বার্ড ফ্লু-র পর সোয়াইন ফ্লু, কতটা প্যানিক কতটা সত্য আর কতটা ব্যবসা

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি
লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/০৪/২০০৯ - ২:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বার্ড ফ্লু প্যানিকের পর এখন এসেছে সোয়াইন ফ্লু। বিতর্ক যে, এটা কতটা ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মতো প্রপাগান্ডা-সত্য না বাস্তব সত্য? নাকি অর্ধসত্য। মতটা এই যে, এটা যতটা না বড় ঘটনা, তার থেকে বেশি প্যানিক তৈরি করা হচ্ছে ভ্যাক্সিন বিক্রি ব্যবসার জন্য।

এখানে F. William Engdahl এর লেখার উদ্ধৃতি এবং তার নীচে নীচে মাইক ডেভিসের একটি লেখার সংক্ষিপ্ত অনুবাদ। সময়াভাবে গুছিয়ে লিখতে পারলাম না বলে দুঃখিত।

Tamiflu and Rummy
In October 2005 the Pentagon ordered vaccination of all US military personnel worldwide against what it called Avian Flu, H5N1. Scare stories filled world media. Then, Defense Secretary Donald Rumsfeld announced he had budgeted more than $1 billion to stockpile the vaccine, Oseltamivir sold under the name, Tamiflu. President Bush called on Congress to appropriate another $2 billion for Tamiflu stocks.

What Rumsfeld neglected to report at the time was a colossal conflict of interest. Prior to coming to Washington in January 2001, Rumsfeld had been chairman of a California pharmaceutical company, Gilead Sciences. Gilead Sciences held exclusive world patent rights to Tamiflu, a drug it had developed and whose world marketing rights were sold to the Swiss pharma giant, Roche. Rumsfeld was reportedly the largest stock holder in Gilead which got 10% of every Tamiflu dose Roche sold. 14 When it leaked out, the Pentagon issued a curt statement to the effect that Secretary Rumsfeld had decided not to sell but to retain his stock in Gilead, claiming that to sell would have indicated something to hide.’ That agonizing decision won him reported added millions as the Gilead share price soared more than 700% in weeks.
.........
Since the outbreak of Swine Flu Panic (not Swine Flu but Swine Flu Panic) sales of Tamiflu as well as any and every possible drug marketed as flu related have exploded. Wall Street firms have rushed to issue ‘buy’ recommendations for the company. ‘Gimme me a shot Doc, I don’t care what it is…I don’ wanna die…’

Panic and fear of death was used by the Bush Administration skilfully to promote the Avian Flu fraud. With ominous echoes of the current Swine Flu scare, Avian Flu was traced back to huge chicken factory farms in Thailand and other parts of Asia whose products were shipped across the world. Instead of a serious investigation into the sanitary conditions of those chicken factory farms, the Bush Administration and WHO blamed ‘free-roaming chickens’ on small family farms, a move that had devastating economic consequences to the farmers whose chickens were being raised in the most sanitary natural conditions. Tyson Foods of Arkansas and CG Group of Thailand reportedly smiled all the way to the bank.

ফু ভাইরাস এবং খাদ্য ব্যবসা

মাইক ডেভিস

মেক্সিকোয় এখন বসন্ত। পর্যটন দ্বীপ কানকুন থেকে দলে দলে মানুষ ফিরছে অদৃশ্য কিন্তু মারাত্মক এক স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে। মেক্সিকান সোয়াইন ফু সম্ভবত জন্মেছে কোনো বড় শুকর খামারের বিষ্ঠার গর্ত থেকে। শেষ বড় মহামারির নাম ছিল হংকং ফু, ১৯৬৮ সালে। তার থেকে এই ফ্লু-র ছড়িয়ে পড়ার গতি অনেক বেশি। এই ভাইরাসটির ভয়াবহতা কতটা তা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে সার্স ভাইরাসের থেকে এটি কম ক্ষতিকারক হলেও এর স্থায়িত্ব সার্স-এর থেকে বেশি। এটা আরেকটু শক্তিশালী হওয়ার ক্ষতি যে কোনো বড় যুদ্ধের থেকে বেশি হওয়ার কথা।

