‌'না' ভোট প্রসঙ্গে শর্টহ্যান্ডে দশটি পয়েন্ট

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: রবি, ২১/১২/২০০৮ - ৬:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

না ভোট প্রসঙ্গে এই চুটকিটি মনে পড়লো। এক লোক কুকুরের লেজে একটা পাইপ ঢুকিয়ে বসে আছে। তো লোক যায় পাশ দিয়ে আর হাসে। একজন তো বলেই ফেলে, আরে বোকা ওর লেজ কী আর সোজা হয়! লোকটির উত্তর: না ভাই, আমি লেজ সোজা করতে পাইপ ঢোকাইনি, পাইপ বাঁকা করার জন্যই লেজ ধরে বসে রয়েছি।
বিষয়টা নিয়ে সংক্ষেপে তড়িঘড়ি করে এভাবে ভাবতে চাইছি। দেখা যাক দাঁড়ায় কিনা।
১. পরাশক্তি প্রেরিত আমাদের সিভিকো-মিলিটারি-কর্পোরেট রেজিম চেয়েছিল গোটা রাজনৈতিক নের্তৃত্বকেই ‌'নাই' করে দিতে। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এখন এসেছে 'না'। তাঁদের যে নাই করে দেওয়া রাষ্ট্রের মাথায় বসতে চেয়েছিল, এখন তার ঠাঁই হয়েছে ব্যালট পেপারের নিচে। রূপান্তরটি লক্ষ্যণীয়।

২. বুঝলাম ‌'না' একটা তরিকা, একটা পছন্দ। সুতরাং না-য়েরও একটা রাজনীতি রয়েছে। কিন্তু দল রয়েছে কি? আপাতভাবে সিভিল সোসাইটি, শহুরে মধ্যবিত্তের একটা অংশ, সিভিল সোসাইটির জুনিয়র তরফ (নির্বাচন উপলক্ষে দেশে এসে না-য়ের পক্ষে সেমিনার, পোস্টার এবং মিডিয়ায় সক্রিয়) এবং তার থেকেও হয়তো বেশি করে বিদ্যমান রাজনীতিতে মোহশূণ্য হওয়া নাগরিকরা এর পক্ষপাতি। এই না রাজনৈতিক হলেও নির্দল। এই নির্দলীয় না-বাদী রাজনৈতিক আচরণ দেশকে রাজনীতিশূণ্য করার বাতিল কর্মসূচির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রচনা করে কি? অসচেতনভাবে হলেও?

৪.
ক. না-বাদ থাকা মানে এমনি এমনি থাকা নয়। যেহেতু ব্যালটে ও সমাজে না-য়ের ধারা বিদ্যমান। সেহেতু ধরে নেয়া চলে যে, ব্যালটের না জয়যুক্ত হতেও পারে। তা করতে হলে সমাজের না-বাদীদের ব্যাপক ততপর হতে হয়। ধরা যাক, এ ধরনের তৎপরতা জয়ীও হলো একটি অথবা অধিকাংশ আসনে। তা যদি হয়, তাহলে প্রশ্ন এই যে, না-বাদ যদি এতই প্রবল হতে পারে ( এবারে না হলেও আগামীবার, কিংবা তার পরের বার), তাহলে সেই না-বাদীরা একটি রাজনৈতিক দল খুললেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। তারা ভাল রাজনীতিই উপহার দিতে পারেন। আর যদি তা না পারেন, তাহলে না-র কোনো ভবিষ্যত নাই। তা বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষের আকাঙ্ক্ষা বা হতাশার প্রকাশ ঘটাবে মাত্র। সে পথে জনগণ যাবেন কেন?

খ.এদেশের জনগণ স্বীধন নাগরিক হিসেবে নিজেদের ভাবেন না এখনো। রাষ্ট্র যদি রাষ্ট্র হিসেবে না দাঁড়ায় জনগণের বড় অংশ নাগরিক হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করতে পারেন না। আমাদের এখানে রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের বেশিরভাগের সম্পর্ক প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক। যার কিছু নাই, সেই মুরুব্বি ধরবেই। সুতরাং সে কখনো না ভোট দেবে না। কারণ, রাষ্ট্র দেয় না তাকে কিছু, কিন্তু নেতারা তো কিছু দেয়: কাজ, ত্রাণ, চাকুরি ইত্যাদি। যাদের প্যাট্রনের প্রয়োজন নাই যারা বৈষয়িক ভাবে সম্পন্ন কিংবা চেতনাগতভাবে 'দীক্ষিত', যার এখানকার রাজনৈতিক বৃত্ত ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য না করলেও চলে, সে এটা পারে। না ভোট তার ভূমিকা রাখার একটা পন্থা হলেও হতে পারে।

৫. সুতরাং, না-এর একদিকে থাকছে বিদ্যমান প্রার্থীদের খারিজ করা। ব্যালটে যদি না মার্কা থাকে, তাহলে তা কোনো না কোনো বা সব প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই যাবে। অন্যদিকে না হচ্ছে নতুন কোনো রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা। না-য়ের প্রচারকদের সেই রাজনীতির রূপটি কী হবে সেটা স্পষ্ট করতে হবে। যদিও না দেয়ার মধ্যে দিয়েই বিমূর্ত ভাবে সেটা তারা করছেন। এটাকে মূর্ত করলে তখন আর না-মার্কা থাকবার প্রয়োজন পড়ে কি?

