কে ভাবতে পেরেছিল, এই ২০০৯ সালে দুনিয়ার তাবড় তাবড় সরকারগুলো একযোগে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে? এই লেখা যখন আপনি পড়ছেন, তখন ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ দুই ডজনেরও বেশি দেশের যুদ্ধজাহাজ নিয়ে সোমালিয়ার জলসীমায় ঢুকছে। জলদস্যু বলতেই কাঁধে তোতাপাখি নিয়ে থাকা শয়তান মানুষের ধারণা আমাদের মনে গেঁথে দিয়েছে হলিউডি ছবিগুলো। আন্তর্জাতিক নৌবহর যখন সোমালিয় জাহাজগুলোকে তাড়া করে ধ্বংস করবে এবং প্রয়োজনে ভূমিতেও সেই আক্রমণ ছড়িয়ে দেবে, তখনও আমরা ভাবব কোথাও একদল পাষণ্ড ডাকাতদের শায়েস্তা করা হচ্ছে। সামুদ্রিক এই অভিযান নব্বই দশক থেকে একের পর এক মার্কিন আক্রমণ, সিআইয়ের গোপন অভিযান, মার্কিন মদদে ইথিওপিয়ার আগ্রাসনে বিধ্বস্ত দেশটি আর তার দুর্ভিপীড়িত কোটি খানেক মানুষকে নরকের সদর দরজা দেখিয়ে দেবে। অথচ যে মানুষগুলোকে পশ্চিমা সরকারগুলো ‘আমাদের সময়ের কুৎসিত ব্যাধি’ বলে দেখাচ্ছে, তাদেরও বলবার আছে অসাধারণ মানবিক এক গল্প, তারাও তুলতে পারে সুবিচারের দাবি।
আমরা যেমন ভাবি জলদস্যুরা কখনোই তেমনটি ছিল না। জলদস্যুতার স্বর্ণযুগ ছিল ১৬৫০ থেকে ১৭৩০ সাল। সেসময় থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মুখপাত্ররা কুৎসা রটায় যে তারা হলো অমানুষ, বর্বর ডাকাত। সেই ধারণা আজো অনেকে বিশ্বাস করে। কিন্তু বারবারই আমজনতা তাদের ফাঁসিকাঠ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কেন? তারা কি বুঝেছিল যা আমরা বুঝি না? ভিলেইনস অব অল ন্যাশনস বইয়ের লেখক ইতিহাসবিদ মারকাস রেডাইকার এ বিষয়ে আমাদের কিছু স্যাপ্রমাণ দিয়েছেন। ধরুন আপনি সেসময়ের কোনো নাবিক বা সওদাগর, লন্ডনের ইস্ট এন্ড বন্দর থেকে ুধার্ত ও তরুণ আপনাকে তুলে নেয়া হলো জাহাজে। যাত্রা শুরু করে একসময় দেখতে পেলেন এক কাঠের নরকে করে আপনি ভাসছেন। উদয়াস্ত খাটতে খাটতে আপনার পেশি কুঁচকে গেছে, আধাপেটা খাওয়া, এক মুহূর্তের জন্য কাজে উদাস হয়ে গেছেন। সর্বশক্তিমান সারেং আপনাকে চাবুক পেটা করবে। বারবারই যদি আপনার ফাঁকি ধরা পড়ে তো আপনাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে সাগরে। অথবা মাস শেষে দেখলেন আপনার মজুরি মেরে দেওয়া হয়েছে।
এই বর্বর দুনিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহী ঐ জলদস্যুরা। তারা তাদের বর্বর ক্যাপ্টেনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সমুদ্রের কারবারের নতুন নিয়ম তৈরি করেছিল। জাহাজ পাওয়া মাত্র তারা তাদের ক্যাপ্টেন নির্বাচিত করতো এবং সকল সিদ্ধান্তই নিতো এজমালি ভাবে। লুটের মাল তারা এমনভাবে ভাগ করতো যা থেকে রেডাইকার বলছেন, ‘সেটা ছিল আঠারো শতকের সবচেয়ে সমতাবাদী ভাগযোগ’। এমনকি তারা পালিয়ে আসা আফ্রিকি দাসদের তুলে নিতো, দিত তাদের সমান মর্যাদা। জলদস্যুরা পরিষ্কারভাবে কিন্তু ঘোষণা ছাড়াই দেখিয়ে দিয়েছে যে, সওদাগরি কোম্পানি বা রয়্যাল নেভির বর্বর কায়দায় জাহাজ চালানো চলবে না। সেজন্যই নিষ্ফলা চোর হওয়া সত্ত্বেও তারা ছিল জনপ্রিয়।
সেই হারানো যুগের এক তরুণ ব্রিটিশ জলদস্যুর কথা আজো শতাব্দী পেরিয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর ঠিক আগে সে বলে, ‘আমি যা করেছি তা কেবলই ধ্বংস থেকে বাঁচার জন্য। বাঁচার জন্যই আমি জলদস্যু হতে বাধ্য হয়েছি।’ ১৯৯১ সালে সোমালিয়ার-আফ্রিকার শিং-সরকার ভেঙ্গে পড়ে। এর কোটিখানেক মানুষ তারপর থেকে আজ অবধি দুর্ভিরে সঙ্গে লড়ছে। তখন থেকে পাশ্চাত্যের জঘন্য রাষ্ট্রশক্তিগুলো মওকা বুঝে দেশটির খাদ্য সরবরাহ কেড়ে নেয় এবং এর উপকূলে তেজষ্ক্রিয় বর্জ্র্যপদার্থ ফেলতে শুরু করে।
সরকার গায়েব হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত থেকেই সোমালিয়ার উপকূলে হানা দিতে থাকে রহস্যময় ইউরোপীয় জাহাজ। তারা বিরাট বিরাট ব্যারেল ফেলতে থাকে সেখানে। উপকূলীয় অধিবাসীরা অসুস্থ হতে শুরু করে। প্রথম প্রথম তাদের গায়ে অদ্ভুত দাগ দেখা দিত, তারপর শুরু হলো বমি এবং বিকলাঙ্গ শিশু প্রসব। ২০০৫ সালের সুনামির পর, তাদের উপকূল ভরে যায় হাজার হাজার পরিত্যক্ত ও ফুটো ব্যারেল। মানুষ তেজষ্ক্রিয়তায় ভুগতে থাকে। ৩০০ এরও বেশি মানুষ মারা যায়। সোমালিয়ায় জাতিসংঘ প্রতিনিধি আহমেদু আবদাল্লাহ বলেন, ‘কেউ এখানে একটানা পারমানবিক উপাদান ফেলছে। আরও ফেলছে সীসা, ক্যামিয়াম ও মার্কারি।’ খুঁজলে দেখবেন এর বেশিরভাগই আসছে ইউরোপীয় হাসপাতাল ও কারখানাগুলো থেকে। ইতালিয় মাফিয়াদের মাধ্যমে সস্তায় তারা এগুলো এখানে খালাস করে। ইওরোপীয় সরারগুলো এ নিয়ে কিছু করছে? না, না তারা এগুলো পরিষ্কার করছে, না দিচ্ছে তিপূরণ, না ঠেকাচ্ছে এগুলো ফেলা।
একইসময়ে অন্য কিছু ইউরোপীয় জাহাজগুলো সোমালিয়ার সমুদ্র লুট করে চলেছে। সোমালিয়ার প্রধান সম্পদ তাদের সামুদ্রিক মাছের ভাণ্ডার। ইওরোপ আগে অতিশোষণের মাধ্যমে নিজেদের মাছের ভাণ্ডার নিঃশেষ করেছে, এখন হামলে পড়েছে অন্যের পানিতে। সোমালিয়ার অরতি পানি থেকে তারা ফিবছর ৩০০ মিলিয়ন ডলারের টুনা, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ ধরে নিয়ে আসে। স্থানীয় জেলেরা দেখতে পেল হঠাৎ, তাদের সর্বস্ব খোয়া গেছে এবং তাদের ুধার কোনো নিবারণ নাই। রয়টারের কাছে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক যুবক বলে, ‘যদি কিছুই করা না হয়, অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের সমুদ্র মাছহীন হয়ে পড়বে।’
এই পটভূমিতেই ওই মানুষদের আবির্ভাব, যাদের আমরা বলছি ‘জলদস্যু’। সকলেই মানে যে, এরা আসলে সাধাসিধা জেলে। প্রথমে তারা স্পিডবোট নিয়ে বর্জ্র্য ফেলা ও মাছ ধরার জাহাজ ও ট্রলারগুলিকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তাদের ওপর ‘ট্যাক্স’ বসানোরও চেষ্টা চলে। এক পরাবাস্তব টেলিফোন সংলাপে জলদস্যুদের এক নেতা সুগুল আলি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ‘বেআইনী মাছ ধরা এবং উপকূল দূষণ থামানো...আমরা জলদস্যু নই...ওরাই জলদস্যু যারা আমাদের মাছ কেড়ে নেয়, যারা আমাদের সমুদ্র বিষ দিয়ে ভরে ফেলে এবং আমাদের পানিতে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে।’
না, এ জন্যই নাবিকদের জিম্মি করার পপাতি নই আমরা। এবং এও সত্য যে, ওই জলদস্যুদের মধ্যে বেশ কিছু গুণ্ডা-বদমাশও রয়েছে। তারা জাতিসংঘের খাদ্য সরবরাহও লুট করে। এবং এও সত্য যে, স্থানীয়দের কাছে এই জলদস্যুরা বিপুলভাবে জনপ্রিয়। স্বাধীন সোমালিয় সংবাদ-সাইট WARDHERNEWS এ বিষয়ে সবচেয়ে ভাল একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে, ‘৭০ ভাগ সোমালিয় মনে করে জলদস্যুতাই এখন তাদের সমুদ্র প্রতিরার জাতীয় কৌশল।’ আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময়, জর্জ ওয়াশিংটনসহ মার্কিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা জলদস্যুদের দিয়ে মার্কিন সমুদ্রসীমা রার কাজ করিয়ে নিতেন। এজন্য তাদের টাকাও দেওয়া হতো, কারণ সেসময় আমেরিকার কোনো নৌবাহিনী ছিল না। বেশিরভাগ মার্কিনির কাছেও এটাকে ঠিকই মনে হয়েছিল। সোমালিয়রা কি তাদের থেকে খুবই আলাদা?
আমরা কি চাইছি যে, ক্ষুধার্ত ও তেজষ্ক্রিয়ায় রুগ্ন সোমালিয়রা সমুদ্র সৈকতে ধুকে ধুকে মরবে কিন্তু নীরবে চেয়ে দেখবে তাদের থেকে চুরি করা মাছ পরিবেশিত হচ্ছে লন্ডন, প্যারিস আর রোমের রাজকীয় রেঁস্তোরায়! যখন তাদের বিরুদ্ধে এই অপরাধগুলো আমরা হতে দিয়েছি। কিন্তু যেই তারা বিশ্বের বিশ ভাগ তেল পরিবহনের সমুদ্রপথে বাধা দেওয়া শুরু করলো, সেই আমরা ‘শয়তানদের’ নিয়ে পড়লাম। যদি সত্যিই জলদস্যুতা বন্ধ করতে হয়, তাহলে এর গোড়ায় হাত দিতে হবে। থামাতে হবে আমাদের অপরাধগুলো।
২০০৯ সালের এই জলদস্যুদের গল্পের সারাংশটি সবচেয়ে ভালভাবে প্রকাশ করা যায় খ্রীস্টপূর্ব চার শতাব্দী কালের এক জলদস্যুর কথায়। তাকে বন্দি করে মহান আলেকজান্ডারের সামনে আনা হয়। সম্রাট আলেকজান্ডার জানতে চান, ‘সমুদ্রের দখল ধরে রাখা বিষয়ে সে আসলে কী বোঝাতে চায়?’ জলদস্যুটি মুচকি হেসে জবাব দিল, ‘গোটা পৃথিবী দখল করা দিয়ে আপনি যা বোঝাতে চান; কিন্তু ওই কাজ আমি করছি ছোট্ট এক জাহাজ নিয়ে আর আপনি করছেন বিরাট নৌবহর দিয়ে। সেজন্যই আমি ডাকাত আর জাঁহাপনা আপনি সম্রাট’।
আবারো, আমাদের মহান রাজকীয় নৌবহর মহান এক অভিযানে রওনা হলো আজ- কিন্তু বলতে পারেন, কে আসলে ডাকাত?
