নিবন্ধের উৎপত্তি ফরহাদ মজহারের একটি সাক্ষাৎকার, গ্রহন করেছিলেন সাজ্জাদ শরিফ, প্রথম প্রকাশিত ১৯৯৫ সনে বাংলাবাজার পত্রিকায়। ব্লগার ব্রাত্য রাইসু তাঁর ব্লগে কবিসভায় প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারের লিংক দিয়েছিলেন সে সূত্রেই সাক্ষাৎকার পড়ার সুযোগ এবং লিখার অবতারনা।
প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক সাজ্জাদ শরিফ সাক্ষাৎকারের গ্রাহক হয়েও কেন নিজস্ব ভ্রান্ত দর্শন প্রচারে অভিযুক্ত হবেন? সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সাজ্জাদ শরিফ শুধু প্রশ্নকর্তাই ছিলেন না, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতামত ব্যাক্ত করেছেন এবং যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্ঠা করেছেন। তাঁর ভ্রান্ত যুক্তিগুলোও বর্তমান নিবন্ধের অন্যতম আলোচ্য বিষয় সুতরাং তাঁর নাম শিরোনামে উঠিয়ে দেয়া ভিন্ন গত্যন্তর খোলা ছিল না।
ঔপনিবেশিক শাসনামলে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছিল সমগ্র সমাজ জীবনে এবং ব্যক্তি মানসিকতায়, তৎকালিন ক্ষয়িষ্ণু সমাজে এরই ধারাবাহিকতায় উৎপন্ন মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া সম্প্রদায়। এ শাসনামলে সমাজ সংস্কার, শিক্ষা, সাহিত্য, সাংবাদিকতায় অন্যতম পথিকৃত ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং কোন কাজ সম্পাদনেই তিনি ব্রিটিশ রাজশক্তির কাছে মাথানত করেননি। আলোচ্য সাক্ষাৎকারে ফরহাদ মজহার কর্তৃক বিদ্যাসাগর চিত্রিত হয়েছেন “ইংরেজদের তাবেদার” হিসেবে এবং অকাট্য যুক্তির ভান্ডার নিয়ে এই ভাবের অনুগামী হয়েছেন সাজ্জাদ শরিফ।
মূখ্যত দুটো উদ্দেশ্য কে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এই লিখা, প্রথমত ফরহাদ মজহার ও সাজ্জাদ শরিফের বিদ্যাসাগর সম্পর্কিত দর্শনের ভ্রান্তত্ব নির্দেশ এবং দ্বিতীয়ত বিদ্যাসাগরের জাতীয়তাবাদের অবস্থান ব্যাখ্যা ।
ঊনবিংশ শতকের আরও এক দিকপাল ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। সাক্ষাৎকারে সাজ্জাদ শরিফ রামমোহনের স্হান নির্দেশ করেছেন “অপেক্ষাকৃত পজেটিভ” বলে, তুলনার অন্য দুজন ছিলেন বঙ্কিম ও বিদ্যাসাগর। বঙ্কিম সম্পর্কে হয়ত তিনি সঠিক কিন্তু বিদ্যাসাগর সম্মর্কে তাঁর এই ধারনাটিও সর্বৈব ভ্রান্ত। এগুলো নির্দেশ করাও লিখার অন্যতম উদ্দেশ্য বটে।
প্রথম প্রকাশকালের হিসেবে সময় পেরিয়েছে তের বছর এবং সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া লিখেছেন সাক্ষাৎকারের উপর স্বভাবতই বর্তমান নিবন্ধের উপযোগিতা ব্যাখ্যার দাবী রাখে। দ্বিতীয়ত সাক্ষাৎকারের বিস্তৃতি ব্যাপক সুতরাং বর্তমান আলোচনার সীমারেখা নির্দিষ্ট থাকা প্রয়োজন।
