'প্রচারেই প্রসার': বাণিজ্যের এই মূলনীতিটি রাজনীতির ক্ষেত্রেও পরিপূর্ণভাবে প্রযোজ্য। আওয়ামী নেতৃত্তাধীন মহাজোট সরকার সমর্থকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ হচ্ছে সরকারে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের প্রচারের হাল অত্যন্ত নাজুক থাকে। নিজেদের দুর্বলতাকে আড়াল করে সাফল্যকে তুলে ধরা তো দুরের কথা, অপরপক্ষের ছুড়ে দেয়া মিথ্যা অভিযোগ খন্ডনেও দলটির ব্যর্থতা চোখে পড়ার মত। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড সত্বেও ৫ টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজিত হবার পেছনে প্রচারে অদক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে প্রায় সব মহলই একমত। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়পরবর্তী ধর্মীয় অপপ্রচার মোকাবেলায় সরকারের দোদুল্যমানতা ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে বিভ্রান্ত করেছে বলে মনে হচ্ছে।
এই পটভূমিতে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রচারের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে পত্রিকান্তরে জানা যাচ্ছিল। সহসাই সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান এবং ফেসবুকের মাধ্যমে রন্ধনরত শেখ হাসিনার ছবি প্রকাশ মূলত অলিখিত নির্বাচনী প্রচারেরই অংশ। তাই সম্প্রতি ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে প্রায় কয়েক শত বিলবোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রচারের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে বিস্মিত হবার কিছু ছিলনা, বিতর্কেরও কিছু ছিলনা। বরং সরকারী দলকে স্বাগত জানান যেত দেরিতে হলেও জনগনের কাছে পৌছানোর প্রয়াস নেয়ার জন্য।
কিন্তু তারপরও এই বিলবোর্ডগুলো চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারণ মূলত দুইটি। প্রথমত, বিলবোর্ডগুলো কি সরকারের তরফ থেকে লাগানো হয়েছে, নাকি আওয়ামী লীগের তরফ থেকে, সে বিষয় নিয়ে অনাবশ্যক লুকোচুরির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সাধারনত বিলবোর্ডেই উল্লেখ থাকে স্থাপনকারী সংস্থার নাম, যা এ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। দ্বিতীয়ত, বিলবোর্ডগুলো অধিগ্রহনে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারে চুক্তিরত অবস্থায় রাতের অন্ধকারে বিলবোর্ড থেকে অপসারণ করা হয়েছে, অথচ সে সকল প্রতিষ্ঠানকে জানানোও হয়নি বিজ্ঞাপনগুলো কে, কেন, কখন অপসারণ করলো। ভুক্তভোগী কোম্পানির তালিকায় দেশের প্রথম সারির অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যদিও সরকার বাহাদুরের রুদ্ররোষের ভয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টা নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না, ব্যাপারটি সংগত কারণেই ব্যাপক অসন্তুষ্টির জন্ম দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই আমলে বিদ্যুত, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য সহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সেক্টরে অর্জিত সাফল্য সত্বেও অযথা বিতর্ক তৈরির অনাকাঙ্খিত প্রবণতা তাদের অর্জনকে শুণ্যে নামিয়ে এনেছে। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির পর সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের জায়গায় কমিটির প্রধানকেই হেনস্তা করা, ড: ইউনুসকে গ্রামীন ব্যাংক থেকে বিতরণ এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে লাগামছাড়া বক্তব্য, সাগর রুনি হত্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের ব্যর্থ আল্টিমেটাম প্রদান এবং কুত্সা রটনা, বিশ্বজিত হত্যাকান্ডে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের এবং রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতারের পূর্বে ও পরে সরকারের বিভিন্ন মহলের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য, দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারা সত্বেও অভিযুক্ত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা না করা, আগপাশ বিবেচনা না করে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করার চিন্তা থেকে বিশ্বব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে বিষেদাগার, ছাত্র-যুব লীগের অব্যাহত সন্ত্রাস, হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর অর্থমন্ত্রীর অর্বাচীন মন্তব্য: ভুরি ভুরি উদাহরণ দেয়া যায় যে সকল ক্ষেত্রে কিঞ্চিত বুদ্ধিমত্তা এবং বিনয়ের সাথে বিষয়গুলো মোকাবেলা করলে মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হত না। এ ধরনের বিতর্কিত বিষয়গুলো যাতে নির্বাচনে বেশি প্রভাব না ফেলতে পারে বস্তুত সে বিষয় নিশ্চিত করাই যে কোনো প্রচারের লক্ষ্য। সেখানে প্রচার নিজেই যদি নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করে, তাহলে সেটাকে বিপর্যয় না বলে আর উপায় কি।
বিতর্ক সৃষ্টির বিষয়টি ভুলে গিয়েও যদি এই বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনগুলোর যদি তাকাই, তাহলেও এ সরকারের অদক্ষতাই দেখতে পাই। বেশির ভাগ বিলবোর্ডই ন্যুনতম-নান্দনিকতা-বিবর্জিত। দুর্বল ডিজাইন এবং হাস্যকর রং-সমাহারের বিলবোর্ডগুলো যেন রুচিহীন রাজনৈতিক পোস্টারের দানবীয় সংস্করণ যা মানুষকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ। তার পরও যদি চোখে পড়েই যায়, ভাষার ব্যবহারে দুর্বলতার কারণে এই প্রচার জনমানসে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না। মানুষের বোধগম্য ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তুলে না ধরে বরং অফিসিয়াল ঢঙে খাত ওয়ারী আমলনামা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। মিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের হিসেব না দিয়ে, শতক হাজারের হালখাতা বাদ দিয়ে যদি মানুষকে সহজ ভাষায় বোঝানো যেত, তাহলে বিলবোর্ডগুলো প্রচারে কিছুটা হলেও পজিটিভ ভূমিকা রাখত।
যে দলে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার রয়েছেন, সেখানে তদবিরবাজির কারণে চট্টগ্রাম যুবলীগের নেতার মাধ্যমে ব্যানারগুলো তৈরী করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ ও দলের স্বার্থ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার যে উদাহরণ লীগের নেতারা দেখিয়ে চলেছেন, সে বিচারে হয়ত এ রকমই হবার কথা। শেষ বিচারে এ বিলবোর্ডগুলো আওয়ামী লীগের অনিয়ম-প্রবনতা, অদক্ষতা ও জনবিচ্চিন্নতারই প্রচার করবে। আওয়ামী লীগের প্রচার দু:স্বপ্নের সহসা পরিসমাপ্তিও তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
মন্তব্য
গালি তো এম্নেও খাইত, অম্নেও খাইত, বিল্বোর্ডগুলি একটু সৌন্দর্্য্য কইরা লাগাইলে কি হইত?
নাউ ইট মেকস সেন্স, সিংগারার ভিত্রে কেম্নে গেলো আলু!!!!
বাজি ধইরা কইতে পারি, এই সব বিলবোর্ড একমাস থাকব না। লীগ নাকে খত দিয়া সরাইব। যে জিনিসের গোড়াতেই দূর্নীতি তা কখনো টিকে থাকে না।
বিলবোর্ড সহ অন্যান্য প্রচারণা খুব জোরেশোরে চালানো উচিত তবে এরকম পরিকল্পনাহীন, রুচিবিহীন নয়, আওয়ামীলীগে এ ধরণের কাজে অভিজ্ঞ লোকের তো অভাব থাকার কথা নয় - কমুনিকেটিং হয় নাই একদমই।
- এই তথ্য কি ঠিক? সে তো নিয়ম ভঙ্গ করেই পদে ছিলেন, আদালতের রায়ে চলে গেছেন।
হ, ঠিক এইডা জিগাইতেই লগিন করলাম... দেহি কয়া ফালাইসেন...
