মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস আনোয়ার পাশার রাইফেল রোটি আওরাত। যুদ্ধের ঘনঘোর তাণ্ডব পেরিয়ে উপন্যাসটি আমাদের হাতে এসে পৌঁছলেও, তিনি আর পৌঁছতে পারেননি। একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর আল বদরের ঘাতকেরা তাঁকে নিয়ে যায়। পৃথিবীতে এরকম নজির আর কি আছে? আর কাউকে কি নিজের জীবন দিয়ে লিখতে হয়েছে জাতীয় জীবনের করুণ-কঠিন ট্র্যাজিক আখ্যান?
আজ যদি আমরা জানতে চাই ওই ভয়াবহ দুর্যোগে কীভাবে বেঁচে ছিল জাতির আত্মা, কীভাবে রক্ত নদী সাঁতরে অজস্র মৃত্যু পেরিয়ে বিজয়ের পাড়ে পৌঁছবার জেদ দানা বেঁধেছিল, তাহলে রাইফেল রোটি আওরাতের থেকে বেশি আর কে তা জানাবে? এ কেবল লাঞ্ছিত বাংলার হাহাকার নয়, তার রুখে দাঁড়াবারও দলিল। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ ক'টি উপন্যাস আছে আমাদের, লেখা হবে আরো অনেক। কিন্তু রাইফেল রোটি আওরাত অনন্য। আর কেউ একাত্তরের আলো-অন্ধকারের মধ্যে সশরীরে ঢুকে তাকে জানবার সুযোগ পাবেন না। আনোয়ার পাশা জেনেছেন এবং জানিয়েছেন। জানিয়েছেন তিনটি দিনের রোজনামচার মতো করে। জানিয়েছেন একাত্তরের শক্তি ও দূর্বলতা। প্রায় প্রফেটিক ভাবে দেখেছেন জাতীয়তাবাদীদের সীমাবদ্ধতা আর রাজাকারদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশল।
একাত্তরের এপ্রিলে লেখা শুরু হয়, শেষ হয় জুনে। কিন্তু ওই এপ্রিলেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন স্বাধীনতা আসন্ন। তাই মৃত্যুর আগে উপন্যাসের শেষ বাক্যে লেখেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অভয়বাণী: মা ভৈ। কী বিষ্ময়, চিরকালই নায়কেরা ধ্বংসের মুখে জীবিতদের আশার বার্তাই দিয়ে যান। যেমন দিয়েছেন প্রতিভাবান ব্রিটিশ কবি, দার্শনিক ও বিপ্লবী ক্রিস্টোফার কডওয়েল। (মাত্র আঠাশ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ততদিনেই লিখে গেছেন কবিতার নন্দনশাস্ত্র ইলিউশন এ্যান্ড রিয়েলিটি, ক্রাইসিস ইন ফিজিক্স, স্টাডিজ ইন এ ডায়িং কালচার।) স্পেনের গৃহযুদ্ধে তিনি শহীদ হন, যেমন শহীদ হন স্পেনেরই কবি লোরকা।
২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশ যে মৃত্যুর বিভীষিকায় ডুবেছিল, তার ভেতরে রক্ত, লাশ আর নরক সমান ভয়াবহতার মধ্যে আনোয়ার পাশা লিখছেন ওই মৃত্যুরই আখ্যান। ২৫ মার্চের পরের তিনদিনের গল্প এটি। এই গল্প ইতিহাস, এই গল্প একাত্তরের রক্তের ডাক। এই কাহিনী শত্র“ কবলিত বাংলাদেশের মুক্তির সাহসী প্রতিজ্ঞা। উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীনই যেন বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ বিপন্ন, ছিন্নবিচ্ছিন্ন ও ভীত কিন্তু আশাহীন নয়, সেই বাংলাদেশ কথা বলেছে তাঁর কলমে। কখন বলেছে? যখন সেই বাংলাদেশ গণহত্যার শিকার, যখন সেই বাংলাদেশ ধর্ষিত, যখন সেই বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী। তাই রাইফেল রোটি আওরাত লেখাটাও একটা যুদ্ধ। মৃত্যুর গ্রাসের মধ্যে বসে সেই মৃত্যুকে রুখবার বিবরণ এভাবে আর কে কবে লিখেছে? তুলনা যদি করতেই হয় তাহলে ইলিয়া এরেনবুর্গের ফল অব প্যারিস কিংবা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ফর হোম দ্য বেল টোলস-এর তুলনাই উপযুক্ত। এর শক্তি কেবল শিল্পে নয়, এর সত্যদর্শনে। আর তা এমনই সবল যে, হাজার বছর পরেও কেউ একাত্তরের বাংলাকে ঠিকই এই উপন্যাসের আলোয় চিনে নিতে পারবে। স্বাদ পাবে বাংলাদেশের জন্মমুহুর্তের যন্ত্রনা-মেশানো উদ্বেল আশার।
