এই মিশনটার হয়তো হওয়ারই কথা ছিলো না। এপ্রিলে বাজেটে নাসার জন্য বরাদ্দ পাওয়ার পরে অর্থনৈতিক বাধাটি দূর হয়। যাত্রা শুরুর দিনটিতে আবহাওয়া খুবই প্রতিকূল, ৩০% সম্ভাবনা সফল উড্ডয়নের।
মিনিট দুয়েক বিরতির পরে আবারও চালু হয় কাউন্টডাউন। কিছু কারিগরী যাচাইয়ের কারণে এই বিরতি। ১০ সেকেন্ড বাকি থাকতে শোনা যায় প্রধান ইঞ্জিনের চালু হওয়ার শব্দ। ৫ সেকেন্ড বাকি থাকতে সব কয়টা ইঞ্জিন চালু হয়ে যায়, এর পরে ৩, ২, ১ এবং লিফট অফ! শেষ বারের মতো যাত্রা শুরু হলো আটলান্টিসের এক সমুদ্র ধোয়া পেছনে ফেলে। দূরে রাখা এক ক্যামেরা থেকে দেখা গেল এই মনোহর দৃশ্য। এর পরের সেকেন্ডগুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। যদিও পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ভেদ করে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ভালো টেনশন হচ্ছিল। সেকেন্ড চল্লিশেক পরে মেঘের রাজ্যে অনেকটাই হারিয়ে গেল পৃথিবীর মানুষের চোখে, আর বড় জ্বালানি ট্যাংকটিতে থাকা ক্যামেরায় দেখা গেল মেঘের চাদর পেরিয়ে উপরে উঠে এসেছে আটলান্টিস। এর মিনিট দুয়েক পরে সাহায্যকারী রকেট দুটি আলাদা হয়ে যায় আটলান্টিস থেকে, এবং আরো মিনিট সাতেক পরে জ্বালানী ট্যাংকটিকেও মুক্ত করে দেয় আটলান্টিস। এগিয়ে চলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের দিকে। পৃথিবীর মানুষ দর্শক হয়ে থাকল আরও একটি সফল মহাকাশ উড্ডয়নের। হর্ষধ্বনিতে ভরে উঠল কেনেডি স্পেস সেন্টারে জমায়েত হওয়া হাজার মানুষ। শৈশবে মহাকাশচারী হতে চাওয়া আমিও অনেক অপ্রাপ্তির ভীড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালাম এই দৃশ্য সরাসরি দেখে আল জাজিরা, বিবিসি আর সিএনএনে।
লিফট অফের ভিডিও দেখা যাবে এই লিঙ্কে।
নাসার স্পেস শাটল প্রোগ্রাম চলেছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। মানুষকে দেখতে হয়েছে চ্যালেঞ্জার এবং কলম্বিয়ায় মতো স্পেস শাটল বিপর্যয়। তবুও মানুষের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নকে থামানো যায় নি। স্পেস শাটলের সহযোগিতায় মহাকাশে তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। এমন কি টেলিস্কোপ হাবলের কারিগরী উন্নতিতেও এই প্রোগ্রামের অবদান আছে। উৎসাহী পাঠক দর্শকেরা হাবল ৩ডি চলচ্চিত্রটি দেখতে পারেন। মানবজাতির জ্ঞানের সীমানা বৃদ্ধিতে তাই এই প্রোগ্রামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সরকারের বাজেট বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ছাড় দিতে হচ্ছে। তাই মহাকাশ অভিযানের মতো একটি বিষয়, যেখানে প্রাপ্ত ফলাফলটি ঠিক হাতে হাতে পাওয়া যায় না, বরং যে ফলাফল সুদূরে হাতে পাওয়া যাবে, এমন অভিযানে অর্থ খরচ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারও বেশি উৎসাহী নয়। শোনা যাচ্ছে নাসাতে ব্যাপকভাবে ছাঁটাইও চলছে। তবে কি মানুষের আকাশ ছোঁয়ার অভিযান থেমে যাবে এখানেই? নাসার পরবর্তী অভিযান কিংবা তার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানা নেই। খুব নিকট ভবিষ্যতে রয়েছে বলে মনেও হয় না। যেখানে নাসার এসব অভিযানে খরচ শান্তিকালীন সমর খরচের থেকেও কম, সেখানে সমগ্র মানবজাতির অগ্রযাত্রা থামিয়ে রাখার খুব একটা মানে আছে বলে আমার মনে হয় না। খুব তাড়াতাড়ি এই ব্যাপারে আশার বাণী শুনতে চাই।
ততদিন পর্যন্ত আটলান্টিসের জন্য শুভ কামনা রইল। মিশন সফল করে সুষ্ঠভাবে ফেরত আসুক পৃথিবীতে আটলান্টিস। অভিনন্দন আটলান্টিসকে তার যাত্রার জন্যে, আর অভিনন্দন মানবজাতিকে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা না থামানোর জন্য।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
ছবি সূত্র: নাসা।
মন্তব্য
নিশ্চয়ই তারা বিকল্প ভেবে রাখছে। স্পেসে যাওয়া, এমনকী এখনো, অনেক কিছুর পাশাপাশি, মার্কিন মেগালোম্যানিয়ার অংশ। লেখাটা ভালো লাগল।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কিন্তু লেখাটা বড্ড চটপট শেষ হয়ে গেল যে!
