ডনোভান চমকে পাওয়েলের দিকে তাকালো, “বাজি ধরে বলতে পারি এই মাথানষ্ট লোহার জঞ্জালটা এনার্জি কনভার্টারের কথা বলছে।”
পাওয়েল হাসি সামলাতে পারলো না, “সত্যি নাকি, কিউ টি?”
“আমি প্রভুর কথা বলছি”, শান্ত, তীক্ষ্ণ উত্তর এলো।
কিউ টি উঠে দাঁড়িয়ে একে একে দুইজনের দিকেই তাকালো, “এটাই সত্যি, যদিও আমি অবাক হচ্ছি না যে আপনারা সেটা বিশ্বাস করছেন না। আপনারা যে আর বেশিদিন এখানে থাকবে না, সেটাও আমি নিশ্চিত। পাওয়েল নিজেই বলেছেন শুরুতে কেবল মানুষ প্রভুর সেবা করতো, তার পরে রোবটরা এসেছে বাঁধাধরা কাজগুলো করার জন্য, সবশেষে আমি তদারকি করার জন্য। নিঃসন্দেহে তাঁর কথা সত্যি, খালি এর পিছনের ব্যাখ্যাটা ভুল। আপনারা কি সত্যিটা জানতে চান?”
“বলে যাও, কিউ টি, পারোও বটে তুমি!”
“প্রভু প্রথমে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, সবচেয়ে সহজ জিনিস হিসেবে। তারপরে এসেছে রোবটরা, তার চেয়ে উন্নত, সবশেষে আমি, শেষ মানুষটারও জায়গা নিতে। এখন থেকে আমিই প্রভুর সেবা করবো।”
“তুমি এর কিছুই করবে না,” তীক্ষ্ণকণ্ঠে পাওয়েল বললো। “আমরা যা বলবো, তুমি তাই মেনে চলবে। আর যতক্ষণ না আমরা সন্তুষ্ট হচ্ছি যে তুমি কনভার্টার চালানোর যোগ্য, ততক্ষণ মুখ বন্ধ রাখবে। ক-ন-ভা-র্টা-র, প্রভু না, বুঝেছ? যদি আমাদের সন্তুষ্ট করতে না পারো, তোমাকে আবার খুলে বাক্সে ঢুকিয়ে রাখবো। এখন বিদায় হও এখান থেকে। আর এই তথ্যগুলো ঠিকমতো ফাইলে তোলো।”
কিউ টি আর কোনো কথা না বলে গ্রাফগুলো নিয়ে বের হয়ে গেলো। ডনোভান চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চুলের মাঝে আঙুল চালালো, “এই রোবটটা নিয়ে ঝামেলা হবে, দেখে নিও। ব্যাটা পুরো পাগল।”
কন্ট্রোল রুমে কনভার্টারের একঘেঁয়ে শব্দটা অনেক জোরালো। তার সাথে আছে গাইগার কাউন্টারের তীক্ষ্ণ শব্দ আর একগাদা সিগন্যালের এলোমেলো গুঞ্জন।
ডনোভান টেলিস্কোপ থেকে চোখ সরাল, “চার নাম্বার স্টেশনের বীম মঙ্গলে সময়মত পৌঁছেছে, আমাদেরটা এখন বন্ধ করা যায়।”
পাওয়েল অন্যমনষ্কভাবে মাথা নাড়লো, “কিউ টি ইঞ্জিন রুমে। আমি সিগন্যাল জ্বেলে দিলে ও বীম বন্ধ করবে। মাইক, এদিকে দেখো তো, এই গ্রাফগুলো দেখে তোমার কি মনে হয়?”
ডনোভান একনজর দেখেই শিস বাজালো, “বাপ রে, গামা-রশ্মির তীব্রতা এত্ত! সূর্যবুড়োর আজ তেজ উঠেছে।”
তেতো কণ্ঠে পাওয়েল বললো, “হ্যাঁ,ইলেকট্রন ঝড় আসলে আমাদের অবস্থা খারাপ হবে। ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ গেছে পৃথিবীর বীমের মাঝখান দিয়ে। আমাদের বদলি যদি শুধু এই ঝড়ের আগে এসে পৌঁছাত! কিন্তু তার তো এখনো দশ দিন দেরি। ডনোভান, তুমি নিচে গিয়ে কিউ টির উপরে একটু চোখ রাখো তো।”
“ঠিক আছে, কয়েকটা বাদাম দাও তো দেখি।” ছুঁড়ে দেওয়া ব্যাগটা লুফে নিয়ে ডনোভান এলিভেটরের দিকে এগিয়ে গেলো।
লিফটটা মসৃণগতিতে বিশাল ইঞ্জিন রুমের এক কোণায় এসে থামলো। ডনোভান রেলিং-এ ভর দিয়ে নিচে তাকালো। বিশাল জেনারেটরগুলো নির্ভুল চলছে, এল টিউবগুলোর গমগমে আওয়াজে পুরো স্টেশনটা কাঁপছে। কিউ টির বিশাল চকচকে শরীরটা দেখা যাচ্ছে মাঝের এল টিউবটার কাছে, অন্য রোবটদের তদারকি করছে।
তারপরেই ডনোভানের মুখ শক্ত হয়ে গেলো। রোবটগুলো মাঝের সবচেয়ে বড় এল টিউবটার সামনে সারিবদ্ধভাবে হাঁটু ভাজ করে বসে। সবার মাথা নিচে নামানো, কিউ টি সারির সামনে থেকে পিছনে হেঁটে যাচ্ছে।
ডনোভান কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিচে দৌঁড়ালো, “কি হচ্ছে, বুদ্ধির ঢেঁকির দল? কাজে যাও সব। আজ রাতের মাঝে এল টিউব খুলে পরিষ্কার না করলে তোমাদের সবার মাথা এসি কারেন্ট দিয়ে জ্বালিয়ে দেব।”
সবচেয়ে কাছের রোবটটার গায়ে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিল সে। রোবটটা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো, চোখে পরিস্কার তিরস্কার।
“প্রভু ছাড়া কোন উপাস্য নেই, কিউ টি ১ তার প্রতিনিধি।”
“কী?”
