গতকাল একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। অতি দরকারী একটা জিনিস হারালাম আমি। জিনিসটা হারানোর পর মনে হল ইস যদি এটা না করে ওটা করতাম তাহলে নিশ্চয়ই জিনিসটা হারাতে হতো না। আমাদের জীবন টুকরো টুকরো ঘটনার সমষ্টি। টুকরো ঘটনাগুলোও একবার করেই ঘটে যায়। যেগুলো আমরা পাল্টানোর বা নতুন করে ঘটানোর সুযোগ পাই না। একবার ঘটে গেলে তা জীবন ইতিহাসের পাতায় ঠাই করে নেয়। তারপরও ভাবি ইস যদি এটা না করে ওটা করতাম তবে ঘটনাটা ঘটতো না। কিন্তু এটা না করে ওটা করলে যে কি ঘটত তা সাধারনতঃ আমরা চিন্তা করিনা। আমি অবশ্য বিষয়টা নিয়ে বেশী চিন্তা করতে গিয়েই এই লেখাটা লিখে ফেললাম। জিনিসটা না হারালে নিশ্চয়ই এ লেখাটার জন্ম হতো না!
প্রতিদিনের মত গতকালও দুপুরে বাসায় গিয়েছিলাম। আধাকিলোমিটারের মত দুরত্ব হবে বোধহয়। (বেশীও হতে পারে)। বাসা টু অফিস যাতায়াতে আমি সব পন্থাই ব্যাবহার করি। কখনো হেটে, কখনো রিক্সায়, আবার কখনো বাসে। সবটারই কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। রিক্সাকে বেশ ঘুরপথে আসতে হয়। বাসে এলে দুটো স্পটের এক স্পটে নামলেই চলে। প্রথম স্পটে নামলে অফিসটা দ্বিতীয় স্পটের তুলনায় সামান্য দুর হয়। কিন্তু দ্বিতীয় স্পটে নামতে গেলে প্রথম স্পটের ট্রাফিক সিগনাল পার হতে বেশ সময় লাগে। যাই হোক, বাসা থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনাটা ঘটল; এ প্রসঙ্গে বিশেষ কারনে চার রকম দুর্ঘটনার বিবরন দেয়া হল:
(১) বাসা থেকে বের হয়ে মুল রাস্তার মোড়ে দাড়ালাম। বেশ রোদ উঠেছে - হাটতে ইচ্ছে করছে না। বেশ কয়েকটা গাড়ি থামল কিন্তু প্রচন্ড ভীড় তাতে। লোকজন ঠেলাঠেলি করে উঠছে। আমি দাড়িয়ে রইলাম। একটু পরেই বড় একটা বাস আসল। বাসের পাদানী দুটো ফাকা। আমি পাদানীতে উঠে দাড়ালাম। চশমাটা খুলে সার্টের পকেটে রাখলাম। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে বাস ভাড়া দিলাম। অল্পক্ষনের মধ্যেই বাসটি প্রথম স্পটের ট্রাফিক সিগনালে আটকা পড়ল। নেমে যাব কি? ঠেলাঠেলি করে লোকজন নামছে। এই ব্যাপারটি আমার খুব বিরক্ত লাগে। দাঁতে দাঁত চেঁপে দাড়িয়ে রইলাম। বেশ রোদ। সামনে গিয়েই নামি। কপাল ভাল তক্ষুনি সবুজ বাতি জলে উঠল। গাড়িটি চলতে লাগল। কয়েকমুহুর্তের মধ্যেই চলে এল আমার গন্তব্যে। ধীরে সুস্থে নামছিলাম। পেছন থেকে ঠেলে ঠুলে দ্রুত একলোক নেমে গেল। লোকটির ধাক্কায় আমিও দ্রুত নেমে গেলাম। নামার সময় মনে হল কিছু একটা পড়ে গেল আমার। নেমে পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার চশমা নেই। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। বাসটি চলে যাচ্ছে। হঠাৎ ’ফট’ করে একটা শব্দ হল শুনলাম। গাড়িটা চলে যেতেই দেখি আমার চশমাটা গাড়ীর পেছনের চাকার নিচে পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। আমি অল্পক্ষন দাড়িয়ে দেখলাম। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে এলাম। আগের স্পটে নামলেই বোধহয় ভাল হত। ভাবলাম আমি। চশমাটা হারাতে হত না।