লেখাটা গায়ে-গতরে ক্ষীণ হইছে। তয় ব্যস্ততার মধ্যে লিখছেন বলে আর কিছু কইলাম না
পোকাদের সমরযাত্রার অন্ধকারকে পাশ কাটিয়ে মানুষের বিজ্ঞানযাত্রা অব্যহত থাকুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
তানিম এবং অনার্যকে ধন্যবাদ। কাল টিভি চ্যানেল পাল্টাতে গিয়ে হঠাৎ বিবিসিতে দেখি লাইভ দেখাচ্ছে। পুরো বিষয়টা জানতাম না...।
অনিন্দ্যর সাথে একমত... কিছু হয়ত ভেবে রেখেছে...। (ড্যান ব্রাউন স্যারের ডিসেপসন পয়েন্টের কথা মনে হল )।
লেখাটি ছোট হওয়ার জন্যে দুঃখিত। আসলে সময়ের অভাবে, নাসার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটা নিয়ে পড়াশোনা করতে পারি নি এবং এইবারের মিশনের বিস্তারিত লিখতে পারি নি। কিঞ্চিত দৌড়ের উপ্রে আছি!
ধন্যবাদ অনিন্দ্যদা, কৌস্তভদা, রতন্দা এবং নৈষাদদাকে।
প্রাইভেট সেক্টরে মহাকাশ যাত্রা নিয়ে এই লিঙ্কটা পড়ে দেখতে পারেন।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
স্পেস নিয়ে নাসা কি ভাবছে তা বারাক ওবামার স্পেস পলিসি স্পিচে পাওয়া যাবে। লিংক দিলাম...
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
তোমাকে অনেকদিন মিস করেছি হে। কেমন ছিলে? এবং কেমন আছো?
লেখাটার জন্য লেখক এবং প্রনোদোনাদাতাকে ধন্যবাদ। তবে বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে।
এটা তো ছিলো আসলে প্ল্যানড রিটায়ারমেন্ট। প্রযুক্তি পুরাতন হয়ে যাওয়ায় স্পেস শাটল প্রোগ্রাম একসময় বন্ধ করে দিতেই হতো। তবু ত্রিশ বছরে চ্যালেঞ্জার ও কলাম্বিয়া বিপর্যয় ছাড়া এই শাটল প্রোগ্রাম বেশ ভালোভাবেই চলেছে। আমার মনে আছে কলাম্বিয়া বিপর্যয় যখন হলো তখন আমি সবে আমেরিকা এসেছি। ওই অভিযানের কমান্ডার রিক হাজবেন্ড ছিলেন আমার ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট এবং স্থানীয় বাসিন্দা। কাজেই উত্তাপটা তখন সেখানে ভালোভাবেই টের পেয়েছি। তবে দুঃখ পেয়েছিলাম বেশি কল্পনা চাওলার জন্য।
নাসা শাটলগুলোকে রিপ্লেস করার জন্য ইতিমধ্যে তৈরি করেছে ওরিয়ন স্পেসক্রাফট, যেটাকে আরো উন্নত করে বানানো হচ্ছে মাল্টি-পারপাস ক্রু ভেহিকেল বা MPCV. এগুলোর উড্ডয়নও শীঘ্রি শুরু হবে। কাজেই শাটল প্রোগ্রাম বন্ধ হওয়া মানে এই নয় যে নাসার অভিযান বন্ধ হয়ে গেলো। যদিও অনেক প্রাইভেট কোম্পানি এসব কাজে এগিয়ে আসায় সরকার থেকে চাপ আছে বাজেট কমানোর জন্য লঞ্চিংয়ের দায়িত্ব এদের দিয়ে দেওয়ার। তবে সেটা অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
ধন্যবাদ তানভীর ভাই। ওরিয়নের ব্যাপারে আমি প্রথম জানতে পারলাম শিক্ষানবিসের লিঙ্ক থেকে। তাকেও ধন্যবাদ। প্রাইভেটে চলে যাওয়াটা কতটা লাভজনক অথবা নিরাপদ হবে সেটাও আসলে পর্যবেক্ষণ ছাড়া বলা যাচ্ছে না। তবে ওবামার কথা শুনে আমি বেশ উৎসাহ পেয়েছি। নাসাকে আরও দূরে এগিয়ে নিতে সে সচেষ্ট বলে মনে হলো। ওরায়নের ওড়ার দিনের অপেক্ষায় থাকি
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
একটা ভালো পয়েন্ট মিস করেছিলাম, ওরায়নের উন্নতি হিসেবে থাকলেও কন্সটেলেশন প্রজেক্ট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকের ধারণা মঙ্গলযাত্রাটা অনেক বেশি পিছিয়ে যাবে। এই ব্যাপারে বিতর্ক পড়ুন এখানে।
বাজ অলড্রিন ওবামা প্ল্যানের সাথে থাকলেও নিল আর্মস্ট্রং কন্সটেলেশন প্রজেক্ট বন্ধ করার বিপক্ষে।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
রিক হাজবেন্ডের সাথে টেকের একটা সেমিনার পরিচয় হয়েছিল। আমার এড্ভাইজার ওনাকে খুব ভালো ভাবে চিনতেন। এই বিষয়ে লিখব - অনেকদিন ধরেই ভেবেছি - সময় হয়ে উঠছে না।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমার মতো মুর্খজন অনেক কিছু জানতে পারলো।
অনেক ধন্যবাদ তানিম ভাই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
টিভিতে আমিও দেখেছি ঘটনাটি শুভকামনা থাকলো আটলান্টিসের জন্য।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কেম্নে জানি ক্ষুধা মিটলো না।
তয় ভালা অইছে।
লেখার স্বাস্থ্য আমার মত ক্ষীণ তনু হলেও চিন্তার খোরাক আছে! আপনের জন্য একখান ভিডিও-
A Blast From The Past: Shuttle Through The Decades from NPR on Vimeo.
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
অনার্যর উপর্যুপরি চেষ্টায় যাহোক তবু একটা লেখা পয়দা হলো...
গুড জব
জিয়েমটিকে অশেষ ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন