এই ঢাকা শহর অস্থির কিনা আমার জানা নেই। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারি, অস্থিরতার আন্তনগর ট্রেন আমার মধ্যে সেই যে চলা শুরু করেছিলো কিছুদিন আগে, তা এখনো থামছে না। সম্ভবত থামার মতো কোনো স্টেশন পাচ্ছে না। কিন্তু আমাকে যে থামতেই হবে!
এই শহরটার প্রতি আমার খুব মায়া। এই শহর আমাকে অন্যচক্ষু দিয়েছে, এই শহর আমাকে গতি দিয়েছে, এই শহর আমাকে মানুষ দেখিয়েছে, এই শহর আমাকে স্বস্তি দিয়েছে, আর এই শহর আমাকে দিয়েছে অন্য এক বিচ্ছিন্নতাবোধ।
কেমন যেন ঘোরের মধ্যে কেটে যাচ্ছে দিনগুলো। যে হাতে সোনা ফলার কথা, সেখানে আবিষ্কৃত হচ্ছে কেবলই প্রমিথিউসের শেকল; ওই শেকল আবার লোহার নয়, পাথরের তৈরি। প্রতিটা দিন শুরুর সময় একটু একটু করে খুললেও সন্ধ্যাকালে ঝপ করে পুরো শিকলই বসে যায় পুরো শরীরের ওপর।
অসংখ্য রাত ঘুম হচ্ছে না। বাসার ছাদটা চমৎকার। কিন্তু রাতে বন্ধ থাকে। কোনো একদিন বাড়ির মালিকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে উঠেছিলাম। কালো আকাশ জুড়ে অসংখ্য তারা। এরই মাঝে কেউ যেন বোধ দিয়ে গেলো- এই শহরটা দিন দিন অস্থির হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য।
শহরের মানুষ শহরের মতো। আমাকে তৈরি করা হয়েছে গ্রামের প্যাক-কাদা দিয়ে। উপরে ঝালাই করা হলেও মাঝে মাঝে রঙ-আস্তর বেরিয়ে আসল স্বরূপ প্রকাশ করে দেয় নিজের কাছেই। নিস্তব্ধতা তখন সঙ্গী হয়। নির্জনতা তখন বন্ধু হয়।
যে চাকরিটা করি, সেখানেও আমার অস্থিরতা। জাগতিক উপকরণ শারীরিক অস্থিরতা কমিয়ে দেয় সত্য, কিন্তু মানসিক অস্থিরতাকে কি উপেক্ষা করে? হয়তো। হয়তো এই চাকরিটা ছেড়ে দিবো কিছুদিনের মধ্যেই। হয়তো ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি সহসাই। হয়তো আরও নির্জন কিন্তু খুব কাছের গাছগুলোর সাথে দিন কাটানো শুরু করবো আর মাত্র কটি দিন পর থেকেই।
তবে এর জন্য আরেকটা চাকরি লাগবে। পেটের যন্ত্রণার কাছে ক্যান্সারের শারীরিক ব্যাথা কচ্ছপের গতিসম। আমার শহর নেত্রকোনার এক কামলামালিক আমাকে কামলা নিতে চান। আমি ভাবি, নিজের শহরটাকে রেখে দিই নিজের কাছে। নিজেকে স্লো করে ফেলি আস্তে আস্তে। কামলা খাটতে তাই আপত্তি করতে মন চায় না। কিন্তু বেতনটা মনমতো না। এখন যা পাচ্ছি তারও কম। তবে সেটা বোধহয় সমস্যা হবে না। ওখানে টাকা দিয়ে জীবন চলে না। জীবনের জন্য কিছু টাকার দরকার হয়।
আজ নেত্রকোনা যাচ্ছি। হয়তো এখনকার অর্ধেক বেতনই পাবো, হয়তো এসিটা মিস করবো, হয়তো টয়লেট থেকে ভেসে আসবে না লেবুর গন্ধ, হয়তো পাঁচতলা সিঁড়ি ভাঙতে হবে দিনের কয়েকবার। কিন্তু হয়তো অনেকটাই আলো পাবো, বাতাস ছুঁয়ে যাবে মাঝেমাঝেই, হয়তো চাইলেই নিজেকে কাট অফ করে রাখা যাবে সমস্ত গতিময়তা থেকে। হয়তো বা বড়জোর ভাতে টান পড়বে কিছুটা; কিন্তু পেট চলবে তো! তাই সই।
কামলারও দাবি-দাওয়া থাকে। আজ সন্ধ্যায় মালিকপক্ষ-শ্রমিকপক্ষ আলোচনায় বসবে। সব টার্মস-কন্ডিশন মিলে গেলে ঢাকা ছাড়া এখন, এই আমার, সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই ঢাকা শহর আমাকে প্রতিদিন মারে, প্রতিদিন বাঁচায়। আমি বলি, একেবারেই মেরে ফেলো না! নইলে একেবারেই বাঁচিয়ে তুলো না! এতো খেলো কেন?
