ক্ষুধার্ত দানব খাদ্য না পেলে কী করে? রূপকথা বলে, তখন সে নিজেরই মাংস খাওয়া শুরু করে। সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মারামারি-রক্তপাত দেখে এ ছাড়া আর কী বলা যায়? একদিকে প্রধানমন্ত্রীর তিরস্কার-হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে মাস্তান বাহাদুরদের সশস্ত্র বাহাদুরি সমানে চলছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক, এক মাসের মধ্যে দুইবার ছাত্রলীগের দুই উপদলের মধ্যে ক্যাম্পাসের দখল হলের দখল_এমনকি টেন্ডারের চাঁদার দখল নিয়ে লড়াই হয়েছে। দুইবারই নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের হলের ভেতর, কক্ষের ভেতর কিংবা ছাদের ওপর জিম্মি করে নির্যাতন করা হয়েছে। হল তো নিস্প্রাণ কাঠামো, তাই নিরীহ ছাত্রদের পিটিয়েই জয়ীরা তাদের জয়ের প্রমাণ রাখে । ২০০৫ সালের ১৮ এপ্রিল এভাবেই নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এ ক্যাম্পাসেই ছাত্রদলের ক্যাডারদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা বেধে গিয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, পুলিশ ও সশস্ত্র ক্যাডারের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ছবি। এবারও তখনকার মতো প্রক্টরের উপস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপকে অস্ত্রের মুখে খেদিয়ে হল দখল করা হয়। কিন্তু ঘটনার আরও বাকি আছে এবং তা ততটা প্রকাশ্য নয়। সেদিকে নজরপাত করাই আজকের উদ্দেশ্য।
প্রথমত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী ততপরতার শেকড় যে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে, এ খবর আমরা জানি। বড় রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের আশ্রিত গডফাদারদের ইন্ধন ছাড়া যে এসব চলতে পারে না, তা সাদা চোখেই বোঝা যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দল-উপদলের ভূমিকা অত ফকফকা কি? রাতে সূর্য দেখা যায় না বলেই তো আর সূর্যের অস্তিত্ব নাই হয়ে যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতার রাজনীতিতে মুষ্ঠিমেয় কিছু শিক্ষকের ভূমিকা তেমনি সূর্যসমান। যদিও বেশির ভাগ সময়ই তা গোপনীয়তার পর্দায় ঢাকা থাকে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির তিনটি ধারা বা গ্রুপ বিদ্যমান: ১. বিএনপি-জামায়াতপন্থী, ২. বিএনপি-আওয়ামী লীগের মিলিত ‘সমমনা গ্রুপ’ এবং ৩. খাঁটি আওয়ামীপন্থী গ্রুপ। এর বাইরে রয়েছে নির্দিষ্ট গ্রুপহীন একদল শিক্ষক। তাঁদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও শিক সমিতির নির্বাচন, উপাচার্য নির্বাচন, প্রশাসন ও ক্যাম্পাস পরিচালনাসহ বহু বিচিত্র প্রয়োজনে এঁরা তাঁদের আনুগত্য বিক্রি করেন। দাম বাড়ানোর জন্য নানা কূটচাল ও ফন্দিবাজির সঙ্গেও এঁরা জড়িত হন। এ গ্রুপগুলো স্থায়ী হয় না। স্বার্থের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হন বটে। আবার স্বার্থের প্রয়োজনেই সেই মৌসুমি সমঝোতা ভেঙে যায়। শুরু হয় নতুন স্বার্থভিত্তিক নতুন গোষ্ঠীর রাজনীতি। জনপ্রিয় বচনে এর নাম ‘ডিগবাজি’। যা-ই হোক, গ্র“পগুলোর গঠন দেখলেই বোঝা যায়, আসলে রাজনীতি মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে ক্ষমতার হিস্যা ও প্রশাসনিক শীর্ষ পদ। আর কে না জানে, ক্ষমতা বা পদ থাকলে বাকি সব বিষয় আপনাতেই হাতে এসে যায়। খবরে প্রকাশ, ঘাস কাটা কমিটিতে থাকার জন্যও নাকি গ্র“পিং-লবিং হয়। সত্যিই কলিকাল!
জার্মান দার্শনিক হেগেল বলতেন, যেমন জাতি তেমন নেতা। আবার উল্টোটাও সত্য। আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাল-হকিকত দেখে মনে হয়, হেগেল বোধকরি মিথ্যা বলেননি। শিক্ষক রাজনীতি যেমন, ছাত্ররাজনীতিও তেমনি; আবার ছাত্ররাজনীতি যেমন, শিক্ষক রাজনীতিও তেমনি। উভয়ের যোগটি স্পষ্ট হয় যখন দেখি, জাবির ওই তিনটি ধারার শিক রাজনীতির আদলে ছাত্ররাজনীতিতেও একই রকম তিনটি ধারা গজিয়ে যায়। সেখানে রয়েছে একটি ছাত্রশিবির-সমর্থিত খাঁটি ছাত্রদল, একটি খাঁটি ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল-সমর্থিত ছাত্রলীগ। নতুন সরকারের সূর্যোদয়ের দিন থেকে ছাত্রদলের ক্যাডাররা আর স্বনামে নেই। ঠিক যেমন অতীতে মতার রোশনাই ফুরানোর পর ছাত্রলীগও বেমালুম লুপ্ত হয়েছিল। গুজব রয়েছে, বিএনপি সরকারের বিদায়ের পর ছাত্রদলের কনিষ্ঠ কর্মীরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র ছাত্রলীগকে দেওয়ার বিনিময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগে যোগদানের সুযোগ পায়। এরই অপর নাম হয় ছাত্রদল-সমর্থিত ছাত্রলীগ।
