(১)
দরদর করে ঘামছি আমি। তুলি দেখে ফেলল না তো আমাকে? দেখে ফেললেই সব্বোনাশ। তবু আমি মরিয়া আজকে। চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছি। কাল ওকে ফোনে বলতে শুনেছি হাতিরপুলে দেখা করবে, কিন্তু এত গাঢ় স্বরে কার সাথে কথা বলছিল অনেক কসরত করেও সেটা উদ্ধার করতে পারিনি। ফলাফল খুব খারাপ হল। রাতে ঘুম হয় নি ঠিকমত আর সারাদিন ঝিমিয়ে এখন অফিস থেকে পালিয়ে তুলির পিছু পিছু চোরের মত ঘুরে বেড়াচ্ছি। কাঁটাবনের কাছে এসে ওর রিকশাটা থেমে গেল, মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে তুলি রিকশা থেকে নামল। এদিকে নিজেকে আড়াল করতে আমি আমার রিকশার হুডের ভেতর প্রাণপণে গুটিসুটি মেরে বসে আছি। রিকশাওয়ালা ফিকফিক হাসছে, গলা দিয়ে আমার স্বর বেরুচ্ছে না, নইলে ব্যাটার জন্য একটা রামধমক পাওনা ছিল।
হঠাৎ বুকটা ধক করে উঠল। ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে খেয়ালই করিনি যে তুলির পাশে হাঁটতে শুরু করেছে সজল, হ্যাঁ পষ্ট করে দেখতে পাচ্ছি-ওটা সজলই। কোনমতে রিকশাটাকে বিদায় করে ওদের পিছু নিলাম। পা ভারী হয়ে যাচ্ছে আমার। মাথার ভেতর সব গুবলেট পাকিয়ে যাচ্ছে। মিনিট পাঁচেক ফেউয়ের মত ঘুরে টুরে আবিষ্কার করলাম যে ওদের হারিয়ে ফেলেছি। সামনে একটা রেস্তোরাঁ। হয়ত এর আলো আঁধারিতে গিয়ে বসেছে ওরা! আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না আমার। ভেতরে পা না বাড়িয়ে ফুটপাত ধরে এলোমেলো হাঁটতে শুরু করলাম আমি।
(২)
বরের সাজে সজলকে আরো বোকাটে লাগছে আজ। মনটা ফুরফুর করছে আমার। কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছি নেমন্তন্ন। রাজীবকে অবশ্য টেক্কা দিতে পারছি না। ও এখন এই জগতে নেই, গোগ্রাসে খেয়েই চলছে। তুলি চোখের ইশারায় শাসন করছিল এতক্ষণ। কাজ না হওয়ায় এবার চাপাগলায় ধমক লাগালো আমাকে
-কী হচ্ছে এসব? অমন রাক্ষসের মত করছ কেন?
-আরে তোমার বন্ধুর শুভ পরিণয় বলে কথা...খাবই তো!
তুলি গজগজ করতে থাকল। আমি আবার রাজীবের প্লেটে নজর দিলাম।
হপ্তাখানেক আগেও খুব মন খারাপের মত হয়েছিল আমার। ঝিল্লির সাথে এখন মাঝেমাঝে দেখা হয়ে যায়, টুকটাক গল্প হয়। কিন্তু এ অপরাধের শাস্তি তুলি এভাবে দেবে সেটা মেনেই নিতে পারছিলাম না। সজলের সাথে আড়ালে দেখা করতে যাওয়া, রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করা- সবই সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। তুলি বুঝতে পারছিল আমার মনের মধ্যে কী চলছে, তবু ব্যাপারটা চেপে গেল। কয়েকদিন আগে রাজীবের কাছে জানতে পেলাম- সজলের বিয়ে, সে বিয়ের ঘটক নাকি আবার আমারই গিন্নি! পরে বিশদে জানতে পেলাম ওই দিনগুলিতে কনে বাছাই পর্ব চলছিল, আর সেখানে তুলির কাঁধেই ছিল গুরুদায়িত্ব! এই তবে রহস্য! রীতিমত হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি।
এইসব ভাবতে ভাবতে আরেক টুকরো মাছ প্লেটে নিয়ে আহ্লাদ করে খেতে শুরু করলাম।
-আহ্ ধীরে...গলায় কাঁটা বিঁধবে কিন্তু!
তুলির সাবধানবাণীকে তোয়াক্কা না করে বললাম
-কাঁটা? না, আর কাঁটা বিঁধবে না তো!
তুলি হাসছে, বাঁকা হাসি।
-------------------------------
আগের পর্বের লিঙ্কঃ http://www.sachalayatan.com/gandharbee/51307
মন্তব্য
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
কি একটা যেন আমার মাঝেও ঝিলিক দিয়ে গেল।
- ছায়াবৃত্ত
ধন্যবাদ
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
বা:, খাসা হয়েছে। পরের পর্বে টেনসন আর এক ধাপ চড়ুক, জটীলতার নুতন খেলা শুরু হোক, একদিকে যখন মনে হচ্ছে সব কাঁটা বের হয়ে গেছে তখনই পট করে কোথা থেকে নুতন কাঁটা গেঁথে গেল! আ: যা জমবে না!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
দাদাভাই, তুমি দেখি প্যাঁচালো বুদ্ধি দিচ্ছ।
একটাই জীবন, মন ভর্তি এত কাঁটা কুটা তো ভাল জিনিষ না।
বেচারা মনের সুখে মাছ খাচ্ছে, ঘরে গিয়ে একটু ফুর্তিতে ডাল ভাত ও খেতে দাও।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আবারো কাঁটার কথা বলচেন?
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
একটু বেশি ছোট লাগলো পর্বটা।
আর, ট্যাগ হিসবে কাঁটা(২) না ব্যবহার করে শুধু কাঁটা ব্যবহার করলে মনে হয় ভালো হয়।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
ব্যাপক হয়েছে রে! আপনি কিন্তু দারুণ লেখিয়ে
তবে একটা কৌতুহল বউরা আসলেই স্বামীদের খাওয়া নিয়ে এমন করে?
এইটা তো রীতিমত স্বৈরাচারি বেপার!
কব্জি ডুবিয়ে কেউ জান ছাড়িয়ে খাচ্ছে এটা তো দেখবার মত দৃশ্য,
কেন যে উপভোগ করতে জানেন না কিছু নারী খোদাই জানেন।
আরো লিখুন গান্ধর্বী(আপনি এ বইটা পড়েছেন নিশ্চয়ই? বাণীবসু আমার প্রিয় একজন লেখিয়ে)
শুভকামনা।
দিদি, এ নিয়ে গপ্পো করে ফেলেছি আগেভাগেই
'গান্ধর্বী' আমার বেশ প্রিয় একটা বই, বহুবার পড়েছি।
ভাল থাকুন ।
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
ধন্যবাদ
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সাক্ষীদাদা শুধু ইমো দ্যান ক্যানে
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
কাঁটা দিয়া পাতা তুলব।
ইউক্লিড
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
নতুন মন্তব্য করুন