২৪.
কোথাও বেড়াতে গেলে শেষ দিনটাতে আমি খুব বিষণ্নিত হয়ে যাই। মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে- আজই শেষ দিন!
রাঙ্গামাটিতেও তার ব্যতিক্রম হলো না। এবার এরকম মনে হওয়ার একটা বিশেষ কারণ আছে। ঢাকায় ফিরবো ঈদের ঠিক পরদিন। রান্না করেন যিনি, সেই খালার আসতে আসতে আরও এক সপ্তাহ! আর ঢাকার রেস্টুরেন্ট তো সব-ই বন্ধ থাকে এসময়টায়! গিয়ে খাবো কি! ঈদের দিন সবাই দাওয়াত করে, কিন্তু ব্যাচেলদের যে আসলে ঈদের পরের দিনগুলোতে দাওয়াত করতে হয়- এই সামান্য বুদ্ধিটা এখনো কেন যে মানুষের মাথায় আসে না! এই চিন্তায় শেষ দিনটা এক ধরনের 'চিন্তা'য়ই কাটলো। হাতে পর্যাপ্ত সময় আর টাকা থাকলে না হয় রাঙ্গামাটিতে কয়েকটা দিন কাটানো যেতো।
২৫.
শেষ দিনে আমাদের প্রথম গন্তব্য পর্যটন, আর সাথে ঝুলন্ত সেতু। পর্যটনে যাওয়ার পরই বুঝলাম এখানে না থেকে শহরের হোটেল সুফিয়াতে থেকে আমরা কী ভুলটাই না করেছি! এক্কেবারে প্রকৃতির মাঝে হোটেল, পাহাড়ের উপর, পাশে কাপ্তাই লেক। শহর থেকে দূরে- নীরব, নিস্তব্ধ। ভাড়াটাড়াও দেখলাম খুব একটা বেশি না- সামান্য একটু বেশি। তা বেড়াতে এসেছি- ওটুকু কনসিডার করাই যায়! যাক, শেখা হলো, ভবিষ্যতে এলে এখানেই থাকবো। সমস্যা একটাই- শহরটা একটু দূরে বলে তড়িত প্রয়োজনে কিছু কেনাকাটা করা যায় না!
আমরা ক্যালেন্ডার বা পত্রপত্রিকায় নানা ফিচারে যে ঝুলন্ত সেতুটি দেখে থাকি- সেটি এই রাঙ্গামাটির। অথচ এটি কিন্তু পুরোপুরি ঝুলন্ত নয়। মাঝখানে দুটো খুঁটি আছে। সত্যিকারের ঝুলন্ত সেতু দেখতে হলে যেতে হবে বান্দরবানে- মেঘলা স্পটে। ওটা ছোট, কিন্তু পুরোপুরি ঝুলন্ত। এই ঝুলন্ত সেতুতে উঠে একটা মজা করা যায়- দু'চারজন হলে পুরো সেতুটাই আস্তে আস্তে ঝুলানো যায়। আমরাও একটু একটু সেতু ঝুলালাম, নিজেরাও ঝুললাম।
দুপুরে পর্যটনে খেলাম- বেশ আয়েশ করে। কাপ্তাই লেকের কাতল মাছ ভেজে দিতে বললাম। ডালটা চমৎকার ছিলো। এরকম টাটকা জিনিস!
ঈদের দিন ঝুলন্ত সেতু ও আশেপাশের এলাকায় বেড়াতে আসা শিশুকিশোরদের দল
২৬.
শেষের দিন যেহেতু, মোটামুটি উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা করছি। পর্যটন থেকে শহরে আসার পথে একটা কালীমন্দির দেখলাম, বেশ অনেক বছর আগের স্থাপনা। এদিকে তবলছড়ি এসে কেনাকাটার ইচ্ছা জাগলেও মনমতো কিছু পেলাম না। রাঙ্গামাটি-বান্দরবানের কাপড় আগে খুব পছন্দ হতো, এখন পছন্দটা বদলে গেছে। কাপড়ের মান, ধরন ও ডিজাইন ঠিক আগের মতোই আছে বলে হয়তো বর্তমানের এই না-পছন্দ! আদিবাসিদের এটা কি ঐতিহ্যকে ধরে রাখা নাকি সময়ের সঙ্গে ডিজাইন পরিবর্তন করতে পারার অক্ষমতা- ঠিক বুঝতে পারি না।
রাঙ্গামাটি শহরের শ্রী শ্রী রক্ষা কালী মন্দির
২৭.
ঘুরতে ঘুরতে গেলাম রাজবনবিহার। যাওয়াটাই সার! ভিতরে ঢুকতে পারলাম না। প্রার্থনার সময়। ভিতরে যেতে হলে ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করতে হবে। ততোক্ষণে সন্ধ্যা নেমে যাবে। রাজবনবিহার ছাড়িয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যেখানে থাকেন, সেই আশ্রমের দিকে এগুতে থাকলাম। অদ্ভুত সুন্দর জায়গা! পাহাড় আর বনের মধ্যে ছড়ানো-ছিটানো তাদের বাসস্থান। বেশ শান্তির, ঠাণ্ডার, আরামের! এরই মাঝে অনেকগুলো বানরের কিচিরমিচির শুনে সামনে এগিয়ে গেলাম। সে কী অবস্থা! অনেকগুলো বানর- ঘুরছে-ফিরছে-খাচ্ছে। ছবি তোলার চেষ্টা করলাম- কিন্তু বানরগুলো মনে হয় দুই-মেগাপিক্সেল তেমন একটা পছন্দ করে না।
তাও অনেক কষ্ট করে একটা বানরে ছবি তুললাম, চালের উপর বসেছিলো
২৮.
সেই প্রথমদিন থেকেই মাথায় একটা শব্দ ঘুরছে- শিংঘবা। আমরা যে হোটেলটাতে আছি, তার ঠিক সামনেই একটা রেস্টুরেন্টের নাম শিংঘবা। এর অর্থটা আমাদের হোটেলের কেউ বলতে পারলো না। এর মধ্যে দু-তিনবার ঘুরেও এসেছি রেস্টুরেন্টটা থেকে- ঈদের কারণে বন্ধ। অদ্ভুত শব্দটা মাথায় ঘুরছে তো ঘুরছেই!
রাত হয়ে গেছে, পরদিন সকালে উঠেই ছুট লাগাতে হবে ঢাকাপানে। হোটেলে ফেরার আগে আবার ঢু মারলাম শিংঘবায়। একজনকে পাওয়া গেলো। তিনি জানালেন- শিংঘবা হলো চাকমা শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো বৈঠকখানা বা ড্রয়িংরুম।
আমরা শিংঘবাতে চা খেতে চাইলাম।
হোটেলে ফেরার পরও মাথার ভেতরে শিংঘবা নাচতে শুরু করলো। যায়-ই না। মাথার মধ্যে কে যেন বারবার শুধু শিংঘবা শিংঘবা বলে যাচ্ছে! বিরক্ত লাগছে। একসময় দেখি শিংঘবা নিয়ে ভাবতেও শুরু করেছি। শিংঘবা, বৈঠকখানা, ড্রয়িংরুম- যাই বলেন না কেন, এটা আসলে শেষ ও শুরুর মিলনস্থল। কোনো ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আপনাকে যেমন শিংঘবা মাড়িয়ে যেতে হবে, তেমনি বেরুবার সময় শিংঘবাই আপনাকে ঠেলে বের করে দেবে। মমিনকে এড়ানোর উপায় নেই!
রাঙ্গামাটিতে শিংঘবার সাথে দেখা হলো আসার সময়। হয়তো প্রতিটা ভ্রমণেই শিংঘবারা শেষের সময়ই ঠেলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় বাইরের আগন্তুকদের। রাঙ্গামাটি কি এটা প্রতীকের মাধ্যমে কিন্তু হাতেকলমে বুঝিয়ে দিলো? (শেষ)
মন্তব্য
ছবিগুলো সুন্দর এসেছে । খেখাটা উপভোগ্য হয়েছে ।
নির্ভানা
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, নির্ভানা।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
প্রত্যেকটা ভ্রমণ নিয়েই একটা পিডিএফ বই হতে পারে। তারপর নিজের ব্লগে রেখে দিলেন, যে চাইল একবারে পড়ে নিল। ভেবে দেখতে পারেন।
এটা অবশ্য একটা ভালো বুদ্ধি। করা যাবে...
