ভোররাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল নাসিমার। গলা শুকিয়ে কাঠ। দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। পাশে মেয়েটা অঘোরে ঘুমুচ্ছে। ওকে ডাকতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ডাকলেন না। কিন্তু খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার, বুকের ভেতরের পাথরটাকে নেড়ে চেড়ে গুমোট ভাবটা কাটাতে চাইছেন তিনি। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে খাট থেকে নামতেই মেয়ে বিরক্ত গলায় বলল
-এত ভোরে উঠে পড়লে কেন মা?
-ইয়ে... সুমনকে একটা ফোন করবি, তিথি?
ভয়ে ভয়ে নাসিমা মেয়েকে বললেন কথাটা।
-উফ মা, জানই তো ভাই কত ব্যস্ত থাকে, এখন হয়ত একটু রেস্ট নিচ্ছে। ফোন করা যাবে না।
বলেই পাশ ফিরে শুলো তিথি।
নাসিমা তবু মরিয়া গলায় বললেন- খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি রে মা, ওর একটা খোঁজ নে
-মা, বিরক্ত কর না তো, একটু পরে তো আমিই যাব। শুধু শুধু চিন্তা কর না…
-কোথায় যাবি? এই তিথি, বল্ না, আজকে তোরা আর কি কি করবি?
-মা! তুমি সত্যিই শুনতে চাও? তিথি ধড়মড় করে উঠে বসল।
নাসিমা অভিযোগের সুরে বললেন- শুনতেই তো চাই! তোরা আগে কত গল্প করতি, স্কুলের, কলেজের, ভার্সিটির। এখন কেন করিস না?
-কারণ এখন আমাদের গল্পগুলো শুধুই আন্দোলন নিয়ে…আর তুমি, বাবা- তোমরাতো আবার এসব গল্প পছন্দ কর না, এসব নিয়ে কোনো আগ্রহই নেই তোমাদের!
নাসিমার মুখটা থমথমে হয়ে গেছে মেয়ের কথা শুনে। চুপচাপ ঘর ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। ওদের বাবা এসব পছন্দ করেন না। সারা জীবন ঐ মানুষটাকে ভয় পেয়ে কাটিয়েছেন। স্বামীর দাসানুদাস হয়ে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা অনুযায়ী কিছুই করেন নি। কিন্তু ইদানিং খুব জানতে ইচ্ছে করে- এখনকার ছেলেমেয়েগুলো কেন এত মিটিং মিছিল করছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে চল্লিশ বছর হয়ে গেল, নিজের চোখে যুদ্ধ দেখেছেন, যুদ্ধে তাঁর পরিবারের কেউ মরেনি এবং রাজাকারদের শাস্তি নিয়ে তাঁরা কখনো মাথা ঘামান নি। তাহলে এই কচি কচি ছেলেমেয়েগুলো কেন এমন অস্থির হচ্ছে? ওদের মধ্যে এত ক্ষোভ কেন? কতবার বলেছেন ওদের বাবা এসব পছন্দ করেননা, এসব রাজাকার বিরোধী আন্দোলনে যাওয়া ঠিক না। নাসিমার নিষেধ পাত্তাই দেয় না ছেলেমেয়ে দুটো। ওরা প্রশ্ন করে- ‘সবাই যাচ্ছে, আমরা কেন যাব না?” ওরা জানে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ নয়। নাসিমার বাবা আর শ্বশুর দুজনেই একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন, তাই এসব প্রশ্নের মুখে নাসিমাকে নিরুত্তর হয়ে থাকতে হয়। মাসখানেক আগে বাবার সাথে এই নিয়ে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়ে গেছে সুমনের। মুখের উপর কড়া গলায় সুমন ওর বাবাকে বলেছে
-তোমার কেন এত আপত্তি সেটা কি আর বুঝি না! তোমার ঐ বাপ-চাচাদের কারণে আমি রাজাকারের উত্তরসূরি হয়ে গেলাম! এটা ভাবতেই মাথায় আগুন ধরে যায়। মনে হয় নিজেকে শেষ করে দেই। ওরা তোমার গুরুজন হতে পারে, কিন্তু ভুলে যেও না ওদের সবচেয়ে বড় পরিচয় ওরা দেশের শত্রু…এই আন্দোলনে কেন যাব না? সবার আগে আমারই তো যাওয়া উচিৎ, নইলে প্রায়শ্চিত্ত হবে কি করে? অনেক বছর ওদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে, আর না। দেখবে কদিনের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে। দেশের মানুষগুলো সব আমাদের পক্ষে ...আরেকটা কথা জেনে রাখো- যদি তোমার বাবা আর চাচা বেঁচে থাকতেন তাহলে তাদের শাস্তির জন্যও আমি শ্লোগান দিতাম!