৬. তাহলে দাঁড়াচ্ছে, না একটা অন্তর্বতীকালীন ব্যাপার। একসময় যেমন তত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মূলা এসেছিল, এখন তেমন এসেছে না ভোটের সুশীল ফর্মুলা। তত্ববধায়ক সরকার ব্যর্থ হয়েছে, না-ও ব্যর্থ হবে। তাহলে এই হুজুগে মাতার ফজিলত কী?

৭. এরশাদ আমলেও হ্যাঁ-না ভোট হয়েছিল। এবারে সেই প্রেসিডেন্সিয়াল হ্যাঁ-নাকে সংসদীয় পদ্ধতির মধ্যে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। হ্যাঁ-না ভোট ছিল বন্ধ্যা। কারণ সেখানে সবসময়ই হ্যাঁ-কেই জয়ী করবার ব্যবস্থা থাকতো। অন্যভাবে না জয়ী হলেও এরশাদের বদলে অন্য কাউকে হ্যাঁ করার অর্থাত প্রার্থী বদলটা স্বতঃসিদ্ধ হতো না।

৮. সিস্টেম সবময় সবাইকে তার জালের আওতার মধ্যে বা ভাবাদর্শের মশারির মধ্যে রাখতে পারে না। সিস্টেম বেশি ব্যর্থ হলে বেশিরভাগ লোকই ওইসবের বাইরে চলে যায়। তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশের রাস্তা খোঁজে। উপযুক্ত ও সাহসী নের্তৃত্ব দাঁড়িয়ে গেলে জনগণ সেই ক্ষোভকে ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটানোর পথে নিয়ে যেতে পারেন। তখনই আবির্ভাব ঘটে নতুন রাজনীতির। না-ভোট সেই সম্ভাবনাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে তা নয়। তবে সেখানে কিছুটা চোখে ধুলা তো দিতেই পারে। আমি অ্যাকশনের পক্ষে, না ভোট জাতীয় ইনঅ্যাকশনে কোনো কাজ হয় বলে বিশ্বাস করি না।

৯. মীরপুরে দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো প্রার্থীর পোস্টারের পাশে কে বা কারা ‌‌'না ভোট' দেবার স্টিকার লাগিয়ে যাচ্ছে। হতে পারে কোনো সৎ নাগরিক তা করছেন। অথবা করছে তার বিরোধী পক্ষ। এতে করে ঐ প্রার্থীর ভাবমূর্তি কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ই। এ থেকে দেখা যাচ্ছে, না ভোটের অস্ত্র না-বাদীদের হাতে থাকছে না পুরোটা, ভোটের আগেই তা চলে যেতে পারে বিদ্যমান রাজনৈতিক শঠদের কারো না কারো হাতেই।

১০.যাত্রাপালায় বিবেকের একটা ভূমিকা স্বীকৃত। বিবেক কিছু না করলেও ভাল ও মন্দের ভেদ চিনিয়ে দেয়। দর্শকের সহানুভূতি কার দিকে যাওয়া উচিত তার সিগনাল তোলে ট্রাফিকের মতো। না-ভোটের এই ভূমিকা থাকতে পারে। রাজনীতির অধপতনের একটা ব্যারোমিটার তা হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু পতন চিহ্নিত হলে প্রতিকার কি আবারও সেই দলগুলোর কাছেই আরেকবার প্রার্থী চাওয়া। এভাবে চাইতেই থাকা। যে লুটেরারা কোনোভাবেই পাল্টাবে না, যাদের লেজ কিছুতেই সোজা হবে না, তাদের লেজ সোজা করার এই মেহনত তাহলে কার কাজে লাগবে? ১৯৯০ এর পরের দেড় দশক এবং ১/১১ এর পরের দুই বছর প্রমাণ করেছে এদেশে আমূল পরিবর্তনই একমাত্র বিকল্প। এবং বিদ্যমান নায়ক-খলনায়কদের কেউই তা দিতে পারে না। সেই পরিবর্তনের শক্তি আসতে পারে নতুন কোনো জায়গা থেকে। সুপ্ত জনগণের ভেতরে নতুন রাজনীতি ও সংগঠন দঁড়ানোর মাধ্যমে। এই উপলব্ধি যদি সঠিক হয়, তাহলে না ভোট তার পথে বাধা না হোক, ছোট্ট গোলকধাঁধা। জেনেশুনে তাতে পা দেব কেন? লেজ সোজা হয় না বলে নিজেদের বাঁকা করার কী মানে?

পুনশ্চ: দেশ নিয়ে বহুরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেসবের ফল আমাদের অনেক কিছু শেখাচ্ছে। সুতরাং না ভোটের পরীক্ষাটাও হয়ে যেতে অসুবিধা কী? সব দেখা শেষ না হলে নতুন কী আর এমনি আসবে?


মন্তব্য

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হুম।
তাহলে আগে দেখতে থাকি...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

চোখে দূরবীণ লাগান।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ফারুক ভাই, একেকজন তার দুরবীন দিয়ে একেক জিনিস দেখতে পায়; একই জিনিস দেখা যায় এমন দুরবীন কেউ দিতে পারেন? ৩৭ বছরে তো তেমনটা এলোনা। শুধুই আশ্বাস আর আশাভঙ্গ দেখে গেলাম।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তার আগে সবাইকে যে এক জায়গায় এসে দাঁড়াতে হয়। তার জন্য দুনিয়াকে ফ্লাট বানাতে হয়। আর তা যদি হয়, তখন তো আর ‌না ভোট লাগে না, দূরবীণও লাগে না। খোলা চোখেই তখন সত্য দেখা যেত।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আপনি কিছু বাস্তব দিক তুলে ধরেছেন। যেমন, ১ এবং ২এর বিষয়গুলো - দেশকে রাজনীতিশূন্য করার সাথে সচেতন বা অসচেতনভাবে 'না' ভোট এর সম্পর্ক থাকার কথা। এটা থাকা খুবই স্বাভাবিক, একইভাবে স্বাভাবিক 'না' ভোট জাস্ট একটা মধ্যবিত্ত বিলাসভাবনার অলস প্রকাশ হওয়া।

