এই বিষয়টা নিয়ে তিনটা লেখা দেব ভাবছি। প্রথমটা আজ। তবে এটি রিপোস্ট। পরেরটা (কাল) হবে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড স্টাডিজ এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দীনের এ বিষয়ে চিন্তা জাগানিয়া লেখা আদি পাপ : ১৯৭১-এর অপরাধের বিচার এবং তৃতীয়টা হবে, আমার নতুন লেখা। শেষেরটিতে যুদ্ধাপরাধের প্রতিকার ও ঘৃণা বিষয়ে চলমান বিতর্কে আমার আলোচনার উপসংহার টানবো।
আমরা ভুলে যাই আমাদের কাঁধে ৩০ লাখ লাশের ভার। আমাদের যে শিশু জন্মেছে এবং যে জন্মাবে, তার প্রাণবায়ুও কিনতু ওই শহীদদের থেকেই ধার করা। আনুমানিক ৪ লাখ নারীর চূড়ান্ত নিপীড়নের প্রতিকারের দায় আমাদের ওপর। এত মৃত্যু এত নির্যাতনের ভার নিয়ে খুব কম দেশকেই যাত্রা শুরু করতে হয়েছে। এবং এত মাহকাব্যিক একটি সংগ্রামের নিদারুণ অপচয়ের নজিরও পৃথিবীতে কম। বেয়াক্কলে ঘীয়ের বোঝে কী? আনে কর্পূর, লাগায় ...-এ।
গত কয়েকশ বছরে বাংলা দিয়েছে যত পেয়েছে অনেক কম। কেবল বাংলা বললে হয় না, পূর্ব বাংলা বললে তবে সহি-শুদ্ধ হয়। দুনিয়ার মধ্যে এমন জাতি নাই, যাদের ওপর অল্পতম সময়ে এরকম সর্বোচ্চতম গণহত্যা হয়েছে। ১৯৭১-এর নয়টি মাস দিনে গড়ে ৬ থেকে ১২ হাজার করে মানুষ হত্যা চলেছে (১৯৮১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা)। কিনতু এর প্রতিদান বাংলার জনগণ পাননি। বাংলার স্বাধীনতা তাদের দুর্দশা ও ক্ষমতাহীনতা থেকে মুক্তি দেয়নি। যে দেশের জন্য তারা যুদ্ধ করেছে জীবন দিয়েছে, সেই দেশ তাদের কবরের জমিনটুকু কিংবা তাদের লাশ পড়ে থাকার নিশানাটৃকু পর্যন্ত দিতে পারে নাই। এমনিতে মানুষ মারলে বিচার হয়, কিনতু মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ মারলে তার বিচার হয় না। তখনও এবং এখনও।
’৭১-এ আমাদের ওপর দিয়ে যা ঘটে গেছে তা কি কেবলই গণহত্যা? কেবল মৃত্যুই দেখেনি বাংলাদেশ, ধ্বংস দেখেছে, নিকৃষ্টতম ঘৃণা দেখেছে। কী বিষ্ময়, বলা হয়েছিল ঘাতক-দালালদের বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়া হবে, কাউকেই মাফ করা হবে না। সাগর পাড়ের দেশ হয়েও বাঙালি সাগরে ভয় পায়। নদী-নালা আর বন্যায় ভাসা তার মজ্জাগত অভ্যাস। সেকারণে শোকের নদীতে ভাসা আর অশ্রুর বন্যায় প্লাবিত হওয়াই বোধহয় আমাদের রীতি। শোকের প্রতিবিধান না করতে পেরে আমরা এখন শোকের কারণটাকেই ভুলতে বসেছি। এতবড় একটা যুদ্ধ জাতি করলো, তারপরও কেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বীর রসের কথা নাই! বীর রসে সঞ্জিত গল্প, কবিতা, গান, নাটক বা উপন্যাস কেন এতো হাতে গোণা? কেন আমাদের দেশাত্মবোধক ভাবের বেশিরভাগটাই পুতুপুতু আবেগে জবজবা? দেশটা কি ময়রার ভিয়েন যে সবকিছুই শোকের শিরায় না চোবালে বিকায় না!
অন্যদিকে স্বাধীনতার স্বাদ রসিয়ে রসিয়ে আস্বাদন করতে আমাদের দেশের ভাল-থাকা অংশ কখনোই বিরত হন নাই। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দিগম্বর করে রেখে তারা একাই স্বাধীনতার সুখ ভোগ করে যাচ্ছেন তো যাচ্ছেনই, কোনো খামতি নেই। রাষ্ট্র ও সমাজকে দুইয়ে, চুষে, চিবিয়ে ছোবড়া করে করেই তাদের নির্লজ্জ প্রতিষ্ঠা। এ কাজে এরা যেমন দড় এদের রাজনীতিটাও তেমন। দক্ষ বিউটিশিয়ানের মতো এরা স্বাধীনতার দেহ থেকে ৩০ লাখ মানুষের রক্তদাগ মুছে ফেলতে পেরেছে, শারীরীক ও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হওয়া লাখ-লাখ নারীর ভয়াবহ অভিজ্ঞতাকে চেপে যাওয়া হয়েছে। লুকিয়ে ফেলা হয়েছে পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকারদের ধর্ষণের ফসল যুদ্ধশিশুদের অস্তিত্ব। সেইসব মা ও তাদের সন্তাদের পরিণতির কোনো খোঁজ কি আমরা রেখেছি? এমন এক স্বাধীন দেশের জন্য তারা সর্বস্ব দিয়েছে, যে দেশ তাদের স্বীকার করেনি। পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের দেশীয় দোসররা লাখ লাখ নারীর জীবনকে পুড়িয়ে খাক করে দিয়েছে,আর বীরাঙ্গনা বলে আমরা সেই পোড়া ঘায়ে লবণ দেওয়ার কাজ সেরেছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই যে সোনার বাংলার স্বপ্নে সর্বস্ব দিল, তাকি তারা আর ফেরত পেয়েছে?
নির্যাতিত বা শহীদ নারীদের ষ্মরণে স্মৃতিসৌধ তো দূরের কথা একটা ষ্মারক ডাকটিকিট পর্যণ্ত হয়নি। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, জাতির ধারণা কি কেবলই পুরুষালি, নারীর অস্তিত্ব ও অবদানের স্বীকৃতি সেখানে কোথায়?
এসব এখন কিছু লেখক-গবেষক আর মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের বিষয়। আজো রাষ্টীয় এজেন্ডাভুক্ত হয়নি ’৭১-এ সংঘটিত গণহত্যা, জাতিগত নিধন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ আর যুদ্ধাপরাধের বিচারের জরুরত। আমাদের কত কত রাষ্ট্রীয় দিবস, কিনতু ১৯৭১-এর নারকীয় গণহত্যার জন্য একটি ‘গণহত্যা দিবস’ও আজতক ঘোষিত হয়নি। এমনকি এ গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক আদালতে প্রমাণ করতে গেলে যে ধরনের পদ্ধতিগত তদন্ত দরকার, তাও সমাধা করা হয়নি। হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ হয়েছে, কিন্তু তার চরিত্রটা যে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ তা প্রমাণের উপযুক্ত আইনী ভাষা কি আমাদের আছে? দেশীয় দালালদের বিচারের উপযোগী ১৯৭২-এর দালাল আইনটিও জিয়াউর রহমানের আমলে রদ করা হয়েছে। তারপরও তিনি আমাদের অন্যতম রাজপুরুষ। হা কলিকাল!
