পাখি

বাউলিয়ানা এর ছবি
লিখেছেন বাউলিয়ানা [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১২/০৭/২০১০ - ৭:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবে কখন থেকে ঘটনাটা শুরু হয় আলী হোসেনের তা জানা নেই। তার বাপ-দাদা এমনকি পরদাদার আমল থেকে হতে পারে আবার তার আগে থেকেও হতে পারে, যখন থেকে বনের পাখি ধরে খাঁচায় করে বিক্রী করা তাদের বংশগত পেশাতে পরিণত হয়েছিল। বিয়াল্লিশ বছরের আলী হোসেন শুধু জানে, কোন ধরনের ফাঁদ পাতলে কোন পাখি ধরা যায়। পাহাড়ের কোন গাছের কোরলে কোন পাখির বাসা থাকে অথবা কোন পাখি কোন মৌসুমে বেশি ধরা পড়ে। শহরের বাজারে কোন ধরনের পাখির চাহিদা বেশি তাও আলী হোসেনের ভাল জানা আছে। যদিও তার পাখি বেচতে কখনো শহরে যেতে হয়না। উল্টো সেখানকার পাইকাররা অগ্রীম টাকা দিয়ে পাখি কিনে নিয়ে যায়।

আপনি যদি বল্টুরাম টিলার পাশ দিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে যাতায়াত করা চাঁন্দের গাড়িতে উঠে বসেন তাহলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌছে যাবেন নাকাপা-বৈদ্যানাথপাড়ায়। সেখানে কাজী মেম্বারের বাড়ীতে যাবার পথে কোন একটা টিলার ঢালে আপনি দেখতে পাবেন মাথায় গামছা বাঁধা আলী হোসেনকে। হটাত দেখলে অবশ্য তাকে পাহাড়ি বলে ভুল করা সম্ভব। তামাটে বর্ণের ছিপছিপে লম্বা আলী হোসেন যখন উদাম গায়ে, এক হাতে দা নিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে হন হন করে হাঁটে, তাকে বাঙ্গালী বলে চিনতে একটু কষ্ট হয়। তার আরেক হাতে কখনো থাকে পাখি ধরার নানা যন্ত্রপাতি অথবা কখনো পাখির খাঁচা। আলী হোসেন পাখি ধরে খাঁচায় ভরে বিক্রি করে। এটাই তার একমাত্র পেশা, তার জীবিকা। সে পাখি ধরে কখনো ফাঁদ পেতে, কখনো খালি হাতে। সে শাল গাছের বড় বড় পাতার নিচে লুকিয়ে থাকা বুনো ঘুঘু ধরতে ওস্তাদ। কোন পুরনো কড়ই গাছের কোরলে ময়না পাখির বাসা আছে সেটা তার মুখস্থ। সেখান থেকে আলী হোসেন বের করে আনে ময়নার বাচ্চা। সেগুলোকে কদিন নিজে আদর যত্ন করে, খাইয়ে একটু বড় করে বেচে দেয়। তারপর কোন ছফেদা আর পেয়ারার বাগানে টিয়া পাখির ঝাঁক অথবা কোন ইউক্যালিপ্টাস গাছে পাওয়া যাবে কাকাতুয়া এ সবই তার নখদর্পণে। সারাদিন আলী হোসেন পাহাড় থেকে পাহাড়ে ঘুরে আর খুঁজে বেড়ায় পাখির বাসা।

সেদিন ছিল বৃহষ্পতি বার, সপ্তাহের হাটবার। আলী হোসেন পাইকারের কাছে পাখি দিয়ে যে টাকা পায় তা থেকে কিছু খরচ করে চাল-ডাল, তেল-নুন কেনে। বাড়িতে ফিরে দেখে তার হাইস্কুল পড়ুয়া ছেলে কী যেন পড়ে চলেছে একমনে। আলী হোসেন আস্তে করে ছেলের পাশে গিয়ে খবরের কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট রেখে দেয়। ছেলে প্যাকেটটা খুলে দেখে, তার লেখার জন্য এক দিস্তা সাদা কাগজ। এই সামান্য জিনিষটা পেয়েও খুশিতে তার চোখ দুটো চকচক করে। সে উল্টে পাল্টে একবার নতুন কাগজের ঘ্রান নেয়। দুপুরের খাবার খেতে বসলে পরে আলী হোসেন ছেলেকে "আইও বাজান" বলে ডাক দেয়। ছেলে সেই প্যাকেটের খবরের কাগজের ছেঁড়া অংশটাতে একটা খবর দেখে পড়তে শুরু করলে তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে ওঠে, ক্ষুধা চলে যায়। ওদিকে আলী হোসেন লাউ-চিংড়ি সালুনের সুরুয়া দিয়ে ভাত মাখায় আর একটা একটা করে গ্রাস পরম তৃপ্তি নিয়ে মুখে তুলে দেয়।


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি

ডিজিটাল গল্প হাসি
গল্পটা ভাল লাগল। তবে মনে হয় ইংগিত টা লিংকে না দিয়ে কোন ভাবে গল্পে নিয়ে আসা গেল আর ভাল হত। অবশ্য কাগজের বই পড়ে পড়ে অভ্যাস বলে হয়ত একটু অস্বস্তি লাগছে হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

বাউলিয়ানা এর ছবি

ডিজিটাল গল্পের বিষয়টা মাথায় ছিলনা। এমনি মাথায় যা এসেছে লিখেছি।

ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল হাসি

শুভেচ্ছা।

মুস্তাফিজ এর ছবি

অনুমতি কিংবা প্রপার চ্যানেল ছাড়া বিমানে মালামাল তোলা সম্ভব না। অবশ্যই এতে কাস্টমস্‌ এর লোকজন জড়িত।

...........................
Every Picture Tells a Story

বাউলিয়ানা এর ছবি

ঠিক বলেছেন মুস্তাফিজ ভাই।

কিন্তু কষ্ট লেগেছে এতগুলো পাখি মারা গেল সেটা ভেবে।

একটা ব্যাপার জানতে ইচ্ছে করে, পাখি কি রপ্তানীযোগ্য?

মুস্তাফিজ এর ছবি

বাংলাদেশ থেকে সম্ভবত এখন বন্ধ। আগে ছিলো, তবে অনেক ঝামেলার ব্যাপার সেটা, নানা জায়গা থেকে অনুমতি নিয়ে রপ্তানি করতে হতো।

...........................
Every Picture Tells a Story

বাউলিয়ানা এর ছবি

আচ্ছা, ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।