(২) বাসা থেকে বের হয়ে মুল রাস্তার মোড়ে দাড়ালাম। বেশ রোদ উঠেছে - হাটতে ইচ্ছে করছে না। বেশ কয়েকটা গাড়ি থামল কিন্তু প্রচন্ড ভীড় তাতে। লোকজন ঠেলাঠেলি করে উঠছে। আমি দাড়িয়ে রইলাম। একটু পরেই বড় একটা বাস আসল। বাসের পাদানী দুটো ফাকা। আমি উঠে পড়লাম। চশমাটা খুলে সার্টের পকেটে রাখলাম। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে বাস ভাড়া দিলাম। অল্পক্ষনের মধ্যেই বাসটি প্রথম স্পটের ট্রাফিক সিগনালে আটকা পড়ল। নেমে যাব কি? ঠেলাঠেলি করে লোকজন নামছে। এই ব্যাপারটি আমার খুব বিরক্ত লাগে। দাঁতে দাঁত চেপে দাড়িয়ে রইলাম। বেশ রোদ। সামনে গিয়েই নামি। কিন্তু পেছন থেকে একলোক ঠেলে ঠুলে দ্রুত নামার চেষ্টা করছে। ততক্ষনে আবার সবুজ বাতি জলে উঠেছে। গাড়িটি আস্তে আস্তে চলতে শুরু করেছে। এদিকে লোকটির ঠেলাঠেলি সামলাতে না পেরে মোটামুটি ছিটকে নিচে নেমে এলাম। নেমে দাড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার মানিব্যাগ নেই। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। বাসটি চলে গেল। আমি অল্পক্ষন দাড়ালাম। আশেপাশে মানিব্যাগটি খুজলাম কিন্তু চোখে পড়ল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অফিসে চলে এলাম। হেটে চলে আসলেই বোধহয় ভাল হত - ভাবলাম আমি। মানিব্যাগটা হারাতে হত না। কিছু টাকা; এটিএম কার্ডগুলো; মেডিকেল কার্ড; আইডি কার্ড সব গেল। আবার নতুন করে আবার করতে হবে সব।
(৩) বাসা থেকে বের হয়ে মুল রাস্তার মোড়ে দাড়ালাম। বেশ রোদ উঠেছে - হাটতে ইচ্ছে করছে না। বেশ কয়েকটা গাড়ি থামল কিন্তু প্রচন্ড ভীড় তাতে। লোকজন ঠেলাঠেলি করে উঠছে। আমি দাড়িয়ে রইলাম। একটু পরেই বড় একটা বাস আসল। বাসের পাদানীতেও মানুষ ঝুলছে। কোথাও একটা রিক্সাও নেই। ধেৎ হেটেই যাব। পকেট থেকে চশমাটা বের করলাম; রোদ কাটানোর জন্য। চশমার সাথে আটকে আমার পেনড্রাইভটা রাস্তায় পড়ে গেল। পেনড্রাইভটা আমি সবসময় সার্টের পকেটে রাখি - ঘামে বা চাপে নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে। নীচু হয়ে তুলে প্যান্টের পকেটে রাখলাম। তারপর হাটতে লাগলাম। হঠাৎই মেঘের আড়ালে চলে গেল রোদ। যাক হেটে এসে ভালই করেছি। ধীরে সুস্থে অফিসে চলে এলাম। পেন ড্রাইভ বের করার জন্য পকেটে হাত দিয়ে ওটা খুজে পেলাম না। সবগুলো পকেটই তন্ন তন্ন করে খুজলাম। পেলাম না। এমনকি সার্টের পকেটটাও দেখলাম। যদিও ওখানে থাকার কোন সম্ভাবনাই নেই। শেষে প্যন্টের পকেট উল্টে দেখি একটা ফুটো। পেন ড্রাইভ পড়ে যাবার জন্য বেশ বড়ই বলা যায়। খুব সম্ভবতঃ চাবির গোছার চাপে ফুটোটার সৃষ্টি হয়েছে। ধেৎ! কেন যে ওটা পকেট বদল করেছিলাম! রিক্সা বা বাসে এলে হয়তো বদলানোর দরকার হতো না আর এ ঘটনাটাও ঘটতো না। আমার অনেক দরকারী ফাইল ছিল ওটার মধ্যে যার কোন ব্যাকআপও কোথাও রাখিনি!