এরকম বেমিল ঐক্য আগেও হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে আন্দোলনে নামলে তার বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের একাংশের আত্মরক্ষার ও আন্দোলন দমনের ঐক্য হয়। কেননা সে সময় উভয় দলের ক্যাডারদের বিরুদ্ধেই যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি নাট্যতত্ত্ব বিভাগের একজন শিকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের সময়ও দেখা যায়, তিনি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের বিরোধী শিক্ষকদের কোনো একটি গ্রুপের সমর্থন পাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য কিছু ছাত্রকে পেটায় ওই শিক্ষকের মতাদর্শের বিপক্ষের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা। এ রকম ঘটনা অজস্র। সর্বশেষ ১৪ ফেব্র“য়ারিতে প্রশাসনের সরাসরি মদদে এক গ্র“পকে তাড়িয়ে আরেক গ্র“পের রাজকীয় পুনর্বাসনও দেখা হলো। পুলিশ, প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা (এঁরাও শিক্ষক) এবং হল দখলে আগুয়ান সশস্ত্র ক্যাডাররা একত্রে ১০০ বর্গফুটের মধ্যেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চালিয়ে গেছে। আমেরিকা-রাশিয়া না পারুক, কংগ্রেস-লীগ না পারুক, স্বার্থের জন্য এরা দিব্যি প্রতিপক্ষের সঙ্গেও সহাবস্থান করতে পারে।
সুতরাং, শিক্ষাঙ্গনে শান্তি নষ্টের জন্য কেবল ছাত্র-সন্ত্রাসীদের দুষলে চলবে না, কেবল কেন্দ্রীয় নেতাদের উদাসীনতাকে দায়ী করলেই দায়িত্ব ফুরায় না। বরং দল-ক্যাডার-শিক্ষক এ ত্রিভুজ ঐক্যের পুরোটাকেই মনোযোগে আনতে হবে। এ ত্রিভুজের ভূমির বাহু হচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা কমিটির ভেতরকার সর্বময় মতার অধিকারী কোনো নেতা বা নেত্রী। মতার এ ভূমিটিই মূল। এর ওপর একদিকে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাডার-নেতার মতার বাহু, অন্যদিক থেকে হেলান দিয়ে মিলেছে শিক নেতার মতার বাহু। এ ত্রিভুজের মধ্যে বহুভাবে বন্দী হয়ে আছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষকেরা। একজন সাধারণ ছাত্র বা ছাত্রী, যে হয়তো কেবল পড়ার মধ্যেই থাকতে চায় অথবা যে হয়তো কোনো প্রগতিশীল ছাত্র বা সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী, তার জন্য সসম্মানে শিক্ষাজীবন শেষ করা পুলসিরাত পার হওয়ার সমান কঠিন। তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিছিলে যেতে হবে, তার জন্য বরাদ্দ সিটটি পেতে তেল-তোয়াজ করতে হবে কিংবা যখন-তখন সেই সিটটি ছেড়ে দিতে হবে। নির্দলীয় বা প্রগতিশীল শিক্ষকদের অবস্থাও এর থেকে বেশি সুখকর নয়। সেরা যোগ্যতা প্রমাণ করেও অনেকে শিক হতে পারেন না। তিনিই পারেন, যাঁর যোগ্যতা যা-ই হোক লবি উচ্চমতাসম্পন্ন। এভাবে শিক্ষক হওয়ার জেরে তাঁকে কোনো না কোনো গ্র“পকে সমর্থন দিতে হবে। নইলে আবাসনসুবিধা পাবেন না, যথাসময়ে প্রমোশন হবে না ইত্যাদি। তাই প্রশ্ন জাগে, এ নিরীহ কিন্তু মেধাবী শিক্ষকদের রায় কী করা হবে? কী করা হবে শিক্ষক রাজনীতির ভেতরকার অসাধু দলাদলির ব্যাপারে?
বিষয়টা অনেক সমুদ্রের গভীরের স্রোতের মতো। সমুদ্রের ওপরের জল যখন খুব শান্ত, তখনো কিন্তু তলায় গভীর আলোড়ন চলতে পারে। আজকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সন্ত্রাসী আলোড়ন দেখা যাচ্ছে, তা হয়তো তলায় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ, উপাচার্য পদ নিয়ে গোষ্ঠীগত টানাটানিরই প্রতিফলন, ক্ষমতার কুস্তিরই প্রতিক্রিয়া। প্রতিক্রিয়ায় না মজে আমাদের তাই তাকাতে হবে ক্রিয়ার দিকে, ক্ষমতার উতসের দিকে। পরিবর্তন যদি ঘটাতে হয়, ঘটাতে হবে সেখানে। তা না হলে ছাত্ররাজনীতিকে বলির পাঁঠা করা নিষ্ফল হতে বাধ্য।
তবে আশু পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে শিক্ষকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত তিনজনের প্যানেলের যেকোনো একজনকে বেছে নেওয়ার যে মতা আচার্যের হাতে অর্পণ করা হয়েছে, তা সংশোধন করতে হবে। তার মধ্য দিয়েই সরকারে আসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাব ফেলার সুযোগ থেকে যায়। এ রকম অবস্থায় ওই তিনজনের মধ্যে কে কার থেকে বেশি অনুগত, ক্যাম্পাসের ওপর কার বেশি নিয়ন্ত্রণ, তা প্রমাণের প্রতিযোগিতা চলে। তার জের ধরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। উপাচার্য নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ভোটেই হতে হবে।
দখলদারির এ চিত্র কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে সর্বত্রই দেখা যায়। সবখানেই ছোট-বড় নানা ক্ষমতার চক্র সর্বময় মতার অধিকারী হয়ে বসে আছে; যেন রাষ্ট্রের ভেতর একেকটি উপরাষ্ট্র। সরকারি দল বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা নির্দিষ্ট এলাকা বা প্রতিষ্ঠানের ওপর দখলদারির অলিখিত ইজারা নেয়। সেটাই তাদের উপরাষ্ট্র। তার ভেতরের সবকিছুর ওপরই তাদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। বিনিময়ে তারা সরকার বা রাষ্ট্রের ক্ষমতাবানদের চাহিদা মেটায়, সমর্থন দেয়। ক্ষমতার এ বিষফোঁড়া কেবল রাজনীতিকে আশ্রয় করেই ফুলে-ফেঁপে ওঠেনি। রাজনীতির বাইরে থেকেও আমরা এরশাদ শিকদারদের উত্থান দেখেছি। জরুরি অবস্থায় যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ, তখনো বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতি কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে রাজনীতি চলেছে। তাই যতক্ষণ না রাষ্ট্র সত্যিকার রাষ্ট্র হয়ে উঠছে, অর্থাত সবখানে অধিকারবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা যাচ্ছে ততক্ষণ ছাত্র বা শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে কিছু হবে না। ভাংতে হবে উপরাষ্ট্র ধরনের মতার ঘোঁটগুলো। সমাজে যতণ দুর্বত্ত মতা থাকে, থাকে দুর্নীতি ও দখলের চর্চা, ততণ পরিবর্তনের আশা কুহক জাগাবে, বাস্তবে ধরা দেবে না।
জরুরি অবস্থার সময় আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র সংস্কার করে ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের লেজুড়বৃত্তির সুযোগ বন্ধ করা হয়। কিন্তু তাতে কি তারা স্বাধীন ভূমিকা পালন করছে? তাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলেও লেজুড়বৃত্তি ও সন্ত্রাসী দাপট বন্ধ হবে না। আঞ্চলিক সমিতি কিংবা বৃক্ষপ্রেমিক সংঘের নামে তাদের দাপট যে চলবে না, তার নিশ্চয়তা কী? পাশাপাশি এটা নীতিরও প্রশ্ন। সংগঠন করা, মতপ্রকাশ করা সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার। আশু সমস্যা থেকে পরিত্রাণের কৌশলের নামে এ নীতিকে আমরা বিসর্জন দিতে পারি না। কেবল ইতিহাসের দোহাই নয়, এ বর্তমানেও নির্যাতন, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মেধাবী ও প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের ধারা বিদ্যমান। এরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে, যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধেÑএমনকি সন্ত্রাস ও দখলদারির বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের নামে আমরা কি এ ইতিবাচক ধারাকেও নিষিদ্ধ করে ক্যাম্পাসগুলোকে অরাজনৈতিক পরিচয়ের রাজনৈতিক ক্যাডারদের অভয়ারণ্য বানাতে দেব? ভুলে গেলে চলবে না, পঞ্চাশের থেকে আশির দশকের শেষ অবধি যে ছাত্র আন্দোলন আমরা দেখি, তা কিন্তু স্বাধীন ধারার। লেজুড়বৃত্তি তারা মানতো না। কী বায়ান্ন আর কী ঊনসত্তর, আর কী এরশাদশাহীর বিরুদ্ধে আন্দোলন; প্রতিবারই দেখা গেছে ছাত্ররা রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে এগিয়ে গেছে। নেতাদের কথা যদি তারা সবসময় শুনতো, তাহলে আমাদের অনেক গৌরবই হাতছাড়া হওয়ার ভয় ছিল।
প্রকৃতি ও সমাজে কোনো কিছুই শূন্য থাকে না। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পথে শিক্ষাঙ্গনকেও ক্ষমতার দাপটশূন্য করা যাবে না। দল-লীগ-শিবিরের শূন্যতা সেখানে অন্য কিছু দিয়ে পূরণ হবে। সেটা যাতে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী-অভিভাবকদের গণতান্ত্রিক ক্ষমতা দিয়ে পূরণ হয়, সেই বন্দোবস্ত আগে করা চাই।
সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও লেজুড়বৃত্তি আজ সমুদ্রসমান হয়ে গেছে। কিন্তু সমুদ্র কি সেচা যায়? নদনদীর বিশুদ্ধ পানি যত বেশি সেই দূষিত সমুদ্রে এসে পড়বে, ততই সমুদ্রও আপন নিয়মে দূষণমুক্ত হবে। সেই নদী হলো জনগণ। হুকুমের বলে সেই নদীকে বইয়ে দেওয়া অসম্ভব। তার জন্য জনগণ তথা ছাত্র ও শিক্ষক সমাজের যে সংখ্যাগরিষ্ঠটি অংশটি আজ ক্ষমতার চাপে-তাপে নির্জীব, তাদের জন্য পথ করে দিতে হবে। তাদের শক্তিশালী করতে হবে। দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য হলেও সেটাই এ দুর্দশা থেকে বেরিয়ে আসার পথ।
আমরা পথ না পাই, পথে নামার নামে নতুন করে পথ হারাতে চাই না।
***এটি আজকের প্রথম আলোতে প্রকাশিত। স্বতন্ত্রভাবে বললে হয়তো সরাসরি আরো কিছু কথা বলা যেত।
মন্তব্য
জ্বি, এই হইল ঘটনা!
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
কোন পথে যে যাচ্ছি বোঝা বড় মুশকিল! সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ যখন সব কিছুর উপরে উঠে আসে তখন সে সমাজ বা রাষ্ট্র নিয়ে স্বপ্ন দেখতেও ভয় করে!
এ আর নতুন কি! আন্ডার দ্য টেবল এখন সব একাট্টা হয়েছে সলিড মেটালের বর্ম বানাতে ব্যস্ত, যেন আগামী পঞ্চাশ বছরেও কেউ তাদের ছুতেঁ না পারে! দু'বছরের শিক্ষা এখন বুমেরাং হয়ে নতুন দিন বদলের শিক্ষা দেখাবে বিশ্বকে!