সত্য এই যে, আমরা স্বাধীনতা মানি কিনতু যে পথে তা অর্জিত হয়েছে তা মান্য করি না। মানলে অপরাধীদের বিচারের দায় এড়িয়ে স্বাধীনতাকে হালাল ভাবতে অসুবিধা হবার কথা। টিকটিকি যেমন বিপদে পড়লে শত্রুর হাতে লেজ ফেলে দেহ নিয়ে পালায়, তেমনি আমাদের শাসকরা স্বাধীনতার দেহ থেকে গণহত্যাকে কেটে গদি মাথায় করে পালিয়েছে। এ কারণেই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ অসমাপ্ত।
আমাদের শাসকদের সকল কিসিমের জাতীয়তাবাদই স্বাধীনতার মহিমা কীর্তন করে, কিন্তু গণদুর্ভোগের বিচারের প্রশ্নকে এড়িয়ে যায়, ভুলিয়ে দেয়। আপস করে ঘাতকের সঙ্গে। একাত্তরের গণহত্যাকারীদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ তো শেখ মুজিবই রচনা করেছিলেন, নাকি?আমেরিকা ও সৌদি আরবের চাপে গণহত্যার তদন্ত থেকে দৃষ্টি সরানো কি শেখ তারই কাজ ছিল না? সরকারিভাবে ’৭২ সালের জুলাই মাসে মাত্র ৪০০ জনকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। কিনতু কিছুকাল পরেই তা কমিয়ে ১৯৫ জন এবং পরে আবারও কমিয়ে ১১৮ জনে আনা হয়। কিনতু এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও মামলার নথিপত্র তৈরিতে ভেতর থেকেই একটি চক্র বাধার সৃষ্টি করায় বিষয়টি আর এগোতে পারেনি বলে ভারতীয় কূটনীতিক পি এন হাকসারের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান ইঙ্গিত করেন (যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা : এম হাসান)।
আর তার কণ্যা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জামাতকে গণতান্ত্রিক দলের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এবং ৯৪-এ আমরা পত্রিকায় দেখা গেল দেখলাম জাহানারা ইমামের লাশের ছবি আর সেই পাতাতেই নিজামী-হাসিনা বৈঠকের ছবি। তার দলের প্রার্থীই তো গোলাম আজমের পদমুবারক চুম্বন করেছিল। আর স্বাধীনতার আরেক নায়ক তাদের পুনর্বাসন করান এবং মন্ত্রী বানিয়ে মসনদের বাহার বাড়ান।
তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষওয়ালাদের মুক্তিযুদ্ধ কিনতু থামে নাই। নিজ জাতির ক্ষমতাবান রাজাকারদের সঙ্গে তারা আপোস করে আর একাত্তরের লড়াই এখনও বিহারিদের বিরুদ্ধে চালিয়ে যায়। কথায় বলে, মরারে মারো ক্যা? কয়, লড়ে-চড়ে ক্যা? বাঙালি জাতির একাংশের এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিপীড়নের দায় তারা একা নেবে কেন? পিতার অপরাধের দায় কেন এ প্রজন্মের বাংলাদেশী বিহারীরা বহন করবেন? ২৫ মার্চের আগে এবং ১৬ ডিসেম্বরের পরে তাদের ওপরও তো প্রতিহিংসার হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল? সেটাও কি যুদ্ধাপরাধ নয়? একাত্তর তাই কোনো সরল কাহিনী নয়। এ সত্য থেকে চোখ ফিরিয়ে থাকা কেবল আত্মপ্রতারণাই নয়, সুবিধাবাদিতা। এটাই সত্যের ভেতরকার তিতা শাঁস। চাই কি না চাই, সত্যের আঁটি তিতাই হয় এবং তাতে কখনো কখনো জিভ ঠেকাতে হয়।
দেশে ফিরে ১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দুই লাখ মা-বোন! এদের আমি কোথায় কী করব?’ ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি বলেন, ‘তোমরা বীরাঙ্গনা, তোমরা আমাদের মা’ (বাংলার বাণী, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)। ‘যুদ্ধশিশু’ এবং তাদের মা’দের একটা সুব্যবস্থা করার জন্য নীলিমা ইব্রাহিম অনেক খেটেছিলেন। এদের ভাগ্যে কী হবে, তা জানতে তিনি শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাকে বলেন, ‘না আপা। আপনি দয়া করে পিতৃপরিচয়হীন শিশুদের বাইরে (বিদেশে) পাঠিয়ে দেন। তাদের সন্তানদের মানুষের মতো বড় হতে দিতে হবে। তাছাড়া আমি এসব নষ্ট রক্ত দেশে রাখতে চাই না।’ (ইব্রাহিম, ১৯৯৮ : ১৮)। এটি কেবল রাষ্ট্রের স্থপতি এক মহানায়কের সংকট নয়, এটা ছিল জাতীয় সংকট। গোটা জাতির হৃদয়ে রক্তরণ হচ্ছিল,গ্লানি জমছিল। সরকারের তরফ থেকে এসব নির্যাতিত নারীকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তারা ভেবেছেন সেটাই নারী জীবনের একমাত্র গন্তব্য। অল্প ক’জন মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে আসেন, তবে মোটা যৌতুক চান। যৌতুকের লিষ্টির মধ্যে লাল জাপানি গাড়ি থেকে অপ্রকাশিত কবিতার বই প্রকাশ করা পর্যন্ত ছিল। তাদের যুক্তি: এদের অভিভাবক হিসাবে যৌতুক মেটানোর দায়িত্ব সরকারের। শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘আমি ওদের বাবা।’ ইতিহাসের দায় কি এতেই শোধ হয়? এ নিযে কর্মরত ড. ডেভিস মন্তব্য করেন, ‘না, কেউই এটা নিয়ে কথা বলতে চায়নি।... পুরুষেরা এ নিয়ে একদম কথা বলতে রাজি নয়। তাদের চোখে এসব নারী নষ্ট হয়ে গেছে। হয়তো তাদের মরে যাওয়াই ভালো ছিল এবং পুরুষরা সত্যিই তাদের মেরেও ফেলেছিল। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। পশ্চিমা সমাজে এরকমটা এত অপরিচিত! এত অপিরিচিত!’ (সাক্ষাতকার, বিনা ডি কষ্টা, ২০০২)।
পরিবারের পিতা বা বড় ভাই আর ‘জাতির পিতা’ এখানে এক সুরে কথা বলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরুষালি ইতিহাস নারী মুক্তিযোদ্ধাকেও কেবল সতীত্বের তকমা আঁটা চেহারাতেই দেখতে চেয়েছে। নারী যুদ্ধও করবে, পুরুষের রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের বলিও হতে পারবে কিন্তু কোনোভাবেই পুরুষের পরিবারের রাষ্ট্রের)সদস্য হওয়ার অনুপযুক্তা হতে পারবে না,তাকে পুরুষালী শুদ্ধতা রাখতেই হবে।
বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে খায়, তেমনি বড় ইতিহাস ছোট ইতিহাসকে লোপাট করে। বড় ইতিহাস মানে জাতীয় ইতিহাস, সেখানে নায়ক-মহানায়ক আছে, বীর আছে। তারা জাতি গঠনের ইঞ্জিনিয়ার ও স্থপতি। তাদের অনুসারীদের ভাবোচ্ছ্বাসে ইতিহাসের ছোট ছোট কারিগরের ভূমিকা ঢাকা পড়ে যায়। ইতিহাসেও মাতস্যন্যায় আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ সত্য বিরল নয়। এখানেই মুক্তিযুদ্ধের শ্রেণীগত বিচারের প্রয়োজন পড়ে। মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত সমাজ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে নিজস্ব রাষ্ট্র চেয়েছে, চেয়েছে বিদেশী শাসক হটিয়ে ক্ষমতার গদিতে নিজেরা বসতে। শেখ মুজিবুর রহমান সাত মার্চের ভাষণে বলেছিলেন,‘বার বার জয়ী হয়েও আমরা গদীতে বসতে পারি নাই'। আওয়ামী লীগের নের্তৃত্বে মধ্যবিত্ত বাঙালিরা গদীতে বসতে চেয়েছিল। এটাই স্বাভাবিক। তাদের এই শ্রেণীগত আকাঙ্ক্ষা তখন ইতিহাসের ফেরে জাতীয় আকাঙ্ক্ষাও হয়ে উঠতে পেরেছিল। কিনতু এই আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের বাসনা যতটা পাক্কা ছিল, ক্ষমতার চরিত্র বদল ততটা ছিল না। অথচ কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ চেয়েছিল মুক্তি। সেই মুক্তির চেহারা-ছবি তাদের কাছে অস্পষ্ট হলেও, জমি-জীবন ও ভবিষ্যতের ওপর তারা বাঙালি বা অবাঙালি কারো আধিপত্য চায়নি। মুক্তিবাহিনীতে দলে দলে এরাই যোগ দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধার প্রতীক হিসাবে আমরা লুঙ্গি-গামছা পড়া কৃষককেই বুঝে থাকি। কিন্তু তাদের লড়াই আর ছয় দফার লড়াই কি এক ছিল? না থাকলেও পাকিস্তানীদের গণহত্যার নিশানায় এরাই বেশি করে পড়েছিল। যে চার লাখ ‘বীরাঙ্গনার’ কথা বলা হয়, তারাও কিনতু গ্রাম শহরের গরিব ঘরেরই নারী। মুক্ত বাংলাদেশ এসব গরিব নারী-পুরুষকে ভুলে গেল। এরা অস্ত্র ও জীবন সমর্পণ করে ফিরে গেল, মেয়েদের অনেকে আত্মহত্যা করলো অনেকে ভীড় জমালো পতিতালয়ে। এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পুরুষরাই তো সেখানে গিয়ে তাদের পয়সার বিনিময়ে ধর্ষণ করে আসতে পারে; তাদের মধ্যে কি মুক্তিযোদ্ধাদেরও কেউ কেউ ছিল না,ছিল না রাজাকরদের কেউ? দেশ গড়া ও রাষ্ট্র পরিচালনার ডাক এদের কাছে যে আসবে না তাতে বিষ্ময় নাই। এমনকি যে সাতজন মুক্তিযোদ্ধকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেয়া হলো,তাদের মধ্যে কৃষক সন্তানেরা থাকলেও সেই পরিচয়ের জন্য তারা সম্মানিত হননি, হয়েছেন সেনাসদস্য হওয়ার জোরে। নইলে সেনাসদস্যের বাইরের বীরদেরও আমরা দেখতে পেতাম। গণযুদ্ধ'র প্রয়োজনে শ্রেণীতে শ্রেণীতে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, স্বাধীনতার পরপরই তা ভেঙ্গে গেল। রাষ্ট্র একদিকে চলে গেল,সমাজ আরেক দিকে। অন্যদিকে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে রুখতে সফল হলেও নিজ জাতির মধ্যকার ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজিত হলো। তারই ফল গণহত্যাকারীদের বিচার না হওয়া। স্বাধীন বাংলাদেশেই পরাস্ত হলো তাদের শ্রেণীর লাখ-লাখ মানুষ-হত্যার বিচারের দাবি। এবং স্বাধীনতার শত্রু আমেরিকা ও সৌদি আররে পুনরাভিষেক ঘটলো স্বাধীন বাংলাদেশে। শেখ মুজিব ভুট্টোকে জড়িয়ে ধরে বললেন,'আও মেরে ভাই'।
গত ৩৫ বছরে যারা ক্ষমতাবান হয়েছেন,ব্যক্তিগতভাবে তাদের তো খুব বেশি কিছু হারাতে হয়নি। এদের চেতনার কাঠখড়ে আর আগুন জ্বালানো যাবে না। জ্বলবে না,নানান আরামের রসে সেটা ভিজা।
বড় যুদ্ধের ভেতরে যে ছোট ছোট গোষ্ঠীগত যুদ্ধ চলে তার চরিত্র নিরূপণ এবং তাতে কার কী ভূমিকা তা সনাক্ত করা ছাড়া তাই যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে কী থেকে কী হয়ে গেল তার কার্যকারণ নিরূপন সম্ভব না। তাই ১৬ ডিসেম্বর একইসঙ্গে জয়-পরাজয়ের দিন। আমরা জয়ী হলাম, কিনতু জনগণের বড় অংশের শরিকানা ছিনতাই হয়ে গেল। বিপ্লব সম্পর্কে বলা হয় যে, তা প্রথমেই তার সন্তানদের খায়। সিরাজ শিকদার, কর্নেল তাহের নিহত হলেন, জাসদের গণবিপ্লবে অনেক তরুণ মুক্তিযোব্দার অকাল মৃত্যু ঘটলো। রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিব ও তাজউদ্দীন নিহত হলেন। সবই কিনতু হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতার ভেতর থেকে,বাইরের বিদ্রোহ বা আক্রমণে নয়। এটা একটা দিক। অন্য দিকে,লড়াই ও ত্যাগের অগ্রভাগের শ্রেণীটিকে পিছু হঠানো হল। পরবর্তী শাসকেরা চেষ্টা করেছে গরিব জনগোষ্ঠীর শ্রেণীগত পরাজয়ের এই ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেয়ার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষপূজক এবং জাতীয়তাবাদী মহাত্মনেরাই এ ব্যাপারে শিরোমণি। বঞ্চিত জনগণকে যদি তাদের পরাজয়ের স্মৃতি ও জ্বালা ভুলিয়ে দেয়া যায়, তবে তারা কখনোই ক্ষমতা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে মাথা তুলবে না। গণহত্যার বিচার না হওয়ার সঙ্গে এই ভুলিয়ে দেয়ার রাজনীতির সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশে ’৭১-এর গণহত্যার বিচারের দাবি যদি কখনো অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে, যদি সত্যিসত্যি গণশত্রুদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়, তবে রাষ্ট্র ও সমাজের কোটরে বেড়ে ওঠা গোটা বিষবৃক্ষের ঝাড়ই আক্রান্ত হবে। যে রাজনীতির গাফিলতিতে ঘাতকেরা রক্ষা পেয়েছে ও পাচ্ছে, গণরোষের তীরের নিশানা থেকে তারাও রেহাই পাবেন না। অতীতের এক অদ্ভুত বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে অতীতের সমস্যার নিদান যদি যদি অতীতে না করা হয় তবে তা ফিরে ফিরে আসবেই। ক্ষত যদি না শুকায় তবে তা বারবার ব্যথা জাগাবেই। যতদিন না যার যা প্রাপ্য তা তাকে দেয়া হচ্ছে,ততদিন সেই কর্তব্য আমাদের তাড়িয়ে বেড়াবে। এখন তাই একাত্তরের দুটো সম্ভাবনা। এক. একাত্তরের বিজয়কে পরাজয়ে পরিণত করা এবং দুই. অসম্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধকে সম্পূর্ণ করে জনগণের মুক্তি ঘটানো।
কিনতু আমরা বীরদের কথা শুনি,জানি। তারা এখন জাতীয় নায়ক। ১৬ ডিসেম্বর,২৬ মার্চে তাদের কথা বা স্মৃতি শোনার জন্য মিডিয়া কান খাড়া করে রাখে আর জাতি শোনে। তারা গরিব মুক্তিযোদ্ধাদের মতো নন। সমাজে তারা মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত। সবচেয়ে বড় কথা তাদের পেছনে বড় বড় দল আছে। কিনতু এভাবে যে মুক্তিযুদ্ধটা একটা বিশেষ শ্রেণীর হাতে চলে গেল, বাদবাকি লোকজনদের ত্যাগ ও রক্তের ছাপ যে মুছে ফেলা হলো, তার বিচার কে করবে? ইতিহাস? ইতিহাসের বিচার অনেক লম্বা। অনেক সময় লাগে তাতে। অতএব নীরবতাই হীরন্ময়!