লেখক আসুক... ততক্ষন খাই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সরকার কর্তৃক অপসারিত হবার পরেই কিন্তু ইউনুস সাহেব হাইকোর্টে গেছেন। নিয়মবিরুদ্ধ উপায়ে তাঁর পদে থেকে যাবার বিষয়টা জনমনে কোনো প্রভাব ফেলেনি, কারণ দেশের জনগণ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের এ ধরনের স্বেচ্ছাচার দেখে অভ্যস্ত। দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যে তাঁর অপসারণের বিষয়টা পছন্দ করেনি, সেটা আমার অভিমত। এ ব্যাপারে কোনো জরিপ করা হয়েছে কিনা, আমি জানিনা।
নিয়মভঙ্গ করে পদে থাকলে অন্যায় করেছেন, আদালত চলে যাবার নির্দেশ দিয়ে তার অন্যায়ের প্রতিকার করেছে- এর সাথে জনমনে প্রভাব ফেলা কিংবা শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পছন্দ অপছন্দ সম্পৃক্ত কেনো?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বিষয়টা যদি কেবল ইউনুস বনাম হাইকোর্ট হত, জনমনে প্রভাব পড়ত না। পড়েছে কারণ বিষয়টাকে মানুষ দেখেছে শেখ হাসিনা বনাম ইউনুস লড়াই হিসেবে। এ ভাবে দেখার কারণ হলো শেখ হাসিনা নিজেই ইউনুস সাহেবের বিরূদ্ধে প্রকাশ্যে নানান বক্তব্য রেখেছেন।
তাহলে, জনগনের বৃষস্কন্ধে কেন মিছে এ দায় চাপানো?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
জ্বী ঠিকই বলেছেন। তবে যারা ভোট দিবেন তারা তা মনে করেননা। সো মুড়ি খান।
- কিভাবে জানলেন? উত্তর লিখতে থাকেন আমি মুড়ি খাই।
উনি জানেন কারণ উনার কাছে তথ্য আছে। জানাজানির সাথে মুড়ি মেশাবেন না।
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
অপসারণ প্রকৃয়াটা আন্তর্জাতিক মানের, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয় নাই বোধহয়
রোজা-রমজানের দিন মুড়ি খাওয়া কি ঠিক হবে? আমিও খাই
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বাড়িতেও কি এভাবে কথা বলেন? ওখান থেকেই বোধহয় শেখা তাই না?
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আমার মা'র কথার একটা লব্জ হচ্ছে - হাসব না কাঁদব। এ বৃত্তান্ত পড়ে আমার-ও সেই রকম-ই লাগছে - হাসব না কাঁদব!
- একলহমা
বিলবোর্ড অপব্যবহার রাজনীতিতেই সবচেয়ে বেশী হয়। আওয়ামীলীগ বিএনপি দুই দলের ক্ষেত্রেই এটা দেখছি।
-ম্রিয়মান
ম্যালেরিয়া একটি প্রানঘাতি ব্যাধি, তবে কুইনিন খেলে ম্যালেরিয়া সারে। কিন্তু কুইনিন নিজেই অন্য এক উপসর্গ সৃষ্টি করে ম্যালেরিয়া উপসমের স্বস্তি ভুলিয়ে দিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দটাই মাটি করে দেয়। তবু প্রান বাঁচানের তাগিদে কুইনিন খেতেই হয়, তা যতই মুখ তেতো হোক। যারা অবুঝ- যেমন শিশু কিংবা পাগল, তারা ম্যালেরিয়ার বিপদটা বোঝে না, বোঝে শুধু কুইনিনের তেতোটা। তাই সহজবোধ্য বিলবোর্ডও কতটা কি করতে পারবে বলা মুশকিল।
আব্দুল্লাহ এ এম
হ ! এই সেইম রোডে কোকো মামায় বিলবোর্ড বাণিজ্য কইরা কোটি টাকা পকেটে ঢুকাইছে। পাবলিক কইলাম সে সময় এক ফোঁটাও টের পায় নাই। খালি হা কইরা বিলবোর্ডের সৌন্দর্য গিলছে। আর এখন আম্লিক কয়টেকা হাত করছে জানি না, তয় হুদাই বদনাম কুড়াইল কার বুদ্ধিতে?
দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আম্লীগ থেকে মুখ সরায় নিছে বলে জাতীয় দৈনিকের রেফারেন্সের কথা বলে যে বিম্পি নেতারা তা সত্য ধরে নিলে সব ঠিক আছেঃ আম্লীগের এইসব অর্জনের কুনো বেল নাইক্কা, ব্যালটে পতন অবিস্যম্ভাবীঃ ১৫ লক্ষ হেরে আম্লীগ ৭ কোটিতেও হারবে হাওয়ায় ধরে নেওয়া যায়!
জাতীয় দৈনিকে বলেছে নাকি এরকম কিছু? কবে, কোন দৈনিকে?
আব্দুল্লাহ এ এম
প্রথম আলো হয়ে গেছে জাতীয় দৈনিক, লিখেছিল ৯০ ভাগ মানুষ নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, সেটা বিম্পির কাছে হয়ে গেছে ৯০ শতাংশ মানুষ আম্লীগ থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছে সেটা আরো কতকি হয়েছে আর হবে হাওয়ায় হাওয়ায় তা জানতে সামনে তাকাতে হবে
বিলবোর্ডের সমস্যা কি বুঝলাম না। আপনি যেগুলো বললেন:
১) নান্দনিকতা: রূচি আর নান্দনিকতা নিয়ে এত কনসার্নড হওয়ার কিছু নাই। বিলবোর্ড লিওনার্দোর আঁকা ছবি না। এটা সবার রূচির সাথে সমানভাবে যাবে না। রূচিবান 'শিক্ষিত' লোকজনের বরং উচিত কসমেটিকসের চেয়ে বিলবোর্ডে কি লেখা আছে, সেটায় ফোকাস করা। মেসেজটা লোকজন পাচ্ছে, সেটাই আসল। সরকার যে এসব কাজ আসলেই করেছে, লোকজন এটা জেনে আশ্চর্য হচ্ছে। এতোদিন মিডিয়ায় এগুলো আসে নাই।
২) বিলবোর্ড অধিগ্রহণ: সরকার জোর করে, দুর্নীতি করে কারো বৈধ বিলবোর্ড অবৈধভাবে, টেকা পয়সা না দিয়ে বেদখল করে থাকলে তার উচিত মামলা করা। এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করে নাই। বাঁশের কেল্লা সিস্টেমে ৬০-৭০ কোটি টাকার গল্প ছড়ানো হচ্ছে।
আমার দেশ, প্রথম আলো, বাঁশের কেল্লাসহ জামায়াতী মিডিয়ার কল্যাণে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম পাবলিকের সামনে আসে নাই। অন্যদিকে এরা সাঈদীকে চাঁদে তুলে দিয়েছে। ইউনুসের অবৈধভাবে পদ বেদখল করে থাকা নিয়ে সমালোচনা আসে নাই। অথচ হাইকোর্ট যখন তাকে সেখান থেকে জাস্ট সরিয়ে দিয়েছে, যেখানে তার সাজা প্রাপ্য ছিলো, সেখানে দোষ হলো সরকারের। তত্ত্ব সরকারের ছত্রছায়ায় ইউনুস যখন রাজনৈতিক দলগুলোর চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করেছে, তখন সেগুলোয় সমস্যা হয় নাই, ইউনুসকে সুদখোর বলায় সুশীল সমাজে হাহাকার পড়ে গেছে। হামিদ মীর, ইমরান খানেরা রিকনসিলিয়েশন তত্ত্ব নিয়ে এসে মেহেরজানদেরকে আফ্রিদি মেরি মিতে উৎসাহিত করেছে আলু, আমার দেশে। তখনো সুশীলদের টনক নড়ে নাই। মালালাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মানবতার আড়ালে পাকিপ্রেমে দিনের পর দিন দিওয়ানা হয়ে কাজ করে গেছে এসব মিডিয়া। রোহিঙ্গা সমস্যা, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিরুদ্ধে ডিরেক্ট-ইনডিরেক্ট ভূমিকা রাখা মিডিয়া (উদাহরণ, প্রথম আলোতে যুদ্ধাপরাধীদের করা নিউজগুলোর অধিকাংশতেই কমেন্ট ছাড়া হয় না) এইসব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়েও সরকার অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