কেউই আসলে চায় না, না ভোটের মাধ্যমে একের পর এক ভোটাভুটি হতেই থাকুক, একের পর এক ভোটের পিছনে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় হোক, স্থিতিশীলতার লক্ষ্য অর্জনে 'না' ভোটের প্রেক্ষিতে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হোক। কিন্তু এত কিছুর পরেও বাস্তবতার বিচারে মানুষ 'না' ভোটকেও সমর্থন করতে 'বাধ্য' হচ্ছে এবং এই মানুষগুলোর অনেকেই যে সামরিক বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক সরকারে বিশ্বাসী, তাও বাস্তব এবং সত্য।

আজকের বাংলাদেশে স্বাধীনতার সপক্ষ বলে পরিচিত দলটি স্বাধীনতার বিপক্ষ দলের সাথে এক মঞ্চে গিয়ে আন্দোলন করে, সামরিক স্বৈরশাসকদের সাথে মিলেমিশে নির্বাচন করে। জনগণ এদের সবার হাতেই জিম্মি। জনগণের সামনে কোনো বিকল্প না থাকায় মন্দের ভালো খোঁজার স্বান্ত্বনা নিয়েই ভোট দিয়ে যেতে হয় জনগণকে। কিন্তু মন্দের ভালোও আসলে মন্দই, ভালো নয়। এই 'না' ভোট -যত ক্ষুদ্র পরিসরেই হোক - জনগণকে একটা বাড়তি অপশন দেয় তার মত প্রকাশের। যুদ্ধাপরাধী জামাতকে ভোট দিলাম না; 'না' অপশন না থাকলে ভোটটা মিগ-২৯ দুর্ণীতির হাসিনাকেই দিতে হতো; কিংবা স্বৈরশাসক এরশাদকে। কিন্তু 'না' অপশনটা থাকায় হাসিনা বা এরশাদেরা এই ভোটগুলো পাচ্ছে না, যেখানে কয়েক শ' বা কয়েক হাজার ভোটের পার্থক্যই সিটের হারজিত নির্ধারণ করবে, অন্তত সেখানে হলেও দলগুলো জনগণকে মূল্য দেয়ার চাপে থাকবে।

আমরা অভাগা দেশের মানুষ। যখন ডুবে যাই, ক্রমাগত ডুবতে থাকি, তখন খঁড়কুঁটো ধরেও বাঁচার চেষ্টা করার অপশনটা সাময়িক সমাধান হিসেবে খুব খারাপ কি?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সেজন্যই তো আমি তুলে দেওয়ার কথা বলছি না। তা বলতে হলে আমাকে বিকল্প কর্মসূচী হাজির করতে হয়। তা করতে তো এ মুহূর্তে অপারগ। যারা চায়, তারা করুন অসুবিধা নাই। কিন্তু তাতে আমার বিশ্লেষণটা খুব একটা বেশি পাল্টাবে না।

ধাপে ধাপে তো চেতনাকেও নিয়ে যেতে হয়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

দুর্দান্ত এর ছবি

বরাবরের মত পরিস্কার বিশ্লেষন। আপনার সাথে একমত, না-ভোটের যাথাযথ প্রয়োগটা এ যাত্রায় কঠিন হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে জনসাধারনের যে অংশ এম-সি-কিউ এ অভ্যস্থ ননত, তাঁরা এম্নিতেই যে কোন প্রশ্নের উত্তরই রচনামূলক প্রক্রিয়ায় দেয়ার চেষ্টা করবেন। খুঁজলে আবার ভাতকাপড়ের মত আজেবাজে জিনিসের টানে শিক্ষাদিক্ষার মত জরুরী দিকে যাবার সূযোগ পাননি, এমন কিছু ভোটারও পেয়ে যেতে পারেন। "উপরের কোনটাই নয়', বা প্রদত্ত চয়েস গুলোর বাইরেও কোন পছন্দ থাকতে পারে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে আম-জনতা খুব একটা পড়েন না। যাখানে ভাত বলতে মোটা চাল, গায়ে দিতে মোটা কাপড়, জীবনসাথি বলতে ঋনদাতার সন্তান, ঘুম বলতে স্বপ্নহীন, ভবিষ্যত বলতে "same shit different day" বোঝায়, সেখানে নেতাদের গছিয়ে দেয়া কাউকে কবুল বলে ফেলাটাই ভাল। "এই ব্যালটের কাউকেই আমি সংসদে দেখতে চাই না" - এ ধরনের আঁতালামীর মাজাল তাঁদের সাজে না।

অনেকদিন পর ভানু বন্দোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ল। "আগে দেশে কিছু জমিজমা ছিল, আসিলাম ল্যান্ডলর্ড, দেশ বিভাগের সময় ল্যান্ড তো গেল, পইড়া রইল লর্ড। এখন লর্ডেরে রাখি কই, তাই নামের গোড়ায় লাগাইয়া লইয়া হইলাম লর্ড ভানু।"