এখন একাত্তর যেন তামাদি প্রসঙ্গ। কেবল নির্বাচনের হাওয়া এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা তোলা হয়। মার্চ বা ডিসেম্বরে সংবাদপত্র এবং দৃশ্যমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্দশার সংবাদ বেশ একটা উপভোগ্য বিষয়ে পরিণত হয়। কেননা, যুদ্ধ শেষ, বিজয় লোপাট কান্না হতাশা বকবল অবশিষ্ঠ। এ ব্যপারে ঠিকা নেওয়া লোক আছে, তাদের কারণেই সেটা একটা করুণ রস উপভোগের বিষয় হয়ে ওঠে। এ জন্যই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ যাত্রা বা ‘বেদের মেয়ে জ্যোছনার’ করুণ কাহিনী জনপ্রিয় হয়। যে সিনেমা যতবেশি দর্শকের যত ফোঁটা বেশি চোখের জল ফেলাতে পারে সেই সিনেমা তত বাজার পায়। মাঝে মাঝে জাতীয়তাবাদী মেকি ঘৃণার হুম-হাম ধ্বনিও তোলা হয়। কিনতু তার সঙ্গে স্বজন হারানোদের হুতাশনের কোনো সম্পর্ক নাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-সংগ্রামের করুণ কাহিনীর যে কদর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, তার কারণও কি এই করুণ রসের মানসিক অর্থনীতি? মঞ্চে বা ছাপা কাগজে আর টিভির পর্দায় এত যে অশ্রুবর্ষণ, তা কি তবে জনতোষণের নতুন ফন্দি? জনগণের আবেগকে কাজে লাগাবার মোহনীয় আয়োজন? হতে পারে কিনতু।
মধুমিতা ছদ্মনামের এক মেয়ের কথা দিয়ে শেষ করি। সে যশোরের মেয়ে। রাজাকারের তাদের বাড়ীতে আসে। সে পালায় কিনতু, ছোট ভাই ধরা পড়ায় সে ফিরে আসে। তখন তারা তাকে পায়। মধুমিতার জবানীতে :তাদের কাজ হয়ে যাবার পর তারা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে চলে গেল। কিনতু আমি তো আমার ভাইটিকে মরতে দিতে পারি না। তাই অসহ্য ব্যথা সত্ত্বেও নিজেকে কোনো মতে তুলে ভাইকে দরজা ভাঙায় সাহায্য করলাম। তা করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে পুড়ে গেলাম। সেই রাতে লুকিয়ে থাকলাম বাড়ির পেছনের পুকুরটাতে। পরদিন ভোরে যখন পুকুর থেকে উঠলাম,আমার গায়ের মাংস খাবলা খাবলা করে খসে পড়তে লাগল। দু’একটা টুকরা ছাড়া গায়ে কোনো কাপড় ছিল না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম,গাঁয়ের কিছু লোক ভোরের নামাজ পড়ে ফিরছে। আমাকে দেখে তারা মজা পেয়ে হৈহৈ করে উঠল। আমি তাদের বলার চেষ্টা করলাম,‘আমি বেশ্যা নই, ওমুক আমার বাবা, আমাকে সাহায্য করুন।’ কিনতু তারা চলে গেল। সেদিন থেকে আমি জ্যান্ত মরা। আমার শরীরে যন্ত্রণা। আজ আমার কোনো স্থান কোনো মর্যাদা নেই। ভাইয়ের জন্য আমার জীবন,সম্ভ্রম সবকিছুই বিসর্জন দিয়েছি। অথচ আমি এখন তার চাকরের থেকে বেশি কিছু না। এই-ই বাংলাদেশে মেয়েদের কপাল।’’(সাইকিয়া, ২৮৬, হিস্টরি ওয়ার্কসপ জার্নাল)
কণ্ঠ আরো অনেক বাংলাদেশি মেয়ের মতো। সেই কণ্ঠ নির্যাতিতের কণ্ঠ। যোদ্ধা হওয়া বা দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকারের গর্বের সঙ্গেই জড়িত হয়ে আছে তার সর্বনাশের ইতিহাস। পরিবারের ধর্ম এবং রাজনীতিই তাদের ‘শত্রুশরীরে’পরিণত করেছে। পাকিস্তানি সৈন্য,বাঙালি রাজাকার এবং বিহারিরা দেশ ও জাতির নামে তাকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং ফেলে গেছে পুড়ে মরার জন্য। যখন সে পুকুর থেকে উঠে এলো, তখন তার গায়ের পোড়া মাংসের ঘ্রাণ কি আমাদের নাকে লেগেছিল? কিংবা তার যন্ত্রণা কি আমরা টের পেয়েছিলাম? আমরা তাকে ফেলে এসেছি দূর অতীতে,কখনোই না ফুরানো একাকীত্বের মধ্যে,যেখানে সে কিংবা আরো অসংখ্য বিধবা,পঙ্গু,পরাস্থ যোদ্ধার স্মৃতি,ভয়,উদ্বেগ অথবা আশার কোনো অংশীদার নেই।
কোনো মুক্তির যুদ্ধই তাদের আর মুক্ত করতে পারবে না, কেবল অপরাধীদের শাস্তি ছাড়া। সেইটুকু সান্তনার যোগ্যতা আজো বাংলাদেশের নাই। মুক্তি নিজে যতক্ষণ না মুক্ত হচ্ছে, ততক্ষণ তার অপরকে মুক্ত করার ক্ষমতা নাই।
মন্তব্য
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নিশ্চয়ই প্রশংসার থেকে আলোচনা উত্তম।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ইতিহাসের বিচার আসলেই সংক্ষিপ্ত নয়। ভালো লাগলো আপনার লেখা, ইদানীং কোথাও ইতিহাস বিষয়ক লেখা দেখলেই গিলি।
বর্তমানে আমার সকল আগ্রহ বাংলাদেশের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস কিংবা বঙের ইতিহাসের প্রতি। বেশ কিছু বই যোগাড় করেছি।
ফারুক ভাই- কিছু বইয়ের নাম বললে ভালো হয়। ইতিহাস বড় অদ্ভূত জিনিস!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আসলেই
রমেশচন্দ্র মজুমদার, নীহাররঞ্জন রায় তো আছেনই। তবে এগুলোতে পূর্ব বাংলার পার্সপেক্টিভ প্রায় সামান্য।
এছাড়া:
সুলতানী আমল: আব্দুল করিম (বাংলা একাডেমী)
রাইজ অব ইসলাম ইন বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার: রিচার্ড ই ইটন।
ভ্যান শ্যান্ডেলের হিস্টরি অব বাংলাদেশ বেরিয়েছে। তিনি বাংলাদেশকে ভাল জানেন। এখনও পাইনি। http://www.cambridge.org/catalogue/catalogue.asp?isbn=9780521679749
আর গত শতাব্দী নিয়ে আগ্রহী?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
রমেশচন্দ্র মজুমদার, নীহাররঞ্জন রায় তো আছেনই। তবে এগুলোতে পূর্ব বাংলার পার্সপেক্টিভ প্রায় সামান্য।
এছাড়া:
সুলতানী আমল: আব্দুল করিম (বাংলা একাডেমী)
রাইজ অব ইসলাম ইন বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার: রিচার্ড ই ইটন।
ভ্যান শ্যান্ডেলের হিস্টরি অব বাংলাদেশ বেরিয়েছে। তিনি বাংলাদেশকে ভাল জানেন। এখনও পাইনি। http://www.cambridge.org/catalogue/catalogue.asp?isbn=9780521679749
আর গত শতাব্দী নিয়ে আগ্রহী?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
মুনসতাসীর মামুনের "কোই হ্যায়" পড়লাম। এমন কিছু বই দরকার।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
নাম শুনেছি, পড়িনি। তাঁর বাংলার সশস্ত্র আন্দোলন নিয়ে ভাল এক খানা বই আছে। দেখতে পারেন।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
থ্যাংকু।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
এই চমৎকার লেখাটির জন্য অভিনন্দন লেখককে।
বাকীগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
পরবর্তি লেখা দু'টোর অপেক্ষায় থাকলাম।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দীর্ঘ লেখাটি পড়বার জন্য ধন্যবাদ।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আপনার লেখাটার উপর বিশদ আলোচনার ইচ্ছে আছে। আজ পারছি না সময়ের অভাবে। আমাদের জাতীয় স্ববিরোধীতার চরিত্র বিশ্লেষনটা চমৎকার হয়েছে। অনেক অপ্রিয় কথা আমরা বলি না। আপনি সেটা স্পষ্ট সুরেই বলেছেন।
পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১৭১
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
আপনার লেখা পড়লে আসলে শুধু পড়া হয়না, শেখা হয় -- এমনই মনে হলো আবার।
এটাই সম্ভবতঃ চরমতম সত্য।
