''এ রকম কোনো এক ‘এক্স’-এর উদয় জামায়াতকে এক ধাক্কায় অনেক ওপরে নিয়ে যেতে পারে। আর সেই উঁচু মিনারে দণ্ডায়মান হয়ে সে যা করবে, তা বিশুদ্ধ ‘দেশপ্রেম’ না হোক, ‘মুক্তিযুদ্ধের সমান না হোক, হবে গুরুত্বে তারই প্রতিপক্ষ। আর জনগণ এমনই বিহ্বল থাকবে যে, তৈরি হওয়ার আগেই একটা ওলট-পালট ঘটে যাবে। এবং সেই ‘উল্টানো একাত্তরে’ যুদ্ধাপরাধীদের আর যুদ্ধাপরাধী মনে হবে না, মনে হবে ত্রাতা!''
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল, বর্গী কি এলো দেশে? না পাড়াও জুড়ায়নি খোকাও ঘুমায়নি, কিন্তু বর্গী এসেছিল এবং লড়াই হয়েছিল। বর্গীদের তাড়ানো গিয়েছিল। কিন্তু রয়ে গিয়েছিল বর্গীর সঙ্গী ঠগী। এবং তারা এত ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিল যে, তাদের বিচারের দাবি তোলায় এক বীর শহীদের মাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল! ওই কাঠগড়াই সাক্ষি, সেখানে কোনো যুদ্ধাপরাধীকে কষ্মিনকালেও দাঁড়াতে হয়নি। তাহলে কি খোকারা ঠিকঠাক জেগে ছিল? বুড়ো খোকারা না হোক আজকের ছোট খোকারা? তাদের বয়সীরাই তো রক্তের সাগর থেকে একটি দেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু ৩৬ বছরেও যখন কেউ কথা রাখেনি, তখন খোকারা আবার জাগার ডাক পাচ্ছে। কারণ আবার বর্গীদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সেই আওয়াজে যারা প্রথমবার বর্গী তাড়িয়েছিল, যারা সরস্ব হারিয়েছিল, যাদের আপনজন খুন হয়েছিল তারা আড়মোড়া ভাঙছেন, তাদের ফরিয়াদের হুতাশন আবার জ্বলছে। চেতনার শানপাথরে আবার ঘষা লাগছে। আরো বিষ্ময়কর যে, দেশের সরকারই এবার বলছে বিচার হওয়া উচিত, সেনাপ্রধান বলছেন বিচার হওয়া উচিত, নির্বাচন কমিশনার বলছেন হ্যাঁ, তাদের প্রার্থিতা রদ করা উচিত। তাহলে কি ৩৬ বছরেও যা হয়নি তা এবার হবে! বাঁজা গাছে ফল ফলবে, প্রহরীদের জং ধরা সতর্কতা আবার ঝিলিক দেবে বাংলার সোনালি রোদে? কিন্তু পুড়ে পুড়ে আমরা শিখেছি, যা চাই হয় তার বিপরীত। এ দেশে এটাই চল। তাই উল্লসিত হওয়ার কিছু নাই।
পূর্ণ সৈনিক হয়ে ওঠার আগে আনাড়ি রংরুটদের একই রাস্তায় বারবার ড্রিলমার্চ করে যেতে হয়। আনাড়ি সৈনিকের মতো আমাদেরও ইতিহাসের একই রাস্তায় ফিরে ফিরে লেফট-রাইট করতে হচ্ছে। যা-ই করি, দেখি যে সেই পুরনো ছকেই দাঁড়িয়ে আছি। ১৯৭২ সালে বিচার হতে পারত, হয় নাই। ১৯৮১ সালে আরেকবার জোরেশোরে আওয়াজ উঠেছিল, মুক্তিযাদ্ধা সংসদের ডাকে জেলায় জেলায় হরতাল হয়েছিল। কিন্তু কিছু হয় নাই। পরে জানলাম ওটা ছিল এরশাদের গ্রহণযোগ্য হওয়ার কৌশল এবং তিনিই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপদেষ্টা। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত জাহানারা ইমামের ডাকে সত্যি সত্যি দেশজোড়া জাগরণ ঘটছিল এবং বিশ্বাস হতে যাচ্ছিল যে, এবার একটা কিছু ঘটবেই। সেবারও অনেক গরিমাময় নেতা-নেত্রী ছিলেন তার সঙ্গে কিন্তু যেই জাহানারা ইমাম মারা গেলেন সেই আবার সব পড়ে গেল। কোন দুশমন আমাদের ইতিহাসের বাঁদর বানিয়ে বারবার তেল মাখা বাঁশে ওঠায়! যেবার যত ওপরে উঠি, সেবার পতন হয় তত মারাত্মক এবং তত ওপর থেকে আমরা পড়ি।
