এই হলো অবস্থা। মানুষের এখন ছুটি আর ছুটি, অফুরন্ত অবসর। প্রথম প্রথম অনেকের ভাল লেগেছে, এখন আর কেউ মেনে নিতে পারছেনা। কাঁহাতক আর ঘরে বসে বসে বেতন নেয়া যায়। মানষিক ভাবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সবার। অবসরে কলিগদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে এখন টপিকের অভাব দেখা দিয়েছে। আগে আড্ডাতে রাজনীতি তেমন একটা আসতনা। এখন এটাই একমাত্র টপিক। সময়ের সাথে কথাবার্তা অনেক চেঞ্জ হয়েছে। যেমন আগে যেকেউ যেকোনো মতামত দিকনা কেন, তার পেছনে যুক্তি দেবার চেষ্টা করেছে। তারপর একটা সময়ে যুক্তির ধার ধারেনি, বরং জোর গলায় বলার চেষ্টা করেছে "আমিই ঠিক, আপনি ভুল"। এটা হয়েছিল বিশেষ করে হরতাল অবরোধের প্রথম দিকে। আর এখন সবাই কনফিউসড। সবার কথাতে একধরনের কনফিউশন- আমরা এতদিন যা ভেবেছি তা কি ভুল? আমরা কঈ ভেবেছিলাম আর কী হচ্ছে! সামনে দিন গুলোতে আর কী কী হতে পারে।
অফিসে যাবার সময় নিয়মিত শেয়ার্ড সিএনজি, অটোরিক্সা ব্যাবহার করি। তাতে লোকজনের কথা বার্তা শুনি। একদম সাধারণ লোকজন যেমন ছোট দোকানের দোকানী, শুকনো মালের ব্যাপারি, ব্যাঙ্ক/বীমা/অফিসের চাকুরে এদের কথা বার্তায় বোঝা যায় দেশের আই পরিস্থিতিতে জনগনের মনোভাব কী। বিস্তারিত না লিখে পয়েন্ট আকারে দেইঃ
১। হাসিনা সব মোল্লাদের মেরে ফেলতেসে।
২। এই সরকার থাকলে দেশে আর ইসলাম ধর্ম টিকবেনা।
৩। এই সরকার আমাদের বেতন বাড়াইসে।
৪। এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি মানুষের চাকরী হইসে।
৫। আজকের এই অবস্থার জন্য সরকারই দায়ী। কারন তারা বিরোধী দলের কোনো কথা শুনেওনা, বলতেও দেয়না।
৬। হাসিনা চলে গেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এগুলো ছাড়াও কিছু ইন্টেলেকচুয়াল কথা বার্তা শোনা যায়। যেমন সংবিধান পরিবর্তন করা উচিত হয়নাই। এটাতো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিলনা। এদেশের জন্য গনতন্ত্র না, মিলিটারি শাসনই এদেশের দরকার ইত্যাদি। আমি খুব কম মানুষকেই দেখেছি এই জ্বালাওপোড়াওয়ের জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করতে! থেমে তাকা বাসে আগুন দিয়ে, রেল লাইন তুলে ফেলে মানুষ মারছে, আর দোষ এই সরকারের! অদ্ভুত মানসিকতা।
হু হু করে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম। পেঁয়াজ- ১৫০ টাকায় বিক্রী হচ্ছে। ৪০ টাকার নীচে কোনো সব্জী নেই। চালের কেজি এই কয়দিনে ১০-১৫টাকা বেড়েছে। দেশের বাইরে থাকতে কখনই এসব গায়ে লাগেনি। এখন চোখ বন্ধ করে রাখারও উপায় নেই। যাদের সীমিত আয়, মাস শেষে যাদের সামান্য সঞ্চয় বা ডিপিএস এর টাকা রাখতে হিমশিম খেতে হয়, এই পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থা কেরোসিন। সেদিন এক সিনিয়র কলিগ বলছিলেন, বিদেশ থেকে ফিরে এসে ভুল করেছেন তিনি। আমি এর প্রতিবাদ করতেই বললেন, এই যে নিত্যব্যাবহার্য জিনিষের দাম একবার বেড়েছে- তা কি আর কমবে? কমলেও কি আর আগে মত হবে? ভদ্রলোক আগে নিউজিল্যান্ড ছিলেন। এখন দেশে এসে যেখানেই অনিয়ম দেখে সেখানেই প্রতিবাদ করতে যান। আর এতে সবার সাথে বিবাদ লেগে যায়। এডমিনের লোকজন মহাখ্যাপা উনার উপর।
