(অজুহাত এক: স্প্যানিশ আমার জানা ভাষা নয়। ভাব প্রকাশ ও গ্রহণের দৌড় বাংলা আর টার্জান ইংরেজি পর্যন্ত। ও হ্যাঁ টেনিদার মতো তুম নেহি জানতা টাইপ হিন্দিও কিছুটা বুঝি সে আলাদা কথা। যা বলছিলাম, স্প্যানিশ থেকে সরাসরি অনুবাদ করা তাই আমার দ্বারা সম্ভব না। আবার কবিতা ইংরেজি ঘুরে বাংলায় আসলে সেটার আসল রস কতটা থাকে সেটাও একটা প্রশ্ন। কবিরা ভালো বুঝবেন এসব ব্যাপার, আমার মতো লোকেদের এইসব আলাপ না চালানোই ভালো।
অজুহাত দুই: এই অজুহাতটা হাত নিয়ে, মানে বলছিলাম সবার তো আর কবিতা লেখার হাত থাকে না। তবুও পীপিলিকা গোঁ ধরেছে উড়বেই। এই কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পড়ে বেশ ভালো লেগেছিল, অনেক অনেক দিন চেষ্টা করেছি অনুবাদ করার। খুব একটা যুৎসই হচ্ছিল না। আজ যখন ভূপর্যটক অণু তারেকের কল্যাণে যখন জানতে পারলাম নেরুদার জন্মদিন, তখন এই শেষ না করা অনুবাদটি শেষ করতে বেশ ইচ্ছে হলো। তাই এই অপপ্রয়াস। গুণীজনেরা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বাংলা উইকি যদিও অন্য একটি তারিখ দেখাচ্ছে। )
কবিতা ১৪
পাবলো নেরুদা
(কুড়িটি প্রেমের কবিতা ও একটি নৈরাশ্যের গান)
প্রতিদিন তুমি মহাবিশ্বের আলো নিয়ে খেলা কর।
নীরব পথিক, তুমি চলে আসো ফুলে আর জলে মিশে।
আমার দু'হাতে রোজ ধরে রাখা ফলের গোছার মতো এই সাদা মাথা,
তুমি এর থেকে অনেক অনেক বেশি কিছু।
তোমাকে যেদিন থেকে ভালোবাসি, তুমি হয়ে গেছ ভিন্ন সবার চেয়ে।
তোমাকে ছড়িয়ে রাখি তাই এই হলুদ মালায়।
দখিন আকাশে তারাদের মাঝে ধোঁয়ার হরফে কে তোমার নাম লিখে?
স্মরণ করিয়ে দেবো আমি, তুমি ছিলেনা যখন, তখন কেমন ছিলে।
হঠাৎ বাতাস চিৎকার করে আমার জানালা আটকিয়ে দেয়।
এ আকাশ যেন ছায়াময় মাছে ভরে থাকা এক জাল।
এখানে বাতাস, আগে আর পরে, নিজেকে বিলিয়ে দেয়।
বৃষ্টি বসন খুলে ফেলে তার।
পাখিরা পালিয়ে যায়।
বাতাসে, বাতাসে।
আমি তো কেবল মানুষের যত শক্তির সাথে যুদ্ধ করতে পারি।
ঝড় নিয়ে যায় কালো পাতাদের উড়িয়ে উড়িয়ে
আর গতরাতে নোঙর ফেলানো নৌকোগুলোকে।
তুমি এইখানে। পালিয়ে যেয়ো না ওগো।
আমার সকল শেষ প্রশ্নের জবাবটা দিয়ে যাও।
যেন অনেকটা ভয় পেয়ে গেছ, এভাবে আমায় ধরো।
যদিও হঠাৎ তোমার দু’চোখে বয়ে যায় এক অচেনা অচেনা ছায়া।
এখন, আবার এখন, আমার ছোট্ট তুমি গো, আসো তুমি নিয়ে রঙ্গন ফুল,
তোমার বুকের সুগন্ধ যত।
যখন বাতাস, দুঃখী বাতাস প্রজাপতিদের জীবন ছিনিয়ে বয়ে বয়ে যায়,
আমি তোমাকেই ভালোবাসি, আর আমার সুখেরা তোমার মুখের তুলতুলে শাঁসে কামড় বসায়।
আমার নিকটে এসে তুমি কতো যন্ত্রণা সয়ে গেছ,
