যুক্তি - পর্ব ১

টিউলিপ এর ছবি
লিখেছেন টিউলিপ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৩/০৩/২০১১ - ৯:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মূল - আইজাক আজিমভ

এক্সপেরিমেন্টাল রোবট টেস্টার - নামটা গালভারি আর শুনতে কাজটা অনেক আকর্ষণীয় হলেও আদতে ব্যাপারটা তা নয়। দিনের পর দিন তোমাকে কাজ করতে হবে একটা পজিট্রনিক ব্রেন নিয়ে, ‘মহাজ্ঞানী’ তাত্ত্বিক আর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের ভাষ্যমতে যারা এই এই কাজ করতে পারে, কিন্তু সমস্যাটা হলো রোবটগুলো কখনোই সেই বাঁধাধরা কাজগুলো করে না। এই স্পেস স্টেশনে আসার দুই সপ্তাহের মাথায় পাওয়েল আর ডনোভান সেটা বুঝে ফেললো।

গ্রেগরি পাওয়েল ভ্রু কুঁচকে নিজের গোঁফে চাড়া দিতে দিতে গম্ভীরভাবে বললো, “এক সপ্তাহ আগে আমি আর ডনোভান তোমাকে জোড়া দিয়ে তৈরি করেছি।”

মাটির অনেক নিচে শক্তিশালী বীম নিয়ন্ত্রকের মৃদু গর্জন ছাড়া পাঁচ নম্বর সোলার স্টেশনের অফিসারদের ঘরটা পুরোপুরি চুপচাপ।

পাওয়েলের কথা রোবট কিউ টি এক-এর উপর কোন প্রভাব ফেললো বলে মনে হলো না। সে আগের মতই স্থির বসে। লাক্সাইটের উজ্জ্বল আলোয় তার মসৃণ ধাতব শরীর চকচক করছে। লাল ফটোইলেক্ট্রিক সেলের চোখ স্থিরনিবদ্ধ টেবিলের উল্টোদিকে বসা মানুষটার উপরে।

পাওয়েল অনেক কষ্টে মাথায় উঠে যাওয়া রাগটা নিয়ন্ত্রণ করলো। এই রোবটগুলো একেকটা চিজ বটে। সত্যি কথা, সব রোবটই রোবটিক্সের মূল তিনটা সূত্র মেনে চলে। সুতরাং কিউ টি এক পুরোপুরিই নিরাপদ। কিন্তু এটাও সত্যি যে এই জাতের প্রথম রোবট এটা। সুতরাং গাণিতিক সমীকরণগুলো কাগজে যাই বলুক, বাস্তবে শতভাগ নিরাপত্তবোধ এনে দিতে পারে না।

অবশেষে কিউ টি এক মুখ খুললো। ধাতব কণ্ঠে বললো, “আশা করি আপনি আপনার কথার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন, পাওয়েল?”

পাওয়েল নাছোড়বান্দার মত বললো, “কেউ তো তোমাকে তৈরি করেছে, তাই না? তুমি নিজেই বলছো এক সপ্তাহ আগের কোন স্মৃতিই তোমার নেই, অথচ তার পর থেকে তোমার সব মনে আছে। আমরা তোমাকে ব্যাখ্যাটা দিচ্ছি। এক সপ্তাহ আগে স্পেসশিপে আসা পার্টগুলো জোড়া লাগিয়ে আমি আর ডনোভান তোমাকে তৈরি করেছি।”

কিউ টি নিজের ধাতব আঙ্গুলগুলোর দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত রহস্যময় গলায় বললো, “এর চেয়ে ভালো কোন ব্যাখ্যা থাকা উচিত। আপনার এই ব্যাখ্যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না।”

পাওয়েল নিজেকে সামলাতে না পেরে হেসে ফেললো, “জানতে পারি কি, কেন?”

“এখনো ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে যাই হোক, যুক্তি দিয়ে আমি ঠিকই বের করে ফেলবো।যুক্তির শৃংখলই কেবল আমাদের সত্যের কাছে নিয়ে যেতে পারে।”

পাওয়েলের হঠাৎ এই অদ্ভুত রোবটটার জন্য সমবেদনা হলো। এটা অন্য রোবটগুলোর মত একটা বিশেষ কাজে তো পারদর্শী না। উঠে দাঁড়িয়ে সে রোবটটার ঠান্ডা ধাতব কাঁধে হাত রেখে বললো, “কিউ টি, তুমিই প্রথম রোবট যে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করতে সক্ষম। তোমাকে তাই আমি বুঝিয়ে বলছি। আমার সাথে এস।”

পাওয়েল রোবটটাকে নিয়ে গেলো দেয়ালের কাছে। একটা বোতাম টিপতেই দেয়ালের একটা অংশের গায়ে ফুটে উঠলো বাইরের তারাখচিত মহাকাশের ছবি।

কিউ টি বললো, “ইঞ্জিনরুমের অবজার্ভেশন পোর্ট দিয়ে আমি এসব দেখেছি।”

“তোমার কাছে কি মনে হয়, এটা কি?”