বিদেশে থাকলে এইসব খবরগুলো কানে পৌছায়, কিন্তু মাথায় লাগেনা। যেমন প্রতিনিয়ত টিভিতে পুড়ে যাওয়া মানুষ আর গাড়ি দেখাচ্ছে, নিম্ন আয়ের মানুষের দূর্ভোগ, বিক্রী করতে না পেরে কৃষকের ফসল পঁচে যাচ্ছে, গাড়ি না চলার কারনে উতপাদিত শষ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাঠেই, গোয়ালারা দুধ ফেলে দিচ্ছে পুকুরে। এই ছবিগুলো দেখে দেখে এক পর্যায়ে সয়ে যায় হয়তো কিন্তু মাথা থেকে যায় না। ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছেনা, পরীক্ষা দিতে পারছেনা, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবার কথা, সেটাও হবেনা। বাচ্চারা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে এক অরাজক পরিস্থিতি। এর একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবতো অবশ্যই তাদের মধ্যে পড়বে।
আমি জানিনা এর শেষ কোথায়, এভাবে আর কতদিন চলবে। শুধু প্রার্থনা করি মানুষের কষ্টের দিন শেষ হোক। রাজাকারের দল দেশটাকে আরেকটা পাকিস্তান বানাবার যত চেষ্টাই করুক, সফল যেন না হতে পারে।
মন্তব্য
মুসলিম লীগের নতুন সম্পাদিত এবং পরিমার্জিত ভার্সন বিএনপি তার রাজনৈতিক দর্শন না পাল্টালে এবং জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল না করলে পাকিস্তান হবার আশংকা থেকেই যায়। দেশ গত দেড় মাস ধরে যে অবস্থায় আছে তা পাকিস্তানের অবস্থার খুব কাছাকাছি, দেশের নাগরিকদের একটা বড় অংশই পাকিমনা।
সব দেখে-শুনে মনে হয়, বঙ্গবন্ধু হুদাই একটা অপ্রস্তুত জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত তথাকথিত সৈনিকরাও দেশের শাসনযন্ত্র ঠিকঠাকভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
শব্দ পথিক
আমার পর্যবেক্ষণ আপনার সাথে পুরো মিলে যাচ্ছে। যে মানুষটির দোকান বন্ধ থাকছে দিনের পর দিন, ব্যবসা লাটে উঠছে, সে লোকটিকেও দেখি আ'লীগ সরকারকেই গাল দিতে। সরকারের একটি অংশ মনে করছেন, বিরোধী দলের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম সরকারী ব্যর্থতাগুলোর সাথে কাটাকাটি করবে; বাস্তবতা হল, বিরোধী দলের একটি নতুন ধ্বংসাত্মক কাজ সরকারের বিপক্ষেই যায়, এমনটাই দেখেছি আমি।
আপনি বলেছেন, অদ্ভুত মানসিকতা। আমার মতেও তাই। তা না হলে, দিনের পর দিন চলতে পারত না এই নৈরাজ্য। বিরোধী দলও জানে, দোষটা তাদের গায়ে পড়ে না!!
আরেকটা জিনিস খেয়াল করেছেন? মার্কেট বা ভোক্তা নেই বলে উৎপাদকদের কাছ থেকে অনেক কম দামে কিনে নেয়া হচ্ছে এখন। অথচ ভোক্তার কাছে কিন্তু বিক্রয় করা হচ্ছে আগের চেয়েও চড়া দামে। এবার কারণ দেখানো হচ্ছে, সাপ্লাই কম।
অদ্ভুত মানসিকতা। আসলেই।
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
দোকানী সবসময়ই দুটাকা বেশি লাভের আশা করে। সে কখনই তার কেনা মূল্যের কথা মাথায় রেখে মাল বিক্রি করেনা। দুসপ্তাহ আগে কেনা পেঁয়াজ সে এখনকার বাজার দরেই বিক্রি করে। যদিও তার কেনা দাম ছিল অনেক কম। জিজ্ঞেস করলে বলে ভাই বাজারে সাপ্লাই নাই, তাই দাম বেশি। সততার বিষয়টা এখানে একেবারেই অগ্রাহ্য।
ভাই বোধহয় বহুকাল দেশ-ছাড়া!