সময়ের হিসেবে প্রধান প্রশ্ন সাক্ষাৎকারের গ্রহনযোগ্যতা। আলোচ্য ব্যাক্তিদ্বয়ের সাহিত্যিক সাংবাদিক বা এন জি ও প্রধান হিসেবে খ্যাতি বা অখ্যাতি যাই থাক সামাজিক প্রতিষ্ঠা নিয়ে বোধকরি সন্দেহের অবকাশ নেই এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠার জন্যই পাঠক আকর্ষন বোধ করে থাকেন। ১৯৯৫এ বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও এর চলমান প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়নি বিভিন্ন সময়ে পুনঃপ্রকাশিত হয়। কবিসভায় প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারের নীচে একটি বিস্তৃত তালিকা পাওয়া যায়, যাদের কাছে ই-মেলে পাঠানো হয়েছে, সুতরাং সাক্ষাৎকারের গ্রহনযোগ্যতা যে এখন বিদ্যমান সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। পূর্বেই সামাজিক প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে আর সে প্রতিষ্ঠার কারনে পাঠক ও নিঃসংশয় চিত্তে তাঁদের মতামতকে গ্রহন করে থাকেন।
এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ সাক্ষাৎকারের উপর তাঁর মূল্যবান প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। প্রতিক্রিয়াটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার কিন্তু বিভিন্ন কারন বশতঃ ইচ্ছে থাকা সত্বেও তিনি সাজ্জাদ শরিফ বা ফরহাদ মজহারের মতামতকে অব্যার্থ যুক্তির সাহায্যে ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করতে পারেননি অবশ্যই একথা ঊনবিংশ শতাব্দী তথা বিদ্যাসাগর সম্পর্কে প্রযোজ্য।
সাক্ষাৎকারের শাখা প্রশাখার বিস্তৃতি আসমুদ্রহিমাচল, সিন্ধু সভ্যতা থেকে বর্তমান সাম্রাজ্যবাদ, মধ্যযুগীয় মঙ্গলকাব্য থেকে আধুনিক বাংলা কাব্য সবই ছিল সাক্ষাৎকারের অংশ। যে কোন ব্যাক্তির একটি যুগের নিজস্ব দর্শন থাকতেই পারে, না থাকাটাই বরং অস্বাভাবিক। যেমন ফরহাদ মজহার হিন্দু সংস্কৃতি ও মুসলমান সংস্কৃতির সাথে পরিচয়ের সুবাদে নিজেকে একাধারে হিন্দু এবং মুসলমান বলে দাবী করেছেন। সেটি সম্পুর্ন তাঁর নিজস্ব দর্শন কিন্তু তিনি এখানেই থেমে থাকেননি তাঁর মতামতে অভিযুক্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের প্রায় সবাই এবং যেহেতু এই ব্যক্তিত্বদের ঘিরেই আবর্তিত আলোচনা তাই নিবন্ধের বিস্তৃতিও ঊনবিংশ শতাব্দীতে তথা মূখ্যত বিদ্যাসাগরে সীমাবদ্ধ থাকবে।
বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি জাতীয়তাবাদী নন, জাতীয়তাবাদের অঙ্কোরোদগমের সময়ই তাঁরা আশা করে বসে আছেন বিদ্যাসাগর জাতীয়তাবাদের পুরো বোঝা নিজ কাঁধে তুলে নেবেন, আবার অন্যত্র ফরহাদ মজহার বলছেন “ তাঁরা (রামমোহন , বিদ্যাসাগর ) সমাজের ভেতর কাজ করছেন, সমাজের সংস্কার সাধন করে সামাজিক শক্তির ক্ষেত্র তৈরী করেছেন ”। এটুকু বোঝতে পেরেছেন অথচ বুঝতে পারেননি এই সামজিক শক্তির মূলে নিহিত ছিল পরবর্তী জাতীয়তাবাদের বী্জ। বিদ্যাসাগরই ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী । বিদ্যাসাগর যেহেতু জাতীয়তাবাদী নন সুতরাং অবশ্যই ইংরেজের তল্পিবাহক এ যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে সাজ্জাদ শরিফ নিয়ে এসেছেন তাঁর উদ্ভট সংস্কৃত কলেজ থিওরী।
তাঁর ভাষায় “ অদ্ভুত সব বৈপরীত্য দেখতে পাচ্ছি। যখন সিপাহী বিপ্লব দমন করার জন্য ব্রিটিশ সোলজার আসছে তখন বিদ্যাসাগর তাদের আবার তাঁর সংস্কৃত কলেজে থাকতে দিচ্ছেন । আশ্রয় দিচ্ছেন”
সাজ্জাদ শরিফের ভাষ্যে ইংরেজ সৈন্যদের প্রতি বিদ্যাসাগরের মমত্ব ফুটে উঠে, মনে হয় বিদ্যাসাগর ইংরেজ সৈন্যদের জামাই আদরে নিজের ঘরে আপ্যায়ন করছেন। এ তো সংস্কৃত কলেজ নয় বিদ্যাসাগরের গ্রামের বাড়ী বীরসিংহ!
