বিডিআর জওয়ান : হোয়্যার হ্যাভ অল দ্য সোলজারস গান?

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: শনি, ১১/০৪/২০০৯ - ২:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তারা অনেক ছিল, এখন তারা নেই। তারা সৈন্য ছিল এখন তারা কেবলই 'খুনী'? এর আগে সেই পলাতক বিডিআর সৈনিকদের সংখ্যা ছিল ১৮০০। রাউন্ড ফিগার! তার পর জানানো হয় পলাতকেরা সাড়ে আটশ'র বেশি নয়। ৯ এপ্রিলের প্রথম আলো বিডিআর সদর দপ্তরের বরাত দিয়ে বলছে, পলাতক বিডিআর জওয়ানের সংখ্যা এখন মাত্র ২০২!!!

মনে পড়ছে পিট সিগারের সেই গানটি:

হোয়ার হ্যাভ অল দা সোলজারস গান?
গান টু গ্রেভইয়ার্ড এভরি ওয়ান
ও হোয়েন উইল দে এভার লার্ন?
ও হোয়েন উইল দে এভার লার্ন।

দুই.
জেলে আমার ৩২ নং খাতা নামের যে ওয়ার্ডটিতে ছিলাম, সেখানে প্রায় রাতেই থালা বাজিয়ে গান গাওয়ার মখশো হতো। এমনিতে তা নিষিদ্ধ বিষয়_ থালা বাজানো তো আরো গুরুতর। কিন্তু গান গাইতো পাহারা রমজান। পুরান কয়েদি বলে প্রহরীদের সঙ্গে তার খাতির ছিল। (তার কথা আমার ৩২ নং খাতা গল্পে আছে) তার বরাতেই মাঝেমাঝে আমোদ-আহ্লাদ হতো। তবে আওয়াজ একটু বাড়লেই গার্ড এসে থামাতো।

থালা বাজিয়ে গান গাওয়া আগে নিষিদ্ধ ছিল না। আগে মানে জিয়া হত্যাকাণ্ডের আগে। পুরান কয়েদিরা বলে, জিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে কয়েকশ সিপাইকে আটক রাখা হয়েছিল ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ৩২ নং খাতায়। আমাদের মতো তারাও প্রায় রাতেই থালা বাজিয়ে গান গাইতো। মরবার আগে মানুষ কেন যে হাশিখুশি থাকার কসরত করে, কে জানে?

ওয়ার্ডটার সামনে ও পেছনে হাঁটুর ওপর থেকে প্রায় ছাদ পর্যন্ত লম্বা লম্বা লোহার গরাদ। প্রতি রাতে একটু একটু করে সেই গরাদ কাটার চেষ্টা হয়। পাচার করে আনা ব্লেডের ঘষটানোর শব্দ যাতে প্রহরীদের কানে না যায়, তার জন্যই থালা বাজিয়ে গান গাইতো অন্য সিপাইরা। কয়েকদিনের মধ্যেই জেল ভাঙ্গার এই চেষ্টা ধরা পড়ে। আরো কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের সবাইকে পাঠানো হয় ফায়ারিং স্কোয়াডে।

রাতের বেলায় থালা বাজানোর শব্দে আর রমজান পাহারার ভাঙ্গা ভাঙ্গা মধুর গলায় গাওয়া,

'যে আমারে আদর করে রে,
নাম রাইখাছে আদরিণী
আমি কি তার আদর জানি...'

কিংবা মৃত্যু নিয়ে রোমান্টিকতা করা তার সেই গান,

''সইলো সই, ও প্রাণের সই শুনছোনি-ই-ই
পালকি আইছে নাইওর যাইবানি''

জিয়া হত্যার সঙ্গে মিছেমিছে জড়িত করে গায়েব করে ফেলা সিপাইদের নাইওরে পাঠানো হয়েছিল। কেউ আর তাদের নামনিশানা জানেনি। ষোলশ বিডিআর সেপাই কোথায় ছিল গায়েব হওয়ার আগে? তাদের কথা মনে হলে আমার মনে হয় সারসার বসে থাকা বন্দি একদল মানুষ। তারা থালা বাজিয়ে গাইছে,

''সইলো সই, ও প্রাণের সই শুনছোনি-ই-ই
পালকি আইছে নাইওর যাইবানি''

তাদের জন্যও কি পালকি এসেছিল?

তারাও কি সব রেবেল হান্টের পালকি চড়ে চিরকালের নাইওর চলে গেছে?


মন্তব্য

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

নিখোঁজ সেনা অফিসারের সংখ্যা যে কায়দায় হঠাৎ ৭২ থেকে হঠাৎ ৭ এ নেমে এসেছিল, সেই কায়দায় হয়তো.........আমরা কত কিছু যে জানি না, হায়!

বন্য রানা এর ছবি

সৈন্য সংখ্যা ১৮০০ থেকে ২০২ তে নেমে আসার মধে্য এত জটিলতার কিছু মনে হয় নেই।

এর আগে সেই পলাতক বিডিআর সৈনিকদের সংখ্যা ছিল ১৮০০। রাউন্ড ফিগার!

১৮০০ যখন বলা হয় তখন 'রাউন্ড ফিগার' বলা ছাড়া মনে হয় উপায় ছিল না কারন তখনো জানা নেই ঠিক কতজন সৈন্য ভেতরে ছিল। আবার কোনো ফিগার না বলেও হয়তো উপায় ছিল না মিডিয়ার পীড়াপীড়ির কারনে। কাজেই এই নিড়িহ সংখ্যাটা কোনো ক্ষতি করেছ বলে মনে হয়না।

তার পর জানানো হয় পলাতকেরা সাড়ে আটশ'র বেশি নয়।

এই সংখ্যা টা যখন বলা হয় তখনো কি সঠিক সংখ্যা জানা ছিল কারো?