পরিহাস কখনো কখনো অতি নির্মম হয়। একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানি জান্তা এখানে এক দালাল সরকার খাড়া করেছিল। সেই সরকারের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীরা যতটা ক্ষমতাবান ছিল তার থেকে বেশি মতা তারা অর্জন করে ফেলল সেই বাংলাদেশে! যে বাংলাদেশকে তারা অঙ্কুরেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আশির দশক থেকে তারা মন্ত্রি-এমপি হওয়া শুরু করে, ১৯৮৫ থেকে তারা এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গী হয়। তাদের হাতে এখন একাত্তরের থেকে মারাত্মক বেসরকারি বাহিনী আছে। রাষ্ট্রের সব যন্ত্রে তাদের লোক বসানো। এক অর্থে তারা এখন বাংলাদেশের সমাজ-রাষ্ট্রের গুরুপূর্ণ অঙ্গ। তারা এখন বাংলাদেশের ক্ষমতাব্যবসার কনিষ্ঠ অংশীদার কিন্তু তাদের সমর্থন ছাড়া বড় দুটি দলের কেউই মতায় বসতে পারে না। এভাবে শক্তির দিক থেকে শাসক শ্রেণীর তৃতীয় কিংবা ভোটের বিচারে চতুর্থ বৃহত্তম দল হিসেবে জামায়াত আজ বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। ওদিকে ওয়াশিংটনের যে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা আমাদের ‘ভাল’র জন্য পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সে সময়ের মহৃল্যে সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলেন, তারা রায় দিয়েছেন, জামায়াত মডারেট ও গণতান্ত্রিক দল। তারা নতুন কিছু বলেননি। এর আগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আট ও পাঁচ দল সেই স্বীকৃতি দিয়েই তো তাদের সঙ্গে নিয়েছিল। সে কারণেই তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘাতককুল শিরোমণির দরবারে গিয়ে তার পায়ে কুর্নিশ করে এসেছিলেন। ভাগ্যিস তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। তাহলে দুর্মুখেরা বলত, রাষ্ট্রপ্রধানই যখন গোলাম আযমের পায়ে চুম্বন করে এসেছেন, তখন আর কথা কী? বাংলাদেশ তো তাদের পদতলে।
কলঙ্ক ও পরাজয়ের ইতিহাস মানুষ ভুলে যেতে চায় এবং সেটা ভুলিয়ে দেওয়া হয়। কারণ তাতে শত্রু-মিত্রের ভেদ ঘুচে যাবে। কেন এবং কার কাছে পরাজয় হয়েছিল সেটা আর ঠাহর হবে না। লোকে তখন শেয়ালের কাছেই মুরগি গচ্ছিত রাখতে শুরু করবে। সে কারণেই পরাজয়ের স্মৃতি জনগণের হৃদয়ে জাগরূক রাখা দরকার। যারা একাত্তরে সাবালক ছিলেন, জনগণের সেই অংশ ভোলেন নাই কীভাবে এক কোটি বাঙালি অর্থাত্ বাংলাদেশটাই স্রেফ পায়ে হেঁটে ভুখা-নাঙা বেশে ওপারে গিয়ে হাজির হয়েছিল। বাদবাকি সাড়ে ছয় কোটি সোনার বাংলার শ্মশানের মধ্যে ইস্পাতকঠিন পণ করে বাঁচার সংগ্রাম করেছে। কোথায় গেল সোনার বাংলার প্রতিশ্রুতি? কারা খেয়ে ফেলল সেটা? শুনি তো বিদেশিরা নাই, বাংলাদেশ চালায় বাঙালিরা। বহুদিন থেকে দেশ স্বাধীন।
সমাজ সেই স্মৃতি আগলে রেখেছে কিন্তু রাষ্ট্র তার মান রাখে নাই। শাসকদের মনে কখনো সেই ধনুর্ভাঙা পণ জাগে নাই, যা একাত্তরের বিপর্যয়ের মধ্যে কোটি কোটি বাঙালির মনে সংকল্প জাগিয়েছিল। আজ আবার সেই সংকল্পের নবায়নের ডাক আসছে। এবারও সেক্টর প্রধান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা নেমেছেন। দেখা যাক। এবার আসতে যাচ্ছে কোন নাটক?