সংস্কৃত কলেজ এই থিওরীর প্রবক্তা তথ্য উপস্হাপনে সততার পরিচয় দেননি, স্বমত প্রতিষ্ঠার জন্য তথ্য উপস্হাপনে মিথ্যাচার করেছেন।
বিদ্যাসাগর সংক্রান্ত প্রামান্য পুস্তকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন খুব বেশি তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। গোপীকা মোহন ভট্টাচার্যের কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের ইতিহাস, ২য় খণ্ডে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। তাঁর পুস্তক থেকে জানা যায়, ১৮৫৭ সনে ব্রিটিশ রাজশক্তি কলকাতার বিভিন্ন সরকারী অট্টালিকার মত সংস্কৃত কলেজও দখল করতে মনস্ত করেন কিন্তু সহজে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেননি তৎকালীন সংস্কৃত কলেজ প্রধান বিদ্যাসাগর। তাঁর প্রধান যুক্তি ছিল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে অট্টালিকা দখল অনভিপ্রেত।
বিদ্যাসাগরকে অন্যত্র শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখার জন্য অন্যত্র বাড়ী খোঁজার পরামর্শ দেয়া হয় এবং সংস্কৃত কলেজে আহত সৈন্যদের জন্য হাসপাতাল খোলা হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। বিদ্যাসাগর কলকাতার বৌ বাজার স্ট্রিটে দুটি বাড়ী ভাড়া নেন এবং পরবর্তিতে ভাড়া বাবদ সমস্ত টাকা পরিশোধিত হয়।
আশ্চর্যের বিষয় বিদ্যাসাগরের এই মানবিক শিক্ষাব্রতী পদক্ষেপকে সাজ্জাদ শরীফ নিয়ে এসেছেন ইংরেজ তাবেদারিত্বের প্রমান হিসেবে। ফরহাদ মজহার বা সাজ্জাদ শরিফ কী জানতেন না হাসপাতালে রূপান্তরিত হওয়ার পরও সংস্কৃত কলেজের পাঠদান ব্যাহত হয়নি? একটু অনুসন্ধান করলেই এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তাঁরা পেতে পারতেন। সাজ্জাদ শরীফের ব্যাপারে না হয় এ কথা প্রযোজ্য যে তিনি কোন অনুসন্ধানের অনুবর্তী হননি কিন্তু ফরহাদ মজহারের ক্ষেত্রেও কী একই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে? ধরা যাক, বিদ্যাসাগর এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করে অট্টালিকা দিতে অস্বীকার করলেন তাতে ফলাফল কি দাড়াত? ইংরেজরা বল প্রয়োগে দখল করত। শিক্ষাবিস্তারের জন্য যিনি আমৃত্যু লড়াই করেছেন তাঁর পক্ষে এ কাজ করা কী সঙ্গত হত? হলেও কী অদূর ভবিষ্যতের জন্য ভাল ফলাফল বয়ে আনত? আমাদের তথাকথিত সমালোচকরা এসব নিয়ে ভাবার অবকাশটুকুও পান না।
এখানে উল্লেখ্য যে, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ সংস্কৃত কলেজ সংক্রান্ত থিওরীতে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন “ নিশ্চই বাধ্য হয়েছিলেন ”। বিদ্যাসাগর কর্মজীবনের শুরু থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য হয়ে কোন কাজ করেন নি, কোন কাজে অসঙ্গতি লক্ষ্য করলেই প্রতিবাদ করেছেন, প্রতিবাদে কাজ না হলে স্বেচ্ছায় দুরত্ব বজায় রেখেছেন। হিন্দু অ্যানুইটি ফান্ড বা তৎকালীন “ হিন্দু পেট্রিয়ট ” এর প্রকৃষ্ট উদাহরন।
ফরহাদ মজহারের বিদ্যাসাগরের জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায়ই সাজ্জাদ শরীফের সংস্কৃত কলেজ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রসঙ্গ আসে। সুতরাং জাতীয়তাবাদী বিদ্যাসাগরের পরিচয় দেয়া আবশ্যক , আগামী পর্বে – বিদ্যাসাগরের জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আশা রাখি।
মন্তব্য
সচলে স্বাগতম। প্রথম পর্বটা চমৎকার লাগলো।
একটি তথ্যবহুল সিরিজের অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ স্যার ।।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
ভাল লাগল খুব। বিদ্যাসাগরের মত মানুষ আর কয়েকটা থাকলে আমরা আরো অনেক দূর যেতে পারতাম।
---------------------------------
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
সত্যিই তাই
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