এই আশা করতে কোন অসুবিধে নেই, তবে করা ছাড়াও গতি নেই। ভালো লাগলো লেখাটা
আসলে এই কথাগুলো ব্যাখ্যা করেই পুরো লেখাটা লিখবার দরকার ছিল। কিন্তু ওপরওয়ালারা তা ছাপবেন কেন? তাই ভনিতা করে লেখার এই শেষ অংশে আসতে হলো।
নদুন রাজনীতি নির্মাণ ছাড়া আসলেই আমাদের কোনো পরিত্রাণ নাই। বাংলাদেশ এভাবে চলতে পারে না।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
লেখাটায় বেশ কিছু প্রশ্নের ব্যাখ্যা পেলাম।
দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য এ কাজ করতে হবে এটা বিশ্বাস করি। একজন নির্জীব মধ্যবিত্ত হিসাবে কেবল আশায় বুক বাঁধি একাজ মানুষ কোন একদিন করবে। কোন্ মানুষ, কখন, কিভাবে করবে সেটা নিয়ে তবু অনেক প্রশ্ন রয়ে গেল।
ঠিক। আমারও মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র প্রশাসনে গণতন্ত্র আনাটাই নিকট সময়ের একমাত্র করণীয়।
আশির দশকের পরে ঠিক কি কি বিবর্তন হল সেটা নিয়ে মনে হয় আরেকটু ব্যাখ্যা দেয়া দরকার।
আরেকটা তাত্ত্বিক প্রশ্ন রইল -
এরকম সত্যিকার রাষ্ট্র কি আসলেই সম্ভব? নাকি অনেক উপরাষ্ট্রের কনফেডারশন হওয়াটাই রাষ্ট্রের ভবিষ্যত? আমি ঠিক ভেবে পাইনি। আপনি হয়ত বলতে পারবেন।
সিভিল সোসাইটি বলতে রাষ্ট্রক্ষমতাকামী বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান দেখি, ৫০-৬০ পর্যন্ত আমাদের ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-পেশজীবী সংগঠনগুলোকেই বুঝতে হবে। আজকে যারা রাজনীতিবিরোধী কিন্তু রাষ্ট্রের সঙ্গে, সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে, পুঁজির কারবারের সঙ্গে জড়িত, সংজ্ঞা অনুযায়ী তাদের মোটেই সিভিল সোসাইটি বলা যায় না। তার মানে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেতর-বাহির দুদিক থেকে ধ্বংস করেই এই সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইংরেজ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে স্থানীয় অনুগত জমিদারশ্রেণী তৈরি করে তাদের দিয়ে উপনিবেশ বজায় রেখেছিল ২০০ বছর। আর আজ সিভিল সোসাইটি পত্তন করে দেশকে নয়া-উপনিবেশ বানাবার কাজ এগিয়ে চলছে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ তাদেরই কর্মসূচি। এই সিভিল সোসাইটির নবী ড. ইউনূস তাই এ বিষয়ে সদাসোচ্চার।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ঠিকাছে। আমি আসলে ৮০র দশকের পরবর্তী বৈশ্বিক ইতিহাস আর বাংলাদেশের সমসাময়িক ঘটনাবলীর সাথে ছাত্ররাজনীতির বিবর্তনের টাইমলাইনটা মেলাতে চাচ্ছিলাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
অনেকগুলো সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য ফারুক ওয়াসিফকে ধন্যবাদ। তিনি নিজেই বলেছেন সমস্যা সমুদ্রসমান। আমাদের এখন প্রয়োজন শিক্ষাঙ্গনকে তড়িৎ এই হাঙ্গরতিমির হাত থেকে বাঁচানো। জাতীয় রাজনীতির বহতা নদী বয়ে যেতে যেতে চড়াইউৎরাই পেরিয়ে একসময় হয়ত গনতেন্ত্রর চর্চার হাত ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। তবে ততদিনে আমাদের সর্বনাশের বোঝা মাথাপিছু প্রত্যেক নাগরিকের ঘাড়ে আরও আরও বেশি ভারি হয়ে উঠবে। যা একদিন আমাদের চলতশক্তিকে রহিত করে আমাদেরকে পঙ্গু করে দিবে। তেমন কিছু যাতে না হয় সেজন্য প্রিয়েমপ্টিভ মেজার আমাদের নিতে হবে এখনই। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন অনেক দিনের। রাষ্ট্রীয় সীমানার স্বাধীনতা অর্জিত হলেও আমরা আসলেই পরাধীন এবং নতুন করে নব্য কর্পোরেট উপনিবেশের কষাঘাতে জর্জরিতও বটে। আমরা জ্ঞানপ্রযুক্তি, সম্পদ, সংস্কৃতি সবদিক দিয়ে দরিদ্র বলে আর্থিক দৈন্যতা আমাদের আজও ঘোচেনি। জ্ঞানচর্চাই এই পরাধীনতা থেকে আমাদেরকে বের করে নিয়ে আসতে পারে।
শিক্ষাঙ্গন জাতিরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সেখানে এত মহামারি লেগে থাকলে জাতির পরাধীনতা কোনদিন ঘোচবে না। এজন্য শিক্ষাঙ্গনে তড়িৎ ফল লাভে আইন করে ছাত্রশিক্ষক রাজনীতি অচিরেই বন্ধ করে দেয়া হোক। যত শীঘ্র আমরা তা করতে পারব তত শীঘ্রই আমরা এর ফল পেতে থাকব; শুধু শিক্ষাঙ্গনেই না রাষ্ট্রের অন্য সব অঙ্গেও এর শুভ ফলাফল আমরা পেতে থাকব। আমার দাবি আইন করে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রশিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করে যদি কোন শুভ ফল না আসে তাহলে আমরা আবার রাজনীতি শুরু করতে পারব; শিক্ষাঙ্গনে যদি সত্যিই এর কোন দরকার থাকে! তাই আজ ছাত্রশিক্ষকদের সকল রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে জ্ঞান তপস্যায় মনোযোগ দেয়া সবচেয়ে জরুরী বলেই মনে করছি। মনেপ্রাণে চাই, তাই হোক। রাজনীতিটা ছেড়ে দেই জাতীয় নেতাদের হাতে। শিক্ষাঙ্গনের গণ্ডি সাফল্যের সাথে পার হয়ে দেশের মেধাবীরা যোগ দিক জাতীয় রাজনীতিতে। তখন আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে বাধ্য। দুদিন হকিস্টিক নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে শ্লোকের মত দেশ ও জাতিকে উদ্ধারের রঙচঙে অসার, ফাঁকা বক্তৃতা দিতে পারা মূর্খ রাজনীতিবিদ আমাদের দরকার নাই। রাজনীতিতে দরকার মেধাবী ব্যক্তিত্ব। সুদিন তখনই আসবে যখন শিক্ষাকে আমরা মূল্য দিতে পারব। যখন শিক্ষাঙ্গন আমাদের আলোর দিশারী হবে। যখন সমাজের নর্দমায় শিক্ষাঙ্গন হোঁচট খাবে না।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতিতে আগের মতোই দুটো ধারা। বাম ও ডান। বামদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জোটবদ্ধতায় অনেকগুলো বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছে গত এক দশকে। জাবিতে ধর্ষক-বেতনফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে, রাজশাহীতে শিবিরের বিরুদ্ধে, ঢাবিতে যৌন নিপীড়ন-বাণিজ্যিকায়ন-সন্ত্রাস- শামসুন্নাহার হল আন্দোলন এবং ২০ আগস্ট ২০০৭-এর সেনাসন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের নের্তৃত্বেও বামেরাই ছিল। জিজ্ঞাসু কি এগুলোও বন্ধ করে দিতে বলছেন? বাংলাদেশে খনিজ লুন্ঠনের বিরুদ্ধে শিক্ষাঙ্গনে একমাত্র তারাই সোচ্চার। তারা দুর্বল হলেও প্রশাসন ও মাস্তানদের কাছে একটা হুমকি। এ কারণে যে, বেশি বাড়াবাড়ি হলে শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে প্রতিরোধে নামে।
বন্ধের ফল কী হবে তা আমি লেখাটায় সংক্ষেপে বলেছি। সেগুলো কি আবার একটু দেখবেন জিজ্ঞাসু?