এ অবস্থায় সরকার তাদের সাফল্য - যা সত্য - প্রচার করতে গেলে প্রচারের উপায় নিয়ে সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে তিন বার সরকারকে বাহবা দেয়া উচিত। প্রচারের ধরন পছন্দ না হলে সাজেশন দেয়া যাবে, দুর্নীতি করলে সমালোচনা করা যাবে। কিন্তু তার আগে কাজগুলোর জন্য ৩ বার স্যালুট মেরে তারপর কথা বলতে হবে। ছাগু ও সুশীলদের সাথে গলা মিলানোর আগে প্রো-৭১রা অন্তত এই সচেতনতাটুকু দেখান।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সুশীল সমাজের একচোখা নীতি তো নতুন কিছু নয়। তবে পোস্টের লেখককে সেই সুশীল সমাজের একজন মনে করলে ভুল করবেন। প্রচারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, প্রচারিত তথ্যের সত্যতা নিয়েও সন্দিহান নই, কিন্তু প্রচারের মূল উদ্দেশ্যই যদি ব্যাহত হয় এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে, তাহলে শুরুতেই তা শুধরে দেয়ার আহ্বান জানানো জরুরি প্রো ৭১ দের জন্য। স্যালুট দেয়ার জন্য সামনে বহু সময় পরে আছে। রুচি, নান্দনিকতার প্রসঙ্গ এসেছে প্রচারের efficacy বাড়ানোর জন্য। বিলবোর্ডের জন্য মামলা না হওয়াকেই যদি সফলতা মনে করেন, তাহলে আশা করি সেই সফলতা নির্বাচনেও প্রতিফলিত হবে।
স্যালুট দেয়ার জন্য ভবিষ্যতের দিকে তাকায়া লাভ নাই। ক্রান্তিকাল ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
পোস্ট লেখককে সুশীল সমাজ মনে করি নাই। তবে পোস্টের বক্তব্য গিয়ে শেষ হয়েছে সরকারের 'অদক্ষতা'য়, আওয়ামী লীগের 'জনবিচ্ছিন্নতা'য়। এটা ভুল। সরকার অদক্ষ হলে দেশের জন্য এতো কাজ করতে পারতো না এতো সীমাবদ্ধতার ভেতরে থেকেও। তবে মিডিয়া ক্ষেত্রে বৃহত্তর জামায়াতের (জামায়াত, বিএনপি, ইউনুস) তুলনায় সরকার পিছিয়ে আছে নিঃসন্দেহে। এই পোস্টের লেখকও সেই মিডিয়ানির্গত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সত্য প্রচারে সরকারের আরো 'দক্ষ' হওয়া উচিত, এই বক্তব্যটা পোস্টে মূখ্য হয়ে ওঠে নি।
কেউ যদি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়, তাহলে তার এখন আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করার সময়। সমালোচনা সহযোগিতাও করতে পারে নিঃসন্দেহে। তবে সমালোচনা যখন বৃহত্তর জামায়াতের সাথে একই স্রোতে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে, তখন একটু পরিস্থিতি পূনর্বিবেচনার দরকার আছে।
জামায়াতী মিডিয়ার বিপরীতে সরকারের সত্য ও সঠিক সাফল্য প্রচারে শিক্ষিত নান্দনিকদের তৎপরতা তেমন একটা চোখে পড়ে নাই গত চার/সাড়ে চার বছরে। এখন সরকার যখন নিজেই সেটা করা শুরু করেছে, তখন নান্দনিকতার আলাপ মূখ্য হয়ে গেলে বিগ প্রবলেমো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নান্দনিকতার যুক্তি ঠিকাছে। এমনকি সুশীল সমাজ (যারা আমার মতে, জামাতের প্রতিপালক/রক্ষক দলটির বিরুদ্ধে কিচ্ছুটি কইবে না, কিন্তু রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে না পারায় আ'লীগ সরকারের ছাল তুলে ফেলবে) সম্পর্কিত প্রতিপাদ্যও। কিন্তু কিছু কথা মানতে পারি নাই। যেমনঃ
এমনভাবে কইলেন, সরকারের বিরুদ্ধে মামলা যেন ছেলের হাতের মোয়া, যেন চাইলেই করা যায়!
কথাটার একটু কারেকশন দরকার। অর্থাৎ, 'কেউ যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়, তাইলে তার এখন সেই বিচারের ব্যাপারে আ'লীগকে সাহায্য করার সময়'। বোল্ড-কৃত অংশটুকু খিয়াল কইরা।
এই অংশটুকু এই সত্যটুকুরও নিশ্চয়তা দেয় যে, 'কেউ যদি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চায়, তাহলে তার এখন আ'লীগ সরকারের আমলে করা দুর্নীতিগুলোর ব্যাপারে প্রতিবাদ করার সময়, যুদ্ধাপরাধের বিচার নির্বিঘ্ন করার জন্য কথিত দুর্নীতিগুলো সম্পর্কে মুখ বুঁজে থাকা সমীচীন নয়'। বটম লাইন হল: সরকারের ভাল কাজে সহযোগিতা করব, খারাপ কাজে প্রতিবাদ করব।
দেশি-বিদেশি জামায়াতি মিডিয়া, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, গোলামের না-মৃত্যুদণ্ড এসব কারণে সরকার এখন চাপে আছে। বিলবোর্ডের বিরুদ্ধেও জামায়াতি মিডিয়া সোচ্চার। এ অবস্থায় কারো বৈধ বিলবোর্ড অবৈধভাবে দখল করলে তার মামলার প্রেক্ষিতে তাকে হয়রানি করা হলে এসব মিডিয়া বসে থাকবে না, সরকারও বিপদে পড়বে। সুতরাং এরকম জেনুইন বা এমনকি সেমি-জেনুইন কেস থাকলেও মামলা না করাই আশ্চর্যের ব্যাপার। মামলা না করে পাবলিককে যদি কল্পিত দুর্নীতির মোয়া খাওয়ানো যায়, প্রোপাগান্ডা হিসেবে সেটি বেশি কার্যকর।
আপনার বোল্ড করা অংশ পুরো সিনারিওর একটা সাবসেটমাত্র। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো সরকার (অর্থাৎ, বৃহত্তর জামায়াত, এছাড়া বিকল্প নাই) ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে না। কেউ যদি এটা মানে এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়, তাহলে তার উচিত আওয়ামী লীগ সামনের বার কিভাবে ক্ষমতায় আসবে, সে ব্যাপারে সাহায্য করা। বিলবোর্ড কেসে দুর্নীতি আসলে কোনো ইস্যুই না, বিলবোর্ডে ইস্যু হলো সামনের নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বাঁশ দেয়ার জন্য জামায়াতি মিডিয়া এ ব্যাপারে কল্পিত দুর্নীতি সামনে নিয়ে আসছে।
অবশ্যই। তবে সময় বুঝে, অঙ্ক পরীক্ষার সময় অঙ্ক পরীক্ষা। বিলবোর্ডে সরকার তার করা জেনুইন ভালো কাজের প্রচার করলে সেখানে সহযোগিতা কাম্য, সেখানে ইউনুসকে কবে গ্রামীন ব্যাঙ্ক থেকে তাড়িয়েছিলো, বা মেহেরজানের বাপে পদ্মাসেতু খাইয়া ফালাইছে আলোচনা কাজে আসে না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এই কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত। ফেবুতে অনেককে দেখেছি, যুদ্ধপরাধীদের বিচার চাই, বিচার চাই বইলা কি বোর্ড ভাইঙ্গা ফেলছে, আবার ওদিকে আলীগের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছে। আমি মনে করি এখন এইসব হিপোক্রেসির সময় নেই। যুদ্ধপরাধীর বিচার এই বাংলার মাটিতে একমাত্র আলীগ ছাড়া আর কেউ করবে না, আলীগ ছাড়া বাস্তবায়নও হবে না। তাই উল্টা পাল্টা কথা বলে আমাদের লাভ নেই। এখন দেখতে হবে, কীভাবে আলীগকে জনগনমুখী করা যায়, ভুলগুলো শোধরানো যায়, মিথ্যা অপপ্রচারের জবাব দেওয়া যায়।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
পোস্টটি মোটের উপর ভাল। যদিও হিমুভাই সহ অন্যান্যরা কিছু অসংগতিও তুলে ধরেছেন।
আমার একটা প্রশ্ন আছে পোস্টলেখকের নিকটঃ
সরকারের সাফল্যগাঁথা সরকারের ট্যাক্সের টাকায় প্রচার কেন বৈধ হবে না? একটি সরকার (দলের কথা হচ্ছে না) তার নিজস্ব কর্মকান্ড প্রচারের অধিকার কেন পাবে না?