এই ডাক নতুন নয়, নতুন যা তা হলো অনানুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এই ডাকের উদ্গাতা হওয়া। উদ্গাতা তাকেই বলে, যিনি মন্ত্র জাগান। ২০০৭ সালের মার্চে স্বাধীনতা দিবসের রাজকীয় উদযাপনের মধ্যে কে জাগিয়েছিলেন একাত্তরের মন্ত্র? মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতৃত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আহ্বানের সঙ্গে এক নিঃশ্বসে কে উঠিয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্ন? যারা তা করেছিলেন, তারা এ সরকারেরই প্রাণভোমরা। ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে যে দাবি ওঠে, বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন কমিশনের কাছে তারই প্রতিধ্বনি করে। এরপর ডিসেম্বরের ঠিক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান এবং নির্বাচন কমিশনার পরোে সেই দাবির যৌক্তিকতা ও বৈধতার স্বীকৃতি দেন। এছাড়া প্রতিটা নির্বাচনের আগে আগে রুটিনমাফিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও নির্বাচনে অযোগ্য করার দাবি ওঠে। কিন্তু এবারে সেই দাবি আগের মতো করে ওঠেনি। এটা নতুন এবং ধারণা করি, এর মধ্যে দিয়েই আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতির সমীকরণ নতুন সাজ নেবে। যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অপরাধ রাষ্ট্রেদ্ব্রর বিরুদ্ধে। অতএব বিচার করতে কেবল সক্ষম রাষ্ট্রই। তা না করে কেন রাজনীতিতে সংঘাতের জমিন তৈরি করা হচ্ছে, সমাজকে বিশেষ এক গন্তব্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে সেটাও এক প্রশ্ন বটে।
সবাই মানেন, ১১ জানুয়ারির পর রাজনীতি আর আগের মতো নেই। থাকবেও না। যে কারণে ১১ জানুয়ারি ঘটে সেই কারণেই রাজনীতি আর আগের মতো থাকবে না। সেটা অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু এখনকার প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী দিনের সেই নতুন রাজনীতিতে জামায়াতের ভূমিকা কী হতে পারে? ঘৃণা থেকে নয়, রাজনীতির পর্যবেক্ষক হিসেবেই একটি প্রশ্ন বারবার মনে উঁকি দেয়, যে রাজনৈতিক দল তার দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শত্রুর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইতিহাসের কুখ্যাততম গণহত্যা চালিয়েছে; সেই দলটি ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী নিধনের পরও, বাহাত্তর সালে কীভাবে ভাবতে পারল যে, আবার তারা এদেশে রাজনীতি করবে এবং রাজনীতির প্রেশার গ্র্রুপ থেকে একদিন সরকারে প্রতিষ্ঠা পাবে? কেন তারা জিয়াউর রহমানের আমলে সেই একই একই নেতৃত্ব নিয়ে এদেশে রাজনীতিতে প্রকাশ্যে এলো? দুটি কারণ থাকতে পারে। যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও স্বাধীনতাবিরোধিতার অমোচনীয় কলঙ্ক সত্ত্বেও তারা হয়তো নিশ্চিত ছিল যে, রাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোনো কোনো ভাগীদার তাদের একদিন আলোর