জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বা নবম বৃহত্তম দেশ। বিশ্বের প্রধানতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল এটি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পপুলেশন কাউন্সিলের ভাষ্যমতে, `বর্তমানে প্রতিবছর বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়ছে ২৫ লাখ করে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে ২০৩৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে হবে কমপক্ষে ২১ কোটি এবং ২০৫১ সালে তা ২৮ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।' এ তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি রোধ করা না গেলে দেশের অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনাই ভেস্তে যেতে পারে।
সীমিত সম্পদের কারণে আমাদের দেশের জনসংখ্যা `সম্পদ'-এর পরিবর্তে `বোঝা' হয়ে পড়ছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। গত তিন যুগে তা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। নতুন মানুষের বাসস্থানের জোগান দিতে প্রতিনিয়ত কমছে আবাদী জমি, উজাড় হচ্ছে বন। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না, তাদের জীবনযাপন নিম্নমুখী হচ্ছে। বাড়ছে বেকারত্ব এবং সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজধানীমুখী অভিবাসন। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে অফিসের চারপাশেই দেখি ছিন্নমূল মানুষের ভিড়। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই রাতে ঘুমানোর আস্তানা পাকাপোক্ত করতে যেন সবাই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে ছিন্নমূল এসব মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। রাজধানীমুখী জনসংখ্যার স্রোত ঠেকাতে ঢাকার বাইরে কর্মসংস্থানের কথা সবাই বলে; কিন্তু সরকার ও ব্যবসায়ী নেতাদের কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়ে না। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের কথাই ধরা যাক। ঢাকায় বাস করে কমপক্ষে ৩০ লাখ পোশাক-শ্রমিক। শুধু পোশাক কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা গেলেই বিপুলসংখ্যক সীমিত আয়ের মানুষ মোটামুটি ভালোভাবে চলতে পারবে।
জনসংখ্যা তখনই মানব সম্পদ হয়ে উঠতে পারবে, যখন তাদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। কিন্তু দেশে অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনো শিক্ষার আলোর বাইরে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল, উপকূলীয় ও হাওর এলাকা এবং শহুরে বস্তিবাসীদের মধ্যে সন্তানের সংখ্যা বেশি- এরা বেশির ভাগই দরিদ্র ও শিক্ষাবঞ্চিত। শহরে শিক্ষিত দম্পতিদের মধ্যে সচেতনতা বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে শহরে সন্তানের সংখ্যা গড়ে দুইয়ে নেমে এলেও গ্রামাঞ্চলে সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে চার-পাঁচটি সন্তান খুবই সাধারণ ঘটনা। প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব এর অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশে গত তিন দশক ধরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে, কিন্তু তাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। সরকারের কিছু অদূরদর্শী নীতিও এর জন্য দায়ী। যেমন, ১৯৯৮ সালে কৌশল পরিবর্তনের কারণে সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। সরকার সে সময় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাত কর্মসূচির (এইচপিএসপি) আওতায় পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মীদের পরিবর্তে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি কিনিক নির্মাণ করে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু এর ফল হয়েছে নেতিবাচক। দেশের অনগ্রসর সামাজিক পরিবেশের কারণে নারীরা বাড়ির বাইরে গিয়ে পরিবার পরিকল্পনার সেবা নিতে অনাগ্রহী হওয়ায় এ কার্যক্রম সাফল্যের মুখ দেখেনি। সুতরাং নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে। মাঠকর্মীদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ সহজলভ্য করতে হবে।
সর্বশেষ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ। সিলেট বিভাগে একজন নারী গড়ে ৪.২ এবং চট্টগ্রামে একজন নারী গড়ে ৩.৭ সন্তানের জন্ম দেয়; জাতীয় গড় যেখানে ২.৭। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে প্রকৃত কী কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার এবং সে অনুযায়ী পৃথক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য-বস্ত্রের জোগান না বাড়ালে, উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা না করতে পারলে, কর্মের নতুন নতুন খাত সৃষ্টি করতে না পারলে সমাজে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে বাধ্য। বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে, দেখা দিতে পারে অস্থিতিশীলতা। অশিক্ষিত, অপুষ্টির শিকার অদক্ষ আমজনতা রাষ্ট্রের জন্য কোনোই মঙ্গল বয়ে আনতে পারবে না। তখন মানব সম্পদ পরিণত হবে বোঝায়।