বাংলাদেশে এখন সরকারী-বেসরকারী স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল বাদে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দু'দিন ছুটি। এ দেশে ফাঁকিবাজ যেমন আছে তেমনি ঘাড়-গুঁজে দিনরাত কাজ করবার মানুষও প্রচুর আছে। নইলে দেশ একটুও এগুতো না। বারো থেকে ষোল ঘণ্টার কাজ ইয়োরোপে এখন বে-আইনী। তবে রিসার্চের ক্ষেত্রে সময় মেপে কাজ করা যায় না।
হাসপাতাল ২৪*৭ সার্ভিস হলেও পৃথিবীর মোটামুটি প্রায় সব উন্নত এবং উন্নয়ণশীল দেশে ডাক্তারদের কাজ ৫ দিনে ৩৫-৪০ ঘণ্টা এবং অতিরিক্ত সম্মানীর বিনিময়ে ৪৮ ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়, রেসিডেন্সি ব্যতীত। বাংলাদেশে এখনো সপ্তাহে ৬ দিন এবং সীমাহীন কর্মঘণ্টা প্রচলিত। বেসরকারী খাতে ৬*৮=৪৮ ঘণ্টা ন্যুনতম কর্মঘণ্টা ্প্রচলিত, যেটা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই অতিরিক্ত সম্মানীসহ সর্বোচ্চ লিমিট। কাজেই এই নিয়মের ফাঁক বের করে মাসে দুইদিন অফিস করেন এমন বাবুও আছেন আবার মাসে ৩০ দিন দুইবেলায় ১০-১৫ ঘণ্টা কামলা দিচ্ছেন এমন দুর্ভাগাও আছেন। তাছাড়া বাংলাদেশের কোন খাতেই কাজের পরিবেশ এখন এতটা ঢিলেঢালা নয়। অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান মুখে রক্ত তুলিয়ে খাটিয়ে নেয় নামমাত্র বেতনে।
আপনার প্রথম প্যারাগুলোতে দ্বিমত ব্যক্ত করলেও পোস্টটি ভালো লেগেছে।
দেশে কর্মঘন্টার বোধহয় নির্দিষ্ট কোনো আইন-কানুন নাই অথবা থাকলেও এ্যপ্লাই হয়না। বিশেষ করে বেসরকারী অফিসগুলোতো দেখি ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম মেনে চলে। বৃহষ্পতিবারের অফিস আওয়ার আমাদের এখানে দুপুর একটা (কাগজে কলমে) পর্যন্ত আবার পাশাপাশি অন্য অফিসে দেখি অন্যান্য দিনের মতই সারাদিন ধরে অফিস চলছে। তবে এই ব্যাপারে আমার মত হলো এইটা নিয়ম কানুন বেঁধে যতটা হবে তার চেয়ে বেশি হবে কর্ম সংস্কৃতি তৈরী হলে।
কর্মসংস্কৃতি কর্মের নিয়ম কানুন মেনেই হয়। ঠিক যেমন ট্র্যাফিক শৃঙ্খলা অর্জিত হয় আইনের কঠোর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। আমেরিকার মত মুক্তবাজারের পীঠস্থানেও কিন্তু শ্রমআইন এবং নিয়ম কানুন বিদ্যমান। এটা না থাকলে মালিকপক্ষ যা খুশি তাই করিয়ে নিত।
সবখানেই এক অবস্থা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এটা কে ঠিক অদ্ভুত মানসিকতা বলা যায় না। অশিক্ষা, কোন কিছুর গভীরে প্রবেশ করে বিশ্লেষন করতে না পারার অদক্ষতা, আর পাকিস্তানি মন মানসিকতাই এর কারন বলে মনে হয় আমার কাছে।
আমার অফিসেও ঠিক একি অবস্থা, কাজ নেই সারাদিন একি বকর বকর, এই জালিম সরকার, এই বাকশালী সরকার বিরোধী দলকে দাঁড়াতে দিচ্ছেনা, বাসে নাকি আগুন দিচ্ছে আওয়ালীগের লোকজন, রেল রাস্তাও নাকি তুলে ফেলছে তারা, আর বলে কিসের সংবিধান? আমি চুপ করে থাকি, এদেরকে বুঝানোর কোন ক্ষমতা আমার নেই। দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসি, কেমেষ্ট্রিতে পাশ করা মানুষগুলো যদি এমন অযুক্তিক কথা বলে তাহলে সেখানে পড়ালেখাবিহীন সাধারণ মানুষগুলো আর কি বলতে পারে সেটা সহজে অনুমেয়। আমি চিন্তা করি তারা শিক্ষিত হয়ে কেন এমন অযুক্তিক ছেলেমানুষি কথা বলে। তখন তাদের পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি, বেড়ে ওঠা, পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়ালেখার দৌড়ের খোঁজ নেই। পাঠ্যবইয়ের বাইরে যারা পড়ালেখা করতে শিখেনি তারাই এমন মন মানসিকতায় বেড়ে উঠে হোক সে বড় সার্টিফিকেটের অধিকারী, চিন্তা চেতনা আর বিশ্বাসে তার সাথে রাস্তার রিক্সাচালক, কিংবা ঠেলা গাড়িওলার কোন পার্থক্য থাকে না।(খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কর্মকে আমি ছোট করে দেখিনি, শুধু তাদের যে অজ্ঞতা সেটাকে তুলনা দিয়েছি) বাংলাদেশে এই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই চারিদিকে এদেরি জয়জয়োকার।
মাসুদ সজীব
নাম যেটাই দেন সমস্যা নাই। কিন্তু কথা হইল এই মানসিকতার জনসংখ্যার পরিমান বাড়তে থাকলে বাঁচার উপায় কী?
নতুন মন্তব্য করুন