এই ঘটনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) ব্যর্থতাই বেশি। তারা ভেবেছিল, স্থানীয় জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা যা-ই হোক তাদের দ মেডিকেল আমলাতন্ত্রই যেকোনো মহামারি ঠেকাতে পারবে। ১৯৯৭ সালে হংকং-এ H5N1 ভাইরাসে মৃত্যু হওয়ার পর হু বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে মিলে মহামারি রোধের একটা কৌশল দাঁড় করায়। এর কৌশল আর কিছুই না, মহামারি-আক্রান্ত এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং তারপর ঐ এলাকার সব মানুষকে ধরে ধরে ভ্যাক্সিন (যদি থাকে) দিয়ে দেওয়া। সন্ত্রাস দমনের কায়দায় ভাইরাস দমনের এই কৌশল সবেক্ষেত্রে কাজে দেবে না। কারণ, এখনকার অনুজীবানুগুলো দ্রতই দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়তে পারে, ঠিক যেমনটা বার্ড ফ্লু-র বেলায় হয়েছিল।
যে সমস্ত কারণে মহামারির জন্ম হয় এবং যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ সেসব কারণ দূর করা এবং বিদেশের সেসব এলাকাকে সহায়তা করার বদলে ব্রিটেন ও আমেরিকার মতো ধনী দেশগুলো কেবল নিজেদের জৈবগবেষণায় টাকা ঢেলেই খালাস। এরই ফল হলো দৈত্যাকারের ওষুধ কোম্পানির উদয়। অথচ এ বিপরীতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো দাবি করে আসছে যে, অ্যান্টি-ভাইরাল টিকাগুলো ওষুধ কোম্পানিগুলোর মুনাফালোভী ব্যবসার হাত থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক, যাতে সরকারি ভাবেই এগুলোর উৎপাদন ও বন্টন করে সবার জীবন বাঁচানো যায়।

সোয়াইন ফ্লু আবারো সেই প্রয়োজনটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, স্বাস্থ্য তদারকি, বৈজ্ঞানিক ও রোগনিয়ন্ত্রণকারী অবকাঠামো, সবার জন্য মৌলিক চিকিৎসা সেবা এবং বৈশ্বিকভাবে জীবনরাকারী ওষুধের সহজপ্রাপ্যতা সৃষ্টি করা দরকার। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা মনে হয়, এর দায়িত্ব বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির ব্যবসার হাতেই ছেড়ে রাখতে চায়। যেমন তামিলফ্লু-র প্রতিষেধকের একচেটিয়া নিয়ে নিয়েছে রোশে কোম্পানি। তাই দেখলাম যে, এত বড় মহামারির আশঙ্কার মুখেও উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদতে কোনো প্রস্তুতিই নেই।

অথচ ছয় বছর আগেই বিখ্যাত সায়েন্স পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যে, ‘কিছু বছর স্তিমিত থাকার পর সোয়াইন ফু খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে’। ১৯৯৮ সালে মন্দার শুরুতে এটা সনাক্ত হওয়ার পর ভাইরাসটি এর আদি গঠন থেকে কিছুটা পরিবর্তিত হয়। প্রথম নর্থ ক্যারোলিনার একটি শুকরের খামারে দেখা দেওয়ার পর প্রতি বছরই এর নতুন রূপ দেখা দিতে থাকে। এই হাইব্রিডগুলোর একটি জাত মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। তখন থেকেই বিশেষজ্ঞরা সোয়াইন ফু ঠেকাবার নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু মার্কিন সরকার কাল্পনিক জীবাণু অস্ত্র প্রতিরোধে শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও বাস্তব ভাইরাসের বিপদ মোকাবেলায় কিছুই করেনি। ইতিমধ্যে যে প্রক্রিয়ায় বার্ড ফু তৈরি হয়েছিল সেই প্রক্রিয়াই সোয়াইন ফু-র বিবর্তনকে এগিয়ে দিয়েছিল। ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, দক্ষিণ চীনের অতি উৎপাদনশীল যান্ত্রিক কৃষিই হলো ইনফুয়েঞ্জার রূপান্তরের কারণ। কিন্তু কর্পোরেট বাণিজ্যিক গবাদি পশু উৎপাদন এ বিষয়ে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৬৫ সালে আমেরিকায় দশ লাখ খামারে ৫ কোটি তিরিশ লাখ শুকর ছিল। এখন সাড়ে ছয় কোটি শুকর পালিত হয় মাত্র ৬৫ হাজার কেন্দ্রে। সাবেকি পারিবারিক খামারের জায়গায় চলে এসেছে বিরাট বিরাট বাণিজ্যিক খামার। সেখানে নরকের নোংরা, দুর্গন্ধ, গরম, মলমূত্রের বিরাট ভাণ্ডার ও দূষণ যা প্রকৃতিকে আগে কখনো সইতে হয়নি। সেখানে যে প্রাণীরা থাকে তাদের রোগপ্রতিরোধ মতাও খুবই দুর্বল। সেই পরিবেশে শুকরগুলো পরস্পরের সঙ্গে এবং শরীরের বিভিন্ন জৈব উপাদান মেশামেশি হতে হতে সৃষ্টি হয় ভয়ংকর জীবাণু।