মন্তব্য
এই বিষয়ে আমি গবেষণামুলক লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি , দিলেন ত' আমার আশার গুড়ে বালি ।
তবুও দিলাম পাঁচ তারা ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
অসুবিধা নাই, আমার এই ছোট্ট লেখাটি আপনার গবেষণায় ফুটনোট হিসেবে ঠাঁই পেলেই খুশি হব।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
বহুবছর আগে বাংলা একাডেমী থেকে আনোয়ার পাশা আর শহীদ সাবেরের রচনা সমগ্র কিনেছিলাম । ধুলো ঝেড়ে বইটা আবার পড়তে হবে। দুজনেই একাত্তরে পাকিস্তানী নারকীয় তান্ডবের জীবন্ত স্বাক্ষী। স্বাধীনতার সূর্য উদিত হবার আগেই তাঁদের জীবনের সূর্য অস্তমিত হয়েছিল।
উত্তম পোস্ট - জানলাম অনেক কিছু।
(টাইটেলের বানানটা কেউ যদি একটু ঠিক করে দিতেন...)
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ঠিক করে দিলাম।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
বইটা প্রকাশের কাহিনী নিয়েও একটা লেখা হতে পারে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে কে কখন কোথায় এটা প্রথম প্রকাশ করে।
বাহাত্তরের গোড়ায় এটা প্রথম প্রকাশিত হয়, ঐ বছরেরই ডিসেম্বরে দ্বিতীয় সংস্করণ করতে হয়।
আনোয়ার পাশা পশ্চিম বাংলা থেকে সম্ভবত ৫৪ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন। প্রথমে পাবনা কলেজে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রবেশ করেন। তাঁর ছাত্র জীবন শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায় আর শেষ হয় কমিউনিস্টের ভূমিকায়। পশ্চিম বাংলায় কেবল মুসলিম বলে প্রাইমারি স্কুলেও বাংলা পড়ানোর চাকরি পাননি। তাঁর আক্ষেপ ছিল, ভারতে তিনি কোণঠাসা ছিলেন মুসলমান বলে, আর পাকিস্তানে যথেষ্ঠ মুসলমান হতে পারেননি বলে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
"পাবনা কলেজ" এর বদলে "এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা" হবে
আমার বোধহয় একটু পড়াশোনা করা উচিত।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এই সেরেছে, অনেকের ভাত মারা পড়ার দশা হবে তাহলে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ধন্যবাদ।
আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??
ফারুক ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এমন দারুন একটা তথ্য জানানোর জন্য
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বইটা যোগাড় করে দাও ফারুক, পড়তে চাই
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আমার মনে হয় এই বই ইবুক করে সবার হাতের কাছে পৌছে দিতে হবে ।
স্বত্ব বলে কিছু নাই, আমাদের সবার সম্পত্তি।
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
দারুণ আইডিয়া জালাল ভাই। তাহলে তানবীরাসহ অনেকের আকুতি তৃপ্ত হবে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নতুন মন্তব্য করুন