সময়টা মনে হয় ছিয়ানব্বইয়ের দিকে হবে। চ্যানেল ফোরের একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম বাসায় সবাই মিলে। তাতে ব্রিটেনে পালিয়ে থাকা একাত্তরের ঘাতক দালালদের কুকীর্তির বর্ণনা, আর তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছিল। পুরো ডকুমেন্টারিটা দেখে ক্ষেপে গিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই লোকগুলো বাংলাদেশি, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বাংলাদেশের সাথে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে ব্রিটিশ মিডিয়া, আর তাদের বিচার হবে ব্রিটেনে? আমরা কি এতটাই অক্ষম? আমরা নিজেরা এদের বিরুদ্ধে কিছু করবো না?
আব্বু পানিভরা চোখে খালি আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, এটা যে কত বড় লজ্জা সেটা তুমি বোঝ মা, আর যাদের বোঝার দরকার ছিল, তারা যে বোঝে না।
আব্বুর সেই অক্ষম চোখের গ্লানির কথা আমি কখনো ভুলতে পারি নি। আমার আব্বু আমাকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড় বড় জ্ঞান দেয় নি, কখনো শিখিয়ে দেয় নি জামাতকে ঘৃণা করতে হবে, খালি বিভিন্ন বই এনে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপরে, আর রাতের বেলায় লোডশেডিং-এ ছাদে খোলা আকাশের নিচে গল্প শুনিয়েছে সেই সময়ের।
আব্বুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম পাকিস্তানি আর্মিকে বিশ্বের সেরা আর্মি বলা হত, তারা মাত্র নয় মাসে এরকম ল্যাজ গুটিয়ে পালাল কেন নিরস্ত্র বাঙালিদের প্রতিরোধের মুখে। আব্বু বুঝিয়েছিল দেশের সব মানুষ যদি এরকম এক হয়, কোন আর্মির সাধ্য নেই তাদের সামনে দাঁড়ায়। আমার কখনো মনে হয় নি আমি সেই সময়ে জন্মাই নি বলে একাত্তরের কথা আমি সত্য জানতে পারবো না, বরং মনে হত এরকম একটা গৌরবময় ইতিহাস যে জাতির, সে জাতির ইতিহাস বিস্মৃত হওয়াটাই তো অসম্ভব বরং।
সেজন্যই আমি কখনো আশা ছাড়ি নি, আমি বিশ্বাস করতাম বাঙালি জাতি দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়াবেই। একদিন না একদিন রাজাকারদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই। তাই বেয়াল্লিশ বছর পরে যখন রায়ের আশায় দিন গুনছিলাম, তখন মনে হত এবার হয় তো আব্বুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারবো, আমরা আমাদের দেশে বিশ্বাসঘাতকদের বিচার করেছি। আব্বুর চোখের সেই গ্লানির স্মৃতি হয় ত মুছতে পারব।
কিন্তু আজ কসাই কাদেরের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে সে কবি মেহেরুননিসাকে জবাই করে ধড় থেকে মাথা আলাদা করে রশি দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছিল সে। জবাই করেছিল আলী আর তার অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে, তাদের দুবছরের ছোট মেয়েটিকে আছাড় দিয়ে মেরে ফেলেছিল। সেই দৃশ্য দেখে তাদের এগারো বছরের মেয়ে আমিনা লুকিয়ে থাকা অবস্থায় শব্দ করলে তাকে গণধর্ষণের পর খুন করেছিল, সবচেয়ে বড় মোমেনা লুকিয়ে এই দৃশ্য দেখেছিল। এত কিছুর পরেও তার শাস্তি মাত্র পনের বছরের কারাদন্ড, এতকিছুর পরেও তাই কসাই কাদের নির্লজ্জ হাসিতে ভি চিহ্ন দেখিয়ে যায় আমাদের, আর আমরা মাথা নিচু করি লজ্জায়।
ফেসবুকে পাওয়া একজনের স্ট্যাটাস থেকে ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ডের একটু পরিবর্তিত রূপটাই তাই খালি মনে ঘুরছেঃ
কতটা মানুষ মারলে পরে ফাঁসি দেওয়া যায়?
কতটা রক্ত লাগলে হাতে খুনি বলা যায়??
মন্তব্য
এই রাগ, এই ক্ষোভ, এই হতাশা রাখার জায়গা নাই...
সেটাই। কালকে থেকে কোন কাজে মন দিতে পারছি না। এটা কী হলো?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ভোর চারটের দিকে ঘুমঘুম পাচ্ছিল। ভাবলাম এখুনি শোবো না, বাংলাদেশে সকাল হয়ে গেছে, রায়টা শুনেই যাই। সকাল আটটায় ছাতা এই রায় শুনলাম। দশটায় আবার ল্যাবে ছানা আসবে তাই অমনই বেরিয়ে গেলাম। ধুরশালা।
তবে 'আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল' এবং বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা আসা শুরু হয়নি এখনও?
