সেকুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্মভূমি পূর্ববাংলা। সেই পূর্ব বাংলা যা ১৯০৫ এ বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করেছিল এবং পাকিস্তানের দাবি তুলেছিল। কারণ সেসময় সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববাঙ্গালিরা ভেবেছিল, যুক্ত বাংলায় তারা জমিদারি শোষণের অধীন, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে এবং ব্রাক্ষ্মণ্য দাপটের শিকার। ১৯০৫ সালে দেশভাগ হলে, ভারতীয় পণ্ডিত অশোক মিত্র মনে করেন, আর ৪৭-এর দেশভাগ হতো না। সেটা তাঁর মত। বাংলা ভাগে উৎসাহী হয় তারাই, যারা জমিদারি হারানোর ভয়ে ১৯০৫-এ বঙ্গের প্রাদেশিক বিভাজন মানেননি। আবার ঢাকাকেন্দ্রিক প্রদেশ না হলে আজকের শিক্ষিত বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্তের জন্ম হতো না, এমনকি পাকিস্তানের মধ্যে থাকলে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামর্থ্যও তাদের জন্মাতো কিনা সন্দেহ।
১৯৪৭-এ বাঙালি নেতৃত্বের একটা অংশ আবুশ হাশিম, শরৎচন্দ্র বসু, কিরণশঙ্কর চট্টপাধ্যায়রা বাংলা ভাগ চাননি। কিন্তু গান্ধির অসহযোগিতা আর নেহরু-মাউন্টব্যাটেনের চালে তারা পরাস্ত হন। বাংলা ভাগ হয়। সেই থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কেন্দ্র সরে আসে কলকাতা থেকে ঢাকায়। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত এই জাতীয়তাবাদ একভাবে পূর্ব বাংলার বাঙালিদের একমাত্র বাঙালি ধরে নিয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিকাশ ঘটায়। দুই বাংলার বাঙালিদের জন্য জাতীয়তাবাদ হলে স্বাভাবিকভাবেই দাবি উঠতো, লাহোর প্রস্তাব মেনে ভারত-পাকিস্তানের বাইরে অখণ্ড বাংলাদেশ করবার। সেটা বাস্তব দাবি না হওয়ায় দেশ স্বাধীন হলো একাংশকে নিয়ে।
স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবকে তাই বারবার ব্যাখ্যা দিতে হয় যে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ভারতের জন্য হুমকি নয়, কেননা তা ভারতের বাঙালিদের জন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে না বা দেবে না। এই যদি হয়, তাহলে পূর্ব বাংলার বাঙালিত্ব কী দিয়ে চিহ্নিত হবে? ধর্ম ছাড়া তো আর কোনো বড় পার্থক্য নাই। সেকারণে পূর্ববাংলার জাতীয়তাবাদ অসম্পূর্ণ আর পশ্চিমবাংলায় সেই জাতীয়তাবাদ ৪৭ সাল থেকেই শ্মাশানবাসী। তাহলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভবিষ্যত কী? হয় তাকে উভয় বাংলার ঐক্যের ডাক দিতে হবে এবং সেটা পারে এই বাংলাদেশই। সেটা না করা মানে দাঁড়ায় বাংলাদেশকে মুসলিম বাঙালিদের দেশ আর পশ্চিমবাংলাকে হিন্দু বাঙালিদের দেশ মনে করা অর্থাৎ তা হয় দ্বিজাতিতত্ত্বেরই বিজয়।
এই মুসলিম বাঙালি জাতীয়তাবাদেরই নতুন নাম হয় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। বাঙালি ও বাংলাদেশি উভয়ই এখানে তাদের জাতীয়তাবাদের মর্মে মুসলিম পরিচয়টিকে ছাড়তে পারেনি, যেমন ভারতীয় বাঙালিরা পারেনি তাদের সম্প্রদায় ও ধর্মীয় পরিচয় ছাপিয়ে জাতীয় ঐক্য করতে।
এখানে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, পূর্ব বাংলা অখণ্ড বাংলার মধ্যে রাজনৈতিকভাবে সংগ্রামী এবং জনসংখ্যায় গরিষ্ঠ। একইভাবে পূর্বপাকিস্তান পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে প্রগতিশীল ও সংখ্যায় বেশি। কিন্তু সংখ্যা ও চেতনায় এগিয়ে থেকেও কেন পূর্ববাংলা বঞ্চিত হবে এই প্রশ্ন বাঙালিরা পাঞ্জাবিদের করেছে। কিন্তু কেন তারা তাদের দেশের অন্য অংশের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থাকবে, সেই প্রশ্ন তো ভারতকে করা দরকার? কেন দুই ভাইয়ের এক সংসার হবে না। সুকুমার রায়ের ভাষায়, কেন বাঘে (পাকিস্তান) অর্ধেকটা খেল বলে বাকি অর্ধেকটা (পঃ বাংলা) সেই দুঃখে মারা যাবে।
প্রশ্নটাকে আমি দেখতে চাইছি ইতিহাসের ময়দানে দাঁড়িয়ে, রাজনীতির মঞ্চ থেকে নয়। রাজনীতির মঞ্চে এই প্রশ্ন ওঠার বাস্তব ভিত্তি এখন বিশেষ আর নাই। থাকলে কী হতো সেটা অন্য আলোচনা। কিন্তু ইতিহাসের ভেতর রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিক থেকে এটা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বরূপ বোঝার স্বার্থে।
মন্তব্য
এইটা আরেকটু খোলাসা করেন।
এখানে আমি পশ্চিম বাংলার ওপর দাবিটিই বুঝিয়েছি, কিন্তু ফর্দ তো অনেক লম্বা। নদী-প্রকৃতি ইত্যাদি।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
প্রশ্নটাকে আমি দেখতে চাইছি ইতিহাসের ময়দানে দাঁড়িয়ে, রাজনীতির মঞ্চ থেকে নয়। রাজনীতির মঞ্চে এই প্রশ্ন ওঠার বাস্তব ভিত্তি এখন বিশেষ আর নাই।'
কীয়ের ভিত্তি নাই? মাত্র ৬০ পার হইছে। কত নাটক এহনো জুমা আছে ভারতমাতার কফালে.......তা ভবিতব্যই বলে দিবে। পাকিস্তান গুয়া খাড়া কইরা খাড়িবার পারতাছে না জাতি হিসাবে, বাংলাদেশই কি খাড়াইবার পারছে?