জোহান হারি, ব্রিটেনের দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর লেখক।
মন্তব্য
লেখাটি যার অবলম্বনে তার লিংক এখানে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
In one word. Awesome.
আপনাকে অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ফারুক ওয়াসিফ, বিষয়টি তুলে ধরার জন্যে। আমরা এসব খবর পত্রিকায় পড়ি আর কষ্ট পাই বুকের ভেতরে। অক্ষমতার জ্বালায় জ্বলি সর্বক্ষণ।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আজ দুপুরে এটা পড়ে হঠাৎ খারাপ লাগায় ঢেকে গেলাম। তড়িঘড়ি করে অনুবাদ করে ছেড়ে দিয়ে সেই মেঘ তাড়ালাম।
ভেবেছেন, এরকম করে আরো অনেক বিষয়ে আমাদের মাথায় বিষ পুরে দেওয়া হয় যুদ্ধকৌশলের অংশ হিসেবে। একটা লিস্টি করা যায় সেসবের।
মার্কস যেমন বলেছিলেন, ক্রিটিক অব এভরিথিং হুইচ এক্সিস্টস, তেমনি করে ডাউট অন এভরিথিং, হুইচ এভার প্রিচড অর টেলিভাইজড; দরকার না?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হারি নিশ্চিতভাবেই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এই মুহুর্তে। মাত্র গত সপ্তাহে তিনি দুবাই নিয়ে একটি অবিশ্বাস্য প্রতিবেদন লিখেন - The dark side of Dubai। বিশাল কলেবরের এই লেখা পড়ার পরে দুবাই নামের নরক সম্পর্কে যে কারো ধারণা পাল্টে যেতে বাধ্য।
ফারুক ভাইকে ধন্যবাদ নতুন এই প্রবন্ধটি অনুবাদ করার জন্য।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
হ্যাঁ, বেশ কাজের লেখাটা। এই নয়া শাদ্দাদের বেহেশতি জগত নিয়ে অনেকদিন থেকে লিখবার ইচ্ছা আমার। যেমন, আমেরিকা: হোয়্যার ফ্রিডম ইজ অনলি স্ট্যাচু। হ্যারি দারুণ দেখিয়েছেন যে, দুবাই হলো অ্যাডাল্ট ডিজনিল্যান্ড আর মিকি মাউজ হলো সেখানকার আমীর।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আমি ভাবছি আমাদের পরিকল্পনাধীন রূপপুর পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে। ইয়োরোপ তো গায়ের জোরে অন্যের উঠানে নিজের গু ফেলে পার পেয়ে যাচ্ছে, আমরা ঐ বিষ কোথায় গুঁজবো?
আশঙ্কা জাগছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যেও ভবিষ্যতে এই বর্জিয়াগিরি শুরু হয় কি না। কে জানে, হয়তো ইতোমধ্যে চুপিচুপি এই কাজ শুরু হয়ে গেছে!
এরকম নানান উড়ো খবর শুনি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যারা পাওয়ার (পলিটিকাল অর মিলিটারি) করে, জ্ঞান ও সংবাদের উৎপাদনও তাদের হাতে। ফলে জানা জিনিষ নিয়েও কথা বলা যায় না, কিন্তু অজানা কিন্তু প্রচারিত খবরে ইমান আসে।
তবে ইতিমধ্যে জাহাজ ভাঙ্গা ব্যবসার নামে এরকম বর্জ্র্যভর্তি জাহাজ দেদারছে ঢুকছে চট্টগ্রামে। অন্য অন্য কেত্রেও কিছু কিছু নজির আছে।
রূপপুরের পারমানবিক বর্জ্র্য স্বপ্ন হলেও, বাস্তবে সমুদ্র নানাভাবে দখল হচ্ছে, সোনাদিয়ায় বিদেশি ঘাঁটি হওয়াও বা ইতিমধ্যে কিছু কিছু হওয়াও বিচিত্র নয়।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ফারুক ওয়াসিফ - আমিও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এটা এখানে অনুবাদ করে পোস্ট না করলে আমার পড়া হতো না! যাই বলেন না কেন, মাঝে মাঝে কিন্তু মানুষ হিসাবে আমার প্রচন্ড গর্ব হয় - কী সাংঘাতিক কুশলী একটা প্রজাতি আমরা!!!
সুবিনয় মুস্তফীকেও ধন্যবাদ, দুবাই এর লিঙ্কটার জন্য।
মানুষ বিশ্বাস না রাখাই এখন পূণ্য বলে মনে হয়। সব লেখা যায় না, তবুও আভাস দিয়ে রাখি। টেবিলে যে কাগজটা পড়ে আছে, সেটা একজনের পাঠানো চিঠি। খালি মনে হচ্ছে, কী ভয়ংকর, কী অসহায়ত্ব, আর কী সাহসী এই মানুষগুলো। এবং জানি এই এটা কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। কোথাও না। এরকম ভগ্নদূতের কাজ আর কত করা যায়?
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আমার কৌতূহল অসুস্থ রকমের বেশী মনে হলে নির্দ্বিধায় জানাবেন। ব্যক্তিগত মেসেজে পু্রোটা না, অল্প একটু আভাস কি দেয়া যায় চিঠিটা কার, অর্থাৎ সাহসী আর অসহায় মানুষগুলো কারা, এবং কোথায় কী করছে? কনফিডেন্সিয়ালিটির ব্যাপার আছে বুঝতে পারছি, সেটাতে কোন কম্প্রোমাইজ না করে জানানো গেলে, তাহলেই একমাত্র।
দুর্দান্ত লেখাটা এবং মূল ব্যাপারটা তুলে ধরার জন্য ফারুক ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফারুক ভাই অনেক ধন্যবাদ। খুবই তথ্যবহুল আর দরকারী এই অনুবাদটার জন্য। আপনি অনুবাদ না করলে আমিও সোমালিয়ার তথা কথিত জল দস্যুদের বিষয়ে অন্ধকারে থাকতাম।
সুবিনয় ভাইকেও সাধুবাদ লিংক্টার জন্য। আমি মাস দুয়েক আগে আবু ধাবী আর দুবাই গিয়েছিলাম ব্যবসায়ীক কাজে। এয়ার পোর্ট থেকে নামার পর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, হোটেল, শপিং মল বা এক্সিবিশন সেন্টার যেখানেই গেছি দেশী লোকজনের সাথে দেখা হয়েছে। বাস্তবিক অর্থেই সব মাটির মানুষ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অমানুষিক পরিশ্রম করে যান যন্ত্রের মত। বাংলাদেশিদের খুব সুনাম আবু ধাবীতে, এক পাকি ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল..." বাংলাদেশীদের চেয়ে ভালো মানুষ আমি দুনিয়ার আর কোথাও দেখি নাই"...জানিনা আমাকে খুশী করার জন্য বল্ল কিনা, আমার কাছে বেশ ভালোই লাগে নিজেদের প্রশংসা শুনতে।
পড়লাম। পড়ে জানলামও। তবে এইসব পড়ে কোনো লাভ হয় না মনে হয়। মাঝখান থেকে উহ্ আহ্ বলে একগুচ্ছ দুঃখ রচনা করি। আর কিছুক্ষণ নিজের হাত নিজেই কামড়াই। ওদিকে যারা জেতার ঠিকই জিতে যায় ছলে, বলে কিংবা কৌশলে।
সহমর্মিতা, সমবেদনা অনুভব করলেও একমত হতে পারলাম না এ-ধরনের কাজের সাথে।
সময়টা বদলেছে। এ-ধরনের বিশ্লেষণে ১৭০০ সালের ঘটনা টেনে আনা যায়, মার্ক্সের উক্তি ধার করা যায়, কিন্তু তাতে বিশ্লেষণ বাস্তবানুগ হয় বলে মনে করি না। "সম্মান" এবং "সন্ত্রাসবাদ" নামক দু'টি চলক মার্ক্সের সমীকরণে ছিল না। তিনি এই দুটো সম্পর্কে কোন প্রকার আলোকপাতও করে যাননি।
মার্ক্স এ-নিয়ে কিছু বলেননি বলেই হয়তো যেকোন প্রকার সহিংসতাকে খুব সহজে প্রোলেতারিয়েতের সংগ্রাম বলে ভুল করা হয়। নতুন সময়ে নতুন পন্থায় এই পরাশক্তিদের প্রতিহত করা প্রয়োজন।
দস্যুবৃত্তি কিংবা সন্ত্রাসবাদ কোন প্রকার মুক্তি এনে দেবে না। দিলেও আমি সে-মুক্তির চেয়ে এই দাসত্ব বেছে নেবো। বিন লাদেন ঘরানার মানুষের এনে দেওয়া মুক্তি আখেরে ক্ষতিই দেবে। এদের প্রতিহত করার জন্য প্রথমে প্রয়োজন নিজের দেশে যোগ্য মানুষকে নেতৃত্বে আনা, এরপর প্রয়োজন এই পরাশক্তিগুলোকে নিজ সমাজে লজ্জিত করা। শুনতে যেমনই লাগুক না কেন, এর বাইরে কার্যকর, দ্রুত কোন সমাধান নেই। শক্তি প্রয়োগ করে এদের হারাবার মত শক্তি নেই।
দীর্ঘমেয়াদে দেখলে 'ভিজিল্যান্টি জাস্টিস' সব রকম প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়। জাতির জন্য সেটা অনেক বড় ক্ষতি। প্রতিবাদ ও অনুশাসনের প্রতিষ্ঠানগুলো অক্ষুণ্ন রেখেই বিরোধিতা করা উচিত বলে মনে করি।
প্রশ্ন অন্য জায়গায়। সোমালিয়া সত্যিকার অর্থেই একটা failed state। এইটা আজকের কথা না, সেই ৯০-এর দশক থেকে - 'ব্ল্যাক হক ডাউন', ফারাহ আইদিদ, ইত্যা্দি। সেইখানে কোন প্রকার অবকাঠামো বা প্রতিষ্ঠান আর বাকি নাই - রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বা আইন কানুন বিষয়ক। দেশের বিরাট অংশ বেঁচে থাকে বিদেশ থেকে নানা উপায়ে প্রেরিত টাকার উপরে - পূর্ব লন্ডনে যেমন হাজার হাজার সোমালি অভিবাসীদের বসবাস, সবাই কোন না কোন সময়ে রেফিউজি হয়ে আসছে, এখন দেশে পয়সা পাঠায় নিয়মিত। এইখানে শত শত সোমালি দোকান আছে ঠিক এই কাজের জন্য। মানি ট্রান্সফার, ইন্টারনেট শপ আর মোবাইলের দোকান - এগুলা দিয়েই ওদের কমিউনিটি বেঁচে আছে এইখানে।
বিবিসি'র দুইটা রিপোর্ট থেকে কোট করি - Piracy is in essence a law and order issue, and in Somalia there is virtually no authority to carry out the kind of policing that could effectively disrupt pirate operations... For many who have grown up surrounded by constant insecurity and bloodshed, violence and the risk of death are unexceptional hazards... For this reason the current attempts to fight piracy from the sea are only dealing with symptoms. They do not address the reasons why young men are prepared to risk their lives chasing ships around the ocean.
