ছন্দ নাটক:
টাকার আপদ
-শেখ ফেরদৌস শামস (ভাস্কর)
(আগষ্ট, ২০০৬)
(সুকুমার রায়ের ছোট গল্প অবলম্বনে রচিত)
নাটকের চরিত্রঃ জমিদার, মুচি এবং ঘোষক
(ঘোষকঃ)
আজকে আমি তোমাদের
বলব একটা গল্প
শুনে কিন্তু তোমরা
চিন্তা করবে অল্প।
অনেক দিন আগের কথা
বলছি আমি শোন,
এই যে তুমি, আমার কথায়
হাসছ বলো কেন?
ঐ যে দেখ, আসছে কে?
পরিচয় দেই তার
বিশাল বড় ধনী সে
বিরাট জমিদার।
এত টাকার মালিক তিনি
রাখার নেই যে স্থান,
টাকা আছে সুখ নেই
এই হলো তার গান।
এই গল্পের আরেকজন
দরিদ্র এক মুচি,
জুতা সেলাই করে তার
চলে রুটি রুজি।
গরীব! তাতে হয়েছে কি?
সুখী মুচি ভাই,
মুখে শুধু গান তার
অভিযোগ যে নাই।
(জমিদারঃ)
রোজ আমি এই পথে
যে সময়ই যাই
মুচিটার মুখে শুধু
গানই শুনতে পাই।
তোমরাই বল তো
সুখী কেন এতো সে?
(জমিদারঃ মুচির উদ্দেশ্যে)
এই মুচি, দেখোতো
জুতা বোধ হয় ছিঁড়েছে।
(মুচিঃ)
হুজুর এটা বলেন কি?
এটা তো নতুন জুতো,
এক্ষুনি ঠিক করে দি
এমন সারিয়েছি কতো।
(জমিদারঃ)
আচ্ছা মুচি বলতো তোমার
রোজগার কত দিনে?
(মুচিঃ)
কত আর হবি হুজুর
পঞ্চাশ একশ হবিনে।
(জমিদারঃ)
তাই নাকি? এতো কম?
সংসারটা চলে তো?
(মুচিঃ)
তা চলে যায় এক রকম
কষ্টে শিষ্টে যতো।
(জমিদারঃ)
তা তো বুঝি বেশ
সংসারে আর আছে কে?
(মুচিঃ)
সংসারটা বড়ই বেশ
আমি, বৌ আর তিন মেয়ে।
এই যে হুজুর হয়ে গেছে
এই যে জুতার পাটি,
সেলাই মজবুত হয়েছে
ছিড়বে না আর, গ্যারান্টি।
(জমিদারঃ)
বাহ হাতের কাজ তো বেশ
চমৎকার তোমার,
আর মুখের গানও খুব
পছন্দ হয় আমার।
এই নাও তোমায় দিলাম
টাকা এক হাজার,
কাজে দেবে, তোমারতো শুনি
টানাটানির সংসার।
(মুচিঃ)
সত্যি হুজুর, দিলেন তো?
কেমন সন্দেহ জাগে,
এতো টাকা একসাথে তো
দেখিনি আর আগে।
(ঘোষকঃ)
টাকা দিয়ে জমিদার
চলে যায় বাড়ী,
মুচির তো এদিকে
খুশীতে গড়াগড়ি।
কি করবে টাকা দিয়ে
পায় না ভেবে কূল,
পথে যদি যায় হারিয়ে
চিন্তায় ব্যাকুল।
রাত্রিতে ঘুম নাই
এই বুঝি চোর এলো,
মুচির ঘর থেকে
টাকা নিয়ে গেলো।
কাজে তার মন নেই
মুখে নেই গান,
টাকাটার উপরেই
যত্তো অভিমান।
ঠিক করে টাকাটা
ফেরত সে দেবে,
এক্ষুনি জমিদার
বাড়ী সে যাবে।
(মুচিঃ)
এই যে হুজুর এই নিন
আপনার টাকা,
গরীবের বাড়ীতে
যায় না তো রাখা।
(জমিদারঃ)
টাকা তুমি চাও না?
