১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মোস্তফা, বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ নিহত হন। আহত হন আরও অনেক শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ। তখন থেকে এই দিনটি ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত না হলেও শিক্ষা-আন্দোলন এবং শিক্ষা-রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা শ্রদ্ধাভরে এই দিনটি পালন করেন। এই দিনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য হলো, ১৯৬২-এর আন্দোলনের চেতনায় পরবর্তী সময়ে ১৯৬৪ সালের হামুদুর রহমান কমিশনের শিক্ষানীতি এবং ১৯৬৯ সালের এয়ার মার্শাল নূর খানের শিক্ষানীতিও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাতিল করতে বাধ্য হয়।
‘শিক্ষা দিবস’ উপলক্ষ্যে আজকে একটি দৈনিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বর্তমান শিক্ষা দিবসের চেতনাকে স্মরণ করে শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্যগুলো তুলে ধরেছেন, তবে ব্যর্থতাগুলো নিয়ে কিছু বলেন নি। এর আগে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর কার্যক্রম নিয়ে আমি কিছু লেখায় বলার চেষ্টা করেছি, (আমার মূল্যায়নে) স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যতোজন শিক্ষামন্ত্রী এসেছেন, এই শিক্ষামন্ত্রী তাদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য, শিক্ষা-সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখেন এবং শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কে আন্তরিক; বাকিরা কেবল রুটিন কাজ সম্পন্ন করেছেন। জনাব নাহিদ সম্পর্কে আমার এই মূল্যায়ন এখনও প্রায় অপরিবর্তিত, যদিও সাম্প্রতিককালে সেখানে কিছুটা চিঁড় ধরেছে। আজকের লেখায় শিক্ষামন্ত্রী যথাযথভাবে সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কিছু সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। একজন শিক্ষাকর্মী হিসেবে এই অগ্রগতি জানানোর প্রয়াসটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছি, কারণ ব্যতিক্রমভাবে তিনি তাঁর মন্ত্রণালয় এবং সর্বোপরি শিক্ষার সাম্প্রতিক অগ্রগতির বিষয়গুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন, যেটা অন্য মন্ত্রণালয়গুলো করে কিনা সন্দেহ। এই থেকে সরকার এই আমলে শিক্ষা-সম্পর্কে কতোটুকু কী উদ্যোগ নিল এবং সেগুলো কতোটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটা সহজেই জানা গেল। জনাব নাহিদ সরকারের অংশ হিসেবে এই কর্মকাণ্ডগুলোকে যে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন, একজন বাইরের মানুষ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত কিংবা অন্যমত থাকতে পারে। তাঁর প্রতিটি দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই তাই কিছু নোট বা মন্তব্য লেখার একটি চেষ্টা চালালাম। বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ সময়েও এসব দাবির বিপরীতে অর্জনগুলো মিলিয়ে দেখা যাবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
জাতীয় শিক্ষানীতি দু-এক বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করার বিষয় নয়। ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে, অনেকগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন। ২০১১ সালের মধ্যে সব শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি এবং ২০১৮ সালে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১১ সালের মধ্যেই ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ শিশুকে বিদ্যালয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অন্যটির জন্য বহু কার্যক্রম ও প্রস্তুতি চলছে।
অনেকে বলেন, শিক্ষানীতি তো বাস্তবায়িত হলো না। তাঁদের ধারণা, কোনো এক সরকারি ঘোষণায় এক দিনে সবকিছু বাস্তবায়িত হয়ে যাবে।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে, জাতীয় শিক্ষানীতি দু-এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করার বিষয় নয়। সেটি কোনো অর্থেই সম্ভব নয়। প্রশ্ন হলো, এই কথা কি শিক্ষামন্ত্রীকে কেউ বলেছেন যে, দু-এক বছরের মধ্যেই শিক্ষানীতির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে? আমার জানামতে, যারা শিক্ষানীতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল, তাদের কেউই এ ধরনের কথা বলতে পারেন না, বলেনও নি। একটি শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের যে বিশালতা, সেটি সবাই জানেন; তাছাড়া শিক্ষানীতি সংসদে গৃহীত হওয়ার সময়ও বলা হয়েছে যে, এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে দু-এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি যদি কেউ করে থাকেন, তাহলে সেটি ওই ব্যক্তির অজ্ঞতাপ্রসূত দাবি। শিক্ষামন্ত্রীর এগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার আছে বলে মনে হয় না।