একটা অনুরোধ, বিশাল লেখা হওয়ায় নতুন প্রসঙ্গে যাবার সময় সাবসেকশন হিসেবে ভাগ করে টাইটেল জুড়ে দিলে লেখার ট্র্যাকটা ফলো করা আরো সহজ হতো।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
তথাস্তু, পরেরটা থেকে করবো। আসলে বেশি সময় নিয়ে লিখলে লেখা ছোট হয়, একটানে লিখলেই বড় হয় আর রিপিটেশন ঘটে।
পরের পর্ব থেকে কিছুটা জটিল দিকে যাবে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
সবগুলো লেখা পড়ে আপনার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত হয়ে কথা বলবো, তার আগে অপেক্ষা শুধু।
তবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে আপনার লেখাটি সম্পর্কে বড় করে কিছু বলার আছে। কখন সময় হবে কে জানে? এতো কিছু সামনে, ভালো লাগে না, মরে যেতে মন চায়।
ইয়াসমিন সাইকিয়ার সাথে কিছুদিন আগে যোগাযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশে তার লেখার অনুবাদ প্রকাশিত হচ্ছে জেনে তিনি খুব ক্ষিপ্ত কারণ তিনি কাউকে এ ব্যাপারে এখনো অনুমতি দেন নি, কেউ অনুমতি চায় নি। অন্যদিকে পাকিস্তানীদের ওপর তিনি খুব খুশী কারণ তারা তার গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে অনুমতিসহ সেগুলি পুর্নমুদ্রণ ও অনুবাদ প্রকাশ করছে যার মাধ্যমে তিনি হয়ত একটা রয়ালটিও পাচ্ছেন। পাকিস্তানীরা তার গবেষণায় আগ্রহ দেখাচ্ছে সম্ভবত কারণ তিনি তার গবেষণায় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্যদেরও 'ধর্ষক' ও নিপীড়ক হিসেবে চিত্রিত করছেন। শর্মিলা বোসের মত 'ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটে নি' বলার চেয়ে, সবাইকে যদি ধর্ষক হিসেবে দেখানো যায়, তাহলে পাকিস্তানের কিছুটা দায়মুক্তি হয় তো বটেই। জালাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি যুদ্ধ পরবর্তী অনেক ঘটনাকে যুদ্ধ সময়কার বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে ভারতীয় সৈন্যরা তো ডিসেম্বর ৩,১৯৭১ -এর পরে বাংলাদেশে ঢুকেছিল। এর আগে তাদের দ্বারা নারী নির্যাতনের ঘটনা তিনি কোথায় পেলেন?
সাইকিয়ার ইমেইলের কিছু অংশ এখানে দিলাম-
It is quite upsetting that translations of my work are done without my permission. It is scary that there are no checks because it can leadto misrepresentation of research and scholarship and no one would be
seemingly responsible for it in Bangladesh. Recently, a feworganizations from Pakistan got in touch with me with an interest toreproduce some of my essays in their publication. It was nice that they sought permission and did not randomly reprint the essays because
they think it is important.
You'd asked if I published anything on my Pakistan half of the research. An essay on the perpetrator's memories will appear in a book called 'Crisis and Beyond: Reevaluating Pakistan' (2008) edited by
Naveeda Khan (incidentally she is from Bangladesh). The book is under production by Routledge. Besides, this piece, I had written and published an essay in 'Claiming Power from Below' (2008) edited by Manu
Bhagavan and Anne Feldhaus. My essay focuses on the failure of thestate and leaders, including Pakistani, Indian and Bangladeshi that I contend must be evaluated for understanding the violence during the
war. A final piece that is my newest work and kind of outlines thefuture book project will appear this year (2008) in an edited volumeentitled 'States of Trauma'.
I have finished a manuscript on Bangladeshi women's memories of the war and it is under consideration for publication both in India and the US.
Saikia's work on 1971 was published in 4 or 5 installments at the year 2007.She knows that from correspondence with me. I'm not going to publish That piece of work in book form without her consent. That article was taken from an International journal. please find it and read.
What I translated earlier has no mention of Indian Soldiers misdeed. again I will check again. without reading, please don't entertain any blame. Saikia's work is not and should not be compared with Sormila's.
I'll comment later soon.
thanks for the correspondence. I'm in a hurry...
ফারুক ওয়াসিফ, আপনি যে আর্টিকেলটি সমকালে অনুবাদ করেছেন তার স্বত্ত্ব আসলে অক্সফোর্ড হিস্টরি ওয়ার্কশপ জার্নালের (HWJ)। আপনাকে অনুবাদ করতে হলে তাদেরকে পয়সা দিয়ে অনুমতি কিনতে হবে; সাইকিয়ার মৌখিক সম্মতি এতে যথেষ্ট নয়। ব্যাপারটা আমাকে সাইকিয়াই ব্যাখা করেছেন, আমি অনুমতি চাওয়াতে তিনি আমাকে নিম্নোক্ত কথা বলেছেন-
“I think you can get permission from HWJ for translating the article. Try it. If they ask me, I will get back to them”
জার্নাল সাইকিয়ার কাছ থেকে স্বত্ত্ব নিয়ে নিয়েছে। এখন কোথাও কোন অনুবাদ প্রকাশ করতে হলে বা কোন রিপ্রডাকশন করতে হলে ঐ জার্নালকে তার জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। আপনি যদি তা না করে অনুবাদ প্রকাশ করে থাকেন, তবে আপনি আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন ভংগ করেছেন।
তানভীর, ওপরে আমার রেসপন্সটা করেছিলাম তড়িঘড়ি করে।
দ্যাখেন, কীভাবে আমরা মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে আসি। আপনি লিখেছেন,
''ইয়াসমিন সাইকিয়ার সাথে কিছুদিন আগে যোগাযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশে তার লেখার অনুবাদ প্রকাশিত হচ্ছে জেনে তিনি খুব ক্ষিপ্ত কারণ তিনি কাউকে এ ব্যাপারে এখনো অনুমতি দেন নি, কেউ অনুমতি চায় নি। অন্যদিকে পাকিস্তানীদের ওপর তিনি খুব খুশী কারণ তারা তার গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে অনুমতিসহ সেগুলি পুর্নমুদ্রণ ও অনুবাদ প্রকাশ করছে যার মাধ্যমে তিনি হয়ত একটা রয়ালটিও পাচ্ছেন। পাকিস্তানীরা তার গবেষণায় আগ্রহ দেখাচ্ছে সম্ভবত কারণ তিনি তার গবেষণায় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্যদেরও 'ধর্ষক' ও নিপীড়ক হিসেবে চিত্রিত করছেন। শর্মিলা বোসের মত 'ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটে নি' বলার চেয়ে, সবাইকে যদি ধর্ষক হিসেবে দেখানো যায়, তাহলে পাকিস্তানের কিছুটা দায়মুক্তি হয় তো বটেই। জালাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি যুদ্ধ পরবর্তী অনেক ঘটনাকে যুদ্ধ সময়কার বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে ভারতীয় সৈন্যরা তো ডিসেম্বর ৩,১৯৭১ -এর পরে বাংলাদেশে ঢুকেছিল। এর আগে তাদের দ্বারা নারী নির্যাতনের ঘটনা তিনি কোথায় পেলেন?''