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সে-ই, ভাল বলেছেন। তবে ঘটনা হলো আমরা কিছুতেই কিছু শিখি না। বা ঘটনা থেকে ঠিক যেটা শেখা দরকার তা বাদ দিয়ে আর সবই শিখি। রাজনীতির বিকল্প কেবল আরেকটা রাজনীতিই। বড়লোক শ্রেণীর শাসনের বিপরীত নিপীড়িত শ্রেণীগুলোর শাসন। আমরা বারবার সমাধান খুঁজছি সেখান থেকেই, যারা নাকি আবার সমস্যার কারণ। জেনে শুনেও কেন করছি। করছি কারণ আমরা তাতে স্বস্তি পাচ্ছি হয়তো। আমরা তাদের পরিত্যাগ করতে পারি না হয়তো, কারণ তারাই হয়তো আমাদেরও টিকে থাকার ভিত্তি। এই আমরা কারা সেটা তাই ঠিকঠাক সাব্যস্ত করা দরকার।
একাত্তরে দেশের অধিকাংশ মানুষ এক জায়গায় এসেছিল কারণ, সেটা ছিল উপায়হীন অবস্থা। আজ সমাজ অনেক বেশি বিভক্ত। একাত্তরের সাড়ে সাত কোটি আজকের চৌদ্দ কোটির মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করা সাত/আট কোটি দিয়ে রিপ্লেস করা হয়েছে। বাকিরা কি আসলেই খারাপ রয়েছে? সন্তানের ভবিষ্যত, পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে তাদের উদ্বেগ চরমে উঠলে তারা বিদেশে চলে যেতে পারে। তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকবে কেন? গোটা বিশ্বই তো তাদের বিচরণক্ষেত্র।
দেশে যারা থাকে তারা কানসাট-ফুলবাড়ী-শনির আখড়া-২৬ আগস্ট ঘটনায় নিরূপায় হয়ে। আমাদের বোধহয় আরো নিরূপায় হবার দরকার আছে। তার আগ পর্যন্ত না ভোট চলুক!
একটা কথা আমার বারবার মনে আসে; আনাড়ি রংরুট (নতুন ভর্তি হওয়া সেপাই) দের বারবার একই পথে ড্রিলমার্চ করে যেতে হয়_যতক্ষণ না তারা পূর্ণ সৈনিক হয়। আমাদেরও ইতিহাসের মহাসড়কে ডাবলমার্চ করবার আগে আরো অনেকবার একইপথে একই রকম করে ড্রিলমার্চ করে যেতে হবে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মোদের কিছু নাই রে নাই, আমরা ঘরে বাইরে গাই -
তাইরে নাইরে নাইরে না। না না না ।
যতই দিবস যায় রে যায় গাই রে সুখে হায় রে হায় -
তাইরে নাইরে নাইরে না। না না না ।।
যারা সোনার চোরাবালির ‘পরে পাকা ঘরের-ভিত্তি গড়ে
তাদের সামনে মোরা গান গেয়ে যাই - তাই রে নাই রে নাই রে না। না না না। ।

যখন থেকে থেকে গাঁঠৈর পানে গাঁঠকাটারা দৃষ্টি হানে
তখন শূন্যঝুলি দেখায়ে গাই - তাইরে নাই রে নাই রে না। না না না।।

রবীন্দ্রনাথের রাজা নাটকের এই কোরাস গানটা মনে পড়ে গেল। আসল রাজা আর নকল রাজার, তাদের ভাব ও রূপের, ডায়ালেকটিকে এই কোরাসটা সেই দশা’র নির্দেশ করে যেটি পার না হলে আগানো যায় না। আপনি যখন না-ভোটের ‘পরীক্ষা’র কথা বললেন তখন এই গানটির কথা আমার মনে পড়ল। আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ এই স্পষ্ট বক্তব্যটির জন্য। এগোতেই যখন হবে, জেনে এগোই।

--------------------------------------------------------------------------
The philosophers have only interpreted the world in various ways; the point, however, is to change it.
[MARX : Theses on Feuerbach]


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সুপ্ত জনগণের ভেতরে নতুন রাজনীতি ও সংগঠন দঁড়ানোর মাধ্যমে। এই উপলব্ধি যদি সঠিক হয়, তাহলে না ভোট তার পথে বাধা না হোক, ছোট্ট গোলকধাঁধা। জেনেশুনে তাতে পা দেব কেন? লেজ সোজা হয় না বলে নিজেদের বাঁকা করার কী মানে?

এই নতুন রাজনীতি আর নতুন সংগঠন দাড় করানোর আকাংখা প্রাথমিক ভাবে " না" ভোটের মাধ্যমেও প্রকাশ হতে পারে , আমি তাই একে গোলকধাঁধা বলি না । আমার কেন্দ্রে এরশাদ হচ্ছে মহাজোট প্রার্থী , আমি তাকে ভোট দেব না । নীতিগত ভাবে আমি বিএনপিকে ভোট দেব না জামাতের সাথে জোট করায় আর গত পাঁচ বছরের সীমাহীন দূর্ণীতির অভিযোগ বিশ্বাস করি বলে ।

তৃতীয় অপশনে দেখলাম কয়েকটা মৌলবাদী দলের প্রার্থী আছে , তাদেরকে ভোট দেব না ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি অসমর্থনের কারনে ।

তাহলে আমাকে কী করতে হবে ? নির্বাচনে নিজেই দাড়িয়ে যাব ? সেটা সম্ভব নয় কারন স্বতন্ত্র নির্বাচন করার মতো উদ্যম আমার পক্ষে সম্ভবপর নাও হতে পারে ।