নিচে নিয়ে আসবে। দ্বিতীয়ত, তারা এমন একটা ঘটনা সংঘটনের জন্য চেষ্টা করবে, যা হবে একইসঙ্গে একাত্তরের সংশোধন এবং একাত্তরের কাছাকাছি না হলেও জাতীয় মাপে জনপ্রিয়। প্রথম পরিস্থিতি ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে বলে তা নিয়ে তর্ক নাই। দ্বিতীয় পরিস্থিতির জন্ম হওয়া অর্থত একটি ‘উল্টা একাত্তর’ বা মুক্তিযুদ্ধের এ্যান্টিথিসিস ঘটা যতই অসম্ভব মনে হোক, দেশীয় পরিস্থিতি, উপমহাদেশের রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক মোড়লদের চলন-বলনে অনুমান হয় অচিরেই তেমন জিনিস ঘটবে। অনুমান তো অনুমানই এবং যতক্ষণ তা প্রমাণিত না হয়, ততণ ওটা হাইপোথিসিস। হাইপোথিসিসটি এই : যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে রাজনীতিতে যে উত্তাপ সৃষ্টি হবে, তাতে কমের মধ্যে তাদের অনেকে নির্বাচনে প্রার্থিতার সুযোগ হারাবে। অন্যদিকে দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে মাইনাস হয়ে যাবেন দুই প্রধান নেত্রী ও তাদের প্রধান নেতারা। এ রকম শূন্যতার মধ্যে যে নির্বাচন হবে, তাতে বিনা কারচুপিতে তারাই জয়ী হবেন যারা দুদকের ধোলাই মেশিনে ‘সংস্কৃত’ এবং তুলনামূলক কম জনভিত্তিসম্পন্ন। যদি যুদ্ধাপরাধ প্রশ্নে নির্বাচন ভন্ডুলও হয় তাহলেও মূল সমীকরণ একই থাকবে। এক সারিতে থাকার জন্য ‘সংস্কৃত’-রা একটি জাতীয় সরকারই কায়েম করবেন এবং সংস্কার কর্মসূচির অনেক অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করবেন ও সেসবের আইনি বৈধতা দেবেন। এটার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের প্রাসঙ্গিকতা ফুরাবে। সেটাই এ সরকারের এক্সিট রুট।
অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়তেই থাকবে। কমবে না অনিয়ম-অনিশ্চয়তা। নানা বিদেশি চাপ যখন সাঁড়াশির মতো তাদের চেপে ধরবে আর তারা গণবিক্ষোভে টালমাটাল হবেন, তখন আবিভূত হবে জামায়াত ও তাদের মিত্ররা। শূণ্য রাজপথে তারাই থাকবে বিরোধী দলের ভূমিকায়। নানা ঘটনা তখন ঘটতে পারে যাতে জামায়াতকে দেখা যাবে জনগণমন-অধিনায়কের ভূমিকায়। ভোটে না দাঁড়াতে পারায় নিজেদের নির্যাতিত হিসেবে উপস্থিত করার সুযোগ তাদের থাকবে।
ক্যালকুলাসে তথা গণিতের সমীকরণে সবসময় একটা ধ্রুব ‘এক্স’ ধরে নেওয়া হয়। নইলে অঙ্ক মেলে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও সে রকম ‘এক্সের’ আবির্ভাব ঘটতে দেখা যায়। হঠাত বিনা মেঘে বর্জ্রপাতের মতো শেখ মুজিবের সপরিবারে নিহত হওয়া, ক্ষমতার মধ্যগগনে অকস্মাত জিয়াউর রহমানের মৃত্যু ঘটা, কিংবা সাম্প্রতিক ইতিহাসের জেএমবি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড ইত্যাদি হলো তেমনই এক একটি ‘এক্স’। যাকে আগে থেকে জানা যায় না, কিন্তু যাকে হিসাবে নিতেই হয়। এ রকম কোনো এক ‘এক্স’-এর উদয় জামায়াতকে এক ধাক্কায় অনেক ওপরে নিয়ে যেতে পারে। আর সেই উঁচু মিনারে দণ্ডায়মান হয়ে সে যা করবে, তা বিশুদ্ধ ‘দেশপ্রেম’ না হোক, ‘মুক্তিযুদ্ধের