প্রচারিত বিষয়বস্তু গরল নাকি সরল, তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে, কিন্তু সরকারকে প্রচারের অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত রাখব আমরা?
ভালো প্রশ্ন। সরকারী টাকায় দলীয় প্রচারণার নজির উন্নত বিশ্বে পরিপূর্ণভাবেই বিদ্যমান। কানাডাতেও প্রাদেশিক এবং কেদ্রীয় সরকার ট্যাক্সপেয়ারদের টাকায় এডভার্টায়সমেন্ট ক্যাম্পেইন চালায়, এ বিষয়ে বিতর্কও হয় প্রচুর। http://www.taxpayer.com/commentaries/bc--government-ads-use-and-abuse-taxpayers--money
আমার অভিমত হলো সরকারী টাকায় নির্বাচনী প্রচার করতে দেয়া হলে সকল পক্ষকেই করতে দেয়া উচিত। যে প্রচারাভিযানের লক্ষ্যই কেবল একটি দল বা জোটের পুনর্নির্বাচন নিশ্চিত করা, আইনগত বৈধতা থাকলেও নৈতিকভাবে আমি অবৈধ বলেই মনে করি। এর চেয়ে বরং রাজনৈতিক দলের ব্যয় নির্বাহে সরকারী অর্থায়ন, যে প্রস্তাব বছর দুয়েক আগে আওয়ামী লীগই নির্বাচন কমিশনে দিয়েছিল, অনেক বেশি যুক্তিসংগত। বৃহত্তম দল হিসেবে সরকারী দলই যার প্রধান ভাগীদার হবে।
চমৎকার বলেছেন।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
এখানেও কয়েকটা ভুল আছে।
১। প্রচারের ধরণ নিয়ে সমালোচনা কাজগুলোকে স্যালুট মারার আগেই করা যাবে বা করতে পারা উচিত। আপনার থিয়োরি মানতে হলে, কোন কাজে দুর্নীতি হলে, সেই দুর্নীতির কথা বলতে হলে আগে কাজটির স্তব-গীতি গাইতে হবে----জানতে মঞ্চায়, এই থিয়োরি কোথায় পেলেন?
২।এবার 'প্রচারের ধরণ' ছেড়ে আসুন 'প্রচারিত বিষয়' নিয়ে। আমার মতে, প্রচারের ধরণ নিয়ে যেমন সমালোচনার অধিকার আছে, প্রচারিত বিষয়বস্তু নিয়েও সমালোচনার খুব স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক অধিকার আছে।
মোদ্দা কথা, আমার মতে, সরকারের প্রচারের অধিকার আছে, জনগণের সেই প্রচারের ধরণ নিয়ে সমালোচনার অধিকার আছে, এমনকি সেই কাজ সত্য হলেও। আর যদি সেই প্রচারিত কাজ সত্য না হয় বা ভেজাল-পূর্ণ হয় (জনগণের চোখে), তাহলে জনগণের সেই প্রচারিত কাজ নিয়ে সমালোচনারও অধিকার আছে।
১। এই থিওরি কনটেক্সটের ওপর নির্ভর করে। এখানে কনটেক্সট বিলবোর্ড। বিলবোর্ডের উদ্দেশ্য সামনে নির্বাচন। আপনি কি চান, সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক। উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে সরকার তার জেনুইন উন্নয়ন কাজের প্রচার করলে সেটায় সহযোগিতা করবেন, তখন ইউনুসকে ল্যাং মারার জন্য সরকারকে তুলোধনা করবেন না। বিলবোর্ডের বিল পরিশোধ করা হয়েছে কিনা, সেটা সেকেন্ডারি বিষয়। অবশ্য আওয়ামী লীগকে সামনের বার ক্ষমতায় দেখতে না চাইলে বিলবোর্ডের ব্যাপারে কল্পিত দুর্নীতি নিয়া হইচই করবেন, যাতে উন্নয়নের প্রচার মাইর খায়। অপশন ২টাই আছে আপনার সামনে, কোনটা বেছে নিবেন আপনার ইচ্ছা।
২। প্রচারিত বিষয়বস্তু নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা করতে কেউ আপনাকে নিষেধ করছে না, শুধুমাত্র চর্চার ফলাফল কি হবে, তা নিয়ে একটু পুনর্বিবেচনা করতে বলছে। আপনার গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চায় যদি বৃহত্তর জামায়াতের ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত হয়, তাহলে প্রো-৭১ হিসেবে আলটিমেটলি আপনারই ক্ষতি।
সময় ও কনটেক্সট খুব গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো অধিকারের চর্চার ক্ষেত্রেই। সবাই পারফেকশন আশা করে। একটা নির্দিষ্ট সময় ও কনটেক্সটে বেস্ট অপশন সিলেক্ট করতে হয়, সেটা পারফেক্ট না হলেও।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
তার মানে, আ'লীগের দুর্নীতি/অপশাসনগুলোর ব্যাপারে উটপাখি সেজে হলেও আ'লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে বৃহত্তর জামায়াতকে ঠেকাতে? দেখুন, এভাবে আ'লীগকে জোর করে (বা, বেনিফিট অব ডাউটের সুযোগ দিয়ে) ক্ষমতায় রেখে আপনি বৃহত্তর জামায়াতকে বিলীন করতে পারবেন না। বৃহত্তর জামায়াত ঠিকই আরও বেশী শক্তি সঞ্চয় করে কাতারে কাতারে জমায়েত হয়ে যাবে।
দেখুন, তালেবানি বিপ্লব প্রতিরোধ করতে চাইলে তালেবানি দৈত্যের চেহারা অবলোকন করতে দিতে হবে মানুষকে (আমার মতে)। নিশ্চয়ই মানবেন, একাত্তরের পর জামাতকে কেমন ঘৃণার চোখে দেখত সবাই। সেই জামাতকে ৪০ বছর ধরে লালন-পালন করা হয়েছে (এবং এর কিছু কৃতিত্ব আপনার আ'লীগকে না দিলে অন্যায় করা হবে), হয়েছে পাকি ভাবধারার ব্যাপক আবাদ। যে দলটি একাত্তরে জান হাতে করে পালাচ্ছিল, সে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের তয় বৃহত্তম দল। এ এক রুঢ় বাস্তবতা, অস্বীকার করবেন কি করে? এই দলটির নেটওয়ার্ক এত বিস্তৃত হয়েছে যে, এখন আইন করে/মারধর করে/ বিএনপির কায়দায় কন্ট্রোল করে এর সমাধি রচনা সত্যি সম্ভব নয়। আজকের এই বাংলাদেশে এখন মনে হয়, তালেবানরা একবার ক্ষমতায় এলেই ভাল হয়, তাহলে যদি মানুষের বোধোদয় ঘটে, তাহলে যদি ৪০ বছরের ধ্বংসাত্মক পাকি আবাদের ফলাফল মানুষ টের পেতে শুরু করে!