সেক্ষেত্রে আমি যদি দেখি আমার নির্বাচনী এলাকায় আমিই একমাত্র " না" ভোটার তাহলে চুপ মেরে থাকব । কিন্তু যদি দেখি যে ১০ হাজার " না" ভোট আছে এখানে , তাহলে আমি আরো সমমনা আছে দেখে উৎসাহী হব , তখন হয়তো একটা নতুন রাজনীতি কিংবা নতুন সংগঠন তৈরীতে আমি অথবা আমার মতো অন্য কোন " না" অলা উৎসাহিত হবে ।

স্পর্শ এর ছবি

এতক্ষনে আমার মনের কথাটা কেউ বলল।
ধন্যবাদ আরিফ ভাই।

ফারুখ ওয়াসিফের একটা কথাও ভাল লাগল।
আমাদের আসলেই আবারো নিরুপায় হওয়া দরকার।

কিছু একটা পরিবর্তন, তা সে যত নগন্য (বা ভ্রান্তই?) হোক না কেন, তার মধ্যে থাকে 'পরিবর্তন', থাকে ভাল বা খারাপ নতুন আমি আশাবাদী লোক বলেই নতুনকে সব সময় সম্ভাবনাময় মনে হয়। নাহলে তো সেই পুরাতন চক্রেই ঘুরতে থাকব!!

চক্র তো কাটুক।

....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আগের এক কমেন্টে বলেছিলাম:
সেজন্যই তো আমি তুলে দেওয়ার কথা বলছি না। তা বলতে হলে আমাকে বিকল্প কর্মসূচী হাজির করতে হয়। তা করতে তো এ মুহূর্তে অপারগ। যারা চায়, তারা করুন অসুবিধা নাই। কিন্তু তাতে আমার বিশ্লেষণটা খুব একটা বেশি পাল্টাবে না।
ধাপে ধাপে তো চেতনাকেও নিয়ে যেতে হয়।

কিন্তু আসলেই কি ভোটে কিছু হয়। যে ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার সেই ব্যবস্থার গায়ে পুলটিশ দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু কোনো দল যদি পরিবর্তনের শক্তি অর্জনের লক্ষ্যে ভোটকে আপাত মঞ্জিল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তাতে বেশি অসুবিধা দেখি না। কথা হচ্ছে, সবাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাইতে পারে আমরা জনগণ কেবল চাইতে পারি না।

তারপরও আমি বলব, আমাদের যা অগত্যা তাই কিন্তু শাসকদের জন্য মওকা। আমাদের অগত্যার জন্যই তারা করে কর্মে খাচ্ছে। আমরা কেউ ভোট না দিলেও এদেশের গণতন্ত্রের কিছু যায় আসে না। অভিজ্ঞতাই প্রমাণ। তাহলে আমরা আসলে আমাদের জন্য প্রার্থী নির্বাচিত করছি না, পরাশক্তির জন্য দেশীয় গোলাম ঠিক করে দিচ্ছি। যদি উল্টা করা যেত, যে আমরাই তাদের জন্য অগত্যা পরিস্থিতি তৈরি করে দিচ্ছি। তার জন্য না ভোট জাতীয় প্রতিক্রিয়া নয়, ক্রিয়া দরকার। যহোক, দিল্লি দূর অস্ত।

'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আমি তো না ভোটের পক্ষেই ছিলাম। এখন চিন্তা প্যাঁচ খাইছে। ঘটনাতো এইভাবে নাই!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

কিন্তু না ভোট না থাকলে আমরা অনাস্থা প্রকাশ করবো কিভাবে? ভোট না দিয়ে তো আর সেটা করা যায় না।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমিও না-য়ের একদম বিপক্ষে ছিলাম,এখনও আছি নিজের জন্য। কিন্তু অন্যরা দিলে বাধা দেব না। বরং সমাজতাত্ত্বিক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করব, দেখি না কী হয়। বেশি ভয় নাই, এতে তেমন কিছু আসে যাবে না বলে মনে হয়। ২/৩ শতাংশ সর্বোচ্চ না ভোট পড়বে বলে মনে হয়। সেই সংখ্যাটাও কিন্তু কম নয়। সব দেখে একটা না-বাদী দলও খোলা যায়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

যারা পত্রিকায় গোলটেবিলের নিউজ পড়ে রাজনীতির খোরাক নেয়
আর টেবিলে বসে নিজেকে রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্নভাবে
সেইসব রাজনীতিমূর্খদের জন্যই এই 'না' ভোটের প্রচলন

০২
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ যাবতকালের সবচেয়ে চুতিয়া কৌতুক হচ্ছে এই না ভোট

আরিফ জেবতিক এর ছবি

লীলেন ভাইকে সম্ভবত আরো একজায়গায় দেখলাম " না" ভোটকে চুতিয়া সিস্টেম বলতে ।
ফারুক ওয়াসিফের মতামত তার পোস্টের মাধ্যমে পেয়ে গেলাম আমরা ।
এখন লীলেন ভাই যদি একটু বুঝিয়ে বলে , কেন তিনি এই সিস্টেমকে চুতিয়া মনে করেন , তাহলে আলোচনার আর চিন্তার আরেকটি দিক উন্মোচিত হবে আমাদের সামনে ।
লীলেন ভাইয়ের বিস্তারিত আলোচনা প্রত্যাশা করছি ।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

কস্কি মমিন!