আমার বন্য একাকী আত্মা, আমার যা কিছু ,তাদের তাড়িয়ে দেয়।
কত যে দেখেছি শুকতারা জ্বলে, আমাদের চোখে চুমু খেয়ে চুমু খেয়ে,
মাথার উপরে ধুসর আলোরা নিজেকে হারায় পাখাদের মতো ঘুরে।
আমার শব্দ তোমার ওপরে আছড়ে পড়েছে, তোমার শরীরে হাত বুলিয়েছে,
একটা দীর্ঘ সময় তোমার রোদাক্রান্ত ঝিনুক শরীর ভালোবেসে গেছি।
আমার স্বপনে এ মহাবিশ্ব তোমার দখলে আছে।
তোমার জন্যে পাহাড়ে ছড়ানো হাসিখুশি ফুল, চিলির ঘন্টাফুল,
কৃষ্ণ হেজেল, তোড়ায় ভর্তি উদ্দাম চুমু আসবই নিয়ে আমি।
আমি তাই চাই সাজাতে তোমাকে আজ,
যেভাবে সাজায় বসন্ত চেরি গাছ।
(মূল কবিতাঃ Poema 14,
Pablo Neruda,
Veinte poemas de amor y una canción desesperada)
#১২-০৭-২০১২
মন্তব্য
অনেক সুন্দর হইছে- -
শুভ জন্মদিন কবি...
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
i want to do with you what spring does with cherry trees---- বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর পংক্তিদের একটি।
facebook
শতভাগ সহমত। অনুবাদে তার ছায়াটাও যদি আসতো
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
অনুবাদটা বেশ অন্য দিকে চলে গেছে, ব্যক্তিগত আমার মনে হয়েছে কবি বোঝাতে চেয়েছেন বসন্ত যেভাবে চেরি গাছকে পুনরুজ্জীবিত করে, ফুলে-ফলে ভরিয়ে দেয় শুষ্ক শীতের হয়ে, এক হিসেবে নবজীবন দান করে- প্রেমিকার সাথেও তিনি এমন কিছু করার প্রত্যাশা করছেন। রোমেল ভাই হয়ত আরও বিস্তারিত বলতে পারবেন---
facebook
ভাবছি এইটাকে কী করা যায়
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
দারুণ!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ভালো লাগলো তানিম ভাই
ধন্যবাদ তানিম ভাই
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
দারুণ লাগল তানিম ভাই। চিত্রকল্পগুলো চোখে লেগে আছে। সংগ্রহে রেখে দেওয়ার মত কবিতা। কবিতা'র আসলে অনুবাদ হয়না সে অর্থে, অনুদিত হয়ে কবিতাটি অনুদিত ভাষায় আরেকটি মহার্ঘ্য হয়ে যায় অনেক সময়। আপনার অনুবাদ ভাল লেগেছে।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
মূল কবিতাটা যদিও পড়া নাই। তবে আপনার অনুবাদ ভালো লাগল খুব।
ডাকঘর | ছবিঘর
চলুক, ভালই তো!
মূল কবিতা পড়ি নাই।
তবে আপনাকে সার্টিফিকেট দিমুই দিমু।
অণুবাদ দারুণ হয়েছে। খুব ভাল লাগল পড়ে।
ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।
এত অজুহাত কেন তানিম ভাই । একেবারে পাকা অনুবাদকই তো মনে হল। ভালো লেগেছে অনেক।
ভাল্লাগসে।
ধন্যবাদ সবাইকে
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
নতুন মন্তব্য করুন