যে সাক্ষাৎকারকে ভিত্তি করে আপনি লেখাটি ছেড়েছেন তার লিংকটি দিলে ভালো হত। তবু আপনার মতামতের ভিত্তিতে আমি যেটুকু বুঝতে পারছি তাতে অবাক হই নি, তার কারণ শিরোনামের নাম দুটি । তবে আশ্চর্য হয়েছি এই ভেবে যে, বহুল চর্চিত ও গবেষিত একটি বিষয় নিয়ে তারা এমন মুর্খের মত মন্তব্য করেছেন। যুগের সীমাবদ্ধতা ও সংকীর্ণতাকে ধারণ করেই প্রতিভা বিকশিত হয়; কালোত্তীর্ণ মানুষ মানুষই দেবতা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে সেই প্রতিভা মানব জাতির জন্য, তা যে পরিসরেই হোক না কেন , কতটুকু অবদান রাখলো ; বা মানুষকে, তার সভ্যতাকে কতখানি এগিয়ে নিলো ? অসাধারণ আধুনিক ( তার কালে) মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যে নারী স্বাধীনতার ব্যাপারে খানিকটা দ্বিধা-দ্বৈরথে ছিলেন তার মানে কি এই যে তিনি নারী স্বাধীনতা বা অগ্রগতির বিপক্ষে ছিলেন ? নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ইংরেজরা বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দুপাশে যত মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে তারা একটা করে ঢিল ছুঁড়লেও নাকি ইংরেজবাহিনী ধুলোয় মিশে যেত- এই ছিল তখনকার জাতীয়তাবোধ । আর এই তো সেদিন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মাওলানা ভাষাণীর মত বড় রাজনৈতিক নেতাও কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছিলেন, যেমন ভাষা আন্দোলন প্রশ্নে নিরব ছিলেন শেরে বাংলা খ্যাত এ.কে ফজলূল হক। তাই বলে তারা কি আমাদের অস্তিত্বের বিপক্ষে ছিলেন নাকি আমাদের সংগ্রামের পথে কাঁটা বিছিয়েছেন ? সমাজমানসে জাতীয়তাবোধ উত্থানের পূর্বশর্ত পূরণ না হলে কি তা নাজেল হওয়া সম্ভব ? উনবিংশ শতাব্দির এতসব সীমাব্ধতার মধ্যেও বিদ্যাসাগর কি ভিন্ গ্রহ থেকে জাতীয়াবাদের তত্ত্ব নিয়ে হাজির হবেন নাকি সমাজকাঠামোর ভেতর থেকে সেই বোধ ক্রমশ দানা বাঁধবে, নানা আর্থ-সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে ? এই সীমাবদ্ধতা যুগের সীমাবব্ধতা, এটা আলোচ্য দুজন ব্যক্তি বোঝেন না তা নয় । কিন্তু তাদের অভিরুচি ভিন্ন, লক্ষ্য অভিন্ন ; উদ্দেশ্য কুৎসিত। তাদের মধ্যে অন্তঃত একজন, ওরস্যালাইন প্রস্তুতপ্রণালীর মত করে ( কমিউনিজমের লবণ, পুজিবাদের গুড় আর ইসলামী-মৌলবাদের পানি পরিমাণ মত মিশিয়ে দেখুন কি হয় !) প্রগতিশীলতা-প্রতিক্রীয়াশিলতা ও আধুনিকতার মদ তৈরী করেছেন যা অনেকের কাছে মদির সন্ধ্যার হাতছানি। বাহ্যিক অবয়ব অর্থাৎ প্যাকেটটি কিন্তু দেশি রুচিকে প্রভাবিত করার জন্য তৈরী। সেটাকে আধুনিকতার আলো মনে করে অনেকেই ঝাঁপ দিচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীলতার আগুনে।
.................................................................................................................
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
মাহবুবুল আলম
লিংক দিতে পারলে আমিও খুব মানসিক তৃপ্তি পেতাম কিন্তু সে রাস্তা বন্ধ ব্রাত্য রাইসু তাঁর সামু ব্লগের সমস্ত লিখা মুছে দিয়েছেন। আমার কাছে প্রিন্টেড কপি আছে, আপনি যদি আগ্রহ বোধ করে থাকেন ই-মেলে স্কেন করে পাঠিয়ে দিতে পারি।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
ফ্লিকারে আপলোড করে লেখায়/কমেন্টে লিঙ্ক দিয়ে দিন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আরেকজনের লেখা স্ক্যান করে সচলে ব্যবহার করা যাবে কি? শাইসুকবির অনুমতিজনিত জটিলতা আছে না? কপিরাইট লঙ্ঘিত হতে পারে বোধহয়। এরচেয়ে ভালো রিভিউয়ের সময় আলোচ্য অংশটুকু উদ্ধৃত করা যেতে পারে।
আমার ও তাই ধারনা ।
আগামী পর্বে চেষ্ঠা করব কিছু উদ্ধৃতি ব্যবহারের। আরও যদি বিরক্ত হতে চান ই-মেলে পাঠাতে পারি ।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
আমাকেও ইমেইলে কপি করবেন দয়া করে। rz_uddin at yahoo dot com
--এই কথাটি আমিও বলেছিলাম অনেক আগে কিন্তু পাত্তা পাইনি ...