সমান না হোক, হবে গুরুত্বে তারই প্রতিপক্ষ। আর জনগণ এমনই বিহ্বল থাকবে যে, তৈরি হওয়ার আগেই একটা ওলট-পালট ঘটে যাবে। এবং সেই ‘উল্টানো একাত্তরে’ যুদ্ধাপরাধীদের আর যুদ্ধাপরাধী মনে হবে না, মনে হবে ত্রাতা! গভীর সমুদ্রে ঝড়ের মুখে পড়া নাবিকের খোয়াজ খিজির। সেটাই একাত্তরের নেমেসিস এবং জামায়াতের ফিনিক্স কাহিনী। কিন্তু ইতিহাস থিসিস মেনে চলে না। আমাদের রাজনীতিতে ক্যালকুলাসের আরেকটি ধ্রুবক বা ‘এক্স’ হলো জনগণের উত্থান। তারা আজো জয়ী হয় নাই, কিন্তু বারবারই তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘটনার খাতকে প্রভাবিত করেছে; অনেক ‘এক্স’-র প্রলয়ঙ্করী ক্ষমতাকে রুখে দিয়েছে বা প্রশমিত করেছে। দুর্যোগের ঘনঘটায় ভরসা সেটাই।
একাত্তরের মে মাসে যখন সব দিক অল্পব্দকার, তার মধ্যে বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার পাশা লিখেছিলেন, ‘রাইফেল রোটি আওরাত’। কেবল অবরুদ্ধ জাতির দুর্দশার চিত্রই নয় তা, সেটা লড়াকু বাংলার সংকল্পেরও দলিল। মার্চের শেষ দিকে শুরু হয়ে উপন্যাসটি শেষ হয় মে’র এক সকালে। তারপর তিনি ঘাতকের হাতে শহীদ হন। কিন্তু কী অসম্ভব সংকল্প ও দৃঢ়বিশ্বাস ছিল তার যে, জানতেন দেশ স্বাধীন হবেই, জাহেলিয়াতের অবসান হবেই। তাই তার অসমাপ্ত উপন্যাসের শেষ বাক্যে লিখিত হয় হাজার বছরের অভয় বাণী : মা ভৈ। আজো অমানিশার মধ্যে সেই সঙ্কল্পই আমাদের ভরসা। মা ভৈ।
মন্তব্য
আপনার চিন্তা ও বিশ্লেষণের সাথে একাত্মবোধ করছি।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
থাম্বস আপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
'দুঃসময় থেকে সুসময়ে মানুষ পৌঁছে দেবে মানুষকে'- এ ছাড়া আর ভরসা কোথায়?
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মা ভৈ।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা রাজনৈতিক কারণেই সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং তার বিরোধিতাও রাজনৈতিক হতে হবে। এবং সেই রাজনীতির আলোচনার বাইরে প্রসঙ্গটি দেখলে ব্যবহৃত হওয়ার ফাঁদে পড়তে পারি। সে সতর্কতা থেকেই লেখাটি লেখা। ধরুন, উত্তর মেরুতে যাবেন বলে দক্ষিণ দিক থেকে যাত্রা শুরু করেও আপনি দিক না বদলালেও এক সময় দেখতে পাবেন, আপনি যাচ্ছেন আসলে দক্ষিণ মুখে। অতএব সাধূ সাবধান!
**এই লেখাটি্ এখানে দেয়ার পর কিঞ্চিত বাড়িয়ে সমকালে দিই। আজ সেখানে সম্পাদকীয় পাতায় তা প্রকাশিত হয়েছে।
'''''''''''''''''''''''''''''''''
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
লেখাতো শান্তি জোগালো মনে, কিন্তু ব্যারিষ্টার মইনুল যে শোনালেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দায়িত্ব সরকারের নয়, তার কি হবে???
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
পর্বতের কেবল মুষিক প্রসবই না, আরো অঘটন এই পর্বে ঘটবে, সেটাই তো বলার চেষ্টা করে আসছি।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নতুন মন্তব্য করুন