নাসিমা স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে ভয় পেয়ে ছেলেকে বললেন
-ওসব কত পুরানো কথা, এখন এসব নিয়ে ঝামেলা করে কি হবে? ভুলে যা না বাবা…
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে সুমন ছিঃ ছিঃ করতে করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
মেয়ে বলল- তিরিশ লক্ষ মানুষের কথা ভুলে যাব? এত সহজ, মা?
সেই থেকে ছেলে বাসার পথও মাড়ায় না, হোস্টেলে থাকছে। মেয়েটাও দিনভর টো টো করে বেড়ায়, মিছিলে যায়। নাসিমা দিনরাত ছেলেমেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, সেদিনই ওদের ক্যাম্পাসের দুটো ছেলে খুন হয়েছে! ওদের বাবা কদিন প্রচণ্ড রাগারাগি করেছেন তার সাথে, তারপর মন খারাপ করে ঘরে বসে থেকেছেন, কারো সাথে কথা বলেন না।
মাকে চুপ করে থাকতে দেখে তিথি বারান্দায় এল। নরম গলায় বলল- আচ্ছা মা, তুমি জানো একাত্তরে ছেলেদের মায়েরা হাসিমুখে ওদের যুদ্ধে পাঠাতেন? আর তুমি কিনা এত ভয় পাও?
-আমি তো শুনেছি একাত্তরের ওগুলো সবই গল্প, বইগুলোতে বাড়িয়ে লিখেছে…তখনকার সময় আর এখনকার সময় কি এক নাকি? ভয় কেন পাব না? কতগুলো ছেলেকে মেরে ফেলল, মিছিলে যায় বলে। সুমনের খারাপ কিছু হয়ে গেলে…
-আহ্ মা! ভয় পেয়ে ঘরে বসে থাকলে কি চলবে? যুদ্ধের সময় যদি মুক্তিযোদ্ধারা ভয় পেয়ে বসে থাকতেন তাহলে কি দেশ স্বাধীন হত? তোমার মেয়ে পারত ভার্সিটিতে ভর্তি হতে? কি জানি আমার জন্মই হত না বোধ হয়! আর কে বলেছে ওগুলো গল্প? বাবা নিশ্চয়ই! আচ্ছা একাত্তরে তুমি কি কোলের শিশু ছিলে? নিজের চোখে দেখ নি, একদম ভুলে গেছ? তবু কেন ওরকম ভাবো? বেগম রোকেয়ার অবরোধবাসিনী হয়ে থাকবে চিরকাল? কেন যে বাবার সব কথা মাথা পেতে মেনে নাও আমি বুঝি না!
মেয়ের মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন নাসিমা। কত বড় হয়ে গেছে মেয়েটা! কত জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলতে শিখেছে!