বলছ কি এটা?
তুমি একটা পাগল নাকি
ঠিক আছে তো মাথা?
(মুচিঃ)
মাথা হুজুর ঠিকই আছে
সুখ গেছে চলে,
টাকার আপদে আমি
গান গেছি ভুলে।
(ঘোষকঃ)
হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচল মুচি
টাকা ফেরত দিয়ে,
বাড়ীর পথে পা বাড়াল
গান গুনগুনিয়ে।
এতো দিনে বুঝল এবার
ধনী জমিদার,
টাকা আছে কড়ি আছে
সুখ কেন নেই তার।
(জমিদার টাকাটা ছুড়ে ফেলে দেবে)
টাকাই হলো যত
সব নষ্টের গোড়া,
সুখ কেড়ে কত
সময় থাকতে তাড়া।
টাকাই সর্বনাশের মূল
ডেকে আনে বিপদ
কি? বুঝলেনতো এবার
টাকাই যে আপদ।
(টাকার আপদ নাটকটি অ্যারিজোনার শিকড় বাংলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সেপ্টেম্বর ১৬, ২০০৬ তারিখে তাদের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে। এবং একইদিনে অ্যারিজোনা থেকে প্রকাশিত বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকা "সিঁড়ি" তে প্রকাশিত হয়।)
মন্তব্য
ভালো লাগলো।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ভালৈছে
বেশ মজার ।
ভালো লাগলো ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভাল লেগেছে। গানের ছন্দে ছন্দে শুনতে নিশ্চয় আরো ভালো লাগবে।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
আপনাদের ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগছে। আসলে আমরা যারা প্রবাসে থাকি, যারা আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মকে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি শেখাতে চাই,তাদেরকে নিয়ে বাংলা নাটক মঞ্চস্থ করতে চাই - সব সময়ই দেখা যায় যে তাদের উপযোগী বাংলা নাটকের স্ক্রিপ্ট খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রবাসে ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম, যারা কেবলই বাংলা বলা, পড়া বা লেখা শিখছে - তাদেরকে দিয়ে সহজ ভাষায় লেখা নাটক করাতে পারলে তাদের জন্য ব্যাপারটা খুব সহজ এবং উপভোগ্য হয়। সংলাপগুলো ছোট এবং ছন্দময় হলে তা বলতে তাদের বেশ সুবিধা হয়। এজন্যই অ্যারিজোনাতে শিকড় বাংলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা যখনই নাটক করেছে - তাদের জন্য সবসময়ই আমরা সহজ ভাষায় লেখা নাটকের স্ক্রিপ্ট খোঁজার চেষ্টা করেছি, অথবা নিজেরাই তাদের জন্য এরকম ছন্দ-নাটক লিখেছি। সুকুমার রায়ের খুবই পরিচিত ছোটগল্প "টাকার আপদ" নিয়ে ছন্দ-নাটক লেখার অনুপ্রেরণা সেখান থেকেই পাওয়া। আশাকরি যারা প্রবাসে ছোটদের বাংলা অনুষ্ঠান নিয়ে কাজ করেন - তাদের এই ছন্দ-নাটকটি সাহায্য করবে।
____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"
এইটা যখন কতিপয় ABCD (আমেরিকান বর্ণ কনফিউজড দেশী) পুলাপাইন দিয়া অভিনীত হইল তখন মজা পাইছিলাম। মুখ বাকা কইরা ছন্দবদ্ধ সংলাপ কইতে গিয়া অবস্থা খারাপ হইতেছিল তাগো।
আপনাদের প্রচেষ্টা দেইখা খুব ভালো লাগে। আবার খারাপ লাগে কতিপয় বাঙ্গালীর সন্তানগো "মেরিক্যান" বানানোর প্রচেষ্টা দেখলে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নাটকের ভিডিওটা থাকলে দিতে পারেন।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নতুন মন্তব্য করুন