দ্বিতীয়ত, এরশাদ আমলেও তো অনেকদিন ছাত্র-শ্রমিক রাজনীতি বন্ধ ছিল। কিন্তু তখনও জাতীয় পার্টির গুন্ডাদের সন্ত্রাস চলেছে। বলপ্রয়োগ বাংলাদেশের ধনীদের তিনটি রাজনৈতিক দলেরই একমাত্র সাংগাঠনিক সহায়। আদর্শ দিয়ে তারা মানুষ টানতে পারে না। তাই ক্ষমতা দিয়ে টানতে হবেই। অন্যদিকে সন্ত্রাস এখানকার অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সুষ্ঠু পুঁজিবাদ থাকলে সেখানে খুচরা সন্ত্রাসের প্রয়োজন হয় না। বিক্ষোভ-বিদ্রোহ পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে দমন করা যায়। কিন্তু এখানকার লুটেরা পুঁজিবাদে জমি দখল, বাজার দখল, প্রতিদ্বন্দ্বীকে হটানো, শ্রমিক ঠেকানোসহ ইত্যাকার বহু প্রয়োজন মসৃণ করতে মাস্তান লাগবেই। এটা অনেকের জন্য কর্মসংস্থানও। এসবের বিহিত না হলে, আজ ছাত্র রাজনীতি কাল শ্রমিক সংগঠন, পরশু কৃষক আন্দোলন বন্ধ বুমেরাং হয়ে ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র কায়েমে সহায়তা করবে।
প্রিয়েমপ্টিভ মেজার আমাদের নিতে হবে এখনই। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন অনেক দিনের। রাষ্ট্রীয় সীমানার স্বাধীনতা অর্জিত হলেও আমরা আসলেই পরাধীন এবং নতুন করে নব্য কর্পোরেট উপনিবেশের কষাঘাতে জর্জরিতও বটে। আমরা জ্ঞানপ্রযুক্তি, সম্পদ, সংস্কৃতি সবদিক দিয়ে দরিদ্র বলে আর্থিক দৈন্যতা আমাদের আজও ঘোচেনি। জ্ঞানচর্চাই এই পরাধীনতা থেকে আমাদেরকে বের করে নিয়ে আসতে পারে।
শিক্ষাঙ্গন জাতিরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সেখানে এত মহামারি লেগে থাকলে জাতির পরাধীনতা কোনদিন ঘোচবে না। এজন্য শিক্ষাঙ্গনে তড়িৎ ফল লাভে আইন করে ছাত্রশিক্ষক রাজনীতি অচিরেই বন্ধ করে দেয়া হোক। যত শীঘ্র আমরা তা করতে পারব তত শীঘ্রই আমরা এর ফল পেতে থাকব; শুধু শিক্ষাঙ্গনেই না রাষ্ট্রের অন্য সব অঙ্গেও এর শুভ ফলাফল আমরা পেতে থাকব।
রাজনীতিটা তো তাদের হাতেই ছাড়া আছে। তার ফলও তো দেখা যাচ্ছে। তবে? আমার মনে হয় আমার লেখার যুক্কিগুলো আমি আপনার কাছে পরিষ্কার করতে পারিনি জিজ্ঞাসু।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ছাত্র রাজনীতিতে তিনটি ধারা বলা যায়- বাম, ডান আর খাইখাই ধারা। খাইখাই গোষ্ঠীর ছাত্ররাজনীতি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যেটা আপনিও উল্লেখ করেছেন, কারণ তাদের মূলরাজনৈতিক দল ক্ষমতার মসনদের মধু খেতে পেরেছে যা থেকে তারাও কিছু কামড়াকামড়ি করে ভাগ পায় ও পেয়েছে। বাম আর ডানদের পক্ষে বাঙলাদেশের ক্ষমতার মসনদে চড়া সম্ভব হয়নি এখনও। তাই তাদের আচরণ যাচাই করা সম্ভব হয়নি। বামেরা 'বিপ্লবী' মন্ত্রে উজ্জীবিত আর ডানেরা 'শহীদী' মন্ত্রে। এযাবৎ তাদের সমর্থনপুষ্ট ছাত্ররাজনীতিকরা সমাজতান্ত্রিক আদর্শ আর বেহেস্ত দোজখের আদর্শের মন্ত্রে মগজ ধোলাই হয়ে নিজের মূল্যবান সময় দিয়ে কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহলের পক্ষেই মূলত কাজ করে যাচ্ছে। কারণ স্বার্থান্বেষী মহল লাঠালাঠি করার জন্য অপর একটি পক্ষ পাচ্ছে। ছাত্রদের মহান দায়িত্ব কি দেশের সমস্যা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা? না কি অধ্যয়ন করা?
উদ্ধৃতি-
জাবিতে ধর্ষক-বেতনফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে, রাজশাহীতে শিবিরের বিরুদ্ধে, ঢাবিতে যৌন নিপীড়ন-বাণিজ্যিকায়ন-সন্ত্রাস- শামসুন্নাহার হল আন্দোলন এবং ২০ আগস্ট ২০০৭-এর সেনাসন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের নের্তৃত্বেও বামেরাই ছিল। জিজ্ঞাসু কি এগুলোও বন্ধ করে দিতে বলছেন?