প্রথম রিপোর্ট
দ্বিতীয় রিপোর্ট
সেই দেশের ভিতরের পরিস্থিতি উপেক্ষা করার কোন অবকাশ নাই। আর এইসব বেপরোয়া বেকার ছেলেদের ভালো কথা শুনিয়েও কোন লাভ নাই।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ফেইল্ড স্টেট বলেই যে তাকে আইনের ঊর্ধ্বে (বা নিচে) বলে ধরে নিতে হবে, এমনটা মনে করি না আমি। আজ আমি বাংলাদেশি হয়ে সোমালিদের মানবিক প্রতিরোধের অযোগ্য বলবো, কাল অন্য কেউ আমাকে মানবাধিকারের অযোগ্য বলবে, এভাবে এই ধারা চলতেই থাকবে। আমি মনে করি না যে কোন প্রকার সামাজিক বাস্তবতা মানুষকে মানবিক গুণাবলি প্রদর্শনের অযোগ্য করে তোলে। নীতির প্রশ্নে আপোষ করাটা আমার পছন্দ না... বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে।
এই সমস্যা এখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই। তারুণ্যকে কোনদিনই শাসিয়ে মানানো যায় না, উদ্বুদ্ধ করতে হয়। নীতিতে আপোষ করা দিয়ে শুরু করলে মনে হয় না বেশি দূর আগানো যাবে।
তবুও তো ভাল কথা বলে যাওয়ার বিকল্প নেই। অন্য কোন পন্থা কি এর চেয়ে ভাল কিছু এনে দেবে আদৌ?
"তবুও তো ভাল কথা বলে যাওয়ার বিকল্প নেই।"
বুঝলাম না একদমই। এই সোমালিয়ানদের পেটে ভাত নেই। এদের দেশে কোন অর্থনীতি অবশিষ্ট নেই। আর যেহেতু কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী নেই, সেই সুযোগে বিদেশীরা এদের মাছের ভান্ডার, এদের জীবিকার একটা শেষ উৎস নষ্ট করে দিচ্ছে। তার উপর উপকূলে মেডিকাল, নিউক্লিয়ার বর্জ্য ডাম্প করে এদের শরীর স্বাস্থ্য নষ্ট করে দিচ্ছে। এইখানে ভালো কথা শোনানোর যুক্তি কিভাবে গ্রহণযোগ্য?
পশ্চিমাদের জন্যে ভালো কথা বলা ছাড়াও তো অনেক বিকল্প দেখি। ভদ্র-সভ্য আচরণ দিয়ে শুরু করা যায়। অন্যের মাছ খেয়ে না ফেলা। অন্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের গায়ে নিজের বর্জ্য না ঢালা। Golden rule-এ বলে - অপরের প্রতি এমন ব্যবহার করো যেটা তুমি নিজের জন্যে চাও। পশ্চিমারা সেই নিয়ম যথেচ্ছ ভাংছে। এই ক্ষেত্রে নীতিবান থাকার দায়িত্ব কেনো শুধু অভাবগ্রস্ত সোমালিদের ঘাড়ে বর্তাবে, সেটা পরিষ্কার হলো না। জাহাজ হাইজ্যাক করলে সন্ত্রাস, কিন্তু একজনের মুখের খাবার হাইজ্যাক করলে সেটাকে কি বলবো? আর রাতের আঁধারে নিউক্লিয়ার বর্জ্য ডাম্প করার মতো কাজকে কি আখ্যা দেয়া যায়?
--------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
শুধুই একটাই কথা বলুন... যে-খেলায় জিততে পারবো না, যে-খেলায় আমাকে জড়িত করবার জন্য বিভিন্ন ভাবে প্ররোচিত করা হত, সেই খেলায় আমি কেন নামবো?
সুযোগ পেলে কে না সেটা কাজে লাগাবে? সুযোগটা করে দিতেই মানা করছি আমি বারবার। আমরা খেলায় বারবার ওদের হাতেই বল তুলে দিচ্ছি। নিজেদের সমাজ-সংস্কৃতির সংশোধন করা সবচেয়ে কঠিন এবং কার্যকর কাজ, কিন্তু সে-কাজটা না করে এই পথগুলো দিয়ে আদৌ কতটুকু অর্জিত হচ্ছে?
আগের কমেন্ট থেকে উদ্ধৃতি -
আমি মনে করি না যে কোন প্রকার সামাজিক বাস্তবতা মানুষকে মানবিক গুণাবলি প্রদর্শনের অযোগ্য করে তোলে।
এই কথাটা কি পশ্চিমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? নাকি ওরা মওকুফ?
আর উপরের কথাটা যদি সত্যি ভাবো, তাহলে সুযোগ পেলে কে না সেটা কাজে লাগাবে?/ - এমন কথা বলে কিভাবে পশ্চিমাদের ব্যবহার র্যাশনালাইজ করলা?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
মোটেও মওকুফ নয়, এবং মোটেও র্যাশনালাইজ করছি না।
আমি "এরা সুচিন্তা ও সুকুমারবৃত্তির যোগ্য না" জাতীয় চিন্তার বিপরীতে।
আমি "ভিজিল্যান্টি জাস্টিস" এর বিপক্ষে।
আমি মৌলিক নীতির প্রশ্নে আপোষ করতে নারাজ, কারণ এই ধরনের এক্সসেপশন পরিণামে ক্ষতি ডেকে আনে।
এইখানে মৌলিক নীতিটা কি, আমার কাছে পরিষ্কার না।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
উদ্দেশ্য যেমনই হোক না কেন, কোন প্রকার অপরাধ শাস্তির ঊর্ধ্বে নয়।
ধর্ম, বর্ণ, বা গোত্রের কারণে কোন মানুষকে বৈষম্যের শিকার করা যাবে না।
দেশ, কাল, বা জাতি নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ কিছু মৌলিক অধিকার ভোগ করে।
ধর্ম, সম্পদ, বা কুলীনতা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জন্য সব রকম সুযোগ ও অর্জন উন্মুক্ত থাকা উচিত।
ইত্যাদি, ইত্যাদি। এধরনের কিছু মৌলিক নীতির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমি এগুলোর প্রশ্নে আপোষ করার বিপক্ষে। এই দিকগুলোয় আপোষ করলে তা দীর্ঘমেয়াদে অনেক ক্ষতি ডেকে আনে।
আইন ও প্রতিষ্ঠানের কাজ সবচেয়ে দুর্বল মানুষটির সব রকম অধিকারও সংরক্ষণ করা। যদি তাকে পদে পদে নীতির প্রশ্নে আপোষ করতে হয়, তাহলে শেষতক সাধারণ মানুষের অধিকারই হারিয়ে যায়।
অপরাধীকে বুঝতে চাওয়া অবশ্যই প্রয়োজনীয়, কিন্তু তাই বলে তাকে বিচার ছাড়াই মুক্তি দিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী আমি নই।
আত্মঘাতী বোমা হামলা, জিম্মি করা, কিংবা দস্যুবৃত্তি খুব স্পষ্টতই 'অপরাধ'। এর পেছনে কোন উদ্দেশ্য থেকে থাকলে তা অবশ্যই আমলে নিতে হবে, এবং পরবর্তীতে সংশোধন করতে হবে। তাই বলে যে-ব্যাক্তি অপরাধ করলেন, তার ক্ষমার পক্ষপাতী আমি নই।
দু'টি উদাহরণ দেই।
১) ভার্জিনিয়া টেকের খুনোখুনির ২ বছর পূর্তি গেল আজকে। চো সাং-হুই এই সত্য উন্মোচন করে গেছে যে বড়লোকের ছেলেপুলেদের একটা আলাদা ঠাঁট-বাট আছে। এটি প্রকাশ্যে আনার পুরস্কার হিসেবে কি তার ৩১টি খুন ক্ষমা করে দেওয়া হবে? তাকে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হত, এবং এরপর তার উন্মোচন করে যাওয়া সত্যেরও প্রতিষ্ঠা দিতে হত। যে-উদ্দেশ্যেই হোক, অপরাধের শাস্তিবিধানের নীতির প্রশ্নে কি এখানে আপোষ করতেন কেউ?
২) আমরা 'বাঙালি'রা পাহাড়িদের উপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন করেছি। যে অর্থে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোকে গালি দিয়ে আমরা মুখে ফেনা তুলে ফেলি, সেই একই ভূমিকা আমরা সেখানে পালন করেছি। তবুও তো আমরা পার্বত্য অঞ্চলে কোন উত্তপ্ত অবস্থা ছড়িয়ে পড়লে পাহাড়িদের দুষেছি। এই যে জলদস্যুদের প্রতি সহমর্মিতা, এর কতটুকু প্রতিরূপ আমরা দেখিয়ে পাহাড়িদের প্রতি? অন্য ভাবে বললে, আজ যদি আমার কোন নিকটজনকে সেখানে জিম্মি করা হয়, তাহলে কি আমি তাদের উপর ঘটে যাওয়া খুন-ধর্ষন-অগ্নিসংযোগ-নিপীড়নের কথা চিন্তা করে তাদের হয়ে সাফাই গাইবো?
আমার কাছে এই দু'টি প্রশ্নের জবাব "না"। এবং সে-কারণেই আমার কাছে অপরাধ/সন্ত্রাস/দস্যুবৃত্তির সংজ্ঞা সার্বজনীন।
সোমালিদের দুঃখ-দুর্দশার ইতিহাস নিয়ে আমি কারও চেয়ে কম বিচলিত নই, কিন্তু আমি তার জন্য আমার এই সার্বজনীন সংজ্ঞাকে সংকুচিত করতে নারাজ।
বোঝাতে পারলাম এবার? এবার ঘুম দেই গিয়ে।
বোঝাতে পেরেছেন, এবং সেজন্যই বলছি এবং আমারো ঘুমাবার দরকার আছে।:D
এর আগে লম্বা একটি এনালাইসিস করেছিলাম আপনার অবস্থানের। সেটি বিদ্যুতের গ্রাসে গিয়েছে। এবার আর পারছি না, তাই সংক্ষেপে অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে বলি।
আপনি বলেছেন,
সংকুচিত তো আপনিই করে রেখেছেন। সোমালি ওই লোকেরা দস্যু বা অমুক দল সন্ত্রাসী, অমুক কাজ অপরাধ এরকম মার্কা দেওয়া সার্বজনীন বা বিশ্বজনীন হলো কোন মতে? এই ধারণাগুলো যেভাবে নির্মিত হয়, তার মধ্যে বিশেষ জাতি-গোষ্ঠী-শ্রেণী ক্ষমতার আধিপত্যের স্বীকৃতি থাকে। তারাই সংজ্ঞা ঠিক করে। নন্দীগ্রামের কৃষকরা স্পষ্টতই আইনের চোখে অপরাধী। কিন্তু সেভাবে কি দেখতে পারছে সরকার? পারছে না, কারণ তাদের বলের কিছু ঘাটতি হয়েছে বা সেই বলপ্রয়োগ তাদের স্বার্থের বিপরীতে যাবে বলে। আইনের এই সার্বজনীন সংজ্ঞাকে প্রতিরোধের ব্র্যাকেট দিয়ে সীমিত করে দিয়েছে সেখানকার মানুষ।
মানুষ সমান এই সার্বজনীন বাক্য যথেষ্ঠ নয় তাই, কে কার সমান তা নির্দিষ্ট না করলে এবং যে বেশি সমান সে তার সেই আভিজাত্য না ছাড়লে ঐ বাণীতে চিড়া ভিজবে না।
তাই কোনটা অপরাধ আর কোনটা ন্যায্য প্রতিরোধ তা বিজয়ীর ভাষ্যে আপাতত স্থির হবে বটে, কিন্তু পরাজিত অনবরত তাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে। যেমন এত মার খাওয়ার পরও সোমালিরা জানাচ্ছে।
*স্পষ্টতই সেখানে যারা মাছ চুরি করে, হানা দেয়, বিমান আক্রমণ করে, আগ্রাসন চালায় এবং তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ফেলে মানুষ মারে তারা অপরাধী। এই অপরাধের বিচারের জন্য কোনো আইন নাই সোমালিদের, কারণ তাদের সার্বভৌম রাষ্ট্র নাই। তাই ডি ফ্যাক্টো সার্বভৌম শক্তি হিসেবে কথিত জলদস্যুরা পানিতে নেমেছে। তারা জিতলে তাদের ভাষ্যই আইন হবে।
রাষ্ট্রীয় আইন না বলেন, তাদের যে ইউনিভার্সাল রাইট এবং যে রাইট অলঙ্ঘনীয় তা হলো জীবন-জীবিকা-ঘর বাঁচানোর রাইট। সে রাইট কেনো তারা ছাড়বে? রাষ্ট্র থাকলে তাদের সমুদ্রসীমা ব্যবহারের জন্য শিপিং এজেন্সিকে তো ট্যাক্স দিতেই হতো। সেটা না করে, গরিবের বউরে চেখে দেখার সাধ কেন তাদের?
