অনুবাদ-৫: বহতা নদীর মতো (মুখবন্ধ)

জি.এম.তানিম এর ছবি
লিখেছেন জি.এম.তানিম (তারিখ: রবি, ১৬/০৮/২০০৯ - ৩:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(পাউলো কুয়েলো-র লাইক দ্য ফ্লোয়িং রিভার বইটির মুখবন্ধ এটি। লেখালেখি করছি না অনেক দিন। অতন্দ্র প্রহরী সকাল থেকে ধাক্কাধাক্কি দিয়ে এটি লেখালেন। অখাদ্য হওয়ার পুরো দোষটা তাই তার চোখ টিপি )

আমার বয়স যখন পনের, একদিন মাকে বললাম, 'আমি আমার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছি, আমি একজন লেখক হব।'

মা নরমভাবে বললেন, 'খোকা, তোমার বাবা একজন প্রকৌশলী। তিনি একজন যুক্তিবাদী মানুষ। জীবন সম্পর্কে তার ধারণা অনেক স্বচ্ছ। তুমি তো তার মত হতে পারো। তুমি লেখক হতে চাও কেন? তুমি কি আসলেই জানো লেখক মানে কী?'

'লেখক হলো এমন একজন, যে বই লিখে।'

'তোমার চাচা হারল্ডো একদিকে যেমন ডাক্তার, তেমনি ওনার লেখা কিছু বইও ছাপা হয়েছে। তুমি যদি তোমার বাবার মতো প্রকৌশলী হও তাহলেও লেখালেখির জন্যে সময় পাবে।'

'না, মা। আমি লেখক হতে চাই। বই লিখিয়ে প্রকৌশলী হতে চাইনা।'

'কিন্তু তুমি কখনও কোন লেখককে দেখেছ?'

'উহু! তবে ছবিতে দেখেছি।'

'তাহলে কীভাবে তুমি একজন লেখক হতে চাও? তুমি তো জানই না লেখক হওয়া মানে কি।'

মায়ের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্যে আমি গবেষণা শুরু করলাম। ষাটের শুরুর সেই সময়ে আমি লেখক হওয়ার যে গুণাবলি জানতে পারলাম, তা নিম্নরূপ:

ক) একজন লেখক সবসময় চশমা পরে থাকেন। তার চুলগুলো থাকে অগোছালো। দিনের অর্ধেক সময় তিনি সব কিছুর উপরে রেগে থাকেন, আর বাকি অর্ধেক সময় থাকেন বিষণ্ন। জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি কাটান পানশালায়, তারই মতো অগোছালো চশমাপরা লেখকদের সাথে ঝগড়া করে। তিনি অনেক গভীর গভীর কথা বলেন। নিজের পরবর্তী লেখার ব্যাপারে তার থাকে চমৎকার সব আইডিয়া। যদিও তার শেষ প্রকাশিত লেখাটি তিনি সহ্যই করতে পারেন না।

খ) একজন লেখকের কিছু দায় ও দায়িত্ব থাকে। যেমন নিজের প্রজন্মের কেউ তাকে বুঝতে পারবে না। তার ধারণা তিনি চিন্তার বিবর্তনের এক মাঝারি সময়ে জন্ম নিয়েছেন। তার লেখা যদি লোকেরা বুঝে ফেলে তার মানে তার প্রতিভাবান হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য। একজন লেখক একটি বাক্য বারবার পড়ে দেখেন এবং পরিবর্তন করেন। সাধারণ মানুষ বড়জোড় ৩,০০০ টি শব্দ ব্যবহার করলেও একজন লেখক ব্যবহার করেন অভিধানে থাকা অন্য ১৮৯,০০০ টি শব্দ। তিনি তো আর কোন সাধারণ মানুষ নন।

