্মাণাধীন স্থাপনাটি ভেঙ্গে ফেলার ঘটনা থেকে আমাদের আন্দোলনের শুরু হলেও এ বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকেই কথা বলে আসছি। স্থাপনাটি যেভাবে তৈরি হচ্ছিল তার স্বচ্ছতা ও শিল্পমান নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে। কিন্তু যেভাবে উগ্রবাদীদের উস্কে দিয়ে এর ধ্বংসসাধন করা হয়েছে, তা মাযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে কেবল শিল্পই নয় আমাদের কৃষক-কারিগর জনসাধারণের প্রতিনিধি এবং বাংলার ভাবুকতার দার্শনিক ফকির লালন সাঁই-এর প্রতিও চূড়ান্ত অশ্রদ্ধা প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবাদে অন্য অনেকের সঙ্গে আমরাও মাঠে নেমেছি। আন্দোলন যতই এগিয়েছে ততোই একটি দীর্ঘস্থায়ী ধারাবাহিক লড়াইয়ের প্রয়োজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অমানবিকতার বিরুদ্ধে মানবিকতার এই জাগরণকে আজ এক সূত্রে গাঁথবার সময় হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ফোরামে, সংগঠনে, অঞ্চলে, শিা প্রতিষ্ঠানে সক্রিয় সাংষ্কৃতিক ধারা ও সক্রিয় ব্যক্তিবর্গের জোটবদ্ধতা। প্রয়োজন নিবিড় যোগাযোগ, বহু স্বরের মিলিত কলরব, ঐক্যতান। যারা বলবে, শত ফুল ফুটতে দাও। সংস্কৃতির গলার ফাঁস সরাও। চিন্তাকে বাধা দিও না। শিল্প জনগণের শ্বাস-প্রশ্বাস। জনগণের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি ও আশা আকাক্সার আধার। কায়েমি স্বার্থকে তোষামোদ করা কিংবা মুনাফার জোয়াল বওয়া শিল্পের কাজ নয়। এই ডাক নিয়ে বাংলাদেশের সকল সংস্কৃতি কর্মী, শিল্পী, ভাবুকদের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে আমরা জনসাধারণের মধ্যে নিয়ে যেতে চাই। কেননা, চিরকাল তাঁরাই আধিপত্যের শক্তি ও কায়েমি স্বার্থবাদীদের ঠেকিয়ে দিয়েছেন।
মন্তব্য
আমাদের সরকার কোন রহস্যজনক কারনে এসব লোকগুলোকে আদর করে মাথায় তুলে রাখছে তা একেবারেই অবোধগম্য। আমরা কি শীঘ্রই আরো কিছু বাংলা ভাই আর শায়খ আব্দুর রহমান পেতে যাচ্ছি?
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
খসরা দলিল দু'টো ব্লগে দিয়ে ভাল করেছো বন্ধু !
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
এটা এই আন্দোলনটাকে বুঝতে সাহায্য করবে বলে দিয়েছি। খেয়াল করেন এখানে নতুন এক কর্মপন্থা নেওয়ার আভাস আছে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আরেকটি বিষয় এখানে বলাটা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছিনা কিন্তু বলার কোন জায়গাও খুঁজে পাচ্ছিনা। আজ ডেইলি স্টার এ রাজু ভাস্কর্যের চারপাশে কালো ব্যানার টানানোর একটি ছবি প্রকাশ করেছে। আমি সত্যিই খুব দুঃখ পেয়েছি ব্যানারের “জড়িত” শব্দটির বানান ভুল দেখে – লেখা হয়েছে “সকল ভাস্কর্য ভাঙ্গার সাথে জরিতদের শাস্তি ঘোষনা ও কার্যকর কর”। আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীদের বাংলা বানানের এই করুণ দশা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। বিশেষ করে যারা শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করেন বা ভালোবাসেন তাদের কাছ থেকে। একজনও কি ছিলনা বানানটি ঠিক করবার জন্যে?! আমি এখানে ছবিটি এম্বেড করার চেষ্টা করেও পারলাম না। লিঙ্কটা দিয়ে দিলাম - http://edailystar.com/
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!
ছবিটা ভালো করে দেখলে বুঝবেন, "র" এর উপর দিয়ে আবার কালি চালিয়ে "ড়" বানানোর চেষ্টা তারা কিন্তু করেছে ... সম্ভবতঃ লেখার সময় ভুলে "র" লিখে ফেলেছে ... বেশী সাবধানে লিখতে গেলে এটা হয়ই, যেজন্য ফরম ফিলাপের সময় মানুষ প্রায়ই গুবলেট করে ফেলে ... "আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীদের বাংলা বানানের এই করুণ দশা" -- এটা মনে হয় ঠিক না
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
শুভকামনা রইলো
প্রতিক্রিয়া আর আহবান -- দুটোই খুবই বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপিত ... মানুষের কাছে ভালোভাবে পৌঁছে দিতে পারলে ভালোই হবে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
ধন্যবাদ, অন্যদের মধ্যেও এই বার্তাটি নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবেন আশা করি। সময়টা জটিল, অনেকটা সুতার ওপর দিয়ে হাঁটার মতো, তারপরও কথা তো বলতেই হবে....