পাশ্চাত্যের রাজশক্তি বারবার বলেছে মানুষের কথা, কিন্তু যেখানেই মানুষ পেয়েছে সেখানেই তাদের তারা হত্যা করেছে। তারা বলেছে গণতন্ত্রের কথা, কিন্তু স্বশাসন তারা সহ্য করে না, জনগণের ম্যান্ডেট তারা অস্ত্র দিয়ে বাতিল করে। পাল্টা অস্ত্র হাতে নিলে তারা শান্তিভঙ্গের ধুয়া তোলে। অস্ত্রের একচেটিয়া তো নীতি হতে পারে না।
আজ অবধি দুনিয়ার কোথাও শান্তিপূর্ণ পথে কোনো প্রগতি হয়নি। আমেরিকার ইতিহাস রক্তে ভরা, ইউরোরে ইতিহাস রক্ত-খুন-গণহত্যা-নারী হত্যা-সংখ্যালঘু নিধন ও পরিবেশ ধ্বংসে ভরপুর।
কোনো স্বাধীনতা আপসে আসেনি। যা আপসে এসেছে তা স্বাধীনতা নয়। গান্ধির অহিংসার মূল্য ভারতবাসীকে দিতে হয়েছে একের পর এক দাঙ্গা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের মূল্যে। একাত্তর গান হয়ে হয়নি। শেখ মুজিব প্রতিরোধ যুদ্ধ বুঝতেন না বা চাইতেন না বলে অপ্রস্তুত অবস্থায় আমাদের বেশি জীবন দিতে হয়েছে। এবং শক্ত হাতে রাজাকার-সেনা উচ্চাভিলাষী ও দুনীতিবাজদের শাস্তি না দেওয়ায় তারা ফিরে ফিরে আরো বেশি হত্যা করেছে এবং রাষ্ট্রকে দেশি-বিদেশি লুটেরাদের চা পানের তেজপাতা বানিয়েছে। যে রক্ত স্বাভাবিকভাবে দেওয়া হয় না, তা গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, গণহত্যা ও দাঙ্গার পথে বহুগুণে শোধ করতে হয়।
ভাল কথা বিডিআরের ঘটনায় আপনি কিভাবে জানলেন যে, সাধারণ বিদ্রোহীরাই অফিসারদের ওরকমভাবে খুন করেছে। বিদ্রোহের মধ্যে ঢুকে পড়া রাষ্ট্রীয় শত্রুরা একদিকে বাংলাদেশ অন্যদিকে তার কৃষকসন্তানসম বিডিআর সেপাইদের পাঁজরা ছিন্ন করাকে কীসের ভিত্তিতে বিডিআরের ওর চাপালেন। এই জন্যই বলেছি, নলেজও ইনফর্মেশন ডিস্ট্রিবিউশন কেন্দ্রগুলোর প্রতি অনাস্থা আনুন। নইলে নিজেকেই আর জানা হবে না। তাহলে আমরা হয়ে যাব, ম্যাট্রিক্স-এর সেইসব বন্দি মানুষ, যারা জানে না যে তারা বন্দি।
আপনার দুটি উদাহরণই এখানে প্রযোজ্য নয়। ভার্জিনিয়া টেকের খুনী আর বিদেশি দুবৃত্তদের খেদানো বাহিনী এক হয় কী করে?
আর পাহাড়িদের প্রতি সংহতি না দেখানোর দায় আমার ওপর কীভাবে আসে। আমি বহুবছর ধরে তাদের সংগ্রামের সাথী রয়েছি। এবং পাহাড়ের পরিস্থিতির জন্য যে কারণে তাদের দুষছি না দুষছি আমার রাষ্ট্রকে, সেই একই কারণে আমি সোমালিদের এই অবিকশিত দূর্বল কিন্তু ন্যায্য প্রতিরোধের পক্ষে।
আপনি আইনের কথা বলেছেন, একটা উদাহরণ দিই। মার্কিন সুন্দরী তরুণী এলিয়েদার কথা মনে আছে। সে হিরোইন পাচার করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিল বাংলাদেশে। তার জন্য আমাদের এক কবি প্রেমময় কবিতাও লিখেছিলেন। তাকে বাঁচাতে এক সিনেটর ঢাকায় আসেন। ঠিক সেসময় এক নাইজেরিয় বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বৈধভাবে ভারতে যাচ্ছিল। বেচারা এসেছিল বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত নিয়ে গবেষণা করতে। সে কাজেই পশ্চিম বাংলাও যাওয়া। তো তাকে গ্রেফতার করা হলো এবং এলিয়েদাকে দিয়ে বলানো হলো যে, ঐ নাইজেরিয়ই তাকে প্রতারণা করে হিরোইন গছিয়ে দিয়েছিল। পরের কাহিনী এই। এলিয়েদাকে নিয়ে ওই সিনেটর কয়েকদিনের মধ্যেই দেশে ফেরেন আর বেচারা নাইজেরিয় তরুণকে দশক দীর্ঘ কারাভোগ করতে হয়। লোকটি নাকি কারাগারে বসেই বাংলার গান নিয়ে তার গবেষণা শেষ করে। আইন আছে বলেই তো, নাইজেরিয়কে ফাঁসানো সম্ভব হলো। এবং সে নাইজেরিয় বলে, সবাই জানে, তার সরকার তাকে বাঁচাতে আসতে পারবে না, কিন্তু মার্কিন সরকার পারবে। আজ সোমালিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধীদের কাজের ফল হিসেবে অন্যের অপরাধের শাস্তি পাচ্ছে। এখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা খাচ্ছে। আপনি দেখছেন আইন আর আমি দেখছি বলবানের জুলুম। এবং দেখছি যে, পাল্টা বলবান হওয়া ছাড়া উপায় নাই। সেই বলের জন্যই আইন-মিডিয়া-মানবতাবাদকে আমিও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবো। এই এখানে যেমন, পশ্চিমা আইন ও অধিকারের ভিত্তিতে দাঁড়িয়েই এই তর্ক করছি। যদিও আমার তাতে ছাইমাত্রও বিশ্বাস নাই। আমার বিশ্বাস মানুষের সৎপ্রবৃত্তিতে, সেই প্রবৃত্তি চিরকালই প্রতিরোধকামীদের পক্ষে আসে। এই যেমন অনেক চেষ্টার পর, অনেক রকেট ছোঁড়ার পর ইউরোবাসী ফিলিস্তিনীদের কষ্টটা বুঝতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের দুয়ারে আমরা শতবার ধরনা দেব, জুলুমবাজদের দুয়ারে নয়।
**আপনি আছেন চোর আর পুলিশ আর ফৌজদারের দৃষ্টি নিয়ে, ফৌজদারি আইন নিয়ে, আমি বলছি বিষয়টা ডাকাত-আর পুলিশের নয়, এটা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নিরাপত্তা প্রতিযোগিতার ভেতরের ঘটনা। বাকিসব ক্যামোফ্লেজ। দয়া করে আমার ১৯ নম্বর কমেন্টের লিংক ও বক্তব্যগুলো রেজিস্টার করুন।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
কোন ধরনের কাজের সঙ্গে একমত হতে পারলেন না বোঝা গেল না।
১. বিষয়টা একমত দ্বিমতের ব্যাপার তাদের যারা ওই পরিস্থিতিতে পড়েনি যাদের সামনে অনেক অপশন খোলা। হ্যারি একভাবে সোমালিদের মোড়্যাল এবং স্ট্র্যাটেজিকাল ঐক্য দেখেছেন যে, তারা ক্রমাগত ধ্বংসের মুখে ধ্বংসকারীদের থেকে মুখের খাবার ও জীবন বাঁচানোর একটা মরিয়া চেষ্টা নিয়েছে। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা করলে তার কানে আমরা যুক্তি দিতে পারি না যে, ভায়া এই চেষ্টা বৃথা।
আর যদি স্ট্র্যাটেজিকালি বলি, এর মাধ্যমে তারা একভাবে দরকষাকষির জায়গায় এল। একভাবে জানাতে পারলো যে, তাদের ওপর এরকম অন্যায় করা হচ্ছে। নইলে হ্যারিও ব্রিটেনের বিখ্যাত দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এ লেখার তাগাদা পেতেন না। আর সোমালিয়ার গত এক যুগের ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, যুদ্ধের শেষে তারাই দাঁড়িয়ে থাকে আগ্রাসীরা নয়।
২.
ঠিক কথা। আমিও মনে করি না, এগুলো মুক্তির পথ। কিন্তু সোমালিরা কী করতে পারতো বলেন তো? তারা কি ব্রাসেলস বা হেগ-এ গিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ঠুকতো?
এগুলোকে রিজিড ও বিকাশহীন ভাবলেন কেন? সূর্যসেনদের সন্ত্রাসবাদ পরের যুগে গণসংগ্রাম হয়েছে। ক্যাস্ত্রোর দস্যুতা পরে সুসংগঠিত সংগ্রাম হয়েছে।
মার্ক্সের উক্তি আমি বা হ্যারি কেউই দেননি। আমার মন্তব্যের ওই জায়গাটা অন্য প্রসঙ্গে। খেয়াল করে দেখুন। আর যদি বিডিআরের ক্লাস স্ট্রাগল নামের আমার লেখাটা মনে থেকে থাকে আপনার, তাহলে আবারো বলি, আমি এবং বাংলাদেশের বেশিরভাগ তাদের কাণ্ডজ্ঞানে এ বিষয়ে ওটাই মনে করে এখনো। ক্লাস স্ট্রাগল মানে কিন্তু মার্কস কোথাও কেবল কমিউনিস্ট পার্টির নের্তৃত্বের সংগ্রাম বলেননি। আর আমিও বলিনি যে, সোমালিরা কোনো বিপ্লবী লড়াই চালাচ্ছে। একাত্তরে অনেক জায়গায় বাঙালিরা লাঠি-সড়কি নিয়ে পাকিস্তানী রুখতে গিয়েছিল, আবার বাবাও ঢিল ছুঁড়েছিল। এগুলো দেখে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু প্রতিরোধের এই বরফচূড়ার তলায় যে পাহাড় ছিল, তা অচিরেই প্রকাশিত হয়েছে। থাইল্যান্ডের চলতি গণসংগ্রামকেও বিবিসি বলছে ক্লাসস্ট্রাগল, বলছে গ্রাম-শহরের লড়াই। বলা হোক, তার মানে কালই ওখানে বিপ্লব হচ্ছে না আবার এসব লড়াইও মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে না।
৩.
আপনার এই কথাটা অবশ্য ধান ভানতে শীবের গীত নয় একেবারে। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই আমার গুরু মার্কস এ বিষয়ে বিস্তর আলোকপাত করেছেন এবং মার্কসবাদীরা সন্ত্রাসবাদ আর পরিকল্পিত সংগ্রামের মধ্যে ভেদরেখা টেনে দিয়ে প্রথমটিকে অপরিণত বলেছেন। কিন্তু সেসব ওয়াজ এই আলোচনায় বেশি দরকার নাই।
৪.