যে অত্যাচার আর বঞ্চনার কারমে হিন্দুর কাছ থিকা ছুইটা পাকিস্তান, আর পাঞ্জাবির কাছথন বাঁচপার নিগ্যা বাংলাদেশ, সেই বঞ্চনা তো এহনো বহাল তবিয়তেই। বরং বলা যায় আরো ফুলছে আরো ফাঁপছে। তাই আমি ইয়ার রাজনৈতিক ভিত্তি ছাড়ি না।
খালি শত্রুডা চিনিয়া দ্যান। অত্যাচারী হিন্দুরে চিনাইতে অসুবিদা হয় নাই, যেমনে অসুবিদা হয় নাই পাঞ্জাবি চিনাইতে.........এহন খালি মায়ের প্যাঠের জারজ ভাইরে চিনান।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
দুঃখিত বলা দরকার ছিল ভিত্তি আছে কিন্তু ক্ষেত্র নাই। ক্ষেত্র তৈরি হতে সময় লাগে। এখনকার সময় হিস্যা দাবি তো দূরের কথা বাংলাদেশের আপাতত মার্কিন-ভারত-ইসরেলের হাত থেকে চাচা আপনা প্রাণ বাঁচা অবস্থা।
ভারতের কাছে আমাদের হিস্যা পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু এটা জোরাজুরি বা আবেগের বিষয় নয়। উভয় অংশকেই এই জায়গায় আসতে হবে যে, আমরা যদি একজাতি হই, তাহলে আমাদের ঐক্য দরকার। সেই ঐক্যের পরে আসতে পারে এই প্রশ্ন যে, আমরা ইইউ-এর মতো এক কাঠামোর মধ্যে ভারতবর্ষীয় জাতিরাষ্ট্রগুলো আসতে পারি কিনা। তার আগে ক্ষমতা ও উন্নতির মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। অসম ঐক্য যে টেকে না তার প্রমাণ পাকিস্তান।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
এইসব কোন 'জাতীয়তাবাদ' আর খুব বেশীদিন টিকবে বলে আমার মনে হয় না। যে হারে মানুষের রাজনীতিবোধ হ্রাস পাচ্ছে, কিছুদিন পর আমরা কাজ, বেতন, ক্রেডিট কার্ড আর ফুর্তি ছাড়া আর কিছুই বুঝব না। একদম চৈনিকদের মত হয়ে যাচ্ছি আমরা।
এক বান্ধবী বইটি উপহার দিল, পড়া হয়নি এখনও, পড়ে দেখতে পারেন:
বাঙলা ভাগ হল
(Bengal Devidedএর অনুবাদ, UPL, pp 367, TK 300)
হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও দেশ বিভাগ ১৯৩২-১৯৪৭
জয়া চ্যাটার্জী
+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল
+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল
বইটা গভীর ধরনের দরকারি কাজ। পড়েছি। আপনার কেমন লাগলো জানাবেন।
বৈশ্বিক মন্দা দ্যাখেন কীভাবে রাজনীতি ও ইতিহাস উভয়কেই ফিরিয়ে আনে রিগ্যান আর ফুকুয়ামাদের পেছনে ফেলে।
জাতীয়তাবাদের যুগ ইউরোপে কেমন জানি না। তবে আমার মনে হয় ইউরো/ইইউ, ইউরোপে তুরস্ককে নেয়া না নেয়া, কিংবা রুশ উত্থান কিংবা মার্কিন 'আওয়ার ওয়ে অব লাইফ' ইত্যাদি আকারে পুঁজি ও সংস্কৃতির নয়া আধিপত্যের আকারে জাতীয়তাবাদ ক্রিয়াশীল আছে।
ল্যাটিনে নিম্নবর্গীয় ভূমিসন্তানদের উত্থানও কিন্তু জাতীয়তাবাদেরই আভাস। আফ্রিকাতেও এই জিনিস দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। নেপালের মাওবাদী উত্থানের পেছনে ভারত-বিরোধী জাতীয় আকাঙ্খা ছিল।
আমাদের দেশে তো একদিকে ভারতীয় আধিপত্য, অন্যদিকে মার্কিন হানা, আর ভেতরে ভেতরে যাকে বলা হচ্ছে জঙ্গিবাদ, সেসবের বিপরীতে ভূমিজ-কৃষক-মেহনতি-মধ্যবিত্তের জাতীয় উত্থানের প্রয়োচন বাড়ছে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আমার মনে হয় আগে ছোট ছোট রাজ্য ছিল জাতি ভিত্তিক আর রাজার উপর ছিল মহারাজা। ভবিষ্যতে আবার ছোট ছোট রাস্ট্র হবে আর তাদের রাজা হবে UN, ASIAN, SAARC, NATO এমন সংস্থার প্রেসিডেন্টরা। তবুও এটা ভাল যে এই সংস্থাগুলোর প্রেসিডেন্ট বংশানুক্রমে হয় না। তাই এটাকে মানা যায়। history repeats, only the faces change.
এই যুগটা হল রাস্ট্র ধারনার যুগ। এখন ভাষা বা ধর্ম বা চেহারা দিয়ে কি আর পুরান রাস্ট্র ভেংগে নতুন রাস্ট্রের রূপে দেখার কথা ভাবার দরকার আছে? পশ্চিম বাংলা আর বাংলাদেশের ভাষা যেমন এক তেমনি জীবনধারনের ধরনে আছে আমূল ভিন্নতা। বোন বলে মেনে নেয়া এক আর বউ করে ঘরে আনা আরেক। বোন করতে রাজী আছি, বউ করতে না।
রাস্ট্র কী?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আন্তর্জাতিকতার তোড়ে জাতীয়তাবাদ এম্নিতেই নানা আক্রমনের মুখে। কিন্তু অপরদিকে স্রোতে মিশ্তে গিয়ে আমরা ক্রমাগত যদি স্বাতন্ত্রহীন হয়ে পরি তাহলে আশংকার কথা। সেই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস কিন্তু ইতমধ্যেই শুরু হয়েছে।
আর রাজনৈতিক আউটপুট আশাটা খুব লং শট মনে হচ্ছে। তাছাড়া মৌলিক পার্থক্য কিন্তু দুইবাংলার সাংস্কৃতিক এক্সপ্রেশনে আছে। ভাষাটাই দুই মুখি।আমার কেমন যেন অবাক লাগে পশ্চিম বাংলায় বামদের সফলতা দেখে। আমাদের রাষ্ট্রের মানুষকে আমার বিপ্লবে বেশী সক্ষমতার পরিচয় বহন করতে দেখি। বাম ঘরনার রাজনীতিতে দুই বাংলার কি কি মৌলিক পার্থক্য আছে। ফারুক ওয়াসিফের কাছে এটা আমার প্রশ্ন থাকলো।
আমার ব্যক্তিগত মতামত বাম রাজনীতির বেশী উপোযোগী আমাদের জলবায়ু। ৭১ এর শক্তিক্ষয় কি বাম আন্দোলনের ক্ষীণতার কারন? বলা হয়ে থাকে একটি জাতি একাধিক বার বৃহত মানে বিপ্লব সংঘঠিত করতে পারে না।
৪৭ থেকে ৭১ এবং তারপরে ৭২ এর সংবিধানের অনেক অর্জনের পরেও এদেশে ডানপন্থীদের আস্ফালোন আমাকে অবাক করে। ৭১ এ ডানপন্থী আওয়ামীরা সমঝোতার পথে যেতে চেয়েছিল।তারাই রাইটিস্ট মুভমেন্ট মরতে দেয় নি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সাংস্কৃতিক মিল সত্বেও দুই বাংলার ডান বামের পোলারাইজেশনে মুল্গত্র পার্থক্যটা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।