কিন্তু পিডিএফটা কোথায় রাখবো সেটাই ভাবছি। নিজের ব্লগ বলতে ব্লগস্পটে একটা অ্যাকাউন্ট আছে- ওখানে কেউ যায় না। আমি নিজেও যাই কালেভদ্রে। সেখানে রাখলে কেউ দেখবে না।
আর ওটা করে আসলেই কি কোনো লাভ আছে? ভাবছি...
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নিদেনপক্ষে নিজের ব্লগে পুরো ভ্রমণের একটা বৃত্তান্ত থাকলে অনেকদিন পরে হয়তো আপনারও পড়তে ভালো লাগবে।
আমি প্রত্যেকটা ভ্রমণ কাহিনীকেই একেকটা ডকুমেন্টারি হিসেবে দেখি। যদি কখনো ওখানে যাই, বা ঐ স্থান নিয়ে কাজ করি (বা কেউ করে) তাহলে যাতে লেখাটা তার কাজে লাগে, সেই বিবেচনাটা করি
আহ্ একি অপরূপ ছবিরে ভায়া! লেখায় ইট্টুসখানি কাব্যিকভাব জুড়ে ছবি কাব্য শুরু করুন। অপেক্ষায় রইলাম।
অনুমতি মিলে তো খানিকটা পাকনামি করি, পাঁচ নম্বর ছবিটা এত কষ্ট করে তুলে কিনা নাম রাখলেন বানরে ছবি! আর নয় নম্বর ছবিটার শিরোনাম মনঃপুত হলে 'অনন্ত' রাখতে পারেন।
এস হোসাইন
----------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"
ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
এই জায়গায় আমরা ছুডোকালে ঘুরতে গেছি। ঝুলন্ত সেতু পার হইয়া নৌকায় কৈরা একটা ঝরনা দেখতে গেছিলাম। বিয়াফক মজা হইছিল।
লিখা ভাল্লাগছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এই বিয়াফক মজাগুলান বড় হইলেও করতে মজা লাগে! আমি এই সেদিন গিয়াও সেতু দোলাইলাম!
লেখা ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালু লাগল।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ গৌতম।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ধন্যবাদ ফিরোজ ভাই। ভালো থাকবেন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ছবিগুলি অন্ধকার লাগতেছে।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
মোবাইলের দুই মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে তোলা। সো, এর চেয়ে ভালো আসে না। ক্যামেরা নাই
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আমারো নাই
তবে মোবাইলে এইবার ৫ মেগাপিক্সেল পাইছি ...
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আপনারা যারা ছবির ব্যাপারে ভালো জানেন, তারা পোস্টপ্রসেসিং নিয়ে মাঝেমাঝে লিখলে ভালো হয়। ফটোশপে ছোটখাট কিছু কাজ করার ফলে যদি ছবির মান বাড়ে, তাহলে তো ভালোই। ক্যামেরার কারণে ঘাটতিটা তাহলে কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
লেখা, ছবি ভালো লাগলো।
নৈশী।
ধন্যবাদ নৈশী। ভালো থাকবেন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ভালো লাগলো। ছবিগুলো সুন্দর এসেছে!!! রাঙ্গামাটি খুব মিস্ করি।
ধন্যবাদ জুম্ম। মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে তোলা। এর চেয়ে ভালো আসে নি। রাঙ্গামাটি খালি চোখে এর চেয়ে অনেক সুন্দর।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
চমৎকার লাগলো।
মধুবন্তী
ধন্যবাদ মধুবন্তী।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
Osadharon. Amra dhannyo apnar moto friend peye jar jonno amra onek kichhu jene nichchi.
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন মন্তব্য করুন