কিন্তু যেটি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক তা হলো, বর্তমান শিক্ষানীতির কোন অংশটি কখন কীভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে তথ্যের অভাব। পেশাগত কাজেই আমাকে প্রতিনিয়ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে গিয়ে তথ্য খুঁজতে হয় এবং সেখান থেকে শিক্ষানীতির অগ্রগতি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না। আমাদেরকে এদিক-ওদিক করে নানাভাবে এই অগ্রগতিগুলো জানতে হচ্ছে এবং এতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে। এ অব্স্থায় শিক্ষামন্ত্রী বর্তমান শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে যে দাবি করছেন, সেটি যদি মানুষের কাছে প্রকাশিত না হয়, তাহলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিবে যে, শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
২০১১ সালের মধ্যে সব শিশুর ভর্তির যে সাফল্য দাবি করা হচ্ছে, সেটির সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ কম- যদি বয়সসীমায় ৬-১১ বছরের ধরা হয়। কিন্তু বর্তমান শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নানা ধরনের প্রস্তুতিও চলছে। সুতরাং, শিক্ষামন্ত্রীর হিসেবে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের হিসাব নেই। তাদেরকে ধরলে এই হার অনেক কমে যাবে এবং সেজন্য শিক্ষামন্ত্রী যদি আগামী দিনগুলোতে এই বয়সী শিশুদেরকে ধরে ৯৯ ভাগ সাফল্যের কথা বলেন, তাহলে মানুষ দারুণ আনন্দিত হবে। তাছাড়া এ ধরনের হিসাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফাঁকফোকরও থেকে যায়- উদাহরণস্বরূপ এখানে জিইআর (Gross Enrollment Rate) এবং এনইআরের (Net Enrollment Rate) কথা বলা যায়। অনেকক্ষেত্রে দেখেছি, এনইআরের হিসাবকে জিইআরের হিসাব দিয়ে চালানোর চেষ্টা করা হয়। শিক্ষার অগ্রগতি জানার জন্য দুটোই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এনইআর বাড়ানোর বিষয়টি বেশি মনোযোগের দাবি রাখে।
পাশাপাশি ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষার দৈর্ঘ্য বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া, সেটির ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে আমার দ্বিমত না থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেটি কতোটুকু উপযোগী, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। আমাদের অর্থমন্ত্রী শিক্ষাবান্ধব নন, সুতরাং টাকাপয়সার নিরিখে প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান স্তরটি ঠিক রেখে শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার বছরটি পাঁচ থেকে আট-এ উন্নীত করলেও একই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
দুনিয়ার মধ্যে শিক্ষায় সবচেয়ে কম অর্থ বরাদ্দ করা হয় যেসব দেশে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। পুরোনো পদ্ধতি, পুরোনো পাঠ্যক্রম, পুরোনো ধ্যান-ধারণার অধিকাংশ শিক্ষক, সুযোগ-সুবিধার অভাব, বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষমতাবানদের চাপ এবং তার ফলে যথাস্থানে উপযুক্ত লোক নিয়োগদানে বাধা, এমনকি আইন ও বিধিমতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি করাও বড় বাধা ইত্যাদি হাজার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা এবং একদিকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, অন্যদিকে দক্ষ জনবল, দক্ষ শিক্ষক, দক্ষ পরিচালকসংকট ইত্যাদি তো সচেতন মহলের একেবারেই অজানা নয়। ...অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও জঞ্জাল পরিষ্কার করে একটি স্বচ্ছ, দক্ষ, গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার কাজ শুরু থেকেই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
শিক্ষামন্ত্রীর এ অংশের সঙ্গে পুরোপুরিই একমত। এবং যখন এই বিষয়গুলো নিয়ে খোঁজখবর করার চেষ্টা করি, তখন আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করি যে, একজন ব্যক্তি যতোই চেষ্টা করুন না কেন, সরকারের পক্ষ থেকে শতভাগ সহযোগিতা না থাকলে এ ধরনের সমস্যা কাটানো অসম্ভব। জাতিগতভাবে আমরা দুর্নীতিবাজ (শুধু টাকাপয়সার বিবেচনায় নয়) কিনা, সেই ধরনের বড় তর্কে যাওয়া আমার মতো ছোট মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়; কিন্তু ধারণা করি, এ ধরনের হাজার হাজার মানুষের কারণেই শিক্ষামন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েও অনেক ভালো কাজ করতে পারেন নি। শিক্ষাভবনের দুর্নীতি ও অদক্ষতার কথা পত্রিকার পাতায় আসে প্রায়শই, শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি কাজের ক্ষেত্রে হলেও সেখানে তিনি কতোটা পরিবর্তন আনতে পেরেছেন?
লেখার মূল অংশে শিক্ষামন্ত্রী মোট ৩৩টি অগ্রগতির কথা দাবি করেছেন। তিনি প্রথমে বলেছেন,
সব মত-পথ, শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে প্রচার, আলোচনা, সভা-সেমিনার, ওয়েবসাইটে মতামত, লিখিত মতামত গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রথম একটি জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ২৪টি শিক্ষা কমিশন বা শিক্ষা কমিটি তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে একমাত্র সর্বশেষ শিক্ষা কমিশনই সরাসরি এভাবে মানুষজনের মতামত সংগ্রহ করলো। শিক্ষামন্ত্রী নানা দিক দিয়ে ব্যতিক্রম, এক্ষেত্রেও তার প্রমাণ রাখলেন। উন্মুক্তভাবে মতামত সংগ্রহের এই প্রক্রিয়াটি মানুষজনের কাছে প্রশংসিত হয়েছে; কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দাবি ছিল, বিভিন্ন পর্যায় থেকে আসা মতামতগুলোও উন্মুক্ত করে দেয়া যাতে সবাই জানতে পারে কোন পরিপ্রেক্ষিতে মানুষজনের কাছ থেকে কী মতামত এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী এ ব্যাপারে নীরব ছিলেন। এমনকি মতামত প্রদানের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার অনেক পরও বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে আসা মতামত তিনি গ্রহণ করেছেন কিন্তু সাধারণ মানুষ সে সময় চাইলেও বাড়তি মতামত দিতে পারে নি।
বিদ্যালয়ে ভর্তি ও ঝরে পড়ার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
২০১১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশের বেশি শিশু স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে। ঝরে পড়ার হার ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে।
ভর্তির ব্যাপারে একমত পোষণ করলেও ঝরে পড়ার হারের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করছি। মাত্র বছর কয়েক আগের গবেষণা থেকে ঝরে পড়ার হার ৪৮ ভাগ জানা যায়। সেটি এতো তাড়াতাড়ি ২১ শতাংশে নেমে আসার জন্য যে পরিমাণ উদ্যোগ ও দক্ষতা আমাদের শিক্ষাপ্রশাসন ও শিক্ষাব্যবস্থাপকদের দরকার, তা আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রায়ই এধরনের সূচক নিয়ে জরিপ চালানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরিপের সঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপের তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য পাওয়া যায় প্রায় সবসময়ই। সুতরাং এ ব্যাপারে সরকারি জরিপ বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই মনে করি। সময়ের বিবেচনায়ও এই স্বল্পসময়ে এতো বড় কাজ করাটা অবিশ্বাস্য ঠেকে।
জেন্ডার সমতা অর্জনের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
আন্তর্জাতিকভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নির্ধারিত বছর ২০১৫ সাল। কিন্তু আমরা তার অনেক আগেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের সংখ্যাসমতা অর্জন করেছি এবং তা এখন স্থিতিশীল। উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শিক্ষায় ছেলেমেয়েদের সমতা অর্জন এখন সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আদর্শ (মডেল) দেশ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পুরোপুরি একমত এবং শিক্ষাবিষয়ক নানা ফোরামে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা যখন বাংলাদেশের এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, একজন বাংলাদেশী হিসেবে গর্ববোধ করি।
পাঠ্যবই বিতরণের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
২০১০, ২০১১ ও ২০১২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে ১ জানুয়ারি মোট ৬৫ কোটির অধিক পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর আগে শুধু প্রাথমিক স্তরে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হতো। তা-ও মার্চ-এপ্রিলের আগে সম্ভব হতো না। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারিতে নতুন পাঠক্রম (কারিকুলাম) অনুযায়ী লিখিত প্রায় ২৭ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বর্তমান সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীর এই কাজটিকে আমি অত্যন্ত ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে দেখি। যদিও এই কাজ করতে গিয়ে প্রথম দু’বছর বেশ কিছু সমস্যা পোহাতে হয়েছে, কিন্তু আমার বিবেচনায় সেটির মূল কারণ হচ্ছে মানুষজনের দুর্নীতি এবং অদক্ষতা। তাছাড়া শিক্ষামন্ত্রীকে বিপাকে ফেলার মতো লোকের সংখ্যাও কম নেই। প্রথম বছরগুলোর সমস্যাগুলোকে মিটিয়ে সব শিক্ষার্থীর কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বই দেওয়াটা অতীব জরুরি বিষয়- এ কাজে শিক্ষামন্ত্রীর বর্তমান সাফল্যকে আশা করি ভবিষ্যত ছাড়িয়ে যাবে।
পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তনের সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
বর্তমানে যেসব পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়, তা লেখা হয়েছে ১৬ বছর আগে। ইতিমধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান বিশেষ করে প্রযুক্তির জগতে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটে গেছে। এর প্রভাব আমাদের পাঠ্যপুস্তকে নেই। আমরা পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছি। গত বছর নতুন পাঠক্রমে সাতটি নতুন বই দিয়েছি। ২০১৩ সালে আরও ৮৬টি নতুন পাঠক্রমের বই তুলে দেওয়ার কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে বাড়তি কিছু বলার অবকাশ নেই, কারণ পাঠ্যপুস্তকের বিষয় পরিবর্তনের একটি ধারাবাহিক কাজ চলছে। যদিও আগামীতে আসা পাঠ্যপুস্তকগুলো কতোটা যুগোপযোগী হবে (বিশেষত উপস্থাপনা বিচারে) তা নিয়ে সংশয় রয়েছে, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে যে উন্নতির চেষ্টাটা এখানে করা হচ্ছে, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় অন্যখানে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণীর জন্য যে পাঠ্যবইগুলো প্রণয়ন করা হয়, সেগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের দক্ষ শিক্ষকদের দ্বারাই তা করা হয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের এনে সে ব্যাপারে পরামর্শ নেয়া হয়। পাঠ্যবই তৈরির এই পুরনো প্রক্রিয়াটি সেই শুরু থেকে চলছে এবং এক্ষেত্রে গবেষণা কিংবা যথার্থতা-নির্ভরযোগ্যতা পরিমাপ করার অবকাশ নেই। এগুলো না করে একটি পাঠ্যবই কতোটা শিক্ষার্থীদের উপযোগী তা বলা যায় না। সুতরাং শিক্ষামন্ত্রী যদি এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবির এই সংস্কারটুকু করার উদ্যোগ নেন, তাহলে সেটি সত্যিই একটি অভূতপূর্ব কাজ হবে।
পরীক্ষা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণী শেষে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাদ্রাসায় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ধরে রাখা, সারা দেশে সমমান অর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন আর ভিন্নভাবে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। পরীক্ষার সংখ্যাও কমে গেছে।
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর নতুন পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং এই বিতর্ক যতোটা না দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, তার চাইতেও বেশি উপযোগিতার বিষয়। এই দুটো পাবলিক পরীক্ষা হয়তো বৃত্তি পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়েছে, কিন্তু ভিন্ন কিছু সমস্যাও সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনে শিক্ষামন্ত্রী এই সমস্যাগুলো কতোটুকু অ্যাড্রেস করেন, তা দেখার বিষয়।
এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষা ও ফলাফল, নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস শুরু এবং বৃত্তির ব্যাপারে তিনি বলেছেন,
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এগিয়ে এনে সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এখন প্রতিবছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করা হয় ১ এপ্রিল। এসব পরীক্ষার ফলাফল ৬০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু। ফলাফল ৩০ দিনের মধ্যে। প্রথম বছর মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফল প্রকাশ, পরে ইন্টারনেট, টেলিকনফারেন্স এবং এ বছর পেপারলেস অনলাইনে এসএসসি-এইচএসসির ফল প্রকাশিত হয়েছে।
স্কুলে ১ জানুয়ারি এবং কলেজে ১ জুলাই ক্লাস চালু করা সম্ভব হয়েছে। আগে ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে নিয়মিত ক্লাস শুরু হতো না।
প্রায় ৭৮ লাখ প্রাথমিক ও প্রায় ৪০ লাখ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। মেধা তালিকায় প্রায় ১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করা হয়েছে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে বাড়তি কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। শিক্ষামন্ত্রীর যথাযথভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই কাজগুলো ভালোভাবে করতে পেরেছেন। সেজন্য তিনি অভিনন্দনযোগ্য।
পাসের হার বৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
পাসের হার সারা দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও প্রতিবছর বেড়ে চলেছে।
অনুরূপভাবে এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায়ও পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর হার লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে।
পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে নাকি বাড়ানো হয়েছে- তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। প্রতিটি সরকারই দেখাতে চায়, তার আমলের পাসের হার আগের আমলের চেয়ে বেশি। বর্তমান সরকারও এই রাজনীতি থেকে মুক্ত নয়। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির উল্লম্ফন মানুষকে যতোটা না আনন্দিত করে, তার চেয়ে চিন্তিত করে বেশি। শিক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ মানুষ এখন প্রায়শই করে। সুতরাং শিক্ষামন্ত্রীর এই হিসেব মেনে নেয়াটা কঠিন। অন্যদিকে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির একটি যোগবোধক সম্পর্ক থাকার কথা, কিন্তু বাস্তবতা কতোটুকু সেটিকে সমর্থন করে? প্রতি বছর এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারের পক্ষ থেকে গুণগত মান বাড়ানোর যে দাবি করা হয়, সেই দাবি কাগজে-কলমে না করে গবেষণাভিত্তিক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
সৃজনশীল পদ্ধতির ব্যাপারে তিনি বলেন,
সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান ও পরীক্ষার ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যেকোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে বোঝা ও উপস্থাপনের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধীরে ধীরে একটি যুক্তিনির্ভর সমাজ তৈরি হচ্ছে।
সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হওয়াটা সুখকর, কিন্তু এই পদ্ধতি নিয়েও প্রচুর ঝামেলা আছে। ফলে এখুনি এ ব্যাপারে কোনো সফলতা যেমন দাবি করা যায় না, তেমনি এটি কার্যকর বা অকার্যকর সে বিষয়েও মন্তব্য করা সমীচিন নয়। বরং সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করাই জরুরি। যে যে বিষয়গুলোতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, সেগুলোতে শিক্ষকরা কি এই পদ্ধতির কথা মাথায় রেখে প্রশ্নপত্র তৈরিতে দক্ষ? উত্তর হলো, না। শিক্ষকরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতেও অভ্যস্ত না। বিশেষ করে যারা পুরনো শিক্ষক, তারা এই পদ্ধতিতে কতোটা সড়গড় হতে পেরেছেন সেটা প্রবলভাবে প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে এটা ঠিক, এই চর্চাটি বহুগুণে বাড়ানো হলে এ থেকে সত্যিকার অর্থেই সুফল পাওয়া সম্ভব। শিক্ষামন্ত্রী এই উদ্যোগটিকে শুরু করেছেন, চলমান রেখেছেন। এখন দরকার এর গতি বাড়ানো।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং বিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাবৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষক-প্রশিক্ষককে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
৪৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় আট হাজার নতুন ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে অথবা চলছে। সরকারি উচ্চবিদ্যালয়গুলোতে দুই শিফট খোলা হয়েছে।
২০ হাজার ৫০০ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। তৈরি করা হচ্ছে ডিজিটাল কন্টেন্ট।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি হাতে-কলমে শিক্ষাদানের জন্য ১৭টি মাইক্রোবাসে মোবাইল কম্পিউটার ল্যাব এক বছর ধরে দেশের পশ্চাৎপদ অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে।
প্রাথমিক স্তরে ৮৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে প্রায় দুই হাজার এবং স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সম্ভবত পিইডিপি-২ এর আওতায় এই কাজগুলোর অধিকাংশ করা হয়েছে যা সরকারের ক্ষেত্রে রুটিন কাজ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এ ধরনের আরও বেশ কিছু কাজ আছে সরকারের, কিন্তু সেগুলোকে সাফল্য হিসেবে চালানো যায় কিনা ভাবা দরকার। তাছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী বা সরকারের বলার মতো বেশ কিছু কাজ আছে। নিজেকে একজন সফল শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সেগুলোই যথেষ্ট। চাইলে তিনি এরকম শত শত উদাহরণ বা তথ্য দিতে পারবেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁর জায়গায় অন্য কেউ শিক্ষামন্ত্রী হলেও এই কাজগুলো করতে হতো। পিইডিপি-২ শুরু হয়েছিল আগের সরকারের আমলে, বর্তমান সরকার সেই ধারাবাহিকতায় এখন পিইডিপি-৩ শুরু করেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে বলা যায়, কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। নতুনভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে সত্যি, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-স্বল্পতা মারাত্মকভাবে এই স্তরের পড়ালেখাকে ব্যাহত করছে। কোটাপূরণের জন্য বিজ্ঞানের শিক্ষককে নিয়ে বাংলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কোনো সুযোগ এই মুহূর্তে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিনি বলেছেন,
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। নতুন আরও আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়ে চালু হয়ে গেছে।
এগুলোর মানের ব্যাপারে কী মন্তব্য? কিংবা চালুর বিষয়টি মুখ্য হলে পরিকল্পনামাফিক সবকিছু করা গেছে কি? – জানা নাই, কিন্তু প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা দরকার।
গবেষণাখাতে বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে,
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার জন্য দেশের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬টি গবেষণা উপপ্রকল্পে ১৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। দেশের উচ্চশিক্ষা খাতের গবেষণায় এর আগে এত বেশি বরাদ্দ আর কখনো দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এক্ষেত্রে সাফল্য দাবি করার কিছুই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার হাল কতোটা করুণ, তা বলার অবকাশ রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতি বছর এই খাতে প্রচুর টাকার দাবি করলেও মাত্র ১৮৯ কোটি টাকা দিয়ে তৃপ্তি পাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী। এটা সত্যি, এর আগে এতো বেশি বরাদ্দ দেয়া হয় নি, কিন্তু যা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সাফল্য দাবি করাটা বাড়াবাড়িই বটে! গবেষণা এদেশে অছ্যুৎ বিষয়, এমনকি শিক্ষানীতি তৈরির মতো বড় কাজেও গবেষণা পাত্তা পায় নি। গবেষণা করার মতো সংস্কৃতি কিংবা গবেষণার ফলাফলকে আমলে নেয়ার মতো সংস্কৃতি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে তৈরি হয় নি। সেই আবহটা তৈরি করা গেলে কৃতিত্ব দাবি করা যায়।
কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে তিনি বলেন,
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে ব্যাপক প্রচার, জনমত গড়ে তোলাসহ বহু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীসংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষানীতিতে এই বিষয়টি প্রচুর গুরুত্ব পেয়েছে। বাস্তবায়নে কতোটা অগ্রাধিকার পাচ্ছে জানা নেই, কিন্তু চাহিদা-নিরূপণ ভিত্তিতে কাজটি করতে পারলে দারুণ একটি কাজ হবে। বিশেষ করে দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাবোর্ডকে শক্তিশালী করা, এ-সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়ন করা এবং কারিগরি শিক্ষাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বলে হেয় করার মাইন্ডসেট আছে, সেটিকে পরিবর্তন করা দরকার। তবে শিক্ষানীতিতে যেহেতু এটি গুরুত্ব পেয়েছে, সুতরাং আগামী বছরগুলোতে এইক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।
অনলাইনে কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন,
শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন, পরীক্ষার ফরম পূরণ প্রভৃতি কাজ এখন অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যাবতীয় কাজ, নিয়োগ, মন্ত্রণালয়ের সব সিদ্ধান্ত, পরিপত্র, সার্কুলার, প্রজ্ঞাপন, বদলি, প্রমোশন, ছুটি, অবসরভাতা ও কল্যাণ ট্রাস্ট এখন বেসরকারি শিক্ষকদের অনলাইনে আবেদন গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় অনলাইনে মুহূর্তের মধ্যেই সবাই জানতে পারছেন।
এই কাজটি প্রশংসার দাবি রাখে। যদিও কাজগুলোর সবকিছু এখনও পুরোপুরি অনলাইনে করা যায় না এবং প্রসেস পর্যায়ে নানা ধরনের ঝামেলা রয়েছে; কিন্তু যেটুকু কাজ হয়েছে সেটুকু এখন নিয়মিত আপডেট ও আপগ্রেড করতে পারলে অনেককিছুই সহজতর হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ সম্পর্কে তিনি বলেন,
ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন বন্ধে আইন হয়েছে, কিন্তু এই আইন কতোটুকু কার্যকর হচ্ছে তা ঠিক সঠিকভাবে দেখা হচ্ছে? তবে এটাও ঠিক, এই আইনের ফলে নির্যাতনের মাত্রা বেশ কিছুটা কমেছে, কিন্তু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনবন্ধে শিক্ষকদের মোটিভেশন দিতে হবে প্রশিক্ষণকালীন নানা কর্মকাণ্ডের আওতায়। না হলে শুধু আইন দিয়ে নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাড়তি কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানা নেই।
পাঠ্যপুস্তক নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু প্রভৃতি বিষয়ে যেসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ শুদ্ধ করে সঠিক তথ্য ও ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়েছে।
এই কাজটি অনেক গুরুত্ব দিয়ে করা হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এটি আলাদাভাবে সাফল্য দাবি করার মতো বিষয় কিনা তা ভাবা দরকার। কারণ উপরেই শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, পাঠ্যবই নিয়ে বেশ কিছু কাজ চলছে এবং পাঠ্যবই রিভিউ করার সময়ই এই কাজগুলো করা হয়েছে। এই কাজটি পাঠ্যবইকে যুগোপযোগী এবং সঠিক করার আওতার মধ্যে পড়ে এবং কাজটি তিনি সফলভাবে করতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে মনে হয়েছে, সাফল্যের পয়েন্ট বাড়ানোর জন্যই তিনি এটিসহ আরও কয়েকটি পয়েন্ট তাঁর লেখায় যোগ করেছেন।
কোচিং বন্ধে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
ভর্তি-বাণিজ্য, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কোচিং বন্ধে সরকারের একটি প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করা তার একটি- কিন্তু ইঁদুরের বংশবিস্তার রোধ করার অন্য পদক্ষেপগুলো না নিয়ে শুধু বিড়ালকে দায়িত্ব দিয়ে ফসলের খেত থেকে ইঁদুর তাড়ানো সম্ভবপর হবে বলে মনে হয় না।
মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে তিনি বলেছেন,
মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এই বিষয়ে কিছু জানা নাই। তবে বছর কয়েক আগে মাদ্রাসা শিক্ষার বইয়ের সঙ্গে সমশ্রেণীর একই বিষয়ের মাধ্যমিক শিক্ষার বই মেলাতে গিয়ে হতাশ হয়েছিলাম।
দুর্নীতি বন্ধ সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে,
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। অপচয় ও অপব্যবহার বন্ধের জন্য সদা সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শুরু থেকেই আমি বলে আসছি, জনগণের সীমিত সম্পদ দিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। তাই এক টাকা দিয়ে দুই টাকার কাজ করতে হবে, এ জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
এই বিষয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে সন্দিহান। শিক্ষা ভবনের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। সমাজ, রাষ্ট্র এবং সরকারের অন্যান্য অংশে যে পরিমাণ দুর্নীতির চিত্র দেখতে চাই, সেখানে শিক্ষা সেক্টরে দুর্নীতি আলাদাভাবে বন্ধ হবে না। শিক্ষামন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বলেছেন, কিন্তু কী এবং কোথায় এই অভিযান- সে সম্পর্কে কিছু জানা নেই। তাছাড়া এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের এমন বড় কোনো সাফল্য বলে মনে হয় না।
খেলাধুলা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,
প্রথম থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর তত্ত্বাবধানে বছরে দুবার স্কুল-মাদ্রাসা থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হচ্ছে। শারীরিক-মানসিক বিকাশের জন্য এটা জরুরি।
এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ এবং এর মাত্রা বাড়ানো জরুরি। যতোটুকু হচ্ছে সেটুকুর জন্য সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু যদি এর সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে সংযুক্ত করে খুদে প্রতিভাদের জাতীয় পর্যায় তুলে আনা হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়াটি সর্বাংশে সফল হবে।
শিক্ষা আইন সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন,
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচলিত নানা অনিয়ম, অসংগতি দূর করা এবং আরও উন্নত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য, বিশেষ করে শিক্ষানীতি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য ‘নতুন শিক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