গ) কেবল অন্য লেখকরাই একজন লেখক কী বলতে চাচ্ছেন, সেটা বুঝতে পারেন। যদিও একজন লেখক অন্য সব লেখককে মনে মনে ঘৃণা করেন, কারণ তারা শত বছরের সাহিত্যের ইতিহাসের শূন্যতা পূরণের জন্যে একে অপরের সাথে অসাধু প্রতিযোগিতায় মগ্ন। একারণেই একেকজন লেখক ও তার সাথের লোকজন 'সবচেয়ে জটিল বই' পুরষ্কারটির জন্যে প্রতিযোগিতায় নামে। তিনিই জয়ী হন যার লেখা সবচেয়ে দুর্বোধ্য।

ঘ) একজন লেখক ঐসব খটমটে কথা যেমন, চিহ্নতত্ত্ব, বোধের সীমাবদ্ধতা, অধূনাবিমূর্তমূর্তিকরণ ইত্যাদির অর্থ বুঝতে পারেন। যখন কাউকে তাক লাগিয়ে দিতে চান তিনি বলেন 'আইনস্টাইন একটা বেকুব' অথবা 'তলস্তয় ছিল বুর্জোয়াদের ভাঁড়'। গুজব সবার ব্যাপারেই খুঁজে পাওয়া যায়। তারপরও তারা বলে যায় যে আপেক্ষিক তত্ত্ব কতটা ভুল অথবা কীভাবে তলস্তয় রাশান অভিজাততন্ত্রের পক্ষে ছিলেন।

ঙ) যখন কোন মহিলাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করতে চান, একজন লেখক সবসময়ই বলেন, 'আমি একজন লেখক।' এটা বলে তিনি একটা রুমালে কিছু কবিতার পংক্তি লিখে মহিলাকে দেন। মজার ব্যাপার হলো এটা সবসময়ই কাজে দেয়।

চ) একজন সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে একজন লেখক সবসময়ই একজন সমালোচক হিসেবে কাজ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি তার বন্ধুদের লেখার ব্যাপারে মন্তব্য করে তার মহানুভবতা প্রদর্শন করেন। এসব সমালোচনার অর্ধেক জুড়ে থাকে বিদেশি লেখকদের উক্তি আর বাকিটাতে থাকে বাক্যবিন্যাসের আলোচনা। 'উপলব্ধির বিচ্যুতি' অথবা 'জীবনের দ্বিমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সামষ্টিক রূপ' এর মত শব্দভাণ্ডার ব্যবহার করে লেখা এসব সমালোচনা পড়ে পাঠক বুঝতে পারেন লেখক একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। যদিও এই বইটি পাঠক কিনবে না, কারণ পড়তে পড়তে উপলব্ধির বিচ্যুতি এলে কী করতে হয় এটা তার অজানা।

ছ) যখন একজন লেখককে জিজ্ঞাসা করা হয় এখন কী বই পড়ছেন, তিনি জবাবে এমন একটি বইয়ের কথা বলেন যেটির নাম কেউ শোনেনি।

জ) কেবল একটা বই আছে যেটা লেখক ও তার সহচরদের মনে শ্রদ্ধা জাগায়; জেমস জয়েস-এর ইউলিসিস। কোন লেখককে এই বইটির ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করতে শোনা যায়নি । কিন্তু যখন কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় বইটি কী নিয়ে, তিনি তা ব্যাখ্যা করতে পারেন না। এতে অবশ্য অনেকের মনে সন্দেহ হতে পারে তিনি আদৌ বইটি পড়েছেন কি না।

এসব তথ্য একত্রিত করে আমি আমার মায়ের কাছে গেলাম এবং তাকে বুঝিয়ে বললাম একজন লেখক মানে আসলে কি। তিনি বেশ আশ্চর্য হলেন।

'এর থেকে তো প্রকৌশলী হওয়া সহজ। আর তুমি তো চশমা পরো না।'