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নন্দিনী এর ছবি

আমার ভাবনা অনেকটা আরিফ জেবতিক এর মতই । 'না' ভোটের ব্যাপারটা থাকলে সব দলই ভবিষ্যতে প্রার্থী নির্বাচনে সতর্ক হয় কিনা এই দিকটাও দেখার অপেক্ষায় রইলাম...।

নন্দিনী

বিপ্লব রহমান এর ছবি

যাত্রাপালায় বিবেকের একটা ভূমিকা স্বীকৃত। বিবেক কিছু না করলেও ভাল ও মন্দের ভেদ চিনিয়ে দেয়। দর্শকের সহানুভূতি কার দিকে যাওয়া উচিত তার সিগনাল তোলে ট্রাফিকের মতো। না-ভোটের এই ভূমিকা থাকতে পারে। রাজনীতির অধপতনের একটা ব্যারোমিটার তা হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু পতন চিহ্নিত হলে প্রতিকার কি আবারও সেই দলগুলোর কাছেই আরেকবার প্রার্থী চাওয়া। এভাবে চাইতেই থাকা। যে লুটেরারা কোনোভাবেই পাল্টাবে না, যাদের লেজ কিছুতেই সোজা হবে না, তাদের লেজ সোজা করার এই মেহনত তাহলে কার কাজে লাগবে?

ফারুক ওয়াসিফ@ চূড়ান্ত অর্থে 'না ভোট' তো বটেই, এমন কী পুরো ভোটবাজীর অসারতা এখানেই। তবে আপাত অর্থে 'না ভোট' গলিত রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি ছোট্ট প্রতিবাদ।

---
ধারালো বিশ্লেষণের জন্য আপনাকে -বিপ্লব- দিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সচল কর্তৃপক্ষ এই স্মাইলিটি বোধহয় তুলে নিয়েছে! মন খারাপ

তাই আপাতত কস্কি মমিন!


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার কথার ভেতর অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে, সেটা আমার কাছে মুখ্য মনে হয়। যেমন, যারা কোনো একটি দল-মার্কা বা একজন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন তারা কিন্তু পূর্ণ সমর্থনের ভিত্তিতেই দিচ্ছেন, সেটা যদি নেগেটিভ ভোটও হয় সেটাও পূর্ণ নেগেটিভ। কিন্তু যারা না দিচ্ছেন তারা কিন্তু কারো না কারো বিপক্ষে দিচ্ছেন, কাউকে চান না বলে দিচ্ছেন, কাউকে পান না বলে দিচ্ছেন কিংবা পুরো ভোট ব্যবস্থার অনাস্থা জানাতে দিচ্ছেন। সুতরাং এরা সমগোত্রীয় নন। অতএব এদের রাজনৈতিক ভূমিকাও এক হবার নয়।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ইনঅ্যাকশন হচ্ছে ভোট দিতে না যাওয়া; না ভোট দেয়া অ্যাকশনের মধ্যেই পড়ে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে না ভোট একটা পরিবর্তন - গণতন্ত্রে এর কার্যকারিতা না থাকলে এরও পরিবর্তন আসবে। যেহেতু পুরাতন কাসুন্দি আমাদের ঘাটতেই হবে সেহেতু আপাতত না কে না বলাতেও সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। কথা ছিল রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না হলে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। সে পরিবর্তনটা কীভাবে আসবে তা কারো জানা নেই। চিন্তায়, মননে ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন তথা গোটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে পরাশক্তি বলেন চোরাশক্তি বলেন সবাই আমাদের মাথার উপর কাঁঠাল ভাঙতে তৎপর হবে এবং সফল হবে। নেতারা কাজ দেয়, চাকরি দেয় কথাটা ভুল কথা। নেতারা চুরি শেখায় এবং চুরি করায়, দুর্নীতি শেখায় ও করায়। তারা সবসময়ই দেশের মানুষকে শোষণ করেছে এবং আরো পদদলিত করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পরিবর্তনটা নিরেট ও বিশুদ্ধভাবে আমাদের সমাজের মধ্য থেকেই আসতে হবে; বিদেশি সাধুবাবাদের দেয়া ফর্মুলা আমাদের জন্য কোন কাজে আসবে না।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার প্রথম অংশের উত্তর কিছুটা এসেছে বিপ্লব রহমানের কথার উত্তরের মধ্যে।