খুব সহজ। বাংলাদেশে মুসলিম অতি-ডান এবং সামরীক অতি-ডানের সাথে দীর্ঘ দন্দ্বের কারনেই আওয়ামিলিগকে ক্রমান্ময়ে ডানে চাপতে হয়েছে। ভারতে মুসলিম অতি-ডান কখনই অত শক্তিশালী নয়। খেয়াল করতে হবে হিন্দু অতি-ডানের মুসলিম অতি-ডানের মত এত আন্তর্জাতিক শুভাকাঙ্খী নেই এবং সামরীক অতি-ডানের প্রভাবও আমরা ভারতে দেখি না। এর সাথে আমাদের ক্রিটিক্যাল সময়ে পেরেসত্রইকা, ভারতের অন্তরর্মুখী অর্থনীতি ও আমাদের ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আই এম এফ এর কৃপা নির্ভর অর্থনীতি এসবই পশ্চিম বাংলার মত ধীর বিপ্লবের অন্তরায় ছিল, এখনও আছে।
+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল
+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল
আওয়ামী লীগ তো গোড়া থেকেই ডানই ছিল। ৪৭-এর পরে নিষিদ্ধ কমিউনিস্টরা সেখানে ঢুকে কিছুটা বাঁয়ে টেনেছিল। ভাসানীর সঙ্গে তাদের বেরিয়ে আসার পর আওয়ামী লীগ ক্রমাগত ডানেই ছুটেছে। সোহরাওয়ার্দির শিষ্য সেখ মুজিব মার্কিন লবির লোক ছিলেন। তিনিই তো বলেছিলেন, লাল ঘোড়া দাবড়ায়ে দেব।
একাত্তরের যুদ্ধের মধ্যে তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে আলীগ কিছুটা বামে যায়। সেটা ঠেকাবার জন্য ভারতীয়রা মুজিব বাহিনী দিয়ে ব্যালান্স করে। ভাসানীর মতোই তাজউদ্দীন বিতাড়ন করে, ছাত্রলীগের বিপ্লবীদের কোণঠাসা করে আবার আওয়ামী লীগ ডানের প্রধান সড়কে আসে। আওয়ামী লীগকে জনগণ টানে বাঁয়ে আর তাদের নেতারা হাল ধরে রাখে ডাইনের টানে, এই ছিল নব্বই পূর্ববর্তী আলীগের দোলাচল। এই দোলাচলই আবার তার জনঘনিষ্ঠ থাকবার কিছুটা প্রমাণ।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আমার মনে হয় মুসলিম ডানপন্থাকে মাঝে মাঝে কোলে নেয়া হয়েছে আছাড় দেওয়ার জন্য বা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার জন্য। কিন্তু হিন্দু ডান বা ইহুদি ডান সবসময়ই প্রশ্রয় পেয়েছে ব্রিটেনের কাছে, আমেরিকার কাছে। এটা নির্ভর করে ধর্মের ওপর নয়, কারা প্রতিপক্ষ হবে, সেই জনগোষ্ঠীর ধর্ম কী, বিশ্ব পুঁজির বিশেষ মুহূর্তের চাহিদা কী তার ওপর।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
"একাত্তরের যুদ্ধের মধ্যে তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে আলীগ কিছুটা বামে যায়। সেটা ঠেকাবার জন্য ভারতীয়রা মুজিব বাহিনী দিয়ে ব্যালান্স করে।"
একটা ব্যাপারে একটু ব্যাখ্যা আশা করছি। তাজউদ্দিন যে বামে যান, সেটা কোন "বাম"? আপনি যে মুজিব বাহিনীর (এঁরাই নিশ্চয় আপনার লেখার "ছাত্রলীগের বিপ্লবী"? পরবর্তীতে তারা জাসদ নামের বামপন্থী দল শুরু করেন) কথা বলছেন, তারাও বাম ছিলো। প্রশ্নটা হচ্ছে তাজুদ্দিনের বাম আর মুজিব বাহিনীর বাম কে চিহ্নিত করছেন কিভাবে? তা না হলে অস্পষ্ট থেকে যায় যে ঠিক কিভাবে ভারতীয়রা মুজিব বাহিনী দিয়ে "ব্যালান্স" করেছিলো।
১৯৪৭-এ বাংলা ভাগের জন্য কি শুধু মুসলিমদের বা মুসলিম লীগকে দায়ী করা যায়? এর পটভূমি তৈরির জন্য তখনকার বাংলার সুবিধাপ্রাপ্ত হিন্দুদের কি কোন ভূমিকা নেই? আলোকপ্রাপ্ত হিন্দুরা কেন শরৎ বোসদের পেছনে দাঁড়ান নি? বাংলায় চল্লিশের দশকের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোতে উঠতি হিন্দু মধ্যবিত্তদের ভূমিকা কী ছিল? অঘটনের জন্য সুবিধাবঞ্চিতদের কি একতরফা দোষারোপ করা যায়? এইসব প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি। তাই জানি যে বাংলার প্রশ্নে ধর্মের অবস্থান এবং ধর্মের প্রশ্নকে উপেক্ষা করার উপায় নেই।
১৯৪৭-এর পরে বা ১৯৭১ হতে পশ্চিমবঙ্গে কি কখনো স্বাতন্ত্র্য বা স্বাধীনতার দাবী উঠেছে? কখনোই না। বরং কেন্দ্রের কাছে নিজেদের সাচ্চাত্ব প্রমাণ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ আরো বেশি হিন্দী রাজ্য হবার চেষ্টা করেছে। কোলকাতার বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখবেন একেকটা অনুষ্ঠানে কখনো কখনো হিন্দীর প্রকোপে বোঝা-ই দায় হয় অনুষ্ঠান কোন ভাষায় হচ্ছে। আমি দেখেছি, বাংলা চ্যানেলের টিভি রিপোর্টার বাবা-মেয়ের সাক্ষাতকার নিচ্ছেন। প্রশ্ন করা হচ্ছে বাংলায়, বাবা উত্তর দিচ্ছেন ইংরেজী মেশানো বাংলায় আর মেয়ে বিশুদ্ধ হিন্দীতে। রাষ্ট্রভাষার এই দাপট দক্ষিণ ভারতে কখনো দেখা যায় না। কারণ, দক্ষিণ ভারতকে কেন্দ্রের কাছে কিছু প্রমাণ করার কিছু নেই। পশ্চিমবঙ্গকে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হয় তারা বাংলাদেশের সাথে মাখামাখি করে স্বাধীনতার দাবী তুলছে না, বেশি বেশি বাংলা ভাষা চর্চা করে লোকজনের মনে অহেতুক বিচ্ছিন্নতার বীজ বুনছে না।
আর পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের জন্য তো বাংলাদেশ মানে তো মুসলমানদের দেশ। ওদের সাথে মিলতে গেলে তো ধর্মটাই আর থাকবেনা। ধর্ম বাঁচানোর জন্যই তো ১৯০৫ সালে ঠাকুরদাদারা বঙ্গভঙ্গ মানেননি কিন্তু ১৯৪৭ সালে বাবারা হাসিমুখে বাংলা ভাগ মেনে নিয়েছিলেন। আবার ১৯৭১ সালে ছোট কাকারা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সাহায্য করেছিলেন কিন্তু ঘরে ঢুকতে দেন নি। বাঙালী হিন্দুর এই প্রান্তিক ভূমিকে রক্ষার জন্য বাঙালীত্ব বিসর্জণ দেয়াও সই, তবু ১৯৪৭-এর আগের অবস্থায় যাওয়া যাবেনা।
