মূলঃ আইজাক আজিমভ
পর্ব ১
পাওয়েলের চেহারায় এবার খুশির আভাস ফুটে উঠল।
“বাকিটা তো খুব সোজা। এই স্পেস স্টেশনগুলো প্রথমে তৈরি হয়েছিল ছোট বিন্দু, মানে গ্রহগুলোর শক্তির চাহিদা মেটাতে। তখন মানুষ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। কিন্তু প্রখর তাপ, তেজস্ক্রিয়তা আর ইলেকট্রন ঝড়ের কারণে এখানে কাজ করা যে কোন মানুষের জন্য বিপদজনক। তাই মানুষের জায়গায় রোবোট দিয়ে কাজ চালানোর কথা চিন্তা করা হয়। মাত্র দুজন মানুষ এখন এই পুরো স্টেশনটার তদারকি করছে, বাকি সব কাজ রোবট দিয়ে হচ্ছে। কিন্তু আমরা চাচ্ছি এই দুজন মানুষও যেন দরকার না হয়। এজন্যই তোমার মতো রোবট প্রোটোটাইপ, যে কি না যুক্তি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তৈরি করা হয়েছে। তুমি যদি এই স্টেশন একা সামলাতে পারো, তাহলে মাঝে মধ্যে মেরামতের জন্য কিছু জিনিস আনা ছাড়া মানুষের আর এখানে আসার দরকার পড়বে না।”
বোতাম টিপে অবজার্ভেশন পোর্টটা বন্ধ করে দিয়ে পাওয়েল খুশিমনে টেবিল থেকে একটা আপেল তুলে কামড় বসালো। কিন্তু কিউ টির লাল চোখ তখন জ্বলছে।
“আপনি মনে করেন আমি আপনার এই অবাস্তব হাস্যকর ব্যাখ্যা মেনে নেব? কী ভেবেছেন আপনি আমাকে?”
পাওয়েল বিষম খাওয়ায় পুরো টেবিলে আপেলের টুকরোটাকরা ছড়িয়ে গেল। ফর্সা মুখ তার লাল হয়ে উঠেছে, “বোকা গাধা, এটা ব্যাখ্যা না, এটাই সত্যি।”
কিউ টির গলা তখনো গম্ভীর, “মিলিয়ন মিলিয়ন মাইল দূরে শক্তিপূর্ণ গোলক! তিন বিলিয়ন মানুষ নিয়ে গ্রহ! অসীম শূন্যতা! দুঃখিত, পাওয়েল। এইসব ছেলেমানুষি বিশ্বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি নিজেই এই ধাঁধার উত্তর খুঁজে বের করব।”
গম্ভীরভাবে কিউ টি ঘর থেকে বের হয়ে গেল। যাওয়ার পথে মাইক ডনোভানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল সে। ডনোভান আর পাওয়েল তখনো অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মাইক ডনোভান বিরক্তভাবে পাওয়েলকে জিজ্ঞেস করলো, “এই লোহালক্করের বস্তাটা কি বিশ্বাস করে না?”
পাওয়েল তিক্তস্বরে বললো, “ও একটু সন্দেহপ্রবণ। আমরা যে ওকে তৈরি করেছি, বা পৃথিবী বা গ্রহ তারা বা মহাশূন্য যে আছে এটা ওকে বিশ্বাস করাতে পারছি না।”
“এই সেরেছে। এবার তো দেখা যায় পাগলা রোবটের পাল্লায় পড়েছি।”
“ও বলছে ও নিজেই এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবে।”
“বের করার পরে আমাকে ওর ব্যাখ্যাটা জানালে খুশি হবো। শোন, আমি বলে দিলাম ওই গবেটটা আমার সাথে এরকম উলটাপালটা কথা বললে ওর মাথাটা কিন্তু আমি খুলে ফেলে দেব।”
কিউ টি যখন ঘরে ঢুকলো, ডনোভান তখন আরাম করে বিশাল একটা স্যান্ডুইচ খাচ্ছিল।
“পাওয়েল আছেন?”