যাই হোক। ততদিনে আমার চুল যথেষ্ট অগোছালো, আমার পকেটে গলৈসিস সিগারেট এর একটা প্যাকেট, বগলে একটা নাটকের পান্ডুলিপি (দ্য লিমিটস অব রেজিস্টেন্স, যেটাকে একজন সমালোচক 'আমার দেখা মঞ্চে সবচেয়ে পাগলাটে জিনিস' বলে অভিহিত করেছেন); আমি হেগেল পড়ছি এবং ঠিক করেছি কোন না কোন ভাবে আমি ইউলিসিস পড়ব। এমন সময় একজন রক গায়কের সাথে আমার পরিচয় হলো যে আমাকে কিছু গান লিখে দিতে বলল। আমি তখন অমরত্বের প্রত্যাশা ত্যাগ করে আবারও ফিরে গেলাম সাধারণ মানুষের পথে।

এই পথ আমাকে অনেক জায়গাতে নিয়েছে। বারটল্ট ব্রেখটের ভাষায় বলতে গেলে আমি জুতা পরিবর্তনের চেয়েও দ্রুত দেশ পরিবর্তন করেছি। সামনের পাতাগুলোতে তাই পাঠক যা পড়বে তার কিছু আমার নিজের অভিজ্ঞতা, কিছু অন্যের মুখে শোনা গল্প আর কিছু এই জীবননদীতে নাও ভাসিয়ে চলার পথে আমার কিছু চিন্তাভাবনা।

এই গল্প ও কলামগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠকদের অনুরোধে সেগুলো একত্র করে প্রকাশ করা হলো।

(স্বাক্ষর)
পাউলো কুয়েলো


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

জোস অনুবাদ হইসে হাসি

বুঝতে পারলাম, আমি 'লেখক' না, হইতেও পারব না কোনদিন দেঁতো হাসি

জি.এম.তানিম এর ছবি

আমি প্রায় হয়ে গেসিলাম। সচল স্পর্শের কাছে ইউলিসিস পাইসিলাম, ব্যাটা পড়তে দিল না। মন খারাপ
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

স্পর্শ তাইলে একমাত্র সচল 'লেখক'? চোখ টিপি

জি.এম.তানিম এর ছবি

লেখকত্ব পাইতে গিয়ে সচলত্ব বিকায় দিসে... সচলে তার লেখা কবে শেষ দেখসেন মনে আছে?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

অতন্দ্র প্রহরী, আপনে একটা কাজের কাজ করেছেন। জিএমটি'রে এমন করে নিত্য গুঁতাতে থাকেন, মায় গার্লফ্রেন্ডের সাথে সঙ্গ উপভোগের সময়ও। তাহলে আমরা এমন ঝরঝরে অনুবাদ আরো পাবো। চলুক
..................................................................

ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল

জি.এম.তানিম এর ছবি

প্রহরী না গুঁতিয়ে প্রহরীর গার্লফ্রেন্ড গুঁতালে মনে হয় লেখার পরিমাণ বাড়তো চোখ টিপি
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ধন্য আশা কুহকিনী দেঁতো হাসি

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

আহেম আহেম! এই দিকে দৃষ্টি আকর্ষিত হল!

ঙ) যখন কোন মহিলাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করতে চান, একজন লেখক সবসময়ই বলেন, 'আমি একজন লেখক।' এটা বলে তিনি একটা রুমালে কিছু কবিতার পংক্তি লিখে মহিলাকে দেন। মজার ব্যাপার হল এটা সবসময়ই কাজে দেয়।

কোন জায়গায় কাজে দিল নাকি?...চোখ টিপি চিন্তিত

---------------------
নামে কি'বা আসে যায়...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

জি.এম.তানিম এর ছবি

কাজে এখনও লাগেনি। আমি তো আর লেখক না!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

হুমমম... চেষ্টা এখনও চলছে দেখি... খাইছে [লেখক হবার...]

---------------------
নামে কি'বা আসে যায়...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

পুতুল এর ছবি

অনুবাদ খুব ভাল হয়েছে।
শুধু শীরোনামের অনুবাদটার জায়গায় অন্য একটা বাংলা প্রতি শব্দ হলে আরো ভাল লাগতো।
পুরো বইটার অনুবাদ করুন।
একটা অনুবাদ ভাল হয় যদি মূল লেখাটা অনুবাদক অন্তরে ধারণ করেন। আপনার অনুবাদে আমি সেই আন্তরিক মুগ্ধতাটা বেশ উপভোগ করি। আর সে জন্যই আপনার অনুবাদ এত ভাল লাগে।

**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জি.এম.তানিম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। পাঠকের ভালোলাগাটা একটা বড় পাওয়া। যেসব অংশ পড়ে ভালো লাগে সেটাই অনুবাদের সময় আগে করার চেষ্টা থাকে। পুরো বইটা অনুবাদ করার ইচ্ছা রয়েছে। আলসেমির কারণে আগায় না কাজ। নিজেকে লাইনে আনতে হবে খুব তাড়াতাড়ি।

শিরোনামটা মূলত লেখাগুলো ট্র্যাক রাখার জন্যে। অনুবাদের প্রতিশব্দ মনে করতে পারছি না...প্রস্তাব করতে পারেন।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

কাজী আফসিন শিরাজী [অতিথি] এর ছবি

তানিম ভাই, দূর্দান্ত অনুবাদ হয়েছে। আর অনুবাদের জন্য চমৎকার একটা লেখা বেছে নিয়েছেন তাই অনেক সাধুবাদ জানাই। লেখকের জীবন হল "ওর্থ লিভিং"(এর বাংলা কী ঠিক মাথায় আসলো না, মাথা ইদানিং কাজ করে না ভালো)। পাউলো আমারও খুব প্রিয় একজন লেখক ও কবি। লেখকদের আমি দুই ভাগে ভাগ করি, গভীর লেখক আর অগভীর লেখক। তবে আমার এই শ্রেণীবিন্যাসে কোন ভালো লেখক বা খারাপ লেখকের শাখা নাই। লেখক কখনো খারাপ হতে পারে না। লেখা লিখি হল পৃথিবীর অন্যতম একটা শিল্প, লেখক মাত্রই একজন জন্মদাতা শিল্পী। পাউলো একজন গভীর লেখক।

আপনি তো দারুণ অনুবাদ করেন, আরো কিছু ভালো লেখা অনুবাদ করে দিন, প্রতিদিন ডিকশনারী নিয়ে বই পড়তে বসি, পড়ার ফ্লো নষ্ট হয়ে যায়, অনুবাদ করা লেখা পেলে খুব ভালো লাগে। এই অধম বান্দার শুভেচ্ছে গ্রহন করুন। ধন্যবাদ।

জি.এম.তানিম এর ছবি

প্রথমেই অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসার জন্যে। আমার কাছে পাউলোকে মনে হয়েছে একজন দার্শনিক। ভারি ভারি কথাগুলো সহজ গল্পের মোড়কে বলার এই ধাঁচটির জন্যে তিনি আমার প্রিয় লেখক।
অনুবাদের মান নিয়ে আমি এখনো অনেক চিন্তায় আছি। তাই এই ব্যাপারে যেকোন সমালোচনা খুবই কামনা করছি। মানে উন্নতির দিকগুলো ধরিয়ে দিতে পারলে উপকৃত হতাম। আরো অনুবাদ করার ইচ্ছা আছে। আমার বিদেশি ভাষার লেখার সংগ্রহ কম। কিছু উপাদান পেলে আরো চেষ্টা করা যেতে পারে।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

আপনার অনুবাদের মান দিন যত যাচ্ছে ততই ভালো হচ্ছে... যে কাজ মানুষ মনের আনন্দে করে তার সেই কাজে ঐ যত্নটুকু ধরা যায় একটা উপরি পাওয়া হিসেবে... দেঁতো হাসি দার্শনিকতা আপনার পছন্দ, জানি... তবে শুষ্ক রসিকতা বা নাটকীয় মোচর সমৃদ্ধ বেশ কিছু ছোটগল্পের বই সংগ্রহে আছে আমার... তবে অন্তর্জাল আমাকে আপনাকে বই দিয়ে প্রতি মাসে ফেরত দেবার তাগাদা দেবার ঝামেলা থেকে মুক্ত করেছে... এখন শুধু প্রয়োজন কিছু নামের... একটু দৌড়ের উপর আছি... ব্যস্ততা কমলে বেশ কিছু নাম ঢেলে দিব আপনার ঝোলায়, গুতাগুতির শীর্ষে আপনাকে রাখার জন্য প্রহরী ভাই তো আছেনই... দেঁতো হাসি