লাভ নেই রে কৌ, এত করেও ভাসুরদের মন ভরাতে পারে নি। আন্তর্জাতিক হর্তাকর্তারা এই জেলের সম্ভাবনাতেও অখুশি। সাড়ে তিনশো লোক খুন করার দায় প্রমাণিত হওয়ার পরে বেকসুর খালাস দিলে খুশি হতেন তেনারা।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
হ্যাঁ, বাচ্চু রাজাকারের মত ফ্রি প্যাসেজ টু পাকিস্তান দিয়ে দিলে মন ভরত।
আপু এতো বেশি মন খারাপ সকাল থেকে রায় শোনার পর থেকে! বেয়াল্লিশ বছর পর যে সুযোগ আমরা পেয়েছি, বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায়ের পর যে খুশিতে ভেসেছি সেখানে এখন কিছুটা হতাশা কাজ করছে। ঠিক বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। মেনে নিতে পারছি না ঠিক!
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
কাজকর্ম বাদ দিয়ে রায়ের খবর ফলো করছিলাম, যখন দেখলাম পাঁচটা অভিযোগে দোষী বলা হয়েছে, কী যে খুশি হয়েছিলাম। রায় শুনে পুরোই স্তম্ভিত হয়ে গেছি। এটা কী ধরনের বিচার হলো?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ভেতর থেকে যে কতকিছু বলতে ইচ্ছে করছে আবার বলতে গেলে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অদ্ভূত এক অনুভূতি।
আসলেই, রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, সব মিলিয়ে কেমন নাম্ব হয়ে গেছি।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
কাঁদতে আসিনি,
ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি ...
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
হুম, ফাঁসি চাই কসাই কাদের মোল্লার।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
আজ সারাদিন খুব ব্যাস্ততায় সময় কাটছিল। খুব ভোরে বের হয়ে গেছিলাম বাসা থেকে। সারাদিন ইন্টারনেটের নাগালের বাইরে ছিলাম। বিচারের রায় যে ফাঁসি হবে নিশ্চিত ছিলাম তাই আর খোঁজ নেইনি । দুপুরে এক বন্ধুর কাছ থেকে ফোনে রায় জানতে পারলাম-- প্রথমে তো বিশ্বাস ই করতে পারিনি।। সারাদিন খুব খারাপ কেটেছে।
প্রচণ্ড ক্ষোভ হচ্ছে, রাগ হচ্ছে, হতাশ লাগছে।
আমারও প্রশ্ন-
"কতটা মানুষ মারলে পরে ফাঁসি দেওয়া যায়?
কতটা রক্ত লাগলে হাতে খুনি বলা যায়??"
একটাই দাবী-- ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
একটাই দাবী-- ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই ।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
একবার আব্বুকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম, "এরকম হল কেন?" পারলাম না...
আসলেই, এত্ত হতাশ লাগছে, কি আর বলব।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
এই যদি হয় অর্ধ সহস্রাধিক মানুষ খুন আর শত শত ধর্ষণের শাস্তি, তাহলে আর বিশ্বজিৎ এর খুন বা ডঃসাজিয়ার বিচারের আশা করা অর্থহীন। বিচার ব্যবস্থা যে অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারার মত মেরুদন্ড হারিয়ে ফেলেছে, এজন্যই ক্ষোভ আর হতাশা। নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে বিপন্ন বোধ হয়।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপু, কাল রাতে ঘুমাতে পারি নি, আজ সারাদিন কাজে মন দিতে পারি নি। কোথায় যাবো আমরা?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
কোথায় আর যাবে? আমেরিকাতে আছ, আমেরিকাতেই থাকো। আন্তর্জাতিক, নিরপেক্ষ দেশের নাগরিক হয়ে যেও।
হায়রে, ভয় হয়, অল্প কিছু বেকুব বুকে বাংলাদেশ নিয়ে জম্বির মত ঘুরে বেড়াবে, আর বাকি সব বাংলার মাটিতে শকুন হয়ে ঘুরে বেড়াবে। এই দিন দেখার আগে গ্লোবাল ওয়ার্মিংএ বাংলাদেশ ডুবে যাওয়া ভালো।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ভাই প্রত্যাশামত বিচার হল কই।
কসাই কাদেরতো পার পেয়ে গেল।
কসাই কাদেরের ফাঁসি চাই।
তুহিন সরকার।
ফাঁসি চাই।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
বাল।
আসলেও তাই। অক্ষমের মত গালি দেওয়াই খালি আমাদের সম্বল।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
............................... .........................
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
কতো দুঃখের কথা যে এই লেখাটাও আমাদের লিখতে হয়!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
নতুন মন্তব্য করুন