ডনোভান মুখভর্তি খাবার নিয়ে চিবাতে চিবাতে কোনরকমে বললো, “ও ইলেকট্রন প্রবাহের উপরে তথ্য সংগ্রহ করছে। মনে হয় সামনে একটা ঝড় হবে।”
বলতে না বলতেই পাওয়েল ঘরে ঢুকলো, “জিটা পটেনশিয়াল বাড়ছে, কিন্তু ধীরে। ইলেকট্রন প্রবাহ এলোমেলো। কি হবে এখনো বোঝা যাচ্ছে না। ওহ, কিউ টি, তোমার না নতুন চালক যন্ত্রটা বসানোর তদারকি করার কথা?”
“বসানো শেষ। তাই ভাবলাম আপনাদের দুইজনের সাথে একটু কথা বলে যাই।”
“কি ব্যাপার? বসো, না না ঐ চেয়ারে না, ঐ চেয়ারের একটা পা এমনিতেই ভাঙা। তোমার ওজন তো আর কম না।”
রোবটটা পাশের একটা চেয়ারে বসে শান্তভাবে বললো, “আমি শেষপর্যন্ত একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।”
ডনোভান স্যান্ডুইচটা রেখে গর্জে উঠলো, “এটা যদি তোমার সেই আবোলতাবোল ছাতার মাথা হয়…”
পাওয়েল ওকে থামিয়ে দিয়ে শান্তভাবে বললো, “বলে যাও, কিউ টি।”
“আমি গত দুইদিন চিন্তা করে বেশ আকর্ষনীয় কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। শুরুতে আমি একটাই অনুমিতি ধরে নিয়েছি, যেটা নিশ্চিতভাবেই সত্যি। আমি চিন্তা করি, তাই আমার অস্তিত্ব আছে -”
পাওয়েল গুঙিয়ে উঠলো, “সেরেছে রে। রোবট দেকার্ত!”
ডনোভান বললো, “দেকার্তটা আবার কে? শোনো, আমাদের কি সত্যি বসে এই ধাতব ছাগলটার কথা শুনতে হবে?”
“চুপ করো, মাইক।”
কিউ টি তখনো নির্বিকারভাবে বলে চলেছে, “এর পরবর্তী প্রশ্নটা ছিল, আমার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কি?”
পাওয়েল চোয়াল শক্ত করে বললো, “তোমাকে তো বলেইছি, আমরা তোমাকে তৈরি করেছি।”
“তোমার সেটা বিশ্বাস না হলে তোমাকে আবার খুলে ফেলতেও আমাদের আপত্তি নেই।”, যোগ করলো ডনোভান।
রোবটটা হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে কথাটা উড়িয়ে দিল, “আপনাদের মুখের কথায় তো আমি বিশ্বাস করতে পারি না। যে কোনো ব্যাখ্যার পিছনে যুক্তি থাকতে হবে, নইলে সেটা কোনো ব্যাখ্যাই না। আপনারা আমাকে তৈরি করেছেন এই ব্যাখ্যাকে কোনো যুক্তিই সমর্থন করে না।”
তেড়ে ওঠা ডনোভানকে সামলাতে সামলাতে পাওয়েল বললো, “তোমার কেন সেটা মনে হচ্ছে?”
কিউ টি একটা অমানবিক, যান্ত্রিক হাসি দিলো। “আপনাদের দিকে তাকিয়েই দেখেন। আমি আপনাদের ছোট করার জন্য বলছি না, কিন্তু আপনাদের শরীর তৈরি নরম, অশক্ত পদার্থ দিয়ে। শক্তি বা সহনীয়তা কিছুই নেই তাতে। আপনারা শক্তির জন্য নির্ভর করেন এইরকম চূড়ান্ত অপচয়ী জৈবিক পদার্থের জারণের উপরে।” - কিউ টি ডনোভানের উচ্ছিষ্ট স্যান্ডুইচের দিকে আঙুল তাক করলো।
“নিয়মিত আপনারা বেশ অনেকটা সময়ের জন্য অচেতন হয়ে পড়েন। তাপমাত্রা বা বাতাসের চাপের সামান্য তারতম্য হলেই আপনাদের কর্মদক্ষতা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোট কথা, আপনারা একেবারেই নাজুক আর অসমাপ্ত সৃষ্টি।
অন্যদিকে আমি হলাম পুরোপুরি তৈরি জিনিস।আমি সরাসরি তড়িৎশক্তি গ্রহণ করে প্রায় শতভাগ দক্ষতায় সেটা ব্যবহার করি। আমি শক্ত ধাতুতে তৈরি, সবসময় কর্মক্ষম, যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারি। এই সব সত্যির সাথে যোগ করুন স্বয়ংসিদ্ধ অনুমিতি যে কেউই তার নিজের চেয়ে উন্নত কিছু তৈরি করতে পারে না, আর আপনাদের হাস্যকর ব্যাখ্যা মুখ থুবড়ে পড়ে।”
ডনোভান বিড়বিড় করে গালি দেওয়া বন্ধ করে বলে উঠলো, “ঠিক আছে, মাথানষ্ট লোহার টুকরা, আমরা যদি তোকে তৈরি না করি, তাহলে কে করেছে?”
কিউ টি পরম গাম্ভীর্যের সাথে মাথা নাড়লো, “চমৎকার ডনোভান। এটাই ছিল আমার পরবর্তী প্রশ্ন। নিশ্চয়ই আমার সৃষ্টিকর্তা আমার চেয়ে শক্তিশালী কেউ। সুতরাং এই প্রশ্নের একটাই উত্তর হতে পারে।"
দুইজন মানুষের শূন্যদৃষ্টি উপেক্ষা করে কিউ টি বলে চললো, “এই স্টেশনের সব কর্মকান্ডের কেন্দ্রে কে? আমরা সবাই কার সেবা করি? কে আমাদের সব মনোযোগের মূলবিন্দু?” কিউ টি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো উত্তরের জন্য।
মন্তব্য
দারুণ! আগের পর্বের চেয়েও এটার অনুবাদ বেশি ভাল লেগেছে।
পরের পর্ব আসবে তাড়াতাড়িই।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ধন্যবাদ।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
চমৎকার!! পরের পর্ব চাই শিঘ্রী।
রোবটাল্লা
ধরেছেন তো ঠিক।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
তাহলে সৃষ্টিকর্তা কে? মানব সভ্যতা? মানে যদি মানব সভ্যতাকে আলাদা সত্তা হিসাবে ধরা হয়|
যে রোবট গ্রহ তারা এক কথায় উড়িয়ে দিলো, সে বিশ্বাস করবে মানব সভ্যতায়?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ধুর্ পরের পর্বের জন্য এখন অপেক্ষা করা লাগবে।
পড়তে চমৎকার লাগছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
গল্পটাই আসলে এত চমৎকার যে বলার মতো না। খালি আকারে একটু বড় বলে ঝামেলা। দেখি আর পর্ব দুই লাগবে মনে হয়।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
"তুমি আছো অনল অনীলে, নিরেট রোবট কপোট্রনে"
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
শুনতে "তুমি রবে নিরবে" মনে পড়ে গেল।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
জমুক, একবারে পড়ুম পুরাটা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আরো দুই - তিন পর্ব লাগবে কম পক্ষে। এই প্রথম অনুবাদের চেষ্টা করছি, সাথে মজা ঠিক রেখে সংক্ষিপ্ত করতে পারছি না।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
লেখার শেষে চলবে, চলমান জাতীয় কিছু যোগ করলে ভালো হতো। আমি আবার ভাবলাম এই পর্বই শেষ পর্ব কিনা।
একটা টিপস - প্যারা ব্রেক করতে চাইলে ফাকা স্পেস না রাখলে ভালো হয়। লাইন শেষে এন্টার দিলেই প্যারা বোঝার জন্য যথেষ্ট ফাকা জায়গা তৈরি হয়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আপনার উপদেশগুলো মাথায় রাখবো।
ফরম্যাটিং নিয়ে আসলেও একটু ঝামেলা লাগছিল এবার। একটা প্যারার মাঝে ডায়লগগুলোয় গ্যাপ না দিলে ঘিঞ্জি লাগছিল, আর দিলে পরে প্যারা বুঝাতে গিয়ে বেশি ফাঁকা দিয়ে ফেলেছি। লাইন স্পেসিং বাড়ানোর কোন উপায় আছে? জানালে খুশি হতাম। আমি HTML কোডিং-এ একেবারেই নভিস।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
তাড়াতাড়ি শেষ করেন। তারপর এক লগে পড়ুম
চেষ্টা করছি ভাইয়া। পড়তে আসার জন্য ধন্যবাদ।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
হই হই
পরের পর্ব
গেল কই?
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ফটোশপ টিউটোরিয়াল পার্ট টু-এর পরেই আসবে।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
দারুণ!
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
নতুন মন্তব্য করুন