মান উন্নয়নের কথা বললে একটা উপায় আমাকে হিমু ভাই দেখিয়ে দিয়েছিলেন আমার কোনও এক আবজাব পোস্টে... ইংরেজীর মতো বাংলাতেও শ্রুতিমধুরতা বলে একটা ব্যাপার মাথায় রাখা প্রয়োজন... লেখা শেষ হলে একবার জোরে শব্দ কর পড়ে দেখুন বা ছোট ভাইকে দিয়ে পড়িয়ে নিতে পারেন, খটকা লাগলে বুঝবেন ভুল আছে... আরেকটা কাজ করা যায়, লেখাটা টাটকা পোস্ট না করে একরাত না হয় ফেলেই রাখলেন। সকালে তাজা মন নিয়ে আবার পড়ে দেখুন, দেখবেন বেশ কিছু ভুল- তা অনুবাদেই হোক বা বানানে চোখে পড়বে... দেঁতো হাসি

যাইহোক কথা বেশি বলি সেটা সবাই জানে... তা'বলে এভাবে প্রমান দেওয়াটা উচিত নয় জানি... সব জানা কাজ আজও করা হয়ে উঠেনা বলেই দুঃখ...

ভাল থাকুন, ভাল লিখুন... দেঁতো হাসি

---------------------------------------
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে
নইলে মোদের রাজার সনে মিলবো কি শর্তে ।

আমরা যা খুশী তাই করি তবু তার খুশীতেই চরি
আমরা নই বাধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে।

রাজা সবারে দেন মান সে মান আপনি ফিরে পান
মোদের খাটো করে রাখেনি কেউ কোনো অসত্যে।

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অনুবাদের বিষয়বস্তু, বাক্যচয়ন, বিন্যাস ইত্যাদি সবই তুখোড় হয়েছে। আপনার 'উপলব্ধির বিচ্যুতি' ঘটেনি এবং 'জীবনের দ্বিমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সামষ্টিক রূপ'টা চমৎকার দৃশ্যমান হয়েছে। চোখ টিপি

জি.এম.তানিম এর ছবি

গুরু গুরু
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

রুশাফি [অতিথি] এর ছবি

অনুবাদ চরম পছন্দ হইছে, মূল লেখাটাও ভাল ছিল বলাই বাহূল্য। এখন ধন্যবাদটা কি আপনারে দিব নাকি অতন্দ্র প্রহরীকে?

জি.এম.তানিম এর ছবি

প্রহরীর সাথে চুক্তি হইসে... লেখা ভালো হইলে আমার কৃতিত্ব আর খারাপ হইলে ওনার দোষ চোখ টিপি

এই লেখাটা অনেক আগে ঠিক করে রাখসিলাম লিখব। আজকে সকালে মেসেঞ্জারে উনি না গুঁতা দিলে আরো কতদিন ফেলে রাখতাম কে জানে? এই ফাঁকে অতন্দ্র প্রহরীকে আবারও ধন্যবাদ জানাই। উনি না বললে ফাঁকিই মারতাম... খাইছে
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

যান যান মিয়া, কতো বড়ো ভুল যে করসিলাম, এখন বুঝতেসি। হিংসার চোটে আমার তো দম বন্ধ হয়া আসতেছে মন খারাপ

হিমু এর ছবি

দারুণ!

ভাবতেসি, "আমি একজন ব্লগার" বলে রুমালে কিছু আবজাব লিখে দিলে কী প্রতিক্রিয়া হবে। শেষ যেই মেয়েকে বলসি আমি একজন ব্লগার, সে সাথে সাথে বলসিলো, খবরদার আমাকে নিয়া কিছু লিখবানা!



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

একশবার এক কমেন্ট আসে ক্যা? খেলতাম্না!