যাকে বলে জ্ঞানই শক্তি, আমি এই আদিম বচনে আজো বিশ্বাসী। আমরা মনের মধ্যেই মরে থাকি, অনেক কিছু জানি না বলে, জানতে পাই না বলে। আমি জানতে চাই ও জানাতে চাই।
আমিও 'দস্যুবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদ' অ্যাজ ইট ইজ কোনো মুক্তি এনে দেবে না বলেই বিশ্বাস করি। আবার ওগুলোকে পরিবর্তমান প্রক্রিয়া হিসেবে দেখলে বিশ্বাসের বদলে সতর্ক পর্যবেক্ষণ ও দায়িত্বশীল অংশগ্রহণে উৎসাহ আসে। আমি বরং দস্যুবৃত্তি কিংবা সন্ত্রাসবাদের বদলে দাসত্বকে মেনে নেব না। কারণ মুক্তি কোনো স্ট্র্যাটেজিকাল বাসনা নয়, নয় কোনো বিনিয়োগের চলক, এটা একটা ভার্চু_ নীতি, তাই আমার পক্ষে দাসত্বকে বেছে নেওয়া কোনো অবস্থাতেই সম্ভব হবে না। তবে এ নিয়ে আপাতত আমার কোনো তর্ক নাই, এটা আমার অবস্থান।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
যেকোন প্রকার খুন-খারাবি, জিম্মি করা, ইত্যাদির সাথে একমত নই আমি। এটি বোমাবাজি হোক কি দস্যুবৃত্তি। প্রতিবাদের ভাষা আরেকটু উন্নত হওয়া প্রয়োজন। বিশেষত এই লেখায় (মূল লেখার কথা বলছি) দস্যুবৃত্তিকে বেশ রোমান্টিসাইজ করা হয়েছে। আমি এই ব্যাপারটির সাথে নীতিগত ভাবে একমত নই। মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক কিছুই করে বসতে পারে, এটুকু বুঝি আমি। কিন্তু "রাগের মাথায় হয়ে গেছে" কিংবা "পৃথিবী আমাকে সন্ত্রাসী করেছে"র দোহাই দিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে আমার আপত্তি আছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ক্ষতিকর বলেই আমার স্থির বিশ্বাস।
আমি একটু অন্য ভাবে দেখি ব্যাপারটা। এই ঘটনা সোমালিদের কোন রকম দর কষাকষির অবস্থানেই আনেনি। "বর্বরদের সাথে আবার আলাপ কিসের?" কথাটি বলার দরজা খুলে দেয় এধরনের ঘটনা। "নো নেগোশিয়েশন উইথ টেররিস্টস" কথাটা দৃঢ় ভাবে বলে যাওয়া হয় এই রকম ঘটনা হলে। এই সুযোগটা পশ্চিমা দুনিয়া ১৬-র উপর ১৮ আনা কাজে লাগায়। এটা জানার পরও আমরা এভাবে এদের হাতে আরও মাল-মশলা তুলে দেই।
আমি সেই গোষ্ঠীর অংশ নই যাঁরা ফালতু কাজে নীতি কপচে সহিংসতা বন্ধ করতে বলে। ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে স্পষ্ট করেই বলছি -- আমি নিজেও পরাশক্তির পতন/ক্ষয় চাই। বিরোধটা কর্মপন্থায়। মুসলমান বলুন আর গরীব, সব পরিচয়ের মানুষের শোষনটাই হচ্ছে পরোক্ষ। বিপরীতে প্রতিবাদটা হচ্ছে বোমাবাজি বা দস্যুবৃত্তির মত ধুম-ধাড়াক্কা স্টাইলে। এই ধরনের ঘটনা আপনার-আমার জন্য সাময়িক সেনসেশন দিচ্ছে, কিন্তু সোমালিদের ক্ষতি ছাড়া লাভ করছে না।
পশ্চিমা মিডিয়ায় এদের নিয়ে এমন আদুরে লেখায়ও ভুলতে মন সায় দেয় না আমার। আপনি মিডিয়ার মানুষ, জানবেন ভাল। যেকোন ঘটনার পর এমন কিছু লেখা লিখে ভারসাম্য রাখা হয়। সত্যিকার অর্থে এই ধরনের লেখা কোন প্রভাব ফেলে না, কোন পরিবর্তণ আনে না। আমি তাই এগুলোর উপর আশাও রাখি না।
নিজের ভাল কেউ অন্যে দেখে দেয় না, নিজেকেই দেখতে হয়। এ-কারণেই সত্যিকার পরিবর্তণটা সোমালিদেরই আনতে হবে। সেক্ষেত্রে এধরনের দুর্বৃত্তদের হাতে ক্ষমতা সঁপে দিয়ে শর্টকাট খুঁজলে এদেরই হাতে জিম্মি হতে হবে।
যেকোন কৌশলগত খেলার একটি কার্যকর উপায় হল প্রতিপক্ষকে তার মূল পরিকল্পণা অনুযায়ী কিছু করতে না দেওয়া। বিশেষত দুর্বল খেলোয়াড়দের জন্য এটি খুব কাজের পথ। ব্রাসেলস বা হেগ'এ মামলা করা তো এদেরই দেখিয়ে দেওয়া পথ। লোক দেখানোর জন্য হলেও এ-পথে যাওয়া উচিত। পাশাপাশি নিজের দেশ আবর্জনামুক্ত করার কাজও করতে হবে। তা করতে না পারলে কোন কিছুতেই সমাধান মেলার কারণ দেখি না।
সূর্যসেনদের সংগ্রাম মহান ছিল অবশ্যই, কিন্তু তা স্বাধীনতা দিতে পারেনি। স্বাধীনতা অর্জন এবং তার স্বীকৃতি পেতে হলে অহিংস আন্দোলনের বিকল্প নেই।
হয়তো আমি এ-প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু, হয়তো কান্ডজ্ঞানবর্জিতও। তবুও আমি বলবো যে এই ঘটনায় অসন্তোষটা ব্যবহার করা হয়েছে। বের হয়ে আসা প্রমাণাদিও তো তেমনটাই বলছে। যেই বৈষম্যটুকু ছিল, তা এই ভাবে খুনাখুনি করবার মত ছিল না বলেই আমি মনে করি। বিশেষত অন্য সব পূর্বপন্থা অবলম্বন না করায় আমি এই মতে খুবই স্থির। রেশন-বেতনের কারণে এভাবে অফিসার খুন করাকে আমি মোটেও সমর্থন করি না। হাজারো ক্লাস স্ট্রাগল থাকলেও না।
"সম্মান"-এর প্রসঙ্গে বলতে চাইছিলাম যে, পশ্চিমা সমাজে এখন সম্মান, ভাবমূর্তি, ইত্যাদির গুরুত্ব নগদ সম্পদের চেয়ে বেশি। ব্রিটেন তো ইরাকে ক্ষতির মুখে পড়েনি, বরং লাভেই ছিল। তবুও টোনি ব্লেয়ারকে যেতে হয়েছে। আড়াই শ' বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের পর তাদের কাছে আরও সম্পদের চেয়ে সম্মানের মূল্য বেশি দেখেই তো।
"সন্ত্রাসবাদ"-কে বর্তমানে যেই অর্থে ব্যবহার করা হয়, ঠিক সেভাবে মনে হয় না সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে মার্ক্সের লেখায়। সেখানে পার্থক্যটা পরিকল্পণা থাকা ও না থাকার আলোকে দেখানো হয়েছে। বর্তমান সন্ত্রাসবাদের খুব ঘৃণ্য কিছু এজেন্ডা আছে। নিজেদের সুযোগ মত এরা মানুষের প্রয়োজন ও দাবিগুলোর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। তাই বলে এদের ভুল বুঝলে কি চলবে?
এধরনের ঢালাও প্রেজুডিস মনে হয় লেখা ও লেখক উভয়কেই লঘু করে দেয়। আপনার লেখাগুলোই মন্দ লোকে এই কথা ছুতায় কটাক্ষ করবে এক সময়। পাশ্চাত্যে বিচারকও ভোটে নির্বাচিত হয়। কম-বেশি এজেন্ডা সবারই থাকে। এদের দিয়ে নিজের কাজটা বের করিয়ে নিতে হয়। শত কটুক্তি সত্বেও মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলের জন্য কিন্তু পাশ্চাত্যের মিডিয়ারই খবর খুঁজি। যেকোন ক্যু হলে তাদেরই মারফতে খবর পাঠাতে চাই। মিডিয়া নামক ঘোড়াটাকে পানির কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু জোর করে তো আর ঘাস খাওয়ানো যায় না।
আমি যেকোন মূল্যে জ্বী-হুজুর করা দাসত্বের কথা বলছি না। আমি দস্যুদের চেয়ে অন্তত সাধারণ মানুষের মন-মতের উপর আস্থা রাখি বেশি। নিঃস্ব মানুষ মানেই সহিংস প্রতিবাদ, এটা আমি মানি না। একই ভাবে, সহিংস না হলে পরাশক্তিকে ঘায়েল করা যায় না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইতিহাস আমাদের অনেক সহিংস নেতা দিয়েছে, কিন্তু আমাদের চূড়ান্ত পাওয়াগুলোর পেছনে কিন্তু গান্ধী বা মুজিবের মত অহিংস নেতারই ভূমিকা বেশি। সহিংস প্রতিবাদের মধ্যে সেনসেশন থাকে অনেক, কিন্তু কার্যকারিতা কম। এটাই আমার কথা আর কি।
এর বাইরে আমি নীতিগত ভাবে ভিজিল্যান্টি জাস্টিসের বিরোধী। এটা আবার আমার অবস্থান। এখানে আবার আমি তর্কের বাইরে।
ভুলচুক কিছু হয়ে থাকলে দুঃখিত।
কে আসলে ডাকাত?
ভাবনার বিষয়!!!
লেখাটা পড়ে অনুবাদ বলে মনেই হয়নি।
ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
এটা একটানে লেখা, দ্বিতীয়বার পড়ার আগেই পোস্ট করে বেরিয়েছি অফিস থেকে। এখন দেখি বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত হবে, সেখানে শুধরে দেব। তাই পরামর্শ প্রয়োজনই।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
"কে আসলে ডাকাত?" -- লাখ টাকা দামী প্রশ্ন!!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
পূর্ব আফ্রিকায় কিছুদিন বসবাসের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের কালো মানুষগুলো বিদেশী যে কোন উপস্থিতির ক্ষেত্রে অনেক বেশী সহিষ্ণু।আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি দেশেই পশ্চিমা দেশের প্রত্যক্ষ থাবা।কংগোতে দুই যুগের গৃহযুদ্ধ জিইয়ে রেখে মুল্যবান খনিজ সম্পদ জনগনের চোখের সামনে দিয়েই তো নিয়ে যাচ্ছে। রুয়ান্ডায় ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ মদদে গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা হয়েছে, অথচ অসভ্য দেশ হিসেবে ফ্রান্সকে কেউ আঙ্গুল তুলে কোন দিন দেখাবে না।
অধিকাংশ যীশুভক্তরা (সোমালিয়ায় আল্লাভক্ত) এসব ব্যবসা বানিজ্য, খনিজ সম্পদ কিংবা জমিজমা দখলকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকে।পরোক্ষ শোষণের বিষয়টা অধিকাংশ সাধারণ মানুষ বোঝেনা, আর প্রত্যক্ষ থাবার বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ করতে ভয় পায়।
সোমালিয়ায়দের সম্ভবত দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। জলদস্যুদের ঠেকাতে জলদস্যু হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
শুনতে পাই, বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচে বড় মিঠা পানির রিজার্ভ হিসেবে গোনাগুনতিতে রেখেছে আমেরিকা, কোন ভাবে ব্যবহার হবে কে জানে!