মাত্র ৫৫ হাজার বর্গমাইলের ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। হাল আমলে প্রতিবছর প্রচুর খাদ্যশস্য ও অন্যান্য সামগ্রী আমদানি করতে হচ্ছে। ৩০ লাখ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থেকে যাচ্ছে। যুবসমাজের বিশাল অংশ বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতে বাধ্য হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০০৭ জুনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে তিন হাজার ১২ জন মানুষের জন্য একজন চিকিৎসক এবং ছয় হাজার ৩৪২ জন মানুষের জন্য একজন সেবিকা আছে। এ সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কতটা কম তা সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন হচ্ছে এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? জনসংখ্যা ২০ কোটি ছাড়ালে তা কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে তা ভেবে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। বর্তমানের জনসংখ্যা কোনোভাবেই আর বাড়তে দেওয়া চলে না।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রিপোর্টের গবেষকেরা বলছেন, কয়েকটি কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। এগুলোর মধ্যে আছে কম বয়সে বিয়ে, প্রজননক্ষম বিবাহিত নারীর উচ্চ হার, মানুষের গড় আয়ু বাড়া ও অনাকাক্সিত গর্ভধারণ। বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সফল না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ অসচেতনতা ও অশিক্ষা। `মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি'- আধুনিক সমাজে এ ধরনের কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই। সামাজিক `ট্যাবু' ভেঙে বেরিয়ে আসতে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগ নিতে হবে। অনাকাক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে পাঠ্যপুস্তকে যৌনশিক্ষার মৌলিক ধারণা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
ইউরোপের দেশগুলোয় জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে তারা চিন্তিত। আর বাংলাদেশের মতো সল্পোন্নত দেশগুলোয় তার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। আমরা অধিক জনসংখ্যা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। ১৯৯৫ সালে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১.৫, সেখানে ২০০৫ সালে সেই হার হয়েছে ২.১। যদি এখনই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে তা অনুমিত হিসাবকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক বিবেচনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাল্যবিবাহ রোধে আইনের প্রয়োগ আরও কঠোর হতে হবে। প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ে প্রচার বাড়াতে হবে। একাধিক সন্তান গ্রহণের একটি বড় কারণ `পুত্রসন্তানের প্রত্যাশা'। সমাজে কন্যাসন্তানের গুরুত্ব বৃদ্ধি এবং সম্পত্তিতে সমানাধিকার নিশ্চিত না করতে পারলে এ অপসংস্কৃতি দূর করা সহজ নয়। এ জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের জন্য `অভিন্ন পারিবারিক আইন' প্রণয়নের বিকল্প নেই।
চীনের `এক সন্তাননীতি' জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর উদাহরণ। আমরা এখনই এ নীতি গ্রহণ না করতে পারলেও `দুই সন্তাননীতি' বাধ্যতামূলক করার সময় উপস্থিত। `ছেলে হোক মেয়ে হোক, দুই সন্তানই যথেষ্ট'- এ রকম প্রচার ও স্লোগানের মধ্যে বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না। এখনই আইন করে ঘোষণা করতে হবে `দুই সন্তানের বেশি নয়।'
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বলা যায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে এখন দেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে ঘোষণার সময় এসেছে। জনসংখ্যাকে দেশের ১ নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। নারীর প্রজনন হার কমাতে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। ঠিক কী কী কারণে এ কর্মসূচি পুরোমাত্রায় সফলতার মুখ দেখতে পারছে না তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্তব্য
সময়োপযোগী পোস্ট। বিশেষতঃ সমাধানের যে কথা বললেন (
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ধন্যবাদ শাহেনশাহ।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
আজকে প্রথম আলোতে আনিসুল হকের উপসম্পাদকীয়তে পড়লাম পোশাক শ্রমিক ২০ লাখ, আপনার লেখায় পড়লাম ৩০ লাখ। কোনটা সত্য?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজু ভাই সুন্দরবন বিষয়ক পোস্ট কো ???
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
এতো ফাল পারস কেন? চুপ কইরা বয়া থাক ব্যাটা... কাতার বাইন্ধা খাড়া... আইতেছে... ভালো জিনিস আইতে একটু টাইম লাগে... ভালো জিনিস পড়তে সাধনা লাগে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল।
এ বিষয়ে সঠিক তথ্য কারও কাছেই নেই। স্থায়ী শ্রমিক ২০ লাখের মতো। কিন্তু অস্থায়ী শ্রমিক মিলিয়ে এ সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ভালো লিখেছেন। জনসংখ্যা আমাদের অন্যতম মাথা ব্যথার কারন।
আমার মনে হয়, শিশুশ্রমের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসা উচিত। দরিদ্র পরিবারে একটি চর্চা চলমান, কোনমতে কয়েক বছর কাটানোর পর একটি শিশুকে কোনো উপার্জনে লাগিয়ে দেয়া। এ কারণে তারা পরিবারের আকার নিয়ন্ত্রণে সচেতন থাকে না। একটু অসংবেদনশীল শোনাতে পারে এই কথাটা, কিন্তু পরিস্থিতিটাও তেমনি। একটি শিশু কেন কাজ করে তার অভিভাবকের হাতে অন্ন বা নগদ অর্থ তুলে দেবে?
একটি বা দু'টি সন্তানের পরিবারগুলিকে বিভিন্ন সুবিধার আওতায় আনা যেতে পারে। তবে তার জন্যে আবার একটি বিরাট ডেটাবেইজ মেইনটেইনের ঝামেলা রয়েছে, যেটি মুখ থুবড়ে পড়ার সম্ভাবনা বিরাট।
'একটি বা দু'টি সন্তানের পরিবারগুলিকে বিভিন্ন সুবিধার আওতায় আনা যেতে পারে। তবে তার জন্যে আবার একটি বিরাট ডেটাবেইজ..'