তাঁর যে মেইলটি আপনি উদ্ধৃত করেছেন, সেখানে কিন্তু পাকিস্তানিদের তাঁর গবেষণা নিয়ে খুশি হওয়ার গর্হিত কারণটি নিয়ে সম্ভবত বলে কোনো অনুমানের সুযোগ রাখেননি। তারপর আমি তাঁর যে প্রবন্ধটি অনুবাদ করেছি তাতে ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে কোনো কথা নাই। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ঘটনার কথা আছে প্রসঙ্গসূত্রে। এখন আমি কীভাবে আপনার কথায় সায় দিই? মনে হয় আপনিও ওটা পড়েননি।
সাইকিয়া আমাকে তখন বলেছিলেন যে, তাঁর গবেষণার দ্বিতীয় ভাগটি তিনি পাকিস্তানী সৈন্যদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানে গিয়ে করবেন। সম্ভবত সেটাই বই। আগে বের হোক তো!
প্রথম অংশের অনুবাদটি সমকালে (মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পত্রিকা বলে পরিচিত) ধারাবাহিক ভাবে আসে। তখন অনেকেই আগ্রহ জানিয়েছিলেন, আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। কোনো প্রতিবাদ আসেনি। তার পরে বই আকারে অন্য আরো প্রবন্ধের সঙ্গে যখন প্রকাশের চিন্তা করি, তখন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তিনি বলেন, বই বের হচ্ছে ইংরেজিতে। পরে দেখা যাবে, এখন নয়। আমার বই আর বের হলো না।
তাহলে কে জানাল যে, বই করা হচ্ছে? কে তাঁকে চটিয়ে দিল ? তারওপর তাঁর বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ দাঁড় করাতেই হয় তাহলে তাঁর লেখার সূত্র ধরেই তা করা উচিত। অসমিয়া দেশের কোনো ইয়াসমিন সাইকিয়া বলেই তো আমরা কাউকে ছাড় দেব না। কিন্তু জানতে হবে তো তাঁর অপরাধ? নইলে এরকম ব্লেমগেম-এর ফল কত দূর গড়াতে পারে ভেবেছেন?
শুভেচ্ছা।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
জনাব, খামাখা আমি ব্লেইমগেইম খেলব কেন? আমার স্বার্থ কী? (ও হ্যাঁ, অবশ্যই আমার স্বার্থ বাংলাদেশকে নিয়ে , কিন্তু তা যৌক্তিক কারণেই)
আমি আমার মন্তব্যেই বলেছি ভারতীয় সৈন্য এবং যুদ্ধ পরবর্তী ঘটনার ব্যাপারটা জালাল ভাই আমাকে বলেছেন। জালাল ভাইয়ের সাথে সাইকিয়ার ফোনে কথা হয়েছে কয়েকবার এবং অনেক তথ্যসূত্র জালাল ভাইই সাইকিয়াকে যোগাড় করে দিয়েছেন। সাইকিয়া দাবী করেছে ১৯৭১ সালে ভারতীয় বাহিনীর লোকেরা নাকি লুঙ্গি পড়ে বাংলাদেশে ঢুকে নারী নির্যাতন করেছে, তার কাছে ভারতীয় বাহিনীর অত্যাচারের ছবিও সংগ্রহে আছে- - সে প্রেক্ষিতে জালাল ভাই ঐ প্রশ্ন তাকে করেছিলেন যা আমি আগের মন্তব্যে বলেছি। আপনি জালাল ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানতে পারেন। আর যুদ্ধ পরবর্তীতে অনেক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল, ঘটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাইকিয়া সেগুলোকে যুদ্ধের ঘটনা বলে তার গবেষণায় ব্যবহার করছেন- এ নিয়েও সাইকিয়ার সাথে জালাল ভাইয়ের কথা হয়েছে।
এখন ঐ আর্টিকেল, যার প্রতি আপনার এত মহব্বত সেখানে আসলেই ভারতীয় বাহিনীর ব্যাপারে বিস্তারিত কোন ঘটনা নাই। কিন্তু ঐখানে যা আছে তা পড়ে সাইকিয়ার চিন্তাধারাও যে খুব ভাল- তা মনে হয় না। কয়েকটা লাইন কোট করি-
০১
In 1971 two wars broke out in East Pakistan. One was a civil war fought between West and East Pakistan, and the other an international war fought between West Pakistan and India. In the wars ethnicity colluded with national interests and state politics, and the armies of West Pakistan and India became involved in violence, mainly targeted against the civilian population of East Pakistan, particularly women. (বাংলাদেশের যুদ্ধ 'সিভিল ওয়ার'? [পরে অবশ্য দু'টো যুদ্ধ একত্রে 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' হিসেবে পরিচিত সেটা বলেছে] , ভারতীয় বাহিনী নারী নিপীড়নে যুক্ত ছিল শুরুতেই তো স্পষ্ট বলা আছে )
০২
In this political-public discourse every man from Pakistan was reduced to the generic label of ‘perpetrator’ and every Bangladeshi man became a mukti judha, a war hero. In this national political memorializing, women were tellingly absent, even though a count of 200,000 rape victims was used by politicians to mobilize anger against Pakistani enemies several decades later. Such narratives created and clearly demarcated societies – ‘evil’
Pakistan and ‘good’ Bangladesh. No possibilities existed for blurring the boundaries and generating a dialogue between the two. (শুনতে শর্মিলা বোসের মত লাগে না, নাকি?
০৩
It became clear to me that 1971 was truly what one woman, Sakeena Begum, a Bihari victim, described as ‘the year of anarchy and end of humanity in Bangladesh
০৪
They gave me a lot of information about political policies, such as the recruitment of Mukti Bahini soldiers in refugee camps located in India; the performance of mandatory abortion on pregnant women; the destruction of records and reports on women’s rehabilitation programmes to maintain their ‘honour’; and the ‘silencing’ of raped women through abandonment by their own families. (মুক্তিযোদ্ধাদের ইন্ডিয়া ক্যাম্পে রিক্রুট করা হোত?? নাকি মুক্তিযোদ্ধারা স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়েছিল?? বাকীগুলোর ব্যাপারে আর মন্তব্য করলাম না)
০৫
But sexual violence was not a random act in 1971. The state made these men freedom fighters and gave them power to carry out its will with violence, if need be. The rhetoric of war and perception of Pakistanis and Biharis as the ‘enemy’ propelled Bengali men to commit horrific acts, and vice versa, and these often metamorphosed into sexual violence against women in order to terrorize and force the whole communities into fear and submission. (বাংলাদেশ রাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধাদের ধর্ষণের ক্ষমতা দিয়েছিল??!! )
কয়েকটা দিলাম। চাইলে এরকম আরো দেয়া যাবে।
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
ইয়াসমীন সাইকিয়া যদি সত্যিই এই কথাগুলো বলে থাকেন
উনার বলা বাকি কথাগুলো সত্যি বলে মেনে নিতে আমার যথেষ্ট কষ্ট হবে।
নিশ্চয়ই তানভীর ভাইয়ের জন্য রয়েছে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
দ্রুত সম্পূর্ণটা পড়তে চাই।
***************
শাহেনশাহ সিমন
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
রানা মেহের এর মন্তব্য এর সাথে একমত। তবে বই গুলো পেলে ভালো হত। আপনারা সবাই রেফারেন্স ব্যবহার করছেন কিন্তু প্রাপ্তিস্থান তুলে দিলে আরো ভালো হত ব্যাপার গুলো।
সাইকিয়া তাঁর গবেষণার মুখবন্ধে লেখেন :