মোদ্দা কথা, বৃহত্তর জামায়াতকে ঠেকাতে হলে, মৌলবাদ-বিরোধী প্রচার-প্রচারণা-যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে, আরও অনেক দিন, ধৈর্য ধরে, সাহস রেখে। আলোকিত দিন আসবেই, ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই। আ'লীগের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় গমন বৃহত্তর জামাত অবলুপ্তির বিন্দুমাত্র নিশ্চয়তা দেয় না, বরং, দুর্নীতির ব্ল্যাংক চেক পেয়ে যেতে পারে তারা।
আ'লীগ জোট তো তিন-চতুর্থাংশ সিট নিয়ে ক্ষমতায় এলো ২০০৮.....কিন্তু কি মনে হয়, আপনার? কমেছে জামাতের নেটওয়ার্ক? এইখানে একটা ভুল আছে। আ'লীগ নামক একটি দল বা জোটের ক্ষমতায় আসার সাথে একটি সাম্প্রদায়িক/ঘাতক শক্তির বিলীনের কোন সম্পর্ক নেই। কোন সাম্প্রদায়িক শক্তিকে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করতে হলে, প্রগতিশীলদের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন করে যেতে হবে, চিন্তায়-মননে-কর্মে, ভাবনার চেয়েও দীর্ঘ হতে পারে এই লড়াই, কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে হতাশ না হয়ে; অন্যদিকে, যে কোন ধরনের আপোষ (কোন দল/জোটকে ক্ষমতারোহনের সুবিধার্থে তার দুর্নীতিগুলোর ব্যাপারে চোখ বুজে থাকা) এই আন্দোলনকে ক্ষতিই করবে দীর্ঘমেয়াদে। আপোষের হাত ধরে কখনো সত্য আসেনি, যুক্তির বিজয় ঘটেনি, ইতিহাস তাই বলে।
সব ব্যাপারে উটপাখি সাজতে বলি নাই। তবে বৃহত্তর জামায়াত ঠেকাতে আওয়ামী লীগের 'ভোটের হিসাব' প্রত্যেক প্রো-৭১ মানুষকেই করতে হবে বলে আমি মনে করি। যতদিন আওয়ামী লীগের বিকল্প না আসে, যারা একদম পারফেক্টভাবে সবকিছু করবে, ততোদিন এটা করা ছাড়া গত্যন্তর নাই।
ধর্ষণকে খারাপ প্রমাণ করতে 'বারবার' সচোক্ষে ধর্ষণ দেখা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয়। জামায়াতের ৭১ই যথেষ্ট। জামায়াতের খারাপত্ব প্রমাণ করতে যদি জামায়াতকে ক্ষমতায় আনা আপনার মত হয়, তাইলে আপনার সাথে আমার চিন্তাভাবনার বেসিক পার্থক্য আছে। আলোচনা করে আপনার সাথে মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে যুদ্ধাপরাধীর বিচারে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াত 'দল'টির ভূমিকা বেশ কয়েকটা রায়ে এসেছে। জামায়াতের টপ লিডারদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় তারা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে বাংলাদেশের কনটেক্সটে গোলাম আযম, নিজামি, সাকা, সাঈদিদেরকে হাজতে ঢুকানোই সম্ভব হতো না বলে মনে করি। আমি এটাকে জামায়াতের শক্তি খর্ব হওয়া হিসেবে দেখি। আপনার যদি এই কাজগুলোকে জামায়াতের শক্তি কমা বলে মনে না হয়, তাহলে সেটা আপনার সাথে আমার চিন্তাভাবনার আরেকটা মৌলিক পার্থক্য।
বাংলাদেশের ইতিহাস মনে হয় তাইলে একটু ব্যতিক্রম। এই দেশটা স্বাধীন হয়েছে অস্ত্রহাতে সরাসরি যুদ্ধে, দুধ-কলা খাইয়ে বিপ্লবকে দীর্ঘজীবী করে বা মেহেরজান সিস্টেমে পাকিদের সাথে মহব্বতের লড়াই করে নয়। সেই যুদ্ধে 'আপোষ' হিসেবে ভারতের সহযোগিতাকেও গ্রহণ করতে কার্পণ্য করা হয় নাই। আপোষহীন পারফেকশন একটা অবাস্তব ধারণা।
বাংলাদেশের কনটেক্সটে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ এখনই পাবেন না। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, দুর্নীতি কমবেশি হয়ই। আরো একবার বলি, দুর্নীতির সমালোচনা অবশ্যই করা যাবে। দুর্নীতিগুলোর ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে থাকার বল আমার কোর্টে ঠেলে লাভ নাই। আমার পয়েন্ট হলো, কনটেক্সট বিচার করে। আপনি যদি চান সামনের বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক, তাইলে বিলবোর্ড কনটেক্সটে - যেখানে ভোটই টার্গেট - আবুল পদ্মাসেতু খাইয়ালাইছে বলে চিল্লাচিল্লি করা যাবে না।
একটা জিনিস নিশ্চিত হয়ে নেই: আপনি কি চান সামনের বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক? হ্যাঁ বা না তে উত্তর দিয়েন। এর উত্তর 'হ্যাঁ' হলে আপনার সাথে কথা বাড়ানো যায়। উত্তর 'না' হলে কথা বাড়িয়ে ফায়দা নাই। আপনার আমার পথ কখনোই মিলবে না।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
একটা জিনিস নিশ্চিত হয়ে নেই: আপনি কি চান সামনের বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক? হ্যাঁ বা না তে উত্তর দিয়েন।
বারবারই এই প্রশ্নটি আপনি করছেন এবং প্রতিবারই ছেলেমানুষির পরিচয় দিচ্ছেন (সম্ভবত আপনি এখনো অনেক তরুণ)।
ধরুন, আমার উত্তর 'হ্যাঁ', কিন্তু তাতে কি আসে যায়? আমরা তো কথা বলছি বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলীর সিদ্ধান্ত/রায়/অধিকার নিয়ে। দেখুন, প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র, ভোটদান তাদের সামগ্রিক চিন্তার প্রতিফলন, অনেক যোগ-বিয়োগের পর তাদের রায় ঝুঁকে পড়ে কোন একটি প্রতীকের দিকে।
আপনার সাথে অনেক আলোচনা হল, এর মধ্যে একটি বিষয় খুব প্রশংসনীয়, আপনি নিরপেক্ষতার ভান ধরেন না। আপনি যা বিশ্বাস করেন, তাই অকপটে বলে ফেলেন।
তাইলে উত্তরটা এক কথায় দেয়া গেলো না।
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এই থিওরি কনটেক্সটের ওপর নির্ভর করে। এখানে কনটেক্সট বিলবোর্ড। বিলবোর্ডের উদ্দেশ্য সামনে নির্বাচন। আপনি কি চান, সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক। উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে সরকার তার জেনুইন উন্নয়ন কাজের প্রচার করলে সেটায় সহযোগিতা করবেন, তখন ইউনুসকে ল্যাং মারার জন্য সরকারকে তুলোধনা করবেন না। বিলবোর্ডের বিল পরিশোধ করা হয়েছে কিনা, সেটা সেকেন্ডারি বিষয়। অবশ্য আওয়ামী লীগকে সামনের বার ক্ষমতায় দেখতে না চাইলে বিলবোর্ডের ব্যাপারে কল্পিত দুর্নীতি নিয়া হইচই করবেন, যাতে উন্নয়নের প্রচার মাইর খায়। অপশন ২টাই আছে আপনার সামনে, কোনটা বেছে নিবেন আপনার ইচ্ছা।
সহমত।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
"দুর্নীতি করে কারো বৈধ বিলবোর্ড অবৈধভাবে, টেকা পয়সা না দিয়ে বেদখল করে থাকলে তার উচিত মামলা করা। এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করে নাই।" আমার জনৈক বিলবোর্ড মালিকের সাথে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন উনার ১৩টা বিলবোর্ড খোয়া গেছে। সরকার যদি চায় এক বসর তাতে কোন সমস না। কিছু বল্লে হিরোইন রাখার অপরাধে হাজত বাসের নিশ্চ্য়্তা ১০০ ভাগ। তাই বলি মামলা করবে সে কোন সাহসে? অন্তত্ঃ এইটা লেখ্তে বা কমেন্টের সময় দলিয় লেজুড়টা খোলা উচিত। এটা হয়েছে ভয়াব হ যচ্চুরি!