পলাতক বিডিআর জওয়ানের সংখ্যা এখন মাত্র ২০২!!!

রেবেল হান্টের পর অনেক জোয়ান ধরা পরেছে, অনেকে আত্মসমর্পন করেছ, অনেকে আবার অন্য সেক্টরে কাজে যোগ দিয়েছিল যাদের সংখ্যা ধিরে ধিরে জানা য।চ্ছে । রাউন্ড ফিগার থেকে বেরিয়ে সঠিক সংখ্যা জানতে এতটা সময় না লাগিয়ে হয়তো কোনো উপায় ছিল না।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পুরো বিষয়টাতে প্রথম দুচারদিন যতটা আলো দেয়া হয়েছিল এখন তার থেকে শতগুণ অন্ধাকারে ঘটে যাচ্ছে সব

এই ১৫ কোটি মানুষের দেশ থেকে কয়েক হাজার মানুষকে নিখোঁজ বানিয়ে দিলে জীবনেও জানা যাবে না কোথায় তারা ছিল আর কী করে কোথায় গেছে

০২

জিয়ার সময়ে নিখোঁজ হয়েছিল যারা
তাদের কোনো তালিকা জানে না এখনও কেউ

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চলুক

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

মাহফুজ [অতিথি] এর ছবি

সন্দেহটি উদ্বেগ সৃষ্টি করার মত, তবে অমূলক। আমি মোটামুটি নিশ্চিত তারা চালে এরকম বড় ভুল করবে না।

মাহফুজ [অতিথি] এর ছবি

গায়েব করে দিলে তো সব শেষ, সামনের চার বছর আট মাস তো হাসুনির দাদাকে আর পাওয়া যাবে না। খেলাটি ধীরে ধীরে রেডিয়াম-রাজনীতির পর্যায়ে চলে যাবে যাতে করে আধাসামরিক বাহিনীটি ন্যুব্জ হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যায়। খেলাও চলল আর সাপও দর্শকদের সামনে মারা গেল না।

ধীরে চল নীতির হিসেব এটিই। তাড়াহুড়ো করলে শকুন কার মাথার ওপর কখন উড়াল দেবে নিশ্চিত নয় বলেই মনে হয়।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

@ বন্য রানা > আপনার কথা শুনে আশ্বস্ত হতে মন চাইছে। কিন্তু কাজীর গরু কেতাবে থাকলেও গোয়াল থেকে কীভাবে খোয়া গেল তা না জানলে এই প্রবোধে কী লাভ?

কীভাবে আপনি মোটামুটি নিশ্চিত হলেন, দয়া করে জানাবেন?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

গন্ ফর গুড্ ?!!!!!!!!!!!!!!!!

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

স্নিগ্ধা এর ছবি

এরকমই হবার বোধহয় কথা ছিলো, তারপরও খুব মন খারাপ হয়ে গেলো লেখাটা পড়ে। কী যে অর্থহীন এই বেঁচে থাকা .........

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এ দেশে এই কথা বলার, লেখার, আওয়াজ করে জানানোর মানুষ আছে, কিন্তু সেটা বলবার, ছাপবার কোনো জায়গা নাই। এই দেশ আর দেশ নাই। এইটা এখন ভাগাড়। শকুনেরা দুদিকেই মানুষ খেয়েছে, আরো খাবে, অন্য আকাশ থেকে আসবার জন্য ডানা ঝাপটাচ্ছে তারা আবার। তাদের ফাঁদে নিম্নবর্গীয় বিদ্রোহটি হয়ে গেল ষড়যন্ত্র, আর ষড়যন্ত্রকারীরা হয়ে গেল ত্রাতা।

শুনি নাকি তারা আবার বিডিআর বানিয়েও দেবে। জঙ্গি দমনে আসবে মেসিয়াহ হয়ে। ওদিকে আমাদের দীপুমণি গোপনে ঘুরে আসেন হেগ শহর। সেখানে আফগানিস্তানের ভাগ্যরচনায় বসেছিল মহাশকুনেরা। তেনার কী কাজ সেখানে? আদার ব্যাপারির জাহাজের কী দরকার? নাকি জাহাজ আসবে আমাদের মাটিতে-আকাশে-সমুদ্রে? কার যুদ্ধ আমাদের কাঁধে চাপানোর তোড়জোর চলছে? কার লড়াইয়ে বৃথাই মরে যাচ্ছে আমাদের সিপাই-সেনারা?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

ভয়ই ধরে যাচ্ছে দেখে শুনে পড়ে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এইসব দেখেশুনে শুধুই মন খারাপ হয়। মন খারাপ

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পুতুল এর ছবি

তাদের ফাঁদে নিম্নবর্গীয় বিদ্রোহটি হয়ে গেল ষড়যন্ত্র

তাইতো হবার কথা। কৃষ্ণ করলে হয় লীলা, আমরা করলে গুন্ডা বদমাইশ!

কোথায় যেন পড়েছিলাম; রিমান্ডে এ পর্য়ন্ত দশ জন নিহত! ভালই হল, বিচার বিভাগের কাজ একটু কমল। গনতন্ত্রের স্বাধ খুব ভাল করে পাচ্ছি।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জাকির জাহামজেদ [অতিথি] এর ছবি

পিলখানার বাকি গল্পটা হয়তো আমাদের অজানাই থেকে যাবে ?

এখন পিলখানায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারকে বাড়ি দেয়া নিয়ে শুরু হয়েছে আরেক রাজনীতি। আমরা শুধু দেখেই যাই। ওটাই তো এখন আমাদের কাজ-
কেউ থালা বাজালেও আমরা তা শুনতে পারব না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।