''১৯৭১ সালে পুর্ব পাকিস্তানীদের জীবনে দু’টি যুদ্ধ এসে হানা দিয়েছিল। এর একটা ছিল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার গৃহযুদ্ধ এবং অন্যটা পশ্চিম পাকিস্তা ও ভারতের মধ্যকার এক আন্তর্জাতিক যুদ্ধ। দু’টি ক্ষেত্রেই জাতীয়তার বোধ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় রাজনীতির সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনী মূলত পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িয়ে গিয়েছিল, বিশেষত নারীদের বিরুদ্ধে। উভয় পক্ষই তাদের কর্মকাণ্ডে পেয়েছিল স্থানীয় সমর্থকদের সহযোগিতা। এই যুদ্ধ ভারতের বিহার থেকে ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর অভিবাসনকারি বিহারি জনগোষ্ঠী দাঁড়িয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের পক্ষে। পাকিস্তানের ঐক্য রক্ষার একটা আশা তাদের ছিল। বাঙালিদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশও পাকিস্তানী বাহিনীকে মদদ যুগিয়েছিল। মূলত এরা ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকারি দল মুসলিম লীগের সদস্য। অন্যদিকে, ভারতীয় বাহিনী স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের পক্ষে পেয়েছিল হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন। ভারতীয় সরকারের সহায়তায় বাঙালিরা গঠন করে মুক্তিবাহিনী নামে স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনী। সম্মিলিতভাবে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানীদের পরাজিত করে এবং তাদের বাধ্য করে আত্মসমর্পনে। গৃহযুদ্ধের সমাপ্তিতে পাকিস্তান সরকার তার পূর্ব প্রদেশে সকল বৈধতা হারিয়ে ফেলে; অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক যুদ্ধের পরিণতিতে পাকিস্তান বিভক্ত হয় এবং জন্ম হয় বাংলাদেশ নামে এক স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্রের। সাধারণভাবে এই দুই যুদ্ধ একত্রে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে চিহ্নিত।
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচলিত ইতিহাসে জোর পড়ে পশ্চিম পাকিস্তান, পুর্ব পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যকার সংঘাতের ওপর। সকল অনুসন্ধান ও আলোচনার নজর কেবল বাঙালি, বিহারি এবং পাকিস্টানী জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যকার সম্পর্কের বাইরের দিকটির ওপরই পড়ে। কিন্তু জনগোষ্ঠীগুলোর ভেতরকার যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে যুদ্ধের সময় নারীর বিরুদ্ধে সীমাছাড়া সহিংসতা চলে, বলতে গেলে তাকে পাশকাটানো হয়েছে। দমিত করা হয়েছে নারীর কণ্ঠ। তাই ১৯৭১ এর দরবারি ইতিহাসে নারীর অভিজ্ঞতা ও স্মৃতির কোনো চিহ্নই নাই। যেন তারা অদৃশ্য হয়ে গেছে। আমার চেষ্টা সেই নীরবতা ভেঙ্গে কথ্য ইতিহাস, সরেজমিন পরিদর্শন এবং আর্কাইভ ঘেঁটে টিকে থাকা নারীদের অভিজ্ঞতাকে পুনর্গঠন করা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ, অভিজ্ঞতা অর্জন এবং চাক্ষুষ করেছিল বাঙালি, পাকিস্তানী ও ভারতীয়_ এই তিন তরফ। আমার লক্ষ্য ছিল সেসব মুহুর্তের কাছে যাওয়া, যখন নারীর ওপর বর্বর সহিংসতা নেমে এসেছিল, তাদের করা হয়েছিল যুদ্ধের বলি। আমার নিশানা ছিল পুরুষদের কার্যকলাপ ও অভিজ্ঞতারও কাছাকাছি যাহৃওয়া এবং এ থেকে যে বিভীষিকার জন্ম হয়েছিল তার মুখোমুখি হওয়া। এভাবে নিতান্তই ব্যক্তিগত এবং যৌথ স্মৃতির ভাণ্ডার খুলে ধরে, একের সঙ্গে অন্যের জড়াজড়ি করা বৈরি স্মৃতির মাধ্যমে আমি উপমহাদেশের নিপীড়িত মানুষের অভিজ্ঞতার কাছে পৌঁছতে চেয়েছি। আর এভাবে তুলে আনতে চেয়েছি, সেই নিপীড়নের আগুনে পুড়েও যারা বেঁচে আছে, স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের ইতিহাস। এই গবেষণা উপনিবেশ পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ায় রাষ্ট্রীয় ও সাম্প্র্রদায়িক সহিংসতাকে নতুন আলোয় দেখা এবং তার ভিত্তিতে ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ এর দেশভাগ সম্পর্কে আরো পরিষ্কার বোঝাপড়ায় আসবার একটা চেষ্টা মাত্র।''
ইংরেজি:
HISTORY ON THE LINE
Beyond the Archive of Silence:
Narratives of Violence of the 1971
Liberation War of Bangladesh
by Yasmin Saikia
In 1971 two wars broke out in East Pakistan. One was a civil war fought between West and East Pakistan, and the other an international war fought between West Pakistan and India. In the wars ethnicity colluded with national interests and state politics, and the armies of West Pakistan and India became involved in violence, mainly targeted against the civilian population of East Pakistan, particularly women. Both the Pakistan and Indian armies were occupying forces and were assisted in their activities by local supporters. The Bihari community (Muslim Urdu speakers and recent migrants to East Pakistan from India after the partition in 1947) supported the West Pakistan army in the hope of saving a united Pakistan. A sizeable number of Bengalis, members of the Muslim League, the political organization that had conceived and created Pakistan, also supported the West Pakistan army. The Indian army, by and large, was supported by the nationalist Bengalis of East Pakistan, both Muslims and Hindus. With the help of the Indian government, the Bengalis created a local militia called the Mukti Bahini (Liberation Army). The combined forces of the Indian
army and Mukti Bahini defeated the West Pakistan army and forced them to surrender. At the end of the civil war the Pakistan government lost legitimacy in its eastern province; the international war resulted in the partitioning of Pakistan and creation of an independent nation-state of Bangladesh. The two wars of 1971 are generally referred to by a single name: the Liberation War of Bangladesh.
The current historiography on the Liberation War is focused solely on
the investigation and discussion of conflicts between the armies and militias of West Pakistan, East Pakistan, and India, and the external contexts of battles between the different ethnic groups of Bengalis, Biharis, and Pakistanis.1 The inner conflicts within the communities that led to rampant violence against women in the wars are overlooked and women’s voices are actively silenced. As a result women’s experiences and memories of the war are rendered invisible in the official history of 1971. To overcome the silences concerning gendered violence and to document a people’s history of 1971, I have undertaken to reconstruct through oral history, fieldwork,
and archival research the experiences of survivors – men and women in
Bangladesh, Pakistan, and India who participated in, experienced, and
witnessed the Liberation War. My aim is to probe into the moments of
violence, the victimization of women, the actions and experiences of men, and the trauma produced as a consequence. Through this exploration of personal and collective memories, I hope to demonstrate the linked, though conflicting, experiences of suffering of people in the subcontinent and to construct a story of survivors of the Liberation War. This research is also an attempt to rethink communal and state violence in postcolonial South Asia and arrive at a clearer understanding of the legacies of the partitions of 1947 and 1971.
