প্রত্যেক মানুষের কাছেই নিজের জন্মস্থানকে অনুপম মনে হয়; আমার এই বোধ কিছুটা কম। তবে জন্মস্থানকে অনুপম মনে না হলেও এর কিছু কিছু দিক আমাকে বিহ্বল করে তোলে প্রায়ই। এর একটি লোককথা। হাওর-বাওর-নদী-খাল-বিলবেষ্টিত এবং অসংখ্য পুকুরশোভিত একটি উপজেলার নাম মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার একটি অংশ। এখানেই আমার বেড়ে উঠা। কৈশোরের বয়ঃসন্ধি যখন আমাকে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে প্রবলভাবে দ্বিধায় ফেলে দিতো, ঠিক সে সময়টাতেই মোহনগঞ্জকে ছেড়ে চলে আসি এই নগররাজ ঢাকায়। ফলে সে সময় থেকে আমার অস্তিত্বে মিশে যাওয়া লোককথাগুলো আস্তে আস্তে নিস্পৃহ হতে থাকে।
অনেককাল আগে মোহনগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে একটি বই বেরিয়েছিলো- সেটি এখন বিলুপ্ত। একদল উদ্যোগী তরুণ আবার নতুন করে সেই কাজ শুরু করলেও আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং স্বার্থকেন্দ্রিক ব্যস্ততা সবাইকে আবার নিজ নিজ ঘরে ফেরত নিয়েছে। আমার দায়িত্ব ছিলো লেখাগুলোকে সাজানো, প্রুফ দেখা এবং পেজ মেকাপ করা। সেই কাজ করতে গিয়েই চেপে রাখা বাতাসের মতো লোককথাগুলো সজোরে হানা দেয় আমার সমগ্র অস্তিত্বকে। আমি এই ভেবে স্বস্তিবোধ করি যে- নগরজীবন আমার শিকড় ধরে টান দিয়েছে, কিন্তু আমার অগোচরে কিছু কিছু খণ্ডিত শিকড় নগরজীবনকে ফাঁকি দিয়ে লম্বা এক শীতঘুম দিয়েছিলো আমারই ভেতর।
এই সিরিজের জন্য আমি ঋণী মোহনগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে যারা কাজ করেছেন তাদের প্রতি। এখানে আমি নিজের মতো করে লোককথাগুলো সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা করেছি, বিশেষ করে নির্ভর করেছি আমার স্মৃতির ওপর। ছোটবেলায় যে ছড়াগুলো পড়তাম, বলতাম, খেলতাম- সেগুলো তো এসেছেই; তাছাড়া যে লোককথাগুলো সম্পর্কে আমি একেবারেই অবগত ছিলাম না সেগুলোর কিছু ধার নিয়েছি আমাদের মোহনগঞ্জ বইটি থেকে। কিছু কিছু ছড়া-ধাঁধা-হেঁয়ালি বইতে একরকমভাবে রয়েছে, স্থানীয় মানুষজন ও আমি জানি আরেকরকমভাবে। সেগুলোর ক্ষেত্রে বইয়ের বদলে আমার স্মৃতি ও মানুষের মুখে শোনার ধরনটিকেই আমি গুরুত্ব দিয়েছি বেশি। তবে ব্যাখ্যা-টীকা পুরোপুরি আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা, দৃষ্টিকোণ ও উপলব্ধি থেকে দেওয়া। এখানে আরেকটি কথা বলা দরকার। এই সিরিজে হয়তো এমনসব ছড়া-ধাঁধা বা হেঁয়ালির সন্ধান মিলবে যেগুলো হয়তো অন্য এলাকাতেও প্রচলিত। থাকুক প্রচলিত, কোনো বাছবিছার ছাড়াই আমি মোহনগঞ্জে প্রচলিত সবগুলোকে তুলে আনতে চাই এই সিরিজে।
আইলাম্বর আইলাম্বর
আইলাম্বর আইলাম্বর
আইলাম রে মোড়লের বাড়ি
পথ পাইলাম কলার ছড়ি
কলার ছড়ি লড়বড়
ও মোড়ল চোর ধর
চোর ধরতে টেহা পড়ে
ঝনঝনাইয়্যা টেহা পড়ে
উগলা টেহা পাইলাম গো
বাইন্যা বাড়িত গেলাম গো
বাইন্যা তর রূপার মালা
তর ঘরডা দেখতে বালা
ঘর বালা ঘর বালা
ঘর বালা গাড়ুনি
গিত্যাইন বালা রাঁধুনি
ও গিত্যাইন লড়চড়
আমায় দিবা কত ধন
আমি তো মাইগ্যা খাই
বাঘের নামে শিরনি চাই
বাঘ গেল নাগাইরপুর
কিইন্যা আনল চাম্পাফুল
চাম্পা গায়া পোলাইন রে
কী কী ধান নিছ রে
আপন ধান মাইগ্যা খাই
বাঘের নামে শিরনি চাই।
এছাড়া অনেকে বাইন্যা বাড়িত গেলাম গো-এর পরে বাকি লাইনগুলো না বলে নিচের লাইনগুলো বলে থাকে:
বাইন্যা বাড়িত টকইর বাসা
টকই টকই নলভাসা।
শব্দের অর্থ
১. আইলাম্বর = শব্দের অর্থ জানা নেই; সম্ভবত আসার ঘোষণা
২. আইলাম = এলাম
৩. লড়বড় = নড়বড়ে অবস্থা
৪. টেহা = টাকা
৫. উগলা = একটা
৬. বাইন্যা = ব্যবসায়ী
৭. বালা = ভালো
৮. গাড়ুনি = শব্দের অর্থ জানা নেই
৯. গিত্যাইন = একজনের নাম; গীতাকে এভাবে ডাকা হয় (নজমুল আলবাবের মতে গৃহিণী)
১০. মাইগ্যা= চেয়ে, ভিক্ষা করে
১১. নাগাইরপুর = নাগরপুর (টাঙ্গাইলের নাগরপুর কি?)
১২. কিইন্যা = কিনে
১৩. চাম্পাফুল = চম্পাফুল
১৪. গায়া = গ্রাম
১৫. টকইর = টুনটুনি পাখি
১৬. নলভাসা = যা জলে ভাসে
ব্যাখ্যা
লোককথা অনুসারে, মোহনগঞ্জ একসময় একদিকে সমুদ্র, একদিকে হাওর ও অন্যদিকে বনঘেরা একটি অঞ্চল ছিলো। বনে বিভিন্ন হিংস্র জীবজন্তু বাস করলেও সেগুলোর মধ্যে বাঘের আতঙ্ক ছিলো সবচাইতে বেশি। বর্তমানে সমুদ্র ও বন না থাকলেও হাওর আছে। শুকনো মওসুমে এসব হাওরে রাখালরা গরু-ছাগল চড়াত, কিন্তু প্রায়ই বাঘের অত্যাচারে অনেক গরু-ছাগল মারা পড়তো। বাঘের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতি বছর ধান উঠার পর রাখালরা ‘বাঘাই শিরনি’র আয়োজন করে বাঘকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতো যাতে বাঘের হাত থেকে গরু-ছাগল রক্ষা করা যায়। এই বাঘাই শিরনির উপকরণ সংগ্রহ করার সময় রাখালরা সুর করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ছড়াটি পাঠ করতো।
সত্যিকার অর্থে এই ছড়াটির উৎপত্তি কীভাবে এবং এই ছড়ার পেছনের কাহিনীর মূলসূত্র বর্ষীয়ান অনেকের সাথে কথা বলেও জানা যায় নি। এই ছড়ার সাথে বাঘ তাড়ানোর সম্পর্ক কী- তাও বের করা সম্ভব হয় নি। তবে মনে করা যায়- শিরনির উপাদান সংগ্রহ শুরু হতো মোড়লের বাড়ি থেকে এবং তারপর ব্যবসায়ীর বাড়ি হয়ে অন্যান্যদের কাছে যাওয়া হতো। ছড়ায় মোড়ল, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য মানুষ- যার যার কাজের প্রকৃতি অনুসারে তাদের বাড়ি বা কাজের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শিরনির জন্য মূলত ধান সংগ্রহ করতে গেলেও অনেকেই ধানের বদলে অন্য কিছু বা টাকাপয়সা দিতো। সেগুলো আবার বিনিময় করে রাখালরা শিরনির জন্য কেবল ধান, মশলা, পান ইত্যাদি সংগ্রহ করতো।
(প্রতি পর্বে এরকম কোনো ছড়া বা ধাঁধা বা হেঁয়ালি থাকবে। তবে আগামী পর্ব থেকে ভূমিকাটুকু থাকছে না।)
মন্তব্য