হ্যাঁ। আমি শিক্ষাঙ্গনে সবধরনের ছাত্রশিক্ষক রাজনীতি আইন করে বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে। আপনি যেসব সমস্যার কারণে আন্দোলনের কথা বললেন সেসব কি ছাত্রদের দায়িত্বে সমাধান করতে হবে? তাহলে সমাজ, রাষ্ট্র, প্রশাসন, আইন আদালতের কোন দরকার নেই। যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছেন বেশিরভাগ সমস্যাই শিক্ষকদের রাজনীতি করার কারণে উদ্ভূত। রাজনীতি করা শিক্ষকরা শয়তানি চাল চেলেছে, সমস্যা সৃষ্টি করেছে; ছাত্ররা তার প্রতিবাদ করেছে। এমন যদি হত, সমস্যাই সৃষ্টি হয়নি তাহলে কি ভাল হতনা? বেতন ফি বৃদ্ধির আন্দোলন ইস্যু না পেয়ে অহেতুক ইস্যু বানানোর আন্দোলন। সময়ের আবর্তে যৌক্তিক বেতনফি বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া আন্দোলন করতে হলে অভিভাবকরা এমন আন্দোলন করবেন, ছাত্ররা কেন?
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রশিক্ষক রাজনীতি বন্ধের ফল কী হবে তা বন্ধ করে দিয়ে যাচাই করা হোক। দশ বছরের মধ্যে আমরা রাজনীতিতেও মেধাবী লোক পাব, কর্মস্থলেও মেধাবী চাকুরে পাব। সারাবছর পড়াশোনা না করে লেজুড়বৃত্তি করে উপরমহলের সুপারিশে চাকুরী নেয় যেসব কুছাত্ররা, তাদের হাত থেকে সমাজের প্রতিটা প্রতিষ্ঠান মুক্তি পাবে। অফিস-আদালত, কলকারখানায় দক্ষ, যোগ্য অফিসার পাব। সবদিক থেকে আমাদের ভাল হবে। যারা রাজনীতিতে নামতে চায় তারা সাফল্যের সাথে পড়ালেখা শেষ করে মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিয়ে "ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র"কে রুখতে আত্মনিয়োগ করুক। ছাত্রদেরকে কেন পড়ালেখা বাদ দিয়ে "ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র" রুখতে হবে?
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
লেখাটা পড়ে হায়দার হুসাইনের একটা গানের কথা বার বার মনে পড়ছিল, এ কোন উৎসব নয় ......কার কতো ক্ষমতা আছে তারই করুন নিদর্শন।
জার্মান দার্শনিক হেগেল বলতেন, যেমন জাতি তেমন নেতা।
উলটো আর সোজা দুইভাবেই এটা সত্যি।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
হ্যাঁ, জিজ্ঞাসু তৃতীয় দুনিয়ায় যেখানে নাগরিক রাজনীতি সংগঠিত হয় নাই, যেখানে জুলুম ও ধোঁকাবাজির কারণে উৎপাদনী শ্রেণীগুলোর রাজনীতি অস্তমিত, সেখানে আপাত স্বাধীনতার কারণে ছাত্ররাই অগ্রণী গোষ্ঠী। রাজনৈতিক অর্থে একে স্বতন্ত্র শ্রেণীও বলতে পারেন। এবং অগ্রণী হিসেবে, গরিব মানুষের করের টাকায় প্রতিপালিত হিসেবে তাদের একটা রাজনৈতিক দায় রয়েছে। উপরূন্তু এখনো তাদের মধ্যেই গণতান্ত্রিক চর্চা বেশি। গত আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থানের সময় ছাত্ররা সেই গণতান্ক্রিক ভূমিকার প্রমাণও রেখেছে। ঐ ঘটনার পরই সেনাতন্ত্রের দাপট কিছুটা প্রশমিত হয়।
আপনি নিরেট প্র্যাগমাটিক অবস্থান থেকে বন্ধ করার পক্ষে বলে মনে হয়েছে। সে ব্যাপারেও আমার লেখায় বলেছি, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলেই সন্ত্রাস বন্ধ হবে এমন কোনো প্রামাণিক বা যৌক্তিক ব্যাখ্যা নাই। থাকলে আপনার সঙ্গে একমত হতে আমার বেশি বিলম্ব হতো না।
তার বাইরেও, রাষ্ট্র, রাজনীতি বা অধিকার বিষয়গুলো নীতির বিষয়, ব্যবসায়িসুলভ লাভালাভের বিবেচনা থেকে তা দেখা যায় না। মধ্য ও নিম্নবিত্ত সমাজের আর কোনো অংশের যেখানে কোনো মতপ্রকাশের অধিকার নাই সেখানে ছাত্রদের এই অধিকার কাটানোর কথা বলা মানে সব অর্থেই দমবন্ধ সমাজ বানানো।
আজকে যারা সন্ত্রাস বন্ধের কথা বলছেন, তারা কিন্তু ড়্যাবের সন্ত্রাস বন্ধের বিষয়ে নিশ্চুপ। পুলিশও সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি করে, তাই তাদেরও আমরা বন্ধ করে দিই? কী বলেন। যারা এসব নিদানের প্রবক্তা, তাঁদের চাওয়া হচ্ছে, এ দেশের সকল প্রতিরোধের উতসকে দমন করা। দেশ চালাবে, সিভিল-মিলিটারি-কর্পোরেট ত্রয়ী। রাজনীতিবিদরা হবে ম্যানেজার। কাজ শেষ হলে তাদের ফেলে দেয়া হবে। (প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এই আমলও তাই দুই আড়াই বছরের বেশি স্থায়ি হবে না। তখন আসবে জরুরি অবস্থা পার্ট টু। তার জন্যই আগাম ছাত্র-শ্রমিক রাজনীতি বন্ধ। সন্ত্রাসদমনে টাস্কফোর্স ইত্যাদি।)
জিজ্ঞাসু বলেছেন>
