একটা কলার গুঁড়ির ভেলা উজান থেকে ভাসতে ভাসতে এখানে এসে স্রোতের পাকে ঘুরছে অনেকক্ষণ। ভেলায় কেউ নাই। এক সময় আরেক স্রোত এসে তাকে টেনে নিয়ে যাবে আরেক দিকে। কিন্তু তা কি আর দেখা যাবে? ওদিকে কুয়াশা ঘনিয়ে আসছে। এই ভরা গরমে কুয়াশা কোথায়, জলরেণু আর দূরের চরে গেরস্থ বাড়ির চুলার ধোঁয়া বাতাস বেয়ে বেয়ে নদীর পিঠে পরতের পর পরত জমছে। ঘন হয়ে জমছে জলসীমান্তে। হা, সকল অস্পষ্টতায় কেন তার মুখ জাগে!
ভেলাটা আর দেখা যাচ্ছে না। নৌকা চলে এসেছে মাঝনদীতে। গলুইয়ে বসে শিকারু আর নাহারুল মিলে কিছু একটা টানছে। ওদের ভাইরা যমুনার চরে ডাকাতি করে। তাই ভর সন্ধ্যায় মাঝনদীতে ভাসতে ভয় নাই। ওই চরে ওরাই ডাকাত ওরাই গেরস্থ। নাহারুলের বউ কয়দিন আগে চলে গেছে। লোকটা এত নদীতে নদীতে ঘোরে! শিকারুও এখন বেকার। সাহেবরা কম আসে। শিকারু পাকা শিকারি। সাহেবদের নিয়ে চলে যায় নদীর আরো ভেতরের চরে পাখপাখালির রাজত্বে। ওর পকেটে কত সাহেবের নাম্বার। বলে গেছে আসবে, ডাকবে। আসেনি, ডাকেনি।
নৌকা এখন স্থির। ওপরে একটা দুটো করে তারা ফুটছে। সরের মতো ভাসা কুয়াশায় তলার ঘোলা জল আরো মায়াবি হয়েছে। হয়তো কুশের মতো জাগ্রত একটি দুটি তারা থেকে কিংবা সূর্যের মৃদু অবশেষ ঘোলা আভা হয়ে মিশে রয়েছে কুয়াশার সঙ্গে। তার মধ্যে,
-ভেসে যায় ভেসে যায় আলোকরেখায় অলৌকিক সেই তরণী -
কোথাও কি আছে বৈতরণীর ঘাট?
Ôনৌসীমান্তে খুঁটি পুঁতে বাঁধা আছে অলৌকিক জল,
টেনে টেনে কাছে আনে মানুষের সীমিত অতল|
নদীর বন্ধন আজ খুলে গেছে হেই অবতার
আগম নিগমের সাঁকো তবু ভাঙ্গা|Õ
দিক আছে কোথাও, কিন্তু এইখানে এই অলৌকিক চরাচরে তার চিহ্ন লেশমাত্রও নাই। কোন সভ্যতা থেকে কোন সভ্যতায় পাড়ি দিচ্ছি আমরা? সেতু বিনা, মাধ্যম বিনা! এই কুয়াশার ঘের থেকে কী আর বেরুনো যাবে?
নৌকার সরু গলুই যেদিকে উঁচিয়ে আছে মনে হচ্ছে সেদিকেই নিশানা পাতা। কুয়াশার ঢলের মধ্যেও ওই জায়গাটি বেশি ঘন। যেন সুড়ঙ্গ পথ একটা মেলে গেছে আমার সামনে। ওই খাঁ খাঁ ভেলাটিও কি ওপথেই নেমে যাবে আরো ভাটিতে? একা একা ও স্বগ্গে যাবে কীভাবে, বেহুলা যদি না নাচে? কীসে খেয়ে ফেললো ওর লখিন্দরকে, কোথায় ঝরে গেল ওর বেহুলা। ছিন্ন খঞ্জনার মতো করে কেউ কি কাঁদছে জলের নীচে?কেঁদেছিল তখন?
Ôনিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে,
বহুদিন হলো, দাঁড়িয়েছি এসে মেঘের কিনারে এসে|
এখানে তো দেশ নাই, দেশের ঘ্রাণ নাই কোনো
কেবল ভাষায় আন্ধার টান আর বুকে উল্লসিত ধুলো গান
ভেসে ভেসে কেবলই সন্নিহিতে আসে
আর গায় কালযমুনার গান,অদৃষ্ট অপার।Õ
মন্তব্য
বহুকাল পর তোমার লেখা পড়লাম...কি খবর ফারুক?
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এনে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
এই-ই আরকি! অকাল বোধন!
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
স্বাগতম সচলায়তনে । প্রায়ই সমকালে লেখা দেখি । এইখানে দেইখা ভাল্লাগতেছে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
লেখা পড়ার অপেক্ষায় ছিলাম।
ভালো লাগলো লেখাটা। ধন্যবাদ।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাল লিখেছেন। সচলে স্বাগতম।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
দুর্দান্ত লাগল। সচলে স্বাগতম।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
ভাল লেখা!
স্বাগতম ফারুক ওয়াসিফ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এই হইল ঘটনা....
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ভালো লাগলো । আশা করি নিয়মিত হবেন ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ফারুক ভাই, কি অবস্থা? বহুদিন পর আপনার হদিস পাইলাম...। তানিমরে জিগাইতাম... যাই হোক, স্বাগতম...।
নতুন মন্তব্য করুন