নেতারা কাজ দেয়, চাকরি দেয় কথাটা ভুল কথা। নেতারা চুরি শেখায় এবং চুরি করায়, দুর্নীতি শেখায় ও করায়। তারা সবসময়ই দেশের মানুষকে শোষণ করেছে এবং আরো পদদলিত করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঐ কথাটা আমি বলেছিলাম আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের ভেতরকার সম্পর্কের একটা দিক উন্মোচনের দরকারে। একটা সমীকরণ দাঁড় করানো যাক। রাষ্ট্র মানে এক শ্রেণীর হয়ে অন্য শ্রেনীগুলোকে আইনী কায়দায় দমন-নিপীড়ন-বশ করার রাজনৈতিক ব্যবস্থা। আইন ও সংবিধান কিংবা সোসাল কন্ট্র্যাক্ট-এর কথা তুলে সে তার ঐ শ্রেণী চেহারাটা আড়াল করে। এই বিশ্লেষণ সরিয়ে রেখেও আপাতত ধরে নিচ্ছি রাষ্ট্র হচ্ছে নাগরিকদের জোট, যা তাদের ভাল-মন্দের দায়দায়িত্ব নেবে। এই অর্থে রাষ্ট্রের চোখে সাদা-কালো, ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-পাহাড়ি কেউ নয়; সবাই নাগরিক। এটা হলো বিশুদ্ধ রাষ্ট্রের বিশুদ্ধ নাগরিকত্বের ধারণা। যে রাষ্ট্র মুসলিম নয়, বাঙালি নয়।
সুতরাং বিশুদ্ধ রাষ্ট্র= বিশুদ্ধ নাগরিক। এই নাগরিকরা সামাজিক অবস্থান ও পরিচয় সরিয়ে রেখে আনুভূমিক বা আড়াআড়ি ভাবে পরস্পরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়।
কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো ততটা বিচ্ছিন্নতা আসেনি। এখানে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের দেখে থাকে আঞ্চলিক, ধর্মীয় বা গোষ্ঠীগত কমিউনিটির মধ্যে। ফলে সে বিশুদ্ধ নাগরিক হিসেবে নিজেকে দেখে না। ফলে নাগরিক হিসেবে তার অধিকারগুলোও বকেয়া থেকে যায়। নিজের সুবিধার জন্য তারা আঞ্চলিক, গোষ্ঠীগত বা পেশাগত ঐক্য করে। রাষ্ট্র যেহেতু আপসে তাকে কিছু দেয় না, সেহেতু সে আন্দোলনও করে আবার মুরুব্বিও ধরে। এটাই তার সামাজিক ক্ষমতায়ন ও রাজনৈতিক আচরণকে নির্ধারণ করে_বিশেষত গ্রামে ও শহরের নিচুতলায়। মুরুব্বি বা রাষ্ট্রক্ষমতার কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিবর্গ ও দলের সঙ্গে তার এই সম্পর্কটা উলম্ব_বা খাড়াখাড়ি। ওপর থেকেই চুঁইয়ে চুঁইয়ে বা দেনদরবার করে, মোসাহেবি করে, লেজুড়বৃত্তি করে সে নিজের সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করে। এখান থেকেই জন্ম নেয় সুবিধাবাদ ও দুর্নীতি।
এই খাড়াখাড়ি ক্ষমতাবিন্যাস আড়াআড়ি নাগরিক ঐক্যকে খারিজ করে। অর্থাৎ রাষ্ট্রকে রাষ্ট্র হয়ে উঠতে বাধা দেয়। আড়াআড়ি নাগরিক জমায়েত দেখা যাচ্ছে না-য়ের পক্ষে। কিন্তু খাড়াখাড়ি জমায়েত যেহেতু পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল মাস্টার-স্লেভ ডায়ালেক্টিকসে সেহেতু নেতা ও কর্মী, এমপি ও এলাকাবাসির সম্পর্কটা সাবেকি জমিদারি ব্যবস্থার মতো আনুগত্যনির্ভর হয়ে দাঁড়ায়। সেই আদান-প্রদান নির্ভর আনুগত্য অস্বীকার করা মানে ক্ষমতার খাড়াখাড়ি দণ্ড ত্যাগ করে বঞ্চিত বনে যাওয়া। তারা তা করবে কেন? তাই তারা ভাল-খারাপ বিবেচনা করবে না, করবে কে দেবে আর কে দেবে না তার বিবেচনা। এটা হলো অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত।
এর সঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষিতও যুক্ত। ভুখা মানুষেরও একটা আদর্শ থাকে, বিশ্বদৃষ্টি থাকে। সে অনুযায়ীও সে দল ও মতাদর্শ পছন্দ করে। না ভোট তাকে কোনো মতাদর্শ দেয় না, কিন্তু বিএনপি-আমলীগ-জামাত দেয়।
সুতরাং খাড়াখাড়ি জমায়েতের সমাজে নাগরিক রাজনীতি শহুরে প্যাট্রিসিয়ানদের কাজে লাগলেও নিম্নবিত্ত, বস্তিবাসী ও গ্রামীণ প্লেবিয়ানদের বিশেষ কাজে লাগবে না।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মোটা দাগে আমার মনে হয়, দেশের ঠিক এই মুহূর্তে না- ভোট ব্যাপারটা অনেকটা খাল কেটে কুমীর আনার মতো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ভাল ধরেছেন। না ভোটের সংখ্যা বেশি হলে তাকে পুঁজি করে কোনো ষড়যন্ত্র হলে বিষ্মিত হব না।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

জগতের নিয়ম এটাই যে কূটবুদ্ধির শিকার হয়েই আমরা বুদ্ধিমান হই। হয়তো কেউ কেউ এটার সুযোগ নেবে, কিন্তু তাই বলে তো ভয় পেলে চলবে না।

"না" ভোটকে মেজরিটি করা অনেক কষ্টের ব্যাপার। বড় দলগুলো ভাল প্রার্থী দিলে "না" ভোটের বিজয়ী হওয়ার কোন কারণ নেই। আমার নিজের কথাই বলি। এবারের নির্বাচনে আমি সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণা করে বেড়াতে রাজি আছি। সবাইকে বলবো জামাত ক্ষমতায় এলে কী হবে সেই কথা। কিন্তু কামাল মজুমদার বা এরশাদের মনোনয়ন পাওয়া এলাকায় আমি "না" ভোটের জন্য প্রচার করবো।

হয়তো আমার চিন্তা অনেক সিম্পলিস্টিক। সত্যিকার কোন চক্রান্তের দৃষ্টান্ত দেখার আগ পর্যন্ত আমি "না" ভোটের বিধানের বিপক্ষে নই মোটেও।

