মেজাজ কতটা খারাপ হয়েছিলো...

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/০৭/২০০৮ - ৩:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কেবল পৃষ্ঠা নম্বর বসানো বাকি। এমন সময় বুয়া বললো, বাজার করতে হবে।

কল্যাণদা বাসায় নেই, রিপন ভাইও নেই। ফলে আমাকেই বাজার করতে হবে। আবার সন্ধ্যের মধ্যে পৃষ্ঠা নম্বর বসিয়ে ১০০ পৃষ্ঠারও বেশি প্রিন্ট করতে হবে বাইরে থেকে। এ সময় বাজারে যাওয়া ঠিক হবে না। বুয়াকে বললাম- যা আছে, তাই দিয়ে চালান।

বাসায় সবই ছিলো, একটু একটু। রাতের খাবারটা হয়ে যেতো। কেবল ঘাটতি পড়লো লবণে। ফলে বাজারে যাওয়ার জন্য নামতেই হলো। নেমে ভাবলাম- এক কাপ চা খেয়েই যাই!

নামগোত্রহীন এক লবণের প্যাকেট কিনে যখন বাসায় আসলাম, তখন অলরেডি কল্যাণদা-রিপন ভাই সবাই এসে গেছে। আমি বুয়ার হাতে লবণ দিয়ে কম্পিউটার চালু করলাম। তখন বাজে বিকেল চারটা।

ওই বসা অবস্থা থেকে উঠলাম রাত দুটায়। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, হতাশাগ্রস্ত। কাল থিসিসের ড্রাফট পেপার জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু হার্ড ডিস্কে গণ্ডগোল লাগায় সে সম্ভাবনা শেষ। বিকাল চারটা থেকে রাত দুটা বাজলো সেটা ঠিক করতে করতে। হার্ড ডিস্ক তো ঠিক হলো, কিন্তু ফাইলপত্র সব গায়েব! এতো রাতে ম্যাডামকে ফোন করা কি ঠিক হবে?

অনুনয়-বিনয় করে এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া হার্ড ডিস্ক দেখিয়ে (ম্যাডাম বিশ্বাস করবেন না বলে হার্ড ডিস্ক খুলে নিয়ে গিয়েছিলাম সত্যি সত্যিই। তিনি কী বুঝলেন কে জানে! বললেন আসলেই তো হার্ড ডিস্কের অবস্থা খারাপ। তখন হার্ড ডিস্ক কিন্তু পুরোপুরি ঠিক ছিলো) ১৫টা দিন সময় বাড়ালাম।

পুরো ডেটাসেট তৈরি করে এসপিএসএসে অ্যানালাইসিস করে তাড়াহুড়া করে ১৪ দিনের দিন মাস্টার্সের যে থিসিসটা দাঁড় করালাম, এর চাইতে বাজে প্রডাক্ট পৃথিবীতে আর কেউ তৈরি করতে পারবে না। কিন্তু উপায় নেই! কালকের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ড্রাফট না, ফাইন্যাল। কঠোর সংকল্প নিয়ে চেয়ার বসলাম, বাসায় কিছু না থাকলেও আমি বাইরে যাবো না। দেখি আমার কম্পিউটারে কে এসে বসে গুতাগুতি করে!

সন্ধ্যার দিকে ভাবলাম- গোসলটা সেরেই ফেলি। বুয়া রান্না করছে। আমি বললাম- খালা, কেউ যেন কম্পিউটারে না বসে খেয়াল রাইখেন তো!

গোসল সেরে বেরুলাম। বুয়া ততক্ষণে রান্না করে চলে গেছে। দরজা পুরোপুরি খোলা। রুমে গিয়ে চুলটুল আঁচড়িয়ে জামাকাপড় পড়ার সময় খেয়াল করলাম ঘড়িটি নেই; জাস্ট মিনিটখানেকের মধ্যে অসম্ভব তীব্রভাবে জানলাম- সিপিইউটিও নেই। তারগুলো পড়ে আছে টেবিলের নিচে, মনিটরটিও আছে যথাস্থানে, আছে মাউস এবং কিবোর্ডটিও।

নিজেকে কেমন যেন খুব খালি মনে হলো। মোবাইলটা বের করে ম্যাডামকে বললাম- আপা, আমার পক্ষে এ বছর থিসিস জমা দেওয়া সম্ভব না। আগামী আগামী বছর কোর্স কমপ্লিট করবো।

ম্যাডামকে সত্যিকার অর্থে জানলাম তারপরদিন। নিজে সমস্ত রিস্ক নিয়ে, ডিরেক্টরের সাথে দেখা করে, ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার জন্য, শুধু আমার জন্যই আরো ১৫টা দিন সময় বের করলেন। ঠিক করলেন স্পেশাল ভাইবার ব্যবস্থাও!

আর আমি? ১৫টা দিন একই কাজ আবার করলাম তৃতীয়বারের মতো- এমএসঅ্যাকসিসে ডেটা ইনপুট, সেখান থেকে এসপিএসএসে কনভার্ট, লিটারেচার রিভিউ, ডেটা অ্যানালাইসিস, রিপোর্ট রাইটিং এবং প্রিন্ট আউট। বোধশক্তিহীন আমি অন্তত ১৬-১৭ ঘণ্টা করে বসে ছিলাম কাঠের ওই শক্ত চেয়ারটিতে।

এতো বেশি কষ্ট করে আমার মতো এতো বাজে মাস্টার্স থিসিস করতে পারে নি আর কেউ।


মন্তব্য

সবজান্তা এর ছবি

শুনতেই মুখ তিক্ত হয়ে যাচ্ছে, আর এরকম ঘটনার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আপনার অভিজ্ঞতা না বললেও বুঝতে পারছি।

এখন অবস্থা কী ? গ্রেড কী দিয়েছে ?