বাংলা বা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষিতে আমরা যাই বলি না কেন ধর্ম এখনো এখানে প্রধাণ নিয়ামক। একে অস্বীকার করে বা ছোট করে দেখার কোন উপায় নেই। অদূর ভবিষ্যতে এখানকার দেশগুলোর সমাজের শ্রেণীবিন্যাস যাই হোক না কেন ধর্ম বড় নিয়ামক হিসেবেই থেকে যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একমত। ধর্ম অবশ্যই বড় নিয়ামক, কিন্তু প্রধান নিয়ামক কী-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
১৯০৫-এ জমিদারি হারানোর ভয়ে বঙ্গভাগ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, ১৯৪৬-৪৭ এ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনে থাকবার ভয়ে ভারতীয় বৃহত পুঁজির অধীনস্ততা মেনে নেয়া গিয়েছিল।
আমি বিশ্বাস করি, ভাষিক অর্থে তো বটেই রাজনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াবে। এটাই এখানকার ডাইনামিকস। তা দাঁড়াতে গেলে আমাদের আত্মপরিচয়ের বোধকেও হীনম্মন্যতাহীন করা দরকার।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ষষ্ঠ পাণ্ডব @
এটা কি পশ্চিম বঙ্গিয় বাঙালিদের হীনমন্যতা ! না কি নিজেদের ভাষাতাত্ত্বিক জাতিসত্তা হারানোর প্রক্রিয়ার দুর্ভাগ্যজনক ইঙ্গিত ! সত্যি যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে তো তাদের জন্য এখন থেকে আপসোস করে যেতে হবে এই ভেবে যে, তারা একদিন বাঙালিই ছিলো...!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দাদা, এটা হীনমন্যতা নয়। এটা এক ধরণের শংকার ফসল। ধরা যাক, "ষষ্ঠ পাণ্ডব" একজন বাংলাদেশী হিন্দু। তিনি confidence and courage নিয়ে বাংলাদেশে থাকতে পারেন। তার জন্য তাকে ধর্ম বা নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ত্যাগ করতে হয় না। কিন্তু একজন "ষষ্ঠ পাণ্ডব" যখন পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ভারতের নাগরিক হন তখনই তিনি তার নিজের বাঙালী পরিচয় নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন। প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়ে পড়েন যে বাংলাদেশের সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই, বরং ভারতের হিন্দীভাষী রাজ্যগুলো আর তাদের মানুষদের সাথে তার সম্পর্ক আরো নিবিড়। ব্যক্তিক্ষেত্রে এই চিত্র হয়তো সব সময় বা সমানভাবে দেখা যায় না, তবে সামষ্টিক আচরণ আমরা এই প্রকারই দেখতে পাই। আপনার আশংকার "ভাষাতাত্ত্বিক জাতিসত্তা হারানোর প্রক্রিয়ার দুর্ভাগ্যজনক ইঙ্গিত" এর উপজাত মাত্র।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার মন্তব্যের প্রসঙ্গে আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি। সংকরতা খুবই ব্যাপক আকার নিয়েছে, শংকার প্রশ্নটা কিন্তু কখনোই শুনি নি। আমি কলকাতায় আন্ডারগ্রাড ক'রে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়েছি, রাজ্যের ভিতরে বা বাইরে 'বাংলাদেশের সাথে কোন সম্পর্ক নাই', এটা প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় এমন পরিস্থিতির কিন্তু কখনোই সম্মুখীন হই নি। অবাঙালিরা বাঙাল-ঘটির ব্যাপারটাই জানে না অনেকাংশে, আর পশ্চিমবঙ্গের ভিতরে বাঙালত্ব গোপন করা তো দূরে থাক, আমরা বরং জোর গলায় বলি সেই পরিচয়। আপনি হিন্দির যে প্রভাব ভারতীয় বাঙালির মধ্যে দেখেছেন তা আসলে (অন্তত আমার ধারণা মতো) এক সর্বগ্রাসী হোমোজেনাইজেশনের ফল। শুধু বাঙালি নয়, আজকাল গুজরাতি মারাঠি সবাই হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ এবং ইংরিজিতেও, অনেকেই মাতৃভাষার চেয়েও বেশি। কথ্যভাষা হয়তো বাড়িতে মাতৃভাষাই চলে, কিন্তু স্কুল কলেজে সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা আজকাল ইংরিজি বলে বেশি। এর দুটো ব্যবহারিক সুবিধা আছে, (এক) ইংরিজি চাকরির সুবিধা দেয় আর রাজ্যের বাইরে চাকরি/পড়াশুনা করতে গেলে হিন্দি লাগে, (দুই) বহুভাষী গ্রুপে চলাফেরা করতে হলে হিন্দি বা ইংরিজি ছাড়া উপায় থাকে না। এই সমস্যাটা বাংলাদেশের ভেতর আপনাদের দেখতে হয় না, ডায়ালেক্ট আলাদা হলেও বাংলায় কথা বললে কমিউনিকেট করার পথে বাধা হয় না। দাক্ষিণাত্যে আগে হিন্দি-বিরোধী যে স্রোত ছিলো তাতে ইংরিজিতে কথা বলতে হতো তাদের, কারণ তামিল-তেলেগু-কানাড়া-মালয়ালম সবাই সব কটা বলতে পারে না স্বাভাবিক ভাবেই। তাছাড়া আপনি দেখেছেন কি না জানি না, আমি কয়েক বছর দক্ষিণে বাস ক'রে দেখেছি যে সাউথ ইন্ডিয়ান ছাতার তলায় আমরা এঁদের সবাইকে আনলেও এঁরা পরস্পরের প্রতি প্রচন্ড বন্ধুভাবাপন্ন তা কিন্তু সর্বদা সত্যি নয়। আর সাম্প্রতিক অতীতে আমার চেনা দক্ষিণীদের মধ্যে দেখি এই হিন্দি-বিরোধীতাটাও শিথিল হয়ে এসেছে, অন্তত বড়ো শহরগুলোতে। দোকান বাজারে এখন দিব্বি হিন্দি দিয়ে কাজ হয়, চেন্নাই বাদ দিলে অন্যত্র অনেকগুলো শহরেই হিন্দি ভাষা শুধু নয়, সংস্কৃতিও হাত-পা ছড়িয়ে বসেছে। উত্তর-পূর্ব প্রদেশগুলোর অবস্থা ভালো জানি না এই বিষয়ে, তবে ঐ অঞ্চল থেকে আগত মানুষেরা হিন্দি বা ইংরিজি নিয়ে বিশেষ কোনো প্রো বা অ্যান্টি অবস্থানে থাকেন না বলেই দেখেছি, তবে আমার পরিচিতদের মধ্যে এই এলাকার লোক খুব কম।
আমরা এই বিভাজন থেকে উঠতে পারি না কেন? সত্যিকার অর্থে মননশীলতা চর্চায় আমরা কিভাবে পিছিয়ে আছি সেটাই এই কট্টরপন্থার প্রচার ও প্রসারে জ্বালানী দিয়েছে। আসলে প্রাতিষ্ঠানিক মার্কায় অনেক আদমশুমারী বাড়লেও, বিজ্ঞান মনস্কতা বা যুক্তিনির্ভরতা কোনভাবেই বড় স্কেলে আমাদের মাঝে প্রবেশ করে নাই। আসলে আমরা অন্ধতার চর্চাই করছি বিভিন্ন ভাবে।
ভালো লেখা,ফারুক ভাই..
