(১)
এই মুহুর্তে পাখি ওর প্রিয় বালিশটাকে বেজায় মিস করছে। ওর ইচ্ছে করছে গলা ছেড়ে কাঁদতে, কাঁদতে কাঁদতে বালিশটাকে ভিজিয়ে ফেলতে। কিন্ত চোখের কোণে জমতে থাকা উদ্ধত জলরাশিকে আপাতত শাসন করে রাখল ও। একটা রিকশা দরকার খুব। ইতিউতি তাকাচ্ছে পাখি। চারুকলা থেকে ভিড় ঠেলে পায়ে হেঁটে টিএসসি পেরিয়ে ডিএমসি পর্যন্ত এসে গেছে, তারপর রাস্তাটা একটু ফাঁকা পাওয়া গেল। উফ, ভালবাসা দিবসটাকে রীতিমত জাতীয় দিবস বানিয়ে ছেড়েছে মানুষগুলো, সবারই বাইরে বেরুনো চাই-ই চাই এই দিনে। ঘেমে নেয়ে গেছে পাখি, একটা রিকশা দেখতে পেয়ে উঠে পড়ল ওটাতে।
রিকশার হুডের আড়ালে পাখি এবার হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু করল। কদিন ধরে প্ল্যান করছিল পাখি ওদের প্রথম ভালবাসা দিবসে সারাদিন একসাথে কাটাবে দুজন, পাখি আর তমাল। সব ভণ্ডুল করে দিল ওই বেরসিক ছেলেটা। সকাল থেকে ফোন করে করে ছেলেটার ঘুম ভাঙ্গাতে হল, তারপর তাড়া দিতে হল রেডি হয়ে ঘর থেকে বেরুবার জন্য। সাজগোজ সেরে পাখি চারুকলায় পৌঁছে গেল, কিন্তু তমালের আর কোনো পাত্তাই পাওয়া গেল না। অপেক্ষা করে করে শেষমেশ পাখি ফোন করে জিজ্ঞেস করল-‘তুমি কি আজ আসবে?’ তমাল তখন কেজো গলায় জানতে চাইল-‘আজকে না আসলে হয় না? দুর্দান্ত একটা বই পড়ছি, ওটা শেষ না করে বেরুতে পারব না পাখি।’
পাখিও গোঁয়ারের মত বলে বসল- ঠিক আছে, বেরিয়ে কাজ নেই। আমি ফিরে যাচ্ছি। তুমি বইটা শেষ কর।’
তারপর ফোনটা বন্ধ করে ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে শুরু করল ও। ওর নিজেরই ভুল , তমাল গড়পড়তা ছেলেদের মত নয়। ভালবাসা দিবসে ও প্রেয়সীর সাথে দেখা না করে বইতে মুখ গুঁজে রাখবে, নয়ত জগজিৎ সিং এর গজল শুনে বা ঘুমে কাদা হয়ে থাকবে এটাই ওর জন্য স্বাভাবিক। হৈ হল্লা আর ভিড়ের মধ্যে সেঁধিয়ে দিবস পালন করার মত ছেলে ও নয়। পাখিতো সব জেনে বুঝেই প্রেমে পড়েছিল, এখন ন্যাকা ন্যাকা আবদার করা বড় অন্যায়!
(২)
মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথা, উঠে বসলেই দুলে উঠছে চারপাশ। ধবধবে বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছে পাখি। মা আর বাবার গলার আওয়াজ পাচ্ছে ও। একটু পর মনে হল আরেকটা চেনা স্বর শুনতে পাচ্ছে পাখি। তবু চোখ বুজেই রইল, কারণ ওর এখন মাথার ঠিক নেই, নিশ্চয়ই ভ্রম হচ্ছে। রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে যাচ্ছে পাখি...মাথার পেছনটা ভিজে যাচ্ছে, ভিজে যাচ্ছে হলদে শাড়িটা...তারপর সব অন্ধকার। খুব কষ্ট করে মনে করতে পারল সেদিনের বিকেলটা।
মা ডাকছে। পাখি এবার চোখ খুলল।
-তমাল চলে যাচ্ছে, একটু কথা বল।
বলেই মা সরে গেলেন। পাখির মনে হল ওর মাথার নিচে রাখা হসপিটালের ওষুধ ওষুধ গন্ধমাখা বালিশটাতে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল, চোখ থেকে।
-কেমন লাগছে এখন?
-একটু ভাল। খবর পেলে কীভাবে?
-ফোন বন্ধ ছিল দুদিন ধরে। তারপর তোমাদের বাসায় গিয়ে জানতে পেলাম।
পাখির কপালে হাত রাখল ও। সবটুকু উত্তাপ শুষে নিচ্ছে তমালের হাত। আরামে চোখ বুজে ফেলল পাখি।
কতক্ষণ কেটে গেছে বুঝতে পারছে না পাখি। ঘুম ভেঙে মনে হচ্ছে সবটুকু স্বপ্ন ছিল। মাথাটা এখনো ভার ভার লাগছে। শুয়ে থাকতে আর ইচ্ছে করছে না। বালিশে হেলান দিয়ে বসে জীবনানন্দের কবিতা সমগ্রটা হাতে নিতেই ফুলটা চোখে পড়ল পাখির। লাল টুকটুকে একটা গোলাপ। তাহলে স্বপ্ন ছিল না! তমাল এসেছিল তবে! ও ঘুমিয়ে পড়তেই বইয়ের ভাঁজে ফুলটা রেখে দিয়ে চলে গিয়েছে।
একটা বিবশ করা ভাল লাগায় ছেয়ে যাচ্ছে মন। ক্যালেন্ডারে দিন বদলে গেলেও পাখির মনে হল আজকেই ভালবাসার দিন, ফাগুনের প্রহর। শুধু আজ কেন, সবকটা দিনই কি ভালবাসার নয়! এমন করে তো রোজ ভালবাসা যায়, সাদামাটাভাবে, কোনো দিন-ক্ষণ, উপলক্ষ্য, আয়োজন ছাড়াই।
-----------------------------------
মন্তব্য
ভালবাসা দিবস মেনে হয় না। ভালবাসা যে দিন চোখে আংগুল দিয়ে তার অস্তিত্ব জানান দেয় সেদিনই ভালবাসা দিবস ।
ঠিক তাই!
ধন্যবাদ।
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
বড় মিষ্টি হইছে গল্পটা দিদি।
বড় খুশি হলাম আপনি পড়েছেন বলে
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
মিষ্টি গল্প।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ দাদা!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
সবার কথা নকল করেই বলি, "মিষ্টি হয়েছে"।
ইনসুলিন নিতে হবে
শুভেচ্ছা
[মেঘলা মানুষ]
সাবধানে নিবেন কিন্তু, হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে গেলে আমার কোনো দোষ নেই বলে রাখলাম
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
ইয়ে মানে একটু নাটুকে লাগল যে ............
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ইয়ে মানে আমি তো নাটুকে গল্প লিখি বলেই সুখ্যাত(?) আছে!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
পাখি নিজেও তো একই প্ল্যানই করছিল।
এরকম একটা-দুটো ঢেউ মিলেই তো ভ্যালেন্টাইনস ডে'র এর হাল আমলের ডে লং মচ্ছব শুরু হয় ভায়া। কারো ভালবাসা দিবস যাপনের কায়দা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই, কিন্তু আমরা বিশেষ যুগল, বাকিরা আমআদমি তথা ভিড় বাড়ানো জনতা-- এমন ভাবলে কি হবে?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সবার মনেই তো একই ক্ষোভ!
কিন্তু ভাবে তো?
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
ইশশ আমি মিস্টি দুস্টু গল্প লিখতে পারিনা। যদি পারতেম তবে এই সেদিন আমাদের বাড়ির সামনে জমে থাকা স্নোর উপরে অজ্ঞাত কারো এঁকে যাওয়া ইয়াব্বড় এক হার্ট নিয়ে লিখে ফেলতাম এমন একটা গল্প
পাপী মনে কৌতুহলের শেষ নেই। জীবনানন্দের বইটা হাসপাতালে এলো কী করে? তামাল আনলো নাকি!
গল্পটা ভালু লেগেছে আরো লিখুন।
ওমা! তাই নাকি, কি মিষ্টি! লিখে ফেলা উচিৎ কিন্তু
কেমনে বুঝলেন?
ভাল থাকুন।
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
তমাল যে বলল যে সে একটা বই পড়ছে ওটা শেষ না করে আসতে পারবে না। আর তারপর আর কিছুই সে বলল না। গল্পের এই জায়গা স্বাভাবিক নয়। হয়ত অভিমানের একটা পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য লেখিকা প্রেমের স্বাভাবিক নিয়ম কানুন গুলি ভঙ্গ করছেন। এই ভাঙচূর সমর্থন করিনা। আমি তমাল হলে বলতাম, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, আমি এলুম বলে।
পাখীঃ তুমি এখন কি করছ?
তমালঃ একটা গল্পের বই পড়ছি।
পাখীঃ তুমি যে বইটা নিয়ে মশগুল থাকবে না তার বা কি মানে আছে?
তমালঃ মশগুলই যদি থাকতে হয় তবে বইয়ের চেয়ে তুমি অনেক প্রিমিসিং।
পাখীঃ কেন?
তমালঃ বই খসখসে,তুমি কোমল; বই নীরব, তুমি সরব; বই কোনদিন বলবে না,এই যে, শুনছ? তুমি তো এটা নিশ্চয় বলবে-
পাখীঃ থাক! অনেক হয়েছে। দেরী করবে না কিন্তু।
তমালঃ এই দূরে নিক্ষেপ করলাম বই। শব্দ কি শুনতে পেলে?
পাখীঃ ধ্যাৎ!
এই মরেছে আমি তো টুকলিফাই করে গল্পটা লিখেই চলেছি। স্যরি! গান্ধর্বী, লেখিকার অধিকারে হস্তক্ষেপ করব না।
লিখতে থাকুন। শুভকামনা।
মনোবর।
বাহ্ আপনি লিখলে তো সত্যিই চমৎকার হত
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
ভাল থাকুন
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
গল্পটা ভালই হয়েছে । তবে সবাই যে মিষ্টি মিষ্টি করছে তাইতে একটু ভয়ে ভয়ে আছি । আমার আবার সুগার বর্ডার লাইন কীনা !
ভয় পাবেন না, ভেজালের যুগ তো, এই মিষ্টিতে সুগার লেভেলের কিস্যু হবে না!
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
নতুন মন্তব্য করুন