বাইন্যা= ব্যবসায়ী। কিন্তু এখানে স্বর্ণকার অর্থে ব্যবহৃত।
গৃহীনি=গির্তাইন/গিরতাইন=গিত্যাইন
গায়া= গ্রামের। (চাম্পা গায়া পোলাইন রে=চাম্পা গ্রামের ছেলের দল)
টকইর=টেকই=টুনটুনি পাখি।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ধন্যবাদ, নজমুল আলবাব ভাই। আপনি কি নেত্রকোনার? তাহলে আপনার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পাওয়া যাবে।
আর অসম্পূর্ণগুলো সংশোধন করে নিচ্ছি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
চালাইয়া জান
নাক ঢুকানোর চান্স পাইলে ঢুকামুনে
এখন কোনো ফাঁক পাইলাম না
আরো আসছে। আশা করছি নাক ঢুকাতে পারবেন। কিন্তু নাক ঢুকানো ছাড়াও অনেক কাজ আছে। কোনো পরামর্শ তো দিতে পারেন!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
সাধু সাবধান, লীলেন্দাস নাক ইস হেয়ার !
দারুন লাগসে ছড়াটা
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আপনার নাকও আশা করছি। নাকে নাকে কাটাকাটি-জমবে কথা ফাটাফাটি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
এইটা দেইখা মনে পইড়া গেল, এরকম একটা আমিও জানি পুরাটা মনে নাই, প্রথমটুক হইল এরকম -
ছিয়া নড়ে ছিয়া নড়ে
ঝুপঝুপাইয়া টাকা পড়ে
একটা টাকা পাইরে
বাইনা বাড়ি যাইরে
বাইনা বাড়ি .........
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আপনি একটু চেষ্টা করেন। আশা করি পুরোটা মনে করতে পারবেন। এ ধরনের আরো কিছু জানা থাকলে সেগুলো লিখে ফেলুন। আমাদের লোকসাহিত্য নিয়ে বেশ কিছু কাজ হয়েছে, কিন্তু আরো অনেক কাজ বাকি। সেগুলো করা দরকার।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
সেলবরষ থেকে ট্রলারে করে একবার মোহনগঞ্জ গেছিলাম।স্মৃতি হাতরাইয়া কিছু পাইলে আমার নাকেরও গতি করমু।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
একটু চেষ্টা করেন প্লিজ। আবার ওদিকে গেলে জানাবেন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ভালো উদ্যোগ গৌতম দা। চালিয়ে যান।
---------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ কীর্তিনাশা।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
খুব সুন্দর উদ্যোগ! চালিয়ে যান.... আরো ভাল লাগবে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ধন্যবাদ তীরন্দাজ। তবে আপনাদের মন্তব্য-ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ইত্যাদি থাকলে সেগুলো যদি জানান তাহলে সেটি আমার কাজে লাগবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
দারুণ হবে এই সিরিজ। বিশেষ কৌতূহল বোধ করছি সব পর্ব পড়ার জন্য।
গৌতম, আপনার ব্যাখ্যার শুরুতে যে বাক্যটা বললেন (লোককথা অনুসারে, মোহনগঞ্জ একসময় একদিকে সমুদ্র, একদিকে হাওর ও অন্যদিকে বনঘেরা একটি অঞ্চল ছিলো।), এই বিবৃতিটি নিছক লোককথাই নয়, সত্যেরও খানিকটা নিকটে বলে তথ্যসূত্রে মনে হয়। এসব নিয়ে একসময় বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলাম, ওখান থেকেই কয়েক ছত্র তুলে দেই--
"বৈজ্ঞানিক প্রমাণসাপেক্ষ অনেকে বলেন, তিন কোটি বছর আগে সুনামগঞ্জের দক্ষিণভাগ বঙ্গোপসাগরের জলসমতলের চেয়েও নিচে ছিল। বিভিন্ন প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতেও এর সমর্থন রয়েছে। জানা যায়, প্রাচীনকালে সুনামগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিশাল ‘কালিদহ’ নামক একটি জলরাশির নিচে নিমজ্জিত ছিল। সিলেটের তদানীন্তন কালেক্টর লিন্ডসে সাহেবের অষ্টাদশ শতাব্দীতে লিখিত এক বর্ণনা মতে, প্রাচীনকালে সিলেটের সদর মহকুমা, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জের উত্তরাংশ এবং সুনামগঞ্জের প্রায় পুরোটা ছিল বঙ্গোপসাগরের একটি অংশ অথবা একটি সুবৃহৎ হ্রদ। পাশাপাশি নিকটস্থ জেলা কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং নোয়াখালীর ভূমির অংশতও এই জলপ্রবাহের অন্তর্গত ছিল। তিনি তার লেখায় চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, তিনি সিলেট শহরকে সাগর উপকূলীয় দেশ বলে বর্ণনা করেছেন। দীনেশচন্দ্র সেন রায়বাহাদুর মৈমনসিংহ-গীতিকার ভূমিকায় জানান, ‘উত্তরে গারো পাহাড়, জয়ন্তা ও খাসিয়ার অসম শৈলশ্রেণী,-- তাহাদের পাদলেহন করিয়া একদিকে সোমেশ্বরী ও অপর দিকে কংস ছুটিয়াছে। এই বিস্তৃত ভূখণ্ড ছাড়িয়া দক্ষিণ-পূর্ব্বে নানা ধারায় ধনু, ফুলেশ্বরী, রাজেশ্বরী, ঘোড়া-উৎরা, সুন্ধা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র ক্কচিৎ ভৈরব রবে, ক্কচিৎ বীণার ন্যায় মধুর নিক্কনে প্রবাহিত হইয়াছে। এই সকল নদনদীর অন্তর্বর্ত্তী দেশসমূহ এককালে জলের নীচে ছিল।’ এসব মতের পক্ষে আরো প্রমাণ হিসেবে অনেকে এ এলাকায় আবিষ্কৃত চুনাপাথর ও কয়লার খনিকে সামনে আনেন। তারা দাবি করেন চুনাপাথর এক ধরনের ক্যালসিয়াম, যা সমুদ্রের প্রাচীন শামুক ও শৈবাল দ্বারা সৃষ্ট। অর্থাৎ এখানে চুনাপাথরের খনি থাকাটি পূর্বে এখানে সাগর থাকাকে সমর্থন করে। কারো কারো মতে, হাওরাঞ্চলের তিনদিকে অবস্থিত পাহাড়সমূহও এখানে একসময় সাগর থাকার প্রমাণ।" (সূত্র-- হাওর : জলে ভাসা জনপদ, মুজিব মেহদী)
ছড়ায় বন বলতে মধুপুরের শালবনকেই বোঝানো হচ্ছে বলে মনে হয়, কারণ বর্তমানে যেটা মধুপুর গড় সেটা গাজীপুরের ভাওয়াল গড় হয়ে পুরানো ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ তক বিস্তৃত ছিল। অর্থাৎ কথিত সমুদ্র পর্যন্ত। এ বনে মাত্র বছর পঞ্চাশেক আগেও বাঘ ও চিতাবাঘ ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ আছে। আর দুই শতক পূর্বে ছিল হাতি ও গণ্ডার।
হাওর তো এখনো আছে।
কাজেই এই লোকছড়ায় বর্ণিত সমুদ্র, বন, হাওরের উল্লেখ সত্যেরই আভাস।
................................................................