....জাতীয়তাবাদের যুগ ইউরোপে কেমন জানি না। তবে আমার মনে হয় ইউরো/ইইউ, ইউরোপে তুরস্ককে নেয়া না নেয়া, কিংবা রুশ উত্থান কিংবা মার্কিন 'আওয়ার ওয়ে অব লাইফ' ইত্যাদি আকারে পুঁজি ও সংস্কৃতির নয়া আধিপত্যের আকারে জাতীয়তাবাদ ক্রিয়াশীল আছে।...
এক কাঠামোর মধ্যে থেকেও ইইউ ভূত্তদেশগুলোও প্রবলভাবেই জাতীয়তাবাদী,কি দারুণ চেষ্টা তাদের নিজস্বতা বজায় রাখবার,নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখবার,ইংরেজীভাষা আর হলিউডের বিশাল আধিপত্যের যুগেও।
ইউরোপে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজ নিজ নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্হা রেখেছে যা আসলে অনেকটাই পার্থক্য গড়ে দেয় অন্যদের সাথে।ইইউ ভূত্ত অপেক্ষাকৃত গরীবদেশগুলোর নাগরিকরা ধনীদেশগুলোতে এসে বাস করার,অবাধ কাজ করার সুযোগ পায় তবে তারা ওইদেশের নাগরিকদের সমান ৩০,৪০ভাগ ট্যাক্স দিয়েও সুযোগ সুবিধাগুলো পায়না..যেমন বেকারভাতা।
গরীবদেশগুলোর নাগরিকরা তবুও খুশি কাজ পাওয়া যাচ্ছে বলে আর
ধনীদেশগুলো খুশি শ্রম পাওয়া যাচ্ছে বলে।আর EU Single Market policy সাহায্য করছে মূলত ধনীদেশগুলোকেই যেহেতু ওদেরই আছে বড় বড় industryগুলো,বাজারের কলেবর বেড়ে যাওয়াতে ওদের মুনাফাটাও বেড়ে গেছে বহুগুণে অন্যদিকে গরীবদেশগুলোর ছোট industry গুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে,ধূকছে।অধিকাংশ ভোক্তা এই খেলার ব্যাপারে অসচেতন এবং আপাত সুখী।
মূলত পুঁজিই টিকিয়ে রেখেছে,প্রাণ দিয়েছে এ ব্যবস্হাকে।ইউরোপেও ধনী আর গরীব এর ফারাকটা বাড়ছে দিন কে দিন,তবে আমাদের সাথে পার্থক্য হচ্ছে ইউরোপে একজন গরীব শ্রমজীবীও পেতে পারে আধূনিক বিলাসিতার সমস্ত আফিম উপকরণগুলো যা অনেক সচেতনভাবেই করা হয়েছে পুঁজিবাদকে লম্বা সময়ের জন্য নিরাপদ করবার জন্য ,ইউরোপের ধনীরা অনেক চালাক,মিডিয়াগুলো ওদের ঘনিষ্টবন্ধু,ওরাই নিধারণ করে দেয় লাইফষ্টাইল যা অনেকাংশেই মেকি,ফাপা..ওদের টাকা আবার ওদের কাছেই ফিরে যায়।
আমরা ইইউ-এর মতো এক কাঠামোর মধ্যে ভারতবর্ষীয় জাতিরাষ্ট্রগুলো আসতে পারি কিনা। তার আগে ক্ষমতা ও উন্নতির মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।
এক কাঠামোর মধ্যে আসতেই পারি,তার আগে অবশ্যই ক্ষমতা ও উন্নতির মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।নয়তো আমরা একচেটিয়া বাজারে পরিণত হবো।একমত।
কোলকাতার সংস্কৃতি দিয়ে পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতি বিচার করা ঠিক না। এখনো কোলকাতার বাইরে লোকজন হিন্দি বুঝলেও বলতে পারে না। আর ভাল বাংলা বলার অভ্যেসটা দুই বাংলার খুব কম লোকেরই আছে।
জাতীয়তাবাদ ভবিষ্যতহীন লাশকাটা ঘরে শুয়ে থাকা অতীত। রাষ্ট্র মানেই সংখ্যাধিক্যকে টুপি পড়িয়ে কিছু মধ্যবিত্তের দেশপ্রেম। রাষ্ট্রের বিলোপ না হলে, মানবিকতাবাদি উন্নততর সমাজের আগমন কুসুমকল্পনা। ভবিষ্যতের জাতিয়তাবাদ মোটেও অর্থনীতি বা মিলিটারী নির্ভর হবে না-ত হবে সংস্কৃতি নির্ভর।
তবে এটাই বাস্তব, বাঙালিত্বই বাঙালীর একমাত্র খাঁটি পরিচয়। এটা নিয়ে দুই বাংলাতেই যথষ্ঠ সমস্যা আছে-তবে সমস্যার ধরন আলাদা। আমি বাঙালী জাতিয়তাবাদের ওপর এই লেখাটা লিখেছিলাম।
http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=555
যারা বলছেন কিছু কোলকাতাবাসি হিন্দি বলে নিজেদের ভারতীয়ত্ব প্রমান করে-তারা অধিকাংশই শহুরে হুজগে পাবলিক। সাধারণ বাঙালীর সাথে সম্পর্খহীন কচুরীপানার জাত। বাঙালীর বাঙালীত্ব মরে নি-অর্থনৈতিক কারনে পথ হারিয়েছে। আমরা নানান ফোরামে লোকজনকে ইংরেজি ছেড়ে বাংলায় লেখার জন্যে জোর করি। কাজ হচ্ছে। আরো হবে।
অবশ্যই কলকাতা বা ঢাকার সংস্কৃতি মানে জাতীয় সংস্কৃতি নয়। কিন্তু আমরা যদি খেয়াল রাখি, জাতীয় সংস্কৃতি বলে যার প্রচার দেওয়া হয়, সেটা আসলে ওই জাতির শাসন-ঘনিষ্ঠদেরই সংস্কৃতি। সাংষ্কৃতিক ক্ষমতায়নে মধ্যবিত্ত শ্রেণী অনেক এগিয়ে, সংস্কৃতির হাতিয়ার গুলো তারই হাতে। সেকারণে তারাই সংস্কৃতির আনুষ্ঠানিক অভিমুখ ঠিক করে। যেমন ঊনিশ-বিশ শতকে কলকাতার মধ্যবিত্ত যে বাঙালি সংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়েছিল সেটা আদতে জনবিচ্ছিন্ন মুষ্ঠিমেয় লোকের বাবু সংস্কৃতি। এর জন্ম উপনিবেশিকতার ওউরসে, জমিদারি ক্ষমতার বলয়ে। বেশিরভাগ পশ্চিমবঙ্গীয় তা গ্রহণ করেনি।
আজকেও ঢাকার এলিট মহল যে বাঙালি সংষ্কৃতির গর্বে গর্বিত, অধিকাংশ বাংলাদেশি বাঙালির সঙ্গে তার কোনো যোগ নাই। জাতীয় সংস্কৃতি পাওয়া যাবে গ্রামে-কৃষক সমাজে। হোক তা রূগ্ন বা দুর্বল বা যা কিছু, কিন্তু সেটাই জাতীয় সংস্কৃতির বাস্তব অবস্থা।