“দেখে যা মনে হয়। কাচের বাইরে একটা কালো পর্দা, যাতে ঝলমলে কিছু বিন্দু বসানো আছে। আমি জানি আমাদের বীম নিয়ন্ত্রক এগুলোর মাঝে কতগুলো বিন্দুর দিকে বীম তাক করে রাখে, সবসময় একই বিন্দুর দিকে, আর বিন্দুগুলো সরে গেলে বীমও সরে যায়। আর কি?”

“খুব ভালো। এবার শোনো, এই কালো পর্দা আসলে মহাশূন্য, অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত। ছোট বিন্দুগুলো আসলে বিশাল বিশাল তারা, বিশাল শক্তিসমৃদ্ধ গোলক। একেকটার ব্যাস কয়েক মিলিয়ন মেইল পর্যন্ত হতে পারে। তুলনায় আমাদের এই স্টেশনের ব্যাস মাত্র এক মাইল। তারাগুলো অনেক দূরে বলে এত ছোট দেখায়।

যে বিন্দুগুলোর দিকে আমাদের এনার্জি বীম তাক করা, সেগুলো তুলনায় অনেক ছোট। সেগুলোর পৃষ্ঠদেশ ঠান্ডা আর শক্ত, যেখানে আমাদের মত আরো মানুষ বাস করে। এগুলোর মধ্যে একটা বিন্দু থেকে আমি আর ডনোভান এসেছি। আমাদের বীমগুলো বড় জ্বলন্ত বিন্দুগুলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে ছোট বিন্দুগুলোয় সরবরাহ করে। এই স্টেশনটা বড় বিন্দুগুলোর একটার কাছে অবস্থিত, যেটাকে আমরা সূর্য বলি। সূর্য এই স্টেশনের উল্টোদিকে বলে তুমি সেটা দেখতে পাচ্ছো না।”

“এগুলোর মাঝে কোন বিন্দু থেকে আপনারা এসেছেন আপনি বলতে চান?”

“এই তো, নিচের কোনায় এই উজ্জ্বল বিন্দুটা। এটাকে আমরা বলি পৃথিবী।” পাওয়েল দাঁত বের করে হাসলো। “আরো তিন বিলিয়ন মানুষ আছে সেখানে, আর দুই সপ্তাহ পরে আমরা সেখানে ফিরে যাবো।”

কিউ টি গুনগুন করার মত অদ্ভুত একটা শব্দ করে আবার থেমে গেল, “কিন্তু এটা তো আমার অস্তিত্বের ব্যাখ্যা হলো না।”


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং! বাকিটুকু শিঘ্রী চাই।

টিউলিপ এর ছবি

গল্পের প্রায় অর্ধেকটা লেখা হয়ে আছে, আজকে আপনার ঝাড় খেয়ে তার এক-তৃতীয়াংশ তুলে দিলাম। এটা প্রথম পাতা থেকে সরলেই দেব।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

সজল এর ছবি

আগ্রহ জাগলো। বাকিটা তাড়াতাড়ি দেন।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

টিউলিপ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
গুরুর গল্প আগ্রহ জাগাবে না?

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

অপছন্দনীয় এর ছবি

মুশকিল, রোবোটসুদ্ধ অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলে আমাদের মহাজ্ঞানী নায়েক সাহেব এবং তার জ্ঞানবৃদ্ধ ভক্তকুল, তার উপর এই ভদ্রলোকের কি হবে?

টিউলিপ এর ছবি

পড়তে থাকুন, আপনার এই প্রশ্নের জবাব শেষ পর্বেই পাবেন, প্রমিজ হাসি

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
- আয়নামতি

টিউলিপ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

রানা মেহের এর ছবি

এতো ছোট্ট করে লিখলে হয়?
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দিন

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

টিউলিপ এর ছবি

কি করবো আপু, এটা যত বড় গল্প, পুরোটা একবারে দিলে দিংমূঢ় হয়ে যেত যে!

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শেষ হইলে একবারে পড়ুম... তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দেন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

টিউলিপ এর ছবি

আসিতেছে...

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

ফাহিম হাসান এর ছবি

তাড়াতাড়ি পরের পর্ব চাই।

টিউলিপ এর ছবি

আসিতেছে...

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

মনে হলেআ, জাফর ইকবালের কোন গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা খাইছে

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

টিউলিপ এর ছবি

খাইছে
না রে ভাই, এইটা গুরুর লেখা, অনেক আগের।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

বইখাতা এর ছবি

চলুকচলুক ফাউন্ডেশন সিরিজের সবগুলি এখনও কেমনে জানি পড়া হয় নাই, এই দুঃখে আমার...। পরের পর্ব দিয়ে দেন তাড়াতাড়ি।

টিউলিপ এর ছবি

আমি গত সেমেস্টারে রোবট সিরিজ শেষ করলাম, তখন এইটা মনে ধরেছিল। ফাউন্ডেশন সিরিজ শেষ অনেক আগেই। এরপর এম্পায়ার সিরিজ... ইয়ামি।

পরের পর্ব দিয়ে দিয়েছি।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভালো লাগল অস্তিবাদী রোবটের গল্প।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

টিউলিপ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।