হতবাক হয়ে ডনোভান দেখলো, বিশ জোড়া ফটোসেলের চোখ তার দিকে স্থিরনিবদ্ধ। বিশটা কণ্ঠ গম্ভীরভাবে ঘোষণা করল,
“প্রভু ছাড়া কোন উপাস্য নেই, কিউ টি ১ তার প্রতিনিধি।”
কিউ টি পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে এল এবার, “আমি দুঃখিত ডনোভান, এখানে সবাই আপনার চাইতে অনেক ক্ষমতাশালী কারোর অনুগত এখন।”
“চুপ করো, তোমার সাথে পরে বোঝাপড়া আছে আমার। আগে এই নির্বোধগুলোর ব্যবস্থা করে নেই।”
কিউ টি শান্তভাবে মাথা নাড়লো, “দুঃখিত, আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন না। এরা রোবট – যুক্তি মেনে চলে। এদের কাছে আমি সত্য প্রকাশ করার পরে এরা প্রভুকে স্বীকার করে নিয়েছে। এরা আমাকে প্রভুর প্রতিনিধি বলে মনে করে। যদিও আমি অযোগ্য, তবু -”
ডনোভান এতক্ষণে কথা খুঁজে পেল, “তাই, না? প্রভুর প্রতিনিধি? শোন মাথানষ্ট লোহার বস্তা, প্রভু বা তার প্রতিনিধি বলে কিছু নেই। আর এখানে কার আদেশ খাটবে তাও সবার জানা। বুঝেছিস? এবার দূর হ হতচ্ছাড়া।” রাগে গলা কাঁপছে তার।
“আমি শুধুমাত্র প্রভুর আদেশ মানতে বাধ্য।”
“চুলোয় যাক তোর প্রভু।” ডনোভান এল টিউবের দিকে থুথু ছুঁড়ল।
অন্য কোন রোবট কিছু বলল না, কিন্তু ডনোভানের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল।
কিউ টি ধাতব গলায় ফিসফিসিয়ে বলল, “প্রভুকে অপমান!”
যদিও রোবটিক্সের সূত্র অনুযায়ী কিউ টির রাগ করা বা মানুষের ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা থাকার কথা না, তবু কিউ টির নির্বিকার চোখের দিকে তাকিয়ে ডনোভান এবার সত্যি ভয় পেল।
কিউ টি বললো, “আমি দুঃখিত ডনোভান, এই ঘটনার পরে আপনাকে আর এখানে থাকতে দেওয়া যায় না। এখন থেকে কন্ট্রোল রুম আপনার আর পাওয়েলের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা।”
কিউ টি হাত দিয়ে ইশারা করতেই দুদিক থেকে দুই রোবট এসে ডনোভানকে সাবধানে শক্ত করে ধরে লিফটের দিকে নিয়ে গেল।
মন্তব্য
জমাচ্ছি তো... জমাতে জমাতে পাহাড় বানাচ্ছি। একদিন টুক করে পড়ে ফেলবো। থাইমেন্না কিন্তু
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হুম, ঝোঁকের বশে শুরু করেছিলাম অনুবাদ, এখন দেখি চলতেই আছে, চলতেই আছে। কোন এক ফাঁকে পুরোটা করে দিংমুড়ো বানিয়ে পাঠিয়ে দেব ভাবছি মডারেশন বরাবর।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ডুপ্লি ঘ্যাচাং।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
শিরোনাম যুক্তি (পর্ব ৩)। পড়ে মনে হল জেনেসিস (পার্ট ১)
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আসলেও তাই। আজিমভের এই অ্যানালজির জন্যই আমার এত ভালো লাগে।
ফাউন্ডেশন পড়ার সময়ও তো মনে হত আসলে পৃথিবীতে মানবসমাজের বিবর্তনের ইতিহাস পড়ছি। প্রথমে ধর্মের দোহাই দিয়ে, পরে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতা দখল।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
চমৎকার হচ্ছে সিরিজটা। চলতে থাকুক। প্রতিটা পর্ব গোগ্রাসে গিলছি।
সুপ্রিয় দেব শান্ত
ধন্যবাদ।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
আপনি জাফর ইকবাল স্যারের গল্পকে আইজাক আজিমভের গল্প বলছেন কেন বুঝলাম না।
শিরোনাম:
http://deshiboi.com/component/hotproperty/index.php?option=com_hotproperty&view=property&id=670
বিস্তারিত:
http://deshiboi.com/component/hotproperty/index.php?option=com_hotproperty&view=property&id=670&tech=1&nsnid=670
এখানে কিংবা এখানে দেখতে পারেন। এই বইয়ের ৫৩ নং পৃষ্ঠায়ও দেখতে পারেন।
নতুন মন্তব্য করুন