-তোমাকে না কতগুলো বই দিয়েছি পড়তে? কই পড়লে না তো। একাত্তরের দিনগুলি অন্তত পড়তে। জানো, ঐ বইটা বারবার পড়ি আর ভাবি তুমি কেন শহীদ রুমীর আম্মার মত হলে না! ওরকম তেজস্বিনী, সাহসী হলে না কেন? আমি কিন্তু তাঁর মতন হব…
এখন খুব অসহায় লাগছে নাসিমার, চোখ ছলছল করছে। তিথি খেয়াল করল না, আপন মনে বলেই চলল। তারপর দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে হঠাৎ ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিজের ঘরে চলে গেল।
দ্রুত তৈরি হচ্ছে তিথি। এখুনি যেতে হবে ক্যাম্পাসে। বন্ধুরা সবাই চলে গেছে। সুমন ওর দলবল নিয়ে টিএসসি তে অপেক্ষা করছে। নটার সময় ওখান থেকে মিছিল শুরু হবে। তাড়াতাড়ি পৌঁছুতে হবে তিথির। ব্যানারগুলো ব্যাগের মধ্যে ভরে নিল সে। কাঁধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে চেঁচিয়ে বলল
-মা আমি বেরুচ্ছি। আর তোমার ছেলেকে ফোন করেছিলাম। সুস্থই আছে…শুধু গলাটা ভেঙ্গে গেছে, রাতভর শ্লোগান দিয়েছে তো…’
বাইরের ঘর থেকে তিথির গলা শুনতে পেলেন নাসিমা। দরজা লাগিয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে গেলেন তিনি, দাঁড়িয়ে থেকে দেখলেন মেয়ে কেমন হন্তদন্ত হয়ে চলে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। ওর বাবা খুব মন খারাপ করে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন দুদিন আগে। এখন বাসায় থাকলে হয়ত যেতে দিতেন না মেয়েকে। ছেলের সাথে পেরে উঠেন না মোটেও, মেয়েকে বাধা দিতে চান। কিন্তু তিথিও ইদানিং বাবাকে মুখের উপর না বলতে শিখে গেছে।
তিথি বের হয়ে যাবার পর নাসিমা সময় কাটানোর জন্য একগাদা রান্না করেছেন। কিন্তু বাসায় কেউ নেই, দুপুরে ডাইনিং টেবিলে একা একাই খেতে বসতে হল। খেতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। খাবারগুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেন। টেবিল গুছিয়ে রেখে এঁটো বাসনগুলো ধুয়ে তুলে রাখলেন।
ঘড়ির কাঁটায় আড়াইটা। অখণ্ড অবসর। মেয়েটা কখন ফিরবে ঠিক নেই। ফোন করে জেনে নেয়া যায়, কিন্তু ইচ্ছে করছে না। বিছানার পাশে বইটা হঠাৎ চোখে পড়ল, হাতে নিলেন নাসিমা। একসময় পড়তে শুরু করলেন - একাত্তরের দিনগুলি।
সকালে ধড়মড় করে ঘুম থেকে জাগলেন নাসিমা। তিথি মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।
-কি ব্যাপার আলসি মেয়ে? ঘুমিয়ে তুমি থাকো?
-কটা বাজে রে? ইস কত বেলা হয়ে গেছে...তুই কখন উঠলি?
নাসিমাকে উঠে বসতে দেখে তিথি আদুরে গলায় বলল
-আমি উঠি নি তো! এখন ভোর আটটা। তোমার উঠতে হবে না। চল আমরা মা মেয়েতে আরেকটু গড়িয়ে নেই...
নাসিমা চোখ ছোট করে বললেন-কেন আজকে যাবি না মিছিলে?