হারির রিপোর্টটির প্রাঞ্জল অনুবাদ। পড়তে খুব ভালো লাগলো।
পরাবাস্তব টেলিফোন! মজার শব্দার্থ...
নাহার মনিকা
এই তথ্য ঠিক নয়। বিশ্বের অধিকাংশ মিঠা পানি আছে লেকগুলোতে - বৈকাল, আমেরিকার পঞ্চহ্রদ, আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়া, টাংগানিকা - ইত্যাদি।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভাল বলেছেন, আর কিছু না হই, আমাদের এখানে ওরকম হলে নাহয় জলদস্যুই হওয়া যাবে। দাসজীবন থেকে সেটা অনেক সম্মানের।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
সোমালিয়ার জলদস্যুদের উপর Canadian Broadcasting Corporation(CBC) তে একটি ডকুমেন্ট্রি দেখেছিলাম ঠিক একই রকম। আগ্রহীদের জন্য লিঙ্কটি এখানে দেয়া হল।
http://www.cbc.ca/national/blog/video/internationalus/pirates_of_somalia.html
ফারুক ভাই ভাল লাগল লেখাটা। জলুদস্যতার ব্যাপারটা নতুন আলোতে দেখার সুযোগ হল এর মাধ্যমে। আর আমেরিকার জলদস্যুদের ব্যবহারের ভাল উদাহরণ হতে পারে জ্যা লাফেয়তি(উচ্চারন টা নিয়ে সন্দেহ আছে)।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
@ সুবিনয়,
বিবিসির ওই রিপোর্টেও কিন্তু জোহান হ্যারির বলা ঘটনাগুলোর কিছুই নেই।
আর সকল জাতির মতো সোমালিদেরও ইতিহাস আছে, আছে নাটকীয় উত্থান-পতন। তাদের একাংশ ছিল ইতালিয় শাসনে আরেকাংশ ছিল ব্রিটিশ শাসনে। সেখান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ভুল হোক ঠিক হোক মধ্য আশিতে তারা একটা বিপ্লব করে গোষ্ঠীপতির শাসন হঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সেই বিপ্লবের নেতা সিয়াদ বারে'র ভুল, নানান প্রতিবন্ধকতায় তা কমজোরি হয় এবং যুদ্ধবাজ নামে খ্যাত ফারাহ আইদীদ গৃহযুদ্ধ শুরু করে।
এই অংশটা আমাদের কৈশোরের ঘটনা। টিভিতে ফারাহ আইদিদের নামের আগে যুদ্ধবাজ শব্দটা শুনতে থাকি। তার বিরোধী নেতা ছিল ইতালিয় মদদপুষ্ট। জাতিসংঘ পরে নাক গলায় এবং পরিস্থিতি আরো জটিল হয়। দুর্ভিক্ষ, মৃত্যু তাদের সঙ্গী হয়।
যাহোক, এর মধ্যে ইসলামী কোর্ট নামে ইসলামপন্থিরা দেশটাকে এক করে, শৃঙ্ক্ষলা চালু করে, খাদ্যাভাব কমিয়ে আনে এবং অর্থনৈতিক কাজকারবার শুরু করে। কিছুটা তালেবানদের মতো। তবে তাদের আমলে নারী নির্যাতন অনেক কমে আসে।
Political analyst James Petras summed it up like this:
“The ICU was a relatively honest administration, which ended warlord corruption and extortion. Personal safety and property were protected, ending arbitrary seizures and kidnappings by warlords and their armed thugs. The ICU is a broad multi-tendency movement that includes moderates and radical Islamists, civilian politicians and armed fighters, liberals and populists, electoralists and authoritarians. Most important, the Courts succeeded in unifying the country and creating some semblance of nationhood, overcoming clan fragmentation.”
এদের বিরুদ্ধে তখন আমেরিকা ইথিওপিয়াকে দিয়ে আগ্রাসন চালায়। আল কায়েদা খোঁজার নামে বহু বিমান আক্রমণ হয়। সোমালিদের শান্তি আবার নষ্ট হয়। তারপরে আমরা দেখলাম এই তথাকথিত জলদস্যুদের আবির্ভাব।
সোমালিয়া খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ। এটাই তার বড় বিপদ। অন্যদিকে ক্রমশ ভারত মহাসাগর হয়ে উঠছে এই শতাব্দীর বিশ্ব সংঘাতের কেন্দ্র অঞ্চল। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মুখপত্র হিসেবে বিবেচিত ফরেন অ্যাফায়ার্স তো লিখেইছে ভারত মহাসাগর হলো Center Stage for the 21st Century
সুতরাং শান্তি আসে কী করে। এসব সাবেক উপনিবেশিতরা একদিকে নিজেদের ইতিহাস হারিয়েছে, হারিয়েছে সনাতন পদ্দতিতে সমাজ চালাবার মাধ্যম। অণ্যদিকে পরাশক্তিগুলো এদের তাদের নানান খেলার ঘুঁটি বানিয়ে ব্যবহার করেছে, না বুঝেই চেয়েছে পশ্চিমা স্টাইলের গণতন্ত্র কায়েম করাতে। ন্যাটোর খয়েরখাঁ জাতিসংঘ মাঝখানে ঢুকে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। সবকিছুই ঘটছে আফ্রিকার রিসোর্স ও জিওপলিটিকাল অবস্থান, চীনের সঙ্গে অন্য পুঁজিবাদী দেশগুলোর কামড়াকামড়ি ও স্থানীয় জনগণের ভাল-মন্দের টানাপড়েনে।
বলা যায় না, সোমালিয়া আমাদের জন্যও ভাল উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।
তাই ভাল কথা শোনার দরকার কিন্তু যারা আগ্রাসী তাদেরই।
আরো দেখুন
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
বাংলাদেশের জন্য নিউক্লিয়ার হ্যাজার্ডের সম্ভাবনা পড়লাম কদিন আগে - বিবিসিতে। এই সেকশনটা পড়তে পারেন - Nuclear Dumping and Chemical Weapons Testing।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
দিগন্ত, আপনারে আগাম জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আপনার লগে পি মুন্সীর বাতচিত দেখছি। আমি আপনার অবস্থানের ড়্যাশনালটা বুঝি। ওটা আপনার মতাদর্শিক-যৌক্তিক অবস্থান। তার মধ্যে পূর্ব-পশ্চিমের বিবাদের ইতিহাসজাত আহত অহং ঢুকিয়ে ফেলা মুন্সীজির ঠিক হয় নাই। এছাড়া আমি জেনারেলি তার আলোচনার সঙ্গে একমত, কেবল ওই আহত অহং বা আনহ্যাপি কনশাসনেসটুকু ছাড়া।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হ্যাঁ কিন্তু এখানে এই লেখাটা পড়ুন, চিন এখন তিব্বতে তার নিউক্লিয়ার বর্জ্য ডাম্প করে। এর আগে যে অঞ্চলে করত সেখানকার উইঘুররা এখন বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম দিচ্ছে। সমস্যা হল, এই নিউক্লিয়ার ডাম্প এর মধ্যেই তিব্বত থেকে আসা নদীগুলোর জল দূষিত করে দিচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রও এই দলে পড়তে চলেছে।
আর মুন্সীজির সাথে আমার আলোচনা পজিটিভ ভাবেই শেষ হয়েছে। সমস্যা হল, মুদ্রার একপিঠই মুদ্রা নয়। অন্য পিঠও আছে। সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছিলাম।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কোনো পোস্ট পড়তেছি না, সময়াভাবে, সেই কালে আপনে আমার আধাঘণ্টা খাইলেন...
সেজন্য অনেক ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনি সর্বদাই আমারে অনুগ্রহ করেন। সেজন্য ধন্যবাদ ভায়া।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ভালো ক'রে প'ড়ে মন্তব্য করবো বলে আগে চুপ ছিলাম। খুব ভালো লেখা, খুব দরকারী লেখা। অনেক আলোচনা হয়ে গেছে কিন্তু সমাধান কোথায়। এবং এ শুধু সোমালিয়ার সমস্যা নয়, কাল অন্য রূপে অন্য শিকার খুঁজবে এই সর্বগ্রাসী লোভ।
মাঝখানের প্যারাগুলি 'সিড মেয়ার'স পাইরেটস' নামে একটা গেমের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল ফারুক ভাই। ১৭শ শতাব্দীর জলদস্যু এখন রোমান্টিক ফিগার, ২১শ শতকের সোমালি জলদস্যু কি কখনো রোমান্টিক ফিগার হবে?
জিনিসটা বেশ এসকেলেট করছে দেখলাম। আমেরিকান দ্বিতীয় একটা জাহাজকে গ্রেনেড, বোমা মেরে আক্রমন করা হয়েছে। এ সমস্যার স্বল্পমেয়াদী সমাধান হয়তো সামরিক, দীর্ঘমেয়াদী সমাধান মনে হয় হতে হবে অর্থনৈতিক।
একটা বিতর্কমূলক লেখা দেন না পাকিস্তানি তালেবান নিয়ে! সচলে ঢুকে ওঁত পেতে আছি ওরকম একটা লেখা আপনার থেকে পাওয়ার আশায়। ঝগড়া করবো।
যে কোনো কিছুর আগে দরকার বিষয়গুলো ঠিক ভাবে জানা, সমস্যার গোড়া ধরে আগানো এবং প্রতিরোধে সামিল হওয়া। কিন্তু আমরা বিভক্ত আমাদের মধ্যে। লালনের গানে আছে,
আপন ঘরে পরের সংসার
আমি দেখলাম নারে তার বাড়িঘর.
আমি বেহুশ মুটে তার মোট বাহি, ও তার মোট বাহি।
পরের হাতে কল কাঠি।
শব্দের ঘরে নিঃশব্দ করে, সদাই তারা আছে জুইড়ে।
আমার এখন মনে হয়, কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের চেতনার বিউপনিবেশিকরণ ঘটাতে ফ্রাঞ্জ ফ্যানোর কথায় আনলার্ন হওয়া দরকার। আমাদের লার্নিং প্রসেসেই যদি সমস্যা হয়, তো সমাধান দুরঅস্ত।
চলে যাচ্ছিলাম, আপনার কমেন্ট দেখে আবার ঢুকলাম @ সিরাত। আপনার সোয়াত নিয়ে লেখাটা পড়েছি। তালেবান, ইসলামী জঙ্গি, বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে লেখা দিতে হাত নিশপিশ করে। কিন্তু ভয় পাই। রাম বোঝাতে গিয়ে আবার না মরা বুঝিয়ে ফেলি। অসার্থ্যটা আমারই। তবে এ বিষয় নিয়ে আমি গত ৫/৭ বছর একভাবে লেগে আছি। আবার ধরেন, বিতর্কের জন্য বিতর্ক করা বিরাট সময় ও শ্রমের কাজ। ওই ঘাটতির জন্যই পিছিয়ে যাই বারবার। অনেক সময় বিতর্কের থেকে একটা বই লিখে ফেললে বেশি কাজ হয়। মানুষ পূর্ণাঙ্গ চিন্তাটা ধরে তা গ্রহণ-বর্জন করতে পারে। তারপরও প্রস্তাবটা উত্তম। আপনি শুর করলেও হয়, আমি যোগ দিতে পারি। শুভেচ্ছা রইল।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আরেকটা বিষয়,
রিসেন্ট ডেভলপমেন্টটা খতিয়ে দেখিনি। তবে আগে ওপরে বলেছিলাম, নলেজ জেনারেট করাও যুদ্ধের অংশ। আজকের দুনিয়ায় যথাযথ নলেজ পাওয়ার সুযোগ মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় প্রায় নাই-ই। সেক্ষেত্রে মৌলিক পার্থক্যটা ধরে কোনো এক পক্ষে বা তৃতীয় অবস্থান থেকে বিচার করতে হয়। তার মধ্যে, ধরা যাক, আমার পক্ষ কোনো কাজ করলো যেটা সমর্থনীয় নয়, সেক্ষেত্রে পার্টিকুলারলি তার বিরোধিতা বা সমালোচনা করে বেসিক পয়েন্ট ও স্বার্থকে তুলে ধরাই শ্রেয়। নইলে তো অনবরত দুলতে হবে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আজকে সিএনএনে শুনলাম, বাংলাদেশী একজন নাবিক ছিল আমেরিকার জাহাজটিতে। সে একজন জলদস্যু ধরতে সাহায্য করেছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হ্যাঁ, লোকটার নাম এটিএম জাহিদ রেজা। । গত কয়েকদিন টিভিতেও দেখলাম ওনাকে।
ফারুক, কনফেস করছি। পশ্চিমে থাকি বিধায় তাদের পক্ষের কথাটাই আগে কানে আসে। তোমার লেখাটা না পড়লে আমি সেই ধারনাতেই থাকতাম। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে মুদ্রার অপর পিঠটা দেখানোর জন্য।
রাজার হস্ত চিরকাল কাঙালের ধন চুরি করেই যাবে, এই কাঙালদের নিয়তি ...............