নির্বাক এর ছবি

আপনার বিশ্লেষণটি ভাল লাগলো। আমাদের এই ধার করা গনতন্ত্রের দেশে না ভোট কোন সমাধান দেবেনা হয়ত কিন্তু একটা বার্তা হয়ত পৌঁছবে। অবশ্য তাতেই বা কার কি আসবে যাবে সেটাও ভাববার বিষয় বটে। আপনি যে আমূল পরিবর্তনের কথা বলছেন সেটা আমাদের দেয়ালে পিঠ নিতান্ত ঠেকে না গেলে কতখানি আমরা এগিয়ে আসব বলা মুস্কিল। ইতিহাস তাই বলে।
_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

১। হুমম !
২। করে ।
৪ক ) তাই তো ?
৪খ ) তা' পারে ।
৫) না প্রয়োজন পড়ে না ।
৬) নেড়ার আরেকবার বেল তলায় যাওয়ার মত ।
৭) এরশাদের আমলে ছিল লাউ আর এখন হয়েছে কদু ।
৮)আমি অ্যাকশনের পক্ষে ।
৯) অসম্ভব নয় ।
১০) আমিও তাই ভাবছি কিন্তু আরিফে জায়াগায় আমি ভোটার হলে আমাকেও "না" ভোট দিতে হত ।

সেজন্যই তো আমি তুলে দেওয়ার কথা বলছি না। তা বলতে হলে আমাকে বিকল্প কর্মসূচী হাজির করতে হয়। তা করতে তো এ মুহূর্তে অপারগ। যারা চায়, তারা করুন অসুবিধা নাই। কিন্তু তাতে আমার বিশ্লেষণটা খুব একটা বেশি পাল্টাবে না।
ধাপে ধাপে তো চেতনাকেও নিয়ে যেতে হয়।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ধূসর গোধুলি যে ইঙ্গিতটি করেছিলেন তার অন্য মাজেজাও কম মারাত্মক নয়। ঘটনা না ঘটুক, হয়তো কোনো এলাকার অনুপস্থিত ভোটারদের বেশিরভাগ ভোটকেই যদি কেউ না ভোট করে দেয় এবং তা নিয়ে বাগড়া বাধায়, তবে? সেরকম কথা শোনা যাচ্ছে কিন্তু। আবার এই জিনিষ সারাদেশে যদি ব্যাপক আকারে ঘটে তাহলে তো কথাই নাই। ফাঁড়া একটা রাখা থাকল, প্রয়োজনে ব্যবহার হবে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

...সেক্ষেত্রে কি সমস্যার মূল অন্যত্র না? উপস্থিত/অনুপস্থিত নির্বিশেষে ভোটার ছাড়া আর কারো তো ব্যালটে কিছু করতে পারার কথাই না। সেটা বন্ধ করাই তো হওয়া উচিত প্রধান চিন্তা।

সেদিক থেকে চিন্তা করলে "না" ভোটই ভাল। এতদিন কোন আসনে জালিয়াতি করে বেশি ভোট দিলেও তো তা নিয়ে কিছু করা যায়নি। এখন যদি অত্যধিক "না" ভোটের কারণে হলেও সম্ভাব্য কারচুপির দিকে নজর আসে, তবে ক্ষতি কী? যোগ্য প্রার্থী দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হলেও জেতার যোগ্যতা রাখবার কথা।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এটা ঘরপোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয়ের কথা। আমি ধরে নিচ্ছি তা হবে না। আর তা হবে বলেই না ভোটের বিরোধিতা করতে হবে সেটাও ঠিক না। কিন্তু একে ব্যবহার করা সহজ।
না ভোট নিয়ে আমার আসল মূল্যায়ন ১-১০ এ আছে। সেটা নিয়ে আপনার মন্তব্য চাই।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সেকি !

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তাই-ই!!!!

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

সিস্টেম সবময় সবাইকে তার জালের আওতার মধ্যে বা ভাবাদর্শের মশারির মধ্যে রাখতে পারে না। সিস্টেম বেশি ব্যর্থ হলে বেশিরভাগ লোকই ওইসবের বাইরে চলে যায়। তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশের রাস্তা খোঁজে। উপযুক্ত ও সাহসী নের্তৃত্ব দাঁড়িয়ে গেলে জনগণ সেই ক্ষোভকে ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটানোর পথে নিয়ে যেতে পারেন। তখনই আবির্ভাব ঘটে নতুন রাজনীতির। না-ভোট সেই সম্ভাবনাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে তা নয়। তবে সেখানে কিছুটা চোখে ধুলা তো দিতেই পারে।

এই ব্যাপার টা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে একই কারণে সুশীল/সামরিক দেরকে ক্ষমতায়িত করা হয়েছিল এবং না ভোট ঐ চেষ্টারই একটা পরিমার্জিত সংস্করণ।

আরেকটা উদ্দেশ্য হয়তো তথ্য সংগ্রহ -- এই ধাক্কায় না এর বীজ কতখানি বোনা গেল --পরে কখনো সুশীল পূণর্জাগরণ হলে এই তথ্য কাজে লাগবে।

তবে তথ্যটা হয়তো অন্যদের ও কাজে লাগবে -- সেই জন্যই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসাবে এবার থাক।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আরেকটা উদ্দেশ্য হয়তো তথ্য সংগ্রহ -- এই ধাক্কায় না এর বীজ কতখানি বোনা গেল --পরে কখনো সুশীল পূণর্জাগরণ হলে এই তথ্য কাজে লাগবে।
তবে তথ্যটা হয়তো অন্যদের ও কাজে লাগবে -- সেই জন্যই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসাবে এবার থাক।

বিধাতাদের মনে কী আছে, তা জানা না গেলেও আপনার তোলা এই পয়েন্টটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। তা আমাদেরও কাজে লাগতে পারে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।