সাদা কথায় ঠিক নয় এ বিশ্লেষণ। প্রচলিতভাবে জেএমবি-থেকে আলীগ-বিএনপিকেই ডানপিন্থ বোঝানো হয়। আদর করে কেউ কেউ আলীগকে মধ্যডান বা মধ্যবাম বলে। আজকে সমগ্র ডানপন্থি রাজনীতিই আপনার ভাষায় খাই-খাই গোষ্ঠী। খারাপট দৃষ্ঠান্তটা তাদেরই। তাহলে তাদের অন্যায়ের শাস্তি বামপন্থি ছাত্ররা পাবে কেন? আর বামরা ক্ষমতায় যায়নি ঠিক, কিন্তু জামাত একাত্তরে এবং তার পরে বিএনপি-আলীগ-জাতীয় পার্টি সবাই ক্ষমতায় ছিল। ফলে বাংলাদেশে ডানপন্থার যাচাই হয়ে গেছে।
বর্তমান বামপন্থার আমূল পরিবর্তন না হলে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তাদের একাংশ ডানদের লেজে লেজে থাকবে, আরেকদল সমাজের যাবতীয় অণ্যায়ের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ট্র্যাজিক হিরো হবে, জিতবে না।
এটাও বুঝলাম না। আপনি হয়তো শর্টকার্টে বোঝাতে চেয়েছেন। বিপ্লব বা শহীদী জীবন কেউ যখন চায়, তখন তা রাজনীতির বাস্তবতাকে পাল্টে দেবার জণ্যই চায়, চায় নতুন সমাজ আনতে। সেটা ঠিকও হতে পারে ভুলও হতে পারে। কিন্তু এসবকে নিছক কারো মগজের সমস্যা বললে, দেশের অনেক লোককেই পাগল বলতে হয়। নাকি, আমাদের সমাজে তীব্র শ্রেণীবৈষম্য, রাষ্ট্রের অন্যায় আচরণ এবং সংষ্কৃতির মধ্যে পরস্পরবিরোধী উপাদানের ফলই হলো এই বিপরীত রাজনীতির একইসঙ্গে বহাল থাকা। হ্যাঁ, আমিও মনে করি, অনেক ক্ষেত্রেই এদের কারো কারো কাজ স্বার্থান্বেষী মহলের পক্ষেই যায়। কিন্তু বামদের আন্দোলনের কারণে পুলিশ বা দল-লীগ লাঠালাঠির সুযোগ পায়, এটা বলা মানে নির্যাতককে নয়, নির্যাতিতকেই দোষী বলা। জাবিতে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন বা শাসসুন্নাহার আন্দোলন মধ্যবিত্ত মহলে আদর পেয়েছে। বেতনফি নিয়ে আন্দোলন ততটা পায়নি। আপনি কি বলেন, ধর্ষকদের মাথায় করে রাখা, আর শামসুন্নাহার হলে মাঝরাতে পুলিশ প্রবেশ সয়ে নেওয়াই ভাল ছিল। কারা যেন বলে, যখন ধর্ষণ অনিবার্য, তখন সয়ে নেয়াই উত্তম। আপনার যুক্তি অনেকটা সেরকমই হলো না কি?
বেতনফি বাড়ানো নিয়ে কথা বাড়াচ্ছি না। আপনার যুক্তিটা বিশ্বব্যাংকীয় যুক্তির মতো। তবে আশা করি, আপনি সেনাবাহিনীর অস্ত্র কেনার ভর্তূকি কিংবা এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ির বিরুদ্ধেও বলবেন। শিক্ষার ব্যয় বাজারমূল্যে হয় না, হওয়া উচিত রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে।
আগুন যে হাত পোড়ায়, তা কি আর নতুন করে পরীক্ষা করে দেখবার প্রয়োজন আছে? অতীতে যখন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ছিল, তখনকার অভিজ্ঞতা কী বলে?
ভাল'র ধারণা কি কেবলই এই? যে দেশ দুর্নীতি, দখলদারি, রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, পরাশক্তির দখল, প্রতিবেশীর দমবন্ধ করা চাপ আর জলবায়ুজনিত কারণে ধ্বংসের মুখে, সেখানে ভাল অফিসার বানানোই চূড়ান্ত লক্ষ্য। রাজনীতির দায়িত্বটা সারবে ডাকু, ভণ্ড, মীরজাফর আর কর্পোরেট-সিভিল-মিলিটারি কর্তাবাবুরা?
এজন্যই বোধহয় ব্রিটিশ আমলে শিশুশিক্ষায় লেখা হতো, লেখাপড়া করে যে. গাড়িঘোড়া চরে সে। এটাই কলোনিয়াল সমাজের সেরা লক্ষ্য।
যেকোনো বিচারে শিক্ষাঙ্গনকে দুর্বৃত্তমুক্ত করতে হবে। কতিপয় স্যাডিস্ট তরুণদের, কতিপয় গডফাদার আর কতিপয় মূত্রকীট ধরনের শিক্ষকদের হাতে শিক্ষাঙ্গন জিম্মি থাকতে পারে না। আমাদের সময়ে সাধারণ শিক্সার্থীরা মিলে ক্যাম্পাস দখল করে রাখা দল-লীগ-শিবিরকে আমরা বিতাড়িত করেছিলাম। আমরা মানে বাম ও সাধারণ শিক্সার্থীরা মিলে। তারপরের ছয় মাস ক্যাম্পাস নিরাপদ ছিল। সরকারি মদদে আবার তারা আসে। কারণ, আমাদের ঐক্য দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। সমস্যাটা সেখানেই, সমাধানও এই পথে। বাংলাদেশের কোনো সমস্যারই কোনো শর্টকার্ট সমাধান নাই। শর্টকার্টগুলো সবসময়ই ফাঁদ হিসেবে আসে। যুদ্ধ ছাড়া একাত্তরে কি কোনো শর্টকাট ছিল? আজ বাংলাদেশে যুদ্ধ তথা গৃহযুদ্ধ ছাড়া কোনো উপায় নাই। সেটা না হলেই আসবে আরো আরো ১-১১। রক্তচাপ বাড়লে কিছুটা বের করে দিতে হয়, নইলে তা পুঁজ হয়ে বেরয়। আমরা রক্ত দিতে ভয় পাই, কিন্তু তা যে পুঁজ হয়ে আমাদেই পচাচ্ছে? তার কী হবে?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
এরকম সহজ ভাষায় ব্যখ্যাগুলো দেয়া জরুরী ছিল।