(৪) বাসা থেকে বের হয়ে মুল রাস্তার মোড়ে দাড়ালাম। বেশ রোদ উঠেছে - হাটতে ইচ্ছে করছে না। বেশ কয়েকটা গাড়ি থামল কিন্তু প্রচন্ড ভীড় তাতে। লোকজন ঠেলাঠেলি করে উঠছে। আমি দাড়িয়ে রইলাম। একটু পরেই বড় একটা বাস আসল। কিন্তু বাসের পাদানীতেও মানুষ ঝুলছে। আমি একটা রিক্সা নিয়ে নিলাম। একটু দেরী হবে কিন্তু কিছু করার নেই। যেতে যেতে হঠাৎ সেল ফোনটা বেজে উঠল। আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে কথা শুরু করলাম। হঠাৎ করেই সামনের দিক থেকে আগত রিক্সার চাকার সাথে আমার রিক্সার চাকা আটকে গিয়ে প্রচন্ড শব্দে থেমে গেল রিক্সা। আমিও পড়তে পড়তে কোনমতে নিজেকে সামলালাম। ঘটনার আকষ্মিকতায় হাত থেকে উড়ে সামনে রাস্তায় গিয়ে পড়ে দুভাগ হয়ে গেল আমার সেল ফোন। দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে। একটা পিকআপ আসছিল ওপাশ থেকে। ওটার চাকার নীচে পড়ে মটমট করে ভেঙ্গে গেল ফোনটা। গিয়ে ফোনের ধংসাবশেষ কুড়িয়ে নিয়ে এলাম। স্ক্রিনটা ভেঙ্গে আলাদা হয়ে গিয়েছে। কেন যে রিক্সা নিতে গেলাম! রাস্তায় আর একটু অপেক্ষা করলেই তো গাড়ি পেতাম। অথবা হেটেও যেতে পারতাম। গাড়ীতে বা হেটে গেলে নিশ্চয়ই আজ আমার ফোনটা হারাতে হত না।
যাই হোক এই হল ঘটনা। যার মধ্যে একটি সত্য। যেটা ঘটে গেছে। ফেরানোর উপায় নেই। বাকি তিনটা বানানো। আন্দাজ করতে পারেন কোন ঘটনাটা ঘটেছে সত্যিকারে?
মন্তব্য
যাক বাবা আমি তো ভাবছি এরপর কইবেন আপনার শার্ট-প্যান্টও কেউ খুইলা নিয়া গেছে।
মনে তো হয় পেনড্রাইভ হারানোটাই সত্যি, না কি?
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কিন্তু আপনার লেখার এই নতুন টেকনিকটা বেশ মজার
আমি বলছি ফোনের ঘটনাটা সত্যি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
পেনড্রাইভ হারাইছে। ফাইলের ব্যাকআপ কপি রাখেন না ক্যান?
আমারো মনে হয় পেন ড্রাইভ ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আমার মনে হয় শেষেরটা। যদিও পেন ড্রাইভের ব্যাপারটাও বেশ গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে কেন যেন!
লেখার স্টাইলটা বেশ।
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
সবাইকে ধন্যবাদ। তবে যেগুলো ঘটে নাই সেগুলোকেই সবাই সত্য মনে করলেন!!!
এইভাবে বুকা বানানো ঠিক হই নাইক্কা!
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন