প্রাপ্তবয়স্করা চাইলে যেকোনো সময় নিজেদের মূল কাজ বদলে ফেলতে পারে। আজকে এই কোম্পানির চাকরি ভালো না লাগলে অন্য কোম্পানির চাকরি খুঁজতে পারে; এই ব্যবসা ভালো না লাগলে অন্য ব্যবসা বা ব্যবসা বাদ দিয়ে চাকরির খোঁজে লেগে যেতে পারে; এই মালিকের শ্রমিক না থাকতে চাইলে অন্য মালিকের সন্ধান করতে পারে। কিংবা বেকার থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে নিম্নযোগ্যতার চাকরিও নিয়ে নিতে পারে। এই পরিবর্তনের ইচ্ছেটা যদিও অবস্থান-সময়-অর্থ ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল; তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের ইচ্ছেটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। যেখানে মন টিকে না, সেখান থেকে সরে এসে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা চালায় সবাই। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি অন্যতম পার্থক্য হলো, শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই। কারণ তারা শিশু, বয়স কম। তারা চাইলেই পড়ালেখা বাদ দিয়ে অন্য কিছু শুরু করে দিতে পারে না; পড়ালেখা বাদ দিয়ে দিতে পারে না বা বিদ্যালয় পছন্দ না হলে সেটাকে বদলে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যেতে পারে না। অর্থনৈতিক বা অন্য কারণে কোনো শিশুর পড়ালেখা বাদ দিতে হলে বা বিদ্যালয় বদলাতে হলে সেটা অভিভাবকই নির্ধারণ করে দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো একজন শিক্ষার্থীর যদি বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য কিছু করতে বা বিদ্যালয় বদলাতে ইচ্ছে করে, তাহলে সেটাকে অনধিকার চর্চা হিসেবেই দেখা হবে। অভিভাবকদের মনে করতে পারেন সন্তান পাগলামো শুরু করেছে- ধরে শক্ত মার দেয়া দরকার। নিদেনপক্ষে বকাবকি তো চলবেই। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা যদি বয়স বা অভিভাবকসুলভ প্রেজুডিস বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করা বা না করা সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেয়; কিংবা না দিলেও অন্তত তাদের স্বাধীন মতামত শুনতে চায়, তাহলে পরিস্থিতিটা কী হতে পারে? আজকে যদি শিক্ষার্থীদেরকে বর্তমান বিদ্যালয় বাদ দিয়ে অন্য একটি পছন্দমত বিদ্যালয় বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে তাদের কতোজন বর্তমান বিদ্যালয়ে যাবে? কিংবা তাদেরকে যদি পড়ালেখা বাদ দিয়ে যা ইচ্ছে করতে বলা হয়, কতোজন শিক্ষার্থী পড়ালেখা চালিয়ে যাবে? নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের একটি নাটকে দুটো শিশুকে এ ধরনের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। তারা অবশ্য কিছুদিন পরে এই ‘স্বাধীনতা’ চায় না বলে জানিয়েছিল; কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের পরীক্ষা করা হলে তার ফলাফল কী হবে?
এ বিষয়ে অবশ্য কোনো গবেষণা চোখে পড়ে নি। গবেষণা থাকার কথাও নয়; কারণ শিশুদের এ ধরনের ভাবনা কেউ আসলে জানতে চায় না। কিংবা বলা ভালো, এটাও যে জানার বিষয় হতে পারে, তা হয়তো প্রাপ্তবয়স্করা উপলব্ধিই করতে পারেন না। বিভিন্ন গবেষণায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে ধরনের তথ্য বা মতামত জানতে চাওয়া হয়, সেগুলোও মূলত একটা কাঠামোর মধ্য থেকেই জানতে চাওয়া হয়। শিশুকে বিদ্যালয়ে যেতেই হবে- এটা ধরে নিয়েই গবেষকরা শিক্ষার্থীদের ‘আর কী কী করা হলে তোমাদের কাছে বিদ্যালয় ভালো লাগবে’ জাতীয় প্রশ্ন করে শিশুদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন। কিন্তু সুযোগ বা স্বাধীনতা দেওয়া হলে কতো জন শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছায় বিদ্যালয়ে যেত, কিংবা বিদ্যালয়ে গেলেও বর্তমান বিদ্যালয়ে যেত, তা নিয়ে সন্দেহ করাই যায়।
আমাদের দেশের বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় নয়, বিদ্যালয়ের লেখাপড়া তাদের কাছে আনন্দদায়ক নয়- সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মোটাদাগে এটিই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যালয়ের অবস্থান। তার মানে কি এটা হতে পারে যে, বয়সজনিত কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে পড়ালেখাটাই উপভোগ্য নয়? এ সময় তারা গান গাইতে পছন্দ করে, খেলাধুলা করতে পছন্দ করে, দুষ্টুমি করতে পছন্দ করে কিংবা ছবি আঁকতে পছন্দ করে কিন্তু পড়ালেখা করতে চায় না? আজকে যদি সব শিক্ষার্থীকে বলে দেয়া হয়, কাল থেকে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিদ্যালয়ে আসতে হবে না, আসলেও ইচ্ছে না হলে পড়ালেখা করতে হবে না বা বিদ্যালয়ে এসে তারা তাদের খুশিমতো গান গাইতে পারবে, খেলাধুলা করতে পারবে; তাহলে নিজ ইচ্ছায় কতোজন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করবে? এ ধরনের একটি গবেষণাকাজ হওয়া দরকার। অন্তত ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীরও যদি পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়, তাহলেও সেটি হবে বিরাট খুশির খবর। কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এতোটা আশাবাদী হতে সায় দেয় না। অথচ বিদ্যালয়ে যাওয়া কিংবা পড়ালেখার জন্য শিশুমন বা তাদের বয়স যে কোনো বাধা নয়; তা অনেক আগেই প্রমাণিত। অনেক দেশেই শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার ব্যাকুল থাকে; কারণ শুরু থেকেই বিদ্যালয়গুলোকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। সেখানে পড়ালেখার জন্য তারা উদগ্রীব থাকে, কারণ এই পড়ালেখা তাদের দৈনন্দিন আনন্দদায়ক কর্মকাণ্ডের একটি অংশ। প্রশ্ন হচ্ছে- তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যালয় কেন আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারছে না? কেন পড়ালেখাটা তাদের দৈনন্দিন আনন্দদায়ক কর্মকাণ্ডের অংশ হচ্ছে না?
এ প্রশ্নগুলো আসলে অনেক পুরনো। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে এসব প্রশ্ন করা হয়েছে; সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে যারা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করেন, তারা নানাভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর পাবার চেষ্টা করেছেন; গবেষকগণ নানা গবেষণায় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন। কিন্তু ঠিক উত্তর কি পাওয়া গেছে? পাওয়া গেলে এর কোনো ফলাফল দেখা যাচ্ছে না কেন? এর একটা সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে যে, প্রশ্নগুলো উত্তর যেখানে খোঁজার কথা সেখানে না খুঁজে অন্য জায়গায় চেষ্টা করা হয়েছে; কিংবা যে উপায়ে জানা দরকার সেটি ছাড়া বাদবাকি সব উপায়েই জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সাধারণত বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, বিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট কমিটি, শিক্ষাবিদ ইত্যাদি মানুষের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও জানার চেষ্টা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা এবং তাদের ভাবনাচিন্তা জানার মধ্যে একটা বড় পার্থক্য রয়েছে। গবেষণার কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের উত্তরে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে হয়তো শিক্ষার্থীর মতামত জানা যায় কিন্তু তাদের সার্বিক চিন্তার বা মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যায় না। শিক্ষার নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষার্থীর ভাবনা জানাটা এখনো জরুরি হয়ে উঠতে পারে নি।
বর্তমানে যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বেশি, শিক্ষার্থীর ফলাফল তুলনামূলক ভালো, সেই বিদ্যালয়কে আদর্শ ধরে অনেকে সেই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পদ্ধতি দেখে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেন। কিন্তু বাধ্যতামূলকভাবে সব শিক্ষার্থীর নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসার সঙ্গে বিদ্যালয় ও পড়ালেখার প্রতি নিজ থেকে আকৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কোচিং, টিউশনি ইত্যাদির মাধ্যমে মুখস্থবিদ্যাকে সম্বল করে ভালো ফলাফল করার সাথে বিষয়বস্তু উপলব্ধির মাধ্যমে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রকাশের মধ্যে একটি গুণগত পার্থক্য রয়েছে। উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া পদ্ধতির মাধ্যমে বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীর বাহ্যিক উন্নতি ঘটানো সম্ভব; কিন্তু গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থীর ভেতরকার আগ্রহ ও উদ্দীপনাটাকে সম্বল না করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে সব মানুষকে হয়তো ডিগ্রিধারী করা যাবে; কিন্তু শিক্ষিত মানুষ কতোজন পাওয়া যাবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।
বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক জায়গাতেই বেশ সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়েই রয়ে গেছে। গুণগত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি সময়ে নানা উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। এসব উদ্যোগের মূল ফোকাসে শিক্ষার্থীরা থাকলেও শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনা বা মতামত কিন্তু অপ্রতিফলিতই থেকে যাচ্ছে। আমাদের দেশে সাধারণত ‘টপ টু বটম’ অ্যাপ্রোচে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ও তার বাস্তবায়ন ঘটে যেখানে যাদেরকে কেন্দ্র করে কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়; তাদের মতামতই উপেক্ষিত থাকে। কী করলে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে উৎসাহী বা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হবে সেই সমাধান শিশুদের কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে হয়তো অনেকের দ্বিধা থাকতে পারে। কিন্তু শিশুরাই সবচেয়ে ভালো জানে কোন কাজ করলে সেটা তাদের কাছে ভালো লাগবে। সেই কাজ বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে হয়তো বড়রা নানা ভাবনাচিন্তা করতে পারেন; কিন্তু পড়ালেখার সাথে শিশুদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইলে শিশুদের ভাবনা জানার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীর সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীর ভাবনা জানার রেওয়াজ নেই আমাদের। অথচ লেখাপড়া করাটাকে যদি সত্যিই জোরজবরদস্তির কর্মকাণ্ড না বানিয়ে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করতে চাই, তাহলে শিক্ষার্থীর ভাবনা জানার কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য
এদেশের বাবা-মায়েরা(ব্যতিক্রম বাদে) আদৌ বাচ্চাদের মানুষ ভাবে কি না এ নিয়ে সন্দেহ আছে। সন্তান আর পোষা জন্তু পালনের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য দেখি না আমি। ভালো মনিব তার পোষ্য জন্তুকে ভালো খেতে দেন, চিকিৎসা দেন, ভালোও বাসেন, বিনিময়ে বিশ্বস্ততা ও বিনোদন আশা করেন। শুনতে খারাপ শোনালেও সন্তানদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও তেমন মানসিকতাই চোখে পড়ে। সামর্থ্যে কুলালে শিশুদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তারা সচেষ্ট থাকেন। কিন্তু প্রতিটি শিশুই যে একেকটি স্বতন্ত্র ব্যক্তি এ ভাবনাটা চোখে পড়েছে খুব কমই।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
সবডি ক্রিমিনাল।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
সর্বনাশ! সত্য কথা এতো সরাসরি বলতে হয়!
আপনার এই কথাগুলো লেখার সময় মাথায় ছিল, কিন্তু এতো সরাসরি বলার সাহস পাই নি। আপনার কথার সাথে আসলে দ্বিমত করার কিছু নেই; শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য।
একটা বয়স থেকে শিশুরা নিজেদের স্বতন্ত্র ভাবতে শুরু করে। দেখবেন, তখন তারা আলাদা চেয়ারে বসতে চায়, আলাদা প্লেটে খেতে চায়। কিন্তু বড়রা কতোজন তাদের সেই চাহিদাকে মূল্য দেয়? আজকাল অনেকে তাদের সন্তানকে বাসে-ট্রেনে আলাদা সিটে নিতে চায়। অনেকে আলাদা টিকিটও কিনে। কিন্তু আশেপাশের মানুষজন দেখবেন বাচ্চাকে উঠিয়ে বসতে চায়। একটা বাচ্চার জন্যও যে আলাদা টিকিট কেনা যায়, সেটাই তো আমরা বুঝি না!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
রবিবাবুর কিছু কথা তুলে ধরি:
অবশ্য এর পরের কথাগুলো হজম করতে পারবেন না।
যাক, কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। মূল কথা হচ্ছে, শিক্ষায় প্রাণ নেই, আনন্দ নেই। কিভাবে আসবে, কে দায়িত্ব নেবে, আমি সেটাই শিক্ষার মূল ব্যাপার বলে মনে করতে চাই। পাশাপাশি পাঠ্যবইগুলোও আগ্রহোদ্দীপক করে তোলা, শিক্ষকতা আকর্ষণীয় পেশা করে তোলা এবং তাতে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা-এগুলোসহ আরো অনেক কিছু আসতে পারে, কিন্তু, মূল জায়গাটা যেন হয় এরকম যে, ছেলেমেয়রা আনন্দ নিয়ে স্কুলে যায়, যেতে চায়। জাফর ইকবালের আমেরিকা নিয়ে ভ্রমণগ্রন্থ 'আমেরিকা, আমেরিকা'-য় দেখছি তাঁর সন্তানেরা কিছুদিনের জন্যে আমেরিকায় বেড়াতে গিয়েও ডিজনিল্যান্ডে ঘুরতে যাওয়ার চাইতে ইস্কুলে যেতেই বেশি আগ্রহী। এই প্রপঞ্চের বিস্ময়ের কোন সীমা আছে?
কখন আমাদের দেশে এরকম ইস্কুল হবে?
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
হজম করতে পারবো না কেন বুঝলাম না। আর হজম করতে না পারলে তো আরো বেশি করে বলা উচিত। রবিবাবু যা বলেছেন, তার সাথে তো দ্বিমত করার কিছু নাই। দ্বিমত থাকলেই বরং হজমের প্রশ্ন আসতো।
রবিবাবুর তাঁর আমলের শিক্ষাব্যবস্থা দেখেই এমনসব লেখা লিখেছিলেন দেখে বিস্মিত হই। এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা দেখে তিনি কী বলতেন তা কল্পনাতেও আসে না।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি ছোটবেলায় অপরিসীম স্বাধীনতা পেয়েছি। পড়বো, কি পড়বো না -এটা প্রায় পুরোপুরি নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করতো। তারপরেও স্কুলে যেতে প্রচন্ড অনীহা থাকতো। স্কুলকে আকর্ষণীয় করে তোলাটা এখানে কী-পয়েন্ট। স্কুলে আকর্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে শুধু পড়াশোনাই না, অন্যান্য বিষয়ও নির্ভর করে। স্কুলে না গিয়ে একটা শিশু যে ফান পাবে, স্কুলে গেলে তার চেয়ে বেশি পাওয়া সম্ভব।
তবে পড়াশোনা কাজটা অন্তত আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে খুব সহজ কাজ না। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। পরিশ্রম করতে জোর প্রয়োগের চেয়ে মোটিভেশন থেকে এলে সেটা অনেক বেশি কাজের হয়।
পোস্টে ৫।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনি সেই বিরল মানুষদের একজন যিনি ছোটবেলায় পড়ালেখার স্বাধীনতা পেয়েছেন।
স্কুলে গিয়ে যে শিশুরা ফান পাবে, সেই কনসেপ্টই তো আমাদের নাই। নীতিনির্ধারকদের বলে দেখুন, উত্তর আসবে- স্কুল কি ফান করার জায়গা?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
পোস্টে ৫ তারা।
দেশে সাধারণভাবে স্কুল যে প্রচন্ড অনাকর্ষণীয় এটা অস্বীকার করার কিছু নাই। সমস্যার সাথে সাথে সমাধানের পথে একটু আলোকপাত করতে পারেন।
বটম-আপ এপ্রোচ হলেও সেটার সাথে অন্যদের সুচিন্তিত পদ্ধতির মিশ্রন থাকতে হবে। কারণ, শিশুরা কী চায় সেটা জানাতে পারলেও আরও কী কী চাওয়া যায় তা হয়ত জানেনা।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
শুধু টপ-ডাউন বা বটম-আপ অ্যাপ্রোচ কোনোটাই কাজের না। প্রতিটি কাজেই দুটোর সংমিশ্রণ থাকা দরকার।
সমাধানের আসলে অনেক পথ আছে। এই পোস্টে আমি মূলত শিশুদের কথা শোনা বা তাদের ভাবনাটা কোন পথে পরিচালিত হয়, সেটি জানার ওপর জোর দিচ্ছি। শিশুদের ভাবনা জানার এই কাজটুকু করার সংস্কৃতি আমাদের দেশে গড়ে ওঠে নি। অথচ যেখানে যেখানে পরীক্ষামূলকভাবে এই কাজটুকু করা হচ্ছে, সেখানে কিন্তু বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়। নিজেদের সমস্যার সমাধানের পথ তারা নিজেরাই বের করছে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষা ব্যবস্থার মূল যে সমস্যাটি দেখি তা হল একদম প্রথম থেকেই মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি। কোন বয়সেই শিক্ষার্থীর নিজের ভেতরকার মেধাটুকুকে বের করা আনার ব্যবস্থা নেই। সেই সাথে একদম বাচ্চা বয়স থেকেই এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাঝে ঠেলে দেওয়া। এই পরিমান মানসিক চাপ নেওয়ার ক্ষমতাটুকু সেই বাচ্চার আছে কিনা সেটা ভেবে দেখে না।
তবে এটা অনস্বীকার্য যে একটি শিশুকে গড়ে তোলার কাজ কোন মতেই সহজ কাজ নয়। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সঠিক ভাবে গড়ে তোলার জন্য যেমন রয়েছে শিশুকে স্বাধীনতা দেওয়ার তেমনি রয়েছে কিছু নিয়ন্ত্রনের। পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হলেও দেখবে যে সে হয়তো কখনোই পড়তে বসতে চাইবে না, চাইবে সারাদিন টিভি দেখতে কিংবা খেলা করতে। এখানেও বারগেন চলতে থাকে।
তবে শিশুদের বুঝা খুব প্রয়োজন। যে কোন রুলস দিয়ে দিলেই সেটা তারা মানবে এমন নয়। যৌক্তিক রুলস না হলে বিদ্রোহ করে বসে। সুতরাং তারাও ঠিকই বুঝে কতটুকু স্বাধীনতা বা নিয়ন্ত্রন তাদের প্রাপ্য। এই ব্যালেন্সটা বুঝে উঠা খুব প্রয়োজন বাবা/মার সাথে একটি শিশুর বন্ধনের জন্য। তবেই সেই শিশুটির নিজস্ব প্রতিভাগুলো বের হয়ে আসবে।
তুমি যে গবেষণার কথা লিখলে সেটা যে হয় নি তা কিন্তু নয়। তবে আমাদের দেশে কতটুকু হচ্ছে তা আমি জানি না। এই ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন বাবা/মা-কে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া যেটা পাশ্চাত্যে আছে। নব্য বাবা/মাদের জন্য কিছু কোর্স রয়েছে যেখানে একটি শিশুর পরিচর্যার সব কিছু দেখিয়ে দেওয়া হয়। এ রকম কিছু আমাদের দেশের নুতন জেনেরাশেনের বাবা/মা দের জন্য করা যেতে পারে।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
দারুণ কিছু মত দেওয়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ স্বাধীন ভাই।
পুরোপুরি স্বাধীনতা আসলে খুব বড় ব্যাপার। সেটা বোধহয় কেউ কাউকে দিতেও পারে না, দিলেও কেউ সেটা এনজয় করতে পারবে না। বরং নিজেকে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতায় বিকশিত করতে চাইবে সবাই। শিশুরাও তার বাইরে নয়। ...সমস্যাটা সেখানে না। শিশুদের তাদের নিজের পছন্দ বাছাই করতে দিলে কী হতো তারই একটা ধারণা পাবার চেষ্টা করেছি এখানে। সেখানে শিশুদের এই স্বাধীনতা দেওয়ার পরও যদি শিশুরা পড়তে না বসে, তাহলে বুঝতে হবে পড়াশোনার এই পদ্ধতিতে বেশ গলদ আছে। কারণ পড়াশোনাটা আকর্ষণীয় হলে পড়ালেখা না করার স্বাধীনতা থাকলেও শিশুরা নিজ থেকেই পড়তে বসবে।
যে গবেষণাটির কথা বলেছি, সেরকম গবেষণা বাংলাদেশে হয়েছে বলে জানি না। এ লেখাটি লেখার আগে কিছু খোঁজখবর করেছিলাম, কিন্তু তেমন কিছু পাই নি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আমি বাংলাদেশের কথা বুঝাইনি, পাশ্চাত্যের কথা বুঝিয়েছিলাম। এখানে যে সিস্টেমে পড়েলেখাটা হয় দেখে বুঝা যায় এগুলো নিয়ে তাঁদের অনেক কাজ হয়েছে। এই কাজগুলোই তোমাকে খুঁজে দেখার কথা বলছিলাম। এগুলোই যদি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দাঁড় করানো সম্ভব হয় তাহলেও অনেক বড় কাজ হবে। আর যে গবেষণাগুলো হয়ে গিয়েছে সেগুলোর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গবেষণা করে আগে দেখা যেতে পারে।
এখানে ছোট্ট সমস্যা রয়েই যায়। এখনো বাচ্চা/কাচ্চা হয়নি তো তাই টের পাও না। আমি টের পাই। পড়াশুনা সেই পরিমান অনন্দের করা সম্ভব নয়। যেমনটা সম্ভব নয় সব্জি/ভাত খাবারকে মুখরোচক করা। বাচ্চারা কোক ঠিকই খাবে কিন্তু স্বাস্থকর খাবার খাবে না। তাই পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই সব কিছুই সিস্টেমের গলদ ভাবারও দরকার নেই। মানুষের নিজস্ব কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেই জিনিস তাকে আনন্দ প্রদান করে সে সেটাই করতে চায়। যেটা তার জন্য প্রয়োজন সেটাতে সে আনন্দ নাও পেতে পারে। এখন এটাকে ব্যালান্স করতেই হবে।
শেষ প্যারাটা দারুণ বলেছেন; কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হচ্ছে- বাচ্চাদের পড়ালেখাটা যথেষ্ট আনন্দদায়ক করা যায়। বাচ্চাদের পড়ালেখার সাথে সম্পৃক্ততার কারণেই এই কথাটা বলছি। খাবার সবজি হলেও যদি যথেষ্ট আকর্ষণীয়ভাবে দেয়া যায় এবং তারা যেভাবে চায়, সেভাবে দেয়া যায়- তাহলে সবজিও যথেষ্ট আকর্ষণীয় খাবার হতে পারে। লক্ষ্য শুধু এটুকু রাখতে হবে যে, দিনের পর দিন কেবল সবজি দেয়া হচ্ছে কিনা।
মানুষের চাওয়ার ক্ষেত্রে যে ব্যালান্সের কথা বলেছেন- সেটা ঠিক। শিশুদের ক্ষেত্রে সুবিধাটা হচ্ছে- আনন্দের বিষয়গুলোতে তাকে ভালোভাবে গড়ে নেওয়া যায়।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
গৌতম চমৎকার পোষ্ট। কিছু ব্যক্তিগত অভিমত দিলামঃ
১) এখনো আমাদের দেশে ভাল ছেলে বা মেয়ে বলতে বোঝায় যারা পড়াশুনায় ভাল। একটি ছেলে হয়ত ভাল অভিনয় করে, যে নাটক করতে চায় সে কিন্তু পরিবার থেকে ন্যুনতম কোন সহযোগীতা পায়না। সুতরাং সে পরিনত হয় তথাকথিত খারাপ ছেলেতে। অভিভাবকদের এই মানসিকতা পরিবর্তন প্রয়োজন।
২) প্রশ্ন উঠতে পারে অভিভাবকরা কেন শুধু ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার দিকেই মনযোগী হয় ( অধিকাংশ ক্ষেত্রে)। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুম নিম্নবিত্ত না নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এদের একমাত্র পরিকল্পনা থাকে পড়াশুনা করে ভবিষ্যতে ভাল একটি চাকরী পেয়ে নিজেদের পায়ে দাড়াবে। ফলে একটি ছাত্র বা ছাত্রী ইচ্ছে করলেই তার নিজের পছন্দমত পড়াশুনা করার সুযোগ পায়না। ফলে যে যা পড়ছে সবাই কিন্তু নিজের ইচ্ছাতে পড়ছে না। এজন্য বিদ্যালয় বা মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় কোনটাই তাদের পছন্দের জায়গা নয়।
৩) এবারে আসি শিক্ষকদের শিক্ষাদান প্রসঙ্গে। স্কুল বা কলেজের কথা বাদই দিলাম, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই যদি ধরি, মাঝে মাঝে মনে হত শিক্ষক এমন ভাবে পড়াচ্ছেন যেন দয়া করছেন। প্রকৌশল বিদ্যার মত একটি চমৎকার বিদ্যাকে মুখস্থ বিদ্যার আদলে গ্রহণ করে এসেছে একসময়। বিদেশে উচ্চশিক্ষা না নিতে আসলে হয়ত এই বিদ্যার আসল মজাটুকুই পেতামনা। এই ধারা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় স্কুল কলেজ গুলোতেও বিদ্যমান। আমার মনে আছে আমাদের মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বইগুলোতে এসো নিজে করি টাইপের কিছু একটা ছিল। কিন্তু নিজে কেন, শিক্ষকদের নিয়েও কখনো কিছু করা হয় নাই। দুই বছরের নবম দশম শ্রেণীর পাঠগ্রহণ কালে বিজ্ঞানাগারে গিয়েছিলাম মাত্র এক দিন। বিজ্ঞানাগারের এক কোনে উইপোকার তুলে রাখা মাটিকে পর্বতের মডেল ভেবে ভুল করেছিলাম সবাই। এই হচ্ছে আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষা। এখনকার পরিস্থিতি জানিনা।
আমার মনে হয় আপনি একটি স্টাডি করেন, ভলান্টারি হলেও করেন। র্যান্ডম ভাবে কিছু ছাত্রছাত্রীকে জিজ্ঞেস করেন।সব চাইতে ভাল হয় প্রশ্নোত্তর কালে অভিভাবক বা শিক্ষক কেউ সেখানে না থাকলে। সবার আগে ভাল একটি জরিপ ডিজাইন করেন। তারপরে ফলাফল নিয়ে কোন প্রকাশনায় প্রকাশ করেন সেই সাথে ব্লগে। তাহলে একটা কাজের কাজ হবে।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
পুরোপুরিভাবে একমত। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। অনেকে হয়তো বলবেন ছোটদের এখনো ভালমন্দ বোঝার বয়স হয়নি (যদিও সেটা তাদেরকে জোর করে কিছু গেলানোর জন্য কোন যুক্তি নয়) কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ক্ষেত্রেও জোর করে গেলানো ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না যদিও তাদের ভালমন্দ বোঝার বয়স ঠিকই হয়েছে।
আমি নিজে অভিভাবকের বাজে মানসিকতার শিকার নই (আমার অভিভাবক বলতে 'শুধুমাত্র' আমার মা-কে বোঝায়), আমার মা আমাকে কোনদিনই পড়ার জন্য বা মুখস্থ করার জন্য বলেন নি বরং আমার একটা স্কুল ভালো না লাগায় স্কুল পরিবর্তন করা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু স্কুল শেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, শ্রদ্ধেয়(!) শিক্ষকদের 'দয়া করে বিদ্যা দান' এর সাথে খুব ভালই পরিচয় আছে। মাঝে মাঝে মনে হতো ছাত্র মানে মনে হয় শিক্ষকের ক্রীতদাস বা ওই জাতীয় কিছু - কোন স্বাধীন চিন্তা করার অধিকারও মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছা মত বিষয়ে রিসার্চ পর্যন্ত করার অধিকার রাখে না - দয়া করে ওনারা যা বলবেন তা-ই করতে হবে। কোন এক শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, "You MUST like this research topic" - প্রচলিত অর্থে ক্রীতদাসদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ন্ত্রণ করা যেত বলে মনে হয় না - সেই অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মনে হয় আত্মার মালিক-ও মহান শিক্ষক! বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার চার বছর পরেও আমি সাধারণতঃ ওনাদেরকে শিক্ষক না বলে ঈশ্বরের অবতার বলতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
আমার কথাগুলো কাউকে আহত করে থাকলে দুঃখিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে যেহেতু মানুষ হিসেবে ন্যূনতম সম্মানুটুকুও পাইনি - তাঁদেরকে সম্মান দেখানোটাও তাই নিজের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে মনে করি না। তাঁদের দলে যোগ দিতে পারতাম হয়তো, দেইনি শুধু এই অশ্রদ্ধার কারণেই।
আপনার রিসার্চ টপিক-সম্পর্কিত অভিজ্ঞতাটা শুনে খারাপ লাগলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের তো এমন হওয়ার কথা না!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
১. একটা পরিবারে হয়তো একটা ছেলে বা মেয়ে হয়তো একটু ব্যতিক্রম। সে বিবিএ পড়তে চায় না, কম্পিউটার সায়েন্স পড়তে চায় না। বরং সাইকেলে সারা দেশ ঘুরে দেখতে চায়। তাকে সবাই পাগল বলে ঠাউরাবে কিংবা ব্যঙ্গবিদ্রুপে সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। আমাদের অভিভাবকরা সরলরেখার বাইরে কিছু ভাবতে পছন্দ করেন না।
২. সেটাই। পছন্দ বা অপছন্দ কোনো ব্যাপার না- অর্থউপার্জনই মুখ্য।
৩. ভালো শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষক নাও হতে পারেন- এটা অনেকেই বুঝতে চান না। ফলে যিনি সারাজীবন শুধু মুখস্ত করে পড়ালেখা করে ভালো ফলাফল করেছেন, তিনিই হয়তো পরবর্তীতে শিক্ষক হয়েছেন। সেক্ষেত্রে তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের মুখস্তবিদ্যার উত্তরাধিকারীই তো করতে চাইবেন!
৪. এটা নিয়ে একটা কাজ করার ইচ্ছা আছে। ব্যক্তিগত আগ্রহেই করবো। আপনার প্রস্তাব সেই কাজে আরো উৎসাহ যোগালো। ধন্যবাদ। আর তথ্য সংগ্রহের সময় আমি অংশগ্রহণকারী ছাড়া আর কাউকেই সামনে রাখি না।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
বুঝতেই পারছেন সমস্যাটা অর্থনৈতিক। আমার মনে হয় আমাদের শিক্ষার্থীদেরও আরও ম্যাচিউরড চিন্তা করতে শেখানো উচিত। ব্যাপারটা ঠিক অকাল পক্কতার ব্যাপার না। পরিবেশ যদি ঠিক হয় ওরা এমনিতেই ম্যাচিওরড চিন্তা করবে। যেমন, যু্ক্তরাষ্ট্রের ছেলেপেলেরা করে।
এই যে ছেলে সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াতে চায়, তার কারন, তার খরপোশের চিন্তা মাথাই আসেনাই। কারন, তার বাবা-মা তাকে সেভাবেই গড়ে তুলেছেন। এজন্য মা-বাবাও তার উপর খেপা। যেহেতু, সে শুধুমাত্রই সন্তান নয় বরং বিপদের দিনের সম্বল। তার পেছনে তাঁদের অনেক শ্রম, অর্থ বিনিয়োগ আছে। সে ব্যাপারটাও কাজ করে। এতে দোষের কিছু নেই। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, এগুলো মেনে নেয়াতে বাঙ্গালী যতো সমস্যা।
চিত্র যদি অন্যরকম হতো, অর্থাৎ বাবা-মা নিশ্চিত সন্তান তার নিজ খরচে এসব করবে তখনও বিরোধিতা করতেন, তবে সেটা ধোপে টিকতনা। অর্থের জোর, বড়ো জোর।
এদেশে সন্তানের উপর মা-বাবার অনেক দখল থাকে, তার কারন, সন্তানের পেছনে তাঁদের ত্যাগ অনেক। সন্তানের জন্য নিজে কম খাওয়া, নিজের পছন্দের জিনিস না কিনে সন্তানের জন্য কেনা প্রত্যহ ঘটনা। সেই বাবা-মা'র সন্তানের উপর দাবী থাকবেই।
যদি ইউরোপ আমেরিকা'র অভিভাবকদের মতো, ন্যানি'র কাছে সন্তান মানুষ করতেন বা সবসময় নিজের চাওয়া পুরণ করে নিতেন, তাহলে এমটা হতো না।
দইন্যবাদ
সাজ্জাদ বিন কামাল
এক অর্থে আপনার কথাটা ঠিক আছে। কিন্তু অন্যভাবে দেখলে বলা যায়- সমস্যাটা শুধু অর্থনৈতিক না, মানসিকও।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
একখানা খাঁটি কথা বলেছেন। তবে সমস্যা হলো গিয়ে ভালো শিক্ষকের সংজ্ঞা নিয়ে ঘাপলা আছে। ড. হুমায়ুন আজাদ ভাবতেন, বাঙ্গালি যখনই কোন বিষয় নিয়ে সোচ্চার হয়, বুঝতে হবে তার নিজস্ব কোন এজেন্ডা আছে। এখানেও অনেকটা সেরকম হয়। সুতরাং, ফাউল লোকদের থেকে সাবধান থাকা উচিত।
ভালো রেজাল্ট মানেই যেমন, ভালো শিক্ষক বোঝায় না, সেরকম ফার্মগেইটের খুজলির গুলি বিক্রেতার মতো বকবকাইলেও ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। কথাটা এজন্য বললাম, আমাদের দেশে একটা ধারনা প্রচলিত আছে , যিনি মজার মজার কথা বলতে পারেন তাঁকেই দেখেছি, শিক্ষার্থীরা পছন্দ করে।
আমাদের রসায়নের শিক্ষক, রসায়নের যেকোন ধারনা বোঝাতে গেলেই নারী-পুরুষের সম্পর্ক টেনে নিয়ে আসতেন। শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দ পেতো এবং পছন্দ করতো। Complete nonsense.
ভালো রেজাল্টের কথা যেটা বললেন, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাক তাজিওডংয়ের চেয়ে উঁচা থাকে। ঐসব ঈশ্বরেরা যখন অর্থের টানে সপ্ত-আসমান থেকে আমাদের ফার্মগেইটের গাব-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ:পতিত হয়ে লেসকার দেন, তখন সেই লেসকার হুইন্যা মনে হয় গলায় দড়ি দেই। কম্পিউটার বিজ্ঞানে জিপিএ ৪ প্রাপ্ত ছেলে, ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে ধারনা নাই, NP কি জিজ্ঞেস করতে বলে Not Polynomial। আমার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে আমি যখন বললাম, তাহলে শিক্ষক হিসেব উনি কিভাবে নিয়োগ পেলেন। আমাকে বলা হলো, 'আমরা বুয়েটের ছাত্র। আমাদের এগুলা লাগেনা।'
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম যে পরিবর্তনটা দরকার তাহলো, গোষ্ঠীগত মানসিকতার পরিবর্তন। দেশের অবস্থা খারাপ এই কারনে নয়, যে এখানে ভালো মানুষ নেই বা যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ নেই। বরং একারনে খারাপ যে, এখানে অন্যায়কারিরা যতো সংঘবদ্ধ, সৎ যোগ্য লোকেরা তেমনটা নয়।
দারুণ। ঠিক এই কথাটাই উপরে বলতে চেয়েছিলাম।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
দারুণ লেখা গৌতমদা...
মু-জা-ই স্যারের 'আমেরিকা' বইতে পড়েছিলাম, তার সন্তানেরা আমেরিকায় ছয় মাসের ছুটিতে গিয়েও তাদের পুরোনো স্কুলে ভর্তি হয়ে ক্লাস করেছে- শুধুমাত্র প্রচন্ড মজাদার শিক্ষক আর ক্লাসের পরিবেশের কারণে...
আমার নিজের ধারণা, আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকেই অনেক আকর্ষণীয় করা যায় কেবল কিছু সৃজনশীল এসাইনমেন্ট দিয়ে। দরকার খালি শিক্ষকদের সামান্য একটু বাড়তি শ্রম আর সদিচ্ছা (...কী যে কই...)
_________________________________________
সেরিওজা
তাই তো, কী যে কন!
ওই বইটা পড়ে আমিও কম হিংসিত হই নি। আমার ছোট বোন এখনও বিশ্বাস করে না যে স্কুল ভালো লাগার একটা ব্যাপার।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
জন্মটাই তো সময় সময় নিরানন্দ পরিস্থিতি শুনি।
এর পরে আর কী হবে।
সমস্যা হলো, জন্মটার ওপর আমাদের কোনো হাত নাই। ফলে ওটা নিরানন্দ হলেও সেটাকে আনন্দদায়ক বানানো ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আমরা শুরু থেকেই সেগুলোকে আনন্দদায়ক বানাতে পারি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ভাই এইসব কথা বহু পুরুনো। সব শিক্ষকই জানেন ক্লাসে কীভাবে পড়াতে। তাঁরা সেভাবে পড়ালেই তো হয় বাবা। এত কথার দরকার কী?
তাই তো! শিক্ষকরা ঠিকমতো পড়ালে এতো কথার দরকার কী!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন মন্তব্য করুন