নতুন শিক্ষা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তাটা এখনও বোধগম্য নয়। শিক্ষানীতি যথাযথ বাস্তবায়ন করবে সরকার- এর জন্য নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনটা ঠিক কোন অংশে সেটি পরিষ্কার নয়। বরং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের যে আইনটি আছে, সেটিকে আপডেট করা প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের, যারা নিয়মিতভাবে শিক্ষা কমিশন কতোটুকু বাস্তবায়ন করবে তা যেমন পর্যালোচনা করবে, তেমনি সময় সময় সেটিকে আপডেট ও আপগ্রেড করবে।
সবশেষে তিনি লিখেছেন,
এখানে সংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের বিগত সাড়ে তিন বছরে শিক্ষা খাতে সাধিত কতিপয় অগ্রগতির বিষয় উল্লেখ করা হলো। সহজেই এ রকম তালিকা বহু গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ ধরনের বহু কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সত্যি কথা বলতে কি, কতিপয় নয়, এই লেখায় শিক্ষামন্ত্রী বর্তমান সরকারের বিগত সাড়ে তিন বছরে শিক্ষাখাতে সাধিত সব অগ্রগতির কথাই বলেছেন। বাদ তো কিছুই রাখেন নি, বরং এক পয়েন্টকে একাধিক ভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করেছেন। চাইলে অবশ্য এই তালিকাকে তিনি আরও বেশি বাড়াতে পারেন, কিন্তু সবকিছুকেই আমরা সাফল্য হিসেবে দেখবো কিনা- সেটি ভিন্ন বিবেচনার ব্যাপার।
***
সরকারের নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সীমাবদ্ধতা রয়েছে শিক্ষামন্ত্রীরও। তিনি যেভাবে সাফল্যগুলো তাঁর লেখায় তুলে এনেছেন, আশা করি, প্রকাশ্যে না বললেও সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়েও তিনি সচেতন। উদাহরণস্বরূপ- এমপিওভুক্তি নিয়ে যে ঝামেলা বছরদুয়েক আগে শুরু হয়েছিল, সেই জটিলতা এখনও কাটে নি। শিক্ষক সংকট এবং শিক্ষকদের দক্ষতায় ঘাটতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মানসম্পন্ন শিক্ষার বিষয়টি সরকারকে ভাবতে হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। ঝরে পড়ার বিষয়টি এখনও কপালের ভাঁজের বিষয়। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন নিয়ে মানুষজন সন্দিহান, কারণ শিক্ষামন্ত্রী যতোই এক্ষেত্রে সফলতা দাবি করুন না কেন, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রতি বছর পরিকল্পনা অনুসারে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা দরকার, অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি সেই পরিমাণ অর্থ আনতে পারেন নি। আর টাকা না থাকলে কীভাবে তিনি শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করবেন? প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্র বা বোঝাপড়ার জায়গটিও শক্তিশালী নয়। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা, জাহাঙ্গীরনগর এবং বুয়েট ভিসি নিয়ে সরকারের অংশ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী যথেষ্ট পানি ঘোলা করেছেন। চাইলে এরকম অনেক উদাহরণ দেয়া সম্ভব।
তারপরও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী পূর্বের সব শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ে করিৎকর্মা। এই সার্টিফিকেটটুকু তিনি অর্জন করেছেন তাঁর কাজের মাধ্যমেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর অনেক ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাছাড়া তাঁকে এটুকু মনে রাখতে হবে, তিনি এ মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রী হলেও পরবর্তী মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রী না-ও থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে সিস্টেম, কর্মপদ্ধতি বা সিদ্ধান্তগ্রহণ মেকানিজমে তিনি কি গুণগত পরিবর্তন আনতে পেরেছেন যেটা তিনি শিক্ষামন্ত্রী না থাকলেও তাঁর কর্মকাণ্ডগুলোকে এগিয়ে নিতে সক্ষম? উত্তর হচ্ছে, না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সফল শিক্ষামন্ত্রী হলেও দায়িত্বের প্রথম বছরগুলোতে তিনি যেভাবে আমাদের আস্থা অর্জন করেছিলেন, সেই আস্থাটুকু স্থায়ী করার জন্য এই কাজগুলো করা জরুরি। তাছাড়া তিনি 'শিক্ষা দিবস'-এর চেতনায় যে লেখাটি লিখেছেন এবং যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সেটিকে স্থায়ী করার জন্য আশা করবো 'শিক্ষা দিবস'কে তিনি 'জাতীয় শিক্ষা দিবস' হিসেবে ঘোষণার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
মন্তব্য
কি দারুণ একটা লেখা! এবং প্রয়োজনীয়। পিইডিপি-৩ নিয়ে যে উৎসব উৎসব ভাব দেখি চারিদিকে তাতে মনে হচ্ছে দেশে’র শিক্ষাব্যবস্থা পুরোই বদলে যাবে । আমাদের উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় আমলাতন্ত্রের জোঁক আর তার পৃষ্ঠপোষক বিদেশী রক্তচোষা বাদুড়ের দাঁত ছাড়ানোর আগে কোনদিন-ই কিছু হবেনা।
পাশের হার বাড়ানোর প্রচেষ্টায় এবং তার সাফল্যের একটা উদাহরণ দেই, বরিশালে’র যে-কোন একটা জায়গায় মাধ্যমিক পরীক্ষার তিনমাস আগে যে টেস্ট হয় সেই টেস্টে যারা উত্তীর্ণ হয়নি তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছিলো। ফলাফল শতভাগ পাস!
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা শিক্ষাব্যবস্থায় অবহেলিত তা হচ্ছে শিশুদের সাংস্কৃতিক বোধশক্তি তৈরি করে দেয়া, চারু-কারু বলে একটা বিষয় আছে, সেটা প্রায় মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলো। এই শিক্ষামন্ত্রী এই দিকটাতেও নজর দিয়েছিলেন, এটা ভাল লেগেছে।
নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রকৃত ভাবেই চেষ্টা করেছেন। তাকে স্যালুট।
যে পরিকল্পনা ছিল, সেগুলো ঠিকঠাকমতো করতে পারলে অনেক কিছুই বদলে যেত। যেমন- পিইডিপি-৩-এর আওতায় যে স্কুলঘরগুলো নতুন করে মেরামত করা হবে, সেগুলোতে ইট-সিমেন্ট ঠিকঠাকমতো পড়লে সেগুলো টিকবে অনেকদিন। এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই। শেষ পর্যন্ত কতোদূর হয় কে জানে!
এবার সিলেট বিভাগ চমকে দেয়ার মতো ফলাফল করেছে। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা এ নিয়ে দুষ্ট কথা বলছে।
তারপরও জনাব নাহিদ চেষ্টা করছেন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
অনেক কিছু জানলাম আপনার এই লেখা থেকে। আসলেই অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
অনেক ডিটেইলস লেখা।
সত্যিকারের উন্নতি চাইলে প্রথাগত কেরানী টাইপ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
প্রথাগত কেরানী টাইপ শিক্ষাব্যবস্থাই তো এ যুগের শিক্ষার মূল ভিত্তি!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
পরিশ্রমী লেখার জন্য ধন্যবাদ। লেখাটা কোনভাবে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সমীপে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হত।
২০১৮ সালের মধ্যে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের প্রাক্কলিত পরিমাণ ২০০৯ সালেই ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গত দুই অর্থবছরের বাজেটে এই বাবদে কোন বরাদ্দই পাওয়া যায়নি। এই দুই বছরের মোট মূল্যস্ফীতি (৩০%-এর মতো) হিসেবে ধরলে ৬৮ হাজার কোটি টাকা এখন বেড়ে ৯০ হাজার কোটির কাছাকাছি হবার কথা। অর্থ বরাদ্দ না করলে নীতি বাস্তবায়িত হবে কীভাবে? ২০১৮ সাল আসতে কি আরো ২০১৮ বছর বাকী আছে?!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমার লেখা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায় তা জানা নাই।
অর্থমন্ত্রীকে এই কথা বুঝাবে কে? কিংবা প্রধানমন্ত্রী চাইলে কি অর্থমন্ত্রী না করতে পারেন?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
একটা সভ্য জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ একটি লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শিক্ষামন্ত্রীর সার্বিক উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়।
সহমত।
শিক্ষাঙ্গনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ধারা খুবই হতাশাজনক। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠনগুলো অধিকাংশই বিদেশি এবং এই মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেট সেবার মান অতি নিম্নমানের এবং চার্জ পাশের দেশ ভারতের তুলনায় দ্বিগুণ, গতি ১০০ ভাগের এক ভাগেরও কম। ওয়াইম্যাক্স বিভাগীয় শহরগুলো ছাড়া অন্য কোথাও নেই। কাজেই শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ আশাজাগানিয়া হলেও খোদ তথ্যপ্রযুক্তিই যেভাবে মুনাফাখোরদের হাতে বন্দী তাতে খুব নিরাশ হতে হয়।
সৃজনশীল পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ সেই সনাতনী মুখস্থবিদ্যার মতই হচ্ছে!
আমাদের শিক্ষার্থীদের মত মর্মান্তিক নিরানন্দ জীবন কি পৃথিবীর আর কোথাও আছে?
নির্ঝর অলয়
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা আসলে আমার জানা নাই, আমি কুয়োর ব্যাং, কুয়ো নিয়ে কাজকর্ম! তবে ধারণা করি, আমার দেশের মতো অর্থনৈতিক অবস্থা যে দেশের, তার সবগুলোতেই এই অবস্থা।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
প্রয়োজনীয় লেখা। আগ্রহ নিয়ে পড়লাম।
শিক্ষায় বাজেট নাই প্রসঙ্গে সরকারকে একটা কড়া দাবড়ানি দেয়া দরকার! সময় পেলে আপনার কাছে তথ্য চাইব।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সরকারকে দাবড়ানি ক্যামনে দিবেন?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
এইগুলা আসলে দাবড়ানি না। এইগুলা চিল্লানোর মানসিক শান্তি!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঠিক সেই কাজটাই করে যাই মাঝে মাঝে- গীতার উপদেশের মতো- ফলের আশা না করে কাজ করে যাওয়া।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
খুব সুন্দর উপস্থাপনা আর কাজের একটা লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটা লেখা শেয়ার করার জন্য।
স্কুলের ভালো খারাপ স্মৃতি আর সমস্যাগুলো নিয়ে অভিজ্ঞতা থেকে যদ্দূর পারি একটা লিখা লিখছি ব্লগের জন্য। ওটার প্রথম লিখাটা ছিল 'পাঠশালা বা কামারশালা'।
পরের লেখাটায় আপনার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো কাজে আসতে পারে। সবার মত আমিও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির অপেক্ষায় থাকলাম।
আমিনুল করিম মাসুম
আপনার লেখাটা পড়েছি। ভালো লেগেছে। শিক্ষাবিষয়ে এ ধরনের আরও কিছু লেখা এই ওয়েব সাইটগুলোতে দেখতে পারেন- www.bdeduarticle.com, www.bn.bdeduarticle.com
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন মন্তব্য করুন