আপনার পরিচিত ওই বিলবোর্ড মালিক খুব মজার কথা বলেছেন। বিশাল টেকাটুকা লস দিয়ে সরকারকে বিনা পয়সায় ১ বছর ধরে বিলবোর্ড দেয়ার মতো উদার ব্যবসায়ী এই দুনিয়ায় নাই। বিশেষ করে সরকার যখন চাপে আছে, আর সরকারের মেয়াদও খুব বেশিদিন নাই।
জেনুইন মালিক হইলে মামলা করতে বলেন। তারপর সরকার কি করে সেই জেনুইন ঘটনা জানান। হিরোইন রাখার অপরাধে হাজত বাসের বাঁশের কেল্লাটাইপ প্রোপাগান্ডা না ছড়াতে বলেন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
চুরি যে আপনার নিজের জীবনে হয় নাই তা না। তা কয়টা মামলা করেছেন ভাই? খুনের লাগিয়া মামলা হয়। চুরি-ডাকাতি র লাগিয়া মামলা? কয়টা উধারন দিতে পারবেন কেউ চুরির বিরুধে মামলা করে প্রতিকার পাইছে। এখানে আবার সরকারের বিরুধ্বে। আপনি কি ভাই সেই দলিয় লোকটি যিনি বলেছেন, "কারো যদি বিলবোর্ড খোয়া যায় সে মামলা করতে পারে"। অন্নের যায়গায় ঘর তোলা ভাই আপনি জায়েজ বলছেন। বলছি কারন এই বিলবোর্ড মালিক সরকার না। আমি কোনদিন কোন দল করি নাই। ১৩ বিলবোর্ড মালিক কে জানি উনি কোন দলের লেজুর না। আপনার প্রতিটা কমেন্ট এক পেশে মনে হয়েছে আমার। আপনি ভাই আমাদের হাইকোট দেখাচ্ছেন। দেশে এত খুনখারাবি তারপরও কি উঅকিল সাহেবদের মামলার অভাব? ১৩ বিলবোর্ড মালিক তার লাভের ভাগ দিতে রাজি কিন্তু জেল খাটঅতে রাজি না বিনা অপরাধে।
আমার মসজিদে জুতা চুরি হইছে, মামলা করি নাই। তবে সেটা নিয়া প্রোপাগান্ডাও চালাই নাই, বা আলুতেও রিপোর্ট করা হয় নাই। ধরলাম কোটি কোটি টাকার বিলবোর্ড আর আমার একজোড়া জুতা সমান। বৈধ বিলবোর্ড আসলেই অবৈধভাবে বেদখল হয়ে থাকলে সেই অভিযোগ মামলা বা অন্য কোনো ফরমাল উপায়ে আসতে হবে, বাঁশের কেল্লা বা প্রথম আলোতে প্রোপাগান্ডা আকারে নয়।
জ্বি ভাই, সামনের নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের দলীয় লোক। কোনোদিন কোনো দল না করাটা আপনার কাছে যদি গৌরবের বিষয় হয়, তাইলে আপনি নিশ্চিতভাবেই রাজনীতি অসচেতন। রাজনীতির বিষয়ে কথা বলার আগে রাজনীতির প্রাথমিক শিক্ষাটা অন্তত দরকার।
তারা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো বা প্রোপাগান্ডার উপকরণ হইলে সেইটা সঠিক!! সরকার এদের কাউকে বাঁশ দেয়ার প্রোপাগান্ডা সঠিক হলে আলুতে নাম আসার সাথে সাথেই আইক্কাসহ বাঁশ দিতো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
কোন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা, উচূ দরের সুশীল বা রাজনৈতিক আতেল না হয়েও বলা যায়, এটা অপ্রিয় হলেও সত্যি যে অন্তত আগামী ২০ বছরে পুরোপুরি না হোক অন্তত একটা গ্রহনযোগ্য মানের সুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসীমুক্ত, দলীয়করণমু্ক্ত ও গনতন্ত্র মনা সরকার পাওয়ার কোন আশা আমাদের নেই। তাই যে সরকারই আসুক, তারা ওসব নেতিবাচক চর্চাগুলোর পাশাপাশি অন্তত গ্রহনযোগ্য পর্যায়ের কিছু ভাল কাজ আর উন্নয়ন যদি করে, আমরা আর মিডিয়া মিলে যদি তাদের ক্রমান্বয়ে নেতিবাচক কাজ কমাতে বাধ্য করাতে পারি- আমার কাছা আপাতত সেটাকেই মনে হবে নিরুপায়ের পাওয়া। পুরোপুরি পারফ্যাক্ট সরকার তো সকলেই চায়। কিন্তু চাওয়া পূরণ না হলে অন্তত ‘সামথিং ইজ বেটার দ্যান নাথিং‘ যাতে পাওয়া যায়।
মিডিয়াগুলো যদি, অন্তঃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়াটাকে নননেগোসিয়েবল হিসেবে গ্রহন করত, খুনী আস্তিকের চেয়ে সৎ-নীতিবান নাস্তিক যে শ্রেয়তর, নাস্তিকতার বিচার যে সৃষ্টিকর্তার এখতিয়ার, সৃষিটর নয় - এ বিষয়গুলোকে আন্তরিকতার সাথে তুলে ধরতো, তবে তাদেরকে সরকারের চেয়ে উত্তম বলে মানা যেত। কিন্ত এসব বেইসিক বিষয়ে যে মিডিয়া সঠিক নয়, ঢালাওভাবে সরকারের নেতিবাচক সমালোচনা করার অধিকার তাদের কতটুকু আছে তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ।
- পামাআলে
যা বুঝলাম, বাংলাদেশের কুৎসিততম নগরী ঢাকার সমস্ত নান্দনিকতা চোকানোর দায় এখন গিয়া পড়ছে বিলবোর্ডের উপ্রে। রাস্তার উপর দাড়ায়ে রেগুলোর মোতা পাবলিকও দেখি ফেসবুকে নান্দনিকতা হারায়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্তেছে। এই বিলবোর্ডগুলি কয়টা আইন মেনে গজাইছে আর ক্যামনে গজাইছে খোঁজ নিলে আরো অনেক কিছু বের হয়ে আসবে।
'বিলবুড' এ সুন্দরী, আবেদনময়ি মেয়ে না থাকলে আবার 'বিলবুড' কি?!! হুমায়ূন আজাদ স্যারের একটা কথা ছিল না এমন - "বাজারে পণ্যের চেয়ে পণ্যার দাম বেশি " বা এমন একটা কিছু? ডিজাইন টা এমন হতে পারত যে কিছু সুন্দরী মেয়ে 'উদাস ' দা এর ত্রিভঙ্গ মুরারি পোজ এ দাড়িয়ে উন্নয়ন এর ফিরিস্তি বর্ণনা করেছে!!
এইডা খুব ভাল পয়েন্ট ধরছেন, হিমু ভাই। এগুলি আইন মাইনা হয় নাই অনেক ক্ষেত্রেই, এইগুলি গজানোর পেছনে যেই হাতের পরিচর্যা আছে, সেই হাতেই আবার এগুলি রাতারাতি নামানো হইছে। টাঙ্গায়ও তারা। নামায়ও তারা। সবখানেই তারা।
এই হাজার খানিক বিলবোর্ড এর মধ্যে কি একটাও সঠিক ছিল না? আর একটাও যদি সঠিক না থাকে সেগুলোর প্রতি সরাকার কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সরকারি দলকেও সেই একি কাজ করতে দিল কেন? সরকার তার নিজের প্রচার করতেই পারে। তাই বলে এইভাবে? আমার বিচারে এই সরকার সফল কাজ রাজাকারের বিচার। আর সবচাইতে ন্যাক্কার কাজ এই বিলিবোর্ড দখল।
বৈধ বিলবোর্ড দখল করার কাজটা খারাপ আর বেআইনী হয়েছে। অবৈধ বিলবোর্ড দখলের কাজটা চোরের ওপর বাটপারি হয়েছে। কিন্তু নান্দনিকতা নষ্টের অভিযোগটা হাস্যকর।
নান্দনিকতার প্রসঙ্গটি যখন আপনিও বুঝতে পারেননি, তাহলে আমার লেখার দুর্বলতাকেই দোষারোপ করতে হয়। আমার পয়েন্ট ছিল যেকোনো প্রচারই মানুষের দৃষ্টি পজিটিভলি আকৃষ্ট না করতে পারলে অর্থহীন হয়ে পড়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পোস্টারগুলো যদি আজও দেখেন, শুধু বক্তব্যেই নয়, শৈল্পিক সৌন্দর্যের নিরীখেও নজর কাড়ে। সেখানে নির্বাচনী প্রচারের উদ্দেশ্যে তৈরী এই বিলবোর্ডগুলোর যে সকল ছবি পত্রিকায় এসেছে, তাতে এই সৌন্দর্যের অভাব প্রকটভাবে চোখে লেগেছে। আওয়ামী লীগে কি এ ধরনের কাজে পারদর্শী মানুষের অভাব পড়েছিল যে দায়সারাভাবে কাজ সাড়া হলো ?
ফাইয়াজ জামাল ভাইয়া, নান্দনিকতার ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত। সরকারের উদ্দেশ্যই যদি হয় জনগণকে আকৃষ্ট করা, তাহলে মিডিয়ার কল্যাণে এমনিতেই হয়ে গেছে। যে লোকটা হয়তোবা বিল বোর্ডের দিকে তাকাতোই না, সে মিডিয়াতে এতো কিছু দেখে নিজের অজান্তেই বিল বোর্ডগুলোর দিকে তাকিয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কিছু কিছু ভাষা আমজনতার বোঝার জন্য নয় বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। আর বিলবোর্ডগুলো, আপনি ঠিক বলেছেন, মনে দাগ কাটার মতো হয় নি, যেটা মানুষের মনে প্রভাব ফেলবে।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
উন্নয়নের অঙ্গীকার ধারাবাহিকতা দরকার - এই স্লোগানটা ভালো লেগেছে। আর ভালো লেগেছে প্রচারণায় তথ্য নির্ভরতার ব্যাপারটা।
প্রধানমন্ত্রীর ছবি বেশই ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরবার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ছবিও রাখা যেতে পারতো।
দুটি ব্যাপারে পরিমিতবোধের অভাবটা খুব চোখে লেগেছে। এক - ফন্ট সাইজ, বেশ কিছু বিলবোর্ডে অত্যধিক বড় দেখেছি। দুই - একটা রাস্তার মোড়ে কতগুলো বিলবোর্ড দরকার আসলে? এক জায়গায় বেশি না লাগিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে প্রতিপক্ষরা বিতথ্য ছড়িয়ে সহজেই সুবিধা নিয়ে ফেলে সেসব জায়গায় আরো মনোযোগ দেয়া যেতে পারে।
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
গঠনমূলক সমালোচনার একটা ভালো উদাহরণ আপনার মন্তব্যটা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বিলবোর্ড গুলো অনেক আগ থেকেই স্ব স্ব স্থানে ছিল।এগুলোর বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে সুসীলরা এর আগে মুখ খুলেননি কেন?আজ কেন মুখে খই ফুটল।মোট কথা হইল আলীগের বদনাম করতে হবে।কিছু না পাইলে অন্তত একথা কইতে হবে-
দুর্নীতি করবে না, এমন ভদ্র সরকার আগামী ১০০ বছরেও আশা করি না (মাত্রায় কিছুটা কম দুর্নীতি করবে, তেমন সরকার হয়ত কোনওকালে আসতেও পারে, তবে আমার জীবদ্দশায় নয়), তাই ক্ষমতায় কোন সরকার এল, তাতে দুর্নীতির কিছু এসে যাবে না। তবে বিএনপিকে সামনে রেখে বৃহত্তর জামাতে ইসলামি ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীরা প্রত্যেকেই সসম্মানে ছাড়া পেয়ে যাবে। এই জানোয়ারগুলোর বয়স হয়েছে, এই চোটে যদি বিচার করতে না পারি, আগামী পাঁচ বছর পর বিচারের জন্য এদের অনেককে আর জ্যান্ত পাওয়া যাবে না। এমনকী ক্ষমতায় গিয়ে ওরা এমন অবস্থাও তৈরি করতে পারে যে ভবিষ্যতে আইনগতভাবে আর কোনও যুদ্ধাপরাধীর বিচারও হয়ত করা যাবে না। (বরং মুক্তিযোদ্ধাদের বিশ্বাসঘাতক হিশেবে মরণোত্তর বিচার করার সম্ভাবনাই প্রচুর, বিএনপি ক্ষমতার লোভে ও নীতিগতভাবে এই কাজটি করতে সানন্দে রাজি হবে।)