ঘুরেফিরে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে একই ধরনের যুক্তি আসছে। আমি বলতে চাই ছাত্রশিক্ষক রাজনীতির ফলাফল তো দেখছেন - দেশের স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত আপনার ভাষায় কতিপয় 'মূত্রকীট' ধরনের শিক্ষক, আমি বলি কতিপয় না, অনেক, পেয়েছি শিক্ষাঙ্গনে। একই ধরনের তাবেদার কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরিসংখ্যান টা কী দেশের কর্মক্ষেত্রগুলোতে? দেশ পিছিয়ে পরার পেছনে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। আপনি ছাত্রশিক্ষকদের রাজনীতিকে টিকিয়ে রেখে যে কাজটা করাতে চাচ্ছেন আমি সে কাজটাই বলেছি ছাত্ররা সাফল্যের সাথে তাদের পড়ালেখা শেষ করে মূলধারার রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করে সেখানে তাদের অবদানটা রাখুক। তাতে বরং কোন অন্যায়, অবিচারই প্রতিবাদহীনভাবে পার পাবে না। আমি এটাও বলিনি যে রাজনীতির দায়িত্বটা সারবে "ডাকু, ভণ্ড, মীরজাফর আর কর্পোরেট-সিভিল-মিলিটারি কর্তাবাবুরা"। এটাও সমর্থন করি না যে, ছাত্ররা এই কাজটা করবে। আমি জোর দিয়েই বলেছি শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি নয়। শিক্ষাঙ্গনে বর্তমান ব্যবস্থায় কেউই (না ছাত্র, না শিক্ষক) তাদের পরিপূর্ণ সম্ভাবনাটাকে (পটেনশিয়াল) কাজে লাগাতে পারে না। যত ক্রেডিট আওয়ার ক্লাস হওয়ার কথা ছাত্রশিক্ষক রাজনীতির কারণে তার ৬০ ভাগও সফল হয় না, যেখানে একশ ভাগই সফল হওয়া অত্যন্ত জরুরী। আপনার যুক্তি অনুযায়ী দেশের রাজনীতির ভার শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা নিতে আসা ছাত্রদের। আমি বলি না, এ দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের না। তাদেরকে পাকাপোক্ত করে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ দেয়া হোক আগে। তারপর তাদের মধ্যে যারা রাজনীতি সচেতন তারাই যখন মূল ধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবে তখন আপনার "ডাকু, ভণ্ড, মীরজাফর আর কর্পোরেট-সিভিল-মিলিটারি" গোষ্ঠীর দাপট কমতে বাধ্য। আমিও একটা উপমা দেই। আমি দেখেছি যে বাঁশ লোহার মত শক্ত হয়। যে বাঁশের স্ক্যাফোল্ড, কাঠামো ভিত্তি করে বড় বড় দালানকোঠা নির্মাণ করা যায়, কুঁড়ি অবস্থায় তার উপর যদি একটি হাঁড়ি চাপিয়ে দেয়া যায় তাহলে তা বাঁশ না হয়ে, নরম সব্জি হয়ে যায়। তা শক্ত বাঁশ হতে পারে না আর কোনভাবেই। এমনি কারণেই বিদ্যমান ছাত্ররাজনীতি গুণগত একজন রাজনীতিবিদও বানাতে পারছে না, সুশিক্ষিত নাগরিক তৈরিতেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ছাত্ররাজনীতি সন্ত্রাসী, ঠিকাদার রাজনীতিক উপহার দিয়েছে অনেক। তারাই বর্তমান রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে (আপনার ভাষায় ম্যানেজারি পাচ্ছে)। কারণ তারা শিক্ষাঙ্গনে রঙচঙে মিথ্যা বক্তৃতা দিতে শিখেই নিজেকে রাজনীতিবিদ ভাবতে শুরু করে। গৎবাঁধা কথায় তো দেশের উন্নতি হবে না। সুদূর প্রসারী চিন্তা যদি করি তাহলে দেশের উন্নতির জন্য মেধার মূল্যায়ন ও মেধার চর্চা এবং মেধা ভিত্তিক সমাজ গড়ার কোন বিকল্প নেই। তার জন্য শিক্ষাঙ্গনকে সকল রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে হবে। আমি সমস্যাকে সমূলে বিনাশ করতে ছাত্রশিক্ষকরাজনীতি বন্ধের পক্ষে বলছি আপনি শিকড়শুদ্ধ না উপড়ে সমস্যার বীজ রেখেই পরিচর্যার কথা বলছেন। তা থেকে যেকোন সময় ডালপালা বিস্তারিত হয়ে শিক্ষাঙ্গন অস্থির হয়ে ওঠার, শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হবার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
আমার "ভালর ধারনা"টা কিন্তু সদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে। আপনি যত সমস্যার কথা বলেছেন এসবের সমাধান আসতে পারে শুধু একজন মেধাবী, দক্ষ, সৎ অফিসারের হাত ধরে; একজন নিরপেক্ষ খাঁটি শিক্ষকের হাত ধরে। যা লক্ষ লক্ষ ছাত্রের রাস্তায় নেমে দাঙ্গা করার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। ছাত্রশিক্ষক রাজনীতি বন্ধ মানে সচেতন সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বন্ধ নয়। ছাত্রশিক্ষক রাজনীতি বন্ধ মানে নির্ঝঞ্ঝাট শিক্ষার পরিবেশ। আমি বলছি দেশের জনগণের পয়সার রিটার্ন ছাত্ররা পরিপূর্ণ সামর্থ দিয়ে পড়াশোনা করে জাতিকে ফেরত দিক। আন্দোলনের নামে শিক্ষাঙ্গনের পড়ার পরিবেশ নষ্ট করে নয়। শিক্ষাঙ্গনে আন্দোলন করতে গেলে শিক্ষার পরিবেশ তো বিঘ্নিত হবেই।
মগজ ধোলাই বলতে পাগল বোঝাবে কেন? মগজ ধোলাই হলে গতির সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। নতুনকে গ্রহণে অনীহা সৃষ্টি হয়। পরিবর্তনকে মানতে অপারগতা তৈরি হয়।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
চিন্তা উদ্রেককারী লেখা।
চিন্তা উদ্রেককারী সব কমেন্ট।
---আশফাক আহমেদ
নতুন মন্তব্য করুন