কিন্তু আমার আলোচনা ছিল, রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ নিয়ে। বাংলাদেশের উদয়লগ্নের শাসকরা জেনে বা না জেনে এই জাতীয়তাবাদকে মুসলিম বাঙালি জাতীয়তাবাদের গড়ন দিয়েছেন এবং সেভাবেই অদ্যাবধি লালন করেছেন। আদতে এটা বাংলাদেশি মুসলিম বাঙালি জাতীয়তাবাদ। একেক দল ও গোষ্ঠী জোর দেয় একেকটির ওপর, যেমন : কেউ বাংলাদেশি বাঙালি, কেউ মুসলিম বাঙালি। বিএনপি যা প্রচার করে তা ঘোড়াও নয় গাধাও নয়; উভয়ের মিলনজাত খচ্চর জাতীয়তাবাদ তথা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। কিন্তু যদি বাংলাদেশকেই রাজনৈতিকভাবে জাতি রাষ্ট্র হিসেবে সংজ্ঞায়ন করতে হয়, তাহলে হয়তো বাংলাদেশি জাতি হিসেবেই করতে হবে।( ঠিক যেভাবে ভারতীয় জাতি না থাকলেও, ভারতীয় রাষ্ট্রের নামে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ সেখানকার রাজনীতিতে দাপটশীল।) নতুবা উভয় বাংলার বাঙালিদের কেবল বাঙালি হিসেবেই গ্রহণ করে জাতি চিহ্নিত করতে হবে। তা করলে জাতীয় ঐক্যের দাবি আজ হোক কাল হোক উঠবেই। এবং তাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। বিষয়টা তাই বাংলায় লেখা বা বলার ব্যাপার নয় শুধু।
জাতীয় শত্রু থাকলে জাতীয়তাবাদ থাকবে। ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরবিরোধী এরকম নেগেটিভ জাতীয়তাবাদের চর্চা করে আসছে। বাংলাদেশেও ভারত বিরোধী বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ রাজনৈতিক সংষ্কৃতিতে অস্তিত্বমান। তাই বলা যায় কি যে, জাতীয়তাবাদ কি বঙ্গে আর কি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ভবিষ্যতহীন লাশ? সার্বিয়া-বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়ার জন্ম তাহলে কী? কী ঘটছে ল্যাটিন আমেরিকার জাতীয় সমাজতন্ত্রের নামে? কী ঘটছে ফিলিস্তিন-লেবানন-ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যে? সাম্রাজ্যবাদ নিজেই আবার জাতীয়তাবাদকে ফিরিয়ে আনছে না কি? সিদ্ধান্ত নয় প্রশ্ন।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
জরুরী এই পোষ্টে জরুরী মন্তব্য সমুহের সাথে আমার সামান্য দু পয়সা যোগ করছিঃ-
১। থিওরোট্যাকিল ফ্রেম হিসাবে ফারুকের ভাবনার সাথে আমি সহমত । বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি যদি ধর্ম না হয়ে ভাষা ও সংস্কৃতি হয় তা হলে তো অখন্ড বাংলাই যুক্তিযুক্ত । '৪৭ এর ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাকে অস্বীকার করেই তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম । সো, অন্ততঃ তাত্বিক ভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোর ধারনাটাই অসাম্প্রদায়িক । এবার যদি ওপাড় বাংলার মানুষেরা ও ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার বদলে ভাষা ও সংস্কৃতিকে জাতীয়তার ভিত্তি বলে প্রতীতি করেন তাহলে তো কোন ফারাক থাকেনা ।
আসলেই কি থাকেনা? বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ধরছি আমরা যে ভাষা ও সংস্কৃতিকে তা কি আসলেই অভিন্ন? আমার বিবেচনা বলে, ভিন্নতা দেশ বিভাগের আগে ও ছিলো এখনো আছে । এই ভিন্নতা ধর্মের নয়, অবশ্যই ধর্মের নয় । এটা অন্য কিছু ।আমার পাড়ার রাজেশের সাথে আমার যতোটুকু সাংস্কৃতিক নৈকট্য কলকাতার সৈয়দ রফিকের সাথে দূরত্ব তার থেকে অনেক বেশী ।
এই ভিন্নতাটুকু কাটিয়ে ও যদি উভয় পক্ষ থেকে অভিন্ন জাতীয়তাবাদের উন্মেষের কোন সুযোগ থাকে তাহলে সেই উদ্যোগ কে নেবে? আমাদের আদার পার্ট একটা বৃহৎ রাষ্ট্রের প্রদেশ মাত্র, আমরা যতো ক্ষুদ্রই হই একটা স্বাধীন রাষ্ট্র । যৌক্তিক ভাবে এই উদ্যোগের দায়িত্ব আমাদের উপর বর্তায় ।
শুনেছি পূর্বের উদ্বোধনে '৭১-'৭২ এ পশ্চিমের ও বোধন সম্ভাবনা জেগেছিলো । অনেকে বাঙ্গালীর ঘরেই শেখ মুজিবের ছবি টাঙ্গানো হয়েছিল । যদি ও দিল্লী কেন্দ্রিক ভারতীয় নেতৃত্বের সমর্ত্থন আদায়ের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধকালীন পতাকায় মানচিত্র এঁকে দেখাতে হয়েছিল আমাদের সীমানা এতোটুকুই, দেশে ফেরার আগে কলকাতার সভায় ইন্দিরা গান্ধীর উপস্থিতি শেখ মুজিবকে আবারো সেটা নিশ্চিত করতে হয়েছিল ।
মুজিব হত্যা নিয়ে যতোগুলো কনস্পারেসি থিওরি আছে তার মধ্যে এটা ও একটা ।
আমি নিজে এটা বিশ্বাস করিনা কিন্তু এটা ও ঠিক ভারত রাষ্ট্র তার ভেতরের সকল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সম্ভাবনাকেই নির্মম ভাবে দমন করেছে ।
২। ফারুকের সাথে এবার আমার দ্বিমতের সম্ভাবনা । জাতীয়তাবাদের চর্চার জন্য রাষ্ট্রীয় সীমানাবদ্ধ হওয়া জরুরী কেনো? বাংলাদেশের বাঙ্গালী কিংবা পশ্চিম বংগের বাঙ্গালী আলাদা আলাদা রাষ্ট্রভুক্ত থেকে নিজেদের জাতীয়তাবোধ কিংবা জাতীয়তাবাদ টিকিয়ে রাখতে পারে কিনা?