ধন্যবাদ হিমু।
ভালো প্রস্তাব। ডেটাবেইজ করতে এখন আর সমস্যা নেই, যেহেতু গত বছর ভোটার তালিকা তৈরির সময় একটা 'ন্যশনাল ডেটাবেইজ' তৈরি হয়ে গেছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে অগ্রসর হওয়া যায়।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ফিরোজ ভাই, একটি অপ্রাসঙ্গিক অনুরোধ করি।
এই ন্যাশনাল ডেটাবেইজে প্রবেশাধিকার আছে কাদের? যে কেউ কি এই ডেটাবেইজ হস্তগত করতে পারে? আপনি কি এই ডেটাবেইজের সংরক্ষণ, প্রবেশাধিকার, সম্পাদনা ও তত্ত্বাবধানের ওপর একটু আলোকিত করতে পারেন আমাদের?
ডেটাবেইজটির কাঠামো সম্পর্কে কিছু জানি না, তাই বুঝতে পারছি না, সেটিতে একটি পরিবারকে চিহ্নিত করা সম্ভব কি না। যতদূর জানি, এটি ভোটারদের ডেটাবেইজ। শিশুরা তো এতে অন্তর্ভুক্ত নয়। ধরা যাক ভোটার আব্দুর রহিম এবং ফাতেমা বেগম, এরা স্বামী স্ত্রী, এদের দু'টি শিশু জুয়েল ও পপি। ধরা যাক, আমি ন্যাশনাল ডেটাবেইজের অ্যাডমিন। আমার কাছে তথ্য থাকতে হবে যে অমুক আব্দুর রহিম এবং অমুক ফাতেমা বেগমের এই দু'টি সন্তান রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাদের আরেকটি সন্তান হলে আমার কাছে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য আসতে হবে, যেখান থেকে আমি বুঝতে পারবো যে হতভাগা আব্দুর রহিম তৃতীয় সন্তানের পিতা হয়েছে, এবং সেই মোতাবেক তাকে বিশেষ কিছু সুবিধা, যা কি না এক বা দুই সন্তানবিশিষ্ট পরিবারের জন্যে বরাদ্দ, তা রদ করার তালিকায় ফেলবো। ন্যাশনাল ডেটাবেইজে শিশুদের তথ্য না এলে এই পদ্ধতিতে এগোনো সম্ভব নয়।
ধন্যবাদ হিমু।
('ভাই' না বলে, 'ফিরোজ' বললেই খুশী হবো।)
১.আসলে এ বিষয়ে আমার কাছেও বিশদ তথ্য নাই। তবে আমি যতদূর জানি, 'সুজন' নামে একটি সংস্থা এটা তাদের ওয়েবসাইটে দিয়েছে। (আমি কনফার্ম হয়ে আপনাকে জানাতে পারি।)
২. আপনি বলেছেন, 'এটি ভোটারদের ডেটাবেইজ। শিশুরা তো এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।' কথাটি আংশিক সত্যি। শুরুতে ভোটার তালিকা তৈরির কথা বলা হলেও আসলে তৈরি করা হয়েছে 'ন্যাশনাল ডেটাবেজ'। ভোটের উদ্দশ্যে এটা করা হলেও, এখানে একজন নাগরিকের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। অর্থাৎ এখানে ১৮ বছরের বেশি বয়সী (প্রায়) সব বাংলাদেশি নাগরিকের প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষিত আছে।
তবে হ্যাঁ, শিশুরা এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ইউনিসেফ-এর উদ্যোগে জন্ম নিবন্ধনের কাজ চলছে। (তবে অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। নানা সামাজিক প্রতিকূলতায় এটি সফল হতে পারছে না। এর মধ্যে অন্যতম বাল্যবিয়ে)। এ উদ্যাগ সম্পূর্ণভাবে সফল করা গেলে তখন 'ন্যাশনাল ডেটাবেইজ'-কে কাজে লাগানো যাবে।
৩.নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ভোট দিতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র)-এর প্রয়োজন নাই।
৪. আপনার প্রশ্ন: 'এই ন্যাশনাল ডেটাবেইজে প্রবেশাধিকার আছে কাদের? যে কেউ কি এই ডেটাবেইজ হস্তগত করতে পারে?'
জবাব: আমার জানা মতে, এখনো এটি নির্বাচন কমিশনের হাতেই রয়েছে। বর্তমানে সংশোধনীর কাজ চলছে। সম্পাদনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে নির্বাচন কমিশন।
৫. 'ন্যাশনাল ডেটাবেইজে শিশুদের তথ্য না এলে এই পদ্ধতিতে এগোনো সম্ভব নয়।' আমি একমত। তবে বলা যায় 'ন্যাশনাল ডেটাবেজ'-এর অর্ধকের বেশি কাজ হয়ে আছে (শিশু ছাড়া)। শিশুদের জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে 'ন্যাশনাল ডেটাবেজ'-এর সঙ্গে যুক্ত করতে পারলেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব। তবে, কাজটা খুব সহজ নয়। জনসংখ্যা যে ১৫ কোটি!!