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
মানুষকে মেরে ফেলার আহ্বান জানানো - ফৌজদারি মামলায় সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ। তারপরও রাষ্ট্রযন্ত্র কী করে? তার কর্মক্ষম হবার জন্যে কোথথেকে তেল-মবিল দিতে হয়?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
পূর্ণোদ্যমে সাথে আছি... যে কোনো দরকারে ডাকবেন খালি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
- অর মায়রে বাপ। ধইরা খালি মাঁদার গাছের লাঠি ঢুকানো উচিৎ শালাগো পিছন দিয়া।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমরণ পোঙ্গা পোঙ্গা দেওনের কাম এগুলারে...
অর মায়রে বাপ। ধইরা খালি মাঁদার গাছের লাঠি ঢুকানো উচিৎ শালাগো পিছন দিয়া।
এইটাই মূল কথা ।
--------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
আশ্চর্য হই এদের আস্ফালন দেখে!
তারাও কিন্তু এই কথাটাই বলে যে, কিছু ভূঁইফোঁড় নাস্তিক দেশে আষ্ফালন করে। তারা মনে করে দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাদের পক্ষে। তাই আমাদেরও দেখাতে হবে যে, তারা নয় আমরাই দেশের বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণকে জয় করার জন্য আমরা কী করছি? কোথায় কার সঙ্গে এবং কীভাবে?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ছড়িয়ে দিলাম। লিংক।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ধন্যবাদ শামীম।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
সরকার আর প্রশাসনের এতো প্রত্যক্ষ (ক্ষেত্রবিশেষে প্রচ্ছন্ন) সমর্থন ওরা কীভাবে পায়? কেন পায়? এর উত্তর কি কখনও জানা হবে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
যাদের রাজনীতি ফাঁকা তারা ধর্ম দিয়ে তা ভরাট করে জনসমর্থন পেতে চায়, যাদের জনসমর্থন নেই, তারাও ওদের সঙ্গে নিয়ে লেজিটেমেসি চায়, যে রাষ্ট্র নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ে বৈধতা সৃষ্টিতে অক্ষম অর্থাত যে এখনো নাগরিকদের রাষ্ট্র হিসেবে না দাঁড়িয়ে ধর্মতাত্ত্বিকতা দিয়ে অসম্পূর্ণতা পূরণ করতে চায়, সেই রাষ্ট্রেরও ওদের দরকার, এনজিওবাদীদের ওদের দরকার ওদের দেখিয়ে সচেতনতা এমপাওয়ারমেন্টের নামে ফান্ড আনার জন্য, আমেরিকার দরকার ওয়ার অন টেরর চালানোর জন্য, প্রগতিবাদীদের দরকার ওদের নামে মুখে মুখে বালিশ পেটানো বুদ্ধিজীবীতার জন্য, আর জনগণের প্রতিনিধিত্বহীনদের দরকার অমর্যাদাকর জগতে কিছুটা মর্যাদার প্রাপ্তির জন্য, সামরিক সরকারের দরকার নিজেদের সামাজিক ভিত্তি সৃষ্টির জন্য, বড়লোকদের দরকার ভাবমূর্তি তৈরির জন্য, সুতরাং সকলেরই ওদের দরকার। তাই ওরা আছে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
সরকার কি করেছ? এটা আসেলই রহস্যজনক একটা কথা। সরকার কি মৌলবাদের পক্ষে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে আগে।
মাত্র ১০০ মাদ্রাসা ছাত্রের প্রতিবাদের মুখে ভাষ্কর্য সরানো হলো আর অন্যদিকে দেশের হাজার হাজার মানুষ এর বিরোধীতা করলো সরকার কোন পদক্ষেপই নিলোনা। দেশের নাট্যকর্মীদের কাছে মৃতু্ পরোয়ানা পাঠানো হচ্ছে, সরকার সব জেনেও কোন এক অজানা কারনে নিশ্চুপ। মাত্র কয়েকজন মৌলবাদীর হাতে পুরো দেশ জিম্মি। বীর বাঙ্গলীর কি হলো আজ? আর আমরা কি এখানে লেখালেখি করেই আমাদের কর্তব্য শেষ করব? আমাদের কি কিছুই করার নেই?
দেশে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ দরকার। এই যুদ্ধ হবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে।
দরকার আরেকটি শ্লোগান -
"বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর
দেশকে মৌলবাদমুক্ত করো"
আমার লেখার এসেন্সে কিন্তু সেরকম কথা নাই। মৌলবাদকে আমি স্বাধীন স্বতন্ত্র কোনো ফেনোমেনা হিসেবে দেখি না। তা বিদ্যমান সাম্রাজ্যবাদী রেজিমের উপলিঙ্গ।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নতুন মন্তব্য করুন