আর একবার ছাড়া পেলে এই জানোয়ারদের কীরকম জাতে তোলা হবে ভাবতেও ভয় লাগে। এমনিতেই দেখি এরা নাকি মুসলিম বিশ্বে 'প্রভাবশালী' (সৌদি আরবের এক পত্রিকার মতে, মইত্যা রাজাকার বিশ্বে ৫০ জন প্রভাবশালী মুসলমানের একজন। ভাবুন তো একবার, প্রভাবশালী মুসলমান হওয়ার জন্য একজনকে প্রচুর নিরাপরাধ মানুষকে খুন, ধর্ষণ আর আগুন লাগিয়ে বাড়ি পোড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই বিচারে আপনি আমি তো মুসলমান হওয়ারই যোগ্য নই, প্রভাবশালী তো দূরের কথা।) আপনার জীবদ্দশাতেই দেখতে পাবেন, এদের নামের আগে ‘হযরত’ বসিয়ে দরবেশের মর্যাদা দিয়ে ইসলামের ইতিহাসে কালপুরুষ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এদের করা অগণিত খুন, ধর্ষণ, আরজন মিথে পরিণত হবে, পরের প্রজন্মের কাউকে আর বিশ্বাস করানো যাবে না। (এই প্রজন্মের যেসব নির্বোধ বাঙালি শিবির করে, তারা এখনই বিশ্বাস করে না যে তাদের শীর্ষনেতারা প্রত্যেকেই একেকটা ভয়ঙ্কর খুনী-ধর্ষক-আরজনিস্ট।) একদল ভয়ঙ্কর জানোয়ার পরিণত হবে সন্তপুরুষে। ইতিহাসে এর বহু নজির আছে।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার কিন্তু আমার কাছে কোনও আবেগের বিষয় নয়। এটি আমার অস্তিত্বের একটি মৌলিক প্রশ্ন। এদের কোনও বিচার হয়নি বলেই বাংলাদেশে আজ আইনশৃঙ্খলার এত ভয়ঙ্কর অধঃপতন। এরা একাত্তরে অগণন নির্বিচার খুন-ধর্ষণ-আগুন লাগিয়ে এখনও বলে, একাত্তরে ভুল করিনি। এরা বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করে না, বাংলাদেশের আইন মানে না, সংবিধান মানে না, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না, এদেশের বিপুল গণহত্যায় জড়িত ভিন্ন একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলের শাখা হয়ে এরা আমাদের শাসন করতে চায় সেই ভিন্ন দেশের রাজনীতি-সংস্কৃতি-স্বার্থ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে। এরা চায় যে-কোনও মূল্যে বাংলাদেশকে নাপাকস্থানে পরিণত করতে, নিদেন পক্ষে নাপাকস্থানের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে। মেরুদণ্ড সম্পন্ন একজন বাঙালি হয়ে (যে বাঙালির আছে বিপুল শক্তিধর নাপাকস্থানকে গোহারা হারিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার অতিদুর্লভ খ্যাতি) আমি তা সহ্য করতে রাজি নই। বিগত সাঁইত্রিশ বছর ধরে আমি এদের বিরুদ্ধে চিৎকার করে এসেছি। এদের বিচারের রায় কার্যকর না হওয়া অবধি চিৎকার করে যাব।
আমাদের আজকের ক্রোধানুগ সিদ্ধান্ত মুহূর্তেই বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাস, চরিত্র আর চলার গতিমুখ। মুসলিম ব্রাদারহুড নিয়ে মিশরীয়দের অনেকের স্বপ্ন ছিল, পশ্চিমারা কৌশলে তাদের ক্ষমতায় পাঠিয়ে আমজনতার মোহ কাটিয়ে দিতে পেরেছে এক বছরের মধ্যেই। মিশরীয়রা তাদের কানে ধরে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু আমরা জামাতি জানোয়ারদের সেই সুযোগ দিতে পারি না। ওরা জাতে কালসাপ, সুযোগপাওয়া মাত্র ছুরি চালাবে আমাদের রাষ্ট্রের পরিচয়ে, সার্বভৌমত্বে, চরিত্রে। উল্টোপথে ঘুরিয়ে দেবে চলার গতিমুখ। এটা ওদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, বাস্তবায়নের জন্য এক মুহূর্তও নষ্ট করবে না। বিগত বিএনপি আমলে ওরা যে-ক'টি সেক্টরে পা রেখেছে, তার পুরো সদ্ব্যবহার করে ছেড়েছে। এবার কিন্তু ক্ষমতায় বিএনপি আসবে না, আসবে জামাত। বিএনপি তাদের উপচে পড়া ক্ষমতার গড়িয়ে পড়া লালা চেটে তৃপ্ত থাকতে বাধ্য হবে। বিএনপিকে দিয়ে ওদের গায়ে লেগে থাকা মল সাফ করার কাজটি করিয়ে নিয়ে জামাত ইতিহাসেও নির্মল থাকার চেষ্টা করবে। সুদূর ভবিষ্যতে জাতির মননে এদের স্থান হবে স্বর্গস্পর্শী, মর্ত্যে নামিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে।
আমার কথায় যাঁরা ভাবছেন, আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয়বার জিতিয়ে আনার জন্যই এহেন উদ্ভট তত্ত্ব কপচাচ্ছি, তাঁদের বলে রাখি, আওয়ামী লীগের মত একটি অভব্য, নীতিভ্রষ্ট, গুণ্ডা ও তস্কর নেতৃত্বে ভরা দলের প্রতি আমার কণামাত্র শ্রদ্ধা নেই, তবুও এটিই এখনও অবধি একমাত্র দল, যার কাছে আমি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাইতে ও রায় কার্যকর করার আশা করতে পারি। এটা আমার জন্য, আমার সন্তানদের সুস্থ ও মানবিক করে গড়ে তোলার জন্য খুবই জরুরি। আমার কন্যা ভবিষ্যতে বস্তায় মোড়ানো মাংশের দলা হিশেবে ঘরের কোণে পড়ে থাকবে, নাকি স্বাধীন মানবী হিশেবে পুরুষের সমান মর্যাদায় যে-কোনও পেশায় নিজেকে বিকশিত করতে পারবে, সেটা আমার কাছে কোনও এক আবুল পদ্মা ব্রীজের কমিশন কত খেল, তার চেয়েও বেশি জরুরি। সরকারযন্ত্রে বসে যারা দুর্নীতি করে, বিচার ব্যবস্থাকে নষ্ট করে, নাগরিক অধিকারকে সঙ্কুচিত করে, অপরাধীদের আগলে রাখে, তাদের ঠেকানো আমার দায়িত্ব বটে, কিন্তু সন্তানের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে অগ্রাধিকার নয়। (ভাইটু, এসব যে আমার সন্তানের ভবিষ্যতও বিষময় করে তুলবে, তা কি আমি জানি না?) আওয়ামী লীগকে হারিয়ে বিএনপিকে জিতিয়ে আনলেই যে সে-দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করা হবে, তা নয়। বিএনপিও ঠিক একই কাজ করবে। কিন্তু এবার বিএনপি তথা জামাত ক্ষমতায় এলে অদূর ভবিষ্যতে আমার কন্যার বস্তায় ভরাও নিশ্চিত হবে। আমি প্রাণে ধরে তা করতে পারব না। আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয়বার জিতিয়ে এনে আমার লাভ হবে ফুটন্ত তেলে পড়ার আগে আমি যতদূর পারি গরম তাওয়ায় লাফালাফি করে কিছুদিন বেশি বাঁচতে পারব।
ভাবছেন কল্পনার গরু মগডালে চড়িয়ে বসেছি? ভাবতে পারেন, তবে মগডাল থেকেই গরুর গুঁতো খাওয়ার পরে আবার চমকে উঠবেন না যেন।
নিতান্তই গেরস্ত মানুষ, চারপাশে কেবল
শস্যের ঘ্রাণ পাই।
নতুন মন্তব্য করুন