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ইউনিভার্সিটির আয়োজিত একপার্টিতে গল্প করতে করতে এক জাপানী ভদ্রলোক বেশ জান্তার ভঙ্গিতেই বলেছিলেন যে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনের আশেপাশেও নিউক্লিয়ার গার্বেজ ডাম্প করা হয়!!!! জানিনা কতটা সত্য, তবে লোকটার বলার ভঙ্গি বেশ কনভিন্সিং ছিলো।
পরে এনিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি, কিছু পাইনি।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
বহু বছর ধরে ইউরোপের একটি উন্নত দেশে বাস করি। এ দেশেন সাধারণ মানুষের সততা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকলেও ওদের হোন্তাদের কদর্য চেহারা চোখের সামনে অনেকটাই উন্মোচিত। আফগানিস্তান, ইরাক, রুয়ান্ডা, কঙ্গো, ইউওপীয় পার্লামেন্টের মাছনীতি সহ আরো বহু পদক্ষেপে তারা প্রমান করেছে, কতোটা আগ্রাসী তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদচারণা। সোমালিয়ার তথাকথিত জলদস্যুদের কাহিনি নিয়ে যখন এখানে বিভিন্ন মাধ্যমে জানলাম, তখনই অবিশ্বাস করেছি। ওদের মানসিকতার সাথে পরিচিত বলেই অবিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি। ফারুক ওয়াসিফের লেখাটি অবিশ্বাসের কারণটি তুলে ধরেছে।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলছি। ওদেরকে চিনি বলেই, এই তথাকথিত মহামান্য বারাক ওবামার প্রতিও বিশ্বাস আনতে পারি না। তার গতকালের একটি বিবৃতিতে সে অবিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছে। গুযান্তামোর কায়েদখানায় যেসব অফিসাররা বন্দীদেরকে নির্যাতন করেছে, তাদেরকে তিনি অপরাধী হিসেবে দেখেন না। কতোটা ঘুণ্য এ বক্তব্য!
বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা ওদের পুজিবাদী অর্থনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ওদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে জড়িয়ে নিজের দেশের নাগরিকদের ভেতরেই অবিশ্বাসে প্রবল ভাবে বাড়ছে। নতুন শিকার খোঁজা খুব জরুরী । সেজন্যেই এই সোমালিয়া কাহিনি। এক ঢিলে বেশ কয়েকটি পাখি মারার পরিকল্পনা করেছে ওরা। ১) নিজ দেশের নাগরিকদের মনযোগ অন্যদিকে ফেরানো। ২) অন্যান্য উন্নতিশীল দেশগুলোকে নিজেদের দলে টানা, যেমন ভারত বা চীন। ৩) সমুদ্রসীমা দখল ও মাছ ব্যবসার প্রসার। ৪) নিজেদের আগ্রাসনকে খোরাক যোগানো ….. এরকম আরো অনেক কিছু।
সবশেষে একটি কথা।
সন্ত্রাসকে ঘুণা করি। কিন্তু সন্ত্রাসীদের বোঝার চেষ্টায় কার্পণ্য করতে চাইনা। যে সব তথাকথিক জলদস্যুরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত, কতো নিদারুনভাবে রাষ্ট্র- ও অর্থনৈতিক ভাবে কোনঠাসা হবার পর তারা এ পথটি বেছে নিয়েছে, সেটা জানা জরুরী। সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব হবে তখনই।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
বাংলাদেশের মতোই, ইউরোপ-আমেরিকার রাষ্ট্রশক্তি সেখানকার জনগণের সংগ্রামের ফসল, কিন্তু বিজয়ের পর সংগ্রামের চেতনা রয়ে গেছে সমাজে আর ফল ভোগ করেছে শাসকশ্রেণীরা।
সন্ত্রাস প্রাথমিক যুগের প্রতিরোধ। এটা বিকশিত হলে গণসংগ্রাম ও গণযুদ্ধে পরিণত হবে। সেকারণে আল কায়েদা জাতীয় জিনিসগুলো যে কাজের নয় তা দেখাতে হবে, কিন্তু সশস্ত্র প্রতিরোধকে তাই বলে বাতিল করা যাবে না, যখন আপনার কথা বলার সুযোগ নাই, বললেও শুনবে না, যখন আপনার ঘর দখল হয়ে গেছে, যখন আপনার মানুষ বন্দি, তখন প্রতিবাদ প্রতিরোধে পর্যবসিত হবেই।
যেমন কাজ তেমন প্রতিক্রিয়া, নরম শাসন নরম প্রতিবাদ থৈরি করে, যেমন থাইল্যান্ডে এখন দেখছি, আবার মায়ানমারে দেখুন, শক্ত শাসন ভিক্সুদেরও কেমন সহিংস করে তুলেছিল। ফলে এগুলো প্রেক্ষিত নির্ভর এবং কে কোথায় অবস্থান করছি তার সাপেক্ষ।
আপনার গভীর উপলব্দির সঙ্গে একাত্মতা জানাই।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
কখনো কখনো আশঙ্কাটা সত্যিই জোরালো হয়ে ওঠে যে, ভিন্ন কোন প্রেক্ষাপট দিয়ে বাংলাদেশেও সোমালিয়ার কাহিনীর পুনরাবৃত্তি হতে শুরু করে কিনা !
[শুনলাম পাকিস্তানে জারদারি সাহেব পশ্চিমাদের তীব্র বিরোধিতার মুখেও পাকিস্তানে শরীয়া আইন চালুর চুক্তিতে সই করেছেন। আজকের টিভি চ্যানেলে নাকি খবরটা প্রচার করেছে।]
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সেই ইঙ্গিতই তো পাঠ করছি বিডিআর ঘটনাসহ গত ছয়/সাত বছরের পরিক্রমায়। যত দ্রুত তা আমরা বুঝবো তত প্রস্তুত হতে পারবো।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
উত্তরের ঐ থ্রেডটা বেশি সরু হয়ে যাওয়ায় আলাদা করে লিখছি। চোখের আরাম হয় অন্তত।
প্রাথমিক ভুল বোঝাবুঝিটা এখানেই।
আমার চোখে জেনে-শুনে কোন আইন অমান্য করা মানেই অপরাধ। আমি জানি এবং মানি যে কখনও কখনও সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই আইনের পরিবর্তন আনতে হয়। আমি এরকম ক্ষেত্রে ঘটনার পরবর্তীতে ক্ষমা প্রদর্শনের পক্ষপাতী। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই আইন সংশোধন করার পর পূর্বের কোন আইনসম্মত কাজের জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না, উচিত না।
আইনের ভেতরেই সুযোগ আছে ক্ষমা প্রদর্শনের। আমি সেই পথটি অনুসরণের পক্ষপাতী। আপনার সাথে আমার মূল বিরোধটি সম্ভবত (আমার চোখে) এখানেই। আপনি বলছেন যে বঞ্চিত মানুষের বিস্ফোরণ অপরাধ নয়, তাই তাদের দোষী করা উচিত নয়। আমি বলছি যে স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যেকোন প্রকার সহিংসতা আইনের পরিপন্থী, তবে কেউ জীবনের বাস্তবতার কারণে অপরাধ সংঘটনে বাধ্য হলে তাকে বিচারের পর ক্ষমা প্রদর্শন করা উচিত।
আমি কিন্তু একটি বারের জন্যও বলছি না যে সোমালি জলদস্যু কিংবা পিলখানার বিডিআর'দের অপরাধের কারণে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক (পিলখানার ষড়যন্ত্রকারী বহিরাগত খুনি বাদে)। আমি বলছি যে এদের বিচারের সম্মুখীন করা উচিত। আদালতের কাছে তারা আত্মসমর্পন করবে, নিজের কথা বলবে। এরপর তাদের শাস্তির বিধান হবে, এবং ব্যাপক সামাজিক প্রতিরোধ দিয়েই নিশ্চিত করা হবে যেন তাদের সাজা মওকুফ হয়। এরপর আসবে আইন পরিবর্তনের প্রশ্ন।
আমি এভাবে ভাবার কারণটি বলি। আমি কোন অবস্থায়ই ব্যাক্তিকে আইনের উপর রাখতে নারাজ। আমি যদি মানুষের খাদ্যের অধিকারের দাবিতে গোটা দশেক খুন করে বিচার ছাড়াই মাফ পেয়ে যাই, তাহলে আমার মধ্যে কিঞ্চিৎপরিমাণ হলেও অহম ঢুকে যাবে, নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে বলে ধারণা করা শুরু হবে। আমি শুধু বারবার বলছি যে আইন যেন সবার উপরে থাকে। একটা মানুষও যদি আইনের উপরে উঠে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে সেই মানুষটার হাতে নিগৃহীত কেউ আইনের আশ্রয় পাবে না।
এর বাইরে গিয়ে যদি আমরা যে যার মত করে বেছে বেছে বিচারকার্য চালাই, তাহলে প্রতিটি মানুষের জন্যই একটা করে আইনব্যবস্থা থাকতে হবে। যদি কাউকে বিশেষ অবস্থায় ক্ষমা দেখাতেই হয়, তবে তার জবাবদিহিতার একটি স্থান থাকুক। "আমি, শেখ হাসিনা, এই মর্মে পিলখানার হত্যাকাণ্ডের জন্য বিডিআর'এর জওয়ানদের ক্ষমা করছি" আর "এই মর্মে শ্রেণী সংঘাতে বিপর্যস্ত বিডিআর জওয়ানদের দ্বারা সংঘটিত বিক্ষোভ ক্ষমা করে দেওয়া হল" এর মধ্যে আমি প্রথমটি বেছে নেবো। অন্যথায় আইনের খাতায় ভজঘট লেগে যাবে বলে আমি মনে করি।
কত শত বিপ্লব এভাবেই শুরু হয়ে পরবর্তীতে স্বৈরাচারীর হাতে বন্দী হয়ে গেছে, সেই বাস্তবতা তো আপনি আমার চেয়ে ভাল জানবেন। আমার ভয়টা এখানেই। এই যে এরা ভীতিকর ভাবে আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যাচ্ছে, এর চূড়ান্ত পরিণতি কী? "কর্তার ইচ্ছাই আইন" তো কোন স্বাভাবিক ব্যাবস্থা হতে পারে না।
আমি খুবই একমত। তবে আমার কথা ছিল, আমরা এদেরই হাতে আরও অস্ত্র তুলে দিচ্ছি। বুকে হাত রেখে বলুন তো, ফিলিস্তিনে বোমা ফাটিয়ে কিংবা সোমালিয়ার নৌকায় গোলাগুলি করে কি পরাশক্তিকে হটানো/হারানো যাবে? তবুও এই কাজগুলো করে যাওয়া খুবই রোমান্টিক চিন্তা। এরা চায় আমরা এগুলো করি। এই ঘটনাগুলো এরা মিডিয়ার সাহায্যে ফলাও করে প্রচার করে নিজেরা মোরাল হাই গ্রাউন্ড দাবি করে। আমরা কেন তবুও এদের হাতে এসব অস্ত্র তুলে দেবো? একটু কি অন্য পথে আগানোর সময় আসেনি?