চাকরি খুঁজতে আমি আজ নেত্রকোনা যাচ্ছি। তারপর মাকে দেখতে আমি আজ বাড়ি যাচ্ছি। আজ আমার ছুটি। একদিন নেত্রকোনায় আমার সব ছুটি হবে।
মন্তব্য
আপনার বাসা কি মোহনগন্জ?
গৌতম,
আপনার অনুভুতিটা বড় আপন হয়ে বাজল।
যেখানেই থাকবেন, ভাল থাকবেন।
আপনার প্রানের শহর, প্রানেই রইবে।
শুভকামনা--
গৌতম'দা আপনার প্রতি শুভকামনা রইলো।
যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন। আর সচলে আমাদের সাথেই থাকুন।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আহারে ছেলেবেলা !
নেত্রোকোনায় পাঁচতলা সিঁড়ি ভাঙতে হবে কেন রে ভাই ? ওখানে কি একতলা দোতলা থাকতে নেই ?
আমি বলে দিচ্ছি বেশীদিন ওখানে থাকা হবেনা। সবই ইমোশন ।জীবন ওখানে বড় বেশী একঘেয়ে - বৃদ্ধের জীবন ।গতির স্বাদ একবার যে পেয়েছে সে কি পারে গতি ছাড়া পড়ে থকতে ?
(আগামী)
Lina Fardows
যাচ্ছি আমি ঊড়ে
দূরে বহু দূরে
শহরটাকে ছেড়ে
গাং শালিকের তীরে
সবুজ শ্যামল নীড়ে
এই শহরের ভীড়ে
আসব আমার ফিরে
এই কামনা করে - অনেক অনেক শুভেচ্ছা
Lina Fardows
বুঝতেই পারছি আপনার ডিসিশনটা প্রচণ্ড ইমোশনাল। তবে যাই হোক আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
বড় বেশি আপন লেখা! কোথায় যেন বিষণ্ণ সুর তবুও, এই যে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন, এই তীব্র পিস্টনের গতি বা ঘূর্ণনের একটা ছাপ মগজে গেঁথে যাবেই। হয়তো ধীরে ধীরে নেত্রকোনায় প্রশমিত হবে তা, ফিরে আসবে মন্থরতম আশ্চর্য সুর!
আমারও এই ঢাকাতেই বেড়ে ওঠা, এর বাইরে কোথাও স্বস্তি পাই না!
===
অনীক আন্দালিব
http://www.jochhonabilashi.blogspot.com
শুভ কামনা রইল। আপনাকে উত্তম ঝাঝা।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
অস্থিরতা কাটিয়ে চলে যাক মন সেই কাঙ্খিত সজীবতায়...
কেউ মায়ের কাছে যাচ্ছে শুনলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হায়াল্লা...আমি তো ধরে নিছিলাম গৌতম'দাও বুঝি আমাদের মতো ফুরায়া গেছেন বা ফুরায়া যাওয়ার পথে আছেন...
এখন তো দেখি লক্ষণ ভালো না (এজন্যই বুড়োহাবড়া মুরুব্বিরা বলেন, হাতী মরলেও লাখ টাকা)...
সিদ্ধার্থ তো মাশাল্লা দুনিয়ার রুপযৌবনজ্বালা সব চেটেপুটে ঠান্ডা হয়ে তারপর রওনা দিছিলো (তাই নিয়েই হ্যার চ্যালাচামুণ্ডারা কত্তো ভাব দ্যাখায়)...
গৌতম'দারে স্যালুট...বড়ভাইয়ের পদধুলি নিতে মঞ্চায়...
কন কী?!
যোগাযোগ রাইখেন রে দাদা!
ভালো থাইকেন।
মন খারাপ লাগলো। তবু, আপনার জন্য ভালো চেয়ে গেলাম সবদিক থেকেই। লেবুর গন্ধ কম হোক, তবু নিজের ছন্দ খুশি দিক।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
অসাধারণ লাগলো।
যেখানেই যান খালি ব্লগ লেখা বন্ধ কইরেন না। আপনার লেখায় কিছু একটা আছে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
বাড়ী ফেরা শুভ হোক
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
যেখানেই যান, সচল থাকুন, সচল রাখুন।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
- বস। এইটারে কয় উল্টা দৌঁড়!
মোটা বেতন দিয়ে সব হয় না। কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়া কী করবেন? নিজের প্রয়োজন মোতাবেক থাকলেই হয়। এসির বাতাস কয়েক ঘন্টা খাইয়া লাভ কী কন? বাকীটা সময়তো সেই ধূলাধূয়াময়সীসাযুক্তদুষিতবায়ু সেবন। তার চাইতে বাঁচেন বস। খালি চোখ খুইলা নিঃশ্বাস ফেলার নামই বাঁচন না। একটু নড়েন চড়েন। আর কারো কথায় নিজের সফলতা ব্যর্থতা ডিফাইন কইরেন না। মনে রাইখেন, হাজার হাজার মানুষের লগে গুঁতাগুঁতি করা ইন্দুর দৌঁড়ে ফার্স্ট হইয়া লাল ফিতা টাচ করার নামই বিজয় না, সফলতা না। সফলতার সংজ্ঞা আসলে অন্য। এই সংজ্ঞা থাকে আপনের চামরার অনেক গহীনে!
আপনার উল্টো দৌঁড়ে শুভকামনা জানাই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
"খালি চোখ খুইলা নিঃশ্বাস ফেলার নামই বাঁচন না।"
"হাজার হাজার মানুষের লগে গুঁতাগুঁতি করা ইন্দুর দৌঁড়ে ফার্স্ট হইয়া লাল ফিতা টাচ করার নামই বিজয় না, সফলতা না।"
একশো ভাগ একমত।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
গৌতম,
দূষণমুক্ত বাতাসে শ্বাস, পরিষ্কার আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে দেখা মেঘ,সূর্য,চাঁদ,তারা- প্রিয় গাছগুলিতে মুকুল ধরেছে দেখা--এর সাথে কোনো রাজ-সম্পদের তুলনা হয় না। আর মায়ের হাতের রান্না? তার সবই পরমান্ন!
অনেক শুভকামনা রইলো। দেখবেন সব ভালো হবে।
সচলে নিয়মিত লিখবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কিন্তু যারে কেন্দ্র কইরা ফেসবুকের রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস পাল্টাইলেন, তার খবর কী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
------------------------------------------
----------------------------!
---------------------------------------------------------
আমরা যারা শিখিনি চাষবাস,ফসলের গীত
গুলালিতে পাখি হত্যা
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
কেন যেন আপনাকে খুব হিংসে হচ্ছে। অনেক, অনেক শুভকামনা।
বিষাদময়তাই জীবনের অকৃত্রিম সুর, বাকি সব কৃত্রিম..!
আর এজন্যই মানবিক বোধসম্পন্ন প্রতিটা মানুষের গহীন বুকে এই সুরটা এখনো দোলা দেয়।
গৌতম, মানুষের জীবনের গতিপথ তো আসলে কোন নির্দিষ্ট দিকবলয়ে আটকা থাকে না। জীবন জীবনের জন্যই একটা না একটা পথ তৈরি করে নেয়। আপনার এই পথও এরকমই। বরং বিষাক্ত বাতাস ছেড়ে একটা মুক্ত প্রতিবেশে আপনার এই প্রত্যাবর্তন খুবই ইতিবাচক। শুধু একটাই শর্ত, যখন যেখানে যেভাবেই থাকি না কেন, ভালো থাকতেই হবে। সেই কামনা রইলো।
কেবল বিচ্ছিন্নতা চাই না.....
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
যা-ই করুন, মনের আনন্দে করুন। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
আর সচল থেকে দূরে সরে যাবেন না! খবরদার!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
সবাইকে ধন্যবাদ। কোনো কারণে ঢাকা শহর আমার ভালো লাগছে না। উল্টা দৌড় কিনা জানি না, পলায়ন কিনা জানি না, রণে ভঙ্গ দেয়া কিনা জানি না; কিন্তু সত্য হলো এই শহরে টিকতে ইচ্ছে করছে না।
কিন্তু সব আমার ওপর নির্ভর করে না। যেখানে গিয়েছিলাম সেখানে বেতন কম, অনেকটাই। এখনও আলোচনা চলছে। হয়তো একদিন হুট করেই চলে যাবো।
তবে অন্য কাজকর্ম ঠিকই করে যাবো। সচলে তো আছিই।
পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ছুটি কাটিয়ে 'ফিরে' আসতে দেরী করবেন না কিন্তু
এখন ২ বছরের পুরোনো এই লেখাটা ফিরে দেখতে কেমন লাগছে? বেশী বেতনের আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ...নেত্রকোনাতেও যাওয়া হলো না...ঘরে বউ এলো...তবে...এখন?
নতুন মন্তব্য করুন