অথবা এই দুই রাষ্ট্রের বাইরে অন্য কোথাও যে বাঙ্গালীরা আছেন তাদের কি জাতীয়তাবাদ চর্চার কোন ভবিষ্যত নেই?
৩। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদ বড় নিয়ামক হলে ও একটা আধুনিক কল্যানকামী রাষ্ট্রের জন্য জাতি রাষ্ট্র হয়ে উঠাটা খুব শুভ বলে মনে হয়না ।
সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে ক্ষুদ্র জাতিস্বত্বা সকলের সম অধিকার নিশ্চিত না হয়ে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের জাতীয়তাই প্রাধান্য পায় তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মবিধান কে ও মেনে নিতে হবে রাষ্ট্রের নিয়ামক হিসেবে ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আপনার অংশগ্রহণে আমরা বোধহয় বিষয়টার সংকটময় সম্ভাবনার কাছাকাছি চলে এসেছি।
১. অঞ্চলে অঞ্চলেও তো পার্থক্য আছে। আমার কাছে সবথেকে বড় পার্থক্য, কৃষক সংস্কৃতির বাংলাদেশের সঙ্গে জমিদারপ্রধান পশ্চিমবাংলার। এর ভেতরেই ঢুকে আছে সাম্প্রদায়িকতার প্রাণভোমরা। কৃষকের উদার গ্রহণপরায়ন আত্মপিরচয় আর আর জমিদার-ব্রাহ্মণের সংকীর্ণ বর্জনপরায়ন আত্মপরিচয় সম্প্রদায়ের নামেই বিবাদে লিপ্ত হলেও পার্থক্য তো শ্রেণীতে শ্রেণীতে, আরো ভাল করে বললে উচ্চবর্গে-নিম্নবর্গে এবং চূড়ান্ত বিচারে উপনিবেশপালিত মধ্যশ্রেণী আর উপনিবেশতাড়িত কৃষক জনগোষ্ঠীর মধ্যকার টানাপড়েনে। আপনার বলা 'অন্য কিছু' আমার চোখে এভাবেই ধরা পড়ে।
রাজেশ আর সৈয়দ রফিকের দোলাচলটি আমার ধারণা ওপরে বলা কাঠামো দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়।
২. আপনার ২ নং পয়েন্টকে আমাদের আলোচনার বিকাশ হিসেবেই নেয়া যায়। একটা ক্রম ধরে নেওয়া যাক:
সম্প্রদায় > জাতি > উচ্চবর্গীয় (বুর্জোয়া) জাতীয়তাবাদ > জাতি রাষ্ট্র > সাম্রাজ্যবাদ/সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা নিষ্পেষিত > নিপীড়িতের জাতীয়তাবাদ (দেশি শাসক আর বিদেশি প্রভুদের জোটের বিরুদ্ধে নিপীড়িত শ্রেণীসমূহের ঐক্যের ভিত্তিতে)> জাতীয় সমাজতন্ত্র: হিজবুল্লাহ/ইরান/ ভেনেজুয়েলা ধরনের রাষ্ট্র> সাংষ্কৃতিক জাতীয়তাবাদ> সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদী সমাজ ও রাষ্ট্র।
বিস্তারে যাচ্ছি না। এই ক্রম কোনো ধ্রুব ব্যাপার নয়। দেশ-কাল-অবস্থা ভেতে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এটাই গত শতকের ইতিহাসের অভিজ্ঞতা। এ দিক থেকে ইওরোপে সাংষ্কৃতিক জাতীয়তাবাদ যত বাস্তব, আমাদের এখানে সেখানে যেতে আরো সময় লাগবে। যারা ডায়সপোরা; তারা চাইলে নিজ রাষ্ট্রের ভেতরের জাতির সঙ্গে বন্ধন রাখতে পারেন, বা বৃহত্তর সাংষ্কৃতিক জাতীয়তাবাদ চর্চা করতে পারেন অথবা নতুন নিবাসের মধ্যে নিজ জাতির হয়ে অবদান রেখে প্লূরালিস্ট হতে পারেন। বিষয়টা আমার কাছে আকাঙ্ক্ষার নয় বাস্তবতার আর রাজনৈতিক প্রকল্পের।
আমার মনে হয় আপনার ৩ নং অভিমতের সঙ্গে একটা বাক্যালাপ ওপরেই করা হয়ে গেছে। আজকের বাংলাদেশে যখন উচ্চবর্গীয় জাতীয়তাবাদ কর্মসূচিহীন কিংবা পরাশক্তি ও কর্পোরেটের কাছে আত্মসমর্পিত, যখন শ্রমিক শ্রেণীর গঠন অপরিপক্ক, যখন নিপীড়িত শ্রেণীসমূজ বহুপরিচয়ে বিভক্ত তখন তাদের কোন কর্মসূচিতে ও আদর্শে এক করা সম্ভব? ইসলামের নামে যদি না হয়, তাহলে বাকি থাকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় আন্দোলন। তার জন্য নিপীড়িত শ্রেণীগুলো কেবল স্বার্থের ঐক্য তো করে না, স্বার্থের রসায়ন হিসেবে তারা আদর্শকে সামনে আনে। কী হতে পারে তা প্রতিরোধী জাতীয়তাবাদ ছাড়া কিংবা জাতীয় সমাজতন্ত্র ছাড়া।
আলোচনাটা অনেক দূরে চলে এসেছে। নতুন বিতর্কে না গিয়ে শুধু এটুকু বলা যায়, জাতীয়তাবাদ শেষ বিচারে এক কাল্পনিক সম্প্রদায়ের নামেই কাজ করে। বাস্তবের সম্প্রদায় ও পরিচয়ের সবটা তা ধারণ করতে পারে না। কিন্তু এগুলোকে আমরা গৌতম বুদ্ধের সেই নদীপারানির ভেলা গণ্য করতে পারি।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
পুনশ্চ, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা যদি রাষ্ট্র হয়ে উঠতে না পারে বা তার দরকার না থাকে, তাহলে তাদের জাতীয় সংস্কৃতি ও স্বার্থের প্রশ্নটি নির্ভর করবে বৃহত জাতির রাজনৈতিক চরিত্রের ওপর। ওপরে নিপীড়িত শ্রেণীসমূহের যে ঐক্যের কথা বললাম, সেই ঐক্যে নিপীড়িত জাতিগোষ্ঠীরও থাকা চাই। কেননা সেভাবেই তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে আর সংখ্যাগুরুরা পারে নিজেদের মধ্যেকার আধিপত্যবাদকে নিরসন করতে। তার জন্য রাষ্ট্রকে হতে হবে মধ্যস্থতাকারী, যতক্ষণ না তার বিলোপ ঘটে।