-নাহ, আজকে আমার ডিউটি বিকেলে। আজকে সারা দুপুর তোমার সাথে থাকব।
কালকের বইটা বালিশের তলায় লুকিয়ে রেখে দিয়ে নাসিমা মেয়ের দিকে আড়চোখে তাকালেন। না, তিথি টের পায় নি। অদ্ভুত লাগছিল জাহানারা ইমামের এই বইটা পড়তে। এক নিঃশ্বাসে পড়েছেন কাল সারাদিন। আর কটা মাত্র পৃষ্ঠা বাকি।
দুপুরে খেতে বসে আজ খুব আনন্দ হল তিথির মায়ের। তিথি খুব গল্প করছে। এমনকি ওদের মিটিং গুলোতে কাল কী কী হল সেগুলোও বলছে। আজ সন্ধ্যায় নাকি মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়ে সবাই টিএসসির দিকে যাবে! অবাক লাগছে নাসিমার, তবু নিজ থেকে প্রশ্ন করছেন না তিনি, আগ্রহ নিয়ে চুপচাপ শুনে যাচ্ছেন।
খাবার পর দ্রুত হাতে টেবিল গুছিয়ে রেখে ঘরে এসে নাসিমা হতাশ হলেন। মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে। ভেবেছিলেন ওদের ক্যাম্পাসের গল্পগুলো আরো শুনবেন। বেশ লাগছিল এই অদম্য, সাহসী ছেলেমেয়েগুলোর গল্প শুনতে। দেশের জন্য ওদের কত চিন্তা! ওই রাজাকারগুলোকে শায়েস্তা করতে ওদের কত রকম আয়োজন।
ঝিমধরা দুপুরটা বিকেলের কোলে ঢলে পড়েছে। বইটা মাত্র পড়ে শেষ করলেন নাসিমা। মনটা কেমন বিষণ্ণ হয়ে গেল। কল্পনায় রুমীর চেহারাটা প্রতিবার সুমনের মত হয়ে যায়। রুমীর আম্মার চেহারাটা যেন সেই পাশের বাড়ির খোকন ভাইয়ের মায়ের মুখ হয়ে যায়। বইটা পড়তে গিয়ে আজকে ওদের কথা আচমকা মনে পড়ে গেল তার। খোকন ভাইকে তার মা নিজে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। মাসখানেক পর খোকন ভাই লুকিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে এলে তাকে মেরে ফেলেছিল অমানুষগুলো! নাসিমা সেই খুনীদেরও চেনেন। বারান্দায় বসে স্মৃতিগুলো আওড়াচ্ছেন আর নিঃশব্দে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তার। তিথি ঘুম থেকে জেগে অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-মা...কি হল? কাঁদছ কেন?
নাসিমা চোখ মুছে বললেন মৃদুস্বরে বললেন- তোর যাবার সময় হল, তাই না?
-হুম!
-আমাকে নিবি সাথে?
-তুমি যাবে? চেঁচিয়ে উঠল তিথি, চোখে তার রাজ্যের বিস্ময়।
-কেন তোদের মিছিলে কি বুড়োদের যাওয়া নিষেধ?
তিথি মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল- হুম, বাবার মত বুড়োদের যাওয়া নিষেধ। কিন্তু তুমি যেতে পারো, আমাদের মা যেতে পারে।
তারপর একটু হেসে আবার বলল
-কিন্তু বাবার অনুমতি নিয়েছ? সে জানতে পারলে কী বলবে তাকে?
মেয়ের দিকে তাকিয়ে নাসিমা বললেন
-বলব অনেক সময় কেটে গেছে…তবু সময় আছে। 'একাত্তরের দিনগুলি' বইটা একবার পড়ে নিও!
-------------------------------
গান্ধর্বী
মন্তব্য
আরো লিখুন...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সাক্ষীদাদাকে
গান্ধর্বী
ইয়ে, নাসিমার বাবা আর শ্বশুর দুজনেই যদি একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য থাকেন, রাজাকারদের শাস্তি নিয়ে তাঁদের পরিবারের অনেক বেশি-ই মাথা ঘামানোর কথা না?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
দুজনেই যে মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছেন!
গান্ধর্বী
আসলেই আলসেমি ভাঙ্গতে হবে আজকের মায়েদের, হয়ে উঠতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মায়েদের মত। ত্যাগ, সাহস ও বীরত্বের কি এক অসামান্য ঐতিহ্যের উত্তরসূরি আজকের মায়েরা, তা হয়ত তারা জানেন না, অথবা ভুলে গেছেন।
গল্প মোটামুটি লাগল। বক্তব্য গল্পে থাকবেই, তবে বক্তব্য-ভারে গল্পটি আক্রান্ত হলে পাঠকের মনে ততটা দাগ কাটতে পারে না। অন্যদিকে, একটি নির্ভার গল্পও কিন্তু প্রচণ্ড শক্তিশালী বার্তা দিতে সক্ষম হয়!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
অনেক ধন্যবাদ আপনার সাজেশনের জন্য।
ভাল থাকুন
গান্ধর্বী
এগুলো আসলে গল্পই, আর বৃথা আশাই...
বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।
ছাগুর ছানাপোনারা ততোধিক ছাগুই হয় সাধারণত। ব্যতিক্রম খুব বেশি নাই
রাজাকারের সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হয়ে যাবে, তারপর মিলমিশ করে দেশ গড়বো... এই আশার গুড়ে বালি ছাড়া আর কিছু নাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তবু আশা নিয়ে পথ চলা!
গান্ধর্বী
সহমত।
আমাদের দেশে বেশিভাগ মানুষ যেখানে ভুল পারিবারিক রাজনীতিক বিশ্বাস থেকে বের হতে পারেনা সেখানে রাজাকারের সন্তান বের হয়ে আসবে সেটা অনেক বেশি অবাস্তব আশা। রাজাকারের সন্তান হোক যত শিক্ষিত কিংবা বিদ্বান আপনি কাউকে খুঁজে পাবেন না কোনদিন যে তার বাবার কুকর্মকে স্বীকার করেছে। বরং উল্টো সেই কুকর্মকে ঢাকতে সাফাই গাইবে। আমার এক স্কুল শিক্ষক বলেছিলেন ”যতই যত্ন করো জাম গাছে কখনো আম ধরবে না”। এটি বাঙালি রাজাকারদের পরিবারের জন্যে চিরন্তন সত্য।
মাসুদ সজীব
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে এমনটাও কিন্তু অবাস্তব মনে হত একটা সময়! তাই মাঝেমাঝে মনে হয় এমনও যদি হত! মানব মন, লোভী খুব!
গান্ধর্বী
গল্পের প্লট দুর্বল লেগেছে আমার কাছে। লেখা চলুক।
মাসুদ সজীব
গান্ধর্বী
গল্পটা পড়ে কেমন জানি সব ভাবনা এলো মনে। নাসিমা কিংবা তার পাষণ্ড বরকে একটা 'একাত্তরে দিনগুলি'
আমূল পালটে দিতে পারে আসলেই? যেখানে তাদের একটা গোটা মুক্তিযুদ্ধকে সরাসরি দেখার দুর্ভাগ্য/সৌভাগ্য(!) হয়েছিল।
..... আরো লিখুন গান্ধর্বী।
নাসিমাকে বদলে দিতে পারে। বরকে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে!
ভাল থাকুন আয়নামতি
গান্ধর্বী
আশা করতে দোষ নেই। তবে এরকমটা দেখলামনা এ জনমে।
ধন্যবাদ
গান্ধর্বী
গল্পের বেসলাইনটা একটু আনইউজুয়্যাল, এরকম হবার কথা না, কখনো দেখিও নাই। দেখার কথাও না থিওরিটিক্যালি। তবে লেখা ভাল হইছে।
খালেদা এদিব চৌধুরি নামে একজন লেখিকা আছেন/ছিলেন। আমরা যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন বাংলা র্যাপিড রিডারে উনার একটা গল্প ছিল, "বুবুর জন্য সারা দুপুর"।
গল্পটা এতই মসৃন, এতই সুন্দর আর প্রাণবন্ত, আর লেখা এতই ঠাস বুনটে ঠাসা আমি যে কতবার পড়েছি তা গুনে রাখিনি। আজও প্রায়ই ঐ গল্পটার কথা মনে হয়। আপনার লেখা পড়লে প্রায়ই আমার ঐ গল্পটার কথা মনে পড়ে। কেন পড়ে জানি না। নিশ্চয়ি কোথাও না কোথাও কোন মিল আছে।
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
আমি গল্পটা পড়ি নি তো! বাংলা র্যাপিড রিডার পড়তে কিন্তু দারুণ লাগত।
অশেষ ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ভাল থাকুন বাউল ভায়া!
গান্ধর্বী
আমি শিশু পত্রিকার একটা বিশেষ সংখ্যায় পড়েছিলাম ঐ গল্পটা। আমার বোনের বিয়ে হয়েছিল কাছাকাছি সময়ে, গল্পটা তাই মনে দাগ কেটে গেছিল খুব।
____________________________
আশা করতে দোষ নেই সত্যি, কিন্তু আমার কাছে এটা দুরাশা মনে হচ্ছে। মাত্রই একদল ছাগু আর রাজাকারের ছাওয়ের মুখের ওপরে জবাব দিয়ে এলাম তো।
লেখা বরাবরের মত ভালো হয়েছে। গল্পের পটভূমি সুন্দর ফুটে উঠেছে। কিন্তু পরিণতিটা কেমন যেন ছেলেবেলার গল্প টাইপের হয়ে গেছে।
____________________________
হিজিবিজবিজদাকে অনেক
গান্ধর্বী
ভাবনাদার সুরেই বলি
"আশা করতে দোষ নেই। তবে এরকমটা" দেখার সম্ভাবনা নিয়ে খুব আশাবাদী নই।
আর একটা বিপজ্জনক দিক, এই ধরণের গল্পগুলির, বাস্তব-এ প্রচুর উদাহরণ না থাকলে বা আশু বাস্তবে ঘটার মত অবস্থা না থাকলে, এরা ঘা-ঢাকা মলম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ার পক্ষে আদর্শ উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। আপনি ভাল মন নিয়ে লিখেছেন। কিন্তু তার থেকে যে সমীকরন-প্রবাহর সম্ভাবনা ঘটতে পারে তা অনেকটা এই রকম - শয়তান-এর ছেলে-মেয়ে মানেই শয়তান নয় ---> শয়তান-এর ছেলে-মেয়েরা বেশীরভাগই শয়তান নয় ---> ছেলে-মেয়েরা এত ভাল, বাবা-মা'রা কি আর শয়তান ছিল? ---> বাবা-মা-এরা আসলে আদর্শবাদী ছিল।
সাহিত্যিকের কাছে কোন চিন্তাই অস্পৃশ্য নয়। কিন্তু কিছু কিছু চিন্তার বাঁক-প্রবণতা তাদেরকে সতর্কতার সাথে চর্চা করার দাবী রাখে। ঠিক আছে, লেখা জারী থাকুক। লিখতে লিখতেই বুঝতে পারবেন কিভাবে জল কোথা থেকে কোথায় গড়িয়ে চলে যেত চায় আর কিভাবে তাকে বাঁধ-এর পর বাঁধ দিয়ে যেতে হয়।
পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপনারা প্রশ্রয় দেন বলেই তো গাঁজাখুরি গপ্পো ফাঁদতে বসে যাই!
ধন্যবাদ আবারো পড়ার জন্য।
গান্ধর্বী
গাঁজাখুরি আবার হলো কবে থেকে? এগুলো কপোলকল্পনা বলা যেতে পারে!!
আলু পেপারে যে সব উপসম্পাদকীয় আসে, বিশেষ করে পাকিপ্রেম থেকে, সেগুলো হলো গাঁজাখুরি!
____________________________
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
আপনার লেখা আগে পড়ি নি। ঝরঝরে লেখা। বানান ভুল নেই। ভালো লাগল।
প্লট দুর্বল হতেই পারে, এটা কোনো বিষয় না। আপনি আসলে শেষ লাইনটা লেখার জন্যেই পুরো গল্পটা নিয়ে এগিয়েছেন। ভালো লেগেছে শেষের কথাটা।
আপনি ভালো থাকুন। আপনার মনের ভেতরে অনেক কথা আছে। সেটা বুঝতে পারছি।
একটু একটু করে সব কথাগুলোকে গল্প আকারে নিয়ে আসুন।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
উৎসাহ দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ!
ভাল থাকুন আপনিও
গান্ধর্বী
আপনার গল্প পড়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল-- ইস এমন যদি হত !!!
কিন্তু বাস্তবে এমন হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
সত্যি হল মানুষ পরিবার থেকে যে শিক্ষা ছোট থেকে পায় সেখান থেকে আর বের হতে পারেনা সহজে, তবুও আপনার মতই আশা করলাম। আশা করতে দোষ কি।
আপনার লিখার হাত ভাল লেগেছে, আগেও পড়েছি কখনও মন্তব্য করা হয়নি। আরও বেশী বেশী লিখুন।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
'এমন যদি হত' ভাবনা থেকেই আসলে লেখা। সম্ভাবনা কম হলেও কেন যেন এমনটা ভাবতেই ইচ্ছে করল!
শুভকামনা
গান্ধর্বী
নতুন মন্তব্য করুন