মাহবুব সাহেব আপনার পরিচ্ছন্ন চিন্তা ভাবনা আমার খুব ভালো লাগে।
সচলে স্বাগত গৌরিশ।
আশা করছি বিদ্যাসাগরের উপর একটা ভালো আলোচনা পড়তে পারব।
আমি আপ্লুত
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
সচলে স্বাগতম । সিরিজ চলুক ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আপনাকে ধন্যবাদ ।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
ভালো লেখা গৌরীশ। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল ।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
মূল সাক্ষাৎকারের লিঙ্কটির অপেক্ষায় থাকলাম।
লিংক তো ভাই দিতে পারব না । আলোচনার পরিধির ভেতর কিছু চুম্বক অংশ উঠিয়ে দেব। খুব যদি পুরোটা পড়তে ইচ্ছে করে মেল করে দিয়েন
আপনাকে ধন্যবাদ।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
বাকিটুকু পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম
ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
বহুবছর আগে 'সহবাস' এ প্রমথ চৌধুরীকে নিয়ে লেখা তোর প্রবন্ধ-মনে আছে।
বিশ্লেষনটা চলুক, শেষ হোক। পড়ছি, পুরোটাই পরবো।
ফরহাদ মজহার, সাজ্জাদ শরীফের বিদ্যাসাগর আলোচনা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়, এইসব আলোচনার পেছনে রাজনীতি আছে , থাকে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটা ৩৮ বছরের বাস্তবতা হলে ও পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা নিয়ে এখনো বিস্তর আলোচনা- সে ও রাজনীতি। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা কপচানো গেলে ফাঁকতালে রবীন্দ্রনাথ, বংকিম, বিদ্যাসাগরের ধুতি ধরে টানাটানি করা যায়- শেষ পর্যন্ত মোক্ষ অর্জন হয়- হিন্দু আর মুসলমান আলাদা করনে।
রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধীতা করেছিলেন- এটা ছিলো নিম্ন মানের আঞ্চলিক রাজনীতি এর মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষের কিছু ছিলোনা ( ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলায় হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাত দেখা যেতে পারে, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় না হলে কি কেবল মুসলমানদের ক্ষতি হতো, এই অঞ্চলের হিন্দুদের হতোনা?) তবু এটা হিন্দু বিদ্বেষ প্রচারনার একটা অস্ত্র।
ঘুরে ফিরে তো সেই একই- দ্বিজাতি তত্বের পুনঃপ্রচার, মুসলিম জাতীয়তাবাদের কংকালচর্চা।
এই দলবাজীতে সুব্রত গোমেজ, মানস চৌধুরীদের ভূমিকা বেশ মজার। আমাদের ছোটবেলা একটা শ্লোগান শুনেছিলাম- 'কে বলে শিবিরে নেই হিন্দু, পূর্নেন্দু, পূর্নেন্দু!'- ইসলামী ছাত্র শিবির যে সাম্প্রদায়িক সংগঠন নয় সেটা প্রমানের জন্য কোথাও মনে হয় পূর্নেন্দ নামে কোন হিন্দু বালককে নিয়োগ করা হয়েছিলো।
মানস চৌধুরী অনুবাদ করেছিলেন - বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংসের তালেবানী সাফাই এবং তার বন্ধুরা এটা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছিলেন।
বিদ্যাসাগরকে খাটো করার এই আলোচনা ও নিশ্চয়ই প্রচারসফল।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মোরশেদ ভাই
টপিক টা আলোচনার বাইরে রেখেছিলাম । তুমি যখন নিয়েই আসলে আমি খানিকটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি । আনন্দ না পেলেও মজা পাবে নিশ্চিত ।
বুঝ ঠেলা !!