৫. দুঃখিত, বেশি দীর্ঘ হয়ে গেল। আলাদা পোস্ট দিলেই ভালো হতো।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
দুঃখিত হিমু।
'সুজন' এর আগের ভোটার তালিকাটি ওয়েবসাইটে দিয়েছিল, নতুনটি নয়।
আমি আজই তাদের কর্তা ব্যক্তি বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে কথা বলে এটা জেনেছি।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
চমৎকার পোস্ট। তবে অনুচ্ছেদগুলোকে শিরোনাম দিয়ে আলাদা করে দিতে পারলে হয়তো আরও সুখপাঠ্য হত।
সন্তানের সংখ্যার বিষয়ে আইনে অভিভাবকের মাথাপিছু আয়(=সংসারে মোট আয়কে সদস্যসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে) অনুযায়ী সন্তানের সংখ্যা নেয়ার উল্লেখ থাকতে পারে। নির্দিষ্ট আয়ের বেশি হলে সন্তান সংখ্যার ব্যাপারে ছাড় দেয়া যেতে পারে; আর নির্দিষ্ট অংকের কম হলে সন্তান সংখ্যা এক বা শূন্যও হতে পারে।
অবশ্য, এই ব্যাপারটা বেশি ভাল হলেও প্রায়োগিক সমস্যা আছে --- কিন্তু এরকম ক্ষেত্রে সকলের মনে বিষয়টা চিন্তার খোরাক যোগাবে এবং এতে মেসেজটা আরও পরিষ্কার হয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
... তবে যাই বলেন, চীনের মতো কঠোর হওয়া ছাড়া পথ নাই- এক সন্তানই যথেষ্ট।
ধন্যবাদ শামীম, আপনার পরামর্শের জন্য।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
সময়োপযোগী পোস্ট এবং ভাল লেখা। আইন করে ঘোষণা করা `দুই সন্তানের বেশি নয়।' বা দু'সন্তানের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় ভাবে সুবিধে দেওয়া যেন এতে মানুষ উতসাহিত হয়।
আপনার সঙ্গে একমত স্বাধীন।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
আমি বুঝলাম না জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে সবাই এইখানে কি বলতে চাইতেছেন । দুই সন্তানের বেশী না - এই আইনটা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আপনাদের ধারনা ? কয়েকটা সাপ্লিমেন্টারি চিন্তার কথা বলি -
১. এক পরিবারের দুইটা সন্তান আছে । ন্যাশনাল ড্যাটাবেইজ ঘেটে জানা গেলো স্ত্রী আবারো গর্ভবতী । এখন কি করা ? তারে আইনের বই দেখায় গর্ভপাত করতে বলা ? এই আইন বাস্তবে কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে গেলে কি কি সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে ?
২. স্বাধীন অনধিক দুই সন্তানের পরিবারকে রাষ্ট্রিয় সুবিধা দেবার কথা বলতেছেন । এর থিকা যেই বাড়ির (অথবা কুড়ের) ছেলেমেয়ে বাধ্য হয়ে শিশুশ্রমে গতর ঘাটায় তাদের সাহায্য দেবার প্রসঙ্গটা জরুরি কিনা সেটার বিষয়ে আপনার কি মত ?
৩. শামীমের আইডিয়া পুরোপুরিভাবে বিপদজ্জনক মনে হলো । এটার অর্থ এই দাড়ায় যে গরীব লোকেরা তাদের অর্থনৈতিক কারনে সন্তান উৎপাদন করতে পারবে না । নাকি আমি শামীমের বক্তব্য ভুল বুঝলাম ?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমার মতে দু'টো ভিন্ন বিষয়। যে শিশুটি বাধ্য হয়ে শ্রম দিচ্ছে তাকে বা তার পরিবারকে রাষ্ট্রীয় ভাতা দিয়ে সাহায্য করা যেতেই পারে। সেটি নিয়ে অন্য কোথাও আলোচনা করা যাবে।
আর অন্যটি হল কোন কাজে উতসাহিত করারা জন্য রাষ্ট্রের জনগণকেএক ধরণের ইনসেন্টিভ দেওয়া। যারা দু'সন্তানের মাঝে থাকবে তাদের সে সব সন্তানের খরচ (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি চিকিৎসা) সরকার বহনের ঘোষনা দিতে পারে। আবার উল্টোটাও বলা যেতে পারে, যারা দুইয়ের অধিক সন্তান নিবে তাদেরকে সেই সব অতিরিক্ত সন্তানের জন্য ট্যাক্স বা কর দিতে হবে সরকারকে। এ ধরণের কিছু করলে অন্তত জনসংখ্যার বিষ্ফোরন ঠেকানো যেতে পারে। তবে এর সাথে অন্যান্য আরো যে সমস্ত পদ্ধতি চলছিল সে গুলো চলতে থাকবে। যেমন শিক্ষার প্রসার, শিক্ষায় জন্মনিয়ন্ত্রনের কথা আনা, গণমাধ্যমগুলোতে প্রচার, গ্রামে গ্রামে বা বস্তিতে বস্তিতে প্রচার, বিনামুল্যে জন্মনিরোধক ব্যবস্থার বিতরন , এই সব। সকল কিছুর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই কিছু হবে।
রাগিব ঠিক বলেছে যে চীনের মত ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক সরকারের নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাময়িক আইন করে মানুষকে উতসাহিত বা নিরুতসাহিত করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তা হল এটা যে প্রধান একটি সমস্যা সেটা বুঝা। আমার বিবরনে এটা পরিষ্কার যে দরকার সমন্নিত পরিকল্পনা। যে পরিকল্পনায় পরষ্পর সম্পর্কিত সকল কিছুকে গণনায় এনে তারপর সমাধান খুঁজতে হবে। এবং এটা যত তাড়াতাড়ি করা হবে ততই মঙ্গল।
জনসংখ্যার এই আথিক্যের কারণের আমাদের সকল সমস্যার সমাধান কষ্টকর হয়ে পড়ে। যতক্ষন সমাজে চাহিদার পরিমান তার উতপাদনের তুলনায় বেশি থাকবে ততক্ষন সমাজে বিশৃঙ্ঘলা থাকবেই। মানুষের মাঝে দুর্ণীতি বাসা বাঁধে। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য বড় বেশি স্বার্থপর হয়ে উঠে। মানুষের মাঝে অমানবিক গুণ গুলো চাঁড়া দিয়ে উঠে। হত্যা, ডাকাতির মত সহিংস ঘটনাগুলো বাড়তে থাকে। আমাদের দেশের অবস্থা বর্তমানে এ রকমই। সে কারণেই জনসংখ্যার হ্রাসের কোন বিকল্প নেই। না হলে আমাদের অন্য কোন পরিকল্পনাই কাজে আসবে না।
ভাতা, বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি প্রসঙ্গ আরো কয়েকটি মন্তব্যে এসেছে। এ বিষয়ে কিছু বলি।
প্রথমত, 'ফ্রি' ভাতা জিনিসটা রাষ্ট্র থেকে পাওয়ার প্রবণতা খুব মারাত্মক বিষয় হতে পারে। রাষ্ট্র থেকে 'অধিকার' পাওয়ার আশা করা উচিত, করুণা নয়। সুতরাং 'কাজের বিনিময়ে খাদ্য' নীতিই এক্ষেত্রে বিবেচ্য হওয়া উচিত।
সরকার আসলে নিজে থেকে কোনো ইনসেনটিভ দিতে পারে না, সরকার যেটা দেয় সেটা জনগণের টাকাই। সরকারের ভূমিকা এখানে অনেকটা কেয়ারটেকারের মতো। এজন্যই যখন বিডিআর বিদ্রোহে নিজেদের (সামগ্রিক অর্থে) অযোগ্যতার কারণে নিহত হওয়া কিছু অফিসারের পরিবারকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়, সেটা আমার পিঠে এসে লাগে। খালেদার বিলাশবহুল বাড়ির সিগনেচার এরশাদ করলেও তা আমাকেই যোগান দিতে হয়, শেখ বংশের নিরাপত্তার ব্যয়ও আমার ঘামের বিনিময়েই অর্জিত হয়।
'দুই সন্তান থাকলেই স্কুল-কলেজ ফ্রি' নীতিতে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে আমার তেমন আপত্তি নেই, তবে বর্তমান অবস্থায় সম্মতিও নেই। বেশি সন্তান গ্রহণের কারণসমূহ আগে দূর করে তারপর যদি এরকম কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয়া হয়, খুব ভালো কথা। কিন্তু আমি ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ঘন্টায় ২০ টাকা পেয়ে সংসার চালাতে নোতুন হাতের জন্য সন্তান নিতে বাধ্য হলে, তার জন্য আমার উপার্জন থেকে বাড়তি ট্যাক্স দিতে রাজি না। উচ্চ পারিশ্রমিক হারের কাজ করা কোনো পেশার লোক দুই সন্তান নিয়ে তারপর আবার এসব সুবিধা পেলে আমি নিশ্চয়ই আপত্তি করবো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
'রাষ্ট্র থেকে 'অধিকার' পাওয়ার আশা করা উচিত, করুণা নয়।'
ধন্যবাদ বলাই। আপনার এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
আমার বক্তব্য ঠিকই বুঝতে পেরেছেন।
অবশ্য ইতিমধ্যেই পরবর্তী আলোচনায়, আমার আইডিয়াটার অনুপযুক্ততা যথেষ্ট বিশদে আলোচিত হয়েছে। (এতে অখুশি হই নাই মোটেও)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
চীন পেরেছে। বলা ভালো, তারা এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। আমাদেরও সময় চলে যাচ্ছে দ্রুত।
হাসিব,
আপনি কী প্রস্তাব করতে চান তবে, জনসংখ্যা বাড়তেই থাকবে? ২০ কোটির মানুষের বাংলাদেশ আর তিন কোটি মানুষোর ঢাকার কথা কল্পনা করুন তো একবার!