পাশ্চাত্যের প্রতিটা মানুষই পিশাচ না, সবাই জর্জ বুশ না। এই বাস্তবতা আমাদের বুঝতে হবে। "আমেরিকান" মানেই ঘৃণা করবো, জিম্মি-হত্যা করবো, এমনটা কেন হতে যাবে? আমি তো এদের মধ্যে কোন মানবিক গুণাবলির অভাব দেখি না। এদের ভুল তথ্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে ডুবিয়ে রাখা হচ্ছে। বাইরের বিশ্বের খবর এরা পায় শুধু "মুসলমানদের পাশবিকতা"র উদাহরণের সময়। প্রতিটি মুসলমান সন্ত্রাসবাদী না হলেও প্রতিটি সন্ত্রাসবাদীই মুসলমান -- এই কথা শুনতে হয় আমাদের। সরকারের উপর এদের একেবারেই নিয়ন্ত্রণ নেই, তা না। কিন্তু এদের তো এই ভাবে পুতুলের মত ব্যবহার বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।
আপনি বাংলাদেশ থেকে যেই কর্মপন্থার কথা বলছেন, তা আমি বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় মানতাম। কিন্তু আজ আমেরিকায় বসে আমার কাছে সেটা তেমন একটা কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান মনে হচ্ছে না। আমরা যারা পরাশক্তিকে ঘৃণা করি, তাদের ঘৃণা তো হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়ে কোন লাভ নেই। প্রয়োজন হল এদের পেছনের জনসমর্থন কমিয়ে আনা। সেই দিকে আমরা কী করছি?
এই অংশটায় একটা ফাটাফাটি লেগে যাবে, তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমি নিজেও বামঘেঁষা মানুষ, কিন্তু কট্টর নই। আমি মার্ক্স পড়েছি নিজের জন্য এবং মার্ক্সের লেখার টানে। কোন রাজনৈতিক দলের রোদ-চশমা চোখে দিয়ে মার্ক্স পড়িনি আমি। সেকারণেই আমি মার্ক্সের দেখিয়ে যাওয়া সহিংস সংগ্রামের অপরিহার্যতার তত্বের সাথে একমত নই। রাজনৈতিক দল থেকে মার্ক্স শেখা মানুষেরা এই মুখস্ত বুলির কাছে প্রচণ্ড ভাবে বন্দী।
এত গোছানো তত্ব, এত উন্নত বিশ্লেষণ, আর এত এত মেধাবী মানুষের সমাগম সত্বেও সমাজতন্ত্রীরা "সাধারণ মানুষ"-এর সর্বজয়ী সমর্থন পায় না। বোধহয় আত্মশ্লাঘার বুদবুদ থেকে বেরিয়ে এসে সমাজতন্ত্রীদের এর কারণ অনুসন্ধানের সময় এসেছে। একবার স্বাধীনতা পেয়ে যাওয়ার পর গান্ধী বা মুজিবকে গালি দেওয়া খুব সহজ। টাইম মেশিন থাকলে ১৯২০ কিংবা ১৯৫৪-তে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে সমাজতন্ত্রীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া যেত, কতদূর কী করতে পারে করে দেখাতে। এই দু'জন মহানেতা না থাকলে ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশ স্বাধীন হত না।
কমিউনিস্টরা মার্ক্সের মুখস্ত বাণী অনুযায়ী লাঠিয়াল হতে পারেন, সাধারণ মানুষ লাঠিয়াল না। তারা শান্ত ভাবেই প্রতিবাদ করতে পছন্দ করেন। এই মৌলিক ব্যাপারটাই গান্ধী বা মুজিবকে তাদের এতটা কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সংগঠিত কমিউনিস্ট শক্তিগুলো কিন্তু তখন বাড়াবাড়ি, খুনোখুনি, আর হুদা প্যাঁচালের বাইরে তেমন কিছু করতে পারেনি।
প্রতিটি বড় সংগ্রামের পর 'sore loser' এর মত কমিউনিস্ট দলগুলো কান্নাকাটি করে বলে যে অন্য কেউ তাদের বিপ্লব "ছিনতাই" করে নিয়ে গেছে, নয়তো সাধারণ মানুষের তাদের মূল্য বুঝলো না, ইত্যাদি। এই ব্যর্থতাগুলোর বিশ্লেষণ কবে করবে সমাজতান্ত্রিক দলগুলো? কাজের কাজ করতে না পারলে গলাবাজি করে কী লাভ?
প্রশাসক হিসেবে শেখ মুজিব ব্যর্থ ছিলেন অবশ্যই, কিন্তু তা স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা খাটো করে না। কমিউনিস্ট ঘরানার চিন্তা করলে "সোভিয়েত ইউনিয়ন আর কিউবা তো আছে, ওরা আমাদের স্বীকৃতি-সাহায্য দেবে" ভেবে সিনেমাটিক কিছু করে বসা যেত।
অসুরের গায়ে ঢিল ছুঁড়ে তার চাবুক খেয়ে কারও কাছে নালিশ করা যায় না, তাকে অসুর বলে পরিচয় করানো যায় না। বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াইয়ে তাকে আগে আঘাত করতে দিতে হয় তার চরিত্র-উন্মোচনের জন্য। এই কাজটি গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু করতে পেরেছিলেন বলেই কাবুল থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আজও ইউনিয়ন জ্যাক ওড়ে না।
অন্য সব তত্বের ব্যাপারে আমি ভুল হলে মেনে নিতে প্রচন্ড ভাবে প্রস্তুত, তবে এই দিকটিতে না। "দেখায় দিতাম" আর "দেখায় দেবানি" বাদ দিয়ে কমিউনিস্ট দলগুলোর সত্যিকার কিছু করার সময় এসেছে। তাদের অজস্র ভাল উদ্যোগ ও আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ভাল "ফিনিশিং" পাচ্ছে না পুঁথিগত কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে। এই দিকটি বরং গান্ধী-মুজিবদের কাছ থেকে তাদের শেখা উচিত।
এটি আরেকটি মৌলিক বিভেদ। মনে হয় না খুব সহসা এর কোন সমাধান আছে।
আজ থেকে হাজার বছর আগে সেইন্ট অগাস্টিন বলেছিলেন
An unjust law is no law at all.
আইন তো তৈরী করে সমাজের ওপর তলার মানুষেরা। আইন যদি সব মেনে চলতে হত, তবে এই আমেরিকায় কালো মানুষের মুক্তি কখনো আসত না, একজন সূর্য সেনের জন্মও কখনো হতো না। তবে তোমার পয়েন্টটাও বুঝতে পারছি। আসলে কিছুই বলার নাই
@ ইশতিয়াক>
সব কথার উত্তর হয় না, যেমন সরল বর্গীয় বৃক্ষেরা কেউ কারো ছায়ায় বাড়ে না।
এ আলোচনা এগুলে আইন, সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ইত্যাদি নয়ে চমৎকার খননমুখী আলোচনা হতে পারতো। কিন্তু সময়াভাবে চারটি পয়েন্টের উপসংহার দেওয়াই ঠিক মনে করছি,
১.
আমি আমার ও আপনার অবস্থানের এই পার্থক্যটা মনে রাখছি এবং বুঝতেও পারছি আপনার যুক্তির পাটাতনটি কোথায় পাতা।
২. আমি আপনার অপরাধ খোঁজা ও শাস্তির নিশানাটি একবারের জন্যও নির্যাতিতদের দিকে রাখার পাশাপাশি নির্যাতনকারীদের দিকে ঘুরিয়ে দিলে কি হয় তা দেখার আশা করছি। এই যেমন, ওবামা গুয়ানতানামো বে কারাগারের নির্যাতকদের নির্দোষ করেছেন 'উচ্চতর' কারণে, ওবামার নিবিড় সমর্থক হিসেবে আপনার কাছে তারও বিচার-পর্যালোচনা দাবি করছি।
৩. ব্রিটিশ আমলে সরকারি দলিলে অজস্র গ্রাম ও ট্রাইবগুলোকে 'ডাকাতের গ্রাম' বা 'অপরাধী জাতি' হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। যেমন তাদের ভ্রমণ-চলাচল নিয়ন্ত্রণ। ঘরে দা-বটি পর্যন্ত রাখা বারণ ইত্যাদি। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সেটা ছিল বিদ্রোহীদের গ্রাম বা বিদ্রোহী জাতি। ইংরেজ শাসন অপসারণে তাদের সরাসরি ভূমিকা ভারতীয় ও ব্রিটিশ ধারার মেইনস্ট্রিম ইতিহাসবিদদের কাছে স্বীকৃত।
আজকের যারা ফেইলড স্টেট, সন্ত্রাসী জাতি, বা মুসলিম বলে সন্দেহভাজন, মনে রাখবেন সাম্রাজ্যের জোয়াল আলগা করায় তাদেরও ভূমিকা রয়েছে। আমি আপনার কাছে তাদেরও স্বীকৃতি আশা করছি।
৪. এভাবে অভিযুক্ত করে আগ্রাসনের লক্ষ্যবস্তুকে অপরাধী বলে প্রচার দেওয়া, তাদের থেকে নিজেদের আইনের দৃষ্টিতে উচ্চতর প্রতিপন্ন করা এবং পরিশেষে জঙ্গি বা আল কায়েদা খেতাব দিয়ে হত্যা শুরু করা, নয়া সাম্রাজব্যাদী উপনিবেশবাদের কর্মকৌশল। অচিরেই আপনি জলদস্যুদের সঙ্গে আল কায়েদার নাম উচ্চারণ করতে দেখবেন এবং দেখবেন, এর মাধ্যমে আফ্রিকায় ওয়ার অন টেররকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে। সেজন্যই বলেছিলাম আপনি আমার উনিশ নম্বর কমেন্ট ও তার সঙ্গের লিংকগুলো দেখে বলুন, বিষয়টা কেবল আইন-শৃঙ্খলা সমস্যা কী না। একইভাবে আবারো বলি, বিডিআর-ঘটনাও আইন-শৃঙ্খলা সমস্যা না। তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ। দয়া করে একে আবার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলবেন না। এর অনেক কিছুই দৃশ্যমান, সামান্য যা অদৃশ্য, তার হিসাব আমরা দৃশ্যমান আলামত থেকেই বুঝতে পারি।
আমার আর কিছু বলবার নাই আপাতত। অনেক ধন্যবাদ।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
লেখা পড়লাম, সবার মন্তব্য পড়লাম। দুদিন পরপর সোমালিয়ার জলদস্যুদের কথা পত্রিকায় আসে, আর বারবার ভাবতাম- ওদের সমস্যা কী?
এর আগে কোনো একজন অতিথি লেখক এ বিষয়ে ছোট্ট একটা পোস্ট দিয়েছিলেন। সেখান থেকে একটা আইডিয়া হয়েছিলো- একমাত্র দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেই মানুষ আইন হাতে তুলে নেয়। এই লেখার পর সেটি আরো পরিষ্কার হলো।
সবকিছু পড়ার পর নিজের অবস্থানটা আবারও ভাবলাম- দেয়ালে পিঠ ঠেকলে আমি কখনোই দাস হবো না, এর চেয়ে দস্যুবৃত্তি অনেক সম্মানজনক।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন মন্তব্য করুন