---------------------
নামে কি'বা আসে যায়...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

জি.এম.তানিম এর ছবি

ঠিক কইরা দিলাম।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

কাজী আফসিন শিরাজী এর ছবি

আমি কিছু কবিতা অনুবাদে হাত দিয়েছিলাম, কিন্তু সচলে পোস্ট করতে সাহস পাইনি। লাইব্রেরীতে একগাদি বই আনিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, তারা হন্য হয়ে খুঁজে সব বই এনে দিয়েছে, বিনামূল্যে ভারা এনে পড়ছি, এর মধ্যে রবার্ট ফ্রোস্টের বইটা ১৯৪০ সালে প্রকাশিত আর বাকিগুলো ১৯৬০-১৯৮৫ তে প্রকাশিত। বেশ পুরানো বাধাই আর ফন্ট; দারুণ অনুভূতি। আর যেহেতু বিভিন্ন লাইব্রেরীর বই তাতে পাঠকরা অনেকে পেন্সিল দিয়ে চমৎকার লাইনগুলোর পাশে স্টার দিয়ে রেখেছেন। আর সিলভিয়া প্ল্যাথের বইতে কোন এক পাঠক পেন্সিল দিয়ে লিখেছেন কবিতার পেছনের কাহিনী ইত্যাদি। বইতে লেখা আমার একদম অপছন্দ, এই প্রথম বইয়ে লেখা দেখে ভালো লাগল।

এছাড়াও ১৬শ সতাব্দির ইউরোপীয়ান কবিদের কবিতার একটা বই এনেছি। বেশ দারুণ কিছু কবিতা আছে। ভেবেছিলাম অনুবাদ করে সচলে দিবো কিন্তু সচল'রা ঠিক কবিতাকে এখনো ওভাবে গ্রহন করেনি। (সকল পাঠক ও সচলকে শ্রদ্ধা করেই বলছি, এটা ব্যাক্তিগত মতামত, পরম কোন মন্তব্য নয়)

জি.এম.তানিম এর ছবি

কবিতার অনুবাদ পোস্টের আবেদন জানালাম। আমি নিজেও অপরিণত কিছু চেষ্টা করেছি এই সচলেই। কবিতার পোস্টে হিট হয়তো কম, কিন্তু কবিতার পাঠকও কিন্তু কম নয় সচলে।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

s-s এর ছবি

লেখকের শব্দচয়ন যে আসলেই একটি চমকপ্রদ বিষয় সেটা সালমান রুশদী পড়লে বোঝা যায় স্পষ্টভাবে, আমার ইংরেজী নিয়ে বেশ ভালো ধরণের আত্নশ্লাঘা ছিলো সমসাময়িক অনেক লেখাকে অতি অল্প আয়াসে পড়ে ব্যাখ্যা মায় মানুষজনের সামনে উপস্থাপন পর্যন্ত, রুশদী আমাকে বাধ্য করলেন অভিধানে হাত দিতে। এখন পড়ছি হেনরী রাইডার হ্যগার্ডের শী - এটা ১৮৩৪ বা ঐ রকম সময়ের গল্প ইংরেজিও সেরকম ধ্রুপদী। ফ্রস্ট, জন ডান বা ক্রিস্টিনা রসেটির শব্দচয়নও তাই। লেখকদের একটা বড় গুণ কিন্তু আসলেই শব্দের সব্যসাচিতা। লেখায় চলুক

জি.এম.তানিম এর ছবি

আমার ব্যক্তিগত ধারণায় সাবলীল শব্দ দিয়েই সম্ভব গভীর রচনা। শব্দের ঝংকার হয়তো লেখার শিল্পমান অনেক বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু সেটা করতে গেলে আধেক সময় যদি অভিধান নিয়েই পড়ে থাকতে হয়, সেটা লেখার মানকে অনেক নামিয়ে আনে। আসলে পরিমিতিটাই মূল ব্যাপার বলে আমার মনে হয়।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

সবজান্তা এর ছবি

লেখাটা সিরাম !

আলসামি ছেড়ে আরো অনুবাদ করেন। লেখায় পাঁচ তারা।


অলমিতি বিস্তারেণ

জি.এম.তানিম এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।