গত বছর মার্কিন পিউ রিসার্চ সেন্টার তাদের এক যুগান্তকারী প্রতিবেদনে জানায় যে, ‘শিল্পের মাধ্যমে বিরাট আকারে গবাদি পশু উৎপাদন ত্রেগুলোতে মারাÍক সব ভাইরাসের চক্র সৃষ্টি হয়ে চলেছে। এতে করে এসব থেকে জন্ম নেওয়া সাধারণ ভাইরাসও একপর্যায়ে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার মতো রোগ-ব্যাধির জš§ দিতে পারে।’ তাঁরা শুকর কারখানাগুলোতে তিকারক জীবাণুনাশক ব্যবহার নিয়েও আপত্তি তোলেন। কিন্তু এসব কোম্পানি অমিত মতাধর, যেমন স্মিথফিল্ড ফুডস (শুকর ও গরুর মাংস) এভং টাইসন (মুরগি)। এরা পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণাকে বাধা দেয় এবং এসব প্রতিষ্ঠানে তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও জানায়। এটা এখন বৈশ্বিক শিল্প, সুতরাং বিশ্বব্যাপী এদের রাজনৈতিক মতাও কম নয়। যেমন ব্যাংকক ভিত্তিক যে দানবীয় কোম্পানি শারোয়েন পকফান্ড বার্ড ফু ভাইরাসের জন্য দায়ি, তাদের মাধ্যমেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বার্ড ফু ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এদের কোনো শাস্তিই হয়নি।

তাই আবারো সোয়াইন ফু ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়গুলো সব শুকর উৎপাদন কোম্পানিগুলো আর ওষুধ কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট পাথুরে দেয়ালে মাথা খুঁড়ে মরবে। কিন্তু আগুন কে লাগিয়েছে তা গোপন থাকবে না। এর মধ্যেই মেক্সিকোর গণমাধ্যমে আসতে শুরু করেছে যে, এই মহামারির উৎপত্তিস্থল সেখানকার ভেরাক্রুজ প্রদেশের মার্কিন স্মিথফিল্ড খাদ্য কোম্পানির আশেপাশে।

এর থেকেও মারাত্মক সংবাদ হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’র মহামারি মোকাবেলা কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এর মানে জনস্বাস্থ্যের আরো অবনতি এবং জীবন বাঁচানো ওষুধের ওপর বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোর আরো একচেটিয়া কায়েম হওয়া। পরিণামে অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও মাংস উৎপাদনের ফলে আমাদের এই গ্রহজুড়ে আরো আরো বিপর্যয় নেমে আসা।

জেড নেট থেকে নেওয়া, মূল প্রবন্ধ ক্যাপিটালিজিম এন্ড দ্য ফ্লু

মাইক ডেভিস : মার্কিন অধ্যাপক ও গবেষক। তাঁর আলোচিত গ্রন্থ # n Praise of Barbarians: Essays against Empire (2007) ও
Evil Paradises: Dreamworlds of Neoliberalism, edited with Daniel Bertrand Monk (2007)

Swine Flu Scare: Stock Market Bonanza for "Politically Connected" BioTech Companies