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
আর্গুমেন্টের পদ্ধতি হিসেবে এটা খুব ভালো পদ্ধতি না ।
আমি এই পোস্ট + মন্তব্যগুলোতে কিছু সমস্যা দেখেছি এবং সেটা আমি বলেছি । আপনাদের প্রস্তাবনাগুলোর সমালোচনা করা মানে এই না যে আমি চাই বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়তেই থাকবে । দয়া করে আমার ওপর কিছু আরোপ না করলে ভালো হয় ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আইন করে সন্তানের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অসম্ভব।
ইনকামের সাথে সন্তান সংখ্যার নির্ভরশীলতাও আদতে একটি বাজে আইডিয়া। কারণ, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ভারসাম্যের দিকে ধাবিত হয়। টাকাওয়ালা বাপের অধিক সন্তান মানে তাদের ভাগ্য নিশ্চিত, তা নয়। আর দেশের সামগ্রিক সম্পদের পরিমাণে হেরফের না হওয়ায় তেমন কোনো লাভ হবে না, মাঝখানে দুই নাম্বারী করে টাকা উপার্জনের প্রবণতা আরো বাড়বে। এবং অতি অবশ্যই একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রে 'টাকা নাই বলে সন্তানও নাই' নীতি আরোপের অধিকার কারো নেই। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মিনিমাম দায়িত্ব।
তাহলে সমাধান কি হতে পারে? অবশ্যই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে, শিক্ষিত করে তুলতে হবে। কিন্তু সচেতনতা এলেই কি পেটের খাবার জুটবে? না। আর যেখানে অধিক সন্তান নেয়ার একটা কারণ হিসেবে অধিক উপার্জনক্ষম হাতের হিসেব আসে, সেখানে সমস্যাটাকে সমাধান করতে হবে আর্থিক বিচারে।
উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশের একটা বড়ো সমস্যা শ্রমের মূল্যমানে বিরাট বৈষম্য। দেশের চাউলের দাম বাড়লে হাহাকার করতে হয় কেনো? কারণ, যে কৃষক ফসল ফলায়, তার কাছেই তার খাদ্য আসে মাঝখানের কিছু হাত ঘুরে। যে দামে তার উৎপাদিত পণ্য সে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করে, অন্য একটি পণ্য তাদের কাছ থেকে কিনতে গেলেই তাকে অধিক দাম দিতে হয়। শর্টকাটে লাভের গুড়টা যায় ওই ফড়িয়াদের পকেটে।
একজন ডাক্তার ১০ মিনিটে রোগী দেখে ৪০০ টাকা পেলে একজন রিক্সাওয়ালা বা একজন নরসুন্দর এক ঘন্টা কাজ করে ২০ টাকা পাবেন কেনো? শ্রমবাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না; থাকলেও এই বৈষম্যগুলো যতোদিন বজায় থাকবে, ততোদিন গরীব পেশার লোকেরা সারাদিন খেটেও গরীবই থেকে যাবে, সামান্য ভাত-নুনের জন্যই তাদেরকে হাতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। লাগামহীন দুর্ণীতি করে হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার উদাহরণ শিক্ষিত লোকদেরকেও হতাশ করে, অল্পশিক্ষিত মানুষেরা যদি এরকম দুইনাম্বারী দেখে অনুৎপাদনশীল শর্টকাট খোঁজে, তাহলেও তারা কোনো কাজে আসে না। যেমন, পেশা হিসেবে চুরি, ছিনতাই, ঘুষ, পকেটমারা, চাঁদাবাজি এগুলোর দ্বারা উপার্জিত অর্থ সাধারণত প্রোডাকশনে ব্যয় হয় না বা যে ব্যক্তি তা 'উপার্জন' করে, তা এমন কোনো শ্রম খাতে অন্তর্ভূক্ত নয়, যাতে অন্যের উপকার (প্রোডাক্ট) হয়।
কালো টাকার কারণে টাকার মূল্যমান কমে, সৎভাবে বা পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থে তখন পরিবার সামলানো কঠিন হয়, তখন বাড়তি উপার্জনক্ষম হাতের প্রয়োজন হয়, জনসংখ্যা বাড়ে। দেশের সব লোকই যেহেতু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না বা রাজনৈতিক বা অন্যান্য প্রভাবে দুই নাম্বারী করতে পারবে না, ঘুষ খেতে পারবে না, সেহেতু একটা সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র শ্রেণী থেকেই যাবে, যদি তাদের পেশার উপার্জন অন্যান্য পেশার সাথে তুল্য না হয়।
বাংলাদেশে সম্পদের অপ্রতুলতাকে কোনো সমাধানের বাধা হিসেবে দেখানোর আগে যে সম্পদ আছে, তা সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে আলোকপাত প্রয়োজন। জাতীয় বাজেটের টাকার কতোভাগ পাবলিকের জন্য আর কতোভাগ মন্ত্রীদের পকেটের জন্য, সে হিসাব সামনে আসা দরকার। কালোটাকা সাদা করার আইনটি বাতিল করা দরকার। ৪০০ সুটকেস নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য বিহারে যাওয়া আইন করে বন্ধ করা দরকার। মোবাইল ফোনের ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা দরকার। সামরিক খাতে অর্থ ব্যয় ব্যাপকভাবে কমানো দরকার। মন্ত্রীসভার সাইজ ছোট করা দরকার।