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
@ হাসান মোরশেদ
আমাদের কাছে শ্লোগানটা ছিলো- কোন্ হিন্দু হিন্দু না, পূর্ণেন্দু পূর্ণেন্দু।
পূর্ণেন্দু ঘটনার লেজটা আমরা পেয়েছিলাম ছাত্র জীবনেই। উনি পাশ করে বেরিয়ে যাবার পর তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে আসল বিষয়টা কী ? যদি তিনি সত্যি বলে থাকেন তাহলে এটা স্রেফ একটা কৌশলগত স্বার্থ ছিলো তাঁর।
গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন জামায়াতী শিক্ষক। সেকালে নাকি ফার্স্টক্লাস পেতো না কেউ, দেয়া হতো। তো সেই জামাতী প্রভাবকে কব্জা করতে গিয়ে মানুষের যে একটা নিজস্ব আদর্শ বা মতাদর্শ থাকে তা জলাঞ্জলি দিয়ে দিলেন স্বার্থ হাসিলের কাছে। শিবিরে পক্ষে চাকসুতে নির্বাচিতও হয়েছিলেন নাকি। তিনি তো ঠিকই স্বার্থ হাসিল করে চলে এসে ফের ভোল পাল্টে ফেললেন পরে। অথচ তার জের আমাদেরকে টানতে হয়েছিলো ছিয়াশির শিবির বিপ্লবের ভিকটিম হয়ে।
পূর্ণেন্দু দা শুনলে হয়তো কষ্ট পাবেন, কিন্তু আমি এই পূর্ণেন্দু দাদাদের সাথে ফরহাদ মজহার গংদের আদর্শবাদের কিংবা দুর্গন্ধবাদের কোন তফাৎ দেখি না। জ্ঞানপাপী এরা যাহা বলেন তাহা নিজেরা বিশ্বাস করেন কিনা তাতে ঘোরতর সন্দেহ আমার। এদেরকেই সম্ভবত নষ্ট মানুষ বলে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ গৌরীশ। যারা বিদ্যসাগর সম্পর্কে কোনোদিন একটা অক্ষরও পড়ে নি, সেই সাধারণ মানুষরাও বিদ্যাসাগরের তেজ, মাতৃভক্তি, বিধবাবিবাহ প্রচলন বা দেশের হিতে আরো কাজের কথা জানে। এই হচ্ছে বিদ্যাসাগর। বই পড়ে জানার আগেই পরিবারের অনেকের মুখে তার গল্প জেনে গেছে শিশুরা।
ফরহাদ মজহার গোষ্ঠীর নানাবিধ তত্ত্ব আছে। সেইসব তত্ত্বের গল্প শুনলে আমার সবচে প্রথমে একটা কথাই মনে হয়, এদের কি খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই?
অবশ্য সত্যি কথা যেটা, এটাই তাদের কাজ। ঠাকুর্দার বাবা কেন কনডম ব্যবহার করতেন না... এই জাতীয় সুদূর অতীতের বিষয়ে সূক্ষ্ন তদন্তের মাধ্যমেই নিশ্চয় তাদের খাওয়া-পরার সংস্থান হয়...
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
দুঃখী মানুয়টাকে নিয়ে টানা হেঁচড়া একদমই অসহ্য লাগে । শুধু কী এনারা আমাদের বিশিষঠ বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর আবিঃষ্কার করেছেন বিদ্যাসাগরের স্ববিরোধীতা আরও কত কী যে শুনতে হবে।
তবে এটুকু সত্য আপনি আপনারা আছেন বলেই বিদ্যাসাগর সবসময়ই স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত থাকবেন ।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
বদরুদ্দীন উমরের বিদ্যাসাগর কে নিয়ে রচিত গ্রন্থের সমালোচনা আশা করছি আপনার কাছ থেকে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
হা হা হা (হাসতে হাসতে গড়াগড়ির ইমোটিকলনটা কেইম্নে যানি দেয়!)
মন্তব্যে উত্তম ঝাজা।
পড়ছি, আলোচনাটা চলুক।
জটিল
চলুক
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
লেখা ভাল লেগেছে। লিঙ্কটা পেলে ভাল হত, অগত্যা।
গৌরীশ
পরবর্তী লেখা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম ।
শুভেচ্ছা স্বাগতম
গৌরীশঙকরের আগমন।
প্রথমেই ছক্কা মারলি দেখিরে বেটা। ক্যারিঅন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দেরিতে ঢুকলাম এবং চমৎকৃত হচ্ছি লেখার সমৃদ্ধ গতিময়তায় !
অভিনন্দন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন