অকালবোধন ( ২য় পর্ব)

গান্ধর্বী এর ছবি
লিখেছেন গান্ধর্বী [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ৩১/০৮/২০১৬ - ১১:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম পর্বের পর

‘‘মধুছন্দা,

তোমার মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি হয়েছে। এক বিকেলে আমায় ফোন করে বলল- আপনি কি সাঁঝবাতির লেখক, অনিমেষবাবু?

আমি তার পরিচয় জানতে চাইলাম। মেয়ে বলে কিনা তার নাম সাঁঝবাতি। ভাবলাম দুষ্টুমি করছে কেউ। কেজো গলায় জানতে চাইলাম- কী চাই?

মেয়ে মিষ্টি করে বলল- আমার মামণি আপনার লেখার ভীষণ ভক্ত তাই আমার নাম রেখেছে সাঁঝবাতি।

আমি এবার জানতে চাইলাম তার মামণির কথা। সে বলল তার মাসিমণির নাম ছন্দা। ছোটবেলায় যেদিন থেকে তার কেউ রইল না সেদিন থেকে মাসিমণি তার মামণি হয়ে গেল। পনের বছরের পুরোনো তোমার সেই চিঠিটা পড়ে ফোন করেছিলাম তোমায়, তুমি বাড়ি ছিলে না। সেকথা শুনেছ নিশ্চয়ই সাঁঝবাতির কাছে। সেদিন সাঁঝবাতির সাথেই আমার কথা হয়েছিল, আমার নম্বরটাও ওকে দিয়েছিলাম। সেদিন অবশ্য ওর নামধাম জানা হয় নি আমার। এবার বায়না করে বলল তোমাদের বাড়িতে বেড়িয়ে যেতে। আমি মনে মনে বিরক্ত হচ্ছিলাম এই ভেবে যে তুমি নিজে কেন ফোনটা করলে না, মেয়েকে দিয়ে কেন নেমন্তন্ন দিচ্ছ! নিরাসক্ত গলায় বলে দিলাম ভীষণ ব্যস্ত আছি, মোটেও সম্ভব হবে না। কিন্তু মেয়েটা তোমার নাছোড়বান্দা। বলল আমার লেখার বেশ ভক্ত সেও! তাছাড়া মামণি বিদেশ বিভূঁইয়ে ছেলের কাছে চলে যাচ্ছে কদিন বাদেই, তাই এবারের জন্মদিনে সে মামণিকে সারপ্রাইজ দিতে চায়! এসব শুনে আমি একটু গলে গেলাম। তবু দোটানায় ছিলাম। তোমার জন্মদিনের উৎসবে উপস্থিত থাকব, শেষমেশ ওকে কথা দিতে বাধ্য হলাম আমি।

ভাবতে ভারি অদ্ভুত লাগছে, এখন তোমার বাড়িতে বসে লিখছি তোমাকে। আজ এখানে এসে সাঁঝের মুখে শুনতে পেলাম দুসপ্তাহ আগেই তোমাকে রওনা দিতে হয়েছে ছেলের কাছে, কোনো এক কাগুজে জটিলতা এড়াতে। চিঠিটা যখন তোমার হাতে পৌঁছুবে তুমি তখন অজস্র মাইল দূরে বসে আছ, আহ্নিক গতির হিসেবে দিন ক্ষণও বদলে গেছে। তবু জানাই জন্মদিনের শুভাশিস। খুব তাড়াহুড়ো করে লিখছি, গুছিয়ে লেখার সময় নেই। আমাকে কাগজ কলম ধরিয়ে দিয়ে সাঁঝ গিয়েছে চা বানাতে।

ভাবছ কী অভদ্র আমি, পনের বছর আগেকার চিঠির উত্তর দিলাম আজ! এইতো কদিন আগে তোমার চিঠির হদিশ পেলাম, চিঠিখানা এর আগে বহুকাল আত্মগোপন করেছিল একটা বইয়ের ভাঁজে। মাঝেমাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে সেদিন ক্যাফে রোজ্জোতে কতটা সময় অপেক্ষা করেছিলে আমার জন্য! জানি না সে অপেক্ষা মধুর ছিল কিনা! হয়ত এসব জিজ্ঞাসা অনুচিত। তবে আঁচ করতে পারি দুঃখ পেয়েছিলে, অপমানবোধ করেছিলে। করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তাই। ইতোমধ্যে কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত কিন্তু হয়ে গেছে আমার। তোমার বাড়িতে এসে তোমার দেখা পেলাম না, নেমন্তন্ন করে অতিথিকে ফেলে চলে গেলে। সাঁঝবাতি শোধ নেয়ার কী চমৎকার সুযোগ করে দিল তোমায়, দেখলে তো!

আর কী লিখব, ভাল থেকো। হয়ত আমাদের দেখা হয়ে যাবে পৃথিবীর দ্রাঘিমা পেরিয়ে কোনোদিন, বাঁশের সাঁকোয় কিংবা সুপুরিবনে, অদৃশ্য সুতনুকা হাওয়ায়। অথবা নাই চিনলে আমায় তুমি, রইব আধেক চেনা।

ভাল থেকো, মধুছন্দা, তোমার জন্মদিনে কী আর দেব শুধু এই সম্বোধনটুকু ছাড়া!

ইতি-

অনিমেষ''

চিঠিটা এবারো পৌঁছুল না। কথা ছিল ছন্দার কাছে বেড়াতে গেলে এই চিঠি পৌঁছে দেবে সাঁঝবাতি, ছন্দাকে হতবিহবল করে দিয়ে। সাঁঝবাতি চলে গেল হপ্তাখানেক পর। কিন্তু ওর চপল চোখ এড়িয়ে গেল চৌকো খামে বন্দি এই চিঠি। চিঠি এবারে নির্বাসিত হল আবলুশের দেরাজে।

----------------------------


মন্তব্য

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

প্রথম পর্বের পর একটা দ্বিধা/আশংকা ছিল আর আসবে কিনা। এসেছে। ভাষার ছোট ছোট কারুকাজে নিজের ভেতরে তাকে খোঁজা ভালো লাগে। কিন্তু আপনি খুব অনিয়মিত লিখেন। আফসোস হয়। নিভৃতির জন্য আদর।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

গান্ধর্বী এর ছবি

আফসোস নিজেরও কম হয় না দিদি। অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য হাসি

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

দেবদ্যুতি এর ছবি

ইস!!!!! গল্পটা ভীষণ ভালো প্রিয় গল্পকার

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

গান্ধর্বী এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।