আগে টাকার সাশ্রয়, সেই টাকা জনকল্যাণমূলক খাতে (যেমন শিক্ষা) বিনিয়োগ, তারপরে জনসংখ্যা সমস্যা আপনাতেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মোবাইল ফোন বিষয়টা ছাড়া বাকিটা ঠিকাছে । ভোগ জিনিসটা মানি সার্কুলেশন বাড়ায় যেটা সরাসরি উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত । অতএব ভোগ (কনসাম্পশন) কমানো মানে এক অর্থে উৎপাদন কমানো ।
জনসংখ্যা সমস্যার মূল বিষয়টা অর্থনৈতিক । অতএব অর্থনৈতিকভাবেই বিষয়টার সমাধান বের করতে হবে । কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প আয়ের মাধ্যম বের করতে হবে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এখানে আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এসেছে, যেখানে সিংহভাগ টকটাইমই অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যবহৃত হয়। আর এই ফোনবিলের সিংহভাগই কোনো উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হয় না, হয় বিদেশে পাচার হয়, নাহয় কিছুসংখ্যক মানুষের বিলাসে ব্যয় হয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সহজ করে বললে একটা ফোনকল মানে হলো একটা কোম্পানির একটা আয় । সেই আয়টা ডিস্ট্রিবিউট হয় । কিছুটা যায় বাইরে, কিছুটা থাকে দেশে । দেশে থাকা অংশটা আবার অন্য কেউ পায় (বেতন অবকাঠামো বাবদ) । এভাবে টাকাটা ঘুরতে থাকে ইকোনমিতে । এই টাকা পয়সা ঘোরাঘুরির বিষয়টারে বলে মানি ভেলোসিটি । মানি ভেলোসিটি যত বাড়বে জিডিপি তত বেশী হবে । এটা খুব সোজা হিসাব আর এটা অর্থনীতির খুব বেসিক তত্ত্বগুলোর একটা । এই অনুযায়ী কল যত বেশী তত বেশী লাভ । যেই টাকাটা সে বিল বাবদ পে করে সেটাই ঘুরে ঘুরে তার কাছে আসার সম্ভাবনাও থাকে । একই ভাবে বিলাস দ্রব্য কেনাটাও জাস্টিফায়েড । আমি যথাযথ ট্যাক্স দিয়া দোকান থেকে এক কোটি টাকা দিয়ে একটা গাড়ি কিনলাম । এই টাকাটা পে করাতে যার কাছ থিকা গাড়ি কিনলাম তার একটা মার্জিন থাকলো । সে এইটা রিইনভেস্ট করতে পারবে । তার ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংস্থান করতে পারবে । তার দারোয়ানের বেতন ২০০ টাকা বাড়াতে পারবে । আবার ঐ কোটি টাকার গাড়ি নষ্ট হবে । সেটার পার্টস কিনতে যে টাকা ব্যয় হবে সেটাও ওরকমভাবে ইকোনমিতে ডিস্ট্রিবিউট হবে । এইভাবে দেখলে বিলাস দ্রব্য কেনাবেচাটাও দরকার আছে । জার্মানিতে দেখেন গাড়ি ডাম্প কৈরা নতুন গাড়ি কেনার জন্য ভুর্তিকি দিতেছে । মাইনষের হাতে ট্যাকা নাই, লুগ্জন চাকরি হারাইতেছে সমানে - তাও সরকার পাবলিকরে গাড়ি কিনতে ইনসেন্টিভ দিতেছে কেন ? দেয়ার কারন হৈলো এই টাকাটা কোম্পানির পকেটে যাবে আর সেখান থিকা অন্য জায়গায় গিয়া মানি ভেলোসিটি বাড়াবে যেইটাতে আল্টিমেটলি ইকোনমির চাকা সচল হবে । বুঝাইতে পারলাম ?
আর উৎপাদন মানেই যে জিনিসপাতি বানানো সেটাও না । সার্ভিস সেক্টরও একটা গুরুত্বপূর্ন খাত যেটা দেশের মোট প্রডাকশনের একটা বিশাল অংশ ।
× ট্রিভিয়া - জার্মানির টোটাল প্রডাকশনে আমি যদ্দুর জানি সার্ভিস সেক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর থেকে বড় ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমার মনে হয়, এখানে একটু ফাঁক আছে। আমদানী নির্ভর অর্থনীতির জন্য ভোগ ক্ষতিকরই হওয়ার কথা। যে গাড়িটা আমি ব্যবহার করি, তা বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না, জাপান থেকে আমদানী করা। সুতরাং বেশি করে গাড়ি কিনলে গাড়ির ডিলার কিছুটা লাভবান হবে, সে হয়তো কিছু নোতুন কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারবে, কর্মচারীদের বেতনও বাড়াতে পারবে; কিন্তু এটা অত্যন্ত সীমিতি স্কেলে। অন্যদিকে লার্জস্কেলে লাভবান হবে জাপানী গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানীটি, ওখানে কর্মসংস্থান হবে জাপানীদের, বাংলাদেশীদের না। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে হলে আমি গাড়িটি কি কাজে ব্যবহার করছি, সেটা সেবা হোক, কৃষি হোক, শিল্প হোক, তা থেকে রিটার্ন কেমন পাচ্ছি, তা বিবেচনার বিষয়। নাহলে আমার পকেট থেকে যে টাকাটা খরচ হলো, তার হয়তো ১০% বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই রইলো (ডিলার প্লাস তার কর্মচারী), বাকি ৯০% জাপানের। মোবাইল কোম্পানীর ক্ষেত্রেও একই কথা। বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের বাইরে যে টাকাটা বিদেশে চলে যাচ্ছে, মোবাইল সার্ভিস ব্যবহার করে আমি যদি তার অন্তত সমপরিমাণ লাভবান না হই (অর্থনৈতিকভাবে), তাহলে সেটা লসের খাতায়।