অলমিতি বিস্তারেণ

গৌতম এর ছবি

আসলে একটি ভুল হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০০৩ সালে। নতুন কম্পিউটার কেনার পর এটি লিখে রেখেছিলাম। মূল লেখায় সালটি দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।

আমি যে তখন কী অবস্থায় ছিলাম, সেই অভিজ্ঞতা এখন মনে করতেও ভয় পাই। গ্রেড ভালোই দিয়েছিলো- এ+

আপনাকে ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমিই ভালো... লেখাপড়া জিনিসটাই করলাম না...
যদিও প্রতিবছরই অন্য কারো কারো অন্তত একটা না একটা এসাইনমেন্ট পেপার লেইখা দিতেই হয়... এই বছরই বউয়ের তিনটা মাস্টার্সের পেপার কইরা দেওনের পরে কানে ধরছি... এই জীবনে আর না...
আপনের জন্য সমবেদনা ছাড়া আর কিছুই নাই।
আছেন কেমন সেই প্রশ্নও আর জিজ্ঞেস করার দরকার মনে করছি না। ভালো থাকবেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

গৌতম এর ছবি

ইশ,, আপনাকে আগে পেলে ভালো হতো। এতো হাঙ্গামা পোহাতে হতো না আমার। আপনাকে দিয়ে মাস্টার্সের থিসিসটা করাতাম। করে দিতেন না?? (হাসি, মন্তব্যে ইমোটিকন ক্যামনে দেয় জানি না)
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আলমগীর এর ছবি

গৌতম দা
আসেন কোলাকুলি করি।
আপনি আমার আগের লেখাটা পড়েন নি। তাহলে অন্তত এত বিপদে পড়তে হত না। আমার ক্ষতি ১৫ দিনে পোষাণোর মতো না। সহানুভুতি রইল।

গৌতম এর ছবি

আলমগীর ভাই, কোলাকুলি কবুল।

আসলে এই ঘটনাটা ২০০৩ সালের। লেখায় ভুলক্রমে উল্লেখ করা হয় নি। আপনার লেখাটা পড়ে মনে হলো- এ সম্পর্কিত একটি ঘটনা আমি লিখে রেখেছিলাম। পরে সেটিকে খুঁজে বের করে এখানো পোস্ট দিলাম।

সুতরাং এই লেখা প্রকাশ হওয়ার পেছনে মূল প্রেরণা আপনার।

সহানুভূতির জন্য ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

আহারে..

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

গৌতম এর ছবি

হুম... সে সময় আমি নিজেকেই নিজে বলেছিলাম - আহারে!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

কীর্তিনাশা এর ছবি

সত্যিই আমারো বলতে ইচ্ছা হচ্ছে - আহারে! তবে আপনার ফাইটিং স্পিরিটটাও দারুন লাগলো।
-----------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

গৌতম এর ছবি

এটাকে ফাইটিং স্পিরিট বলছেন! আমি তখন বুঝেছিলাম- পলায়নবাদী মনোবৃত্তি কাকে বলে! নিঘাত পেটের ধান্ধায় আমি কাজটা শেষ করেছিলাম, না হলে আমার ডিগ্রিও হতো না, আর আজকে চাকরি করে খেতেও পারতাম না।

আপনাকে ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍কী যে খারাপ লাগলো পড়ে!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

গৌতম এর ছবি

বুঝেছি! আপনি পুরোপুরি সন্ন্যাসী হতে পারেন নি।

সন্ন্যাসীদের ভালো লাগা - খারাপ লাগা থাকতে নেই। হা হা হা
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বছর চার-পাঁচেক আগে একবার হার্ড ডিস্কের আকস্মিক মৃত্যু ঘটার পর শিক্ষা হয়েছে। সেই থেকে নিয়মিত ব্যাক আপ করি সিডি বা ইউএসবি ড্রাইভে। পদ্ধতিটা ভেবে দেখতে পারেন, অন্তত এরকম অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হবে না। হার্ড ডিস্ক অসুস্থ হোক বা কমপু চুরি যাক, দরকারি জিনিস আপনার পকেটেই।

অনলাইন ডকুমেন্ট স্টোরেজও আরেকটা কার্যকর পদ্ধতি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

গৌতম এর ছবি

এখন থেকে ঠিক করেছি প্রতি মাসে একটি করে ব্যাকআপ রাখবো। আর অনলাই ডকুমেন্ট স্টোরেজ পদ্ধতিটাও ভেবে দেখতে হবে। ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

গৌতম এর ছবি

আবার জিগায়!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

দৃশা এর ছবি

ধুর ওই সময় পার হইয়া গেছে। ওইটারে নিয়া দুঃখ না কইরা আসেন বরং আপনার গ্রেডের সফলতা লইয়া জাশনে-জুলুস করি।

দৃশা

গৌতম এর ছবি

দুঃখ করছি না, জাবর কাটছি। তবে মনে হলে এখনো বুকের রক্ত হিম হয়ে আসে!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রায়হান আবীর এর ছবি

a+ পাইছেন সেইটাই বড় কথা।

---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল

গৌতম এর ছবি

হা হা হা... কত ত্যাগ-তিতিক্ষা আর কষ্টের বিনিময়ে!! ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।