দৌড়ের উফরে আছি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
আপনার দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কালিদহ সাগর নিয়ে যে ব্যাখ্যাটি আপনি দিয়েছেন, সেটি আমিও পড়েছি। অনেকে এখনো মনে করেন, হাওরাঞ্চল মূলত কালিদহ বা কালিদস সাগরের উত্তরাধিকার।
তবে এখানে সত্যিকার অর্থেই কখনো সাগর ছিলো কিনা, তা জানার জন্য আমি বেশ কয়েকজন ভূগোলের শিক্ষক এবং ভূতত্ত্ববিদের সাথে কথা বলেছি। তারা মনে করেন কোটি কোটি বছর আগে এই এলাকার সাগরের অস্তিত্বকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু এর পক্ষে তেমন জোরালো কোনো প্রমাণ নেই। তবে গত কয়েক হাজার বছরে যে এখানে সাগরের কোনো অস্তিত্ব ছিলো না, সে ব্যাপারে তাঁরা নিঃসন্দেহ।
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য। আপনি সিলেটের তদানীন্তন কালেক্টর, বা হিউয়েন সাঙের কথা বলেছেন। কিন্তু আগেই বলেছি- এ সময়কালে সমুদ্র মোহনগঞ্জের ধারে কাছেই তো ছিল না, বরং বর্তমানে সমুদ্র চট্টগ্রামের যতো কাছে অবস্থান করছে, তার চাইতে কয়েক মিটার দূরে অবস্থান করতো। আর পাহাড় থাকা কিন্তু সবসময় সাগর থাকার অস্তিত্ব প্রমাণ করে না। অন্যদিকে মোহনগঞ্জে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করে মোগল আমলের শেষ দিকে- অনেকে মনে করেন সম্রাট আকবরের সময়কালে। সে সময়কালের ভৌগলিক বিবরণ থেকেও দেখা যায়- এদিকে কোনো সাগরের অস্তিত্ব ছিলো না।
প্রশ্ন উঠে- তাহলে কেন সাগরের প্রসঙ্গটি আসে। এক্ষেত্রে একটি ব্যাখ্যা হতে পারে- হাওরে যখন বর্ষাকালে টইটুম্বুর পানি বিশাল বিশাল ঢেউ তোলে আছরাতে আসে, তখন সেটি সাগরের চাইতে কোনো অংশেই কম দেখায় না। প্রাচীণকালে মানুষজনের কল্পনাশক্তি, জ্ঞানের সীমানা ইত্যাদি মিলিয়ে তারা যদি এটাকে সাগর বলে ভ্রম করে, তাহলে সেটা কষ্টকল্পনা হবে না। আবার উপমা হিসেবে কেউ কেউ হাওরকে সাগরের সাথে তুলনা করেন। সে হিসেবেও এখানে সাগরের কথা চলে আসতে পারে।
কিন্তু সত্যিকার অর্থে এখানে কালীদহ সাগরের অস্তিত্ব নিয়ে আমি সন্দিহান। তবে কালিদহ নামের বিলের কথা বলেন বর্ষীয়ানদের কেউ কেউ। কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমানে মোহনগঞ্জের কংশ নদীর আরেক নাম ছিল কালিদহ।
যেহেতু এ ব্যাপারে আপনার জানাশোনা আছে, তাই আমি আশা করবো আগামী পর্বগুলোতেও আপনি আপনার মন্তব্য-পরামর্শ ইত্যাদি জানাবেন। আমার কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে সেটি ধরিয়ে দিবেন। কোথাও কোথাও হয়তো মতের অমিল হতে পারে; কিন্তু মতের তীব্র অমিল-ই তো আমাদের সত্য খুঁজে পাওয়ার দিকে চালিত করে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
মহালেখক হুমায়ুন আহমেদ এর নানা বাড়ী নেত্রকোনার মোহন গঞ্জে হবার কারনে তিনি এই অঞ্চলের ভাষা নিয়ে বা ভাষা ব্যাবহার করে অনেক উপ্ন্যাস লিখেছেন । সুতরাং পাঠক হিসেবে আমরাও তার সাথে কিছুটা হলেও পরিচিত । আপনার এই লেখাটা খুব ভালো লাগল । চলতে থাকুক...
---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
আপনার 'মহালেখক' টার্মটি বড়ো ভালো লাগলো!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
গৌতম... দেরীতে পড়লাম... কিন্তু ভালো লাগলো খুব... চলুক সিরিজ... কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করছি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাবীর লেখাও পড়লাম। গুড।
কৌতুহলের সাথে আরেকটি জিনিস আশা করছি- কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে সেটি ধরিয়ে দেওয়ার বা লেখাসম্পর্কিত কোনো মন্তব্য থাকলে দ্বিধাহীনভাবে তা জানানোর।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
একটু আগে আইলাম্বর শব্দের কাহিনী জানলাম। শব্দটি আসলে 'আসিলাম আবার' শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। 'আসিলাম আবার'কে মোহনগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় 'আইলাম আবার' বলা হয়। সেটাকে একসাথে বললে 'আইলাম্বার' এবং সেখান থেকে 'আইলাম্বর' শব্দের উৎপত্তি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন মন্তব্য করুন