জার্মানির গাড়ি কেনার উৎসাহকেও একইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এখানে পার্থক্য হলো, তারা নিজেরাই গাড়ি উৎপাদন করে। নিজেরা ভোগের বাইরে তারা রপ্তানিও করে। রপ্তানি সাময়িক কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো যাতে ফল না করে, সেজন্য অভ্যন্তরীণ কনজাম্পশন বাড়িয়ে হলেও কোম্পানিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। এতে বর্তমানে দেশের টাকা দেশেই থাকবে প্লাস ভবিষ্যতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গাড়ি রপ্তানির হার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে। কোনোবিচারেই লাভ ছাড়া লস নাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ক্যাপিটাল ফ্লাইট একটা সমস্যার ঘটনা সত্য । তবে সেটা বাইরের থেকে যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে তাদের জন্য ইনসেন্টিভও বটে । আর মোবাইল কোম্পানি অর্থনীতির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ন সেটা এতো সহজে ক্যালকুলেট করা যাবে না । তাদের একটা উইথড্রয়াল আছে । আবার তাদের কন্ট্রিবিউশনও আছে । বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানিকে কেন্দ্র করে এবং এদের সার্ভিস ব্যবহার করে যে বিশাল একটা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চলে তার তুলনায় আউটফ্লোটা অনেক কম মনে হয় ।
এইখানে বলতে পারেন আউটফ্লো মিনিমাইজ করা উচিত । তবে সেটার সুযোগ সীমিত । কারন বাংলাদেশে এতো বড় পুঁজি কনসোর্টিয়াম বানানো কঠিন । তারপর যন্ত্রপাতির বিষয়টা আছে যেটা বাংলাদেশ বানাতে পারবে না । এই সমস্ত সমস্যা মাথায় নিলে দরজা খুলে দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না । বাংলাদেশ যে একটা ব্যবসা করার জায়গা এইটা এস্টাবলিশ করা দরকার । পাশের দেশ ইন্ডিয়ার কারনে এইটা খুব বড় রকমের প্রতিযোগিতায় পড়ে । সেটা কাটাতে মনে হয় একটু বেশিই সুবিধা বিদেশী কোম্পানিগুলোরে দেয়া লাগে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমি সরাসরি আপনাদের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিতে পারছি না, কারণ আমি 'অতিথি সচল'। আমি সরাসরি কমেন্ট করতে পরিনা। কমেন্ট সচলায়তনে আসতে আসতে উপযোগিতা হারিয়ে যায়। 'সচল' হিসেবে ছাড়পত্র পেলে আপনাদের সঙ্গে তুমুল বাহাস করা যাবে। সে দিনের প্রতীক্ষায় রইলাম।
'জনসংখ্যা বিতর্ক'-তে অংশ নওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
এই পোস্টের আলোচনা খুবই ভাল লাগলো। ফলে লেখাটিকে পাঁচ দিলাম।
ধন্যবাদ সিরাত।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
এই অংশটুকু পর্যন্ত পড়ার পর আর পড়লাম না।
উন্নয়ন ধারণায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপর যে আস্থা রাখা হয় ফি.জা.চৌধুরী কোনো সন্দেহ ছাড়াই তাতে পূর্ণ আস্থা রেখে তাদের মতবাদের ধারাতেই অস্বাভাবিক পরামর্শ দিয়েছেন এখানে।
সচলে আরো বেশি ক্রিটিক্যালি এ্যানালাইজড লেখা পড়তে চাই।
ঢালাও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অনেক নেতিবাচক দিকও আছে। একটা বলি। আমাদের দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সবচে খারাপ দিকের একটি হচ্ছে শিক্ষিত ও ধনবান মানুষ সন্তান কম নেয়। অন্যদিকে গরীবেরা যথারীতি সন্তান উৎপাদনের হারে থাকে এগিয়ে। এতে যারা স্বচ্ছল তারা বেশি সন্তান প্রতিপালন করতে পারতেন কিন্তু তারা সন্তান কম নিচ্ছেন। অন্যদিকে অস্বচ্ছলভাবে কম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সন্তানের সংখ্যা যাচ্ছে বেড়ে।
যেহেতু আমাদের দেশে সম্পদ বন্টন পারিবারিকভাবেই হচ্ছে সেহেতু ধনীর সন্তানেরা অনেক ধনী হয়ে জন্মাচ্ছে।
সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোন আয়ের মানুষের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি তাও বিবেচনায় আনতে হবে। সেসব সন্তানেরা কি দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করছে না উপরে তাও দেখতে হবে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে স্বচ্ছল। সেই বিষয়টা বিবেচনায় রেখে দেখতে হবে ঐ অধিক জন্মহার সামগ্রিকভাবে দেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে কিনা।
ঢালাওভাবে কোনো পদ্ধতি চাপিয়ে দেয়া কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ধন্যবাদ শোহেইল।
আপনার চিন্তাটা বিবেচনার দাবি রাখে।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
নতুন মন্তব্য করুন