আপনি এ বিষয়ে একটা পোস্ট দেন, সেখানে আলোচনা করবো। আপাতত আমার কাজ হচ্ছে আমার বর্তমান সিরিজ শেষ করা। মূল আলোচনায় প্রবেশ না করা পাঠক হিসেবে আপনার পছন্দ হতে পারে আমার কাজ হচ্ছে এটাকে এগিয়ে নেওয়া।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
লেখাটি সম্পর্কে কিছু টুকরো মন্তব্য করছি, পুরো লেখা না পড়ে সার্বিক মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
১। বীরাঙ্গনাদের ব্যাপারে আমাদের লেখক, চিত্রকর, চলচিত্র নির্মাতাদেরও দ্বিধা অথবা রিজার্ভেশন আছে। তাই “টু ওমেন”-এর মত গল্প বা ছবিও আমরা পাইনি। একেবারে যে কিছু নেই তা নয়, তবে ঘটে যাওয়া ঘটনার তুলনায় সেসব কিছুই না। সরকার বা বেসরকারী পর্যায়ে স্মারক নির্মানের উদ্যোগ যারা নেন তাদের মগজেই এই নারী মুক্তিযোদ্ধারা নেই। মানসিকতা মানবিক না হয়ে পুরুষালী হলে এমনই হয়। আমরা এতটাই পুরুষালী যে আমরা তাদের সাথে মানবিক আচরণটাও করিনি। তাদেরকে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার দিকে, উন্মাদ হবার দিকে, নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার দিকে, আত্মপরিচয় মুছে ফেলার দিকে, অমানবিক জীবন যাপনের দিকে ঠেলে দিয়েছি। আমাদের অকৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
২। ১৯৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বেসরকারী ইউনেস্কোর কাছে দেন-দরবার শুরু হয়েছে। সরকারী পর্যায়ে ভাবনা চলছে। তবে এই সব স্বীকৃতি হয়তো খুব জরুরী নয়। আমাদের উপর করা অন্যায়ের বিচার আমাদেরকেই করতে হবে। তা কারো পছন্দ হোক বা না হোক। কারো পছন্দ না হলে আমার প্রশ্ন, যখন আমাদের উপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল তখন সেটাতে কি আপনার সায় ছিল? আপনার পছন্দ ছিল? আর তখন তাতে আপনার সায় না থাকলে, পছন্দ না হয়ে থাকলে তখন তা কি জোরে-শোরে বলেছিলেন?
৩। জেনারেল জিয়া বা জেনারেল এরশাদ সংবিধান আর আইন-কানুনে যেই যথেচ্ছাচারগুলো চালিয়েছিল সেগুলোর সমালোচনা করা হয়, কিন্তু সেগুলো পরিবর্তনের দাবী ওঠে না। আওয়ামী লীগ সময়ে-অসময়ে ঐসমস্ত পরিবর্তনগুলো নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়, কিন্তু সংসদে দুইশতের বেশি সীট নিয়েও দরকারী সংশোধনী প্রস্তাবগুলো আনে না। হিসেবটা ভোটের, তাই অমন হয় না। আর হিসেবটা ভোটের হলে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, তাহলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মন-মগজে কি বড় ধরণের পরিবর্তন হয়ে গেছে? নিরবে মেনে নেয়া, মিনমিন করে মাঝে-মধ্যে “এইটা ঠিক হয় নাই” বলা, ভোটের হিসেব করা আমাদের কোন ধরণের চরিত্রকে নির্দেশ করে?
৪। স্বাধীনতা বিরোধী আর যুদ্ধাপরাধীদের পূনর্বাসনে, মুক্তিযুদ্ধর এটা-সেটা বাদ দিয়ে-ভুলিয়ে দিয়ে খোজাকরণে আমরা একটা দল আরেকটা দলের থেকে একটু বেশি এগিয়ে থাকি মাত্র। বাংলাদেশে বাসকারী উর্দুভাষী মানুষদের সাথে আমাদের আচরণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় একেবারেই। ২৫শে মার্চের আগে আর ১৬ই ডিসেম্বরের পরে তাদের সাথে আমাদের আচরণ বর্ণনা করার সাহসটুকু পর্যন্ত আমাদের নেই। তাই এব্যাপারে আন্তর্জাতিক বাজারে পাকিস্তানের পক্ষে অতিরঞ্জিত বর্ণনা সরবরাহ করা সম্ভব হয়। আচ্ছা, আমাদের দেশে বাসকারী ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ের কোন মানুষটা রাষ্ট্রের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অথবা মানবিক আচরণ পেয়েছে?
৫। পঞ্চান্ন বৎসরেরও আগে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হয়ে গেলেও আমাদের মানসিকতা থেকে সামন্ততান্ত্রিক চেতনা দূর হয়নি। তাই আজো আমরা নিজেদের পরিচয় দেবার সময় আমার পূর্ব-পুরুষ যে অমুক এলাকার জমিদার ছিলেন, পরে নানা কারণে অবস্থা পড়ে যায় - এই ধরণের কথা বলি। আমাদের কারো পূর্ব-পুরুষ বাঘের পিঠে চড়ে ইরাক থেকে আসে আর কারো পূর্ব-পুরুষ মাছের পিঠে চড়ে ইরান থেকে আসে। আমরা আমাদের নীল রক্তের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে চাই। ছেলে-মেয়ে বিয়ে দেবার সময় তাই আমাদের মাথায় “বংশ কেমন” ধরণের প্রশ্ন “পাত্রী কেমন” বা “পাত্র কেমন” ধরণের প্রশ্নের আগে আসে। আমাদের এই মানসিকতাই “যুদ্ধ-শিশু”দের আমাদের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। মানবিকতার প্রশ্ন সেখানে গৌন হয়ে গিয়েছিল।
৬। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে যারা জয়ী হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা কী ছিল? সবাই কি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের পক্ষে ছিলেন? মুক্তিযুদ্ধের পর সেসব যাচাই না করেই তাদের ক্ষমতার ভাগ দেয়াটা কতটা যৌক্তিক ছিল? কয়েক হাজার রাজাকার (তাদের দলসহ) ছাড়া গোটা দেশ আর তার রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করল আর দেশ মুক্ত হবার পর একটা রাজনৈতিক দল শাসন ক্ষমতা পেল এটাই বা কতটুকু যৌক্তিক?
৭। কারো কারো কাছ থেকে শুনেছি, মুক্তিযুদ্ধের সময় সন্মূখযুদ্ধে, বিপদজনক অপারেশনে চাষা-ভুষোদেরই নাকি আগে ঠেলে দেয়া হত। যুদ্ধে জয়ী হবার পর চাষা-ভুষোদের সেই অবদান স্বীকার করলেতো তাদের ক্ষমতার ভাগ দিতে হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধকে একটা “শহুরে মধ্যবিত্তের যুদ্ধ” ধরণের চেহারা দেয়া হয়েছে। এতে নিরাপদে থাকা যায়, বর্তমান বা ভবিষ্যতের হালুয়া-রুটিতে কাউকে ভাগ দিতে হয় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ তীক্ষ্ণতার সঙ্গে সার সংকলন করেছেন। অভিনন্দন। এর থেকে ভাল করে আমি বলতে পারতাম না।
খেয়াল করেছেন, আজ পর্যন্ত আমাদের একটা যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা গবেষণার স্বাধীন অবিতর্কিত প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত হলো না। অথচ বিচার দাবি বা একাত্তরের আহাজারি করবার লোকের কোনো অভাব নাই।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ফারুক ভাই, ইয়াস্মিন সাইকিয়ার গবেষণাটা আমাকে ই-মেইল করে পাঠাতে পারবেন?
আগাম ধন্যবাদ।
মুঈদ
পারি। কাল পাঠাই?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ইয়াসমীন সাইকীয়ার লেখাটা আমার কাছে বরাবরই ভেজাল মনে হয়েছে। এই সব বিষয়ে তেমন জ্ঞান নাই বলে ভাবতাম আমারই হয়তো বোঝার ভুল। জার্নল এ ছাপা হয়েছে, সুতরাং সাইকিয়া নিশ্চয়ই মহাজ্ঞানী ব্যক্তি হবেন। তিনি কি আর ভুল বলতে পারেন! আর তার ওপর ফারুক ওয়াসিফ এর মতো বিখ্যাত ব্লগার একে এনডোর্স করেছেন, না বুঝে কি আর করবেন সেটা!
অবশেষে এই বিষয়ে ব্লগের সাম্প্রতিক এক আলোচনা পড়ে স্পষ্ট হল সাইকিয়ার একাডেমিক মিথ্যাচারের দিকগুলো। আমি মনে করি না সাইকিয়া সেগুলা না বুঝে করেছে।
নতুন মন্তব্য করুন