ইউরোপের সংখ্যালঘু মুসলমান বা রোমানিয়ার জিপসিরা কিন্তু কল্যাণরাষ্ট্রেও নিরাপদ নয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন গোড়ায় এ বিষয়ে অগ্রগতি ও সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রাখলেও আখেরে সেটা রুশ পুঁজিবাদী আকাঙা্ক্ষর সঙ্গে সঙ্গে রুশ আধিপত্য হিসেবেই দাঁড়িয়ে যায়। চীনের অবস্থা আরো খারাপ। বলিভিয়ায় নিপীড়িত জাতিগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে নতুন ল্যাটিনো আদিবাসী জাতীয়তা গঠনের কাজ চলছে। রাষ্ট্র এখানে মধ্যস্থতাকারী। কীভাবে এর নিরসন হতে পারে থিওরিটিক্যালি যা-ই বলি, আরো চিন্তা ও পর্যালোচনা দরকার। আমাকে আরো ভাবতে হবে। আপনার মতের অপেক্ষায় রইলাম।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নিচের মন্তব্যগুলি করেছেন লেখক-কবি আহমদ মাজহার, আমার ফেসবুক লিংকের নীচে: এখানে তুলে দিলাম।
আপনার বক্তব্যের সঙ্গে মোটামুটি ভাবে আমিও একমত। তবে পূর্ববঙ্গ ভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আমার বরং সম্পন্নতর মনে হয়। কারণ বঞ্চিতের মানসিকতা থেকে এর শুরু হলেও বাঙালিত্বের সম্পন্নতার অভিমুখ্য বাংলাদেশে উদ্ভূত বাঙালি জাতীয়তাবাদেই আছে। ভারতের অংশ হিসাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অস্তিত্ব পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ ক্ষীয়মাণ। পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিদের দৃষ্টি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের দিকে।
Ahmad Mazhar at 6:44pm March 28
আমার মনে হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রয়োজন এখনও ফুরিয়ে তো যায়ই নি, বরং আরও দীর্ঘকাল থাকবে। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অনেক নিজস্বতা ও শক্তিমত্তার দিক আছে এ-কথা যেমন সত্য সেই সঙ্গে এ কথাটাও মনে রাখতে হবে যে এখনো আমাদের সমাজ অনগ্রসর রয়ে গেছে রাষ্ট্রব্যবস্থার এবং সংস্কৃতির দিক থেকে।
Ahmad Mazhar at 6:44pm March 28
বিশ্বায়নের প্রভাবে একদিকে দীর্ঘকালীন গ্রামীণ সংস্কৃতির ভাঙন চলছে অন্যদিকে নগর-সংস্কৃতি জাতীয় নিজস্বতা নিয়ে পুরোপুরি দাড়াতে পারছে না এখনো। এখনো যে কোনও সাধারণ প্রগতিশীল পদক্ষেপ নিতে হলে জনগণের সামগ্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রয়োজন হয়। অগ্রসর সমাজের মতো দীর্ঘসূত্রী পরিকল্পনা নেয়া এখনও সম্ভব হচ্ছে না বাংলাদেশে।
Ahmad Mazhar at 6:45pm March 28
জাতীয় ঐক্যের জন্য এখনও জনগনণর মধ্য থেকে চাপ সৃষ্টির প্রয়োজন হয়। আর এর জন্য এখনো প্রবল ভাবে প্রয়োজন হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদের। যদিও জাতীয়তাবাদের অনেক সীমাবদ্ধতার কথাও আমাদের স্মরণে রাখতে হবে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
খুবই অকিঞ্চিতকর মানুষ আমি... পড়াশুনাও নাই, এগুলা উপলব্ধি করার মতন বুদ্ধিমত্তাও নাই বোধহয়... তবে "জাতীয়তাবাদ" টাইপের বিমূর্ত এবং আপেক্ষিক ধারণা গুলা পুরাই মাথার উপরে দিয়া যায়...
ঐজন্যেই বোধহয় আমি খুব একটা ভক্ত না এইসব ধারনার... কাগজে ভালো শুনাইলেও অনেক টেকনিকাল সমস্যা থাকে মনে হয়.. ধরেন যেমন এইরকম একটা গ্রাউন্ড নিয়ে কলকাতার কেউ যদি লিখতো যে বাংলাদেশের উচিত ভারতের প্রদেশ হওয়া, আমার মনে হয় কেলেঙ্কারী হয়ে যাইত এখানে... এবং এই ইতিহাসকেই ভিত্তি রেখে একটা দুইটা শব্দ এডিট করলেই হত....
আমার মতে সাম্রাজ্যবাদ জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি করে না... বরং উগ্র জাতীয়বাদই সাম্রাজ্যবাদের জনক..
এইখানে বলে রাখা দরকার "উগ্র" শব্দটাও আপেক্ষিক.. যেমন রাজাকারের ফাঁসী চাওয়া উগ্র নয়, ন্যায্য...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
জাতীয়তাবাদ মানেই কি স্থানকেন্দ্রিক কিছু একটা? রাষ্ট্রিক জাতীয়তাবোধ আর সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবোধের কোনো তফাত্ নাই?
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
আছে, সেটাই তো বলা হয়েছে ওপরে। আর জাতীয়তাবাদ স্থানকেন্দ্রিক হতে পারে, যেমন ফিলিস্তিন। ধর্মকেন্দ্রিক হতে পারে যেমন ইসরায়েল-ভারত-ইরান। আমাদেরটা স্থানকেন্দ্রিক নয়, ততটা যতটা ভাষাকেন্দ্রিক।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
তাহলে নিচের কথাগুলোর প্রয়োজনীয়তা বা যৌক্তিকতা কোথায়?
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
বৃঝলাম না. এখানে আমি প্রশ্ন করেছি যে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভাষিক ভিত্তির মধ্যে উভয় বাংলাতেই ধর্মের মিশেল দেওয়া আছে। এটা সমস্যা এবং এর যৌক্তিক ভিত্তি দূর্বল। অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক জাতীয়তাও যদি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে তো এ প্রশ্ন উঠবেই।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নতুন মন্তব্য করুন